এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দ্বিতীয় কিস্তি। আরো ঋতুপর্ণ।

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ জুন ২০১৯ | ১৩০৫ বার পঠিত
  • ঋতুবৃত্তান্ত এক কিস্তিতে শেষ হবার নয়। এতো বহুমাত্রিক তাঁর কাজ যে বারবার দেখি। ফিরে ফিরে দেখি। হয়তো একটু বেশিই সাজানো গোছানো। একটু বেশি মাত্রায় নান্দনিক। সাজের টেবিলে ঠিক যে ফুল থাকলে মানায় তাই থাকে। ঠিকঠাক থাকে পর্দার রং। দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবি চোখ দিয়ে কথা বলে। অধিকাংশ চরিত্র কথা বলেন নিচু স্বরে। পরিশীলিত। মৃদু।

    সোফিস্টিকেশনের চূড়ান্ত। খাবার টেবিলের আলো থেকে শুরু করে ল্যাম্প শেড, পোশাক, গয়না, কোথাও এতটুকু খুঁত নেই।ঋতুপর্ণর ছবিতে অন্দরসজ্জা। এই নিয়ে একটা প্রবন্ধ হয়। লেখার সুপ্ত ইচ্ছেও আছে। কারণ ওঁর ছবিতে অন্দরসজ্জা একটা চরিত্র হয়ে ওঠে। একদম ভোলা যায় না।

    মনে করুন না "উনিশে এপ্রিলে" মা আর মেয়ের অমন টানটান দ্বন্দ্বের ব্যাকগ্রাউন্ডে ঐ বাড়ি। ঐ সিঁড়ি। ঐ ছাত্রীর আনা চাঁপা ফুল!আর সবচেয়ে কি ভাল লেগেছিল?
    মনে আছে ভাঁড়ারের সেই দরজাটা? এয়ারপোর্ট থেকে ফিরে এসেছেন মা। মেয়ে বলছে সিদ্ধ ভাত করে নেবে। মা একটু আড়ম্বর ভালবাসেন। পোলাও হোক বরং। সরঞ্জাম খুঁজতে ভাঁড়ারের দরজা খোলার চেষ্টা করছেন মা আর মেয়ে। ঠেলছেন দুজনেই। খুলছে না কিছুতেই। হঠাত্ মায়ের মনে পড়লো। বোকার মতো উল্টো দিকে ঠেলছেন যে তাঁরা! ও দরজা সামনে টেনে খুলতে হয়। সেকেন্ডে খুলে গেল দরজা। জানতে হবে কেমন করে খোলে!

    সেই যে ডেনমার্কের রাজপুত্তুর বলেছিল না? বাঁশি বাজাতে জানো না, তুমি আমাকে বাজাবে কেমন করে গো? আসলে জানতে হয়, বাঁশিতে কোথায় আঙুল রাখতে হয়। কোন বন্ধ সম্পর্কের দরজা কেমন করে খুলতে হয়! শুধু অন্ধের মতো টানলে তো হল না! ঠিক জায়গায় স্পর্শটি চাই। বন্ধ দরজা ঠিক খুলবেই। গোটা ছবিতে এই দৃশ্যটি আমার মনে হয় পরিচালকের মাস্টার স্ট্রোক। মা মেয়ের বদ্ধ সম্পর্কে হাওয়া বাতাস আসছে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে। অভিযোগ। অভিমান। ঝগড়া। সব গুমোট কাটছে এসবের মধ্যে দিয়ে! ওপরে তখনো খোলা পড়ে আছে অশ্রুমতীর পোস্টারের সামনে ঘুমের ওষুধ। জলের গ্লাস। মোমবাতি। ভীষণ ছবির মতো। গোছানোভাবে অগোছালো। তবু বলি, সম্পর্কের গাঁটছড়া খোলা আর বাঁধার জন্যে এমন চিত্ররূপময়তাই দরকার ছিল। মা মেয়ের সংসার গোছানোই হয়। বিশেষত মা যেখানে শিল্পী। যখন একটু হাল্কা হয়েছে পরিবেশ, অনেক চোখের জলের পর, মা কিন্তু বমি করে ফেলছেন।অতরাতে পোলাও সহ্য হয়নি। বলছে মেয়ে। ডাক্তারি করছে মায়ের ওপর। গিঁঠ খুলেছে। এখন সে মায়ের বুকে মাথা রেখে বলতেই পারে, মা আমার খুব মন খারাপ। আমাকে একজন ছেড়ে গেছে!

    আহা! এমন করে মা মেয়ের ভুলবোঝাবুঝির শেষ হচ্ছে যে আশ্চর্য মায়াময়তায় ছেয়ে থাকছে মন। ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে তাতে মন্দ কি? দ্বন্দ্বের শেষ চোখের জলে হয় না বুঝি? বড্ড মিষ্টি মিষ্টি?নাহ্। তেতোও আছে। গোমড়া মুখো স্বামী স্ত্রীকে যখন বলেন, ওখানে আমার ছবি না হয়ে ভোঁদড়ের ছবি থাকলেও কিছু যায় আসে না, তখন দাম্পত্যের শৈত্য পর্দা থেকে বের হয়ে গিলে খায় দর্শককে। প্রেমিকাকে বিছানাতে রেখে টয়লেটে উঠে যান প্রেমিক। মূত্রত্যাগ করতে করতে কথা বলে যান। কোনো মতেই মাতৃ আদেশ ডিঙোবেন না তিনি। মায়ের বান্ধবীকে ফোন হোল্ড করে প্লাম্বারের নম্বর দেওয়াটিই বুঝিয়ে দেয় মন্দ নয়, সে পাত্র ভালো। এমন অসংখ্য ছোটছোট কাজ।

    আর ঠিক এই ছবির বিপ্রতীপে "তিতলি"। বড্ড বেশি বেশি মিষ্টি। তাহলে পান্তুয়া কেউ খাও না নাকি?

    কাসলটন চা বাগানের মা মেয়ে। মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা পাহাড়ের ঝর্ণার মতো ঝমঝম করে পড়েছিল প্রথমদিন। অমন টাইটল সং! একটা বয়সের সমস্ত মন খারাপের মেঘ একটি গানে জড়ো যেন! হোক অবাস্তব! "তিতলি" আমারো খুব প্রিয় ছবি। সুখী দাম্পত্যের মধ্যে মন খারাপের মতো লুকোনো পুরোনো প্রেম, চা বাগান, কিশোরী মেয়েটি, মায়ের চুলে চেরি ব্লসম, হৃদয় আমার প্রকাশ হল, আর চিত্রতারকা! এ হচ্ছে "এমন কেন সত্যি হয় না আহা! জ্যঁ রের ছবি। বেশ ছবি। পাহাড়ে বৃষ্টির শব্দ আর অপর্ণার গলায় "এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে"। স্বামীটি তখন নাক ডেকে নিদ্রা দিচ্ছেন! চেয়ে চেয়ে অমন মনখারাপ নিতে ইচ্ছে করে। ঠিক "উনিশে এপ্রিলের" উল্টো। এখানে মা আর মেয়ের গলা জড়াজড়ি ভাব। মাঝে এসে পড়লেন মায়ের প্রাক্তন প্রেমিক আর মেয়ের বর্তমান ক্রাশ। মেক বিলিভ? হোক। আমরা নানান রকম ছবি দেখি। শেষে কিন্তু এখানেও সুখ। পরিপ্লুতী। আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি।সেটুকুই একমাত্র সুখ হয়ে থাকল একদা প্রেমিক যুগলের কাছে। তাতে তাদের আলাদা আলাদা দাম্পত্য জীবনে ফাঁকি পড়বে না এতটুকু। খুব পরিণত উপলব্ধিতে দুটি ছবি শেষ হয়।পজিটিভ। প্রাণবন্ত। ছবির শেষে মিষ্টি আদর লেগে থাকে পর্দাতে। কে না চায় তাকে?

