এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মানুষ মানুষের জন্য?

    শক্তি দত্তরায় করভৌমিক লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ আগস্ট ২০১৮ | ১১৪১ বার পঠিত
  • স্মৃতির পটে জীবনের ছবি যে আঁকে সে শুধু রঙ তুলি বুলিয়ে ছবিই আঁকে, অবিকল নকল করা তার কাজ নয়। আগেরটা পরে, পরেরটা পরে সাজাতে তার একটুও বাঁধেনা। আরো অনেক সত্যের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতির আরম্ভেই এই ধ্রুব সত্য মনে করিয়ে দিয়েছেন। কথাটা মনে রেখেই শৈশবস্মৃতির প্রথম ছায়া -আভাসে সাঁতার কাটতে চেষ্টা করছি। তখন কি আর সন তারিখ জানি? নিজের বয়স কতো জানি? উঁহু, না, কিছুই বুঝি না। এখন একটু হিসেব করি, মনে হয় তিন বছর কি সাড়ে তিন বছর হবে হয়তো। ঝাপসা মনে পড়ে বিজন দুপুরে কি ঘুমছুট শেষরাতে।

    অনেক রাত তখন, তিনবছরের শিশুর পক্ষে তো নিশুতি। বাড়িতে অনেক লোকের সতর্ক চলাচল, ফিসফাস কথা। অতো রাতে রান্নার গন্ধ; স্বাভাবিক নয়। ছোট শিশুটিও অনুভব করছে আজকের রাতটা রোজকার মতো নয়। সকালে উঠে কি দেখেছিলাম? মনে পড়ে না। তবে আরো একটু বড়ো হয়ে যা শুনেছি তার কিছুটা যা মনে আছে বলি। 'স্মৃতির পটে জীবনের ছবি' যিনি এঁকেছেন কতোখানি রঙ তিনি বুলিয়েছেন তিনিই জানেন।

    আসামের গোয়ালপাড়া জেলা। ব্রহ্মপুত্র নদের এপারে যদি আসাম, ওপারে বৃটিশের ছুরি চলার আগের ভাগ না হওয়া ভারতের পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ জেলা। সাতচল্লিশের আগে ওখান থেকে অনেক দক্ষ মুসলমান কৃষক এসে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উর্বর অরণ্য হাসিল করে কৃষিজমি, বসতি করেছেন। "শ্রমকিনাঙ্ক কঠিন যাদের নির্দয় মুঠিতলে" ত্রস্তা ধরণী যথারীতি নজরানা ও দিয়েছে তাঁদের। হিন্দুরাও এসেছেন কেউ চাষী গৃহস্থ, কেউ গোয়ালা কেউ কামার, কেউ টী প্ল্যান্টেসনের মালিক, ম্যানেজার, কর্মচারী। নিজের দেশেই পরিযায়ী। মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে, স্বভাবগত যাযাবর প্রবৃত্তিতে স্থান বদলায়, বসতি পাল্টায়। আর্যরা, আহোমরাও ঐরকম বসতি বদল করে চলে এসেছেন স্থানান্তরে দ্বীপান্তরে।

    সালটা এখন মনে হয় ইংরেজি ৫১ হবে। গোয়ালপাড়া জেলার চাপর নামে চা বাগান। পাশে চাপর বন্দর বলে কোনো একটি গঞ্জে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনাকাটা করা যায়। চা বাগান প্রায় জঙ্গলে ঘেরা বিচ্ছিন্ন জনপদ। আমাদের উঠোন থেকেই বাঘ এসে পোষা ছাগল তুলে নিয়ে গেছে। এসব তথ্য বেশিরভাগ আমার শোনা। তিন চার বছরের শিশুর আর কতো মনে থাকে। বহুবছর পরে শিলং থেকে বাসে দার্জিলিঙ যাচ্ছিলাম, পথে একটি জায়গার নাম লেখা বোর্ড দেখেছিলাম চাপর - ঐ পর্যন্তই। আমার স্মৃতির প্রথম পাতায় একটি বাড়ির ঝাপসা ছবি আছে। উঠোনে শিউলি ফুল ঝরে পড়ে আছে, আরো কিছু ফুল গাছ। একটা নাকি মেহগনি গাছ ছিলো। কচি লাল পাতায় সাজানো একটি গোলাপ গাছ মনে পড়ে। রেডিও ছিলো না, গ্রামোফোন রেকর্ড ঘুরতো শিউলি ঝরা অঙ্গনে এসো আমার মা জননী। বাগানে অঢেল ছিলো গরু আর মোষের দুধ, ঘি, প্রচুর সব্জি, মাছ মাংস, দিশি ফল। ভালো পানীয় জলের কুয়ো। ছিলো না যাতায়াত ব্যবস্থা। কোম্পানির একটা জীপ, দুএকটা মোষের গাড়ি ভরসা। পুরুষরা হেঁটে বা সাইকেলে মেরে দিতেন পনেরো কুড়ি মাইল। বাবুদের বাড়ির বৌ মেয়েরা এবাড়ি ওবাড়ি সেলাই রান্না শিখতেন শেখাতেন। ঘরসংসার, বাচ্চা মানুষ করতেন। কোথায় আর যাবেন। মিশ্র বসতি। বাগানের ম্যানেজার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অন্য বাবুরা বেশিরভাগ বাঙালি, কিছু অসমীয়া। দেশভাগের আগে পরের বহু শিক্ষিত বাঙালি যুবক জীবিকা হিসেবে চাবাগানের চাকরি বেছে নিয়ে অসমবাসী হয়েছিলেন। মাইনে কম হলেও খাওয়া পরা ভালো ছিলো, তখন চাহিদা ও কম ছিলো। পুজোর সময়ে দুতিন বাগানের স্টাফ মিলে নাটক জলসা হোতো। যাত্রা ছিলো মস্ত বিনোদন। শ্রমিকরা বৃটিশ আমলে আড়কাঠিদের খপ্পরে পড়া দুর্ভাগা মানুষ - সারা ভারত থেকে জড়ো হয়েছিলেন চাবাগান গুলিতে। দুঃখী, সহজ সরল, সহিষ্ণু। রাতে মাদল বাজিয়ে পানে গানে তৃপ্ত। আশেপাশে গ্রাম দু'চারটি। অসমীয়াদের গ্রাম। বাঙালি হিন্দু মুসলমান গৃহস্থের বসতির চলতি নাম বস্তি। যে যার মতো থাকেন। জাতিবিদ্বেষ তখনো অচেনা। ব্যাপারী ডিম্বদাস ডেকা ঘোষপাড়া বস্তির দুলু চক্রবর্তী, বাগানবাবুরা রহিম খলিফার দোকানে দাবা খেলেন, তাস পেটেন, তর্ক করেন। চাবাগানে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নেই বললেই হয়। চুরি ডাকাতিও খুব কম, ছোটখাটো মারপিট নিজেরা সামলে নেয়াই রেয়াজ।

    তখন খবরের কাগজই বা ওরকম জায়গায় কটা পৌঁছয়, রেডিও র সরকারি খবর - তাই বা কজন শুনতে পায়। নিজেদের গ্রামে বস্তিতে দাঙ্গা ফ্যাসাদ না হওয়া অবধি বিভিন্ন সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে সহাবস্থান শান্তিপূর্ণই রাখে। খেটে খাওয়া মানুষ ঝামেলা পছন্দ করে না। তবু আগুন ছড়িয়ে দেবার আগে মশাল তৈরির আয়োজন অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছিল। দেশভাগ ও তার আগে পরের দাঙ্গার নানা খবর, নানা গুজব আবহ দূষিত করে তুলেছিল। তখন "সকলেই আড় চোখে সকলকে দেখে "। রাজনীতির কলকাঠি বহুদিন ধরেই নড়ছিল। ১৮৭৪ এ রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনে বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা আর গোয়ালপাড়া জেলা অসমের অন্তর্ভুক্ত করে দিলে প্রচুর বাঙালি স্বভাবতই অসমের অধিবাসী হয়ে পড়েন, প্রশাসনের উঁচু এবং মাঝারি পদে চাবাগানে বাঙালি চাকুরীজীবির আধিক্য সাধারণ অসমীয়া জনসাধারণ সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন। ওদিকে দেশভাগের বলি উদ্বাস্তুদের ঢল সামাজিক ভারসাম্য ব্যাহত করে। সিলেট ভারতের হবে কি পাকিস্তানে ঢুকবে তা নিয়ে জনমত যাঁচাই এর মিথ্যে প্রহসন হয়। হাজার হাজার চা শ্রমিকদের ভোট দিতে দেয়া হয়নি। বংশানুক্রমে অসমে বাস করেও তাঁরা নাকি বহিরাগত। ফলতঃ ডাউকিরোড ধরে কাছাড় সীমান্ত বা ব্রহ্মপুত্রনদীর জলপথে প্রচুর অসহায় নিঃস্ব বাঙালি বাধ্য হয়ে রুটি রুজিতে ভাগ বসালেন। দেশভাগ যাঁরা করেছেন তাঁরা এঁদের মতামত নেননি কিন্তু রাগটা গিয়ে পড়লো এঁদেরই ওপর। এখানে আর একটা কথাও আমি উল্লেখ করবো - অসম, ত্রিপুরা, বাংলাদেশের সিলেটের চা বাগানে কোনো অজ্ঞাত কারণে বাঙালি মুসলমানদের বলা হয় বাঙালি, বাঙালি হিন্দুদের সাধারণত বলা হয় বেঙ্গলি - অন্তত ছোটবেলায় এরকমই শুনেছি, জানিনা এখন অন্যরকম বলে কিনা।
    বড় হয়ে ১৯৫০/ ৫১ইংরেজীর বাঙালখেদা বা ভাটিয়া খেদার কথা শুনেছি। ৬০ সনের ভয়ংকর দাঙ্গার সময় তো তেজপুরেই ছিলাম। সে কথা আজ থাক। সেই অতি শৈশবের প্রথম ঘুমছুট রাতের ঝাপসা অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার ছবিতেই চোখ রাখি।

    তখন কতো রাত কে জানে, একে তো ওই বয়স তায় বিজলি বিহীন জঙ্গলে পরিকীর্ণ চা বাগান। সন্ধ্যায় নিশুতি রাত। ইকড়া অর্থাৎ নলখাগড়ার ওপর সিমেন্ট প্লাস্টার করা দেয়াল, সামনে পোর্টিকো, কাঁচের জানালা, খড়ের চাল, L প্যাটার্ন বাড়ি, অসমে যেমনটা হোতো সেকালে। বাবার খেয়ালে একটা ঢেঁকিঘর তৈরি হয়েছিলো। মদেশিয়া ঝি বৌরা চাল কুটতো, চিঁড়ে কুটতো। দুপুরবেলা ছোটমাসীর কোলে চেপে দেখতাম। সে রাতে ঢেঁকি ঘরের বারান্দা ভরে গেছে ত্রস্ত নারী, পুরুষ আর শিশুদের ফিসফিস কথাতে। একেবারে কচি বাচ্চা কঁকিয়ে উঠে থেমে যাচ্ছে বা থামিয়ে দিচ্ছে তার মা। এতো রাতে উঠোনে রান্না হচ্ছে, খিচুড়ি ফোঁড়ন হচ্ছে ডেকচিতে। মা ছোটমাসী লছিমা বুড়ি আমি কিছু জানতে চাইলেই চুপ চুপ বলছে কেন বুঝতে পারছি না। জানালা দিয়ে এক এক বার তিনজনের কোলে উঠে দেখছি লোকেরা নিজেদের পোটলা পুটলি বাচ্চা কাচ্চা সামলে হাপুস হুপুস খেয়ে রাতের অন্ধকারেই চলে গেল। ফাল্টুদা যোগেশ্বরদারা রাত থাকতেই হাঁড়ি মেজে উঠান পরিষ্কার করে এতো লোকের উপস্থিতির চিহ্ন মুছে দিচ্ছে। কিছু না বুঝলেও মা আর লছিমা বুড়ি বাবার দুঃসাহস দেখে আতঙ্কিত এটা বুঝতে পারছি।

    কখন হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। একটু বেলা করেই বোধহয় ঘুম ভেঙেছিলো। আস্তে আস্তে বাগানের বাবুরা জড়ো হয়েছেন বাড়িতে। খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বাসুগাঁওএর কাছে কোনো বস্তিতে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছে। ভাটিয়া খেদা। ভাটিয়া কারা? পূর্ববঙ্গের ভাটি অঞ্চলের মুসলমান চাষী, তিলি, গৃহস্থরা। শ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গল হাঁসিল করে, সাপ, বাঘ, গন্ডারের সঙ্গে যুঝে এঁরা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে উর্বর জনবসতি হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। অনেকের পূর্বপুরুষ স্বাধীনতার আগেই নিজের দেশ জেনেই বসতি বদল করেছিলেন। এখন তাঁরাই ভাটিয়া খেদা বা বাঙাল খেদার লক্ষ্য।
    আমার বাবা জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও পূর্বপুরুষের আদিবাস ছিলো ভাটি অঞ্চলের ময়মনসিংহে। মাটির সূত্রে, ভাষার সূত্রে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা, নাইবা থাকলো ব্যক্তিগত পরিচয়, পারেননি দুর্ভাগ্যের দিনে তাদের প্রতি উদাসীন থাকতে। একটি পলায়নপর ক্ষুধাতুর, ক্লান্ত দলকে নিজের সীমিত ক্ষমতায় একটু বিশ্রাম একটু আহার দিতে চেষ্টা করেছেন। বাবা দুঃসাহস করেছিলেন। নিজে আক্রান্ত হতে পারতেন। বাগান আক্রান্ত হতে পারতো। ঘরছাড়া মানুষ যেটুকু সম্বল পারে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলো অজানা নূতন ঠিকানার খোঁজে। পথেই ছেড়ে যেতেও হচ্ছিলো কিছু। এক দর্জি তার সেলাইকলটি --ফুটমেশিনটি নিয়ে যাত্রা করেছিলো, যেখানেই যাক করে খেতে তো হবে। পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে সেটি বাবার কাছে বিক্রি করে গেলো। ওটি বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা আর, পাথেয়র প্রয়োজনও ছিল। আমাদের মা আমাদের সম্বতসরের জামাকাপড় সেই মেশিনে সেলাই করতেন। সেই মেশিনে জড়িয়ে ছিলো ঘরহারার দীর্ঘশ্বাস ।

    দিনের পর দিন যায়। ব্রহ্মপুত্র, ডিহং, ডিবং, জিয়াভরলির জল গড়ায়। পরবর্তী জনগণনায় জীবন জীবিকার তাড়নায় বহু বাংলাভাষী মুসলমান নিজেদের অসমীয়া ভাষী হিসেবে নথিভুক্ত করলেন। ১৯৬০/১৯৬১ র বাঙাল খেদার টার্গেট ছিলেন মূলত বাঙালি হিন্দুরা। তখনও আমি স্কুলছাত্রী। তেজপুরে ছিলাম। সে বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করেছি।
    ঘরহারার কান্না খুব কাছে শুনেছি ত্রিপুরার দক্ষিণসীমা সাব্রুমে। ওপারে বাংলাদেশ। প্রেক্ষাপট বলতে পারবোনা। এক দল চাকমা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন এদেশে। গার্লস স্কুলের মাঠে কিছুদিন রাখার পর দু’দেশের মধ্যে চুক্তি মোতাবেক গভীর রাতে ট্রাকে করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছিলো তাদের নিজেদের দেশে। রাতের বুক দীর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো তাদের ভয়ার্ত চিৎকারে। সেটা হবে ৭৬/৭৭ সাল। আমার বড়ছেলে চার বা পাঁচ বছরের। এখনো তার মনে পড়ে সেই কান্না। এক কান্না ভেসে এসেছিলো স্থানান্তরে, প্রজন্মান্তরে।

    দুই কান্নাই দেখলাম, দুইই মর্মান্তিক। ঘরছাড়ার কান্না তবু বোঝা যায়। নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার ভয়ে যে কান্না সে আরো মর্মবিদারী। কতকাল আরো মানুষ মানুষকে কাঁদিয়ে তাড়াবে। সীমান্ত বদল হবে।

    অসমের সুন্দর ভূপ্রকৃতি। সাধারণ ভাবে অতি সজ্জন মানুষ। কতো ভোগালি বিহু, রঙালি বিহুর স্মৃতি মনে আছে। তা ছাপিয়ে মনে পড়ে '৬০এর বাঙাল খেদা। আগেই বলেছি তখন টার্গেট হিন্দু বাঙালি। এর আগের সেন্সাসে সবাই না হলেও বহু মুসলমান বাঙালি নিজেদের অসমীয়াভাষী হিসেবে নথিভুক্ত করিয়েছেন। জনশ্রুতি তাদের কোনো একটি অংশকে ভয় কিংবা লোভ দেখিয়ে রাজনীতি ঘাতকের ভূমিকা দিয়েছিলো। অবাঙালি ব্যবসায়ীদের ভূমিকা সন্দেহাতীত ছিলোনা। তেজপুরে এক মাড়োয়ারী মালিকানাধীন তেলকলে দাঙ্গাভীত বাঙালি নারী শিশু সহ আশ্রয় পেয়েছিলো। মধ্যরাতে সেখানে ভয়াবহ তান্ডবের কাহিনী লোকমুখে ফিরতো। পত্র পত্রিকা সবটা প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি। আমরা ছিলাম ঢেকিয়াজুলির কাছে চারদুয়ারে। ছুটি কাটাতে গেছিলাম ময়ূরভঞ্জের মহারাজের চা বাগানে। রাতে ঘুম ভেঙে যেতো অদূরে বস্তির মানুষের আর্ত চিত্কারে। আকাশে দেখা যেতো ঘরপোড়া লাল আগুন। গৃহপালিত গরু মোষের ডাকে রাত হোতো বিভীষিকাময়। আমার ছোটবোন মাকে ভয়ে সারারাত জাগিয়ে রাখতো। চোখ বন্ধ করতেই দিতো না।

    বাবার কথা দিয়েই শুরু করেছিলাম, আবার বাবার কথাতেই যাবো। ১৯৭১এর এপ্রিল মাসের ঘটনা। আটই মে আমার বিয়ে। বাবার সঙ্গে অসমের দীর্ঘ যোগাযোগ। বহু অসমীয়া বন্ধু, পরিচিত জন। নিমন্ত্রণ পত্র দিতে হবে। অসমের এন্ডি আর মুগার চাদর, পাঞ্জাবি জামাইকে দেবন না, বড়মেয়ের বিয়ে বলে কথা, ক'টা অসম সিল্ক কিনতে হবেই। সকাল সকাল তৈরি হয়ে বাবা গেলেন স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাসে তেজপুরে কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা হলে ফিরতি বাস ধরলেন খুশিমনে। বিশ্বনাথ চারালির একটু আগে কয়েকজন লাঠিসোঁটা হাতে বাস থামালো। - বাসত্ বাঙালি মানু আহে নাকি? কে কি উত্তর দিয়েছিলো জানিনা। এলোপাথাড়ি লাঠির আঘাতের একটা পড়েছিলো বাবার হাঁটুতে। বাবার বয়স তখন ষাটের কাছাকাছি। বাস থেকে নেমে জঙ্গলের পথে কতটা দৌড়ে, হেঁটে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বাবা বলতেও পারেননি। সন্ধ্যার পর নদীর ধারে আঁজলা ভরে জল খেয়ে শুয়ে মনে হয়েছিলো বেঁচে গেছেন। কিন্তু সেই চির চেনা, দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী মানুষদের বদলে যাওয়ার আকস্মিকতার অভিঘাত সারা জীবন বাবার পিছু ছাড়েনি আর। হাঁটতে হাঁটতে শেষরাতে ঢেকিয়াজুলির বাড়ি যখন পৌঁছলেন আমার মা তখন অর্ধমৃত। প্রতিবেশী দক্ষিণভারতীয় স্যামুয়েলকাকু ততক্ষণে তেজপুরে গোলমালের খবর পেয়ে হাসপাতালে মর্গে খোঁজ সেরে ফিরে এসে গেছেন। বাঙালি কেউই সাহস করেননি বাড়ি ছেড়ে বেরোতে। সাধের এন্ডি, মুগার কাপড়, চাদর, সিল্ক শাড়ির প্যাকেট হারিয়ে গেছিল। বাবাকে হারাতে হয়নি, এই না কতো।

    এবার আশির দশকের প্রথম দিকের কথা। আমার বোনের বর, জন্ম তার অসমের তত্কালীন রাজধানী শিলংএ। মেঘালয় অসম থেকে আলাদা হয়ে গেলে অসম সেক্রেটেরিয়েটের স্টাফ হিসেবে তার পোস্টিং পরবর্তী রাজধানী দিসপুরে। দুই শিশুকন্যা নিয়ে ওরা শিলং ছেড়ে দিসপুরের অধিবাসী তখন। আসুর বাঙালি বিতাড়নের দাবিতে আন্দোলন চলছে। সরকারি অফিসে পিকেটিং ধর্মঘট চলছে। সরকার মাসের শেষে পঁচিশ পয়সা মাইনে দিচ্ছেন। সংসার কায়ক্লেশে চলে। পিকেটাররা দুপুরবেলা দরজায় কড়া নাড়ে করে। দরজা খুলতে হয়। জল চায়। জল দিলে থুথু ফেলে জলের গ্লাস ছুঁড়ে দেয়।বাঙালির জল খায়না।

    ****

    এইসব বিশ্বাস হারানোর, বিভীষিকার গল্প লেখা আপাত অনর্থক। কিন্তু অনেকে বলছেন আসামের নাগরিক পঞ্জীকরন 'অনুপ্রবেশকারী'দের চিহ্নিত করবে।
    এইসব অভিজ্ঞতা একটি ভারতীয় পরিবারের। এমন একটি পরিবারের, ভারত রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনেও যার সদস্যদের যৎসামান্য কিছু অবদান ছিল, যাঁদের আসামে স্থায়ী বাসস্থানের ইতিহাসও শতাব্দী প্রাচীন, ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে আসামের অনেক বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানেও অবদান কিছু ছিল। এমনকি ধর্মপরিচয়টিও নিরাপদ। এসবের পরেও 'বহিরাগত'/ 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে চিহ্নিত হতে দেরী হয়নি; চিহ্নে সরকারী সিলমোহরটুকু ছিলনা শুধু।

    এইসব দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়, মানুষের মৃত্যু হয়, বসতবাটি ছারখার হয়ে যায়। যাঁদের ব্যক্তিগত কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়না তাঁরা ধর্ম ভাষা জাতি ইত্যাদির খুঁটিনাটি ইতিহাস আলোচনা করে নিজের নিজের মত প্রতিষ্ঠা করেন। নিঃশব্দ নীরব ব্রহ্মপুত্রের তীরে যাদের মৃতদেহ পড়ে থাকে, পোড়া ঘরের ছাউনি উড়ে আসে, গোয়ালঘরে অসহায় গাভীটি ছটফট করে পুড়ে মরে গিয়ে ভেসে যায়, তাদের কন্ঠ ইতিহাসের পাতায় শোনা যায়না, তারা যে পরাজিত। মহামান্য সরকার পঞ্জীকরণ করে, কে বহিরাগত, কে ভূমিপুত্র, কে অনুপ্রবেশকারী, কে অবাঞ্ছিত। এইসব পরাজিত মানুষেরা সরকারের নথিতে সংখ্যা হয়ে থেকে যায় কখনো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ আগস্ট ২০১৮ | ১১৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • খাতাঞ্চী | 232312.172.9001223.223 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ০৭:১৪63671
  • .
  • সুফিয়া ইয়াসমিন | 890112.51.890112.125 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৮ ১১:১৯63672
  • সিলেটের লোকেরা হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে নন সিলেটী সবাইকে বেংগলী বলে
  • dd | 670112.51.8912.167 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৩:১৫63673
  • দুর্দান্ত লেখা
  • সিকি | 342312.63.567812.148 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৪63674
  • ...
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.74 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৪63676
  • অসম্ভব শক্তিশালী লেখা। একে লেখা না বলে ইতিহাসের জীবন্ত অধ্যায় বলাই ভাল।
    লেখাটি পড়তে পড়তে কী দশকের পর দশক জুড়ে দেশহীন মানুষের বুকভাঙা কান্না আমিও শুনতে পেলাম? অজান্তেই বুঝি ঝাপসা হয়ে আসে চশমার কাঁচ।…

    “ঘরহারার কান্না খুব কাছে শুনেছি ত্রিপুরার দক্ষিণসীমা সাব্রুমে। ওপারে বাংলাদেশ। প্রেক্ষাপট বলতে পারবোনা। এক দল চাকমা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন এদেশে। গার্লস স্কুলের মাঠে কিছুদিন রাখার পর দু’দেশের মধ্যে চুক্তি মোতাবেক গভীর রাতে ট্রাকে করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছিলো তাদের নিজেদের দেশে। রাতের বুক দীর্ণ হয়ে যাচ্ছিলো তাদের ভয়ার্ত চিৎকারে। সেটা হবে ৭৬/৭৭ সাল।”

    আপনার দেখা ত্রিপুরার সেই সাবরুম মহকুমা, গার্লস স্কুল মাঠ, চাকমা শরণার্থী শিবির… এসবই আমার খুব চেনা। আদিবাসী বিষয়ক সাংবাদিকতার সূত্রে একাধিকবার ত্রিপুরার অসংখ্যা চাকমা শরণার্থী শিবিরগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এখনো সেই সব অভিজ্ঞতা, শরণার্থী জীবনের নেপথ্য গণহত্যা-গণধর্ষণ ঘুম কেড়ে নেয়।

    একবার এই নিয়ে কিছু ব্লগ নোট লিখেছিলাম [দেখুন:http://www.somewhereinblog.net/blog/biplob_33blog/28709079] তবে এই নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি আমার সবশেষ বই “পাহাড়ে বিপন্ন জনপদ” এ।

    আর সেদিন কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে গিয়ে ক্যাম্পের সিকি মাইল দূর থেকেই বোঁটকা একটি গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা লাগলো; এই গন্ধটিও আমার খুব চেনা, সেই সাবরুম, তাকুমবাড়ি, তবলছড়িসহ ত্রিপুরার অন্যান্য চাকমা শরণার্থী শিবিরে পেয়েছি এই কটু গন্ধ। …
    আরো লিখুন। অনেক শুভেচ্ছা।
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.74 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৮63677
  • পুনশ্চ: পাহাড়ের উচ্ছেদ, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও মানবাধিকার লংঘন বিষয়ক আরেকটি সরেজমিন ব্লগ নোট এখানে: https://blog.mukto-mona.com/2014/07/02/41718/
  • | 670112.220.231223.51 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৮63675
  • দুর্দান্ত!
  • শক্তি | 7823.63.128912.107 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৫63678
  • বিপ্লব রহমান সাব্রুমের সেই শরণার্থীদের কথা প্রায় অজানাই ছিলো অনেকেরই কাছে, ত্রিপুরার সংবাদপত্রে ও খুব একটা উল্লেখ দেখিনি, আপনি এই বিষয়ে অবহিত ।আপনার লেখাটি অবশ্যই পড়বো ।
  • শক্তি দত্তরায় করভৌমিক | 342323.191.3456.209 (*) | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬63679
  • নিজের ঘরে ফিরে যাবার ভয়ে মানুষের কান্নার সঙ্গে পরিচয় ছোটবেলাতেই হয়েছিল। তার কথা এই লেখাতেই বলা হয়েছে। এই লেখায় উল্লিখিত বড় ছেলে আমি নিজেই। 'বড়রাও কাঁদে' এই ব্যাপারটা খুব অবাক করেছিল।

    মানুষের প্রতি মানুষের বিদ্বেষের কুৎসিততর রূপ অবশ্য দেখেছিলাম এর দু চার বছর পর। মানুষের লাগানো আগুনে মানুষের বাড়ি পুড়ে যাবার ধোঁয়া। আর্তনাদ। গুজব। নদীর জলে কবন্ধ। এসব দেখার পক্ষে ছ সাত বছর বয়েসটা খুব কম ছিল, তবে জাতিবিদ্বেষ ব্যাপারটা বড় তাড়াতাড়ি বুঝে গিয়েছিলাম।
  • শক্তি দত্তরায় করভৌমিক | 342323.191.3456.209 (*) | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯63680
  • এ কি কান্ড। আমি লামা। নিজের নাম লেখার জায়গাটা খুঁজে পেলাম না। এদিকে লেখাটা মায়ের নামে পোস্ট হয়ে গেল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন