এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাংলাদেশের শিক্ষিত নারী

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ | ১৯২৫ বার পঠিত
  • দেশে কিছু মানুষ রয়েছে যারা নারী কে সব সময় বিবেচনা করে নারীর বিয়ে দিয়ে। মানে তাদের কাছে বিয়ে হচ্ছে একটা বাটখারা যা দিয়ে নারী কে সহজে পরিমাপ করে তারা। নারীর গায়ের রং কালো, বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। নারী ক্লাস নাইন টেনে পড়ে? বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে? রেজাল্টটা শুধু বের হোক, তারপর বিয়ে। নারী উচ্চ শিক্ষিত? আল্লা, এর তো পাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না! নারী ভাল চাকরি করে? থাকো এখন চাকরি নিয়া, জামাই পাওয়া যাব না! নারী উচ্চতায় খাটো? বিয়ে হবে না। উচ্চতায় লম্বা ঢ্যাংঢ্যাঙ্গা? এরে বিয়ে দিব ক্যামনে আল্লাই জানে! বিয়ে নামক বাটখারা ছাড়া এরা নারীকে দেখতে পারে না, নারীকে খুঁজেও পায় না কোথাও।

    নারীর আলাদা কোন জীবন নাই।সমস্যা হচ্ছে নারী নিজেও এই চিন্তা থেকে দূরে নাই। আমার দেশের মত উচ্চ শিক্ষিত হাউজওয়াইফ সম্ভবত পৃথিবীতে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাল ডিগ্রি নিয়ে লক্ষ্মী বউ হয়ে দিন পার করছে এমন বহু বহু আছে এই দেশে। সন্তান লালনপালন কি যেই সেই কাজ নাকি!! রাষ্ট্র একজন ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কত টাকা খরচ করে? এর পুরোটাই গিয়ে শেষ হয় রান্না ঘরের ধোঁয়া আর পতি পরমেশ্বরের শার্ট, জুতা, টাইয়ের রং বাছাইয়ে গিয়ে। এই বিপুল অর্থ আর বিপুল সম্ভাবনা শেষ হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানুষ করতে। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানুষ করার কাজে যে উচ্চ শিক্ষিত কর্মী আমরা নিয়োগ করছি সংসার নামক ইনিস্টিটিউটে তাতে ফলাফল কি আসছে? তারাও তো ঘুরে ফিরে সেই আগের পথেই হাঁটছে। এমন না যে এই শিক্ষিত মায়েরা সন্তান লালন পালন করে বিপ্লব করে ফেলেছে। বরং অবস্থা তো আরও খারাপ হয়েছে বোধ করি। আমি বিয়ে নামক সিস্টেমের বিরুদ্ধে বলছি না, আমি বলছি এই সিস্টেমে শুধু এক পক্ষকেই যুগের পর যুগ বলি হওয়ার বিরুদ্ধে।

    আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে কুদৃষ্টিতে দেখা হয় কর্মজীবী নারীকে। নারী কর্ম করছে না তো সর্বনাশ করে ফেলছে। এর সংসার গেল, সন্তান বানের জলে ভেসে গেল, ধর্ম গেল জাত গেল বলে গেল গেল রব উঠে চারদিকে। যত নারী চাকরি করছে তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে কোন না কোন সময় যুদ্ধ করতে হয়েছে। যুদ্ধ করে যারা টিকে গেছে তারা চাকরি করে যাচ্ছে যারা পারেনি তারা ফিরে গেছেন উন্নত প্রজন্ম তৈরির যুদ্ধে। যারা টিকে গেছেন তারা আবার অন্য যুদ্ধে নেমে গেছেন, সামাজিক চাপ সামাল দেওয়ার যুদ্ধ। উঠতে বসতে, আশেপাশে থেকে নানা কথা, একলা চলা ফেরা করে, রাত করে ফিরে, পোশাক আশাকে সমস্যা, হাঁটা চলায় সমস্যা, হাঁটলে কোমর এত দুলে কেন এই মেয়ের!! যারে দেখত নারি তার চলন বাঁকা…

    এখন যতখানি পরিবর্তন আমরা দেখতে পারছি, কর্মক্ষেত্রে যত নারী দেখছি তা পুরোটাই এসেছে অর্থনৈতিক কারনে। নারী বাধ্য হয়ে বের হয়ে আসছে, যুদ্ধ করে আসছে। অর্থনৈতিক সচ্ছল পরিবারের নারীর চাকরি ক্ষেত্রে আগমন ঘটে খুব অল্পই, যারা আসে তারা আসে শখ করে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসা মাত্রই যে সিদ্ধান্ত নারী বা নারী পুরুষ মিলে নেয় তা হচ্ছে নারীর এবার আর চাকরির দরকার নাই, এবার তুমি বাড়িই সামলাও। যার কারনে যে পরিমাণ নারী এখন কর্মক্ষেত্রে তাতে একটা বিপ্লব চলে আসার কথা কিন্তু তা আসছে না। এদিক দিয়ে যারা অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত তাঁরাই বরং বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। যে পরিমাণ নারী গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করে তারা অর্থনৈতিক কারনে চাকরিতে আসলেও তারা সচ্ছল হলেও চাকরি থেকে আর কেউ চলে যায় না। কিংবা হয়ত তারা আর কাঙ্ক্ষিত সচ্ছলতা কখনই পায় না বলে চাকরি ছাড়ার কথা চিন্তাও করে না।আসলে শ্রমিকদের হিসেবে তো নারী পুরুষ নাই, মালিক পক্ষ কোনদিনই শ্রমিককে কখনই পুরোপুরি সচ্ছলতা দিবে না। দিলে তার কারখানা চলবে না আর।

    আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারী পুরুষ সবারই নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়া কষ্টকর। তাই অদ্ভুত জগাখিচুড়ি দেখা যায় সব খাতেই। তবে এই ক্ষেত্রেও মানে জগাখিচুড়ির ক্ষেত্রেও নারী সবার আগে। কী পরিমাণ ব্যাংক কর্মকর্তা আর প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা যে কত হাই প্রোফাইল সার্টিফিকেট নিয়ে বসে আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। তবে তাও ভাল, এরা তবু আছে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের যখন হাড়ি ঠেলতে দেখি তখন এদেরকেই স্যালুট করতে ইচ্ছা করে।

    নারীর সমান অধিকার বা নারীকে তার ন্যায্য অধিকার দিলে পুরুষ ছোট হয়ে যাবে না। এই কথাটা নারী পুরুষ দুই পক্ষকেই পরিষ্কার ভাবে বুঝতে হবে।বুঝলেই জাতির জন্য মঙ্গল।যদিও পুরুষ অধিকার দিবে এই কথাটাও অবিবেচকের মত কথা, পুরুষ দেওয়ার কে? পুরুষ যুগের পর যুগ নিজের হাতে প্রবল ক্ষমতা রেখে দিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দিন পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার এখন।
    বিয়ে নামক ব্যবস্থা যেন কোন অমিত সম্ভাবনাকে ফিনিশ করে না দেয়। কত মাদাম কুরি আমাদের হেঁসেলে নুন তেলের হিসেব করছে তার কোন হদিস নেই, আর একটা মাসার তেরেসাকে হারাতে চাই না, কোন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল যেন অঙ্কুরেই হারিয়ে না যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ | ১৯২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন