এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সমীকরণে আগুন ফোঁকে কীসে :স্টিফেন হকিং, মহাবিশ্ব, জৈব নশ্বরতা ও অ-নশ্বর জিগীষা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৮ | ৩৬৫৮ বার পঠিত
  • যে ছেলেটা কলেজে পড়ার সময় ভালবাসত বেপরোয়াভাবে নৌকো বাইতে, এবং তা করতে গিয়ে প্রায়শই নৌকোটির বারোটা বাজিয়ে বিস্তর বদনাম কিনত, সে বা অন্য কেউই বোধহয় কখনও ভাবেনি যে, তার জীবনের শেষ দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে সে শুধু নিশ্চুপে বসে মহাবিশ্বের সাথে কথা বলবে মনে মনে । ছেলেটা মানে স্টিফেন উইলিয়াম হকিং, অসাড় দেহ আর অসীম মেধা নিয়ে মহাবিশ্বের দুর্বোধ্যতার সাথে সাপলুডো খেলে যাওয়া সেই অবিশ্বাস্য বিজ্ঞানী । গণিত দিয়ে বিশ্বকে বাঁধতে চাওয়াটা তাঁর বরাবরেরই, কিন্তু ক্রমেই শুকিয়ে এসেছে স্নায়ু আর পেশি, শিকেয় উঠেছে নিজের হাতে অঙ্ক কষা । গবেষণাপত্র লেখা বা টাইপ করা হয়ে উঠেছে উত্তরোত্তর অসম্ভব । হুইলচেয়ারে কোনওদিনই উঠতে চায়নি সে, হাতের ওপর ভর দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে যেতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে জীবনসঙ্গিনী জেন-এর । মানে ওভাবে যতদিন পারা যায় আর কি । সেই তেইশ বছর বয়েসেই তো ডাক্তারেরা বলে দিয়েছিলেন, দুরারোগ্য ‘মোটর নিউরোন ডিজিস’-এ আক্রান্ত হয়েছেন তিনি, বাঁচবেন আর মেরেকেটে বছর দুয়েক । পরের যেটুকু বাঁচা, সবটাই তাই ফাউ । রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে পরেই শরীর নাড়ানো আর কথা বলার ক্ষমতা সীমিত হয়ে এল । ধরে ধরে হাঁটাতে হত, ঘড়ঘড়ে স্বরে কথা যা বেরোতো তা খুব কাছের লোকজন ছাড়া অন্যের পক্ষে বোঝা কঠিন হচ্ছিল । তাও, তবু তো ছিল কিছু । কিন্তু, উনিশশো পঁচাশি সালে প্রবল নিউমোনিয়া-সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অপারেশন হল শ্বাসনালীতে, তারপর শুধুই নিস্তব্ধতা । বিভিন্ন উচ্চ-প্রযুক্তির গবেষণা সংস্থা এগিয়ে এল বিজ্ঞানী কে কথা বলাতে । মোটরচালিত হুইলচেয়ারে পাকাপাকিভাবে আসীন হলেন তিনি, যার সাথে লাগানো আছে কম্পিউটর-নিয়ন্ত্রিত ‘ভয়েস সিন্থেসাইজার’ বা কথকযন্ত্র । একটি মাত্র আঙুল তিনি নাড়াতে পারেন, আর তাই দিয়েই সুইচ টিপে টিপে রচনা করেন বাক্য, রচনা সম্পুর্ণ হলে যন্ত্র তা উচ্চারণ করে দেয় । তারপর একদিন এল সেই দিন, যখন ওই একটিমাত্র আঙুলও আর চলে না । তখন চশমার ডাঁটিতে বসল সরু কাঠির মত যন্ত্র, যা তাঁর গালের ওপরে ফেলতে থাকে অবলোহিত রশ্মি । গালটা তিনি এখনও একটু নাড়াতে পারেন । তাঁর সামনে টাঙিয়ে রাখা কম্পিউটরের পর্দায় ভেসে ওঠে সম্ভাব্য নানা শব্দ । পছন্দের শব্দটি দেখলেই তিনি গাল নাড়িয়ে দেন, আর সেটা করলেই অবলোহিত-সংকেত গিয়ে পৌঁছোয় কম্পিউটরে, যন্ত্র বুঝে নেয় তাঁর পছন্দের শব্দটি । এভাবে অতি ধীরে ধীরে শব্দ সাজিয়ে সাজিয়ে গোটা বাক্য তৈরি হলেই কথকযন্ত্র তা উচ্চারণ করে দেয় মার্কিন ভঙ্গিমায়, যদিও তিনি মার্কিনী নন, ব্রিটিশ । ডাক্তারি ভবিষ্যদ্বাণীকে নস্যাৎ করে পাওয়া আধ শতাব্দীর ‘ফাউ’ জীবনকালে তিনি হুইলচেয়ারে বসে নিশ্চুপে ধ্যান করেন সসীম কিন্তু কিনারহীন ঈশ্বরবর্জিত ব্রহ্মাণ্ডের, চোখ বুজলেই দেখতে পান অকল্পনীয় অনীহার সাথে উবে যেতে থাকা কৃষ্ণগহ্বরদের । স্থান-কাল-বস্তুর অন্তর্নিহিত জ্যামিতি জীবিত হয়ে ওঠে তাঁর নিঃশব্দ কল্পনার সাহচর্যে । অসাড় দেহকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে প্রকাশিত হতে থাকে অমোঘ সব গবেষণাপত্র আর গ্রন্থাবলী । শুধু সতীর্থ বিজ্ঞানীদের জন্য নয়, সাধারণ অনুসন্ধিৎসুদের জন্যও ।

    হকিং-এর পূর্বসূরী, আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গ্যালিলিও বলতেন, গণিত হল প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা । তাই, প্রকৃতির চালচলন সবচেয়ে ভাল প্রকাশ করতে পারে গণিতই । অন্য সব বিজ্ঞানের থেকে এ কথাকে সবচেয়ে বেশি মান্য করেছে পদার্থবিজ্ঞান । নিউটন-ম্যাক্সওয়েল-আইনস্টাইন-বোর-হাইজেনবার্গ-ডিরাক হয়ে ভাইনবার্গ-পেনরোজ-হকিং পর্যন্ত সে ট্রাডিশন সমানেই চলেছে । তবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় শুধু ছাড়পত্র পায় সেটুকুই, যা নাকি অভিজ্ঞতা এবং/অথবা গণিতের দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত । অথচ মহৎ বিজ্ঞানী সবসময় শুধু তাতেই সন্তুষ্ট হন না, যা প্রমাণিত তা নিয়েও তিনি তুলতে চান কূট প্রশ্ন । সে প্রশ্ন হয়ত তাঁকে সাময়িকভাবে টেনে নিয়ে যায় দর্শনের আঙিনায়, প্ররোচিত করে প্রতিষ্ঠিত ধ্যানধারণার ভিত্তিগুলোকে আবার খুঁটিয়ে দেখতে, আরেকবার যাচাই করে নিতে । আপাতভাবে বিজ্ঞান-বহির্ভূত প্রশ্ন এভাবেই ঢুকে পড়ে বিজ্ঞানের কেন্দ্রে, তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় অজানার দিকে । ঠিক তেমনই কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন হকিং-ও । তাঁর কোটি-কপি-বিক্রি-হওয়া বই ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’-এ মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ঐতিহাসিক অগ্রগতির উত্তেজক বর্ণনা দেবার পর বইয়ের শেষ অধ্যায়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ধরা যাক মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু তথ্যকে ধারণ করতে পারে এমন এক সর্বব্যাপী গাণিতিক তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হল । কিন্তু, গাণিতিক তত্ত্ব তো নিছকই এক বর্ণনামূলক হাতিয়ার, সে কি নিজেই নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা হতে পারে ? ওইসব গাণিতিক নিয়ম মানবার জন্য একটি আস্ত ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব আদৌ থাকবে কেন, সে প্রশ্নের উত্তর কি ওতে থাকবে ? গণিতের বায়বীয় ফর্মুলাগুলো কীভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে ? “What is it that breathes fire into the equations” --- সমীকরণে আগুন ফোঁকে কীসে ? প্রথম দর্শনে মনে হয়, হকিং বুঝি বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করে কোনও এক মিস্টিক বা ঐশ্বরিক অবস্থান নিতে চাইছেন । এমনকি, ওই বইয়েই তাঁর বিখ্যাত ঘোষণা --- সে তত্ত্ব তাঁকে সন্ধান দেবে ঈশ্বরের মনের (“দ্য মাইন্ড অফ গড”) --- এ সন্দেহকে আরও দৃঢ় করে তুলতে পারে । এ ইঙ্গিত নিয়ে সে সময় হইচই-ও হয়েছিল খুব, যা হয়ত বইটির বিক্রি বাড়াবার কাজে প্রভূত সাহায্যও করে থাকতে পারে । কিন্তু, বইটির প্রথম সংস্করণের মুখবন্ধে আরেক স্বনামধন্য বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান জল ঢেলে দিয়েছিলেন সে সম্ভাবনায় । অননুকরণীয় ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, ‘এ বই ঈশ্বর সম্পর্কে ...... কিম্বা হয়ত ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সম্পর্কে’ । কেন অনস্তিত্ব সম্পর্কে, সেটা বুঝতে গেলে বইটা খুঁটিয়ে পড়তে হবে, জানতে হবে হকিং-এর কাজের মর্মবস্তু । আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব দিয়ে মহাবিশ্বের যে সমস্ত গাণিতিক সমীকরণ বানিয়েছিলেন, সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছিল, তা থেকে এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে --- মহাবিশ্বের শুরুতে থাকবে স্থান-কাল-বস্তুর এমন এক অসীম ঘনত্বসম্পন্ন বিন্দু যেখানে বিজ্ঞানের নিয়ম-কানুন কাজ করবে না, ফলে বিশ্বসৃষ্টির প্রক্রিয়া পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক যুক্তির আওতায় থাকবে না (যে বিন্দুকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় ‘সিঙ্গুলারিটি’) । কাজেই, বিশ্বসৃষ্টিতে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ দাবি করার অল্প একটু জায়গা ঈশ্বরবিশ্বাসীর জন্য ফাঁকা পড়ে থাকবে । হকিং তাঁর প্রথম দিকের গবেষণায় সেরকম দেখতে পেলেও পরে রজার পেনরোজের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় দেখান, মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে গোড়ায় অতিসূক্ষ্ম আয়তনের কারণে শুধু সাধারণ আপেক্ষিকতা নয়, কোয়ান্টাম তত্ত্বের নিয়মকানুনও একই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠবে, এবং সেটা হিসেবে ধরলে আর ‘সিঙ্গুলারিটি’-র উদ্ভব ঘটার কথা নয় । অর্থাৎ, সেক্ষেত্রে বিশ্বসৃষ্টির গোড়ায় আর কোনও অযৌক্তিকতা থাকছে না, এবং ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের জন্যও আর কোনও জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকছে না । ফলে ঈশ্বর হয়ে পড়ছেন সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় । কিন্তু তাহলে, হকিং ওই বইয়ে ওভাবে ‘মাইন্ড অফ গড’ জেনে ফেলার কথা তুললেন কেন ? নিছকই বইয়ের বিক্রি বাড়ানোর জন্যে ? সুখের বিষয়, এখন আর আমাদের সে নিয়ে আকাশপাতাল ভাবার দরকার নেই, কারণ জীবনের সায়াহ্ণে এসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি সে প্রশ্নের পরিষ্কার জবাব দিয়ে গেছেন । ২০১৪ সালে ‘এল মুন্দো’ পত্রিকাকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেন তার বাংলা তর্জমা এরকম হবে, “ঈশ্বরের মন জেনে ফেলার কথা বলে আমি যা বোঝাতে চেয়েছিলাম তা এই যে, ঈশ্বর যদি থাকতেন, তো তিনি যা যা জানতে পারতেন আমরা তার সবই জানতে পারব [ওই তত্ত্ব আবিষ্কার করলে] । তবে, ঈশ্বর তো নেই । আমি একজন নাস্তিক ।” বলা বাহুল্য, এর মধ্যে অজ্ঞতাগর্বী ভক্তির বিন্দুমাত্র প্রকাশ নেই, আছে শুধু এক আপাদমস্তক বিজ্ঞানীর বৌদ্ধিক ঔদ্ধত্য ও আশাবাদ ।