    "অসুখ" আমার খুব প্রিয় ছবি। এ ছবির নায়ক দেবশ্রীর বেডরুমে টাঙানো রবীন্দ্রনাথের ছবি।

    কী অসামান্য পরিশীলিত অভিনয় করে গেলেন সৌমিত্র চেট্টাপাধ্যায় আর গৌরি ঘোষ। ডায়াবিটিস আবার যেন গৃসপ্রবেশ করে। স্ত্রী জ্বরাচ্ছন্ন। স্বামী উদ্বিগ্ন। তাঁদের চিত্রতারকা কন্যাটি কোথাও গিয়ে একদম সাধারণ এক মেয়ে, প্রেমিক যখন প্রেমিকান্তরে চলে যায় অক্লেশে মিথ্যা বলে, ডুকরে কেঁদে সে বলে "হারিয়ে গেছি আমি"। স্নানঘরে গিয়ে ভাঙা গলাতে বেজে ওঠে তার গান। "দীপ নিভে গেছে মম"। সে হেরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত একটি নবীনার কাছে। সে নবীনা তো জানে পুরুষটি কারো প্রেমিক। তবু তার অপাপবিদ্ধ হাসি দিয়ে মেয়ে ফাঁদ পাতে। স্ট্রাগল ফর ফিমেল সারভাইভাল। একটি পুরুষের জন্য কত হাহাকার। পুরুষটি দু নৌকাতে পা দিয়ে সুখে চলেন। মেয়েটি মরে যায় মনে মনে।

    দ্য লাস্ট লিয়র। পুরুষে পুরুষে যুদ্ধ। বৃদ্ধ শেক্সপিয়ার অভিনেতা। হঠকারী ইগোইস্ট পরিচালক। দ্য গ্রেট পেট্রিয়ার্কস। কাজ যাদের প্যাশন। কোনো আপোস নেই। কোনো মমতা নেই অন্য কিছুর জন্য। আমি এ ছবিতেও স্ট্রাগল ফর ফিমেল সারভাইভাল খুঁজে পাই। ছবির শুরুতে একটি নিহত দাম্পত্য। দীপাবলির আলো ও শব্দকে ছাপিয়ে হিসহিস করে ওঠে স্ত্রীর নাকে, চোখে মুখে নিষ্ঠুর ভাবে স্প্রে করতে থাকা পার্ফুমের হিসহিসানি। যে পুরুষ অভিনেত্রী স্ত্রীর কাজ সহ্য করতে পারে না আদৌ। কি করো? কোথায় যাও? কাদের সঙ্গে থাকো। ঠিক যেমন অসহায় নির্বাক নার্স। প্রেমিক নিতে আসবে বলে যে সারারাত বসে থাকে। অথচ সে আসে না। নার্স প্রেমিকার নাইট ডিউটি করা পছন্দ করে না পুরুষ। শবনমের স্বামী যেমন পছন্দ করে না তার নাইট শিফ্ট। যে মেয়ে অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে বৃদ্ধ অভিনেতার সঙ্গে পনেরো বছর ধরে ঘর করছে, সে বলে, পুরুষটির প্যাশন ছিল শুধু মঞ্চের জন্য। তার জন্য নয়। ফুঁসে উঠে বলে, নাইট ডিউটিতে ঝামেলা করার আছেটা কি? কিছু করার হলে তো দিনের বেলাও হতে পারে!

    এই প্রতিবাদ বাংলা ছবির মেয়ে করে নি। লিয়র বাংলা ছবি নয় ও বটে। কিন্তু কোথায় যেন আদ্যন্ত বাঙালি। আর প্রতিবাদ আছে প্রথম সিকোয়েন্সে। স্বামীর পার্ফুম আক্রমনের হাত থেকে বাঁচার জন্য সপাটে স্বামীর গালে এক চড় মারেন শবনম। এটা দরকার ছিল।

    ঠিক যেমন দরকার ছিল তিনটি নারীর একসঙ্গে জেগে থাকা। সিস্টার হুড। প্রকান্ড মাপের দীর্ঘকায় অভিনেতা পড়ে আছেন বিছানাতে। পরিচালক তাঁকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন। যে কোনো মূল্যে ছবি রিয়ালিস্টিক হতে হবে। অভিনেতা মরিয়া তাঁর শেষ সমৃদ্ধ অভিনয় প্রদর্শনের জন্য। এদের পৃথিবীতে কেবল ইগো। বদ্ধ পরিসর। পাশাপাশি তিনটি মেয়ে। তিনজনেই বিবাহিত জীবনে বা প্রেমে তীব্রভাবে অসুখী। শবনম শেষপর্যন্ত স্বীকার করে। সে আসলে পালিয়ে এসেছে এখানে। একটা আশ্রয় খুঁজছিল সেই প্রিমিয়ারের রাতে। খুব অসহায় তার অস্তিত্ব। বেরঙীন। বৃদ্ধ অভিনেতার তরুণী ভার্যাটির মতো। অথবা নার্স মেয়ের মতোই। তবু অভিনেত্রীর অর্থবল আছে। সেই জোরে সে ভালো খাবার আনায়। গৃহস্বামিণী বলেন, অনেক দামী, না?অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে। তবু তিনটি নারী যখন একসঙ্গে পুরোনো সোফাতে বসে খাবার খায়, তখন টেক্সটের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে সাবটেক্সট। এক উষ্ন আবর্ত তৈরি। মূল প্লট যদি লিয়র অভিনেতা হন, তবে সাবপ্লট এই তিন নারীর। আমার মতে, প্লটের চেয়ে কম জোরালো নয়। সেন্টার টেবলে পা তুলে শেফালী শাহ্ অনবদ্য। নার্স একটু দুরে। তবু এরা কাছাকাছি। শবনম নার্সকে বলে, বয়ফ্রেন্ডের ভরসা কোরো না। দরকার হলে আমাকে ফোন কোরো। না। আমি তোমাকে ফোন করবো। অভিসারিকা শ্রীরাধার মতো ব্যাকুল ব্যর্থমনোরথ নার্স। ফুঁপিয়ে ওঠে।রোজ সন্দেহ। ঝগড়া। কেন নাইট ডিউটি? শবনম চুপ। কি বলবে। তার ও তো একই জ্বালা। তিনটি নারী কাছাকাছি আসে। বেদনায়। সিস্টারহুড নিয়ে একটি চমৎকার কাজ দেখেছিলাম "নির্জন সৈকতে"। তার ফর্ম ও কনটেন্ট ভিন্ন। ঋতুপর্ণ আধুনিক ও চিরকালীন। শবনম বলছেন, প্রথম প্রথম এই পোসেসিভনেসকে আমরা ভালবাসা ভাবি। আর ভুল করি। আধুনিক নারী নির্মাণ সফল হয়। একটু একটু করে। শবনম ফিরে যে চড়টি মারছে পিতৃতন্ত্রের গালে, সেটি একটি স্টেটমেন্ট। দুখিণী, আত্মত্যাগ করা পুতুলরা বিদেয় হচ্ছে। আসছে মানবীরা। আত্মসম্মান তাদের বাঁচিয়ে দেয়। তারা স্টেরিওটাইপ না। মানুষ। বরের হোমটাস্ক করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একদিন ভাবে নিজের গানটা করা হচ্ছে না।

    "আগন্তুক" এর সুহাসিনী ভাগিণী কোনো চাকরি করতেন না। গয়না বড়ি বানাতেন। বা চমৎকার ঘরে তৈরি বিস্কুট। নিখুঁত গৃহবধূ। "তিন কন্যা"-র চঞ্চলা মৃন্ময়ী ও মেটামরফোজড হচ্ছে লজ্জাশীলা বধূতে। সত্যজিত এই নির্দিষ্ট গন্ডীর বাইরে যান নি। মনে হয়, সত্যজিত যেখানে শেষ করেছেন, ঋতুপর্ণ শুরু করেছেন সেখানে।

    নায়ক। সাংবাদিক অদিতি। সে যত না সাংবাদিক তার চেয়ে বেশি নারী। তার চেয়েও বেশি বিবেক। কিন্তু "শুভ মহরত"। মল্লিকা। নতুন নারী। সে স্মোক করে এবং পাব্লিকলি। অকপটে প্রশ্ন করে, আচ্ছা, একসঙ্গে দুজনকে ভালবাসা যায় না? মল্লিকা স্নিগ্ধ, সরল, সপ্রতিভ। এবং সে রক্তমাংসের মানুষ। বিবেক নয়। আর রাঙাপিসি। এক বাঙালি ঘরের বিধবা ডিটেকটিভ। সিগারেট খেলেই মেয়ে উচ্ছন্নে গেল, এই ভাবনার মুখে ঝামা ঘষেছেন পিসি-ভাইঝি ডুয়ো। রাঙাপিসি বলেন, শোনো। এরপর থেকে সিগারেট খেলে বাথরুমে গিয়ে খেতে হবে না। আমার সামনেই খেয়ো। আর মাঝে মধ্যে আমাকেও এক আধটা দিও! কী মারাত্মক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে যাচ্ছে পর্দায়। চিরাচরিত ট্র্যাডিশনকে ঝাঁটা মেরে কাহিনী তৈরি হয়। খুনী হচ্ছেন সুন্দরী চিত্রতারকা। তাঁর মধ্যে মাতৃত্ব প্রকট। ইমেজ ভাঙার শিল্পে অদ্বিতীয় ঋতুপর্ণ। তাই তাঁদের ঝগড়া, খুনসুটি, স্মোকিং, লেগপুলিং সবকিছু নিয়ে তাঁরা পূর্ণ মানবী। এতটুকু দেবীত্ব আরোপিত হয়নি তাঁদের উপর। ভীষণভাবে দোষেগুণে ভরা মানুষ। মেয়েদের দেবী বা দাসী ইমেজের ফর্মুলার বাইরে আনার কাজ অন্য কেউ করেন নি বা মেইনস্ট্রিমে নেই, এমন কথা বলছি না। কিন্তু সূক্ষ্মতার নিরিখে ঋতুপর্ণ আমাদের খুব কাছাকাছি। খুব সুললিত তাঁর নির্মাণ। এত নিপুণ যে মায়াময় বলে ভ্রম হয়। নরম আলো খেলা করে ছবি জুড়ে। সোফার মরচে রঙের আপহোল্স্ট্রিতে দুঃখ সুখ পিছলে যায়।

    খুব নির্মমভাবে বলতে হয়, নিজেকে তো সর্বজয়া বা দুর্গার সঙ্গে আইডেন্টিফাই করতে পারি না। সে তাদের যতই ভালো লাগুক না কেন। এমনকি রায়বাহাদুরের স্ত্রীর বেদনাটুকু বুঝলেও একাত্মীকরণ হয় না। মণীষা চমৎকার। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এখন মণীষারা বাবাকে অত সমীহ করে না। দেবীর সঙ্গে ও নিজেকে মেলানো যায় না। কষ্ট বোধ থাকে। যেমন থাকে "অপুর সংসারে" অপর্ণার জন্য। "পোস্টমাস্টার " ছবিতে রতনের জন্য। সেও আদতে মাতৃমূর্তি।

    কোনো তুলনা নয়। প্রশ্ন আসে না তুলনার। একজনের কথা এলে অন্য জনকে মনে পড়ে। যেটা বলার, সেটা হল ঝিনুক, রমিতার সঙ্গে চট করে একাত্মীকরণ হয়। শর্মিলা ঠাকুর খুন করছেন।এতটুকু বিঘ্নিত হয় না তাঁর নারীত্ব, লাবণ্য, বুদ্ধিমত্ত্বা। দেবীত্ব চুরমার হয় শুধু। আমরা "উৎসব" ছবির মেয়েদের চিনি। হঠাত্ ভুল প্রেমে পড়ে যায় মেয়েটি। বা ছেলেটিও। আসলে প্রেমের তো ঠিক ভুল নেই। সম্পর্কের গড়ে ওঠা অস্বীকার করে সমাজ তার কাঁচি চালায়। সমাজ হল সেই অন্ধ কালকুঠুরির রাজা। তার অচলায়তনটি সে ছাড়ে না কখনো। তাই চোখে জল আসে। সংসার টিকিয়ে রাখতে চায় মেয়ে। পুরুষ ও চায়। শুধু টিকে থাকার একঘেয়েমিটা ছবিতে তীব্রভাবে আসে। অভিনেতারা খেলে যান যে যান যে যার মতো। পরিবারের চালচিত্র জানে ভাঙন কোথায়। কখন কোন হাওয়ায় কে যে উড়ে যায়! ঋতুপর্ণ জানতেন।

    তাই "রেইনকোট" হয়। পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান।

    তিনি জানতেন কোথায় অভিমান। কেন। কতটুকু। ঐ জন্য অতল বিষাদ আর অনন্ত আনন্দ নিয়ে তাঁর জীবনের সঙ্গে কারবার।

    আরেকটি প্রেমের গল্প আর মেমোরিজ ইন মার্চ আমারো খুব খুব প্রিয়। কিন্তু এখানে ঋতুপর্ণ অভিনেতা। পরিচালক নন। অভিনেতা ঋতুপর্ণ কে নিয়ে আরেক দিন!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ জুন ২০১৯ | ১৩০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 4512.203.2367.27 (*) | ০২ জুন ২০১৯ ০৯:৩১49131
  • একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক অথচ এই সমাপতনের কথা না লিখে পারলাম না।
    'কাশ' পড়ছি -এই মুহূর্তে ৯০ পাতায় আছি-বিলাল হান্ডুর 'তিহারের চিঠি', আপনারই অনুসৃজনে।
    নমস্কার জানবেন।
  • i | 4512.203.2367.27 (*) | ০২ জুন ২০১৯ ১০:১২49132
  • অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছি। একটু প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যাই। ঋতুপর্ণর ছবি নিয়ে দুটি লেখাই পড়লাম। একমত নই বহুক্ষেত্রেই। পরে কোনদিন।
  • অর্জুন | 236712.158.676712.84 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৯ ০৬:১৬49134
  • ঋতুপর্ণকে নিয়ে ফেসবুকের একটি গ্রুপে আমার বিস্তারিত লেখা ছিল ৪ কিস্তিতে ২০১৭- '১৮য়। এক বছরের ওপর হয়ে গেছে সে গ্রুপ ছেড়েছি। ছাড়ার আগে লেখাটা উদ্ধার করার কথা মনে আসেনি। জানিনা ডেস্কটপে সেভ করা আছে কিনা সে লেখা। একদম ক্লিপবোর্ড ছুঁয়েছিলাম আর লেখা বেরিয়েছিল ।
  • গুণমুগ্ধ | 236712.158.8990012.147 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৩০49135
  • আপনি কিবোর্ড ছোঁয়ালেই যা অসাধারণ সব লেখা বের হয়, ক্লিপবোর্ড ছুঁয়েই বেরিয়ে পড়া লেখা না জানি কী রত্নখনি হবে!
    লেখাটি অবশ্যই খুঁজে এখানে দিন। পড়তে সবিশেষ আগ্রহী, আরো অনেকের মত।
  • অর্জুন | 237812.69.563412.111 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৩৫49136
  • হমম। দেওয়ার ব্যাপারে ভরসা কমিয়ে দিলেন। আসলে 'গুরু'তে ঋতুপর্ণ ঘোষের অ্যাডমায়ারারের চেয়ে ক্রিটিক বেশী সেটা লক্ষ করেছি। ঋতুপর্ণ আমার খুব পছন্দের পরিচালক তবে তাঁর কাজ নিয়ে ক্ষোভও ছিল আমার। লেখাটা আবেগমাখা। এখানে কারো পছন্দ হওয়ার কথা নয়।

    তবে সে লেখা উদ্ধার হওয়া মুশকিল, এক যদি আমার কাছে কপি না থাকে। ওই গ্রুপে কারো সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল নয়।
  • সংরাগ চক্রবর্তী | 236712.158.8990012.177 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৪৬49133
  • আরেক টী অনবদ্য পড়ার সময় দাবি করে।
  • Ela | 236712.158.895612.138 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৯ ০১:১৮49137
  • সেটাই স্বাভাবিক। যাক গে, এসব তো হতেই থাকে। আরেকবার দুগ্গা বলে লিখে ফেলুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন