এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৭৫৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
    মৌলবাদজিনিসটা তবে কী

    ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে, ওপরে মৌলবাদের সংজ্ঞার্থ নিয়ে যা বলেছি, তাতে কিন্তু একটা কথা এখনও বাকি থেকে গেছে। অভিধানগুলোতে এবং আমাদের সাধারণ কথাবার্তায় আমরা ‘মৌলবাদ’ শব্দটির যে গৌণ সংজ্ঞার্থগুলো পেয়ে থাকি, সেগুলো যে এখানে অযথেষ্ট, তা আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। তাহলে প্রশ্ন, অভিধানগুলোতে প্রদত্ত প্রাথমিক অর্থটিই কি তবে মৌলবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা বলে গ্রহণ করে নেওয়া উচিত হবে? সে নিয়ে আলোচনায় ঢোকবার আগে দুটো প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করা যাক। ‘ফান্ডামেন্টালিজম’ শব্দের প্রথম অর্থ সম্পর্কে   কেমব্রিজ অভিধান যেখানে বলছে, “the belief in old and traditional forms of religion, or the belief that what is written in a holy book, such as the Christian Bible, is completely true”, সেখানে মিরিয়াম-ওয়েবস্টার অভিধান বলছে, “a movement in 20th century Protestantism emphasizing the literally interpreted Bible as fundamental to Christian life and teaching”, এবং কলিন্স অভিধান বলছে, “the belief in the original form of a religion or theory, without accepting any later ideas”। দেখা যাচ্ছে, এখানে কিন্তু যে কোনও ধ্যানধারণা বা নীতি-আদর্শকে আঁকড়ে থাকার কথা বলা হচ্ছে না, বা নিছক গোঁড়ামি অন্ধত্ব গা-জোয়ারি এইসবের কথাও বলা হচ্ছে না, নির্দিষ্টভাবে ধর্মের কথাই বলা হচ্ছে। মানে, ইংরিজি ‘রিলিজিয়ন’ অর্থে ‘ধর্ম’। তাহলে, যদি কেউ প্রবল ধর্মবিশ্বাসী হয়, এবং যদি তার নিজস্ব ধর্মের রীতিনীতি আদর্শ ও বিশ্বাসকে শক্ত করে আঁকড়ে থাকে, শুধু সেই কারণেই কি তাকে ‘মৌলবাদী’ বলে চিহ্নিত করা যাবে? স্পষ্টতই, এর উত্তরটা নেতিবাচকই হবে, অভিধানে হাজার লেখা থাকলেও। সব ধর্মের মধ্যেই এমন কোটি কোটি লোক আছে যারা অত্যন্ত জোরালো এবং অন্ধভাবে ধর্মে বিশ্বাস করে, এবং ভীষণভাবে সংরক্ষণশীল। কিন্তু এমনটা মোটেই নয় যে তারা সকলেই মৌলবাদী, বরং তাদের এক ক্ষুদ্র অংশই শুধু মৌলবাদী। আবার, এমনটাও কিন্তু মোটেই নয় যে, তারা সকলেই শান্তশিষ্ট স্বভাবের লোকজন বলেই মৌলবাদী নয় --- একটু তেরিয়া জঙ্গি মেজাজের লোক হলেই তাদেরকে মৌলবাদী বলা যেত। মানে, জোরালো এবং অন্ধ ধর্ম-বিশ্বাসের সঙ্গে খানিক সংরক্ষণশীলতা এবং জঙ্গিপনা যোগ দিলেই মৌলবাদ পাওয়া যাবে, এমন সহজ সমীকরণও ঠিক না। আমরা বড়জোর বলতে পারি, ‘মৌলবাদ’ জিনিসটার মধ্যে প্রবল ধর্মবিশ্বাস, অন্ধত্ব, অযুক্তি, সংরক্ষণশীলতা, অসহিষ্ণুতা, ভিন্ন গোষ্ঠী ও বিশ্বাসের মানুষের প্রতি এক প্রবল ‘আমরা-ওরা’ মনোবৃত্তি --- এইসব থাকতেই হবে, এবং কখনও বা ঘৃণা হিংস্রতা জঙ্গিপনা এইসব উপসর্গও থাকতে পারে। অথচ, ঠিক উল্টো যুক্তিটা কিন্তু খাটবে না। মানে, এইগুলো থাকলেই ‘মৌলবাদ’ হল, এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। যে যুক্তিতে আমরা বলি, বাঘ মাত্রেই হিংস্র প্রাণি কিন্তু হিংস্র প্রাণি মানেই বাঘ নয় --- এটা সেই রকম যুক্তি। যুক্তিটা কঠিন না, দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক।
     
    দৃষ্টান্ত এখুনিই দিচ্ছি, কিন্তু তার আগে বলে রাখি, এ যুক্তিটা কিন্তু দু-দিক দিয়েই খাটে। অর্থাৎ, কোনও মানব-গোষ্ঠীর মধ্যে অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপরোক্ত অন্যান্য মনোভাবগুলো যথেষ্টই আছে অথচ তাদেরকে আমরা মৌলবাদী বলি না --- এমন দৃষ্টান্ত বাস্তবে আছে, আবার, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস থাকলেও ওই বৈশিষ্ট্যগুলো নেই অথচ আমরা তাকেও মৌলবাদী বলছি --- এ দৃষ্টান্তও হাজির।
     
    মনে করুন, একই দেশের দুটো পাশাপাশি এলাকায় দুটো আলাদা উপজাতি সম্প্রদায় আছে, তাদের আলাদা আলাদা দেবতা ও রীতিনীতি আছে, এবং স্বভাবতই, আলাদা আলাদা পুরোহিত-নেতাও আছে। এক পক্ষ অপর পক্ষের দেবতা-রীতিনীতি-বিশ্বাসগুলোকে আপত্তিকর মনে করে, এবং উভয় পক্ষের দেখা হলেই যুদ্ধ লাগে, তাতে অনেকে মারা যায়। আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে কারুরই পরিচয় নেই, এবং স্পষ্টত, কেউই এখানে নিজের বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করবার জায়গায় নেই। কাজেই, এখানে সকলেরই প্রবল ধর্মবিশ্বাস এবং তার সঙ্গে অন্ধত্ব, অযুক্তি, সংরক্ষণশীলতা, অসহিষ্ণুতা, ভিন্ন গোষ্ঠী ও বিশ্বাসের মানুষের প্রতি এক প্রবল ‘আমরা-ওরা’ মনোবৃত্তি --- এইসব বৈশিষ্ট্যই রয়েছে পুরো মাত্রায়, এমন কি রয়েছে ঘৃণা হিংস্রতা জঙ্গিপনা এইসব উপসর্গও। এখন, আশ্চর্য ব্যাপারটা লক্ষ করুন, এদেরকে কিন্তু আমরা মোটেই মৌলবাদী বলিনা! ওহো, দৃষ্টান্তটি কাল্পনিক মনে হল বুঝি? বেশ। না, সেটা যাচাই করবার জন্য কোনও অজানা উদ্ভট মানবগোষ্ঠীর ওপরে পাগলাটে নৃতত্ত্ববিদের লেখা হাজার পাতার গবেষণাগ্রন্থ খুলে বসতে বলছি না। তার চেয়ে বরং, যেটা আপনি নিজে অতি অবশ্যই জানেন সেইটা শুধু মনে করে দেখুন। আন্দামানের ‘সেন্টিনেলিজ’ উপজাতির লোকেরা তো নিজেদের বাইরে আর সব লোককেই শত্রু মনে করে, এবং যে দ্বীপে তারা থাকে সেখানে বাইরের কেউ পদার্পণ করলেই তাকে তীর ছুঁড়ে মেরে ফেলে। তাদের কি আমরা ‘মৌলবাদী’ বলে সাব্যস্ত করি? বোধহয় না। কেন করিনা, সে কথাটা বলার আগে উল্টো উদাহরণটাও দেখে নিই একবার। আমেরিকার ‘আমিশ’ সম্প্রদায়ের নাম শুনেছেন কি? এরা হচ্ছে একটি অত্যন্ত গোঁড়া খ্রিস্টান (প্রটেস্টান্ট) গোষ্ঠী, যারা মূলত পেনসিলভানিয়া এবং অন্যান্য কয়েকটি ‘স্টেট’-এর বিশেষ কয়েকটি জায়গায় থাকে। এরা গোটা আধুনিক পৃথিবীটাকেই পাপে পরিপূর্ণ মনে করে, এবং নিজেদের এলাকার বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক রাখেনা। জীবনযাত্রা পুরোপুরি অষ্টাদশ শতকীয় --- চাষবাস, গো-পালন, তাঁতবোনা। কাঠকুটো দিয়ে বানানো বাড়িঘরদোর। কলকারখানা নেই, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চা নেই, সিনেমা নেই, বিদ্যুৎ নেই, হাসপাতাল নেই। বাইরে থেকে ট্যুরিস্ট-রা এদেরকে দেখতে আসে। বাসে করে বিশেষ কিছু পথ ধরে ট্যুরিস্ট-দেরকে এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখানো হয়, কিন্তু কোত্থাও নামতে দেওয়া হয়না। আমিশরা সারা পৃথিবীর ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চায়, এবং আমেরিকার মত একটি আধুনিক রাষ্ট্র তাদের নিজেদের মত করে বাঁচবার অধিকার স্বীকার করে নিয়ে সে ব্যবস্থা করেও দেয় (সেন্টিনেলিজ-দের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য, তবে তাদের জীবনযাত্রা আরও অনেক বেশি আদিম)। এরা অত্যন্ত ধার্মিক এবং গোঁড়া হলেও, এবং এক অসম্ভব জীবনযাপনের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলেও, হিংস্রতা এবং জঙ্গিপনার মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে তাদের মত অনুযায়ী চালাবার চেষ্টা কখনওই তাদেরকে করতে দেখা যায়না। অথচ লক্ষণীয়, তারা কিন্তু মৌলবাদী বলেই গণ্য! কেন, কোন হিসেবে?

    কেন দ্বিতীয়োক্তেরা মৌলবাদী অথচ প্রথমোক্তেরা নয়, এ দুটি বিপরীতধর্মী প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আসলে একই সূত্রে গাঁথা --- প্রথমোক্তদের আচরণ নিছকই আদিম, আর দ্বিতীয়োক্তদের আচরণ হল আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া। সেন্টিনেলিজ-রা হয়ত বা এ আচরণ করে আসছে বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে, দ্বীপে আবদ্ধ থাকার ফলে বহিঃপৃথিবীর প্রভাবে নিজেদেরকে পাল্টে ফেলার সুযোগ তারা পায়নি কখনও। আর অন্যদিকে, ‘আমিশ’ সম্প্রদায় এক সময়ে আর পাঁচটা খ্রিস্টান সমাজের মত করেই বাঁচত, কিন্তু অন্যরা যখন দ্রুত পরিবর্তনশীল উনিশ ও বিশ শতকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদেরকে পাল্টেছে ক্রমাগতই, তখন ‘আমিশ’-রা আধুনিকতাকে প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করেছে, চেষ্টা করেছে এই ‘পাপের পৃথিবীতে’ অপাপবিদ্ধ, বিশুদ্ধ রয়ে যাবার। দুই পক্ষের মধ্যে আসল তফাতটা তবে কোথায়? ওই এক জায়গাতেই --- আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধে। এখানে একটু বিভ্রান্তির সম্ভাবনা আছে, কাজেই ব্যাপারটা একটু পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। মনে হতে পারে, দু পক্ষই তো নিজের এলাকায় অপরকে সহ্য করতে পারেনা, তাহলে আবার তফাতটা কোথায়? সেন্টিনেলিজ-রাই বরং আমিশ-দের চেয়ে বেশি অসহিষ্ণু এবং হিংস্র, কাজেই ওরা তো তাহলে আরও কট্টর মৌলবাদী হবে!
     
    না, তা হবে না। কারণ, প্রথমোক্ত উপজাতীয়েরা যে আচরণ করে তা নিতান্তই অজানার প্রতি এক আদিম ভয়ের তাড়নায়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার ভয়, তা যতই অযৌক্তিক বা কাল্পনিক হোক (সব সময়ে ততটা অযৌক্তিক বা কাল্পনিক নাও হতে পারে)। এদিকে, ‘আমিশ’-রা যে আচরণ করে তার মধ্যেও হয়ত এক রকমের নিরাপত্তার অভাববোধ রয়েছে, কিন্তু সেটা বস্তুগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, সাংস্কৃতিক/পরম্পরাগত যাপনের নিরাপত্তার প্রশ্ন। মানে, বাইরের জগতের লোকেরা আমাদের ওপর চড়াও হবে, মেরে ফেলবে বা আহত করবে, ক্ষতি করবে, লুটপাট করবে --- এই রকমের ভয় নয়। বরং, ওদের দূষিত সংস্পর্শে থাকলে আমাদের এতদিনকার অভ্যস্ত জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, সামাজিক সম্পর্ক ও শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এইসবের জলাঞ্জলি হয়ে যাবে --- এই রকম একটা ভয়। মৌলবাদ নিয়ে যাঁরা ক্রমাগত অধ্যয়ন করে চলেছেন সেই সমাজতত্ত্ববিদেরা আজ বলছেন, আধুনিকতার বিরুদ্ধে এই আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়াটাই হচ্ছে মৌলবাদের প্রকৃত সারবস্তু। অযুক্তি অন্ধত্ব হিংস্রতা ঘৃণা তো ধর্মে বরাবরই ছিল (এবং ধর্ম ছাড়া অন্য অনেক কিছুতেই ছিল), এবং মৌলবাদের মধ্যেও তা কিছু বাড়াবাড়ি রকমেরই আছে। কিন্তু মৌলবাদ শুধু ওইটুকু মাত্র নয়, তাতে আছে নতুন কিছু উপাদান, এবং আধুনিকতা-বিরোধী প্রতিক্রিয়াটাই সেই ‘নতুন কিছু’ (এবং সেইহেতু, বলা বাহুল্য, আধুনিকতার উদ্ভব ও প্রতিষ্ঠার আগে মৌলবাদের আবির্ভাব সম্ভব ছিল না)। ‘মৌলবাদ’ জিনিসটা আসলে আমাদের চিরাচরিত ‘রিলিজিয়ন’ বা ‘ধর্ম’ জিনিসটারই এক অতি সাম্প্রতিক বিকাশ, যেখানে আধুনিক পৃথিবীতে ক্রমশই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া ধর্ম মরিয়া হয়ে উঠেছে তার হারানো প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে। এই ‘প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়া’ ব্যাপারটা নানা বিচিত্রভাবে হতে পারে। মানে, অন্তত তার চেষ্টাটুকু হতে পারে। প্রথমত, আধুনিক বিশ্ব থেকে চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে শান্তভাবে নিজের মধ্যে নিজে ঢুকে বসে থেকে জোর করে নিজের কাছে প্রাচীনকে প্রাসঙ্গিক করে রাখা হতে পারে, যেমনটি ওই পূর্বোক্ত ‘আমিশ’-রা করছে (যদিও পুরোপুরিভাবে আধুনিক রাষ্ট্রের কৃপাতেই, কিঞ্চিৎ করুণভাবে, তবুও)। দ্বিতীয়ত, সমস্ত বিধর্মীদেরকে খতম করে গোটা পৃথিবীতে ‘দার-উল-ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার খোয়াব দেখার মধ্যে দিয়ে হতে পারে, যেমনটি মুসলমান মৌলবাদীরা করছে (যদিও তার জন্য আধুনিক রাষ্ট্রের কারখানায় তৈরি অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ নিতান্ত অধার্মিক উপায়ে উঞ্ছবৃত্তি করে সংগ্রহ করতে হবে, তবুও)। আবার তৃতীয়ত, আধুনিক গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসা, ধীরে ধীরে আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জা করে ফেলা, সমগ্র অর্থনীতির ওপরে নিজেদের পেটোয়া লোকজনের কর্তৃত্ব কায়েম করা, আইন চিকিৎসা গবেষণা ও শিক্ষাকে সংকীর্ণ ও ধর্মভিত্তিক করে তোলা, সম্ভাব্য সমস্ত রকমভাবে বিদ্বেষ ও ঘৃণা প্রচার করে চলা --- এই রকম এক অতিধীর অথচ বহুমুখী ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে একটা বিরাট সমাজ ও রাষ্ট্রের মৌলবাদী রূপান্তর ঘটানোর শতাব্দী-প্রাচীন প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়েও হতে পারে, যেমনটি করছে হিন্দুত্ববাদীরা (যদিও আধুনিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠান আইন বিদ্যাচর্চা প্রযুক্তি ইত্যাদির মৌল অস্তিত্বের প্রেক্ষিত ও কার্যকারণের সঙ্গে এ ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পর্কটি হাস্যকর রকমের প্যারাডক্সিক্যাল, এবং সেইহেতু এ প্রক্রিয়াটি গা-জোয়ারি আর চালাকির ওপর বিপজ্জনকভাবে নির্ভরশীল, এবং ফলত এর স্থায়িত্ব ভীষণ রকম অনিশ্চিত, তবুও)।
     
    বিষয়টা হয়ত আরেকটু ভাল করে বোঝা যাবে, যদি সারা পৃথিবীতে মৌলবাদের আবির্ভাবের মুহূর্তগুলো খেয়াল করা যায়। মৌলবাদের উন্মেষ-প্রক্রিয়ার শিকড় আছে উনিশ শতকে --- আমেরিকার খ্রিস্টানদের ‘নায়াগ্রা কনফারেন্স’, মধ্যপ্রাচ্যীয় মুসলমানদের মধ্যে ‘সালাফি আন্দোলন’, ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ‘আর্য সমাজ’ ইত্যাদি এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে স্মরণীয় (আধুনিক জীবনযাপন ও ধর্ম-ঔদাসীন্যের দূষণ এড়িয়ে চিরাচরিত মূল্যবোধ এবং ‘মূল’ ধর্মশাস্ত্রকে আঁকড়ে ধরে খাঁটি ধার্মিক হবার আহ্বান ছিল এই সবকটিরই প্রধান বৈশিষ্ট্য)। কিন্তু, তা নির্দিষ্ট আকার এবং অনেক বেশি রাজনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করে বিশ শতকের গোড়ায়। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আমেরিকায় একটি তেল কোম্পানির ধনী মালিকের অর্থানুকূল্যে সে দেশের প্রোটেস্টান্ট ধর্মের কয়েকজন কট্টরপন্থী মাথা মিলে প্রকাশ করেন বারোটি বইয়ের একটি সিরিজ (‘দ্য ফান্ডামেন্টাল্‌স্‌’), যাতে ছিল বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ (‘ফান্ডামেন্টালিজম’ শব্দটির বর্তমান কয়েনেজ-টির শুরু এখান থেকেই)। এই প্রসঙ্গে লক্ষণীয়, তার ঠিক পরের দশকেই মিশরে গড়ে ওঠে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’, এবং, ভারতে গড়ে ওঠে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’। তা সে যা-ই হোক, প্রোটেস্টান্ট ধর্মের কট্টরপন্থীদের তরফে যাঁরা ওই বইগুলো লিখেছিলেন তাঁরা সকলেই পণ্ডিত ধর্মবেত্তা, এবং সকলেই সমাজে চিরাচরিত ধর্মের দুর্দশা দেখে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। তবে, তাঁদের সমালোচনার লক্ষ্য কিন্তু ধর্মচ্যুত সাধারণ মানুষ নয়, বরং অন্য কয়েকজন উদারপন্থী ধর্মবেত্তা, যাঁরা আধুনিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাইবেলকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলেন। এই দ্বিতীয়োক্ত উদারপন্থী ধর্মবেত্তারা চাইছিলেন এমনভাবে বাইবেলকে ব্যাখ্যা করতে, যাতে মূলস্রোতের প্রামাণ্য বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা এবং ইতিহাসের সঙ্গে তার কোনও বিরোধ না হয়। মানে, অলৌকিকতাকে রূপক বলে ধরতে হবে, পৌরাণিক গল্পগুলোকে আক্ষরিক সত্য না ভেবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা বলে ধরতে হবে, ইতিহাস এবং ভাষাবিজ্ঞানের আলোকে বাইবেলকে বোঝার চেষ্টা চালাতে হবে, এইসব আর কি। নিশ্চিতভাবে এঁদেরও একটা নিজস্ব উদ্বেগ ছিল, এবং সেটা সহজবোধ্যও বটে। উদ্বেগটা হচ্ছে, ধর্মকে যদি আধুনিক জ্ঞানগম্যি আর বোধবুদ্ধির সঙ্গে ঠিকমত খাপ খাইয়ে না নেওয়া যায়, সে তো মোটেই টিঁকবে না, কারণ আধুনিক জ্ঞানগম্যি আর বোধবুদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করে পেরে ওঠবার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। বলা বাহুল্য, এঁরা ধর্মকে বাঁচাতেই চেয়েছিলেন, মরে যেতে দিতে চাননি। কিন্তু কট্টরপন্থীরা আরও একটু এগিয়ে ভাবতে চাইলেন, কারণ, তাঁদের উদ্বেগটা ছিল আরেকটু গভীরে। মনে করুন, আজ না হয় আধুনিকতার সঙ্গে আপোস করে ধর্মকে বাঁচালেন, কিন্তু কালকে কি করবেন মশায়? আধুনিক জ্ঞানগম্যি আর বোধবুদ্ধির বাইরে যাওয়া যাবে না এইটা যদি আজ মেনে নিই, তাহলে তো কাল আমাকে এইটাও মানতে প্রস্তুত থাকতে হবে যে, ধর্ম জিনিসটার আসলে কোনও নিজস্ব সত্যতা নেই, তার দরকার শুধু মূল্যবোধ আর নৈতিকতা শেখানোর গল্পগাছা হিসেবে। এবং, এই স্থানটুকুও আর খুব বেশিদিন থাকবে না। ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য আইন যেভাবে দখল করেছে ধর্মতত্ত্ব পুরাণ ও ধর্মীয় রীতিনীতির জায়গা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর পেশাদার আমলাতন্ত্র এসে যেভাবে দখল করেছে রাজা আর পুরুতের কর্তৃত্ব, ঠিক সেভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ আর নৈতিকতা এসে দখল করে ফেলবে ধর্ম-ভিত্তিক সনাতনী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার পরিসর। ধর্মের বিলুপ্তি এড়াবার রাস্তাটা কোথায়, তবে?
     
