পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে পাইন গাছের সারি। তার ফাঁক দিয়ে আঁকাবাঁকা নুড়ি বেছানো হাঁটা পথ। সেই পথ বেয়ে বেয়ে পাহাড়ের একদম চূড়ায় উঠে গেলে নির্জনতার কোলে এক ছোট্ট হ্রদ। এই হল লামাহাটা। মেঘ আর সন্দীপনের খুব ভাব হয়ে গেছে, কারণ সন্দীপন ওর অনর্গল বকবকানি মন দিয়ে শুনছে। হ্রদটার ডানদিকে পাহাড়টা আস্তে আস্তে অন্য ঢাল পেয়েছে - সেদিকটায় লোকজন বেশী আসে না - যদিও জঙ্গলের মাঝে হাঁটাপথের চিহ্ন বলে দেয় এদিকে স্থানীয় লোকেদের আনাগোনা আছে। জায়গাটা একদিকে একটা প্ল্যাটু মতন - তার মাঝামাঝি একটা চ্যাপটা পাথর। এখানে স্বভাবতই ছবি তুলতে আসে লোকজন। কিন্তু অন্যদিকটা নির্জন। আর গাছের ফাঁকে ফাঁকে জড়িয়ে থাকা মিস্ট। কেমন একটা সাররিয়াল পরিবেশ। যেন যে কোন মুহুর্তে ওই কুয়াশার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এক ধবধবে সাদা ঘোড়া - অথবা নীল রঙের একটা আস্ত ড্রাগন ... ...
এই তিন সঙ্গীকে নিয়ে আমাদের বড়া মাঙ্গোয়া পরিদর্শন চলল। অন্য কুকুরেরা টাইসনের সামনাসামনি কিছু বলার সাহস পায় না, তবু মাঝে মধ্যেই লেগে যাচ্ছিল। পাহাড়ি কুকুরেরা মনে হয় এলাকা নিয়ে অতটাও পজেসিভ নয় আমাদের সমতলের কুকুরদের মত। এই নিয়ে পরেও অভিজ্ঞতা হয়েছে। যাই হোক, গ্রামটা হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম - পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে এদিকে সেদিকে ছড়ানো ছেটানো বাড়ি। জুমের ধাপ, বাঁশঝাড়, বাড়ির লাগোয়া ফুলের বাগান - সব মিলিয়ে বেশ একটা স্বপ্ন স্বপ্ন ব্যাপার। দূরে পেশক রোডের বাঁক দেখা যাচ্ছে, মাঝে জঙ্গল। ঢোলু দুষ্টুমি করে কাদাজলে বসে পড়ল একবার, খুশীর বকা খেয়ে আবার সুড়সুড় করে উঠে আমাদের সঙ্গে। ক্যামব্রে বেপাড়ার বন্ধুদের সাথে খানিক ছ্যাবলামো করে এল। গম্ভীর টাইসন আমাদের কাছাকাছিই ছিল। ফেরার পথে লাগল ঝামেলা -- ... ...
মেঘ ইতিমধ্যে প্রায় সব কর্মীদের সঙ্গেই ভাব জমিয়ে ফেলেছে, মাঝে মাঝেই গিয়ে আড্ডা মেরে আসছে। খেয়েদেয়ে বাইরে বেরোতে দেখি ঠান্ডা বেশ কম আজ, বাইরে বেশ ঝলমলে, যদিও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা নেই। ওদিকটা একই রকম - মেঘাচ্ছন্ন। টাইগার হিল যাবার কোন মানেই হত না। বিকাশবাবু হাজির যথাসময়ে গাড়ি নিয়ে - রাজভবনের সামনেই। পটাপট উঠে পড়লাম। গাড়ি চলল আগের দিনের রাস্তা ধরেই ... ...
ম্যাল রোডে ঢোকার মুখেই, দা ওয়ান অ্যান্ড ওনলি - কেভেন্টারস। ছাদে বসে দার্জিলিং চা - ফলোড বাই দা গাবদা পর্ক প্ল্যাটার - অনেকদিনের টার্গেট। খুশীর স্বাস্থ্য বাতিক - সে চিকেন প্ল্যাটার। যতটা ক্যালোরি বার্ণ হল প্রায় ততটাই আবার ভরে গেল। মেঘের আবার ডেজার্টও চাই - কাজেই তার জন্য আইসক্রিম। আমি আইসক্রিমের ভক্ত নই, খুশী তো খাবেই না এসব (সিঙ্গল কান্না)। কেভ'স এ আর কোন ডেজার্ট ও নাই। ... ...
তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়া গেল ঘন্টা খানেকের মধ্যেই। রুমের বাইরে পা রাখতেই বোঝা গেল, ইট'স কুল। কুল মানে একেবারে মহাকুল।বিশ্বকুল। বাপ্রে কুল। একে তো ছয় ডিগ্রি, তায় আবার কুয়াশা। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। কয়েক মিনিটেই জ্যাকেট, সোয়েটার, উলিকটের গেঞ্জি ভেদ করে কাঁপিয়ে দিল একদম। ... ...
জেনেশুনেও ভুলে মেরেছি যে কোভিডকালের পর গাড়িতে বেডরোল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা কম্বল, চাদর, বালিশ কিছুই আনিনি। এদিকে তিনজনেরই আপার বার্থ। কান্নার অজস্র ইমোজি। যত রাত বাড়ছে, তত কাঁপুনি বাড়ছে। ব্যাগ থেকে শীতের জ্যাকেট, মোজা, সব বের করে পরে ফেলেও সারারাত থরহরি কম্প। তিনজনেরই প্রায় নির্ঘুম রাত। ভোর পাঁচটা না বাজতেই সব উঠে পড়েছি। দাঁত ফাত মেজে চাতকের অপেক্ষা, কখন লোয়ার বার্থের ঘুম ভাঙবে, একটু নীচে গিয়ে বসা যাবে ... ...
ব্যাপার হচ্ছে এসব জানা বোঝা সত্ত্বেও আমার একটা দার্জিলিং প্রীতি জোরদার রয়ে গেছে। তার কারণ, ছোটবেলায় দুই বছর বাবার কর্মসূত্রে ছিলাম এই শহরে। গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে ফাইভ, সিক্স। খাদের ধারের রেলিং টা, টুং সোনাদা ঘুম পেরিয়ে। স্মৃতির শহর - বিস্মৃতিরও শহর - কারণ সেই ১৯৮৩ তে দার্জিলিং ছাড়ার পর ফিরে এসেছিলাম ২০০৫ এ - বাইশ বছর পর। তারপর আবার কেটে গেছে পনেরো বছর। হয়তো আরো যেত। কিন্তু আমার পুত্র বাদ সাধিল। ... ...
নন্দীগ্রামে কী হয়েছিল, সবাই জানি। কেন হয়েছিল, সেটা আমার কাছে আজও পরিষ্কার নয়। অধিকারীদের খাস তালুকে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এতবড় তাণ্ডব চালিয়েছিল কোন মোটিভে? জমি দখল? অথচ তার আগেই সরকারী ঘোষণা হয়ে গেছে যে নন্দীগ্রামে কেমিকাল হাব হচ্ছে না, সেজ হচ্ছে না? লক্ষণ- শিশিরের যুদ্ধ? ওইরকম সময়ে, যখন গোটা বাংলা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের দিকে তাকিয়ে টানটান বসে আছে? আমার অঙ্ক মিলছে না। এটা রাজনৈতিক হারাকিরি, সেটা বোঝার জন্য থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লাগার কথা নয়। কিছুই পাবার ছিল না, হারাবার ছিল অনেক (যদি সবটা তখনো না বোঝাও গিয়ে থাকে) - তবুও এই কাণ্ড? এই স্কেলে? ... ...
সম্ভবতঃ এটি সরকারী সাবতাজ প্ল্যানের অঙ্গ হিসাবেই সাধিত হয়েছে - কিন্তু তা হয়ে থাকলে সেটা এ বিরাট ব্যাকফায়ার করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রজাতন্ত্র দিবসে সাধারণ প্রজারা গিয়ে আইন অমান্য করে লালকেল্লায় নিজেদের ঝান্ডা উড়িয়েছে জাতীয় পতাকার নীচে - বিবিধের মাঝে মিলন মহানের এর চেয়ে বড় প্রতীকি বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারত সেদিন? ... ...
ছকটা সহজ, সেই কারণেই এই ছক ভাঙাটা খুব কঠিন। বিজেপি কোন গোপন তাস আর খেলছে না। তারা সরাসরি আমাদের ভিতরের লুকানো ফ্যাসিস্ট প্রবৃত্তিকে বাইরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের ভিতরের শয়তানকে জল বাতাস দিয়ে জাগিয়ে তুলছে। শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারব আমরা? লড়াইটা কিন্তু আমাদের নিজেদের সঙ্গেই ... ...