    অবশ্য, আরও কঠিন প্রশ্ন থেকে যায় এর পরেও । বোধবুদ্ধি-অতিক্রমী কোনও মিস্টিক বা ঐশ্বরিক ইঙ্গিত যদি তিনি না-ই করে থাকেন, তবে তাঁর ওই অদ্ভুত প্রশ্নটির অর্থ কী --- “What is it that breathes fire into the equations” --- সমীকরণে আগুন ফোঁকে কীসে ? এ প্রশ্নের নিরীশ্বরবাদী অর্থ তবে কী হতে পারে ? একটু তলিয়ে ভাবলে বোঝা যাবে, অর্থ অবশ্যই হতে পারে, এবং হয়ত শুধু নিরীশ্বরবাদী অর্থই হতে পারে । আসলে, আমাদের জানাচেনা বিজ্ঞানে আমরা বর্ণনা দেবার চেষ্টা করি প্রকৃতির নানা জটিল ও বিচিত্র চালচলনের, তার মধ্যে খোঁজার চেষ্টা করি নানা নকশা আর নিয়মিতি, সেটা পাওয়া গেলে তাকে বলি ‘জগতের নিয়ম’, বা, ‘বস্তুর ধর্ম’ । আর ওইভাবে বর্ণনাটা একবার ঠিকঠাক দেওয়া গেলে আসে ব্যাখ্যার প্রশ্ন, ‘কেন ওই রকম চালচলন’ সেই প্রশ্ন । কীভাবে হবে সে ব্যাখ্যা ? কেন, এক ধর্মের ব্যাখ্যা হবে আগে থেকে জানা আরেক ধর্ম দিয়ে, ওটা হলে এটা না হয়েই পারেনা এই রকম যুক্তিতর্ক দিয়ে । যেমন, গ্রহ-নক্ষত্র কীভাবে চলাফেরা করে সে ব্যাপারে হাজার হাজার বছরের পর্যবেক্ষণ থেকে নানা সংশোধনের মধ্যে দিয়ে খাড়া হল উপবৃত্তাকার জ্যামিতির তত্ত্ব, আর সে গতিপথ কেন উপবৃত্তাকারই হতে হবে তার ব্যাখ্যা হল বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ ধর্ম দিয়ে । অবশ্য, যে ধর্মকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তার চেয়ে, অন্য যে ধর্মটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তাকে, বেশি গভীর ও মৌলিক হতে হবে । যেমন, মাধ্যাকর্ষণ ধর্মটি গ্রহের উপবৃত্তাকার গতিপথের ধর্মের চেয়ে বেশি মৌলিক । ঠিক সেইরকম, সমাজজীবনে আমাদের আচরণকে আমরা ব্যাখ্যা করি ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব দিয়ে, ব্যক্তি-মনকে ব্যাখ্যা করি স্নায়ুবিজ্ঞান দিয়ে, স্নায়ু-প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করি কোষতত্ত্ব দিয়ে, কোষের ক্রিয়াকলাপের ব্যাখ্যা দিই রসায়ন দিয়ে, রসায়নের ব্যাখ্যা দিই আণবিক পদার্থবিদ্যা দিয়ে, আর আণবিক পদার্থবিদ্যার ব্যাখ্যা দিই আরও ছোট মাপের পদার্থকণার কোয়ান্টাম ধর্ম দিয়ে । প্রত্যেকটিই তার আগেরটির উপাদানস্বরূপ, এবং সেইহেতু তার চেয়ে বেশি মৌলিক । এইভাবে বস্তুর নিম্নতর সংগঠনের ধর্ম দিয়ে উচ্চতর সংগঠনের ধর্মের ব্যাখ্যা দেওয়ার পদ্ধতিকে বলে ‘রিডাকশনিজ্‌ম্‌’, বাংলায় হয়ত চলতে পারে ‘পর্যবসনবাদ’, অর্থাৎ এক ধর্মকে আরেক ধর্মে ‘রিডিউস’ বা পর্যবসিত করার রীতিনীতি । এ পদ্ধতির সাফল্য বিরাট, যদিও সে সাফল্যের সীমা নিয়ে জোরালো সব কূট প্রশ্নও আছে, এবং এখানে সে সব প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই । আমাদের বরং এখুনি যেতে হবে অন্য আরেক কূট প্রশ্নে । বস্তুধর্মের ব্যাখ্যা দিতে দিতে যতই গভীরে যাই না কেন, শেষতম (বা গভীরতম বা মৌলিকতম ইত্যাদি) যে ধর্মে গিয়ে ঠেক খেতে হবে সেও তো নিছক একটা ধর্মই, কোনও একটা গাণিতিক সূত্রেই তার প্রকাশ । কিন্তু, যেমনটি গণিতজ্ঞ ইউজিন হ্বিগনার তার ‘দি আনরিজনেব্‌ল্‌ এফেক্টিভনেস অফ ম্যাথমেটিক্স’ প্রবন্ধে এক অদ্ভুত হতাশামাখা কৌতুহলের সাথে লক্ষ করেছেন, গণিত জিনিসটি বিজ্ঞানে বড্ডই কাজে লাগে বটে, কিন্তু আসলে তার সাথে পদার্থের কোনও অনিবার্য সম্পর্ক নেই, অন্তত এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু জানা যায়নি । বস্তুর অস্তিত্ব কোথায় সেটা আমরা আঙুল (বা যন্ত্র) দিয়ে দেখাতে পারি, কিন্তু সংখ্যা বা যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ কোথায় রয়েছে সেটা ওভাবে দেখানো যায় না । একটি ল্যাংড়া আম বা একটি লোককে দেখানো যায়, ‘এক’ সংখ্যাটিকে নয় । যে ‘পাই’ সংখ্যাটি আসে বৃত্তের পরিধি মাপতে, সে-ই আবার গণিতের অমোঘ আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় চলে আসে কোয়ান্টামতত্ত্ব আর জনসংখ্যাতত্ত্বের মত সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন বিভিন্ন ক্ষেত্রেও, কেন কীভাবে আসে তার বাস্তব তাৎপর্য সবসময় বোঝা যায় না । ফলত যেটা দাঁড়ায় তার মোদ্দা কথাটা এই যে, বিজ্ঞানের কার্যকারণ-অনুসন্ধান শেষকালে গিয়ে ঠেক খায় বস্তুর মৌলিকতম ধর্মে, যাকে গণিত দিয়ে শুধু বর্ণনাই করা যায়, তার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা করা যায়না । যস্যার্থ, মহাবিশ্বের সব জানা কথাকে ধারণ করতে পারে এরকম একটিমাত্র চূড়ান্ত গাণিতিক সূত্র যদি পাওয়াও যায় (বহু-আকাঙ্খিত সেই “থিওরি অফ এভরিথিং”), তো সেটা কিন্তু তখনও স্রেফ এ জগতের বর্ণনা হয়েই থাকবে, নিজেই নিজের অস্তিত্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে না । আর তখনই হকিং তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেবেন, ওই সূত্র মেনে চলার জন্য আদৌ একটা আস্ত মহাবিশ্ব থাকবে কেন হে ? অস্তিত্বের ঝঞ্ঝাট-টুকু সে নিতে যাবে কেন ? ধারণার জগতে বাস করা গাণিতিক সংখ্যা আর প্রক্রিয়াগুলো বাস্তব জগতের মধ্যে মূর্ত আর জীবন্ত হয়ে ওঠে কীভাবে --- “What is it that breathes fire into the equations” --- সমীকরণে আগুন ফোঁকে কীসে ? হকিং দুঃখ করেছিলেন, এ সব নিয়ে তো বিজ্ঞানীদের চেয়েও বেশি ভাবার কথা দার্শনিকদের, কিন্তু তাঁরা কেউই যে আধুনিক বিজ্ঞান বোঝেন না ! অ্যারিস্টটল আর কান্টের মত ক্লাসিক দার্শনিকেরা নিজেদের সমসাময়িক বিজ্ঞানটা ভাল করে পড়তেন ও বুঝতেন । কিন্তু আজকের বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর গণিতনির্ভর, তাই দার্শনিকরা তা বুঝতে পারছেন না, এবং হ্বিটগেনস্টাইনের মত দার্শনিক ঘোষণা করে দিচ্ছেন, দার্শনিকদের কাজ নাকি শুধুই ভাষার বিশ্লেষণ !

    এক অর্থে হকিং-এর এ জিজ্ঞাসা হল আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত প্রশ্নের যৌক্তিক সম্প্রসারণ মাত্র, যে প্রশ্ন তিনি করেছিলেন তাঁর সহকারী আর্নস্ট স্ত্রস-কে --- ‘আমি দেখতে চাই যে ঈশ্বর ইচ্ছে করলে এ জগতকে অন্যভাবে বানাতে পারতেন কিনা’ । বিশ্বাসীজন ভেবে দেখলে হতাশ হবেন, এর ভেতরে যতই ঐশ্বরিক ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে বলে মনে হোক, আসলে তা স্রেফ মরীচিকা । ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে যদি ঈশ্বরকে মেনে নেওয়া হয় তাতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না, কারণ তখন ঠিক ওই একইভাবে ঈশ্বরের কারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে । আর ঈশ্বরকে স্বয়ম্ভূ ঘোষণা করে যদি এ প্রশ্নকে ধামাচাপা দেওয়া হয় তো তার ফল হবে বিপজ্জনক, কারণ, স্বয়ম্ভূ-ই যদি ঘোষণা করতে হয় তো সরাসরি ব্রহ্মাণ্ডকেই তা ঘোষণা করা উচিত, ঈশ্বর ভদ্রলোককে আবার মাঝখান থেকে ডেকে আনা কেন ? কিন্তু তবে, এর নিরীশ্বরবাদী সমাধানটিই বা কি ? সত্যি বলতে কি, সেটা এখনও কেউই জানেন না । হকিং প্রশ্ন করেছেন, “Is the unified theory so compelling that it brings about its own existence?” অর্থাৎ, ইউনিফায়েড থিওরিকে যদি নিজের অস্তিত্ব নিজেই জাহির করতে হয় তো তাকে যথেষ্ট ‘কম্পেলিং’ হতে হবে । ‘কম্পেলিং’ বলতে ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি ? অনিবার্য ? অমোঘ ? সে তত্ত্বের মধ্যেকার এমন কোনও গুণ, যার ফলে বোঝা যাবে যে অস্তিত্ব থাকতেই হত, এবং তাকে যেমনটি দেখছি ঠিক তেমনটিই হতে হত, তা না হয়েই পারত না ? কিন্তু, বিমূর্ত বায়বীয় গাণিতিক সূত্রাবলীতে কীভাবে সঞ্চারিত হবে সে গুণ ? ভবিষ্যতে কোনওদিন কি একবিন্দুতে এসে মিলবে সংখ্যা ও বস্তুর অস্তিত্ব ? আবিষ্কৃত হবে কি এমন কোনও স্বয়ংসত্তাবান গাণিতিক রাশি বা প্রক্রিয়া, যা নাকি ধারণ করতে পারে অস্তিত্ব ও বিকাশের মৌলিকতম টানাপোড়েনগুলো, এবং সেইহেতু পরিষ্কার বোঝা যায় যে তারা কেন বিজ্ঞানে ‘কাজে লাগে’ ? কীভাবেই বা আবিষ্কার হবে সে স্বয়ংসত্তাবান গণিত ? কোনও প্রতিভাবান পদার্থবিদ কি অস্তিত্ব-রহস্যের সমাধান করার জন্য নিজেই নিজের নতুন গণিত সৃষ্টি করে নেবেন, যেমন নিউটন সৃষ্টি করেছিলেন ক্যালকুলাস, বা পল ডির‍্যাক বানিয়ে নিয়েছিলেন ‘ডেল্টা ফাংশন’ ? অথবা, কেজোমিকে ঘৃণা করা কোনও এক অপাপবিদ্ধ গণিত-শিল্পী স্রেফ নিজের খেয়ালে বানিয়ে তুলবেন সে গণিত, যাতে কোনও অপেক্ষমান প্রকৃতিবিজ্ঞানী তা লুফে নিতে পারেন, যেমনটি আইনস্টাইন লুফে নিয়েছিলেন রীমানের জ্যামিতি ?

    সুকুমার রায় তাঁর অননুকরণীয় অমোঘ সহজতায় উচ্চারণ করেছিলেন, ‘বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে, অর্থাৎ কিনা লাগছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে’ । স্থান-কাল-বস্তুর শেষ সত্যের খোঁজে কোনও এক অতিবৃহৎ বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রের স্তরে গিয়ে কি ঠেলা লাগবে পঞ্চভূতের মূলেতে ? সে প্রশ্নের ব্যাটন আইনস্টাইনের হাত থেকে নিয়ে অশক্ত শরীরে তীব্র মানসিক শক্তি সঞ্চার করে আধ শতাব্দী ধরে প্রাণপণ ছুটেছেন হকিং । গত চোদ্দই মার্চ তিনি তা ছেড়ে গেলেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য ।

    তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ করেছেন, ইরাক আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন, ইজরায়েলে অনুষ্ঠিতব্য হাই-প্রোফাইল বিজ্ঞানী-সম্মেলন বয়কট করেছেন, পরমাণু বোমার বিরোধিতা করেছেন, স্টেম সেল গবেষণা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছেন । বরাবর ছিলেন লেবার পার্টির সমর্থক, ঘৃণা করতেন রক্ষণশীলদের । মোটরচালিত হুইলচেয়ার নিয়ে কেরামতি দেখানোর অছিলায় ইচ্ছে করে চাকা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রিন্স চার্লসের পা । প্রকাশ্যে আফশোসও করেছেন, মার্গারেট থ্যাচারকে ওইভাবে মাড়িয়ে দেবার সুযোগ পাননি বলে । অসুস্থ, নিশ্চল, অথচ প্রচণ্ডভাবে জিজীবিষু সেলিব্রিটি স্বামীর সেবা করতে করতে তাঁর জীবনসঙ্গিনী জেন একসময় নিজেকে তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর বলে ভাবতে থাকেন, মুক্তি খোঁজেন এক সঙ্গীতজ্ঞের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নির্মাণে । হকিং তা অনুমোদন করেন, এবং বলেন, আমাকেও ভালবেসো কিন্তু । তবু শেষে ছিন্ন হয় সম্পর্ক, পাকাপাকিভাবেই ডিভোর্স হয়ে যায় । হকিং বিয়ে করেন তাঁর নার্স এলেইন মেসন-কে । কানাঘুষো শোনা যায় শারীরিক নির্যাতনের । হকিং-য়ের কখনও কব্জিতে চিড়, কখনও হাত ভাঙা, ঠোঁট ফাটা, গালে কাটা দাগ । পুলিশের কানে যেতে শুরু হয় তদন্ত, কিন্তু হকিং সমস্ত অভিযোগ বাতিল করেন, বলেন, ওর ভালবাসাতেই তো বেঁচে আছি । চোদ্দই মার্চ এক শোকবার্তায় তাঁর পুত্র-কন্যারা জানান, তাঁদের আদরের বাবা একদা বলেছিলেন, সে ব্রহ্মাণ্ড কীসের ব্রহ্মাণ্ড, যে ব্রহ্মাণ্ডে আমার ভালবাসার লোকের ঘর নেই !

    মানুষের জীবনের সমীকরণে আগুন ফোঁকে কীসে ? সেও বুঝি সেই আজও-অধরা স্বয়ংসত্তাবান গণিত !
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৮ | ৩৬৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debasis Bhattacharya | 59.14.173.125 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৮ ০২:১৯63959
  • পড়েছি খুব ভালো লেগেছে দেবাশিস দা ।
  • Debasis Bhattacharya | 52.110.146.17 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৭:২৫63960
  • খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা। কি দারুণ সব প্রেক্ষিত। জাস্ট দারুণ।
  • Debasis Bhattacharya | 52.110.146.17 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৭:২৫63961
  • খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা। কি দারুণ সব প্রেক্ষিত। জাস্ট দারুণ।
  • Debasis Bhattacharya | 127.226.154.15 (*) | ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৮:০৮63962
  • জীবনানন্দ, হকিং এদের অধিকার কাউকে দেবেন না আপনি,বেশ বুঝতে পারছি।
  • Debasis Bhattacharya | 127.194.1.199 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৪১63963
  • Khub Sundar lekha!!!
  • | 52.110.140.102 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৫63965
  • এই লেখা পড়ে দেবাশীষদাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। শুধু যে উনি সময় করে ধৈর্য ধরে উত্তর দিয়েছেন শুধু তা নয়; ওনার বাংলা ভাষাটাও একটু খেয়াল করবেন।
    (অ:আমি; দে:দেবাশীষদা)

    অ:
    অসম্ভব সুন্দর ভাষা! অনেক ধন্যবাদ!

    আচ্ছা একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে। গণিত কি নিরপেক্ষ বিষয়? মানে যিনি তাঁর চর্চা করছেন তার ভাবনার পরিসরের বাইরে কি তাঁর গণিত চর্চা উঁকিঝুঁকি মারতে পারে, হয়ত তাঁরই অজান্তে? একটা পোকা , একটা বাদুড় আর একটা মানুষের গণিতবোধ কি এক? গণিত কি প্রজাতির আহরণ ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে? ধরা যাক কোনো এক ঘটনা/বস্তু/বিষয়কে একটা গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে বোঝানো যায়। তাহলে কি ধরে নেওয়া চলে যে সমীকরণবিদ তার আহরণ ক্ষমতা অনুযায়ী যা বুঝছেন তাকেই বোঝাতে এই সমীকরণ এনেছেন..অন্য প্রজাতির বুদ্ধিমান প্রাণীর সমীকরণ অন্য রকম হতেই পারতো। নিজের নিজের নিরীক্ষণ ক্ষমতা দুদিকেরই সমীকরণকে মান্যতা দিতে পারে(ধরা যাক এই মুহূর্তে)। আসল ঘটনা/বস্তু কী তা জানা যাবেনা কোনোদিনও। কারণ আসল বলেই কিছু হতে পারেনা। নাকি আসলের সন্ধান ধোঁয়াটে বাজে চিন্তা? নিজ প্রজাতির নিরীক্ষণ বোধের উপরে ভরসা করা উচিৎ। তৈরি হয়ে ওঠা সমীকরণকে সবদিক থেকে আক্রান্ত করে করে শান দিয়ে চলা উচিৎ.?

    প্রসঙ্গত- আমার ভাসা ভাসা গণিত বোধ ক্লাস টেন পর্যায়ের। তারপর থেকে আর কিছুই জানা হয়নি।

    দে:
    চিত্তাকর্ষক প্রশ্ন, তবে কিনা, এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে গেলে আমা্র অতিক্ষুদ্র জ্ঞানবুদ্ধিতেও পাঁচ হাজার শব্দের প্রবন্ধ হয়ে যাবে । শুধু এটুকু বলি, অন্য কোনও প্রাণি গণিত-সক্ষম হলে তার গণিত আলাদা হত কিনা এটা অভিজ্ঞতা দিয়ে যাচাই করার কোনও উপায় নেই, যেহেতু আমরা এখনও পর্যন্ত মানুষ ছাড়া আর তেমন কোনও প্রাণির দেখা পাইনি । তবে, তাত্ত্বিকভাবে ভাবলে আপাতভাবে মনে হয় যে তেমনটা সম্ভব হলেও হতে পারে । আবছাভাবে মনে পড়ে, একবার এক গণিতজ্ঞকে বলতে দেখেছিলাম, আমরা যেমন আগে ডিসক্রিট ম্যাথমেটিক্স (অর্থাৎ এক দুই তিন এই রকম বিচ্ছিন্ন সংখ্যা গুণতে পারা) শিখে তারপর কনটিন্যুইটির ধারণায় যেতে পেরেছি (অর্থাৎ দুটি পূর্ণ সংখ্যার মাঝে অসংখ্য নিরবচ্ছিন্ন ভগ্নাংশের অস্তিত্বের ধারণা), ডলফিনরা অঙ্ক জানলে নাকি তা হত না, ওরা যেহেতু তরলের মধ্যে থাকে তাই নিরবচ্ছিন্ন সংখ্যাই আগে শিখে ফেলত । জানি না এটা কতদূর সত্যি । তবে, এটুকু তাত্ত্বিকভাবে স্বীকার করেও আমি পরম সত্যে বিশ্বাসী, তা না হলে যুক্তিবাদী হয়ে লাভ কি ? আমার একান্ত ধারণা, সাংস্কৃতিক এবং/অথবা জৈব অর্থে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাণিদের আবিষ্কৃত গণিত যদি আপাতদৃষ্টিতে আলাদা হয়ও, তো উচ্চতর কোনও স্তরে তাদের মধ্যে 'ম্যাথমেটিক্যাল ইকুইভ্যালেন্স' নিশ্চয়ই দেখানো যাবে । সত্য তো ওইজন্যই সত্য । আপনি একটা লোহার ডান্ডা নিয়ে যেভাবেই অঙ্ক কষুন না, ওটা আপনার মাথায় লাগলে তো ফাটবেই ।

    উপলব্ধি যে আপেক্ষিক সে নিয়ে তো প্রশ্নই উঠতে পারেনা । যে মৌমাছিটি তার ছোট্ট শরীর নিয়ে উড়তে উড়তে তার পুঞ্জাক্ষি দিয়ে অবলোহিত রশ্মিতে জগতটাকে দেখে, তার দেখা আর আমার দেখা এক হবে কীভাবে ? কিন্তু, সত্য আপেক্ষিক কিনা, প্রশ্নটা সেখানেই । এ নিয়ে কূট তর্ক অনেক হয়েছে ঠিকই । কিন্তু, এই যে মৌমাছির মত করে জগতকে না দেখেও আমি জানতে পারছি যে সে অবলোহিত রশ্মিতে দেখে, এবং এও বুঝতে পারছি যে সেটা কাজে লাগিয়ে মাকড়সা তাকে কীভাবে ফাঁদে ফেলে, তখন কি আমি প্রজাতি-অতিক্রমী এক পরম সত্যে পৌঁছই না ? একজন যুক্তিবাদী হিসেবে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, যুক্তি দিয়ে সত্যকে পাওয়া যায়, এবং সে সত্য আপেক্ষিক নয়, পরম (না হলে আর যুক্তির দাম কীসে?) । তবে, ব্যাপারটা খুব সরল নয় । সত্যে আপেক্ষিকতা না থাকলেও স্তরভেদ আছে, জটিল শর্তাধীনতাও আছে ।

    অ:
    এই পরম সত্য নিয়েই বিস্তর সন্দেহ হয়। সে সত্য যদি আমার প্রজাতির নিরীক্ষণ প্রণালীর বাইরেই হয় তাহলে তা দিয়ে কী হবে- এমন একটা চিন্তা হয় মাঝে মধ্যে। তবে এসবই নেহাত কম জানার ফলে হয়ত। তাছাড়া আমি খুব যে যুক্তিবাদী এমনটাও নয়। তাই হয়ত কিছুটা খাপছাড়া এলোমেলো ভাবতে ভালো লাগে।

    আপনি যে সময় করে এত ভালো একটা লেখা লিখলেন, প্রশ্রয় দিয়ে ভাবনাদের উস্কে দিলেন তার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ!
    কে বলে বাংলায় গূঢ় কিছু চর্চা করা যায়না! এইরকম ভাষা এবং প্রকাশ দিয়ে তাদের ভুল ভেঙে দেওয়াই যায়।

    দে:
    পরম সত্য নিয়ে আমার একটুও সন্দেহ হয় না ভাই । সে জন্যেই তো বেঁচে আছি ।

    অ:
    উত্তর মীমাংসা এবং থেরবাদী বৌদ্ধ মতের সাথে এইখানেই যুক্তিবাদের একটা বেশ মিল আছে। লক্ষ্যে নয় পদ্ধতিতে।
    নেতি নেতি করতে করতে প্রথম পক্ষ মেনেই নিয়েছেন আগাম যে যা পড়ে থাকবে তার স্বজ্ঞা থাকবে,দ্বিতীয় পক্ষ বলছেন কিস্যু থাকবেনা, আর যুক্তিবাদ বলছেন যে জানা নেই কী থাকবে। লক্ষ্য নয় পথই পরম।
    'পরম সত্যবাদ' হয়ত এই তিনেরও গভীরে,তিনেরও উজানে থাকা কিছু। এবং/অতএব তারই জন্যে বেঁচে থাকা চলে!

    দে:
    বন্ধু, পরম সত্যকে মানার সমস্যা অনেক, কিন্তু না মানার সমস্যা যে আরও বেশি ! যদি আপনি বলেন যে 'পরম সত্য বলে কিছু নেই', আমি হয়ত তখনও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি, 'যা বললেন সেটা কি পরম সত্য?' । পারি না ?

    অ:
    নেই বলিনি তো দেবাশীষদা। বলছি যে সন্দেহ হয় মাঝে মাঝে। শুধু তা থাকা নিয়ে নয়। থাকলে (সেও এক সম্ভাবনা বইকি, বড় সম্ভাবনা) তাকে আদৌ ব্যক্ত করা যাবে কিনা তা নিয়েও। মানুষী ভাষা কিম্বা গাণিতিক ভাষা কী প্রাণ নিরপেক্ষ, প্রজাতি নিরপেক্ষ পরমকে ব্যক্ত করতে পারবে- এইটা নিয়েই ভাবনা। বা স্রেফ কৌতূহল বলতে পারেন।
    এবং আপনি ঠিকই বলেছেন, না মানতে পারার সমস্যা ঢের ঢের বেশি। যে কারণেই বুদ্ধিমান প্রাণী সেই পরমের স্বজ্ঞা খুঁজতে চায়। আরোপও করে এমনকি কাব্যাভাসে খুঁজে পাওয়ার দাবীও করে।

    দে:
    ঠিক, মানুষ পরমকে খোঁজে, সঠিক পরমকে না পেয়ে ভুয়ো পরমকে আঁকড়ায় । ঈশ্বরও তো এক রকমের পরমই, শুধু ভুয়ো এই যা । তবে, আপনি পরমকে না মানার যে সমস্যার কথা বলেছেন আমি কিন্তু সে সমস্যার কথা বলিনি (যদিও আপনার উল্লেখ করা সমস্যাটিও বাস্তব) । আপনি বলছেন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কথা, আর আমি বলছি মূলগত আস্তত্বিক (ontological) সমস্যার কথা । দেখাতে চেয়েছি, 'পরম সত্য বলে কিছু নেই' --- এই বাক্যটি একটি যৌক্তিক বচন বা লজিক্যাল প্রোপোজিশন হিসেবে হিসেবে দাঁড়াতেই পারে না, ঠিক-ভুল বিচার তো পরের প্রশ্ন ।

    পরিশেষে আরও কিছু চিত্তাকর্ষক কথা বলেছেন বিমান বিশ্বাস:
    ইন্টারেষ্টিং আলোচনা! অধুনা বিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর কথোপকথনে এই বিষয়টা হালকাভাবে উঠে এসেছিল। ব্রায়ান গ্রীন এবং নীল ডিগ্রাস টাইসন। ডঃ গ্রীনের বক্তব্য ম্যাথস দরকার আমাদের জন্য। প্রকৃতিকে বোঝবার জন্য আমরা ম্যাথস আবিস্কার করেছি। মজা করে বলেছিলেন যে এলিয়েনদের সঙ্গে দেখা হলে তাদের সঙ্গে কথোপকথনে ওরা জানতে যদি চায় যে কিভাবে তোমরা প্রকৃতি সম্মন্ধে জ্ঞান লাভ করলে? মানুষেরা গণিতের কথা বললে, ইকোয়েশান দেখালে, এলিয়েনরা বলতে পারে, "হাঃ হাঃ ওহ ম্যাথস্‌! উই ট্রায়েড দ্যাট! ..." আবার অন্য দিকে Edward Frenkel ফিজিক্স ছেড়ে ম্যাথস নিয়েছেন বখ্যাত পদার্থবিদ মারে গেল মান এর আবিস্কারের কথা জেনে। ম্যাথস দিয়েই প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করা যায় জেনে ম্যাথস নিয়ে গবেষণা করতে আরম্ভ করেন। এক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এর আলোচনার কথা শুনেছিলাম। দার্শনিক ঈশ্বর বিশ্বাসী। বিজ্ঞানী আলোচনায় গ্যালিলিওর ম্যাথামেটিক্স ইজ দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ উইথ হুইচ গড হ্যাজ রিটন্‌ দ্য ইউনিভার্স। (কখনো কখনো কোন লেখায় "ইন হুইচ" ও দ্যাখা যায়) বিখ্যাত উক্তির কথা বললে দার্শনিক নাকি বলেন, গড ডিডন্ট নিড এনি সাচ ল্যাঙ্গোয়েজ অর ডিভাইসেস। ঈশ্বরের গনিতের দরকার নেই! উইজিন উইগ্নারের বক্তব্য দেবাশিষদার লেখাতেই যা আছে সেটা আজো চর্চার বিষয় তবে এই দুই স্কুলের বক্তব্যই খুব আগ্রহ উদ্রেকারি গভীর দার্শনিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেবাশিষদা মৌমাছি এনেছেন অনেক বিজ্ঞানী মাছ-এর উদাহরণ এনে বাস্তবতাকে বোঝার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। বুদ্ধিমান মাছেরা জগতকে দেখেন জলের মধ্যে থেকে! ওদের জগত-এ জলের অস্তিত্ব সর্বত্র। জল ছাড়া তাদের জগতের কল্পনা প্রায় অসম্ভব এবং তাই প্রকৃতির অন্য সব কার্য কানুন সব জলের মধ্যে থাকার অভিজ্ঞ্রতা প্রসুত। সেখানে গতি যেভাবে ধরা দিচ্ছে সেইভাবেই তারা তাদের ইকোয়েশানে গতিকে বিধৃত করেছেন। একদিন সেই বুদ্ধিমান মাছেরা খবর পেল যে মানুষ বলেও বুদ্ধিমান প্রাণি আছে এবং তাদের মাধ্যাকর্ষনের / গতির ইকোয়েশানে নাকি 'জল' নেই এবং কোন মাধ্যমে গতির সাপেক্ষে মাছেদের সমিকরনে যা কনষ্ট্যান্ট হিসেবে ধরা হয়েছিল তা যে আসলে ঠিক নয় বা সেটা না ধরলেও চলে সেই কথা জানতে পারে। এইরকম সম্ভব নয় বলে প্রথমে মাছেরা অবিশ্বাস করে, বলে মানুষের সমিকরনে ভুল আছে। এরপর মাছেদের মধ্যেই এক বিজ্ঞানী মানুষদের ঐ কথা জেনে অন্যভাবে সত্যিই ব্যাপারখানা ঠিক কিনা ভাবতে শুরু করে এবং বহুকষ্টে বুঝতে পারে যে নিজেদের অস্তিত্ব ঘীরে থাকা সর্বক্ষনের জল থেকে বাস্তবের আলাদা অস্তিত্ব হতে পারে! এরপর মাছেদের মধ্যে ঐ বিজ্ঞানী মনে হয় তাদের ইকোয়েশানকে আরো জেনারালাইজ করতে সক্ষম হয়। তবে বাস্তবতা সত্যি গানিতিক বচন চিন্তারও অতীত কিনা সেটা গভীর দার্শনিক প্রশ্ন যার উত্তর খোঁজা চলছে।
  • Debasis Bhattacharya | 57.15.136.129 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৫:১১63966
  • দেবাশীষ, একটা আলোচনার ব‍্যবস্থা কোথাও করলে ভালো হয়। তাত্বিক বিষয়টি আমি ভালো বু্ঝিনি।
  • cm | 113.205.212.90 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৫:১৩63967
  • অ্যাঁ, গোদেলের পরেও গণিতে পরম সত্যের খোঁজ জারি আছে!
  • Debasis Bhattacharya | 160.129.65.173 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৬:২৬63968
  • প্রিয় CM, গ্যেডেলের পরে গণিতে পরম সত্যের খোঁজ কেন থাকার কথা নয় সে বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই, হয়ত গণিতজ্ঞ নই বলেই । আপনি যদি সেটা অনুগ্রহ করে বুঝিয়ে দেন, তাহলে সে ব্যাপারে আমার বক্তব্যটা বলার চেষ্টা করতে পারি --- যদি অবশ্য তারপর বলার জায়গা আদৌ কিছু থেকে থাকে ।

    কেউ একজন এ নিয়ে আলোচনা চেয়েছেন (এবং যথারীতি তাঁর মন্তব্য আমার নামে পোস্ট হয়েছে) । হ্যাঁ, আলোচনা হলে ভালই হয়, আমার তাতে উৎসাহের অভাব নেই । তবে, কে আলোচনাটি চাইলেন জানতে পারলে ভাল হত, মানে, অন্তত সম্বোধনটা করতে সুবিধে হত । মন্তব্যের সাথে নাম, ছদ্মনাম, যাহোক কিছু একটা জুড়ে দেবেন প্লিজ । অনুরোধটা আগেও করেছি, ওপরে দেখুন ।

    প্রিয় 'অ', ফেসবুক থেকে আলোচনাগুলো তুলে আনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । আশা করি, অন্যরাও খুশি হবেন । তবে, একটা মিনতি আছে । আমার নামটা আমি বাংলায় 'দেবাশিস্‌' এইরকম লিখি; অবশ্য, সেটা ফেসবুক বা গুরুচণ্ডাঌ থেকে জানা আপনার পক্ষে সম্ভব ছিল না । যদি আদৌ কখনও আমার নামটি লেখার প্রয়োজন বোধ করেন, এই বানানটি লিখলে খুশি হব ।
  • অশোক মুখোপাধ্যায় | 127.223.218.6 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৬:৪৪63969
  • দেবাশিস্‌ ভটচাজ্জির লেখা পড়া মানেই চক্ষু আর মগজের কোষে কোষে আলোড়ন। একটা কথা পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে হল -- "জগতে আনন্দলোকে আজ সবার নিমন্ত্রণ" সম্ভব, যদি কেউ জগতের বাইরের দিকে উঁকি দিতে না চায়! কাজটায় শুধু ঝুঁকি আছে তাই নয়, সে তো চলমান যে কোনো কিছুতে বসেই তার বাইরে উঁকিঝুঁকি দিলে বিপদ ঘটতে পারে। জগতের বাইরের দিকে তাকাতে গেলেই -- কী আছে দেখার অপার কৌতুহল নিয়ে -- দর্শক এবং দর্শন যন্ত্রের লোপাট হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। আর জগত যে তাকে আছাড় দেবেই, এই ব্যাপারেও নিশ্চিত থাকা চলে। জগত গণিতকে সাব্যস্ত করেছে। গণিত জগতকে বোধযোগ্য করে তুলেছে। হেগেলীয় দুরূহ ভাষায়, "what is real is rational, what is rational is real"; এই পাপচক্র থেকে আর কারও নিস্তার নেই!
  • Debasis Bhattacharya | 127.194.34.13 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৮:৫৪63964
  • কয়েকটি কমেন্ট এসেছে, সবই খুব ইতিবাচক, পড়ে ভরসা পেলাম । যাঁরা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাঁদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই । তবে এখানে একটা ছোট্ট সমস্যা হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমার একটা বিবৃতি থাকা দরকার বলে মনে হল । এখানে এখনও পর্যন্ত যাঁরা মন্তব্য করেছেন তাঁদের কারুরই নাম দেখা যাচ্ছে না, এবং সব মন্তব্যই আসছে আমার নামে --- "Comment from Debasis Bhattacharya" । আশা করি কেউ এমন সন্দেহ করেন নি যে, আমি নিজেই এসব মন্তব্য লিখছি, তবু ব্যাপারটি যে অস্বস্তিকর তাতে সন্দেহ নেই । আমি তথ্যপ্রযুক্তির লোক নই, কাজেই এ বিভ্রাটের কার্যকারণ আমার কাছে খুব বেশি স্পষ্ট নয় । এ সাইটের পরিচালককদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে যতদুর বুঝলাম তা হল এই যে, যাঁরা মোবাইল ফোন থেকে এ সাইটে ঢোকেন, তাঁরা সবসময় নিজের নাম দেবার সুযোগ পান না, এবং সেক্ষেত্রে তাঁদের মন্তব্য লেখকের নামেই চলে আসে । এখুনি বোধহয় এ ব্যবস্থা পরিবর্তনের খুব বেশি সুযোগ নেই । কাজেই, ভবিষ্যৎ মন্তব্যকারীদের কাছে অনুরোধ রইল, অনুগ্রহ করে মন্তব্যের শেষে নিজের নামটা যোগ করে দেবেন ।

    সবাইকে ধন্যবাদ, আবারও । লেখার ভালমন্দ বিষয়ে অবাধ মতামত একান্ত কাম্য ।
  • cm | 113.205.212.90 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৯63970
  • ঐ পরমসত্য বস্তুটি ঠিক কি? নিদেনপক্ষে আধখানা পরমসত্যের উদাহরণ হবে? ধোঁয়া ধোঁয়া ভাষায় কথা বললে খুব অসুবিধে দেখেই বোধহয় অঙ্কের উৎপত্তি। অঙ্ক একধরণের বাচনভঙ্গী বলা ভাল। ভাষা বললামনা, কারণ ইউনিক কিছু নেই তাই।
  • Debasis Bhattacharya | 113.242.189.138 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৮63971
  • ধন্যবাদ অশোকদা, হেগেলীয় গাম্ভীর্য সহকারে । এ সব লেখা আপনাদেরই সাহচর্যের ফল ।

    cm -- ওপরে 'অ' যে ফেসবুকীয় কথোপকথন কপি পেস্ট করেছেন তাতে পরমসত্য নিয়ে কিছু আভাস আছে । জিনিসটা আধখানা অ্যাভেলেব্‌ল্‌ না, নিলে গোটা প্যাকেজ নিতে হবে । আসলে, সবই তো পরমসত্য । যদি আমি বলি যে পরমসত্য আছে সেটাও পরমসত্য, আর যদি আপনি বলেন যে তা নেই, সেটাও পরমসত্য (বা অন্তত পরমসত্যের দাবি) । ঠিক তেমনি, "ধোঁয়া ধোঁয়া ভাষায় কথা বললে খুব অসুবিধে দেখেই বোধহয় অঙ্কের উৎপত্তি", কিম্বা, "অঙ্ক একধরণের বাচনভঙ্গী বলা ভাল", এগুলোও পরমসত্য (বা তার দাবি) । আবার, পরমসত্যের নির্দিষ্ট আদর্শস্থানীয় দৃষ্টান্ত না দিতে পারলেই তার বাস্তবতা খারিজ হয়না, ঠিক যেমন জগতে আদর্শ ত্রিভুজ না দেখাতে পারলে ত্রিভুজের বাস্তবতা খারিজ হয়না । কিন্তু, এত কথারই বা দরকার পড়ছে কেন ? পরমসত্যের দৃষ্টান্তের প্রাসঙ্গিকতা কোথায় এখানে ? গ্যেডেলের পরেও গণিতে পরমসত্যের খোঁজ জারি আছে জেনে আপনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন । অর্থাৎ, তাঁর আগে যে তা জারি ছিল, এবং এখনও গণিত ছাড়া অন্য কিছুতে জারি থাকতে পারে, সে নিয়ে তো আপনার আপত্তি ছিল বলে মনে হল না । সেইজন্যে আমি জানতে চেয়েছিলাম, গ্যেডেল সায়েব এমন কি করলেন যে সেটা হুট বলতে বন্ধ হয়ে গেল । যদি আপত্তি না থাকে, তো সে নিয়ে কিছু বলুন প্লিজ ।
  • cm | 113.205.212.90 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৪:৩৬63972
  • বোঝা গেল। গোদেল কি বলেছেন সে আর আমি দুকথায় কি বলব, তার অঙ্ক যদি পড়েন তাহলেই বুঝবেন যে অঙ্কে পরম সত্য বলে কিছু হয়না।

    সাধারণ পাঠকের জন্য উইকি থেকে https://en.m.wikipedia.org/wiki/Gödel%27s_incompleteness_theorems

    The first incompleteness theorem states that no consistent system of axioms whose theorems can be listed by an effective procedure (i.e., an algorithm) is capable of proving all truths about the arithmetic of the natural numbers. For any such formal system, there will always be statements about the natural numbers that are true, but that are unprovable within the system. The second incompleteness theorem, an extension of the first, shows that the system cannot demonstrate its own consistency.

    Employing a diagonal argument, Gödel's incompleteness theorems were the first of several closely related theorems on the limitations of formal systems. They were followed by Tarski's undefinability theorem on the formal undefinability of truth.

    শেষ লাইনে বেশ গোদা ভাবেই লেখা আছে।
  • dc | 132.174.118.87 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৭:১০63973
  • লেখাটা বড্ড মেলোড্রামাটিক মনে হলো (একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মত)। অবশ্য আমি ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম বইটা পড়িনি, ছোটেবলায় শুনেছিলাম বইটায় নাকি কোন ইকুয়েশান নেই, সেই ভয়ে আর বইটা কেনা হয়নি। তবে লেখক যে কোটটা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাতে অঙ্ক বিষয়ের প্লেটোনিক অব্স্থান নিয়ে কিছু লিখলে বোধায় আরেকটু ভালো হতো। এছাড়াও "What is it that breathes fire into the equations", এটা লিখে হকিং সাহেব বোধায় M theory ইঙ্গিত করেছিলেন। তবে আরও পরে উনি অবস্থান কিছুটা বদলেছিলেন এবং বলেছিলেন আল্টিমেট থিওরি বা ToE বলে বোধায় কিছু হয়না, গোডেলের ইনকমপ্লিটনেস থিওরেমের অ্যানালজি ফিজিক্সেও থাকতে পারে।

    সময় পেলে এনিয়ে আরও আলোচনা করব, লেখককে অনুরোধ করছি আরও বিস্তারিত লিখতে ঃ)
  • sswarnendu | 41.164.232.149 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৮ ০৮:৫০63974
  • আলোচনাগুলো ভীষণ ইন্টারেস্টিং দিকে যাচ্ছে। আশা করছি আরও এগোবে।
    আপাতত দু একটা প্রশ্ন রেখে যাই।
    পরম সত্য নেই কিনা সে বরং থাক, সত্য বলেই কিছু আছে কি? সত্য কাকে বলব? যা প্রমাণ করতে পারি সেইটুকুই সত্য? কিন্তু প্রমাণের মাপকাঠি কি?

    সেকেন্ড ইনকমপ্লিটনেস থিওরেম বলছে কোন ফর্মাল সিস্টেমই নিজের কনসিস্টেন্সি প্রমাণ করতে পারে না। ফলত পরম সত্য বা সব সত্য তো দুরের কথা, কোন একটা কিছুও সত্য কিনা নিশ্ছিদ্রভাবে প্রমাণ করার কোন জায়গা নেই ( কারণ যা দিয়ে প্রমাণ করব, সেইটা কনসিস্টেন্ট কিনা প্রমাণ করতে পারব না ...{ বস্তুত পারব, কিন্তু আর একটা ফর্মাল সিস্টেম দিয়ে, যার কনসিস্টেন্সি আবার প্রমাণ হবে না তখন} )।

    তাহলে কি পজিটিভ নলেজ বলেই কিছু নেই?

    কিন্তু তাইই যদি হয় তাহলে ওই "আনরিজনেবল এফেক্টিভনেস অফ ম্যাথেমেটিক্স" কেন?

    আবার উল্টোদিকে অ্যালগরিদমিকালি প্রমাণ করা ( বা ভেরিফাই করা, যদিও দুটো আলাদা, কিন্তু প্রশ্নটা যেকোন একটার জন্যেই ভ্যালিড) গেলে তবেই সত্য বলে ধরব, নইলে নয়, এইটাই বা কেন?
  • Debasis Bhattacharya | 160.129.65.181 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:১১63975
  • cm - আপনার সঙ্গে আমার বড্ড কম্যুনিকেশন গ্যাপ হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি ।

    যাই হোক, আমার বক্তব্য একে একে বলি --- (১) গ্যেডেল কি বলেছেন তা আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি । ফলে, তা 'দুকথায়' বলতে পারবেন না বলে আপনার যে উদ্বে‌গ, তার শরিক হয়েও বলি, এ উদ্বে‌গের প্রয়োজন ছিল না । আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম, গ্যেডেল যা-ই বলে থাকুন না, তাতে করে পরম সত্য কীভাবে অবলুপ্ত হল । (২) গ্যেডেলের তত্ত্ব পড়লেই জানতে পারতাম যে পরম সত্য বলে কিছু হয় না, এ দাবি করা সহজ হলেও তাৎপর্যহীন, কারণ একই রকম সহজে আমিও দাবি করতে পারতাম যে ওই তত্ত্ব পড়লেই আপনি জানতে পারবেন যে, পরম সত্য আছে । যদি আরেকটু নির্দয় হওয়া অনুমোদন করেন, তাহলে আরেকটু এগিয়ে বলতে পারি, দশতলা বাড়ির ছাদ থেকে চোখ বুজে নিচে ঝাঁপ দিলেই বুঝবেন যে পরম সত্য আছে । এটা আরেকটু নাটকীয়, তবে যুক্তির কাঠামোটা একই । (৩) কোনও কিছুর যাথার্থ্য প্রমাণের জন্য উইকি-র উদ্ধৃতি সবসময় খুব নিরাপদ নয় । যেমন ধরুন, আমি একজন 'সাধারণ পাঠক' হিসেবে যদ্দুর বুঝি, গ্যেডেল তত্ত্ব সম্পর্কে আপনার উদ্ধৃত প্রথম অনুচ্ছেদটির বক্তব্য ভুল । ওখানে 'ট্রুথ' শব্দগুলো 'ভ্যালিড স্টেটমেন্ট' বা 'বৈধ বচন' কথাগুলো দিয়ে প্রতিস্থাপিত হওয়া বাঞ্ছনীয় । দুটির তফাত বিস্তর । (৪) শেষ লাইনে যা লেখা আছে তা বেশ গোদা ভাবেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হল । তারস্কি যদি প্রমাণ করে থাকেন যে পাটিগাণিতিক সত্য পাটিগণিত-ব্যবস্থার মধ্যে থেকে প্রমাণ করা যায় না, তা থেকে ঠিক কীভাবে বোঝা গেল যে গ্যেডেল থিওরেম সত্যের ধারণা খণ্ডন করেছে ? (৫) কোনও কিছুর সংজ্ঞা না দিতে পারাটা কোনওক্রমেই তার অস্তিত্বহীনতার প্রমাণ নয় । তা যদি হত, পাঁটার সংজ্ঞা না দিয়ে তাকে ঝোল বানিয়ে খেতে পারতেন না । এই রে, মাপ করবেন, আপনি আবার ভেগান নন তো ?

    গ্যেডেল তত্ত্ব সম্পর্কে যদি জানতে চান, তো বলি, উইকির থেকে ভাল জিনিস বাংলাতেই আছে । গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার বিশেষজ্ঞ মিহির চক্রবর্তীর 'গ্যেডেলের অসম্পূর্ণতাতত্ত্ব' বইটি নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন । এছাড়া, ওই বইটি সম্পর্কে বিভিন্ন বিদ্যার খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া নিয়েও একটি গোটা বই আছে, সেটিও চমৎকার । তাতে দুয়েকজন অ-বিদ্বজ্জনের প্রতিক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত আছে, যার মধ্যে এই অধম অন্যতম । দুটিই বার করেছে 'নান্দীমুখ' প্রকাশন সংস্থা ।
  • Debasis Bhattacharya | 160.129.65.181 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৫63976
  • dc - আপনি আমার লেখাকে 'মেলোড্রাম্যাটিক' বলেছেন, সেটা সম্ভবত নিন্দার্থেই বলেছেন, তবে আমি একে প্রশংসা হিসেবে নিচ্ছি । গণিত-পদার্থবিদ্যা-নাস্তিকতা এসব নিয়ে যদি মেলোড্রামা নামাতে পারি, মন্দ কি ! বইতে গাণিতিক সমীকরণ না থাকাকে আপনি ভয় পান, জেনে চমৎকৃত হলাম । তবে কিনা, বইটি সম্পর্কে আপনি ভুল খবর পেয়েছিলেন --- ওতে একটিমাত্র হলেও সমীকরণ ছিল (মানে আছে) --- ই ইকুয়াল টু এম সি স্কোয়্যার । সভয়ে বইটি বর্জন করেও এই যে আপনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, ওখানে "What is it that breathes fire into the equations" বলতে হকিং 'এম থিওরি' বুঝিয়েছিলেন, এটিও যারপরনাই অসাধারণ ব্যাপার । কীভাবে এই উপলব্ধিতে এলেন, জানতে পারলে সমৃদ্ধ হব ।
  • Debasis Bhattacharya | 160.129.65.181 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৪63977
  • sswarnendu --- 'পজিটিভ নলেজ' নিয়ে উদ্বেগে ভোগার দরকার নেই । এই যে তথ্যপ্রযুক্তি-ব্যবস্থা, ইন্টারনেট, ফেসবুক, যার সুবাদে আমরা বসে বসে তর্কাতর্কি করছি, সবই কিছু 'পজিটিভ নলেজ'-এর ওপর দাঁড়িয়ে । আপনি যে আসলে কেউ একজন যাকে আমি নিজের মনে গড়ে তুলিনি, এও 'পজিটিভ নলেজ' ।

    গ্যেডেলের তত্ত্ব শুধু বদ্ধ 'ফর্ম্যাল সিস্টেম' সম্পর্কে প্রযোজ্য, মানুষের জ্ঞান কিন্তু 'ওপেন সিস্টেম' । ফলে, জ্ঞান সম্পর্কে হতাশ হবার প্রয়োজন নেই ।

    সত্য যে সত্যই, তা জানার জন্যই কষ্টসাধ্য পদ্ধতির উদ্ভব, না হলে অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠবে । বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের কথা ছেড়েই দিন । হঠাৎ আপনাকে কেউ যে আজকের দিনে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেনা, সে ওই সুরক্ষাটুকুর জন্যই ।
  • cm | 113.205.214.92 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৯63978
  • “ সেইজন্যে আমি জানতে চেয়েছিলাম, গ্যেডেল সায়েব এমন কি করলেন যে সেটা হুট বলতে বন্ধ হয়ে গেল ।“ এখানে গোদেল কি করলেন তারই অংশবিশেষ জানতে চাইলেন তো নাকি?চাপ নেবেন না, আপনার বক্তব্য বোঝা হয়ে গেছে।

    আমার ঐ উদ্ধৃতি সাধারণ পাঠকের জন্য।

    মিহির বাবুর বই আপনি পড়ুন, আমি বরং আবার সাধারণ পাঠকের জন্য একটা চটির লিঙ্ক রাখি, https://archive.org/details/GodelsIncompletenessTheorem
  • Ekak | 11.39.143.226 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৫:৪৩63979
  • এতা ক্কী ?!
  • Debasis Bhattacharya | 160.129.65.181 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৫:৫০63980
  • চাপের কিছু নেই, তবে এটা বলা দরকার যে আমার বক্তব্য আপনি যদি বুঝেও থাকেন, আপনার বক্তব্য আমি কিছুই বুঝিনি । গ্যেডেল সায়েবের কোন কাজের ফলে পরম সত্য অবলুপ্ত হল সেটা জানার জন্য এখনও অপেক্ষা করছি ।

    আপনার উদ্ধৃতি সাধারণ অসাধারণ যে পাঠকের জন্যই হোক না কেন, সেটা যে ভুল, এই মোদ্দা কথাটা এড়ালে কী করে হবে ?

    মিহিরবাবুর বই-ই বা আমাকে পড়তে বললেন কেন, ওটা পড়েছি বলেই তো আপনাকে পড়তে বললাম । আপনি কি তবে একথা বলতে চাইছেন যে, আপনি অঙ্কে টেকনিক্যালি সাউন্ড, তাই গ্যেডেল থিওরেমের নন-টেকনিক্যাল ভাষ্য আপনার দরকার নেই ? সেটা চমৎকার । কিন্তু, নিজে অঙ্কে টেকনিক্যালি সাউন্ড হলে বুঝি রেগে গিয়ে 'সাধারণ পাঠক'-দের জন্য অপরিচিত সব কঠিন কঠিন অঙ্কের বইয়ের লিঙ্ক পোস্ট করতে হয় ? আমার তো মনে হয়, সেক্ষেত্রে আপনার গ্যেডেলের অরিজিনাল পেপারটাই সরাসরি পড়া ভাল, বা যদি তা পড়া থাকে, তো অন্যদের সেটা পড়তে বলা ভাল । সেটা এখানে পাবেন --- http://www.jamesrmeyer.com/pdfs/godel-original-english.pdf

    আর, যদি এমন কোনও বইয়ের খোঁজে থাকেন যা 'সাধারণ পাঠকের' জন্যই কিন্তু অনেক বেশি প্রামাণ্য এবং পরিচিত, তাহলে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে পরিচিত বইটি হল ন্যাগেল অ্যান্ড নিউম্যানের 'গ্যেডেল'স প্রুফ' । সেটা এখানে পাবেন --- http://calculemus.org/cafe-aleph/raclog-arch/nagel-newman.pdf
  • Debasis Bhattacharya | 113.242.189.221 (*) | ২০ মার্চ ২০১৮ ০৭:৪২63982
  • sswarnendu

    'টেকনিকাল জ্ঞান বা দক্ষতা নিয়ে' কোনও 'আকচাআকচি'-তে অংশ নিয়েছি বলে মনে করতে পারছি না । আমি গণিতজ্ঞ নই এটা জানিয়েই কথোপকথন শুরু করেছিলাম । কিন্তু ......... যাক ।

    গণিত-দর্শনে ম্যাথম্যাটিক্যাল রিয়ালিজ্‌ম্‌-কে 'প্লেটোনিজ্‌ম্‌' বলে অভিহিত করবার একটা প্র্যাকটিস চালু আছে, যেটা এক আখাম্বা ভুল প্রবণতা বলেই আমার ধারণা । প্লেটোবাদ এক চরম ভাববাদ, তা গণিতের ক্ষেত্রে এসে কেন যে হঠাৎ করে 'রিয়ালিজ্‌ম্‌' বা বস্তুবাদ বলে গণ্য হবে, সে এক মহা বিস্ময়ের ব্যাপার । 'এক' সংখ্যাটি বা 'যোগ' প্রক্রিয়াটির কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে বলে মনে করা, আর ধরাছোঁয়ার অতীত কোনও এক অদৃশ্য তুরীয় জগতের কোথাও একটি আদর্শ 'এক' এবং আদর্শ 'যোগ'-এর ধারণা ঝুলে আছে বলে মনে করা --- এ দুটোকে কেন যে গুলিয়ে ফেলা হবে, আমি আজ পর্যন্ত তার কোনও জুতসই কারণ খুঁজে পাইনি ।

    হ্যাঁ, কোনও এক চরম অর্থে সবই বিশ্বাস, 'সত্য' সমেত । কিন্তু, অতটা চরমভাবে ভাবতে যদি রাজিই থাকেন, তাহলে, সবই যে বিশ্বাস এটাও তো শেষপর্যন্ত একটা বিশ্বাসই, তাই না ?

    ইলেক্ট্রনের ভরবেগ আর অবস্থান নিয়ে যা বলেছেন তা না বোঝাতে পারার কিছু নেই, এ সব কথা তো বহুদিন যাবতই শোনা গেছে । আমি গণিতজ্ঞ বা পদার্থবিদ কোনওটাই নই, অ্যাক্টিভিস্ট মাত্র, তবু এ নিয়ে আমার কিছু বলার থাকতেই পারে । কিন্তু, অনিশ্চয়তা তত্ত্বের দিক থেকে 'সত্য'-কে প্রশ্ন করা, আর অসম্পূর্ণতা ত্তত্বের দিক থেকে 'সত্য'-কে প্রশ্ন করা, এ দুটোর যৌক্তিক কাঠামো কিন্তু পুরো আলাদা । আপনি আগের মন্তব্যে দ্বিতীয়টির কথা তুলেছিলেন, এখন বলছেন প্রথমটি । আগেরটি প্রত্যাহার করেছেন কিনা, সেইটা আগে বলুন । না হলে একটার মধ্যে আরেকটা ঢুকে গিয়ে আলোচনা ঘুলিয়ে যাবার প্রভূত সম্ভাবনা ।
  • sswarnendu | 41.164.232.149 (*) | ২০ মার্চ ২০১৮ ০৮:০৩63981
  • গুরুর পাতায় অঙ্কের টেকনিকাল জ্ঞান বা দক্ষতা নিয়ে আকচাআকচিটা আমার ব্যক্তিগতভাবে একটু অপ্রীতিকর লাগল। সেইটা এড়ানো গেলেই সবচেয়ে ভাল হয় এইটুকু আমার মনে হওয়া হিসেবে বলতে পারি।

    দেবাশিসবাবু,
    আমি পজিটিভ নলেজ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন তা নই। অঙ্কে রোজকার কাজ লোকে সাধারণভাবে প্লেটোনিক বিশ্বাস নিয়েই চালায় বলে ব্যক্তিগত ধারণা। বা অন্যভাবে বললে আমি এমন কোন প্র্যাক্টিসিং ম্যাথেমেটিশিয়ান দেখি নি যিনি অঙ্ককে ডিসকভারি ভাবেন না, something is out there- যা আমরা প্রমাণ করতে চাইছি ভাবেন না। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা এইটাই যে সেইটাও একটা বিশ্বাসই মাত্র, এইটাই মনে করি। হ্যাঁ, বিশ্বাসটা 'unreasonably effective', কিন্তু তবু বিশ্বাসই মনে করি। কারণ সেইটা প্রমাণ করতে পারব বলে মনে হয় না।

    'সত্য' জিনিসটাকে এই মূহুর্তে আমার কাছে থাকা সেরা মডেলটার বাইরে বেশী কিছু ভাবি না। সেইটা ততদূরই সত্য যতদূর পর্যন্ত it works. সেই মডেলটাকে আরও আরও এফেক্টিভ করে তোলা সম্ভব এই সম্ভাবনায় বিশ্বাস করি, কিন্তু সেইটাও, আবারো বিশ্বাসই।

    একটা ইলেকট্রনের পজিশন ও মোমেন্টাম একসাথে কখনোই অসীম নিখুঁতভাবে কখনো মাপতে পারব না, তাই ইলেকট্রনের একই সাথে পজিশন ও মোমেন্টাম আছে কি নেই জানি না ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, এইটুকুই ভাবি।

    ইলেকট্রনের পজিশন ও মোমেন্টাম সত্য, শুধু আমরা তার কোন একটা সময়ে যে কোন একটাই মাপতে পারি মাত্র, এও মনে করি না। আবার ইলেকট্রনের পজিশন ও মোমেন্টাম বলেই কিছু নেই, একমাত্র তার ওয়েভ ফাংশনই একমাত্র সত্য, এও খুব মনে করি না।

    শুধু এইটা মনে করি যে অয়াভ ফাংশনের ওই ডেসক্রিপশনটা আমরা আজকে ইলেকট্রন সম্পর্কে যা যা জানি ও সেই জানার ভিত্তিতে যা যা করি তার জন্যে এখনো অবধি যথেষ্ট।

    বোঝাতে পারলাম কিনা জানিনা।
  • sswarnendu | 41.164.232.149 (*) | ২০ মার্চ ২০১৮ ১০:৫৪63983
  • দেবাশিসবাবু,
    আকচাআকচির কথা বিশেষভাবে আপনাকে উদ্দেশ্য করে বা শুধু আপনাকেই উদ্দেশ্য করে বলা আদৌ নয়। তখনকার মন্তব্যের আগের কয়েকটা মন্তব্য সম্পর্কে একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত মাত্র। গুরুত্ব না দিলেও চলত ও চলে।

    আমি দর্শন সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না, প্লেটো কখনো পড়িনি... প্লেটোনিজম সাধারণভাবে বলা হয় শব্দটি ব্যবহার করলাম, দার্শনিক অর্থে শব্দটা সুপ্রযুক্ত নাই হতে পারে, সে আমি জানি না আর কি বলতে চাইছি সেইটুকু বোঝাতে ব্যবহার করার বাইরে ওই শব্দটির অন্য কোন প্রাসঙ্গিকতা আমার বক্তব্যে ছিল বা আছে বলে মনে হয়নি।

    "কিন্তু, অতটা চরমভাবে ভাবতে যদি রাজিই থাকেন, তাহলে, সবই যে বিশ্বাস এটাও তো শেষপর্যন্ত একটা বিশ্বাসই, তাই না ?" --- এইটা নিছক শব্দের কারসাজি ছাড়া বিশেষ কিছুই মনে হল না। কারণ সবই বিশ্বাস এটাও একটা বিশ্বাস এইটা তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও কেন সেইরকম বা অন্য যেকোন রকম বিশ্বাসটার থেকে 'পরম সত্য' বা 'সত্য' জাতীয় কিছু বিশ্বাস রাখাটা জরুরী বা কাজের বা ভাল, এইরকম কোন যুক্তি এই বাক্যটায় অনুপস্থিত।

    "তা না বোঝাতে পারার কিছু নেই, এ সব কথা তো বহুদিন যাবতই শোনা গেছে ।" --- বোঝাতে যে পারিনি সেইটা আপনার এই অংশের লেখাতেই স্পষ্ট, এমনকি কি বোঝাতে পারার কথা বলতে চাইছিলাম সেইটাও বোঝাতে পারিনি। আনসার্টেন্টি প্রিন্সিপল আপনাকে বোঝাতে আদৌ চাইছিলাম না, সেটা এক অর্থে স্কুলের বাচ্চারাও জানে আর অন্য অর্থে আমি অন্তত নিজে জানি বা বুঝি বলে মনে হয় না, অন্যকে বোঝাতে চাওয়ার মত বুঝি না তো বটেই।

    যা বোঝাতে চাইছিলাম সেইটা সরলভাষে এইটা... যে আনসার্টেইন্টি প্রিন্সিপল ও measurability র প্রশ্ন, decidability র প্রশ্ন, demonstrability র প্রশ্ন, গোডেলের ইনকমপ্লিটনেস থিওরেমও তাই। objective reality ( সত্য কাকে বলে আমি জানি না, objective reality কাকে বলে তাও জানি না, তবু সত্যের থেকে এই শব্দটা ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশী পছন্দ করি মাত্র) মাত্রেই demonstrable কিনা... নাকি there are limits to demonstrability ( or measurability or decidability ) ( which falls short of objective reality ) ?

    এইটুকুই প্রশ্ন। প্রত্যাহার কোনটাই কোথাও তো করিনি। আমার কাছে একভাবে দুটো বিষয়েই আলোচনাটাই এই প্রশ্নটাকে ঘিরে, তাই একই প্রসঙ্গে লিখেছি। আপনার আলাদা মনে হলে আপনি আলাদা আলাদা করে দুটো নিয়েই বলতে পারেন, আমার কোন অসুবিধেই নেই।

    আমি অ্যাক্টিভিস্ট, পদার্থবিদ কোনটাই নই, গণিতজ্ঞও আমার মতে নই, তবে গণিতচর্চা আমার জীবিকা বটে। কিন্তু আমি এখানের প্রশ্ন অন্তত সজ্ঞানে গণিতজ্ঞ বা গণিতজীবি হিসেবে করিনি। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের তাঁদের তাঁদের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে যেমন কিছু জিনিস মনে হয়, আমারও জীবন অভিজ্ঞতায় গজানো সেরকম কিছু মনে হওয়া থেকেই আলোচনা, প্রশ্ন, লেখা। এমনিও পেশাগত হিসেবেও আমি ম্যাথেমেটিকাল লজিকের কিসস্যু জানি না। ফলত এইসব প্রশ্ন ও আলোচনায় আমি নিজেকে মোটামুটি গড়পড়তা বুদ্ধিমান একজন মানুষ ভাবি সেই অহমিকা থাকতে পারে হয়ত, আমার গণিত জ্ঞানের 'গরিমা' র কোন ব্যাগেজ নাইকো এইটুকু আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি। গুরুর টই-এর পাতাকে তার উপযুক্ত জায়গা ভাবিও না, ভাবতে অহমিকায় বাধত বলেই ধারণা। :)
  • dc | 132.164.22.53 (*) | ২১ মার্চ ২০১৮ ০২:৫১63984
  • দেবাশিস্‌বাবুকে ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন, ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম বইতে একটা ইকুয়েশান ছিল ঃ) আসলে বইটার খোঁজ পেয়েছিলাম, যদ্দুর মনে পড়ে, যখন আমি কলেজে পড়ি। খবরের কাগজে বইটা নিয়ে আলোচনা ছিল, আর সেই বিখ্যাত উক্তিটিও ছিল, মজা করেই বলা, যে প্রতিটা ইকুয়েশান নাকি বইএর বিক্রি অর্দ্ধেক কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমার তখন মনে হতো অঙ্ক-ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির মতো সাবজেক্টগুলো ঠিক যেরকম সেভাবেই বই লেখা উচিত, অংকের ভাগ কমিয়ে দিয়ে সহজ করে সাধারন মানুষের কাছে উপস্থাপনা করার মানে হয়না। উল্টে আমাদের মতো সাধারন মানুষদেরই চেষ্টা করা উচিত নিজেদের অঙ্কের নলেজ একটু বাড়িয়ে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বোঝা।

    আপনি জিগ্যেস করেছেন এম থিওরি কিভাবে জানতে পেরেছিলাম। সেটা হকিং সাহেবেরই আরেকটি বই থেকে, দ্য ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল। এই বইটা হার্ডকভার, আর ভারি সুন্দর করে ছাপানো হয়েছিল। এখন যে টাইপ করছি, দেখতে পাচ্ছি আমার কম্পুটার টেবিলের পাশেই বুককেসে বইটা রাখা।

    প্লেটোনিজম নিয়ে আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তার কিছুটা এখানে পাওয়া যেতে পারে, নিশ্চয়ই পড়েছেন, তাও লিংক দিয়ে রাখলামঃ https://plato.stanford.edu/entries/platonism-mathematics/
    এছাড়াও ড্যানিয়েল হফস্ট্যাডটার সাহেবের লেখালেখিও এই বিষয়ে আমার বেশ প্রাসঙ্গিক লাগে। আর mathematical realism ইত্যাদি নিয়ে দুকথা বলার আগ্রহ আছে, কিন্তু একেবারেই সময় পাচ্ছিনা। তবে স্বর্ণেন্দুবাবুও বেশ কয়েকটা ভালো পয়েন্ট এনেছেন। দেখি, এই উইকেন্ডে সময় পেলে আরও লিখব।
  • dc | 132.164.22.53 (*) | ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৮63985
  • "প্লেটোবাদ এক চরম ভাববাদ, তা গণিতের ক্ষেত্রে এসে কেন যে হঠাৎ করে 'রিয়ালিজ্‌ম্‌' বা বস্তুবাদ বলে গণ্য হবে, সে এক মহা বিস্ময়ের ব্যাপার "

    আমার যদ্দুর মনে হয়েছে, এখানে তর্কটা হচ্ছে আসলে আমরা "রিয়েলিটি" বা "বাস্তব" বলতে কি বুঝি সেই নিয়ে। "বাস্তব" মানে কি শুধু বস্তু জগৎ, স্পেস-টাইম-ম্যাটার-এনার্জি নিয়ে যার ব্যাপ্তি, নাকি এর বাইরে "ম্যাথামেটিকাল রিয়েলিটি" ও আছে, যা স্পেস-টাইম ইত্যাদির ইন্ডিপেন্ডেন্ট, কিন্তু কোনভাবে আমাদের "বাস্তব" এর সাথেও interact করতে সক্ষম? (এ নিয়ে আবার পেনরোজ সাহেব অনেক কিছু লিখেছেন)।
  • cm | 116.203.71.165 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৯63986
  • from 3.33-4.18 sec দেখতে দেখতে এই আলোচনার কথা মনে পড়ল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন