এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আমাদের ভাল থাকা-না-থাকা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৯ জুলাই ২০২১ | ৩১১৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • আমাদের দেশের স্বাধীনতা আজ প্রায় পৌনে শতাব্দী পুরোনো হয়ে এল, আমাদের কবিজগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসননেবার বাসনা প্রকাশ করলেন সেও তো কমদিন হল নাকিন্তু, জ্ঞান ও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ এক উদার গণতান্ত্রিক মুক্ত জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের সামনের সারিতে এসে দাঁড়াব, সে স্বপ্ন আজও অধরাআমাদের দেশ আয়তনে সপ্তম, মোট জাতীয় আয়ের মাপকাঠিতে পঞ্চম, জনসংখ্যায় দ্বিতীয়, প্রাকৃতিক সম্পদে বিত্তবান, এবং ভাষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে অতুলনীয়কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, সে ঐতিহ্যের সম্পদ কাঁধে করে ভবিষ্যতের পথে জোর পায়ে হাঁটা লাগানোর পক্ষে আমাদের কাঁধ ও পা আজও যথেষ্ট পুরুষ্টু হয়ে উঠল নাফলে সে ঐতিহ্য আমাদের ভবিষ্যৎ-যাত্রার পাথেয় হয়ে ওঠার বদলে হয়ে দাঁড়িয়েছে এক দুঃসহ বোঝা, তাতে অগ্রগতির উৎসাহটা বড় করুণ রকমের কম, আর পেছনে টেনে ধরার বাঁধনটি বড় মারাত্মক রকমের পোক্তকাজেই, আমাদের মাথাপিছু আয় যৎসামান্য, শিক্ষাদীক্ষা-গবেষণা শেষ পংক্তিতে,  মানবোন্নয়ন তলানিতে, যদিও দারিদ্র্য ক্ষুধা অশিক্ষা কুসংস্কার এইসব ব্যাপারে আমাদের স্থান বেশ উঁচুতেগত কয়েক দশকে আমাদের মূলধারার রাজনীতিটাও আমরা বানিয়ে নিয়েছি চমৎকার --- সুশিক্ষা সমৃদ্ধি মানবোন্নয়নের প্রশ্নকে অনায়াসে পায়ে ঠেলে শত্রুতা অযুক্তি  অন্ধত্ব বিদ্বেষের রাজনীতিকে স্বেচ্ছায় নির্বাচিত করেছি আমাদের নিজেদেরকেই শাসন করার জন্যএর ফলে আমাদের সংবিধানের ভিত্তিস্বরূপ যে কয়েকটি মৌল ধারণা বিপন্ন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা সম্ভবতসেক্যুলারিজম’-এর, যার বাংলা আমরা করেছি  ধর্মনিরপেক্ষতাএকেছদ্মধর্মনিরপেক্ষতাবলে জনান্তিকে গালি দিয়ে স্বধর্মে গর্বিত হবার মত অনেক লোকজন আমাদের দেশে বরাবরই ছিল কিন্তু, এসব যে প্রকাশ্যে বলতে নেই --- এমন একটা বোধও যেন ছিল কোথাও একটাবিগত কয়েক দশকে অবশ্য পরিবর্তন হয়েছে বিস্তরভিন্ন ধর্মীদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রকাশ্যে উজাড় করে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে অপমান করাটা এখন যে আর তত লজ্জার নয় --- পরিবর্তন শুধু এইটুকু মাত্র নয়ওইটা করতে পারাটাই এখন দেশপ্রেমের সবচেয়ে জোরালো মাপকাঠি --- আসল পরিবর্তনটা এইখানে


    আচ্ছা, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এই যে আমাদের এত কান্নাকাটি, এইটা আদৌ করছি কেন আমরা? শুধুই ওটা আমাদের সংবিধানে সসম্মানে উল্লিখিত আছে বলে? শুধুই কি এই কারণে যে, পশ্চিম একে এক অবশ্য-পালনীয় আদর্শ বলে মনে করে, এবং আমরা পশ্চিমকে অনুকরণ করতে ভালবাসি? শুধুই কি এই কারণে যে, ওর মধ্যেনিরপেক্ষতাকথাটা আছে এবং সেটা শুনতে বেশ চমৎকার লাগে?


    না, তা নয় মোটেই, বরং ধর্মনিরপেক্ষতা আজ আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষে অপরিহার্য এক বাস্তব ও কেজো ব্যাপারকেন অপরিহার্য,  কেন বাস্তব, কেন কেজো? তার পরিষ্কার কতকগুলো সহজগ্রাহ্য যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, সেগুলো অনেকটা এই রকম আমাদের শাসকরা যাতে স্বেচ্ছাচারিতা না করতে পারেন, তার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মশাস্ত্রাদিষ্ট বংশানুক্রমিক শাসক থাকবে না, তার বদলে থাকবে জনগণের দ্বারা যৌক্তিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার, এবং তাকেও আবার পাল্টে দেওয়া যাবে নির্দিষ্ট সময় বাদে বাদে আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজের চালিকা অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি আইন প্রশাসন পরিচালনবিদ্যা এইসবের ওপরে, এবং এইসব বিদ্যা প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে শেখা যায় না, কাজেই আধুনিক শিক্ষার ঢালাও ব্যবস্থা করতে হবে, এবং প্রাচীন ধর্মীয় অভ্যাস কুসংস্কার বিধিনিষেধ ইত্যাদি যাতে সেখানে ব্যাঘাত না ঘটায় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে এইসব বিদ্যায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তিরা যাতে সত্যিকারের দক্ষতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি পরিচালনায় অংশ নিতে পারে, এবং সেখানে ধর্ম লিঙ্গ আর জাতপাতের ভেদবুদ্ধি বাধা না দিতে পারে, সেজন্যেও কড়া ব্যবস্থা দরকার আর এ ব্যবস্থা দক্ষভাবে চালু রাখার সঙ্গে সঙ্গে উন্নতিও ঘটিয়ে যেতে হবে, এবং তার জন্য লাগবে প্রকৃতি ও সমাজ সম্পর্কে নিবিড় গবেষণা, আর সে জন্য উৎসাহ দিতে হবে প্রতিষ্ঠিত ধ্যানধারণাকে ক্রমাগত প্রশ্ন করে চলার মুক্ত অবাধ চর্চাকেও আধুনিক রাষ্ট্রকে এ সব করতেই হবে, তা না হলে নিরপেক্ষতা ও আস্থা হারাবে প্রশাসন, দক্ষতা হারাবে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি, এবং ধ্বসে পড়বে গোটা ব্যবস্থাটাই আর সেইজন্যেই রাষ্ট্র প্রশাসন অর্থনীতি শিক্ষাদীক্ষা থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা দরকার --- যাকে বলিধর্মনিরপেক্ষতা এই ধর্মনিরপেক্ষতাই আনবে প্রগতি, জ্ঞান, সমৃদ্ধি, মুক্তি পশ্চিমে তাই হয়েছে, এবং সহজ যুক্তিতেই এখানেও ঠিক তাইই হবে মানে, আমরা আশাবাদী এবং অনুতাপহীন আধুনিকেরা ব্যাপারটাকে এভাবেই ভেবে এসেছি চিরকাল, যাকে উত্তরাধুনিকেরা নাক সিঁটকে বলে থাকেন, ‘হুইগিশ ইন্টারপ্রিটেশন অফ হিস্ট্রি’, অর্থাৎ, ইতিহাসের হুইগ-পন্থী ব্যাখ্যা


    এর ভেতরে আবার আরেকটা কথা আছে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এমনি এমনি হয়না, তাকে ধারণ করার জন্য একটা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ লাগে কুসংস্কার ও ভেদবুদ্ধিতে আচ্ছন্ন জ্ঞান-স্পর্শহীন অনাধুনিক সমাজ শুধু শাস্ত্র, প্রাচীন বিশ্বাস আর লোকাচারকে সম্বল করে চলতে চায়, তাই তার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চাহিদাটাই তৈরি হয় না ফলত, দূরে থাকে আধুনিকতা, সমৃদ্ধি আর জ্ঞানও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ মানে, বলা বাহুল্য, নাস্তিক সমাজ নয় --- যদিও নাস্তিকরা অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ মানে যে সমাজে ধার্মিকেরাও ধর্মবিশ্বাসকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মানে, ভিন্ন ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকার করে, ধর্মের সমালোচনার অধিকার স্বীকার করে, ধর্ম ও ঈশ্বর না মানার অধিকার স্বীকার করে, ধর্মগ্রন্থ ও লোকাচারের বাইরেও অনেক কিছু জানার বোঝার আছে বলে স্বীকার করে এবং, সর্বোপরি, আধুনিক রাষ্ট্রের নানা অঙ্গ যেমন প্রশাসন-শিক্ষা-বিচারব্যবস্থা ইত্যাদিকে ধর্মের প্রভাবমুক্ত রাখার প্রয়োজনীয়তাকেও স্বীকার করে আধুনিক হয়ে ওঠার জন্য এগুলো অতি প্রয়োজনীয়, এবং একই সঙ্গে আবার আধুনিক হয়ে ওঠার অনিবার্য ফলাফলও বটে ফলে আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মের প্রভাব কমে আসাটা অবশ্যম্ভাবী, যে প্রক্রিয়ার পোশাকী নামসেক্যুলারাইজেশন’ --- এমনটাই আমরা জেনেছিলাম ম্যাক্স ওয়েবার, এমিল দুর্খাইম, কার্ল মার্ক্স এবং অন্যান্য আরও অনেক কালজয়ী সমাজচিন্তকদের কাছ থেকে


    কিন্তু, এ নিয়ে আছে প্রশ্ন, আছে পাল্টা অবস্থানও কারুর কারুর মতে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পক্ষে ধর্মের প্রবল প্রতাপ খারাপ তো নয়ই, বরং ভাল ধর্মে মতিগতি থাকলে মানুষ মানুষকে ঠকাবে না, দয়া দাক্ষিণ্য করবে, স্বর্গলাভের জন্য পরিশ্রম করবে ফলে সমাজে শৃঙ্খলা ও আস্থা থাকবে, উৎপাদন ব্যবসা বাণিজ্য এইসব বাড়বে পৃথিবী জুড়ে সাম্প্রতিক মৌলবাদী রাজনীতির রমরমার কথা তুলে তাঁরা বলতে চান, আসলে পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশ আর একক পার্টি-নিয়ন্ত্রিত চিনের গা-জোয়ারি ব্যবস্থা --- এ ছাড়াসেক্যুলারাইজেশনআসলে কোথাও ঘটেইনি, এ এক কল্পকথা মাত্র

    বিশ শতকের গোটা দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে তর্ক চলেছে এই দুই বিপরীত অবস্থানের মধ্যে, কিন্তু পাথুরে প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে সবে এই একুশ শতকের গোড়া থেকে বিভিন্ন দেশ ও জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল এখন আমরা নির্ভরযোগ্যভাবে পাচ্ছি এই শতকের গোড়া থেকে, একাধিক প্রামাণ্য উদ্যোগের তরফে এবং, সমাজতাত্ত্বিকেরা মেতে উঠেছেন সে ফলাফলের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে আজ সমাজবিজ্ঞানীরা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন, যে কোনও দেশে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্যের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্পর্ক বিপ্রতীপ, অর্থাৎ যে দেশে ধর্মের প্রাবল্য যত কম তার মাথাপিছু আয় ততই বেশি একই ভাবে, সেই সব দেশে সরকার জনকল্যাণ খাতে অপেক্ষাকৃত বেশি খরচা করে, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা অপেক্ষাকৃত ভাল এবং অপরাধের হার কম, ইত্যাদি অর্থাৎ, পার্থিব জীবনের গ্লানি যার যত কম, অপার্থিবের প্রতি আকর্ষণও তার ততটাই কম এভাবে, ‘সেক্যুলারাইজেশনতত্ত্ব আজ পেয়েছে তথ্যের পোক্ত জমি


    আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান সমীক্ষা-সংস্থা ‘উইন গ্যালাপ’ তার পৃথিবীজোড়া সমীক্ষাকর্মের ফলাফলের ভিত্তিতে বহুসংখ্যক দেশের ধর্মবিশ্বাস ও মাথাপিছু আয়ের সম্পর্ক তুলে ধরেছিল ২০১২ সালে তৈরি এক লেখচিত্রে, নিচের চিত্র দেখুন।



    ধর্ম ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক যে বিপ্রতীপ, এ চিত্র থেকে অন্তত সে ব্যাপারে সন্দেহ করার উপায় নেই একটুও। আর, এ রকম সিদ্ধান্ত বিচ্ছিন্ন বা বিরলও নয়। আরেক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা-সংস্থা ‘পিউ ফোরাম’ এর বছর সাতেক পরেও নিজেদের সমীক্ষাজাত ফলাফল থেকে ঠিক এই একই চিত্র তুলে ধরেছে। নিচের এই লেখচিত্রটা দেখুন, এটা তাদেরই তৈরি, ২০১৯ সালে।



    কিন্তু, প্রশ্ন থামেনা এর পরেও উল্টো পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ছিল, তাইই যদি হবে, তো আমেরিকার মাথাপিছু আয় ইউরোপের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ধর্মবিশ্বাস ইউরোপের থেকে অনেক বেশি কেন? এ প্রশ্ন এতদিন ধাঁধা হয়েই ছিল, কিন্তু তার সন্তোষজনক উত্তর মিলেছে এই সবেমাত্র, বর্তমান শতকের বিগত দশকটিতে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিদ ফ্রেডরিক সোল্ট এবং তাঁর সহকর্মীরা, যাঁরা অর্থনৈতিক অসাম্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বহু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাঁরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য এক জায়গায় করে গাণিতিক বিশ্লেষণ সহযোগে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়েছেন --- ধর্মের প্রতাপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে অর্থনৈতিক অসাম্যের --- অসাম্য বাড়লে বাড়ে ধর্মের রমরমাও ফলত, মার্কিন ধর্মবিশ্বাসের ধাঁধাও আজ আর ধাঁধা নয় ইউরোপের চেয়ে ধনী হলেও সে দেশে ধর্মের রমরমা বেশি, যেহেতু তার অর্থনৈতিক অসাম্য ইউরোপের চেয়ে বেশি এ ব্যাখ্যা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং এ গবেষণা আরও এগিয়েছে আরও সাম্প্রতিক গবেষণায় ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ পীম্যান হেকমতপ্যুর দেখিয়েছেন, উন্নত দেশের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রাবল্য অর্থনৈতিক অসাম্যের চেয়েও বেশি নির্ভর করে স্বাস্থ্য পরিসেবার অসাম্যের ওপরে যে দেশে সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা যত বেশি সহজলভ্য, সে দেশে মানুষের শরীর সংক্রান্ত নিরাপত্তাবোধ ততই বেশি, এবং ধর্মের রমরমা ততই কম সোল্ট ও সহকর্মীদের তৈরি লেখচিত্র নিচে দেখুন, সেখানে ধর্মবিশ্বাসের নানা দিকের সঙ্গে অসাম্যের সহগামী সম্পর্ক দ্ব্যর্থহীনভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে।


     

    তাহলে, এত সব চর্চা ও চিন্তা যদি আমাদের দেশ ও জাতির দিকে কেন্দ্রীভূত করি, তবে তা আমাদেরকে নিয়ে যাবে কোন প্রজ্ঞা বা প্রশ্ন বা সম্ভাবনার দিকে? এই মুহূর্তে সে সব খুব সুখের নয় বলেই মনে হয় আমাদের দেশে এমনিতেই কঠোর পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতাকে নানা বিচিত্র ব্যাখ্যার মাধ্যমে ডানা ছেঁটেসর্বধর্ম সমভাবগোছের এক ঘোলাটেপনায় রূপান্তরিত করা হয়েছে আর, গত তিন দশক ধরে যা ঘটছে তা আর ঘোলাটেপনা নয়, পরিচ্ছন্ন পশ্চাদগমন গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা আজ আর আমাদের রাষ্ট্রের স্তম্ভস্বরূপ নয়, বর্জনীয় বোঝা মাত্র আমাদের নির্মোহ জ্ঞান আজ প্রতিস্থাপিত ঘৃণা ও বিদ্বেষ দ্বারা আমাদের ইতিহাস হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৌরাণিক কাহিনী, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধীরে ধীরে মজে যাচ্ছে গোমূত্রের সুতীব্র রসে আমরা এ লেখায় ইতিপূর্বে দেখেছি, এ রকম ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কমে যাওয়ার কথা, এবং অসাম্য বাড়বারকথা বলা বাহুল্য, ঘটছে ঠিক তাইই

    আমরা ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছি সেই অন্ধকার দুষ্ট চক্রের মধ্যে, যেখানে অসাম্য ও অনুন্নয়ন টিঁকিয়ে রাখে অন্ধত্বকে, আর অন্ধত্ব দেখভাল করে অসাম্য ও অনুন্নয়নের 

    জানি, আমরা একদিন এ থেকে বেরিয়ে আসবই জানি, ইতিহাসের রথের চাকা কেউ উল্টোদিকে ঘোরাতে পারে না জানি, মোল্লা-পুরুতের দাড়ি আর টিকি ইতিহাসের রথের চাকায় জড়িয়ে গেলে চাকা থামবে না, ছিঁড়বে দাড়ি আর টিকিই


    কিন্তু, লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে, কবে?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৯ জুলাই ২০২১ | ৩১১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Gobinda Saha | 2402:3a80:198e:75a8:a4b9:e195:3870:3cb4 | ০৯ জুলাই ২০২১ ১০:৫৬495690
  • I too thought of it time & again and found the reality in present Indian context where even free movement of commodities are restricted as e,g. Beef that broke down whole of traditional Village Economy where cattle at a certain age are sold for replacement - On the other hand  shortage of cheap & quality protein leading to price rise of other Non-veg protein would ultimately cause malnutrition for the lower income group leads to rise of cost related to.health issues and lower productivity. It's a vicious cycle starting from loss of  village household incomes and ends in lowee GDP growth of a Country. Religion itself is a barrier to free flow of commodities in a Capitalist market system.  Pork too is an example, free flow of which is hindered by the religious stigma thereby legal too in some countries.  Products made out there are in some places prohibited by law. The cascading effect of this type of prohibition is huge in an Economy. The philosophers & Economists of Adam Smithian Era understood it clearly - so they had a simultaneous fight against religious dictum for the no-hindrance free flow Of commodities. 

  • Anindita Roy Saha | ০৯ জুলাই ২০২১ ১৯:৫৭495696
  • তথ্যনিষ্ঠ যুক্তিযুক্ত লেখা। 


    সাধারণভাবে দেখলেও বোঝা যায় , ধর্ম যেমন শক্তির হাতিয়ার , তেমনি উল্টোদিকে ধর্ম পিছিয়ে পড়া জনগণের আশ্রয়। অস্বাস্থ্য অশিক্ষা আর আর্থিক অসাম্য (এবং দারিদ্র্য) মানুষের মধ্যে অসহায়তার জন্ম দেয়। ধর্মীয় আচরণ তখন জাঁকিয়ে বসে। তাই উন্নয়ন আর ধর্ম বিপরীতমুখী । 

  • সুমনা | 2a03:e600:100::35 | ০৯ জুলাই ২০২১ ২২:০৪495699
  • সুন্দর বিশ্লেষণ। কয়েক দশক আগে আমাদের সমাজ যখন আরো সেকুলার ছিল, তখন যে হিন্দু রেট অফ গ্রোথ বজায় ছিল, এখন আমরা তার থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। তাছাড়া অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য ভাষা বিষয়েও আমাদের সমাজে পরিবর্তন দরকার তা এখানের গ্রাফ দেখলেই বুঝতে পারবেন- http://www.appliedeconomist.net/2014/01/gdp-per-capita-by-language.html


    বাংলা, হিন্দি এসব দ্রুত বর্জন করার দিকে এগোতে হবে।

  • Reader | 184.148.172.120 | ১২ জুলাই ২০২১ ২১:২১495743
  • প্রথম গ্রাফটার লেজেন্ড তো ভয়াবহ..  


    - পাকিস্তান মিডল ইস্ট, যদিও ভারত ও চীন এশিয়ায় (পাকিস্তান টেকনিক্যালি গ্রেটার মিডল ইস্ট)। আলাদা করে মিডল ইস্ট-এর দরকারই বা কী ছিলো ! 


    - আইসল্যান্ড ইউরোপে নয় ('অন্যান্য')


    - ক্ষুদে ফিজি লিথুয়ানিয়া থাকলেও মেক্সিকোর মতো বিশাল দেশ বাদ


    যাক মূল আলোচনাটা ভালো লাগলো এবং এটা  চালিয়ে যাওয়া দরকারি - লেখককে ধন্যবাদ। এটা অবশ্য অজানা কারোরই না যে "যেখানে অসাম্য ও অনুন্নয়ন টিঁকিয়ে রাখে অন্ধত্বকেআর অন্ধত্ব দেখভাল করে অসাম্য ও অনুন্নয়নের",তবু প্রমাণের প্রয়োজন আছে বৈকি। 


    এ বিষয়ে হ্যাপিনেস ইনডেক্সের কথাও প্রাসঙ্গিক - ভুটান বা বাংলাদেশ এতো সুখী কিভাবে। 

  • nipa | 2605:6400:30:f916:f675:55d9:2c27:8b7a | ১৭ জুলাই ২০২১ ০০:৫৭495845
  • খুব যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য। এদেশে ধর্মধ্বজীদের দাপটে নিয়মগিরিতে বেদান্তের প্রজেক্ট আটকে যাওয়ায় উন্নয়ন অধরা রয়ে যায়। কবে এসব থেকে মুক্তি ঘটবে?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন