নেট পুরোপুরি বন্ধ আর কারফিউ চালুর পরে দৈনিক রাতে যা জানতাম আর যা বুঝতাম তা লেখার চেষ্টা করে গেছি। সব সময় মাথা ঠিক ভাবে কাজ করেছে এমনও না। পুরোটা আবার বসে বসে পড়লে হয়ত অনেক কিছুই বাদ দিতাম আমি। কিন্তু নেট পেয়েছি, আবার কখন নেটের বাহিরে চলে যাই ঠিক নাই। তাই পুরো লেখাটাই একবারে দিয়ে দিলাম। ইচ্ছা ছিল ভাগ ভাগ করে দেওয়ার। সরকার ফেসবুককে ভয় পাচ্ছে। এইটাই হচ্ছে সত্য। নেট দিতে আমার মনে হয় না আর অন্য কোন সমস্যা আছে। ফেসবুকে মানুষ এতদিন যা হয়েছে তার ভিডিও চিত্র, স্থির চিত্র দেখবে, দেখে আবার যদি রাগের বিস্ফোরণ ঘটে? সরকার তা চাচ্ছে না। সহজ একটা বিষয়কে কতখানি জটিল করা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এই আন্দোলনটা। নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা এখন প্রায় শূন্যের কাছে। অথচ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারত এখান থেকে। আজকের প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৭! আমার এই লেখায় এক জায়গায় লেখছি ধার্মিকেরা বলে ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন, সেই মহান মঙ্গলের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। এখনই ওইটাই বলছি! অদ্ভুত কালো অধ্যায় পার করল বাংলদেশ। ... ...
ধরুন শাহবাগ আন্দোলন হয়নি, গণজাগরণ মঞ্চ বলে কিছু এই দেশে হয়নি। সাকা, মুজাহিদ, নিজামি, কামরুজ্জামান সবাই এখনও এই ভূখণ্ডেই বাস করছে। জামাত আগের মতোই একটা ধরার মতো শক্তি। এমন একটা পরিস্থিতিতে কালকের ঘটনা ঘটল! অট্টহাসি চিনেন? আহ্লাদে আটখানা কাকে বলে জানেন? সব দেখতে পারতেন! পাকিস্তানের আগেরদিন নাই, থাকলে গতকাল যা হয়েছে পাকিস্তানের রাস্তায় মিষ্টি বিলানো হত। প্রকাশ্যে বিবৃতি দিত যে আমাদের কোন ভাইকে যেন অন্যায় ভাবে অত্যাচার করা না হয়! তারা আমাদের ভাই, তারা আমাদের বোন! এগুলা এক সময় নিয়ম করে দেখছি আমরা। খান...র পুলায় নায়েবে আমির মনের ভিতরের সুখানুভূতি চাপা দিয়ে গম্ভীর স্বরে টিভি ক্যামেরার সামনে বলত, খুব অন্যায় হচ্ছে! বৈষম্য দূর করে সঠিক ইশতেহার দেওয়া হোক! আমাদের কপাল ভালো যে সেই দিন দেখতে হচ্ছে না। এখন একবার চিন্তা করেন যারা রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করল, এই দেশে রাজাকারদের শাস্তি নিশ্চিত করল তাদের কাছেই এই স্লোগান বুলেটের মতো বিঁধছে। আর যারা সংগ্রাম করছে, যারা রাজাকাদের অত্যাচারে স্বজন হারিয়েছে, সরাসরি অত্যাচারের শিকার হয়েছে, তাদের কাছে কেমন লাগতে পারে এই স্লোগান? ... ...
এদিকে এক ইংরেজ সাহেব আসছেন, তিনিও পরেরদিন এই ট্রেনে সিলেট যাবেন। কিন্তু প্রথমশ্রেণীতে উঠতে গিয়ে শুনলেন এখানে তিনি আছেন, অন্য কামরাগুলোতেও তাঁরই লোকজন, তখন সাহেব তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত করা ঠিক হবে না ভেবে স্টেশনের বিশ্রামাগারে বসেই রাত কাটিয়ে দেন। তিনি কোন সময় কুলাউড়ায় এসে পৌঁছবেন এইটা হিসাব করে সিলেট থেকে অগ্রগামী এক দল রাতেই এসে হাজির হয়েছিলেন কুলাউড়ায়, সিলেটের স্বনামধন্য সব ব্যক্তিবর্গ। সবাই রাত কাটালেন স্টেশনে। কুলাউড়ায় পরেরদিন লোকে লোকারণ্য! সবাই ফুল মালা নিয়ে হাজির। একনজর দেখতে চায় সবাই। এর মধ্যে সিলেট থেকে আগত ওয়েলস প্রেসবিটেরিয়ান চার্চের মিসেস ইথেল রবার্টস রেলের কামরায় এসে কথা বলে গেলেন। সিলেটে তাঁদের বাড়িতেই উনার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁরা বাড়ি ঘর ছেড়েই ক্ষান্ত হন নাই, কুলাউড়ায় এসে দেখাও করে গেলেন! কুলাউড়ায় দেওয়া হল আরেক সংবর্ধনা। উপচে পড়া ভিড়ের মাঝে ট্রেন চলল সিলেট মুখি। ... ...
কাকিমার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে সবাই দেখি পাঠ করছে, লিখছে ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু, আমার মনে হল আচ্ছা এইটার অর্থ কী? জানার ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, উপায় জানালো আমাকে যে এর অর্থ হচ্ছে হে পরমেশ্বর ! তিনি যেন দিব্যলোকে গমন করেন মানে স্বর্গে গমন করেন। বিষয়টা জেনে দারুণ লাগল। ইসলাম ধর্মে কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনে সবাই পাঠ করে হচ্ছে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, এর অর্থ হচ্ছে আমরা আল্লাহর বান্দা, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব। এইটা অনেকটা আরেকজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। আমাদেরও একদিন মরতে হবে, কাজেই সময় থাকেতে লাইনে আসুন। এইদিক দিয়ে খ্রিস্টানদের রেস্ট ইন পিস বেশ সাদাসিধা। কিন্তু তাঁদের বিদায় জানানোর প্রক্রিয়াটা চমৎকার। সবাই বক্তব্য দিতে চায়, দেও, সমস্যা নাই, কারণ সবাই চেয়ারে বসে আছে। সবাই পরিপাটি হয়ে এসেছে। দাফন শেষে হালকা শুরা পানেরও ব্যবস্থা থাকে। বেশ আয়োজন করে বিদায় জানানও যাকে বলে। আমাদের এদিকে একটু পরিচিত কেউ মারা গেলে লাশ সামনে রেখে বক্তব্যের হিড়িক লাগে। আধা ঘণ্টা, চল্লিশ মিনিট শুধু মাত্র কথাই শুনতে হয়। আব্বা যখন মারা গেল তখন আমাদের এখানে পৌরসভা নির্বাচন চলছিল। মাসাল্লাহ! সব প্রার্থী এসে হাজির, সবাই কথা বলতে চায়! সেই হিসাবে খ্রিস্টানদের চেয়ারে বসে বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা বেশ ভালো ব্যবস্থা। ... ...
অথচ আমাদের ভিতরে যদি একটু শ্রদ্ধাবোধ থাকত ভিন্ন ধর্মের প্রতি তাহলে ঈদের এই উৎসবে সহজেই সবাই অংশ নিতে পারত। কিন্তু দিনদিন যেন কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কুরবানির ঈদ যেন নগ্ন হয়ে আক্রমণ করা হয় ভিন্ন ধর্মালম্বিদের। রাস্তাঘাট রক্তে সয়লাব! একটু বিচক্ষণ হলে এগুলা থেকে সবাইকেই রক্ষা করে চলা সম্ভব। কিন্তু ওই যে বললাম, সংখ্যাগুরুর দম্ভ! নগ্ন প্রদর্শনী চলে! বকরি ঈদে ফিরে যেতে পারলে অনেক কিছুই অনেক সহজ হয়ে জেত, কিন্তু আমরা তো জেদ করে বসে আছি যে কোনমতেই এক বিন্দু ছাড় দিব না। ... ...