    সেই রাস্তাটাই মৌলবাদীরা খুঁজে পেতে চায় আধুনিকতার প্রত্যাখ্যান ও তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে, সেটা মূলস্রোতের লোকজনের কাছে  যতই উদ্ভট অযৌক্তিক অসম্ভব বলে মনে হোক না কেন। এখানে কিন্তু একটা জিনিস ভীষণভাবে লক্ষণীয়। আমরা প্রায়শই ‘মৌলবাদ’ ব্যাপারটার সঙ্গে ‘ফ্যানাটিসিজম’ বা উন্মত্ততা জিনিসটাকে জড়িয়ে ভাবি। মানে, মৌলবাদীরা সব যুক্তিহীন খ্যাপাটে ধরনের লোকজন, আজ এর মুণ্ডু কাটল তো কাল ওকে গুলি করল, পরশু আবার না বলে কয়ে ওখানে বোমা ফাটিয়ে বসল --- এই রকম সব ব্যাপার। অথচ, এখানে কিন্তু মোটেই তা ঘটছে না। বরং দেখা যাচ্ছে যে, কোনও এক অর্থে, ধর্মের ‘লিবারাল ইন্টারপ্রিটার’ বা উদারপন্থী ভাষ্যকারদের থেকে মৌলবাদীরা কিন্তু ধর্মের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও তলিয়ে ভাবে, এবং আরও দূরদর্শী। ফলত, ধর্মের ভবিষ্যৎ বিষয়ে তাদের উদ্বেগটাও হয়ত আরেকটু বেশি গভীর, এবং চিন্তাসূত্র ও যুক্তিশৃঙ্খলটিও কিঞ্চিৎ অন্য রকমের। ধর্মগ্রন্থকে রূপকধর্মী সাহিত্য আর নীতি-গল্প বলে সাব্যস্ত করে দুটো ন্যাকা ন্যাকা কথা বলতে তো উদারপন্থী নাস্তিকরাও পারে, তার জন্য আবার ধার্মিক হবার দরকার পড়ে নাকি? ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ঐশ্বরিক মহিমার অলৌকিকতামণ্ডিত ঘটনাগুলোকে যদি অবিকৃতভাবে মানতে না-ই পারো, সেখানে বর্ণিত ঘটনা ও চরিত্রগুলো আধুনিক রুচির বিরুদ্ধে গেলেও যদি না অটুট থাকে তোমার একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও সম্ভ্রম, ধর্ম ও আধুনিক যাপনে সংঘাত বাধলে যদি না অবিচল থাকতে পারো ধর্মের সপক্ষে, তবে আর প্রতারকের মত নিজেকে ধার্মিক বলে দাবি কোরো না --- কীসের ধার্মিক হে তুমি?
     
    মৌলবাদকে বুঝতে গেলে মৌলবাদের এই বিশেষ চিন্তাসূত্রটা বোঝা জরুরি, এবং সেই চেষ্টাই করেছেন ধর্মের সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস বিষয়ক দুই গবেষক --- চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন মার্টি এবং নত্র্‌দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কট অ্যাপ্‌ল্‌বি। বিশ শতকের শেষ দশকে এঁরা ‘মৌলবাদ’ সম্পর্কে একটি বড়সড় গবেষণা-প্রকল্প পরিচালনা করেন, যার ফল হচ্ছে এক মহাভারতোপম গবেষণাকর্ম --- ‘দ্য ফান্ডামেন্টালিস্ট প্রজেক্ট’। এ হচ্ছে পাঁচটি গবেষণাগ্রন্থের এক সিরিজ, যার মধ্যে বিধৃত আছে সমকালীন মৌলবাদের সব কটি ধারা ও সব কটি দিক নিয়ে অত্যন্ত সুবিস্তৃত ও সম্যক এক অনুসন্ধান, প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক প্রায় কোনও কিছুই যেখানে বাদ পড়েনি। মৌলবাদের ভাবভঙ্গি ও দাবিগুলো যতই পশ্চাৎমুখী হোক না কেন, তা যে আসলে আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া মাত্র, এ কথাটা প্রথম খুব গোছানোভাবে উঠে আসে এই গবেষণা-প্রকল্প থেকেই। এবং, যা নাকি আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া, তাকে তো আবশ্যিকভাবে আধুনিকতারই উপজাত হতে হবে --- কারণ, ‘আধুনিকতা’ না থাকলে তো আর তার প্রতিক্রিয়া থাকতে পারেনা! এখন, এই ‘আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া’ যে ঠিক কী বস্তু, সে সম্পর্কে আগে কিছু কথা হয়েছে, তবুও এ ব্যাপারে খানিক অস্বচ্ছতা থেকে যেতে পারে। অথচ, এই জায়গাটা পরিষ্কার না হলে ‘মৌলবাদ’ নিয়ে আলোচনার কোনও মানেই থাকবে না। কাজেই, এ নিয়ে ছোট্ট করে আর দু-চার কথা বলে নিলে হয়ত খুব একটা খারাপ হবেনা। প্রথম দৃষ্টিতে কথাটাকে খুব সহজ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়। মনে হতে পারে, ওই তো, ওরা অতখানি দক্ষতার সাথে ইন্টারনেট-এ নিজেদের প্রচার চালাচ্ছে, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভয়ঙ্কর সব নাশকতার কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলছে, অতএব ওরা আধুনিক কালের সৃষ্টি তো বটেই! কিন্তু, উঁহু, ব্যাপারটা অতখানি সোজা না।
     
    প্রথমত, সব মৌলবাদী  মোটেই এমন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়, তার এক অতিক্ষুদ্র অংশই শুধু নাশকতায় যুক্ত। যেমন, ওপরে যে ‘আমিশ’-দের কথা এসেছে, তারা এ ধরনের কাজ একেবারেই করেনা। দ্বিতীয়ত, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হচ্ছে, আধুনিক হাতিয়ার দিয়ে কোনও একটা কিছু করলেই সেটাকে ‘আধুনিক’ বলা যায়না। ইন্ডাকশন কুকার বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন-এর মত অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে রান্না করে ক্ষুধা নিবৃত্ত করলেই যেমন দাবি করা যায়না যে, ‘রান্না’ এবং ‘ক্ষুধা’ ব্যাপারটা খুব আধুনিক, এও ঠিক তেমনি। ক্ষুধা মানুষের চিরকালই পেয়েছে, এবং তা মেটানোর জন্য সে চিরকাল রান্নাও করেছে, যখন যা উপকরণ এবং পদ্ধতি হাতের কাছে পেয়েছে তাই দিয়ে। আজকের দিনে যে তাতে ইন্ডাকশন কুকার বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহৃত হচ্ছে তার কারণ এই নয় যে ক্ষুধা আর রান্না আগে ছিল না, বরং তার কারণ এই যে, আজকের দিনে ওগুলো আমাদের হাতে আছে। ঠিক সেই যুক্তিতে আমি বলতে পারি, ধর্মের ঘৃণা আর হিংসা বরাবরই ছিল --- আজকে তাতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক আর ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক ব্যবহৃত হচ্ছে শুধুমাত্র এই কারণেই যে, ওগুলো আজ হাতে আছে। অতএব, শুধু ওইটুকু দিয়ে মৌলবাদের সারবস্তু নির্ধারিত হচ্ছে না। কিন্তু ধরা যাক, কেউ যদি বলত যে, আমাদের খাদ্যদ্রব্যে সরল শর্করা এবং সরল শ্বেতসার এবং স্নেহপদার্থ ইত্যাদির বাড়াবাড়ি উপস্থিতিটা এক আধুনিক ব্যাপার, এবং আমাদের ক্রমবর্ধমান স্থূলতাটা হল তারই প্রতিক্রিয়া (এবং সেইহেতু এই আধুনিক অভ্যাসেরই উপজাত), তখন আর আপত্তি তোলা যেত না। আপত্তি তোলা যেত না এই কারণেই যে, আধুনিক কুকার বা ওভেন না থাকলেও আমাদের খিদে পেত আর রান্নাবান্না হত, কিন্তু আধুনিক চাষবাস আর কলকারখানার মাধ্যমে গাদা গাদা চিনি মাখন ময়দা তৈরি না হলে ওই রকম খাদ্যাভ্যাস কিছুতেই তৈরি হতে পারত না, এবং স্থূলতার গণ-প্রবণতাও তৈরি হতে পারত না। অর্থাৎ, আধুনিক চাষবাস শিল্পোৎপাদন খাদ্যাভ্যাস রুচি ও স্থূলতা এমনই এক আবশ্যিক ঐতিহাসিক পারম্পর্য ও কার্যকারণে আবদ্ধ, যার একটি অনুপস্থিত হলে বাকিগুলোরও অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এবার তাহলে প্রশ্ন, মৌলবাদের মধ্যে এমন কোনও আবশ্যিক উপাদান বা বৈশিষ্ট্য আছে কি, যা আধুনিকতার সঙ্গে এমনই এক আবশ্যিক ঐতিহাসিক পারম্পর্য ও কার্যকারণে আবদ্ধ, যাতে করে আধুনিকতা ছাড়া তার অস্তিত্ব সম্ভব হতে পারত না? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ তা আছে, এবং একাধিক (যার কয়েকটি ইতিমধ্যেই এ লেখায় উল্লেখিত)। যেমন --- (ক) মৌলবাদের জন্ম বিগত শতকের গোড়ায় (তার শিকড় আরও পুরোনো, যদিও)। (খ) আধুনিক কালে ধর্মের দুর্দশা এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া রোধ করতে তার জন্ম। (গ) তার লক্ষ্য আধুনিক পৃথিবীর বিদূষণ থেকে ‘সনাতন’ ধর্মকে বাঁচানো। (ঘ) তার ঘোষিত লক্ষ্য ধর্মীয় শাস্ত্রের আধুনিক/উদারবাদী ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে ‘আক্ষরিক’ ব্যাখ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা (যে আক্ষরিকতার প্রকৃত অস্তিত্ব নেই, যদিও)। (ঙ) প্রাগাধুনিক সমাজের ধর্ম ব্যক্তির প্রতি যে গোষ্ঠী-আনুগত্য দাবি করে, তার মূল উপাদান স্থানীয় ও গোষ্ঠীগত রীতিনীতি ও মূল্যবোধ মেনে চলা। তার বিপরীতে মৌলবাদ প্রতিটি ব্যক্তি-ধার্মিকের কাছে দাবি করে মূল ধর্মশাস্ত্রের বাণীর প্রতি চরম আনুগত্য (সেটা স্থানীয় বা গোষ্ঠীগত নয়, সর্বজনীন)। এতে প্রত্যাশা করা হয়, প্রত্যেক ব্যক্তি-ধার্মিকের ধর্মীয় টেক্সট পড়ে নিজে নিজে বুঝে নেবার মত যথেষ্ট অক্ষরজ্ঞান আছে, যে প্রত্যাশা শুধু আধুনিক যুগের ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক (বাস্তবে সে প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে কিনা সে প্রশ্ন গৌণ, প্রত্যাশার অস্তিত্বটিই শুধু বিবেচ্য)। (চ) প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদ যেভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে সেই বিশেষ ধর্মের ‘প্রকৃত’ অনুসারীদের ডাক দেয় সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ‘বিধর্মী শত্রু’-দের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে স্বধর্মকে ‘সঙ্কট’ থেকে রক্ষা করবার জন্য (“হিন্দু খতরেঁ মে”), সেই আহ্বানের মধ্যে সমগ্র পৃথিবী, তার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা লোকজন ও তার যোগাযোগ-ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ধারণা ও প্রত্যাশা অন্তর্নিহিত আছে, তা প্রাগাধুনিক যুগে সম্ভব ছিল না।
     
    অতএব, ‘মৌলবাদ’ বস্তুটি যে আধুনিকতার বিরুদ্ধে এক প্রতিক্রিয়া এবং সেইহেতু তারই এক উপজাত, সে ব্যাপারে বোধহয় আর সন্দেহ থাকার কথা না। মৌলবাদ যতই ধর্মের সনাতন, মূল ও বিশুদ্ধ সারবস্তুতে ফিরে যাবার কথা বলুক, মূল্যবোধে যতই সংরক্ষণশীল হোক, এবং যতই প্রাচীন এক স্বর্ণযুগের মিথ নির্মাণ করে তাতে ফিরে যাবার ডাক দিক, তা আসলে নিতান্ত আধুনিক এক ‘ফেনোমেনন’ বা প্রপঞ্চ। শুনতে অসম্ভব লাগলেও, ভেতরের সত্যি এটাই। এ প্রপঞ্চ নির্মিত হয় আধুনিক পৃথিবীতে ধর্মের অপ্রাসঙ্গিক ও বিলুপ্ত হয়ে যাবার উদ্বেগের অভিঘাতে।
     
    সমাজবিদ মার্টিন মার্টি এবং স্কট অ্যাপ্‌ল্‌বি তাঁদের উপরোক্ত ‘দ্য ফান্ডামেন্টালিস্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক গবেষণাকর্মে মৌলবাদের স্বরূপ সম্পর্কে যে তত্ত্ব হাজির করেছেন, তার যে সমালোচনা হয়নি, তা কিন্তু নয়। কেউ বলেছেন, ‘মৌলবাদ’ খ্রিস্টধর্মের মধ্যেকার এক বিশেষ ধারার নাম, এবং সেইহেতু এক পাশ্চাত্য ধারণা, অতএব তাকে হিন্দু ও মুসলমানের মত প্রাচ্যীয় ধর্মগুলোর ঘাড়ে চাপানোটা আসলে ভুল কাজ, এবং বস্তুত এক পশ্চিমী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। কেউ বলেছেন, ‘মডার্নিটি’ বা আধুনিকতার ধারণাটাই এক ধোঁয়াটে ধারণা, কাজেই তার সাহায্যে মৌলবাদের চরিত্র নিরূপণ করলে সেটাও ধোঁয়াটে হয়ে যাবে। কেউ বলেছেন, আধুনিকতার চাপটা তত সমস্যা না, আসলে মূলস্রোতের পৃথিবীর ক্ষমতাতন্ত্রের তরফে যত সব অন্যায় শোষণ নিপীড়ন, তার বিরুদ্ধে আম মানুষের প্রতিবাদটাই ঘটছে মৌলবাদের মুখোশ পরে। এখন, এ সব সমালোচনার  সবটাই হয়ত পুরো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আবার, এ সমস্ত সমালোচনায় ‘দ্য ফান্ডামেন্টালিস্ট প্রজেক্ট’ গবেষণাকর্মের ভিত্তিটাই ধ্বসে গেছে, এমনটাও নয়। এবং, এর চেয়ে সুঠাম ও সর্বজনগ্রাহ্য কোনও বিকল্প তত্ত্বপ্রকল্প যে উঠে এসেছে, এমনটা তো নয়ই।
     
    ফলত, আপাতত এই অবস্থানে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই, এবং একে আশ্রয় করেই এখানে আমরা আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করব। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে, ধর্ম ও মৌলবাদের সম্পর্ক নিয়ে আরও কিছু চর্চা করা, এবং এ প্রসঙ্গে গোঁড়ামি, বিজ্ঞান, সংশয়বাদ ও যুক্তিবাদের ভূমিকাকে একটু খতিয়ে দেখা। পরবর্তী অংশে আমরা সেই চেষ্টাই করব। 
     
    তবে, তারও আগে আলাদা করে দু-চার কথা বলে নিতে চাইব 'ইসলাম' নিয়ে।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব
  • ব্লগ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৭৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সংগ্ৰাম অগস্তি | 2409:4060:2e11:6288:1dc5:3753:387b:94ab | ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৪514461
  • লেখাটি আর একটু সহজপাচ্য হলে ভালো হতো। যারা সাচ্চা ধার্মিক তারাই কি শুধু মৌলবাদের জন্ম দেয়? এখানে রাজনীতিকদের মৌলবাদী বলাা হবেনা কেন ?         দি
  • Debasis Bhattacharya | ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৪২514462
  • সংগ্রাম অগস্তি,
     
    আপনি বোধহয় আগের পর্বটি মিস করেছেন। পড়ে দেখুন, তাতে পাচ্যতা বাড়ে কিনা। এবং, আপনার প্রশ্নের উত্তর ওর মধ্যেই থাকার কথা।
  • Rinita Mazumdar | 2601:8c0:c7d:ad0:8424:8a47:ae5:a22e | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:০৭514473
  •  
     
    Well written but several things missing. His primary thesis is that “ fundamentalism” is a reaction to the modern age. Further, the author mostly discuss “ fundamentalism” as religious fundamentalism ( although he does say that anything can be fundamentalist). While this is true mostly ( in the way we are seeing it), he does not discuss 1) The notion of identity and how identities are intimate connected to faith 2) Does not discuss what is a “ secular” State ( the division of private/ public dichotomy and the relegation of religion to the “ private” sphere) whereas a vacuum in the ethical dimension is created. As far as I understand “ dharma” is ethics and different people try to perform their actions according to different ethical or value systems. What is the relevance of fundamentalism here? To be continued ( can these questions be transferred to the author?)
    The author does not discuss fundamentalist States that impose laws which are rejected by most , for example beheading as a punishment. To be continued…..
     
  • Rinita Mazumdar | 2601:8c0:c7d:ad0:8424:8a47:ae5:a22e | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩৭514475
  • সেক্যুলারিজম এর অনেক ডেফিনিশনাচ্ছে। আমি এই ভাবে "সেক্যুলারিজম"কে বোঝার চেষ্টা করি। পাবলিক বা স্টেট এর কোনো রিলিজিওন বাজেদল নেই অল লাওস রিসন একে ওপর বেসড। প্রাইভেট এ একজন রিলিজিওন প্রাকটিস করতে পারে। এত যদি হয়ে সেক্যুলারিজম তা হলে "ধৰ্ম"এস এথিক্স এর সঙ্গে বিরোধ কোথায়? এথিক্স ইউনিভার্সাল কিছু একটা এথিক্সের ওপর ভিত্তি করে স্টেট এন্ড প্রাইভেট লাইভস হবে। মার্কেট যখন এক্সটেন্ড করলো তখন স্টেট "সেক্যুলারিজম"কে বদ্ধ হয়ে এস অর্গানিজশনাল এলিমেন্ট নিতে হলো কিন্তু পুরোটা অর্গানিজেকরতে পারলো না। ইসলাম পাবলিক স্টেট অর্গানিজশন এর ওঠা খুব ডিটেলস এ যাচ্ছে। ইটা মডার্ন নয় ইটা পুরোনো এন্ড মডার্নিজম এ অপ্প্লিকেবলে। এই জন্য আফ্রিকাঃ কলোনিজটিওন হয়েছে। ইটা মডার্নিজম এর আগে হয়েছে। আমি এই নিয়ে আর্টিকেল লিখেছি কিছু পড়াশুনা করেচি 
  • Debasis Bhattacharya | ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১৭514477
  • রিনিতা মজুমদার,
     
    আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। যদ্দুর বুঝলাম, এই বিষয়টিতে আপনার অ আমার মতামতের বেশ কিছু মৌলিক তফাত আছে। তবু, আপনার বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করছি, যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েই। ইংরিজির চেয়ে আমি বাংলায় কথা বলতেই অনেক বেশি ভালবাসি, তবে ইংরিজিটাও অল্পস্বল্প পড়তে ও বুঝতে পারি। আপনি যদি ইংরিজিতে বেশি স্বচ্ছন্দ হন, তো সেটাই করুন। তবে, আমি কিন্তু বাংলাতেই উত্তর দেব, ওটুকু আপনাকে সহ্য করতে হবে। 
     
    আপনার ধর্মনিরপেক্ষতা (সেক্যুলারিজম) নিয়ে কিছু বক্তব্য/প্রশ্ন ইত্যাদি আছে, বুঝতে পারছি। এই বিষয়টি মৌলবাদ চর্চায় প্রাসঙ্গিক তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এ লেখায় আমার লেখার বিষয় কিন্তু মৌলবাদই, ধর্মনিরপেক্ষতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আমার দুটো ছোট্ট লেখা এখানেই আছে, দেখতে পারেন, যদি এ বিষয়ে আমার মতামত জানাটা আপনার কাছে জরুরি বলে মনে হয়। লিঙ্ক-এর দরকার নেই বোধহয়, চাইলে সহজেই খুঁজে পাবেন। এই সাইটে খোঁজাখুঁজির ব্যবস্থাপনাটা ভালই। 
  • Debasis Bhattacharya | ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৫514479
  • রিনিতা মজুমদার,
     
    আপনি কি আর কিছু বলবেন?
  • Debasis Bhattacharya | ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৮514518
  • রিনিতা মজুমদার,

    আপনি আর কিছু বলবেন না, এইটা ধরে নিয়ে কয়েকটা কথা বলি, ইতিমধ্যে যা বলেছেন তার প্রেক্ষিতে। আমার  কথাগুলো মোটামুটি এই রকম :-

    (১) আমি এখানে ‘মৌলবাদ’ বলতে ধর্মীয় মৌলবাদকেই বুঝিয়েছি, কারণ, ওই শব্দটির ওটাই সঠিক অর্থ বলে আমি মনে করি। এবং সেইহেতু, ‘রাজনৈতিক মৌলবাদ’ বা ‘বৈজ্ঞানিক মৌলবাদ’ বা ‘নাস্তিক মৌলবাদ’ জাতীয় কথাগুলোতে শব্দটির  ভুল প্রয়োগ বা নিদেনপক্ষে ঢিলে, অপারিভাষিক, কথ্য প্রয়োগ বলে মনে করি। প্রথম পর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি, পরে হয়ত আরও দেব।

    (২) ‘আইডেন্টিটি’ বা আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটি মৌলবাদের সঙ্গে মিশে কোথাও বিশেষ চেহারা নিতেই পারে, কিন্তু বিষয়টি মৌলবাদের অপরিহার্য উপাদান নয়। এখানে যেহেতু মৌলয়াদের সারবস্তুকে চিহ্নিত করতে চেয়েছি, অতএব এ ক্ষুদ্র রচনায় সে আলোচনায় ঢোকার দরকার পড়েনি। ওই একই কারণে, মৌলবাদী রাষ্ট্রের আইনকানুন নিয়েও আলোচনা করিনি। মৌলবাদ নিয়ে গোটা বই লিখতে গেলে হয়ত এসব কথাবার্তার দরকার হলেও হতে পারত।

    (৩) সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এখানেই আগে লিখেছি, এই লেখায় সে পরিসর ছিল না।

    (৪) না ধর্ম মোটেই ‘এথিক্স’ নয়। ধর্ম ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত একটি সমাজ-সাংস্কৃতিক ‘ফেনোমেনন’ বা প্রপঞ্চ, যার নৈতিক মাত্রাও আছে। এমন কি, আজকের অর্থে ধর্মীয় নৈতিকতা আসলে নৈতিকতাই নয়, এক ধরনের কুসংস্কার-ভিত্তিক সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মাত্র। অমুক কাজটা করা উচিত নয় কারণ ওটা নিজগুণেই খারাপ --- এটা হল নৈতিকতা। আর, ‘ওটা কোরো না কারণ তাতে ভগবান নরকে নিয়ে গিয়ে তেলে ভাজবে’ --- এটা হচ্ছে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ।

    (৫) দুঃখিত, বাংলায় যে মন্তব্যটি করেছেন তার বক্তব্য আমি অনুধাবন করতে পারিনি, ফলে সে ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব হল না।
  • প্রবীর রায় | 103.242.197.114 | ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:০৫514871
  • তাহলে এটা বোধহয় বলা যেতেই পারে যে যাহা কিছু আধুনিক তাহাই প্রগতিশীল নয় বরং অকল‍্যাণকর,অমানবিক ও আধিপত্যবাদী আধুনিকতা মৌলবাদেরই নামান্তর মাত্র।
  • Debasis Bhattacharya | ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৩৯514880
  • 'মৌলবাদ' আধুনিকতার অঙ্গ নয়, তার প্রতিক্রিয়া। এবং, এমনও নয় যে, এ পৃথিবীর যাবতীয় খারাপ জিনিসই মৌলবাদ। এইসব বলবার জন্যেই তো এতবড় লেখাটা লিখছি এত কষ্ট করে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন