দা জোন অফ ইন্টারেস্ট সিনেমার কথা আলাদা করে বলতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গল্প। যুদ্ধের সিনেমায় আমরা যা সাধারণত দেখি এখানে তা সরাসরি নাই কিন্তু প্রবল ভাবেই আছে। ইংলিশ পরিচালক জোনাথন গ্লেজার পোল্যান্ডের কাহিনী নিয়ে জার্মান ভাষায় তৈরি করেছেন সিনেমাটি। জার্মান এক অফিসারের বাড়ির গল্প দেখানো হয়েছে। নির্বিকার ভাবে ইহুদি নিধনের পরিকল্পনা করছে, গল্পের পিছনে গ্যাস চেম্বারের ধোয়া দেখা যাচ্ছে, গুলি শোনা যাচ্ছে, মাঝেমধ্যেই আর্ত চিৎকারের শব্দ আসছে। কিন্তু তাদের সমস্ত আগ্রহ অন্য কিছু নিয়ে। চার পাঁচজন মহিলা বাড়িতে কাজ করছে, সব যথাসময়ে হচ্ছে, বাচ্চারা বাড়ির সামনে খেলাধুলা করছে, রোদে গা এলিয়ে বসে থাকছে! মাঝে মধ্যেই গা ঘিনঘিন একটা অনুভূতি আমার হইছে। সেরা সিনেমা না জিতলেও এইটা যে এ বছর সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমার পুরস্কার জিততে চলছে তা এক প্রকার নিশ্চিত। ... ...
এগুলা সবই ছিল, অতীত কালে বলছি। কারণ হুট করেই এগুলা সব বেদাত, হারাম হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে! কবে কীভাবে যে হয়ে গেল বুঝতেই পারি নাই। অনেক আগে এক শবে বরাতে আমাদের মসজিদে একজন নিউজপ্রিন্ট কাগজে দুই পাশে ছাপা একটা লিফটলেটের মত বস্তু নিয়ে আসছিল। তাতে লেখা ছিল শবে বরাত পালন করা যাবে না, এগুলা বেদাত, হারাম! সেদিন ওই লোক কোনমতে লম্বা পায়ে এলাকা ছেড়ে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে ছিল। কেউ সেদিন তার কথা শুনতে রাজি ছিল না। অথচ ওয়াহাবি সালাফিদের এখন এত জোর যে শবে বরাতই টিম টিম করে কোনমতে টিকে আছে! শবে বরাত বললে আব্বার কথা মনে পড়বেই। আব্বা আমাদের মত সারা রাত মসজিদে কাটিয়ে দিতেন না, এশার নামাজের পরে কিছুক্ষণ মসজিদে থেকে চলে আসতেন বাসায়। এরপরে বাসায়ই নামাজ পড়তেন। সকালে দুই হাত তুলে দোয়া ধরতেন। ডুকরে কাঁদতেন, গাল বেয়ে পানি পড়ত, সবার জন্য দোয়া করতেন, দাদা দাদীর জন্য দোয়া করতেন, নানা নানীর জন্য, নিজের ভাই বোনের জন্য। আকুল হয়ে কাঁদতেন। হায়! কেউ যদি তখন তাঁকে বুঝাইতে আসত যে শবে বরাত পালন করা যাবে না! আহা! কেউ যদি আমাকে এখন বুঝায় দিতে পারত যে আমার বাপ ধর্ম বুঝত না, সারা জীবন বেদাত হারাম কাজ করে গেছে লোকটা! ... ...
এমন বেশ কিছু জায়গা ছিল যা আমাকে স্পর্শ করে গেছে। আমি আরও বেশি কিছু চাইছিলাম। ছবির নাম যখন ডাংকি তখন আমার চাওয়া তো অপরাধ না, তাই না? এই ছবির নাম অনায়াসে 'হার্ডি সিং কী প্রেম' কথা রাখা যাইত, রাখলেই পারতেন, আমিও কোন আগ্রহ দেখাইতাম না। কিন্তু নাম রাখলেন ডাংকি আর ডাংকিই আড়ালে থেকে গেল, এইটা কেমন কথা! ... ...
টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই ( Geographical Indications ) পাওয়া নিয়ে দুইটা ভিন্ন যুক্তি শোনা যাচ্ছে। দুইটাই সঠিক কিন্তু প্রসঙ্গ ভিন্ন। একটা ভারত থেকে জোর গলায় প্রচার হচ্ছে, তা হচ্ছে টাঙ্গাইল থেকে বসাক গোষ্ঠী, যারা মূলত শাড়ি বানাত তারা ভারত চলে গিয়ে সেখান থেকেই শাড়ি বানাচ্ছে, প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, একজন বসাককে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কারও দিয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু অত্যাচার, হিন্দুদের বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া এগুলা দিয়ে বলা হচ্ছে তোমরা তাড়িয়ে দিয়েছে এখন আর তাঁদের শৈল্পিক কৃতিত্বের ভাগ চাও কেন? আর দ্বিতীয় কথাটা হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা শাড়ি পরা কমিয়ে দিয়েছে! এইটাও সত্য, আমার চোখের সামনে শাড়ি পরা নারীর সংখ্যা কমতে দেখছি। বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পড়ে না এখন অনেকেই, যারা এক সময় শাড়ি ছাড়া আর কিছুই বুঝত না। ... ...
রোমানিয়া শেঙ্গেনে ঢুকে যাচ্ছে মার্চ মাসে। এখন প্রতিনিয়ত আমাকে শুনতে হয় যে আমি কেন ফিরে যাচ্ছি না! আমি যে সমস্যায় পড়ে ফিরে এসেছি তার কোন সমাধান হয়নি। তাই ফিরে যাওয়ার আশা করা দুরাশা আমার জন্য। আমার খালাত বোন যে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, সে আমাকে বিসিবির যে প্রধান ডাক্তার ডাক্তার দেবাশিষের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি এই সব ব্যাপারে সেরা ডাক্তারের মধ্যে একজন। জ্যোতির সাহায্য ছাড়া উনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইতে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হত আমার। তিনি আমাকে অনেকখন সময় নিয়ে দেখছেন। একটা থেরাপি দিয়েছিলেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। এবং তিনি আমাকে শেষ কথা বলে দিয়েছেন যে আমার পক্ষে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা হার্ড ওয়ার্ক ইত্যাদি কাজ আর করা সম্ভব না। পায়ের অবস্থা তিনি দেখে চমকে গিয়েছিলেন। উনি স্টেরয়েড দিতে চেয়েছেন কিন্তু আমি এখনও ওইটা দিব কি না সিদ্ধান্ত নেই নি। বাড়িতে থেকে ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে পায়ের ব্যথাও বেড়েছে! ব্যায়াম দিয়েছি কিছু, ওইটা করলেই একটু আরাম হয়, কুশন দেওয়া জুতা পরতে হচ্ছে। এই ভাবেই চলতে হবে আমাকে। আমি অপারেশনের কথা বলে ছিলাম। তিনি এক বাক্যে না করে দিয়েছেন। এই না আমাকে রোমানিয়ান ডাক্তারও করে দিয়েছিল। আমি দেশে চিকিৎসার জন্য চলে আসব শুনে উনি বলেছিলেন যে আমি জানি না তোমার দেশের চিকিৎসার অবস্থা কেমন, কিন্তু আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি যে কোনমতেই তুমি অপারেশনের দিকে যেয়ও না। আর আমি আসলে দেশে অপারেশনের জন্যই আসছিলাম। মনে করছিলাম বিদেশিরা এগুলা করতে ভয় পায়, আমাদের এখানে ঠিকই করে ফেলবে কিছু একটা। তো, এই হল আমার সর্বশেষ অবস্থা। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেকেই আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদেরকে এই সুযোগে জানিয়ে দিলাম আমার অবস্থা। ... ...
প্রয়াত শিল্পী আসিফ কবির চৌধুরী রনির করা একটা কমিক। আঁকা এবং লেখা রনির। ঢাকা কমিক্স থেকে প্রকাশ হয়েছিল। ওর জামা জুতা, বেল্ট সোয়েটার জ্যাকেটের মত এই কাজের ফাইলটাও আমার কাছে রয়ে গেছে। ১৭ জানুয়ারি ওর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে গুরুচণ্ডালীর পাঠকদের জন্য কমিকটা এখানে দিলাম। শুভ জন্মদিন রনি। ... ...
মানুষ কিন্তু নির্বাচন পছন্দ করে। কেন জানি মানুষের ধারণা যে ভোট দিতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই যে একদলের নির্বাচন হচ্ছে, মানুষের এইটা নিয়ে কোন আগ্রহই থাকবে না, এমন হওয়ার কথা না? কিন্তু তা হচ্ছে না! আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই বলেন আর যাই বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই নির্বাচন জমিয়ে দিয়েছে। শহরের মানুষ কিছু নাক উঁচু ভাব দেখাচ্ছে, ম্যালা তত্ত্ব কপাচাচ্ছে ( যেমন আমি নিজেই!) কিন্তু গ্রামের মানুষ, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার, তারা সবাই ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। যারা ভাবছেন যে ভোটার শূন্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে তারা সম্ভবত ধোঁকা খেতে যাচ্ছেন। কালকে বিপুল পরিমাণ মানুষ ভোট দিবে এইটা আমি এখনই বলে দিতে পারছি। কারণ আমি সাধারণ মানুষের এই নির্বাচন নিয়ে যে উচ্ছ্বাস তা দেখেছি। মিথ্যা বলব না, এইটা আমাকে বিরক্ত করেছে। সব ফেলে এই নির্বাচনের জন্য এত আগ্রহ? ... ...
আমাদের রক্তের দাম এখন সস্তা মনে হয় অনেকের কাছে। অবলীলায় স্বাধীনতা, শহীদের সম্পর্কে হাস্যকর নানা কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এখন কিছু বললেই কারো গায়ে ফোস্কা পরে যায়। চেতনা ব্যবসায়ী বলে তেড়ে আসে একদল। রক্ত কত সস্তা এই দেশে যে এমন কাণ্ড ঘটে এই দেশে? লন্ডন টাইমস লিখেছিল - “If blood is the price of independence then Bangladesh has paid the highest price in history" দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফরাসী লেখক - দার্শনিক আন্দ্রে মালরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বলেছিলেন, "আমি সম্ভবত এমন এক প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি যেখানে মৃতের সংখ্যা জীবিতদের থেকে বেশি!!" এমন আর কোথাও নাই, এমন আর কোথাও হয়নি! আহা! এর মূল্য যদি বুঝত সবাই! এত এত শহীদ, এত এত স্বজন হারার হাহাকার, সব কিচ্ছু না? আমরা কেমনে পারি? ... ...
কলকাতার কলেজ ষ্ট্রীটে বাংলাদেশ বই মেলা চলছে। আগামীকাল শেষ হবে দশদিন ব্যাপী এই বই মেলা। বাংলাদেশের বই কলকাতায় মেলা করে বিক্রি হচ্ছে এইটা দারুণ একটা ব্যাপার। উদ্বোধনের দিন প্রধান অতিথি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, "বইয়ের চাহিদা চিরন্তন। সেই চাহিদা চিরদিন জেগে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। আর এই বইতো আমাদের দুদেশের মধ্যে এক নতুন সেতু গড়ে তুলেছে।" কোন সন্দেহ নাই, সেতু তৈরি করে দিচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে সব হচ্ছে এক তরফা! বাংলাদেশের বই কলকাতায় মেলা করে, আয়োজন করে বিক্রি করছেন অথচ ভারতীয় বই এখানে আসতে দিচ্ছেন না। একুশে বই মেলায় ভারতীয় বই প্রবেশ নিষেধ। বেশ, ভাল, একুশে বই মেলাকে যদি শুধু মাত্র বাংলাদেশি প্রকাশকদের জন্য নির্ধারিত বই মেলা করে রাখতে চাই আমরা তাতে কোন সমস্যা নাই। তাহলে অন্য সময় ভারতীয় বইয়ের জন্য আলাদা করে বই মেলার আয়োজন করা হোক। এখন যেমন কলকাতায় বাংলাদেশ বই মেলা হচ্ছে তেমন করে, এতে সমস্যাটা কই? ... ...
সময় গেলে সব সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। মন্ত্রীরা অভিজ্ঞ হবে, কাজকর্ম আরও সুচারু হবে, সুন্দর হবে। অথচ বর্তমান সরকারের কাজকাম দেখলে মনে হয় যে নবিস দিয়ে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে সব। দুই একজন বাদে সবাই কী করতেছে কেন করতেছে তা নিজেরাও জানে কি না সন্দেহ। অর্থনীতির বারোটা বেজে তেরোটার ঘণ্টা বাজতে চলছে অথচ আমাদের অর্থ মন্ত্রী কই ঘুমায় আছে কেউ জানে না! কে চালাচ্ছে মন্ত্রণালয় কে জানে। ঘটা করে নতুন এক শিক্ষা নীতি নিয়া আসল। এবং নতুন শিক্ষানীতির জন্য সরকার শিক্ষা খাতের বরাদ্দ কমিয়ে দিল! চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ হচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। থাকার কথা জিডিপির ৬ শতাংশ! কোন পরামর্শ না, শিক্ষকদের প্রস্তুত করা নাই, দুম করে বলা হল এইটাই সেরা কলা, বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে ফেল! সবাই কলা খেতে থাকল, যে প্রশ্ন করল তাঁকে প্রশ্ন করা হল দেশপ্রেম নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে, উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে! ফলাফল এখন পর্যন্ত এর সমাধান হল না, পক্ষ বিপক্ষ তুমুল বিতর্ক করে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে, শিক্ষকদের ভাল বেতন দিলে, ভাল যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের সময়ের বা তার আগের শিক্ষা পদ্ধতি দিয়েও ভাল কিছু করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের মন্ত্রীরা শুধু চমক দেখাতে চায়! তাকালেই যেন ঝকমক করে সব! তা এর মান যেমনই হোক! ... ...