মাউশির আইন আর ভিকারুন্নেসার আইন আলাদা! মাউশি যে বয়স সীমা দিয়েছে তার সাথে ভিকারুন্নেসার বয়স সীমার পার্থক্য আছে! এইটা অনেক অনেক অভিভাবকই জানে না। কেউ জানলেও মাউশি যেহেতু আবেদন করতে দিয়েছে দেখি আবেদন করে। আইনে না হলে বাতিল হয়েই যাবে, সমস্যা কী? সমস্যা হল ভিকারুন্নেসা তাদের আলাদা বয়স সীমা মাউশিকে জানায় নাই, নিজেরাও কোন উদ্যোগ নেয় নাই। ফলাফল? ১৬৯ জন শিশুর সুযোগ হয়ে গেছে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির! এরপরেও যদি দুই পক্ষ এইটার সমাধানের চেষ্টা করত তবুও বছরের মাঝে এসে এমন বিপদ তৈরি হত না এই ফুলের মতো শিশু গুলোর। লটারিতে টিকলেই তো হল না, বাচ্চার কাগজ পত্র সব ঠিক আছে কি না এগুলা যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপার আছে না? ভিকারুন্নেসা এই যাচাই বাছাইয়ের কাজও সফল ভাবে করেছে। তখনও বাদ দেয় নাই এদেরকে! তখন বাদ দিলে এই অভিভাবকেরা একটু ঘাইঘুই করে মেনে নিত হয়ত। ভিকারুন্নেসা যুক্তি দেখাতে পারত যে আমাদের এখানে এই বয়স সীমা, এর বাহিরে আমরা নিব না। কিন্তু তা হয়নি। এদেরকে ভর্তি করা হয়েছে। বাচ্চারা ক্লাসও শুরু করেছে। ভিকারুন্নেসা তখন কেন এইটা করতে পারে নাই? তখন মহামান্য মাউশি ধমক দিয়ে বলেছিল তাদের আইনই আইন, এর বাহিরে কেউ আলাদা করে ভর্তির জন্য নতুন আইন তৈরি করতে পারবে না। আমার বন্ধু নিজে মাউশিতে গিয়েছিল, ওকেও মৌখিক ভাবে বলে দেয় যে সোজা ভর্তি করায় ফেলেন, আমরা যা বলছি ওইটাই ঠিক! ... ...
আমার খালার ফোনে ফোন আসল একটা। উনার বিকাশ ( বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান) একাউন্টের পিন নাম্বারে সমস্যা হয়েছে, ঠিক করাতে হবে। খালার সাথে কথা বলে ওরা বুঝছে এই মহিলা এগুলা কম বুঝে। ওদের আত্মবিশ্বাস এতো যে তারা বলছে যে বুঝে তার কাছে নিয়ে যান। খালা আমার কাছে আসতেছিল পথে মধ্যে আরেক 'বিশেষ ভাবে অজ্ঞ' একজনের সাথে দেখা, তিনি তাদের সাথে কথা বলে যেমন যেমন করতে হয় তেমন তেমন করে কাজ সমাধা করেছেন। খালা এরপরে আসছে আমার কাছে। এসে বলল তোমার কাছেই আসতেছিলাম, বিকাশের পিন ঠিক করতে হব বলে, পথে অমুকের সাথে দেখা, ও ঠিক করে দিল! আমি শুনেই বুঝলাম এইটা গন কেস! বললাম, খালা বিকাশে টাকা কত ছিল? খালা বলল চার পাঁচ হাজারের মতো। আমি বললাম, ব্যালেন্স দেখেন, সম্ভবত এক টাকাও নাই! খালা বলে আরে না, ওরা তো পিন ঠিক করার জন্য বলছে। আমি বললাম, আপনে দেখেন! দেখা হল, ফিনিশ! এক টাকাও নাই! ... ...
যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাঁদের আমাদের মতো এমন সৌখিন চিন্তা ভাবনা করার ফুসরত নাই। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটার হিড়িক লাগে কেন জানি। কিছু মানুষই আছে যারা কোন অজ্ঞাত কারণে সারা মাস কেনাকাটার আশপাশ দিয়েও যেতে রাজি না। প্রথম থেকেই নিয়ত পাকা যে তিনি যাবেন চান রাতেই! কেউ কেউ তো এমনও বলে যে চান রাত ছাড়া শপিং করে মজাই পাওয়া যায় না। কেউ চান রাত ছাড়া আবার ইদ শপিং হয় না কি? এমন প্রশ্নও করে। তো এই খদ্দেরদের জন্য চান রাতে চলে ভোর পর্যন্ত জমজমাট কেনাকাটা। রাত একটা দুইটা তিনটা যেন সন্ধ্যা রাত! ঢাকায় কোন দিন ইদ করা হয়নি। কিন্তু বন্ধুদের অনেকের কাছেই শুনেছি যে ঢাকায় চান রাতের জৌলুসের সাথে কোন কিছুর তুলনাই হয় না। দেড় দুই কোটি মানুষ চান রাতের আগে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। ঢাকা হাঁফ ছেড়ে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বের হচ্ছে তারা চলে ফিরে, দেখে শুনে, কিনে না কিনে আলাদা সুখ পাচ্ছে। ঢাকার জ্যাম ঘাম গরম যে দেখছে সে চান রাতে না থাকলেও অনুমান করতে পারে যে কতটা হালকা লাগছে সবার এই দিন! ... ...
এরপরে দুনিয়ায় আসে এক অদ্ভুত জাতি, বাংলাদেশি বাঙালী! এত বেহুশ জাতি এই দুনিয়ায় আর আছে বলে মনে হয় না। তারা এক বাক্যে এইটা পালন করা হারাম বলে রায় দিচ্ছে। আমাদের নিজস্ব একটা পঞ্জিকা আছে। নিজেদের নববর্ষ আছে, এইটা গর্বের না? না! পারলে ধরে মারে! এই রোগের চিকিৎসা আমার জানা নাই। সংস্কৃতি আর ধর্মের একটা ক্যাচাল লাগিয়ে দিয়ে ধর্মের আফিমে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষের উপরে এরপরের দায়িত্ব দিয়ে চুপ করে বসে থাকে এই ছাগল গুলো। ইসলাম শুধু এই অঞ্চলেই আসে নাই, আরও নানা দিকে গেছে আরব থেকে। কিন্তু কেউ নিজেদের ভাষা সংস্কৃতিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ধর্মকে টেনে নেয়নি। ... ...
এগুলা সব সত্য, কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা কেন মরতেছি? সব দুশ্চিন্তা আমাদেরই? আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা চলছে এখন। আমাদের মাথা ঘামাইতে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির কঠিনতম প্যাচ নিয়ে! মধ্যপ্রাচ্যরে দেখেন, তুরস্ক যে তুরস্ক, মুসলিম দুনিয়ার নেতা হিসেবে যারা আবির্ভূত হয়েছে অনেকের মনে, তাদের দেখেন! সবাই গরম গরম বক্তব্য দিচ্ছে, হেন করবে তেন করবে বলে যাচ্ছে অথচ সবার সাথে ইজরাইলের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক সব ধরণের সম্পর্ক আছে। নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েই তারা যা করার তা করে যাচ্ছে। আমাদেরই এই অদ্ভুত প্রেম! ওরা নিজেরা নিজেদেরটা গুছিয়ে নিয়ে আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর গল্প শোনাচ্ছে, আমরা বয়কট বলে আমার প্রতিবেশী যে কোকের কোম্পানির উপরে নির্ভর করে বেঁচে আছে তারে বিপদে ফেলে দিচ্ছি। যে হাজার হাজার কর্মী কোক কোম্পানিতে কাজ করছে তাঁদেরকে একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। ... ...