এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • স্কুলস্তরে ডিজিটাল শিক্ষা : সমস্যা ও বাস্তবতা

    souvik ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৭ জুন ২০২০ | ২৫৬২ বার পঠিত
  • স্কুলস্তরে ডিজিটাল শিক্ষা নিয়ে এখন অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হচ্ছে। এই বিতর্কর একটি প্রধান কথা হল এমনিতেই বর্তমান বিভাজনকে এই প্রক্রিয়া আরো প্রসারিত ও গভীর করছে। কেন কীভাবে করছে সেটা আমরা সাধারণ চোখেই কিছুটা বুঝতে পারি। আমরা জানি ডিজিটাল শিক্ষা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে ঘরে একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার লাগে। নিদেনপক্ষে একটি স্মার্টফোন তো অপরিহার্য। আর অবশ্যই লাগে ভিডিও দেখার উপযোগী ইন্টারনেট কানেকশান ও ডেটাপ্যাক।
    আমরা জানি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সামান্য একটা অংশেরই ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার আছে। স্মার্টফোন বেশীরভাগ বাড়িতে আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কতজনের আছে আর কতজনের নের তার সুনির্দিষ্ট তথ্য কোথাও এখনো প্রকাশিত হয় নি। যে সব ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে অন্তত একটি স্মার্টফোন আছে, তাদের কতজনের বাড়িতে সেই ফোন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের জন্য ব্যবহারযোগ্য, সেটাও একটা প্রশ্ন। ইন্টারনেট কানেকশান ও প্রয়োজনীয় ডেটা প্যাক নিয়েও একই কথা। স্মার্ট ফোন না থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের বা তাদের অভিভাবক অভিভাবিকাদের আত্মহত্যার মর্মান্তিক সংবাদও আমরা প্রকাশিত হতে দেখেছি।
    স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট এর অভাব ছাড়াও আর একটা সমস্যার কথাও এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা দরকার। বিশেষ করে ছোটদের কাছে এই ডিজিটাল ক্লাসকে উপযোগী করে তোলার জন্য অভিভাবকদের সাহায্য একটা স্তর পর্যন্ত অবশ্যই প্রয়োজন। অভিভাবক অভিভাবিকাদের কত শতাংশ এই সাহায্য করতে সক্ষম ? প্রান্তিক পরিবারগুলির ছাত্রছাত্রীরা এইসব তারতম্যের কারণে যে আরো পিছিয়ে পড়বে বা পড়ছে – সেটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি।
    ক্রমবর্ধমান অসাম্য সম্পর্কে এইসব প্রশ্ন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই ডিজিটাল শিক্ষা চলবে না, তা বাতিল করে দিতে হবে – এমন দাবি আমরা সরাসরি তুলতে পারছি বা চাইছি না। কেন, সেটা আমরা জানি অনেকটাই। সেই জানা কথাগুলি আর একবার স্মরণ করা যাক।
    করোনাকালীন লক ডাউন উঠে যাওয়ার পরে কখন স্কুলগুলো খুলবে তা আমরা জানি না। আরো জানি না স্কুল খোলার পর বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর কি ? প্রশ্নগুলো এরকম -
    ১) স্কুলের অল্পবয়স্ক ছেলে মেয়েদের মধ্যে ঠিক কাদের স্কুলের আঙিনায় আনা যেতে পারে, কাদের আনাটা বেশি ঝুঁকির হবে ?
    ২) যারা আসবে তাদের ক্লাসের মধ্যে বসার ব্যবস্থা কি হবে, ক্লাসের বাইরে মেলামেশার ক্ষেত্রে কত ধরনের সতর্কতা অর্জন করতে হবে ?
    ৩) সপ্তাহে কদিন ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা ঠিক হবে, রোটেশন পদ্ধতি নেওয়া হবে কিনা ?
    ৪) সিলেবাস কি একই রাখা হবে, না কমিয়ে নতুন করে স্থির করা হবে ?
    ৫) স্কুলের সময় নানা কারণে কমিয়ে দিতে হলে ডিজিটাল ক্লাসের ব্যবস্থাপণা কীভাবে গড়ে তোলা হবে, তার ফলে নতুন কী কী সমস্যা তৈরি হবে ? তার সমাধানে কী কী করা যেতে পারে ?

    এভাবে আরো কিছু প্রশ্ন যুক্ত করা যায় বা প্রশ্নগুলির রদবদল করা যায়। তবে এই জিজ্ঞাসাগুলো সাধারণভাবে আছেই। একেবারে প্রথমে যে প্রশ্নটা রয়েছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল যখন খুলবে (সেটা যখনই হোক) তখন কি সবাই আসবে স্কুলে ? একেবারে ক্লাস ওয়ান থেকে টুয়েলভ ? একটা কথা উঠেছে যে না সবাই নয়। ক্লাস ওয়ান (বা নার্সারি) থেকে ক্লাস সেভেন অবধি ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসবে না স্কুল খোলা হলেও। ক্লাস এইট থেকে ক্লাস টুয়েলভ কেবল আসবে। এই যে ক্লাস সেভেন অবধি শিশুদের (ধরা যাক বারো বছর অবধি, টিন এজের ঠিক আগে অবধি) স্কুলে আসাটা বেশি ঝুঁকির মনে করা হচ্ছে তার বোধহয় মূলত তিনটি কারণ আছে। এক তো তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে, পূর্ণ বিকশিত হয় নি। ফলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি এবং আক্রান্ত হলে তাকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বেশি। দ্বিতীয়ত তারা তুলনায় অবুঝ, বিপদের গুরুত্ব পুরোটা বোঝার মতো বয়েস এখনো হয় নি তাদের অনেকেরই। ফলে যে নিয়মনীতি স্কুলের ভিড়ে এলে মানার কথা, তারা তা না মেনে বিপদ বাড়িয়ে তুলবে। তাদের দিক থেকে এই দুটো দিকের পাশাপাশি আর একটা পরিকাঠামোগত দিকও আছে। যেহেতু সব জায়গার মতো স্কুলেও ভিড় কমাতে হবে, তাই নিচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা যদি না আসে (হাই স্কুলে ক্লাস ফাইভ, সিক্স, সেভেন) তবে সেটা করার ক্ষেত্রে সুবিধে হবে।
    এবারে আসছে দ্বিতীয় প্রশ্নটা। যারা আসবে - আপাতত যদি ধরেও নেওয়া যায় ক্লাস এইট থেকে টুয়েলভ বা ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ – তবে বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট কি ধরনের হবে ? ক্লাসঘর কিছু বাড়বে ছোটরা না এলে, শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়বে এদের ক্লাস ভাগ করে নেওয়ার জন্য। যদিও সাবজেক্ট টিচারের একটা অসুবিধে হবেই, তবুও এত বড় সমস্যার সামনে আপাতত না হয় তাকে খানিক সরিয়ে রাখা গেল। অনেক শিক্ষকই নিজেকে অন্য কিছু বিষয়ের ক্লাস নেবার জন্য তৈরি করে নেবেন এটা আশা করা যায়। কিন্তু যদি ক্লাস ফাইভ থেকে সবাই আসতে থাকে তাহলে এভাবে যে সমস্যার সমাধান হবে না, তা বলাই বাহুল্য। তবে ছেলেমেয়েদের দূরে দূরে বসার বন্দোবস্তই বা ঠিক কতটা সম্ভব ? ক্লাস এইট থেকে টুয়েলভ এর ছেলেমেয়েদের ভিড় কিন্তু যথেষ্টই। ক্লাস ফাইভ অনেক জায়গাতেই প্রাইমারিতে সরে গেছে। সিক্স, সেভেন এর ক্লাস বন্ধ রেখেও অনেক স্কুলেই বাকীদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এর নীতিমালা মেনে বসানো এক কথায় সম্ভব নয়। এই জরুরী বিষয়টার সাথে ক্লাসের বাইরে তাদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং কীভাবে কতটা রক্ষা করা যাবে - এই বিষয়টা নিয়েও অনেক আলাপ আলোচনা দরকার।
    যদি সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং কিছুটাও মানতে হয় তাহলে দেখা যাবে অনেক স্কুলেই ক্লাস সিক্স, সেভেনকে বাদ রেখেও রোটেশন পদ্ধতি ছাড়া স্কুল চালানো সম্ভবপর নয়। এক এক স্কুলের ক্ষেত্রে এক এক রকম ব্যাপার হবে নিশ্চয়, কিন্তু বহু স্কুলে যে রোটেশন পদ্ধতি ছাড়া সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য।
    যদি রোটেশন পদ্ধতি নিতে হয়, তার সাথেই এসে পড়ে সিলেবাসের প্রশ্ন। সিলেবাস কি কমানো হবে না কী একই সিলেবাস পড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যাপ্রোচে বদল আনা হবে ? মূল বিষয়গুলি পড়িয়ে বাকীটা ছাত্রছাত্রীদের পড়ে নিতে বলা হবে ? উচ্চমাধ্যমিক স্তরে এটা সময় সংক্ষেপের কারণে করতে হয় অনেকটাই, মাধ্যমিক স্তরেও কি সেইদিকে যেতে হবে ? উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যমান সূচীই সমস্যাজনক, সে আলোচনা না হয় এখন থাক। কেবল বলা যাক সময় আরো কমলে জটিলতা অনেক বাড়বে।

    এই সমস্ত ক্ষতি ও বাধ্যতামূলক আপোষের ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে ? কতটা করা সম্ভব ? এই সূত্রেই চলে আসছে ডিজিটাল ক্লাসের ব্যাপারটা, যা নিয়ে আমরা এখন কথা বলছি। অনেকেই বলছেন ডিজিটাল ক্লাসের যে ব্যাপারটা চালু হয়েছে সেটা বজায় থাক। স্কুল খোলার পর এটা পাশাপাশি চলুক, একে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পরিকল্পনার ভেতরে ঢুকিয়ে নেওয়া হোক। এই আলোচনাটা এত নানামাত্রিক, এত বড় পরিসর দাবি করে, যে সেটা নিয়ে নানা পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে তবেই বিশদে লেখা যেতে পারে। এই লেখা তাই আলোচনা শুরুর ভূমিকামাত্র।
    কম্পিউটার, ল্যাপটপ খুব অল্প ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে আছে। স্মার্ট ফোন অনেক বেশি ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে থাকলেও অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে নেই। আর বাড়িতে বাবার একটা ফোন থাকলেও নানা কারণে নিয়মিতভাবে তা ছাত্রছাত্রীদের হাতে আসে না। অভিভাবকেরাও তাদের ব্যক্তিগত ফোন ছেলেমেয়ের হাতে স্বাভাবিক কারণেই তুলে দিতে চান না অনেক সময়ে। ফলে ডিজিটাল ক্লাস কিছুটাও সফল করতে হলে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট দেওয়া দরকার। একটা কথা উঠেছে সরকার একসাথে ব্যবস্থা করে অনেক কম খরচে এটা দিতে পারে ছাত্রছাত্রীদের। এই নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলতে পারে। অনেক জায়গাতেই ডিজিটাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট নেই। সেই বিষয়টিরও সমাধান দরকার। এইসব সমাধান পরিকাঠামোর একদিক। এবার আসা যাক অন্যদিকের আলোচনায়।

    সরকারের প্রত্যক্ষ সাহায্য ও আনুকুল্য নিয়ে ডিজিটাল ক্লাসের উপাদান সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট তৈরি করার দরকার আছে বোর্ড ও কাউন্সিলের পক্ষ থেকে। এমন একটি ওয়েবসাইট যা ব্যবহার করতে খুব শক্তিশালী ইন্টারনেট কানেকশান লাগবে না বা ব্রাউজিং এর জন্য খুব বেশি ডেটা খরচ হবে না।
    এই ওয়েবসাইটটিতে প্রতিটি ক্লাসের বিষয়ভিত্তিক ও টপিক ভিত্তিক অডিও ভিসুয়াল আলোচনা থাকতে হবে। এ তাবৎ প্রস্তুত করা মাস্টারমশাইদের টিচিং এইডগুলি থেকে বেছে নিয়ে, আরো নতুন অনেক কিছু যুক্ত করে এই কাজটি শুরু করে দেওয়া দরকার। বাইজুস বা আন একাডেমির মতো বেসরকারী সংস্থা বেশ কিছু টিচিং এইড তৈরি করেছেন, যা বেশ আকর্ষণীয়। সেগুলি সবই হয় ইংরাজী বা হিন্দি ভাষায়। সরকারী স্কুলের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের জন্য দরকার সহজ আকর্ষণীয় বাংলা ভাষার অডিও ভিসুয়াল টিচিং এইড। সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান হিসেবে এই কাজে সমস্ত শিক্ষক সমাজ ও প্রযুক্তি বিশারদদের নিয়ে নামলে পনেরো দিনের মধ্যেই অন্তত ৮০ শতাংশ কাজ করে ফেলা সম্ভব। ভিডিওগুলির মান উন্নয়নের জন্য এডিটিং সহ টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের একটি বাহিনীকে এই কাজে সমন্বিত করতে হবে।
    আমরা অনেক সময়েই যে কাজটুকু করে ফেলা যেতে পারে এবং করে ফেললে একশো শতাংশ না হোক অনেকটা উপকার হওয়া সম্ভব – সেই কাজটুকুও তৎপরতার সঙ্গে করে উঠি না। এমন কাজ কমই আছে যা আমাদের সব পেয়েছির দেশে পৌঁছে দেবে, বা সব সমস্যার সমাধান করে দেবে, কোনও প্রশ্ন, সংশয়ের জায়গাই থাকবে না। ফলে সর্বরোগহর ওষুধের অপেক্ষায় বসে না থেকে এই মুহূর্তে যা যা করা সম্ভব, সীমাবদ্ধ ও আংশিক হলেও সেটাই করতে হবে। আর সেই কাজটি করতে করতেই তাকে কতটা প্রসারিত ও সর্বাত্মক করে তোলার দিকে এগনো যায়, সেই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
    ডিজিটাল শিক্ষার সীমাবদ্ধতাগুলি সব সময়েই মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি শিক্ষা সহায়ক হিসেবেই কেবল ব্যবহৃত হতে পারে। কখনোই প্রথাগত শিক্ষার বিকল্প হিসেবে নয়। আমাদের বর্তমান পরিকাঠামো ও সামাজিক পরিস্থিতিতে ডিজিটাল ক্লাস নির্ভর সমাধানসূত্র খোঁজার ক্ষেত্রে নানাবিধ বিষয়কে বারবার পর্যালোচনা করে খুব সতর্কতার সাথে এগনো দরকার। তবে প্রশ্নগুলি মাথায় রাখার অর্থ এই নয় যে ডিজিটাল শিক্ষাকে আরো সহজ, আকর্ষনীয়, সুগম ও প্রসারিত করার কাজকে থামিয়ে রাখতে হবে। বরং সেই কাজকে জোরকদমে একটি অভিযান হিসেবে চালানো দরকার। যারা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের সমস্যার প্রকৃতি বুঝে তার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা দরকার।
    বেসরকারী ইংরাজী মাধ্যম স্কুলগুলিতে ডিজিটাল শিক্ষা চলছে এবং চলবেও যে সেটা আমরা জানি। সরকারী বাংলা মাধ্যম স্কুলের ক্ষেত্রে এর কোনও বিকল্প তৈরি করতে না পেরে এ নিয়ে শুধু সংশয় ব্যক্ত করে গেলে কাজের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। আখেরে যে বিভাজন নিয়ে দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করা হচ্ছে, তাকে আরো প্রসারিত হবার রাস্তা করে দিতে আমরা কেউই চাইবো না। তাই সমস্যাগুলি মাথায় রেখে, তার নিরসনের জন্য নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাবার পাশাপাশি কাজটিকেও জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
    কার্ল মার্কস একবার বলেছিলেন যে মানুষ নিজেই নিজের ইতিহাস তৈরি করে, কিন্তু যেমন খুশি তৈরি করতে পারে না। আমরাও আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতি মুহূর্তে বুঝি যে স্থান ও কালের নির্দিষ্ট বাস্তবতা দ্বারা আমরা কতটা নিয়ন্ত্রিত। এই সময়ের যা বাস্তবতা ও সেই বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত যে সব সমস্যা, সে সব মাথায় রেখেই সংবেদনশীল ও উদ্যমী পথচলা ছাড়া বিকল্প রাস্তা আমাদের সামনে তেমন খোলা নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ জুন ২০২০ | ২৫৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | ২৭ জুন ২০২০ ০০:৩৩94645
  • হুম, জরুরী আলোচনা। কিন্তু এই মুহুর্তে স্কুলশিক্ষায় আমাদের দেশে সবচেয়ে জরুরী যেটা আমার মতে, সেটা হল মিড ডে মীল। অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর একব্রলা খাদ্যের একমাত্র ভরসা। যে ব্যবস্থাকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এমনিতেই সাবোতাজ করে চলেছে। এটার কী হবে? এর কোন বিকল্প তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। ছেলেমেয়েগুলো খাবে কী?

  • এলেবেলে | 202.142.96.238 | ২৭ জুন ২০২০ ০১:০০94648
  • এখানে দুটো স্তর আছে -

    এক) বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এখানে ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস চালাতে গেলে যে পরিকাঠামো দরকার, তার খরচ আদায় করা হবে অভিভাবকদের থেকেই। এবং সেটাও করা হবে অতিরিক্ত আদায় হিসেবে। ক্লাস চালু রাখারে থেকেও এখানে মূল জোরটা পড়বে ছাত্রছাত্রীদের থেকে টিঊশন ফি আদায় করার অছিলা হিসেবে। এখানে যারা শিক্ষার্থী তারা বা তাদের অভিভাবকরা নিজেদের গরজেই ক্লাস চালু রাখতে চাইবে। অতিরিক্ত খরচ দিতে হলেও। সুতরাং এই ক্ষেত্রটা বাদ রাখাই ভালো।

    দুই) সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত-সরাকারি স্কুল। সেখানে, সত্যি কথা বলতে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্ররা আর স্কুলের পরোয়া করে না দীর্ঘদিন থেকেই। বিকল্প ও সমান্তরাল প্রাইভেট টিউশন সে জায়গা নিয়েছে অনেকদিন হল। কাজেই ছেলেমেয়েদের ও তাদের অভিভাবকদের এ ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই গরজ কম। তার সঙ্গে যুক্ত হবে বিষয় শিক্ষকের ব্যাপারটাও। সেটা কোনও ভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চালানো যাবে না।

    পঞ্চম থেকে অষ্টম এ বছরে পরীক্ষা হবে না বা পাশ-ফেল থাকবে না ঘোষণার পরেই তাদের গরজ কমে গেছে অনেকটাই। যারা ভালো ছেলেমেয়ে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সমান্তরাল ব্যবস্থা খুঁজে নিয়েছে নিজেদের মতো করে। প্লাস এমনিতেই বলা হচ্ছে তাদের স্কুলে আসারই দরকার নেই। মিড ডে মিলের টাকা যা আসছে তাতে নাম-কা-ওয়াস্তে চাল-আলু বিলি করার পরে বাকি টাকার কী সদগতি হচ্ছে তা কেউ জানে না। কায়েমি স্বার্থ এটাকে দীর্ঘমেয়াদি করতে চাইবেই।

    প্রচুর স্কুলে কোয়ারান্টাইন সেন্টার হয়েছে। সেগুলোকে বীজানুমুক্ত করার বিষয়ে সরকার একটি টাকাও ঠেকাবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। বন্যার সময়ে অস্থায়ী আবাস হিসেবে গড়ে ওঠা স্কুলের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত।

    ফলে পড়ে থাকছে ক্লাস নাইন। তাদের সিলেবাস শেষ করার প্রশ্নই নেই। শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে দিয়ে তা সামাল দেওয়া মুশকিল জাতীয় শিক্ষা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। 

    সুতরাং প্রতিবন্ধকতা প্রচুর আছে। শুধু সমস্যাটা শিক্ষার্থীদের তরফেই নয়। এখনও প্রচুর শিক্ষক আছেন যাঁরা এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আদৌ সড়গড় নন। তাঁরা রাতারাতি এক্ষপার্ট হয়ে উঠবেন সে আশা করা বাতুলতা মাত্র।

    আমি বাস্তব সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরলাম মাত্র। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু বাদ দিয়ে সরকার এই ব্যাপারটায় আদাজল খেয়ে লেগে পড়বে, তেমন মনে হচ্ছে না। তবে ওই আর কি - আশায় বাঁচে চাষা। তাতে লেখার উপসংহারটা জব্বর হয় বটে, কিন্তু তার বাস্তব প্রয়োগ হয় না এই যা দুঃখ।

  • অশিক্ষিত | 117.194.33.214 | ২৭ জুন ২০২০ ২৩:৩৬94665
  •  ডিজিট্যাল ক্লাস আর টেলিভিশন ভিত্তিক ক্লাস দুটোর মধ্যে কোনটা ছাত্রদের জন্য বেশি সুবিধার? আর্থসামাজিক মাপকাঠির ভিত্তিতে? এ নিয়ে কি কোন সার্ভে হয়েছে বা কোন ধারণা আছে? ... আমার নিজের ধারণা ডিজিট্যাল ক্লাসে নেটয়ার্ক স্পিড শুধু ছাত্রদের ইমপ্যাক্ট করে তা না, শিক্ষকের পড়ানোকেও ইমপ্যাক্ট করে। তার পর শিক্ষকের ডিজিত্যাল  মাধ্যম ব্যবহারের অপারগতা তো আছেই।  এমন কি করা যায় না যে বোর্ড  ধরে ক্লাস ধরে বিষয়গুলো প্রাইমারিলি টিভিতে ব্রডকাস্ট হল আর তারপর সেটা একটা ভবিষ্যৎ রেফারেন্সের জন্য জমা থাকল ওয়েবসাইটে, ক্লাস, বিষয়, টপিক ধরে।  আর স্কুলের ক্লাস এর উপর ডাউট ক্লিয়ারিং এর জন্য কাজ করল ? এতে কি অন্তত্তঃ আরও বড় সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীকে ছাতার তলায় আনা যাবে না? 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন