এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সংস্কৃত বাংলা ভাষার জননী নয়, সাঁওতালী ভাষার কাঠামোতেই বাংলা ভাষার বিকাশ

    souvik ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৯৮৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৬ জন)
  • বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা। তার মধ্যে বৈদিক বা সংস্কৃত ভাষার অবদান যেমন আছে, তেমনি আছে খেরওয়াল বা সাঁওতালী সহ বেশ কিছু মুণ্ডা ভাষার অতি গুরূত্বপূর্ণ অবদান। বাংলা ভাষার জননী হিসেবে কেবল সংস্কৃত আর্য ভাষার দাবি সম্বলিত যে মিথটি গড়ে উঠেছিল – সেই দাবিকে নস্যাৎ করার কাজটা আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে শুরু করেছিলেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। ১৯১৮ সালে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার নদীয়া সাহিত্য পরিষদের সভায় একটি বক্তৃতা দেন। সেটি তারপর ছাপা হয় সবুজপত্র পত্রিকায়। “বাঙলা ভাষার কুলজী” নামক সেই অতি গুরূত্বপূর্ণ নিবন্ধে সুনীতিকুমার বলেন, “বাঙলা ভাষাটা যে অনার্য ভাষার ছাঁচে ঢালা আর্য ভাষা, সেটাও ক্রমে ক্রমে লোকে মানবে; আর্যামি যত দিন বাধা দিতে থাকবে, ততদিন বাঙলার ঠিক স্বরূপটি বের করা কঠিন হবে”।
    একটি ভাষার ভিত্তি আলোচনা করতে হলে শুধু তাতে ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যাগত আধিক্যের নিরিখটি বিবেচনা করতে গেলে ভুল হবে। বাংলা ভাষার বৈদিক ও সংস্কৃত এবং তা জাত শব্দের সংখ্যাধিক্য আছে ঠিকই, কিন্তু সেটাই বাংলা ভাষার ভিত্তি নির্ণয়ের যথার্য সূত্র নয়। ভাষা তার ইতিহাসে নানা কারণে নানা শব্দ গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু তার মূল ভিত্তি খুঁজতে গেলে অপরিহার্য ধ্বনি উচ্চারণের প্রকৃতি, ছন্দের বৈশিষ্ট্য, বাক্য গঠনের বৈশিষ্ট্য – ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা।
    ধ্বনিতত্ত্বের দিক থেকে
    সুনীতিকুমার বাংলা ভাষার ধ্বনিবৈশিষ্ট্যের মধ্যে দ্রাবিড় এবং কোল ভাষাগুলির বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। “দ্রাবিড় আর কোল উচ্চারণের বিশেষত্ব – কথায় দুই ব্যঞ্জন একত্র থাকতে পারে না; হয় তাদের ভেঙে নেওয়া হয় বা একটিকে লোপ করা হয়। প্রাকৃতেও তাই, আমাদের ভাষাতেও তাই”। তাই তাঁর গুরূত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, “খালি সংস্কৃত আর প্রাকৃতের দিকে নজর রাখলে চলবে না, বাঙলা ভাষার ইতিহাস ঠিক করে জানতে গেলে অন-আর্য ভাষাগুলির দিকেও নজর রাখতে হবে”। তিনি এও বলেছেন, “বাঙলা ভাষা যখন জন্মগ্রহণ করে, তখনকার দিনের অনার্য ভাষার প্রভাবটাই বেশি পড়েছিল”। ... “কিন্তু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের আর শ্রীরামপুরের পণ্ডিতদের হাতে পড়ে বাঙলা ভাষা ভোল ফিরিয়ে বসল, বাঙলা ব্যাকরণ বলে লোকে সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধি আর কৃৎ তদ্ধিত শব্দসিদ্ধি পড়তে লাগল”।
    সুনীতিকুমারের দেওয়া সূত্রকে ব্যবহার করে এবং মৌলিকভাবে পরবর্তীকালে অনেকেই এই বিষয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। সুহৃদকুমার ভৌমিকের “বাংলা ভাষার গঠন” সংক্রান্ত আলোচনা এই বিষয়ে একটি মাইল ফলক। সুনীতিকুমারের কথার সূত্র ধরেই সুহৃদকুমার বলেছেন, “ধ্বনিবৈশিষ্ট্য জীবদেহে জিনের মতো কাজ করতে থাকে। সংস্কৃত নরঃ শব্দ বাঙলায় তৎসম শব্দ হলেও উচ্চারণ করি নর্‌ হিসাবে”। সুহৃদবাবুর মতে এই হলন্ত উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বাংলায় এসেছে সাঁওতালি প্রভৃতি কোল বা মুন্ডা ভাষার প্রভাবে।
    বাঙলা ও সাঁওতালির স্বরধ্বনির সাদৃশ্য দেখাতে গিয়ে সুহৃদবাবু দেখিয়েছেন বিশুদ্ধ অ এবং অ্যা এই দুটি ধ্বনি বাংলা ও সাঁওতালিতে লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান, যা হিন্দিতে নেই। বাংলা ভাষায় এই বৈশিষ্ট্য সাঁওতালী থেকেই এসেছে বলে সুহৃদবাবু মনে করেছেন।
    বাকরীতির আরেক গুরূত্বপূর্ণ উপাদান ছন্দ। সুহৃদবাবু বিস্তারিত আলোচনায় দেখিয়েছেন বাংলা ভাষার নিজস্ব ছন্দ যাকে বলা হয়, সেই দলবৃত্ত ছন্দ বা ছড়ার ছন্দ সাঁওতালি কবিতার ছন্দ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বিশিষ্ট ছন্দবিদ প্রবোধচন্দ্র সেন মহাশয়ের পর্যবেক্ষণ মনে করিয়ে দিয়েছেন – বাঙালির স্বাভাবিক বাগ্‌রীতি, সংস্কৃত ছন্দ বহনের অনুপযুক্ত।
    নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝোটন বেঁধেছে ইত্যাদি বাংলা ছড়ায় যে ছন্দ শুনি তার সঙ্গে সাঁওতালি লোকসঙ্গীতের ছন্দের গভীর মিল সুহৃদবাবু দেখিয়েছেন এই গান উদ্ধৃত করে –
    তেহেঞ্‌ পেড়া/ তাহেন মেসে/ তেহেঞ্‌ তোয়া/দাকা।
    সুহৃদবাবুর বইতে এই সংক্রান্ত অনেক উদাহরণ আছে। বাংলার ধ্বনিতত্ত্ব এবং সাঁওতালি ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব বিষয়ে ব্যাপকতর গবেষণা করেছেন ড. বোমকেশ চক্রবর্তী। তাঁর লেখা A Comparative Study of Santali and Bengali এই বিষয়ে আগ্রহীদের অবশ্য দ্রষ্টব্য।
    রূপতত্ত্বের দিক থেকে
    বাংলা ভাষার কিছু রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (ক্রিয়াপদের লিঙ্গহীনতা, শব্দদ্বৈত ইত্যাদি) মুণ্ডা ভাষাজাত বলে ভাষাবিজ্ঞানীগণ মনে করেন। রূপতাত্ত্বিক দিক থেকে ‘মুণ্ডা’ ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ‘আকৃতিগত দিক থেকে মুণ্ডা ভাষা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে, যেমন আ, ই, উ, টা, তে ইত্যাদি। করা, খাওয়া, যাওয়া, শোওয়া এবং চলতে, বলতে,খেলতে, ঘরেতে, নদীতে, ছেলেটা, মেয়েটা, গরুটা, ইত্যাদি প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো সাঁওতালি রীতি প্রভাবিত। শব্দে গুরুত্ব আরোপের জন্য শব্দদ্বিত্বের প্রয়োগ বহুল প্রচলিত।
    বাক্যগঠন রীতির দিক থেকে
    বাংলার বাক্যগঠন রীতির দিক থেকে বৈদিক আর্য ভাষা বা সংস্কৃত ভাষা নয়, সাঁওতালি ভাষারই প্রবল সাদৃশ্য দেখা যায়। সংস্কৃত বা প্রাকৃত ভাষায় শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে পরিণত হয় ও বাক্যে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় মূল শব্দের আলাদা কোনও বিভক্তি ব্যতিরেকে (অ বা শূন্য বিভক্তি প্রকৃত বিভক্তি নয়) প্রয়োগের দৃষ্টান্ত সুপ্রচুর। বাঙলায় ধাতুবিভক্তির গুরূত্ব থাকলেও শব্দ বিভক্তির তেমন গুরূত্ব নেই। ‘আমার পঠিত বই’ বাংলা বাক্যের স্বাভাবিক রীতি নয়, ‘আমার পড়া বই’ হল স্বাভাবিক রীতি। সাঁওতালি ভাষার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য মূল শব্দ কখনোই রূপান্তরিত হবে না। বাংলাতেও এই প্রবণতা ব্যাপক।
    শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে
    বিভিন্ন জটিল বিমিশ্রনের মধ্য দিয়ে আমরা যখন অষ্ট্রিক থেকে ক্রমে ক্রমে প্রোটো বাঙ্গালি বা আদি বাঙ্গালিতে রূপান্তরিত হলাম, ততদিনে আমাদের অষ্ট্রিক ভাষায় ভোট-বর্মী, দ্রাবিড় ও সংস্কৃত-প্রাকৃত বহু শব্দ যুক্ত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে যতই আমরা বাঙ্গালি হয়েছি, আমাদের বাংলা ভাষায় অষ্ট্রিক সাঁওতালি শব্দাবলী ততই সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। তার পরও বহু শব্দ এখনও আমরা বাংলায় ব্যবহার করি, যা মূলগত ভাবে সাঁওতালি শব্দ। পরিহাসের বিষয় হলো সাঁওতাল শব্দটি নিজেই সংস্কৃতজাত, সাঁওতালদের নিজেদের আখ্যা হলো খেরওয়াল বা খেরওয়ার। বৃহত্তর মুন্ডা জাতিগোষ্ঠীই আসলে খেরওয়ার বা খেরওয়াল জাতি, আর্যভাষীদের ভারতে আগমনের আগে তারা মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে বসবাস করতো। জেনেটিক নৃ-তত্বের বিচারে বর্তমান বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর ভিত্তিমূল হলো খেরওয়াল জাতিগোষ্ঠী।

    বাংলা ভাষায় অনেক সাঁওতালি শব্দ অবিকৃত ভাবে বিদ্যমান, বেশ কিছু শব্দ আংশিক পরিবর্তিত হয়েছে। আবার কিছু দ্বৈত শব্দ কিংবা ইডিয়ম সংস্কৃতজাত শব্দের সাথে মিশ্র আকারে ব্যবহৃত হয়। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাস "সাঁওতালি-বাংলা সমশব্দ অভিধান" নামে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। এ বইটিতে কয়েক হাজার শব্দ ঠাঁই পেয়েছে, যা সাঁওতালি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়। এর অধিকাংশই মূলগত ভাবে সাঁওতালি, কিছু কিছু শব্দ বাংলা, হিন্দি, প্রাকৃত বা সংস্কৃত থেকে সাঁওতালি ভাষায় গৃহীত হয়েছে।
    অজ্ = নিরেট, পুরোপুরি, পূর্নমাত্রায়, সব দিক থেকে। সুতরাং "অজ্ পাড়াগাঁ" এর অর্থ হলো "নিরেট গ্রাম"। পাড়া শব্দটিও সাঁওতালি, এর অর্থ গ্রামের খন্ডিত অংশ। গাঁ শব্দটি অবশ্য সংস্কৃত জাত। মজার ব্যাপার হল অজ পাড়াগাঁ শব্দটির সাথে আগে সর্ব স্তরের বাঙ্গালীর পরিচয় ছিল না, ১৯৩০ সালে কাজী নজরুল ইসলাম সর্ব প্রথম তাঁর রচিত সাহিত্যে অজ পাড়াগাঁ শব্দটি ব্যবহার করেন, তারপরই এটি ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় ব্যপকতা লাভ করে। এর আগে এটি ছিল বর্ধমান, বাঁকুড়া অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ।

    স্থানের নামবাচক শব্দঃ শব্দের শেষে "ইল" যুক্ত করে স্থানের নাম যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, পূবাইল, নড়াইল, এসব মুন্ডা রীতির। নামের শেষে কোল এবং কোলা যেমন শিয়ালকোল,শ্রীকোলা, পাড়কোলা এবং বাড়ী বা বাড়ীয়া যেমন ফুলবাড়ী, উলুবাড়িয়া মুন্ডা রীতি। নামের শেষে তা যেমন জামিরতা, কামতা, রুপতা এসবও মুন্ডা রীতি। শব্দের শেষে টোলা যুক্ত করে (যেমন- নয়াটোলা, করাতিটোলা) নামকরনও মূলগত ভাবে সাঁওতালি রীতি।

    কৃষিজাত শব্দঃ আটা, আমড়া, আম (শব্দটির মূলগত সাঁওতালি শব্দ আমড়া, যা সংস্কৃতে পরিবর্তিত হয়ে আম্রাতক>আম্র(টক), পরবর্তীতে প্রাকৃত হয়ে বাংলায় আম)। কচু, কদলী,কম্ব্লা(কমলা), কান্দাল(কলাগাছের কান্ড), কলা, কদম, কুঁচ, কাণঠার(কাঁঠাল), খই, খেসারি, গাব, গুড়(গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল হেতু গৌড়), ঘাঁস, চাওলে(চাউল), চুন, জাম্বুরা, ঝিঙা,ডাল, ডিম, ডালিম, ঢ্যাপ, বেগুন, তাল, তিল, তিসি, তাম্বুল, নারিকেল, পুদিনা, বুট, মটর, লেবু, রসুন, রুটি, লঙ্কা(মরিচ)।

    প্রানীবাচক শব্দঃ আঁড়িয়া(এঁড়ে গরু), ইকুন(উকুন), ইচা(চিংড়ি), ইলসা(ইলিশ), কাতলা, কাছিম, কেন্না(কেন্নো), বাদুড়, ব্যাঙ, জঁক(জোঁক), ডাহুক, মশা, ইন্দুর, বক, ভেড়া,কটাস(খাটাশ), ট্যাংরা, খইলসা, গোচই, চিতল, জিওল(সিঙ মাছ), ডারকা(মাছ), পুঁটি, হলাহল(মূল অর্থ সাপ), ময়ুর, ঘুঘু, ময়না, মাছ, মকর, শুয়াপোকা।
    সম্পর্কবাচক শব্দঃ খোকা, খুকি, বারুই(পানচাষী), মামা, মামি, মাসি, বেটা, বিটি(বড় লোকের বিটি লো)। কাকা-কাকি(সাঁওতালি শব্দ, তবে চাচা-চাচীর বদলে খালু-খালা অর্থে ব্যবহৃত হয়)।

    উপকরন বিষয়ক শব্দঃ ইন্দারা(পাকা কুয়া), কল(যন্ত্র), কাঠা(পাত্রবিশেষ), কান্থা(কাঁথা, সাঁওতালি থেকে সংস্কৃত হয়ে বাংলায়), কানপাশা, কুঠরি(কক্ষ), খুন্তি, খালুই(মাছ রাখার পাত্র),গদি, গাড়ি, ঘুড়ি, ঘানি(তেলের ঘানি), চারা(ছোট গাছ), চাল(ঘড়ের ছাউনি), চাল(রীতি), চাস(চাষ), বাণ, লাঙ্গল, কম্বল, অঙ্গার, কাঠা(বেত বা বাঁশের পাত্র বিশেষ), করাত, দা, বটি,ডোল(বাঁশ নির্মিত শস্য রাখার বড় পাত্র), ডুলি(পাল্কি বিশেষ), মাকু, মাচা, মাদুলি, টিকলি, লোটা, বালি, শন, সাবল, হাল(নৌকার), হুড়কা।

    শারীরিক অঙ্গ বিষয়ক শব্দঃ গোড়ালী(পায়ের), ঠ্যাঙ, ঠোঁট, মোচ(গোঁফ), ঘাড়, গলা, পেট, খোস(পাঁচরা)।

    সংখ্যা বাচক শব্দঃ কাঠা(জমির মাপ), কুড়ি(বিশ), কাহন, গন্ডা, পোন, ছটাক(মাপের পরিমান), মন।

    বিবিধ বিষয়ক শব্দঃ আড়া(জঙ্গল), আড়াআড়ি, আনাড়ি, আপনি, আরকি( সে আমার ভাই আরকি), আহা(সুখ, আনন্দ জ্ঞাপক শব্দ), ইনি(এই ব্যক্তি), উনি(ঐ ব্যক্তি), উমুক(অমুক ব্যক্তি),ইয়া( ইয়ে মানে..), ইস(দুঃখবোধক শব্দ), উজাড়(গ্রাম উজাড়), উল্টা, উলট পালট, এ(এ গ্রামে আমার বাস, এ মা! এ কি?), এহ্, (এহ্ এটা কি করলে?), এ্যা(এ্যাই যে), ও(ওঃ, তুমি সেই লোক?), কচি, কনকন(কনকনে শীত), কাটাও(সময় কাটানো), কাঠি, কালি(দেবী বিশেষ), কাঁচা, কাঙ্গলা(কাঙ্গাল), কাবিল(দক্ষ), কামাই(উপার্জন), কালা(বধির), কাহিল(কাতর),কিত্ কিত্(খেলা বিশেষ), কিরিয়া(কিরা- শপথ), কিল(কিলায়ে কাঁঠাল পাকানো), কিস্তি(নৌকা), কুলি(শ্রমিক), কোঠিন(কঠিন), কুণ্ড(সীতাকুণ্ড, মাধবকুণ্ড), খণ্ড, খাড়ি(খাল), খাচা(খাঁচা),খাট(বেঁটে), খাটা(পরিশ্রম করা), খাড়া(লম্বালম্বি), খাতির(নিমিত্তার্থে), খাল, খামচি, খালি, খিজুর(খেজুর), খিল(অনুর্বর জমি- খিলক্ষেত), খিলি(খিলিপান), খুঁটি, খুচরা, খুড়া(কাকা),খেদ(খেদিয়ে দেয়া), খেপ(খেপ মারা), খ্যাপা, খোঁজ, খোদাই, খন্দক, গঙ্গা(গঙ্গা নদী), গছাও(গছিয়ে দেয়া), গড়(দুর্গ), গড়গড়া(হুক্কা), গবর(গোবর), গলা(কন্ঠস্বর), গোলা(গলা/কন্ঠা),গহনা(নৌকা অর্থে), গাদা(খড়ের গাদা), গিরা(গিঠ), গুতা, গুল(গোলাকৃতি), গোজা(কাঠে পেরেক, খোপায় ফুল), গোটা(সমগ্র), চট(জলদি), চমক, চরকা, চাখা(আস্বাদ নেয়া), চাঙ্গা, চাটা,চাপা(এক বস্তুর উপর অন্য বস্তু), চাহি(চাই), চেঙড়া/চেঙড়ি(বালক/বালিকা), চিমটা, চুটকি(ছোট), চুড়ি, চেঁড়ে(চিড়িয়া), চেলা, চেহারা, চোঙগা, চোপা, ছলক, ছাতি(বুকের), ছাকা(চালুনি দ্বারা), ছাপ, ছাল, ছালা, ছুকরি(সাঁওতালি অর্থ সাজুগুজু করা তরুণী, এ শব্দটি বাংলায় গৃহীত হওয়ার পর বাংলায় এর পুরুষবাচক ছোকরা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যা সাঁওতালি ভাষায় নেই), জট(চুলের), জড়িবুটি, জমা(জমে দই), জাঃ(এই যাঃ ভুলে গেছি), জিরান(বিশ্রাম), জুড়ি(জুটি), জোট, জোত(জমি), ঝড়না, ঝাঁক, ঝাঁকা, ঝাঁটা, ঝাড়, ঝাঁপ, ঝানু, ঝাপসা, ঝাল,ঝিল, ঝুটি, ঝুড়ি, ঝগড়া, টলা(নড়বড়), টিকলি, টিপ, টুকরা, টুকু(এইটুকু, এতটুকু), টুপি(মাথার আবরন অর্থে), ঠ্যাটা, ঠক(ঠগ), ঠোঁট, ঠাহর, ঠাকুর, ঠাট্টা, ঠিক, ঠেকা, ঠেলা,ডাল(গাছের), ডাক(আহবান), ডাকু, ডাঙ্গা, ডোঙ্গা, ডালা, ঢল, ঢাক, ঢাকনা, ঢাল, ঢালু, ঢিমা, তাড়ি, তোড়া(টাকার, ফুলের), থলি, থুতনি, দৌড়, দাই, দাদা(বড় ভাই), দান(খেলার),দেদার(অজস্র), ধমক, নাড়ী, নাম(অবতরন), নিঝুম, নিরালা, নুনু(শিস্ন), পগার, পাগল, পাঁঠা, পাল্কি, পাল(গরুর পাল), পেট, পঁচা, ফালতু, ফুঁ(ফুঁ দেওয়া), বাবু, বালি, বিঘা, ভাণ্ড, ভিটা,ভিড়, ভোটকা/ভুটকি(বেঁটে মোটা), ভুঁড়ি, ভুল, মুদি, মেটা(মিটে যাওয়া), মেলা(অনেক), ময়লা, মোচড়, মোট(সব), মোট(কুলি), মোটা, রগড়, নড়া, লাগা(পিছে লাগা, কলহ করা), লুচ্চা,সড়ক, সারা, সিধা, সিঁদ, সুবিধা, সে(সে তো বোঝাই যাচ্ছে, সে আমি বুঝেছি),

    শব্দদ্বৈতঃ খুটখাট, খাটাখাটি, খোলাখুলি, গম্ গম্, গালগল্প(গাল শব্দটি সাঁওতালি, এর অর্থ গল্প), গিজগিজ, ঘ্যানঘ্যান, চকমক, চটপট, চমচম(সাঁওতালি অর্থ দ্রুতগতিতে, এই নামের মিষ্টান্নের নামকরনের কারন হলো তা দ্রুতগতিতে খাওয়ার আগহ জন্মে), চাপচুপ(ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় চুপচাপ), চিপাচিপি, চুরমার, ছপছপ, ছিছি, জবজব, জানে তানে(যেন তেন), ঝনঝন, ঝমঝম, ঝরঝর, ঝলমল, ঝিকিমিকি, ঝুমুর ঝুমুর, টলমল, টুকরা টাকরা, টানাটানি, টিপটিপ, ঠকঠক, ঠনঠন, ঠাস ঠাস, ঠিকঠাক, ডগমগ, ডলাই মলাই, ডামাডোল,তড়িঘুড়ি, তরি তরকারি, থরথর, ধকধক, ধরফর, ধমকাধমকি, মোটামুটি, রগড়া রগড়ি, রঙ বেরঙ, সুরসুর।

    উল্লিখিত সকল শব্দই প্রমিত বাংলায় ব্যবহৃত সাঁওতালি শব্দ। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাসের অভিমত অনুযায়ী বাংলা ভাষায় এখনও যে সকল সাঁওতালি শব্দরাজি ব্যবহৃত হয়, তার সংখ্যা কম করে হলেও দশ-বার হাজার, তবে তার অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় আঞ্চলিক বাংলায়। আমাদের অগ্রজ শব্দসৈনিকেরা বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃতজাত শব্দসমূহকে অতি মাত্রায় অগ্রাধিকার দিতে যেয়ে আঞ্চলিক বাংলার শব্দসমূহকে অকাতরে বিসর্জন দিয়েছেন, ফলে এ ভাষার মূলগত অনেক শব্দই হারিয়ে গেছে চিরতরে। এখনও যে গুলো টিকে আছে বৃহত্তর বাংলার বিভিন্ন প্রান্তরে,সে সবও ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। নানা গবেষণা থেকে এটাই বলা যায় –“সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার জননী” – এই জাতীয় মিথ একেবারেই মিথ্যা বা প্রবল অতিকথন। বাংলা ভাষার কুলজী বিচারে আমাদের ফিরতে হবে সাঁওতালি প্রভৃতি মুণ্ডা/কোল ভাষার দিকেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ৯৮৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রুকু | 212.142.104.78 (*) | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:৩৭64269
  • বেশ ভালো লেগেছে, অ্যানালিসিসটা প্রাঞ্জল, একটানা পড়ে ফেলা যায় ও মাথায় থাকে। :-)
  • dd | 193.82.18.220 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০০64270
  • হ্যাঁ, ভালো লাগলো। তবে শৌভিক বছর খানেক আগেই এই বিষয়ে প্রায় একই লেখা দিয়েছিলেন না?

    http://www.guruchandali.com/blog/2016/05/12/1463068214114.html
  • কল্লোল | 233.191.57.114 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০১64271
  • ধুর ধুর, সংস্কৃত আবার জননী হবে কি!!! বিশেষ করে নব্য সংস্কৃত, যা সংস্কার করে তৈরী হয়েছে।
    বিভিন্ন আদি ভারতীয় ভাষা থেকে, কন্নড, তামিল, কোংকনী, মুন্ডারী, আদি বাংলা প্রভৃতি ভাষা থেকে গ্রহন করেছে সংস্কৃত। আবাএ সংস্কৃতর হাত ধরে শব্দ গেছে এক ভারতীয় ভাষা থেকে অন্য ভাষাগুলোয়। হ্যাঁ তাতে কিছু আদি সংস্কৃত শব্দও নানান ভারতীয় ভাষায় এসে গেছে।
  • souvik ghoshal | 116.203.135.19 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:০৩64272
  • এটার কাছাকাছি একটা লেখা আগে পড়েছিলাম সৌভীকেরই। খুবই জরুরী লেখা এগুলি - আরো আলোচনা পড়তে চাই। বাংলা অক্ষরের গঠন, শব্দ এবং বাক্যগঠনে বিদ্যাসাগরীয় ইনভ্যাশনের প্রভাব, প্রাক-বিদ্যাসাগরীয় বাংলা ভাষার রূপ, এগুলি নিয়ে আলোচনা চাই
  • শিবাংশু | 55.249.72.13 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১০:৪০64273
  • ভালো প্রচেষ্টা। তবে একটু সাধারণীকরণের ছাপ আছে।

    সুনীতিকুমার বাংলাভাষাকে 'আর্যভাষাসমূহে'র পূর্বী শ্রেণীর মধ্যে রেখেছিলেন। বাংলার সঙ্গে সেখানে আছে ওড়িয়া, অসমিয়া, বিহারি (মৈথিলি, মগহি, ভোজপুরি ইত্যাদি)। যেকোনও ভাষার শুধুমাত্র কথ্যরূপটিই সে ভাষার সামূহিক পরিচয় প্রকাশ করেনা। সুনীতিকুমারসহ আরো অনেক দিগগজরা ভাষার সাহিত্যিক পরিচয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন বিহারের মানুষের সরকারি পরিচয় হিন্দিভাষী হিসেবে। কিন্তু তাঁরা কেউই কথ্যভাষা হিসেবে নিজেদের মধ্যে সরকারি হিন্দি বা হিন্দুস্তানি ব্যবহার করেননা। এখন যদিও মৈথিলি, মগহি বা ভোজপুরি ভাষায় অনেক সাহিত্যসৃষ্টির প্রয়াস হচ্ছে, কিন্তু তারা কেউই নিকট ভবিষ্যতে হিন্দুস্তানি বা খড়িবোলির (মূলত উত্তরপ্রদেশের ভাষা) সাহিত্যিক উৎকর্ষ অর্জন করতে পারবে না। সুনীতিকুমার বাংলাভাষাকে একটি 'প্রৌঢ়' ভাষা বলেছেন, যা সাহিত্যকীর্তির মানে অন্যান্য পূর্বী আর্যভাষা, অর্থাৎ ওড়িয়া বা অসমিয়া এবং বিহারির থেকে অনেক এগিয়ে। বাংলা ভাষা যদিও সম্পূর্ণত মিশ্রভাষা, কিন্তু ভিত্তিটি আর্যভাষার। অঙ্গ, বঙ্গ ও কলিঙ্গ অঞ্চলে, একালের ছোটনাগপুর এলাকায়, প্রাগার্যকাল থেকে নানা রকম অনার্যভাষা চর্চা রয়েছে। ফলত সেই সব ভাষার কিছু শব্দ, বাগভঙ্গি বাংলার মধ্যে স্বতস্ফূর্তভাবে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাভাষার জননী হিসেবে মুণ্ডারি বা সাঁওতালিকে স্বীকার করতে গেলে কিছু চাপ আছে।

    আচার্য দীনেশচন্দ্র বলেছেন " বাঙ্গলা ভাষা বা পৃথিবীর যে কোন ভাষার উৎপত্তি নির্ণয় করিতে যাওয়া বাতুলতা।" তা সত্ত্বেও বাংলাভাষার বর্তমান রূপটির 'জননী' বলতে গেলে প্রাকৃতই প্রশস্ত। স্বয়ং গৌতমবুদ্ধের নির্দেশে তাঁর উপদেশাবলী প্রাকৃতভাষায় 'ধম্মপদ' নামে সংকলিত হয়েছিলো। দীনেশচন্দ্র একে 'সমৃদ্ধ পল্লীসাহিত্য' বলেছেন। 'পালি' নামটিও পল্লী থেকে এসেছে বলে তাঁর মত। এই লোকজ ভাষাটি বৌদ্ধ মেধার যোগদানে সমৃদ্ধ জ্ঞানচর্চার ভাষা হয়ে ওঠে। যার গরিমা সংস্কৃতের থেকে ন্যূন ছিলোনা। অন্যপক্ষে যেহেতু গত দুহাজার বছর ধরে সংস্কৃতভাষার সমূহ সংস্কার হয়েছে, তার কোনও রূপই প্রশ্নহীন 'আকর' ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা যায়না। মগধ সাম্রাজ্যের সারস্বত ঐতিহ্য যেহেতু দক্ষিণগামী হয়ে বঙ্গদেশের দিকে চলে আসে তাই তাদের ভাষাটি পূর্ণত মাগধী প্রাকৃত না থেকে অন্য একটি মিশ্রভাষা হয়ে দাঁড়ায়। যার মধ্যে মাগধী প্রাকৃত ও পৈশাচী প্রকৃতের সংমিশ্রণ ঘটেছিলো। নাম দেওয়া হয়েছিলো অর্ধ-মাগধী প্রাকৃত। বৌদ্ধদের বাংলাত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ্যে প্রাকৃতভাষার চর্চা বিশেষভাবে কমে যায়। আচার্য হরপ্রসাদকথিত বৌদ্ধদোহার ভাষা যে প্রকৃতপক্ষে 'বাংলাভাষা'র আদিরূপ নয় তা নিয়ে আচার্য দীনেশচন্দ্র, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, সিলভ্যাঁ লেভি, গ্রিয়ারসনসাহেব, সবাই একমত ছিলেন। আচার্য নীহাররঞ্জন বলেছেন "।।।লোকায়ত বাঙ্গালীসমাজের লোকভাষা ছিল মাগধী অপভ্রংশের গৌড়-বঙ্গীয় রূপ। যে রূপ ক্রমশ প্রাচীন বাঙ্গালাভাষায় বিবর্তিত হইতেছিল।"

    এই আলোচনায় কয়েকটি শব্দের উৎস হিসেবে মুণ্ডারি বা সাঁওতালি ভাষাকে নির্দেশ করা হয়েছে। সামান্য চোখ বুলিয়ে তার মধ্যে কয়েকটি শব্দ নিয়ে বলি,

    'অজ' শব্দটি সংস্কৃত 'আদ্য' শব্দ থেকে এসেছে। আদি, আদৎ বা নিরেট অর্থে নজরুলের বহু আগে থেকেই বাংলায় এর ব্যবহার আছে। হরিচরণ বলছেন শুধু বাঁকুড়া কেন, ময়মনসিংহেও এই শব্দটি ব্যবহার হতো। আনাড়ি বা আহা (অহো) সংস্কৃত থেকে এসেছে। 'কিস্তি' শব্দ নৌকার্থে ফারসি 'কশতী' থেকে এসেছে। 'গহনা' শব্দটি সংস্কৃত 'গমন' থেকে এসেছে। গহনার নৌকা মানে যাত্রীবাহী জলযান, যেখানে ভাড়া দিয়ে চড়তে হয়। এই 'গহনা' শব্দটি বিহারি ভাষায় 'গওনা' রূপে ব্যবহার হয়। যার অর্থ বয়ঃপ্রাপ্তির পর কন্যার শ্বশুরালয় যাত্রা। প্রকৃত প্রস্তাবে এখানে ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি ব্যতিরেকে 'ছোটনাগপুরি অনার্যভাষা উদ্ভূত' যতোগুলি শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে তার আশিভাগেরই উৎস বিভিন্ন আর্যভাষায়। তিনটি মূল উপজাতিক ভাষার মধ্যে সাঁওতালির সঙ্গেই বাংলার সর্বাধিক আদানপ্রদান হয়েছে। মুণ্ডারি বা হো'র সঙ্গে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

    পরিশেষে, এতো সংক্ষিপ্ত পরিসরে এতোটা বৃহৎ বিষয়ের প্রতি সুবিচার করা যায়না। সাধারণীকরনের সমস্যা এসেই যাবে।
  • সৌভিকঘোষাল | 52.110.149.232 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:১৬64274
  • শিবাংশু বাবুকে ধন্যবাদ মূল্যবান আলোচনার জন্য।
    বাংলা ভাষার কাঠামোটি প্রাকৃত ভাষার কাঠামো এটা বলার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। কারণ
    ১) বৈদিক ভাষার একটি নিজস্ব কাঠামো ছিল। সাঁওতালি প্রভৃতি মুণ্ডা ভাষাররও। প্রাকৃত ভাষার কাঠামোটি কি বৈদিক ভাষার কাঠামোর চেয়ে আলাদা?
    ২) শব্দসম্ভারের নিরিখে কোনও ভাষার উৎসকে খুঁজতে যাওয়া মুশকিল। বাংলা ভাষার বা যে কোনও ভাষার শব্দভাণ্ডারের মধ্যে কোন ধরনের শব্দ বেশি, তার উপরে তার উৎস নির্ভর করছে না।
    ৩) এটা নির্ভর করছে ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলির ওপরে। যেমন ধ্বনিতত্ত্বগত বৈশিষ্ট্য। ছন্দোগত বৈশিষ্ট্য। বাক্যগঠন কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য। এই সব নিরিখ থেকে বৈদিক/সংস্কৃত/প্রাকৃত র কাঠামোর চেয়ে সাঁওতালি প্রভৃতি মুণ্ডা ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার কাঠামোগত মিল বেশি।
    ৪) এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য অতি অবশ্যই দেখতে হবে বোমকেশ চক্রবর্তীর লেখা A Comparative Study of Santali and Bengali
    ৫) সংস্কৃতকে বাংলা ভাষার জননী বলার মতো সাঁওতালিকে বাংলা ভাষার জননী বলার বিপদ আছে। বাংলা একটি মিশ্র ভাষা। সাঁওতালির কাঠামোতে তার বিকাশের কিছু মৌলিক দিক অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ।
  • সৌভিক ঘোষাল | 52.110.149.232 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:২২64275
  • এই লেখাটির আগের একটি চেহারা আপনারা কেউ কেউ পড়েছেন। সেটির বিস্তারিত চেহারা এখানে পাওয়া যাবে। আগের লেখাটিতে মূলত শব্দসম্ভারের আলোচনা বেশি ছিল। এবার অভ্যন্তরীণ কাঠামোর আলোচনা, যা বেশি গুরূত্বপূর্ণ ভাষার কুলজী নির্ণয়ে - তা যুক্ত হয়েছে লেখাটার প্রথম দিকে। যদিও সংক্ষেপে। এই ধ্বনিতত্ত্বগত, ছন্দোগত, রূপতত্ত্বগত, বাক্যগঠনগত প্রভাবের জায়গাগুলি নিয়ে আলাদা করে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে রয়েছে।সেগুলি লেখা হলে আরো পূর্ণাঙ্গ চেহারায় লেখাটিকে আরেকবার উপস্থিত করবো। লেখাটিকে একটি ক্রম নির্মিয়মাণ লেখা হিসেবেই দেখতে চাইছি। আপনাদের মতামত, সমালোচনা, তথ্য তত্ত্বের হদিশ খুবই প্রয়োজন।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:০৪64276
  • অনেক কিছু জানলাম।
  • souvik ghoshal | 57.15.18.21 (*) | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৫৩64277
  • এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই আমি, সবাই এখানে ভাষার গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করছি কিন্তু শব্দের উৎপত্তির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করছিনা যে গুলো উদাহরণ হিসাবে আমরা উল্লেখ করছি সেগুলো ফার্সি বা গ্রিক এবং বস্তুগত শব্দ। প্রাত্যাহিক জীবনে যেসব শব্দ বা ভাষা আমরা ব্যবহার করি তার সৃষ্টিতত্ব নিয়ে আলোচনা করলে আরো স্পষ্ট ধারণা হতো ভাষা নিয়ে। এখানে সাঁওতালি ভাষার উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক দু একটা উদাহরণ তুলে দিচ্ছি। মনুষ্য সভ্যতা বিকাশের শুরুতে যখন আদিবাসীরা গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে জীবন যাপন করতো তখনও তারা ভাষার ব্যবহার জানত না। অঙ্গভঙ্গি বা মুক মানুষের মত আওয়াজ করেই মনের ভাব প্রকাশ করতো একে অপরের সাথে বা গৃহপালিত পশুদের সাথে। গৃহপালিত পশুদের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যে আওয়াজ বার হয়েছিল মুখ থেকে সেগুলোই পরে সাঁওতালি ভাষার শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে। আদিবাসীরা মুরগিদের খাবার দেওয়ার সময় বা দূর থেকে ডাকার সময় হাতে দানা বা খাবার নিয়ে হাত প্রসারিত করে "তি-তি" আওয়াজ (শব্দ) করে ডাক দেয়। সেই থেকে মুরগির নাম "তিতি" হলো সাঁওতালিতে। হাত প্রসারিত করে "তি-তি" শব্দ করতো বলে হাতকে সাঁওতালি ভাষায় "তি" বলা হয়। আবার যখন মুরগিকে হাত ঝাঁকিয়ে তাড়ানো হয় তখন "হাৎ-হাৎ" শব্দ করা হয়। তখন থেকেই হাত দিয়ে যত কাজ করা হয় তাতে হাৎ শব্দের উপস্থিতি পাওয়া যায় সাঁওতালি ভাষায়। যেমন হাত দিয়ে হাতড়ানোকে সাঁওতালিতে হাতড়াও, হাত দিয়ে কাউকে জড়িয়ে ধরাকে "হাড়ুব", বগলকে "হাতলাঃ" বলা হয়। হাত দিয়ে কোনো জিনিস নেওয়াকে "হাতাও", কুড়িয়ে নেওয়াকে "হালাং" , হাতদিয়ে মারপিটকে "তাপাম" (হাতাপাম>তাপাম), হাত দিয়ে কাউকে মাটিতে চেপে ধরাকে "অতা", জল থেকে কোন কিছু তোলাকে অওয়ার (হাতড়াও>হাতওয়ার>অওয়ার) বলা হয়।
  • manuel soren | 129.30.32.98 (*) | ২১ মার্চ ২০১৮ ০৭:৪৪64278
  • অনেক কিছু জানলাম।ধন্যবাদ মূল্যবান আলোচনার জন্য।
  • Farida Majid | ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৬101505
  • এখন আরও পরিষ্কার হলো কেন ফরহাদ মজহার /ব্রাত্য রাইসু গং প্রমিত বাংলা বা মান বাংলাকে অস্বীকার করে, বলে ওটা “কলকাতা”র, ওটা হিন্দু’র ।
    আসলে, সাঁওতালি বাকরীতির ছন্দের সাথে ওদের কোন পরিচিতি নেই ।
  • রঞ্জনা বিশ্বাস | 114.31.15.198 | ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ১২:০৮101511
  • সুনীতি বাবু  ব্রিটিশ দালাল! তিনি ও ভারত বর্ষের  সংস্কৃতির সমাধান খুঁজেছেন ভারতবর্ষের বাইরে গিয়ে। নিজেদের যে কিছু আছে তা তো তিনি মানতেনই না। ভাষার ব্যাপারেও তো তিনি ছিলেন মহা ধরিবাজ। ভোটটা বাংলায় না দিয়ে দিয়ে ছিলেন হিন্দিতে। এইরকম একটা মানুষ বাংলাকে সংস্কৃতির ওৗরস জাত বলবেনই তো। বাঙালির আত্মার সম্পর্ক যেহেতু সাঁওতালদের সাথে তাই এ্রদের ভাষায় যে বাংলার মিল বেশি থাকবে সেটাকে কোন যুক্তিতে অস্বীকার করবেন গবেষকগণ! আর্টিকেলটা ভালো লাগল। বাংলাদেশে তপতী রানী সরকারের বাংরাদেশের শব্দভান্ডার অনার্যভাষীর প জনগোষ্ঠীর প্রভাব বইয়ে এই বিষয়ে কিছু অবতারণা আছে।  

  • শান্তিরঞ্জন দত্ত | 2409:4060:e8b:a1a2::3848:8107 | ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:২২101512
  • প্রথম ভাষার প্রয়োজন হোয়েছিল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের জন্য, যা শুরু হোয়েছিল মেঘনা নদীর তীরে মাদারীপুরে। অতএব শুরুর ভাষাকে বাংলাই বলতে হবে। এবং বাংলা ভাষা পৃথিবীর সমস্ত ভাষার জননী। প্রথম সেই ভাষার কি রূপ ছিল আজ আর নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে পৃথিবীর সব ভাষাতেই কিছু আদি শব্দ পাওয়া যায়। 


    বিশদ আলোচনা আমার প্রবন্ধ কিং বদন্তি কবি লিখন্তি যো বিক গয়্যা তাহিত পেটের ভাত আর খেতাবে। 

  • &/ | 151.141.85.8 | ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:৪৬101519
  • মাদারীপুরে? তাহলে মাদারীর খেলা দেখানোর জন্যই সেই ভাষার দরকার হয়েছিল। আজও ম্যাজিকের আসরে তার কিছু শব্দ পাওয়া যায়, "হেই হেই হুট হুট আব্রাকাডাব্রা খেল দেখো খেল দেখো গিলি গিলি খিলি খিলি ঘ্যাঁচাং ফু"

  • জিতেন্দ্র নাথ মুরমু | 103.92.40.245 | ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫২101523
  • খুব ভালো লেখা, পড়ে খুব ভালো লাগলো।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন