এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অসভ্য চোখ

    Sayantani Putatunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২০ নভেম্বর ২০১৩ | ২৪৭৩ বার পঠিত
  • | |
    একজোড়া চোখ!
    একজোড়া চোখ নিয়ে এখন তল্লাট সরগরম! শুধু চোখ নয়, রীতিমত অসভ্য চোখ!
    এই তো, কয়েকদিন আগেকার ঘটনা। মিত্তিরবাড়ির মায়াদিদি একেবারে বিদ্যা বালানের মত লাল গামছা পরে উ-লা-লা, উ-লা-লা করে গান গাইতে গাইতে ছান-টান করছিল। আর বেবো—স্টাইলে হেসে হেসে সাবান মাখছিল। এটাই এখনকার নিয়ম। সাবান মেখে ‘কি জিনিস বানিয়েছ গুরু’ হতে হলে সাবান কে সাবান নয়, এক টুকরো হৃত্বিক রোশন ভাবতে হবে! অতঃপর সাবানটাকে নিজের গায়ে না ঘষে সাবানের গায়ে লুটোপুটি খেতে হবে। তবেই ‘ফস্‌সা’ হওয়া যাবে!
    যথারীতি মায়াদিদিও সেটাই করছিল। আর খুঁচখুঁচ করে গান গাইছিল—‘তু হ্যায় মেরা ফ্যান্টাসি’। ফ্যান্টাসি সে নিজে, না সাবানটা, না সাবানরূপী হৃত্বিক রোশন তা ভগাই জানে! কিন্তু ‘ফ্যান্টাসি’র ‘সি’তে গিয়েই সে অসভ্য চোখজোড়াকে ‘সি’ করে ফেলল, অর্থাৎ দেখে ফেলল। এবং সঙ্গে সঙ্গেই সি শার্প থেকে চড়াৎ করে এক্কেবারে সটান এফ শার্পে হাঁউমাউ! পাড়াশুদ্ধ লোক সেই আর্তচিৎকারে ছুটে এল, রাস্তার শান্তশিষ্ট ল্যাজকাটা কুকুর ভুলো ‘খ্যাঁক’ করে চামার দোকানদার ভোলা মুদিকে কামড়ে দিল, দুটো কাক উড়তে উড়তে আচমকাই আছড়ে পড়ল ইলেকট্রিকের তারে! আরও কত কি হল কে জানে! যাই হোক্‌, শেষপর্যন্ত জানা গেল অমন প্রলয়ঙ্কর চিৎকারের কারণ। মায়াদিদি হাঁফাতে হাঁফাতে বলল—‘ঐ বাথরুমের জানলা দিয়ে...কেউ উঁকি মারছিল!...কেউ এদিকেই উঁকি মারছিল...’।
    এটাই অবিশ্যি প্রথম কেস নয়। এর আগে এই অজ্ঞাত ‘কেউ’টি মজুমদার বাড়ির ছোট ছেলে আর বৌয়ের ফুলশয্যার দিন জানলা দিয়ে উঁকি মেরেছিল। তারও আগে শান্তি বৌদির বেডরুমে! ভাগ্যে সেদিন দাদা বাড়ি ছিল না! ‘কেউ’ বেচারিকে সেদিন হয়তো নিরামিষ থাকতেই হয়েছে। তাতে সে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে আরও কান্ডকারখানা জুড়েছে। আগে শুধু বেডরুমেই নজর দিয়ে খুশি ছিল। এখন বাথরুমকেও ছাড়ছে না। সকালে-বিকেলে, স্নান-সান্ধ্যস্নান করার সময়ে তো বটেই, এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেও তার অসভ্য চোখের উৎপাতে টেঁকা যাচ্ছে না।
    চিন্তার ব্যাপার! অত্যন্ত চিন্তার ব্যাপার! নবগ্রামের সব ক্লাবের ছেলেপুলেরা একজোট হল। এ কি অন্যায়! তামাম মা-বোনদের মান-সম্মানের কথা। দাদা-ভাইদের প্রেস্টিজে এভাবে গ্যামাক্সিন দিয়ে হতভাগা ‘কেউ’ ‘কেউটেগিরি’ করতে পারে না! অবিলম্বে স্টেপ নিতে হবে।
    নবগ্রাম শিশু সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট শাঁকালুদা হয়তো কোনওকালে শিশু ছিলেন। কিন্তু এখন তার ছেলের ঘরে শিশু খেলে বেড়াচ্ছে। অবশ্য তাতে আর কি! ‘উমর পচপন’ হলেও হৃদয়ে এখনও ‘বচপন’ জাগ্রত। তার আসল নাম কারুর জানা নেই। শাঁকালুর মত দাঁত হওয়ার দরুণ, বেচারির পিতৃপ্রদত্ত নামটা পালটে গিয়ে ‘শাঁকালুদা’ই হয়ে গেছে। লোকে বলে, তিনি নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে সেরেল্যাক, বোর্নভিটাও খেয়ে থাকেন!
    যাই হোকু, সেই শাঁকালুদা তার মাথার ‘স্মৃতিটুকু থাক’ এ হাত বুলিয়ে বললেন—‘এল্‌ আছু ব্যবছতা কত্তে হবে’।
    ইয়ে, কথাগুলো কি হিব্রু বলে মনে হচ্ছে? তাহলে একটা কথা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, যে শাঁকালুদা এখনও বাচ্চাদের মতই আধো আধো উচ্চারণে কথা বলেন। নিন্দুকেরা পিছনে বলে—‘ল্যাদা!’ কিন্তু মোদ্দা কথা হল, লোকটাকে এখনও শৈশব ছাড়েনি। হুঁ হুঁ বাবা, সাধে কি তিনি শিশু সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসে আছেন!
    তার কথার তর্জমা করে দিল ইয়ুথ ক্লাবের ক্যাশিয়ার হাবু—‘মানে, এর আশু ব্যবস্থা করতে হবে’।
    ইয়ুথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হুলোদা সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে সটান উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন—‘ভন্ধুরা, আমাধের পাড়ায় এখ মহাভিফদ আসন্ন। আমাধের লড়তে হভেঃ। ফ্রতিবাধ করতে হভেঃ। মা, ভোন দের ইজ্জথের গায়ে হাথ দেওয়া ছলভে নাঃ...’।
    প্লেটোনিক ক্লাবের মিচকেপটাশ পিকুল বলল—‘কেলো করেছে! এ যে ফের সংস্কৃত বলতে লেগেছে!’
    সত্যিই সংস্কৃত! এবং প্রতিটা বিসর্গের সাথে উপরিপাওনা কয়েকফোঁটা থুতু! ইয়ুথক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলে হবে কি! হুলোদার সামনের চারটে দাঁত বেমালুম পড়ে গেছে। পাশের তিনটে জেহাদ করছে। ‘এই গদি ছাড়লাম...ছাড়লাম...’ ভাব। হুলোদা গদি পাওয়ার আগেই হয়তো তারা দেহ রাখবে! আগের চারটেও শুরুতে এমনই করছিল। কিন্তু হুলোদার তেজস্বী ভাষণের ধাক্কায় বেচারারা কে কোথায় ছিটকে পড়েছে তার ঠিক নেই! শোনা যায়, শেষ দাঁতটা নাকি পার্টির এক মন্ত্রীর নাকে লেগেছিল। ভদ্রলোক মন দিয়ে হুলোদার বক্তৃতা শুনছিলেন। কিন্তু উত্তেজিত হুলোদার ‘জয় হোঃ’ ধ্বনির বিসর্গের সাথে অব্যর্থ লক্ষ্যে ঠাঁই করে কি যেন একটা তাঁর নাকে এসে লেগেছিল! নাক কেটে গিয়ে, রক্তপাত হয়ে সে এক কেলেঙ্কারিয়াস কান্ড! কর্মকর্তারা কাঁইকাঁই করে উঠেছিলেন—এ নাকি বিপক্ষ দলের ষড়যন্ত্র! তারাই বক্তৃতা চলাকালীন ঢিল ছুঁড়ে মন্ত্রীর নাক ফাটিয়েছে!
    কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা গেল, ঢিল নয়—দাঁত! হুলোদার দাঁত! আগেই নড়তে শুরু করেছিল। ভাষণের ঠ্যালায় একেবারে মিসাইলের মত ছুটে গিয়ে লেগেছে মন্ত্রীর নাকে!
    সে এক কেচ্ছা! তার কথা আর না বলাই ভালো। মোদ্দা কথা হল, হুলোদার চারটে দাঁত না থাকার দরুণ, তিনি যা বলেন তা উচ্চারণ করার আগেই ফস্‌ফস্‌ করে দাঁতের ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলস্বরূপ ‘প’ হয় ‘ফ’, ‘ব’ হয় ‘ভ’ এবং ‘দ’ হয় ‘ধ’।
    --‘এটা কি সভা পেয়েছ?’ প্লেটোনিক ক্লাবের হোমরা চোমরা সুব্রতদা বললেন—‘এখানে ওসব বন্ধুগণ, ফন বলে বক্তিমে দেওয়ার দরকার কি? সত্যি গুরু, জমায়েতে ভাষণ দিয়ে দিয়ে তুমি ফুলটু ন্যাতা হয়ে গেছ মাইরি!’
    --‘ভাষণ নয়। এই নভগ্রামের নুন, ঝল খেয়েছি আমরা সবাই। থার শোধ ধেওয়ার সময় আঝকে...’।
    সুব্রতদা যোগ করলেন—‘শুধু নুন, জলই খাইনি। শুশু আর পটিও করেছি। সেটা তো বললে না মামা’।
    হুলোদা প্রতিবাদে ফসফস করে আরও কিছু বিসর্গ আর থুতু ছেটাতে চলেছিলেন। তার আগেই পিকুল তাকে থামিয়েছে—‘সুব্রতদা, তুমি কি বলো?’
    সুব্রতদা একটু ভাবলেন—‘বুঝলি পিকুল, ব্যাপারটা যত সামান্য ভেবেছিলাম, ততটা নয়। আমার সন্দেহ হয়......’।
    --‘কি...কি...কি...?’
    সবাই এমন ভাবে তার দিকে ঝুঁকে পড়ল, যেন এখনই তিনি হরির লুটের বাতাসা ছুঁড়ে দেবেন! শিশু সঙ্ঘের উইকেট কিপার পাঁচু তো প্রায় ক্যাচ ধরার ভঙ্গিতেই নুয়ে পড়েছে!
    --‘এসব কোনও বাইরের লোক করছে না। পাড়ার লোকেরই কাজ!’ সুব্রতদা সিগ্রেটে এমন ভাবে টান মারলেন, মনে হল ওটা সিগ্রেট নয়, পাইপ! আর তিনিও সুব্রত চাটুজ্যে নন, খোদ শার্লক হোম্‌স্‌! আস্তে আস্তে বিড়বিড় করলেন—‘এসব কোনও ফ্রাস্টু খাওয়া বদমায়েশ ছেলের কান্ড’।
    --‘যাঃ কলা!’ পাঁচু হতাশ ভাবে হাত নাড়ে—‘তাহলে যে ঠক বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে দাদা। ফ্রাস্টু তো এখন ‘ঘর ঘর কি কাঁহানি’। ভগবান বুদ্ধ এ যুগে জন্মালে মৃত্যুহীন পরিবারের বদলে ফ্রাস্টুহীন পরিবার খুঁজতে বলতেন। মিলায় ফ্রাস্টু ঘরে ঘরে’।
    --‘যা বলেছিস্‌’। হাবু পাঁচুকে সমর্থন করল—‘বাবার চাকরিতে বসের দাঁত খিঁচুনির ফ্রাস্টু, কাকার গায়ক না হওয়ার ফ্রাস্টু, তেলেভাজার দোকানির উত্তমকুমার না হতে পারার ফ্রাস্টু, সাইবার ফ্রাস্টু-খাইবার ফ্রাস্টু, প্রেমে ফ্রাস্টু-গেমে ফ্রাস্টু, বাঁচার ফ্রাস্টু-খাঁচার ফ্রাস্টু, বুমে ফ্রাস্টু-ডুমে ফ্রাস্টু, চুপি ফ্রাস্টু-গুপি ফ্রাস্টু, দৈনিক ফ্রাস্টু-চৈনিক ফ্রাস্টু...খুনী ফ্রাস্টু-টুনি ফ্রাস্টু...অ্যালো ফ্রাস্টু-হ্যালো ফ্রাস্টু, হোমিও ফ্রাস্টু-...’।
    --‘রোমিও ফ্রাস্টু’। সুব্রতদা মুচকি হেসে যোগ করলেন।
    হাবু মহাখুশি হয়ে বলে—‘বাঃ, বেড়ে মিলিয়েছ তো! এটা তো ভাবিনি!’
    --‘ভাবা উচিৎ ছিল’। তিনি বললেন—‘অন্যান্য ফ্রাস্ট্রেশনের কথা আপাতত থাক। উপস্থিত এমন একটা লোককে খোঁজা দরকার যার রোমিও ফ্রাস্টু আছে। প্রেমে ল্যাঙ খেয়েছে, কিংবা একাকিত্বে বিরক্ত অথবা ডনজুয়ান হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে নত্থু খয়রা হয়ে গেছে—এমন পাব্লিক। মেয়ে পায়নি। তাই পিপিং টম গিরি করে নিজের ফ্রাস্টুর ইলাজ করছে’।
    --‘এমন ফ্রাস্টুওয়ালা লোকও তো নবগ্রামে কম নেই’! পিকুল মাথা চুলকে বলে—‘অন্তত গোটা পঞ্চাশেক ছেলেপুলে এমনই পাওয়া যাবে। তার মধ্যে কোনজন কি করে বুঝব?’
    --‘পাতা লাগাতে হবে’। সুব্রতদার ভুরু কুঁচকে গেল—‘পঞ্চাশটা নাম না হলেও, অন্তত দুটো নাম আমার এখনই মাথায় আসছে। বলবো?’

    ১.
    “এই জীবন লইয়া কি করিব”? এই জীবন-যৌবন লইয়া কি করিতে হয়?
    রোজ সকালে বাথরুমে গিয়ে বিড়িতে টান মারলেই বিশ্বনাথ গুপ্ত তথা বিশুর মাথায় দার্শনিক প্রশ্নরা এসে তিং পাং তিং পাং করে নাচতে শুরু করে। তখন সে কেমন যেন ভোম্‌ হয়ে বসে থাকে। মনে হয় পরমহংস অবতার নিয়েছে। এক্ষুনি ডাঙা ছেড়ে প্যাঁক প্যাঁক করে নেমে যাবে জলে। আর ডুবকি মেরে মেরে কাদা থেকে গুগলি বেছে বেছে খাবে।
    অবশ্য নতুন করে গুগলি আর খাবে কি? কয়েকদিন আগেই রঞ্জনা যা একখানা মোক্ষম গুগলি ঝেড়ে দিয়ে গেছে! দিব্যি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল বিশুর সঙ্গে। হঠাৎ ওর বাবা এসে রেডকার্ড দেখালেন। আর রঞ্জনাও ‘আব্বুলিশ’ বলে জল ছেড়ে উঠে গেল ডাঙায়। কালই তার বিয়ে ছিল। মেইন রোলে কাঁচরাপাড়া নিবাসী কোন্‌ এক ডাক্তার! আর বিশু গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স। মনে যতই লঙ্কাবাটা জ্বলুক, বরের পাশে দিব্যি দাঁত কেলিয়ে বসেছিল। ডাক্তার-জামাইবাবুর পাড়াতুতো শালা বলে কথা! শা-লা!
    ভাবতেই বিশুর বুকফাটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। কালকের বিয়েবাড়ির কথা ভাবলেই তার গা জ্বলছে। এমনিতেই বিয়েবাড়ি সম্পর্কে তার একটু অ্যালার্জি আছে। যারা নিয়মিত বিয়েবাড়ি অ্যাটেন্ড করেন তাদের ‘সহ্যশ্রী অথবা সহ্যবিভূষণ’ উপাধি দেওয়া উচিত। অন্তত বিশুর হাতে ক্ষমতা থাকলে এমন একটা উপাধির চল করে দিত। এই কালকের কথাই ধরো না! বিয়ে বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই একশো চল্লিশ ডেসিবেলের চিৎকারে প্রথমেই কান ফাটানোর তাল! তার সাথে যত কাকু জ্যেঠুরা আদেখিলের মত নাচতে নাচতে এসে ঘাড়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। প্রায় ‘জগন্নাথের অপ্রতিহত রথের মত’ এ ওর পা মাড়িয়ে দিচ্ছেন। নাচের ঠ্যালায় ইতস্তত কনুইয়ের গুঁতো হরির লুটের বাতাসার মত এদিক ওদিক ছিটকিয়ে পড়ছে! কিন্তু রেগে যাওয়ার উপায় নেই। ‘বুরা না মানো, শাদি হ্যায়’! অগত্যা মুখে একটা প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে তথাকথিত জেঠু-কাকুদের গুষ্টির পিণ্ডি চটকানো আর পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধসমেত মুন্ডুপাত!
    কোনমতে তাঁদের এড়িয়ে ঠেলেঠুলে প্রমীলা কক্ষে প্রবেশ! সেখানে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হওয়া অবধারিত! ওখানে মহিলার সংখ্যা কম, আর চলমান ক্রিসমাস ট্রি-এর সমাবেশ বেশি! একেবারে সোনার দোকানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার হয়ে গয়না ঝমর ঝমর করে ঘুরছেন শ্রীমতিরা! প্রায় একটন ওজনের বেনারসী, কিম্বা কাঞ্জিভরম অথবা জারদৌসি পরিহিত মহিলাদের দেখলেই হঠাৎ করে মনে হয় যে এরাই বুঝি মিশরের পিরামিডের পাথর বয়ে এনেছিলেন! আর তাঁদের আভরণ? তাঁরা কেমন করে পরে থাকেন কে জানে, কিন্তু শুধু দেখেই বিশুর গা কুটকুট করতে থাকে! কেউ চন্দ্রহার, কেউ ললন্তিকা, কেউ নওলাখা—বাপরে! শো অফের চূড়ান্ত!
    এরপরের দৃশ্যটা অনেকটা এইরকম—
    চন্দ্রহার পেছনে বলবেন-‘ইশশশশ... নওলাখার বেনারসীটা দেখেছ? এক্কেবারে থার্ডক্লাস...!’
    নওলাখা ফিসিফিসাবেন—‘ যাই বলো, ললন্তিকা একদম ওল্ড ফ্যাশনড। আর এটিকেট ও কিস্যু জানে না! দেখেছ? পরে এসেছে একটা যা তা জারদৌসি...ছ্যা ছ্যা ছ্যা...’
    ললন্তিকা বরকে ডেকে বলবেন—‘ যতই মুখে রঙ লাগাও, কাক কি আর ময়ূর হয়? দুজনেই যা জ্বলছে না! একেবারে জ্বালিয়ে দিয়েছি!’
    এর মধ্যে যদি বিশুর সমব্যথী কেউ হয়ে থাকে, তবে সে বিয়েবাড়ির আসল নায়ক। বর বেচারা কান কাটা হুলোর মত মাথা নীচু করে ঘুরছিল—যেন গরুচুরি করে জেলে গিয়েছিল, আজই সবে ছাড়া পেয়েছে! শ্বশুর শাশুড়ি ততক্ষনে নিজের জ্ঞাতিগুষ্টির সাথে আলাপ করিয়ে দিতে ব্যস্ত--
    —‘ বাবাজীবন, এই হল আমার জ্যেঠুর খুড়তুতো শালার বৌয়ের মামাতো বোনের দেওরের ছোট ভাইয়ের মাসির পিসতুতো বোনের ছোট ছেলের মেয়ে!’
    বর বাবাজী এই ‘ই ইকোয়্যালটু এম সি স্কোয়্যার’ কতদূর বুঝলেন ভগবানই জানেন—কিন্তু মুখে একটা ক্যালানেকার্তিক মার্কা হাসি দিয়ে হেঁ হেঁ হেঁ করতে করতে করমর্দন করলেন। যদিও এই আত্মীয়টির সাথে কস্মিনকালে তার দেখা হবে কি না কে জানে! কিন্তু বিয়ের দিন সবাই উদার!
    এসব বিশু বহুবার দেখেছে। বহুবার শুনেছে। কম তো হল না। প্রেমিকাদের বিয়ের নেমন্তন্ন খাওয়ার বিষয়ে সে রেকর্ড করেছে। এতদিনে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে তার নাম উঠে যাওয়া উচিৎ ছিল। কপালদোষে ওঠেনি। রাণী, মৌমিতা, বসুধা, শিরিন, জয়িতা, অঞ্জলি, মুনিয়া—এবং রঞ্জনা, প্রত্যেকের বিয়েই সে খেয়ে ফেলেছে। বিশু লক্ষ্য করে দেখেছে, যখনই কোন মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম হয়, তার ঠিক তিনমাসের মধ্যেই সেই মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়ে যায়! এ পাড়ার প্রত্যেকটি মেয়েই এই ব্যাপারটা জানে। তাই যখনই কোনো মেয়ের বিয়ের শখ হয়, তখনই সে বিশুর সাথে একটু ফস্টিনষ্টি করে যায়! বলাই বাহুল্য, উদ্দেশ্য কলেজের সাদামাটা ক্লার্ক বিশ্বনাথ গুপ্তকে বিয়ে করা নয়। বরং তার ঘাড়ের উপর দিয়ে বন্দুক চালিয়ে একটি ট্যাঁকমোটা রাজহাঁস শিকার করা!
    বিশু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েগুলোর দোষ নেই। সে নিজেই তো তাদের অভিসন্ধি জানে। তবু যখন বিদায়ের আগে মেয়েরা বলে—‘টেক ইট ইজি বিশু। সামান্য ক্লার্কের চাকরি করে ব্যাচেলার লাইফ লিড করা যায়। ম্যারেড লাইফ নয়’, তখন বিশুর বুকের ভিতরটা একইরকম টনটন করে। একইরকম চোখ কড়কড় করে। একই ভাবে কান্না পেয়ে যায়! সে বারবার তাদের হাত জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে—‘আমায় ছেড়ে যেও না। কথা দিচ্ছি আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও তোমায় আমি সুখী রাখবো। কিন্তু এভাবে ছেড়ে যেওনা। আমি কি নিয়ে বাঁচবো?’
    প্রত্যেকটা বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে আসার পর মনে হয় আজ হয় কেরোসিন, নয় দড়ি! কিছুক্ষণ সে সব চিন্তা করার পর আপনমনেই গান গাইতে থাকে—‘ঘুঙ্গুরু কি তরাহ্‌ বাজতা হি রাহা হুঁ ম্যায়...কভি ইস্‌ পগ মেঁ, কভি উস পগ মেঁ...’। তারপর গোটা দুয়েক বড়ি খেয়ে বুঁদ হয়ে বসে থাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে—‘ঈশ্বর, তোমার দুনিয়ায় কি আমার জন্য কেউ নেই?’
    বিশুর জন্য আর কেউ না থাক্‌, বড়ি আছে। স্কুলজীবন থেকেই সে বড়ি খেয়ে আসছে। না না, এ বড়ি তরকারিতে দেওয়ার বড়ি নয়। এ বড়ি হল ঘুমের বড়ি। এখন তার ফ্যান্সি নাম হয়েছে—স্ট্রেস ফ্রি! খেলে বেশ একটা ঝিমঝিমে মৌতাত হয়। কিছুক্ষন বাদে মাথাটা বেশ হাল্কা হাল্কা মনে হয়। মনে হয়, কোথাও কেউ নেই, জগৎ মিথ্যা— ব্রহ্ম ওরফে বিশুই সত্য! দুনিয়ায় কোনও চাপ নেই! রাণী, মৌমিতা, বসুধারা সবাই আসলে তার শরণাগত! ভগবান বুদ্ধ বা যীশুর কাছে যেমন পাপীতাপী, রোগগ্রস্তরা মুক্তির জন্য ছুটে যেত, তেমন তার কাছেও সবাই সুখ-শান্তির খোঁজে ছুটে আসে। অর্থাৎ রামমোহন, বিদ্যেসাগর মশাইয়ের মত বিশুও নারীদের উদ্ধার প্রকল্পেই এসেছে। অথবা যেমন শ্রীরামের পদস্পর্শে পাষাণী অহল্যা মানবী হয়েছিলেন, তেমনি তার স্পর্শেও মিস্‌রা মিসেস হয়।
    বড়িগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার মাথায় এসব ভালো ভালো চিন্তাই আসে। কিন্তু সে মৌতাত কেটে গেলে আবার সেই একই প্রশ্ন ফণা তোলে।
    --“এই জীবন লইয়া কি করিব?” এই জীবন-যৌবন লইয়া কি করিতে হয়?

    ২.
    --‘কাকু, আপনার ব্যাগটা কি ধরবো?’
    হারাধনকাকুর কালো চশমাটা রোদ পড়ে ঝিকিয়ে উঠল। হেসে বললেন—‘বিশু মনে হচ্ছে! আজ হঠাৎ বাজারে যে! কলেজ নেই?’
    --‘আজ কিসের যেন একটা ছুটি’।
    --‘কিসের ছুটি?’
    --‘কি জানি!’ বিশু মাথা চুলকুতে চুলকুতে বলল—‘হাতুড়ি পূর্ণিমা না কোদালে অমাবস্যা কি যেন একটা আছে’।
    হারাধনকাকু জন্মান্ধ। চোখে সবসময়ই একটা কালো চশমা পরে থাকেন। একহাতে একটা স্টিক, অন্যহাতে ঘোঁতন। পেটমোটা বাজারের ব্যাগটা সামলাতে পারছিলেন না। হেসে ফেলে বললেন—‘ছুটি উপভোগ করছ, অথচ জানোনা কিসের ছুটি? আজ রাখী পূর্ণিমা!’
    জানতে বয়েই গেছে বিশুর। রাখী পূর্ণিমা বা ভাইফোঁটায় তার বাজারে মন্দা! যেটা জরুরী নয়, সেটা জানতে হবে কেন? সে রাখীপূর্ণিমাকে গুলি মেরে বলল—‘আপনার হাতের ব্যাগটা...’।
    --‘যদি ধরতেই হয়, তবে ঘোঁতনকে ধরো। বড্ড ছট্‌ফট্‌ করছে। সামলাতে পারছি না’।
    বিশু সাবধানে কোলে তুলে নিল ঘোঁতনকে। সে সদ্য সদ্য দাড়ি কামিয়েছে। গাল থেকে ভুরভুর করে আফটারশেভের খুশবু আসছিল। সেই গন্ধ শুঁকেই ঘোঁতনের নোলায় জল চলে এসেছে বোধহয়। ব্যাটা কুঁইকুঁই করতে করতে তার গাল একচোট চেটে নিল। তার ঠান্ডা, ভেজা নাকটাকে একহাতে চেপে ধরে বিশু বলল—‘ব্যাপার কি কাকু? আজ যে দেখছি স্পেশ্যাল বাজার!’
    --‘স্পেশ্যাল?’ তিনি হাসছেন—‘হঠাৎ এমন মনে হল কেন?’
    --‘ইলিশের ন্যাজ আর পাঁঠার মাংসের প্যাকেটটা চোখে পড়ল কি না!’
    --‘ও’। হারাধনকাকু বললেন—‘ইপ্সিতারা এসেছে। জামাই এখন সুইটজারল্যান্ডে সেট্‌ল্‌ড। আসার তেমন সুযোগ পায় না। এবার মাসখানেকের ছুটি নিয়ে সটান কলকাতায়। গত মঙ্গলবারই এসে পৌঁছেছে যাদবপুরের বাড়িতে। আজ এ বাড়িতে এসেছে’। বলেই মৃদু হেসে যোগ করলেন—‘জামাই বাবাজী বলে কথা। খাতির তো করতেই হবে’।
    খাতির তো বন্‌তা হ্যায়! ইপ্সিতাদিকে বিয়ে করার জন্য এবং প্রায় দু’বছর সহ্য করার জন্য খাতির শুধু নয়, একটা নোবেলও ওর প্রাপ্য! ইপ্সিতাদির বরের চেয়ে বড় শান্তির দূত আর কেউ হতেই পারে না! হিটলার আর মুসোলিনীকে নিয়ে একসাথে ঘর করার চাপ তো নেহাৎ কম নয়! ইপ্সিতাদি যতদিন অবিবাহিতা ছিল, ততদিন ছাতে কাকচিলও বসতে পারত না! ঝগড়া করার আর্টটা দারুণ জানত! রিকশাওয়ালাকে আট আনা কম দেওয়া থেকে শুরু করে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে রোগিনীর বয়েস লিক্‌ করে দেওয়া—সব ইস্যুতেই গলাবাজীতে সে পয়লা নম্বর। পারলে বাতাসের গলায় দড়ি দিয়েও ঝগড়া করে!
    সেই ইপ্সিতাদির যখন বিয়ে হল তখন বর বেচারিকে দেখে মায়া হয়েছিল বিশুর। মায়া হয়েছিল ইপ্সিতাদির শাশুড়ির জন্যও। কেমন গোবেচারি মহিলা। বৌভাতের দিন তাঁকে দেখেছিল। মুখে একটি কথাও নেই। প্রায় বোবার মতই বসেছিলেন। যাক্‌, একদিক দিয়ে ভালোই। বোবার শত্রু নেই। যুদ্ধের আগেই ইপ্সিতাদি ওয়াক্‌ওভার পেয়ে গেল!
    ও বাবা! কোথায় কি! কয়েকদিনের মধ্যেই ইপ্সিতাদির গলাবাজীর চোটে শ্বশুরবাড়ির আশেপাশের লোক অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বর বাড়িতে থাকে না, শাশুড়ি তো সাত চড়েও রা কাড়ে না। তাঁর গলাও শোনা যায় না। তবে মেয়েটা সারাদিন ঝগড়া করে কার সাথে! প্রতিবেশীরা একবার কৌতুহলী হয়ে জানলা দিয়ে উঁকি মারল। এবং যা দেখল তা অবিশ্বাস্য! ইপ্সিতাদি প্রবল বিক্রমে তার শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করছে! সেই শাশুড়ি, যার মুখে কোনও আওয়াজই নেই! কিন্তু আওয়াজ না থাকলে কি হবে! যেই বৌমা চেঁচিয়ে-মেঁচিয়ে, লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, তখনই তিনি ভাবলেশহীন মুখে তাকে কিল, চড়, জুতো, ঝাঁটা তুলে তুলে দেখাচ্ছেন! মুখে কোনও শব্দ নেই। স্রেফ হাতের ইশারা! তাতেই ফের ইপ্সিতাদি হাউ-হাউ, দাউ-দাউ করে জ্বলে-পুড়ে বকে-ঝকে একসা করছে!
    বৌমা তো বৌমা! শাশুড়িও সুভানাল্লাহ্‌!
    এই আগ্নেয়গিরি পরিস্থিতি থেকে প্রাণরক্ষা করার জন্যই বোধহয় ইপ্সিতাদির বর, অবনীদা ডাইরেক্ট সুইটজারল্যান্ডে গিয়ে বসেছে! আহা! কি জায়গা! চতুর্দিকে শুধু বরফ আর বরফ! ঠান্ডা ঠান্ডা-কুল কুল। সহধর্মিনী ফায়ার হয়ে গেলে তার মাথায় দেড় কেজি বরফ ঢেলে দাও। ওঁ শান্তি...ওঁ শান্তি!
    ঘোঁতন বোধহয় বিশুর আফটারশেভের লোভ এখনও ছাড়তে পারেনি। আক্ষরিক অর্থেই বিশুকে চেটেচুটে একসা করছে! ওর ইচ্ছে করছিল জন্তুটার পাছায় ক্যাঁৎ ক্যাঁৎ করে তিন লাথি মারে। অসভ্য কুকুর কোথাকার! খড়খড়ে জিভ দিয়ে ক্রমাগতই গালে পালিশ দিয়ে চলেছে! মোমপালিশ পেয়েছিস নাকি বে! এমন দরদ দিয়ে চাটছে যেন সে পুরুষ নয়, একটি চকচকে গোলগাল মিস ইউনিভার্স!
    সে আলগোছে ঘোঁতনকে এক থাপ্পড় কষিয়ে দেয়। কুকুরটা থাপ্পড় খেয়ে ঘ্যাঁক করে উঠল। হারাধনকাকু চমকে ওঠেন—‘কি হল?’
    --‘কিছু না কাকু’। বিশু সামলে নেয়—‘ঘোঁতন ট্যান খেয়েছে। আই মিন, বিরহ হয়েছে’।
    --‘মানে?’
    --‘ঐ রাস্তা দিয়ে একটা সুন্দরী রাপ্‌চিক রোডেশিয়ান যাচ্ছিল। তাকে দেখেই...’। বলেই এমন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, যেন ঘোঁতন নয়, সে-ই এখন পারলে চার পায়ে কাল্পনিক সুন্দরী রোডেশিয়ানটির পিছন পিছন দৌড়য়!
    হারাধনকাকুকে চিন্তিত লাগে—‘ঠিক বলেছ। ঘোঁতনটারও কিছু করার দরকার! আজকাল কেমন উদাস উদাস হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমত খাচ্ছে না। সবসময়ই ঝিমোচ্ছে...’।
    বিশু অবাক হয়ে ঘোঁতনের দিকে তাকায়! আরে গুরু, তুমিও লাইনে এসে পড়েছ নাকি! তোরও দেখছি আমার মতই ছেঁড়া চপ্পল দশা! কিন্তু ঝিমুচ্ছিস কেন বস্‌? বড়ি ধরেছিস্‌ নাকি?
    ঘোঁতন তার দিকে জুলজুলিয়ে দার্শনিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবটা এমন-- যেন বলছে, কি চাপ বলো দিকিন! জীবনে খালি কতগুলো শুকনো হাড়! মেয়ে নেই...মেয়ে নেই...মেয়ে নেই...! মেয়ে ছাড়া আর সবই মায়া! এমনকি মুর্গীর জব্বর ঠ্যাঙটাও! এই জীবন নিয়ে কি করি! এই যৌন-জীবন নিয়ে কি করি! কুকুর বলে কি মানুষ নই! আমার কি চুলকুনি হয় না! আলু কি শুধু তোমাদেরই আছে!
    আহা রে! বিশুর মায়া হয়। অবলা জীব। যাক্‌, মেয়ে না দিতে পারি, আফটারশেভটা তোকে দিয়েই দেব। আরাম করে চাটিস্‌। বেচারা! ভগবান আবার তোকে সবক’টাই পা দিয়ে রেখেছেন। একজোড়া হাতও দেননি যে মাস্টারবেট করবি! আয়, দুই দেবদাস গলাগলি করি।
    ঘোঁতনকে জড়িয়ে ধরতেই সে চটাস্‌ করে কথা নেই বার্তা নেই বিশুর ঠোঁট চেটে দিল। হতভাগা! ফ্রাস্টু খেয়ে খেয়ে ওর মাথাটাই গেছে। বিশু আরেকটা থাপ্পড় বসাতেই যাচ্ছিল। তার আগেই হারাধনকাকু বললেন—‘এতদূর যখন এলে তখন ইপ্সিতার সাথে একবার দেখা করে যাও। ও খুশি হবে’।
    আলবাৎ! দেখা করবে না মানে! ইপ্সিতাদিকে দিয়েই তো তার নারী-উদ্ধার প্রকল্পের ‘জয় গণেশ’ হয়েছিল। পুরনো কাস্টমারকে কি ভুলে যেতে পারে বিশু! মনে পড়ে যায় সেই চিলেকোঠার সিনটা। জটায়ু থাকলে আরেকখানা রোমাঞ্চকর উপন্যাস লিখে ফেলতেন। চিলেকোঠায় চোরাবালি! চোরাবালি বলে চোরাবালি! এমন নাকানিচোবানি খেয়েছিল যে, তারপর প্রায় একহপ্তা তার ঘুমই হয়নি! শ্বাসে ইপ্সিতা, স্পন্দনে ইপ্সিতা, পাশবালিশে ইপ্সিতা! প্রথমবার কৌমার্যকে ঘেঁটে ‘ঘ’ করে আহ্লাদে প্রায় পাউডার হয়ে গিয়েছিল। কল্পনায় ইপ্সিতার বুকের ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে ছড়িয়ে পড়েছিল।
    কিন্তু পাউডারের কপাল! ঠিক তিনমাস পরে ‘ফুঃ’ করে উড়িয়ে দিয়ে ঝকঝকে ওপেল অ্যাস্ট্রায় চড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেল ইপ্সিতাদি। কোথায় পাউডার আর কোথায় ওপেল অ্যাস্ট্রা! ওপেল অ্যাস্ট্রার ঝলসানিতে সেদিন বিশুর বুকের ভিতরটা অ্যাশট্রে হয়ে গিয়েছিল। হৃদয় এমনই একটা বস্তু যা পুড়লে ধোঁয়া ওঠে না! গন্ধও পাওয়া যায় না! শুধু রাবণের চিতার মত চিড়বিড়ে জ্বলুনিতে জ্বলতেই থাকে।
    সবকথা শুনে পাড়ার ব্যায়ামবীর বাবনদা, তথা রাবণদা হেসেছিল। তাকে পাড়ার ছেলেরা পিছনে ‘লো বাজেটের অসুর’ বলেও ডাকে। হাই বাজেটের অসুরগুলো বেশ চিকনা হয়। আর লো বাজেটের অসুরগুলো যাচ্ছেতাই। রাবণদার চেহারাটাও অনেকটা তেমনই। ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, পাকানো গোঁফ, মোষের মত গায়ের রঙ আর লাল লাল আলুচেরা চোখ—সব মিলিয়ে মূর্তিমান যমদূত! কিন্তু আদতে অমন কড়া চেহারার লোকটাও দস্তুরমত দার্শনিক। পিঠে হাত রেখে বলেছিল—‘বুঝলি, হৃদয় হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মত। হ্যারি পটারে দেখিস্‌নি? ফিনিক্স আসলে মরে না। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পরে, সেই ভস্ম থেকেই আবার জন্ম নেয়। মানুষের হৃদয় ও তাই। পুড়ে যাওয়ার পরেও খতম হয় না। ফের সেই ছাই থেকেই ধুকপুক করতে করতে বেঁচে ওঠে নতুন হৃদয়। আবার জ্বলার জন্য প্রস্তুতি নেয়’।
    ঠিকই বলেছিল রাবণদা। ইপ্সিতাদির সাথে দেখা করার কথা ভাবতেই তার ছাই হয়ে যাওয়া বুকের পাঁজরের ভিতরে কি যেন একটা ধুকপুক করে উঠল। বোধহয় নতুন হৃদয়টা জন্মেছে। আর তার কি ধুকপুকানি। হৃদয় নয়, যেন টারবাইন! কয়েকশো হর্সপাওয়ারে রক্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা শরীরে। এই স্পিডে যদি বাড়ির পাম্প চলত তাহলে একশো তলা অবধি জল অনায়াসে উঠে যাওয়াও অসম্ভব নয়! দুঃখের কথা আজকালকার পাম্পগুলো নেহাতই অপদার্থ। কলের তলায় বালতি পেতে স্রেফ একখানা কালী সিঙ্গির ‘মহাভারত’ নিয়ে বসে পড়ো। যুধিষ্ঠিরের স্বর্গগমনের আগে বালতি ভরবে না!
    বুকের ভিতরে একটা অদ্ভুত শিরশিরানি আর খচমচ নিয়ে হারাধনকাকুর পিছন পিছন বাড়িতে ঢুকল বিশু। একসময় এই বাড়িতে তার নিত্য আনাগোনা ছিল। আজও মনে পড়ে ইপ্সিতাদির সেই বিখ্যাত শিফনের শাড়ি আর স্লিভলেস ব্লাউজ! সবসময়েই মেগা সিরিয়ালের নায়িকা! ঘুম থেকে উঠলেও বোধহয় চুল এলোমেলো হয় না, দাঁত ব্রাশ করার সময়েও চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক থাকবেই। আর ‘ম্যায় হুঁ না’র সুস্মিতা সেনের কেমিস্ট্রির পাঠ বোধহয় ইপ্সিতাদির শাড়িগুলো সব আগেই পড়ে ফেলেছিল। প্রথম যেদিন বাজারে দেখা হয়েছিল তখনও বিশু নিরেট হরলিকস বেবি। ফলের দোকানির সাথে দর নিয়ে ঝগড়া করছিল ইপ্সিতাদি। যেই না একটু উত্তেজিত হয়েছে অমনিই এক কেলো! সড়াৎ করে বুকের আঁচল খসে পড়ল। ইপ্সিতাদির সেদিকে খেয়ালই নেই। সে একটা কমলালেবু তুলে নিয়ে তর্ক জুড়েছে—‘সাইজ দেখেছেন?’
    দোকানি হাঁ করে অন্য কমলালেবু দেখতে দেখতে বলল—‘অ্যাঁ!...হ্যাঁ!...দেখছি!’
    --‘এই সাইজ দেখলে কারুর ভক্তি আসে?’
    ভক্তি আসে না, তবে লোভ আসে! সে কথা দোকানি আর বলল না। বরং ঢোঁক গিলে বলে—‘কত সাইজ?’
    --‘আরও বড় সাইজের মাল দেখান’।
    দোকানি বেচারা তখন ফল-টল ছেড়ে অনেক উপরে উঠে গেছে। হয়তো বায়রন, শেলি, কীটসদের সাথে গজল্লা শুরু করে দিয়েছে। কোনমতে বলল—‘এর থেকে বড় সাইজের মাল আমি তো দূর, আমার বাপ-ঠাকুর্দা-চোদ্দপুরুষেও দেখেনি’।
    বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল ইপ্সিতাদি। বিশুটা আকাট গর্দভের মত পিছন থেকে আঁচলটা তুলে দিয়ে বলল—‘দিদি, আপনার আঁচলটা নিয়ে যান’।
    ইপ্সিতাদি কেমন যেন ঝিরিঝিরি হাওয়া মার্কা চোখে তাকিয়েছিল তার দিকে। একটু রহস্যমাখা হাসি হেসে বলেছিল—‘থ্যাঙ্ক ইউ!’
    সেই ইপ্সিতাদি! যে কোনওদিন শিফনের শাড়িতে পিন করত না! যে ঝগড়া করলেই বুকের আঁচল খসে পড়ে যেত! যে মেগাস্থিনিসকে বাঁকিয়ে বলতো-ম্যাগাস্থিনিস! যার বাড়ির চিলেকোঠায়...আঃ!
    বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে এসব কথাই ভাবছিল বিশু। মাথার উপরে ফ্যান চললেও এসি’র ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ টের পাচ্ছে। এটা সম্ভবত নতুন আমদানি হয়েছে। আরও অনেক কিছু নতুন দেখতে পাচ্ছে সে। দেওয়ালে এক মহিলা খোলা পিঠ দেখাচ্ছেন। তার পাশে বেশ নাদুবুদুড়ি গণেশ। আসবাবপত্র সব লেটেস্ট ফ্যাশনের। বোঝাই যাচ্ছে এ বাড়ির গণেশ দিলখোলা!
    --‘আ-রে বিশু!’ আচমকা একটা পরিচিত স্বর—‘কতদিন পর!’
    বিশু উদ্ভাসিত দৃষ্টিতে মুখ তুলে তাকাল। কিন্তু দেখেই ব্যোম্‌কে গেছে! এ কে! এটা কে! উর্ধ্বাঙ্গে স্যান্ডো গেঞ্জি! হারাধন কাকুর নাকি! না অবনীদার! কোমরের সবচেয়ে নীচের বিপজ্জনক অংশ থেকে একটা শর্টস্‌ ঝুলছে! উন্মুক্ত নাভি! তাতে আবার একটা ড্রাগনের ট্যাটু! এক্ষুনি বুঝি নেমে এসে জ্বালিয়ে দেবে! ছোট করে ছাঁটা চুলে সোনালী রঙ করা! এক হাতে জ্বলন্ত সিগ্রেট! অন্য হাতে গ্লাসের মধ্যে সন্দেহজনক তরলবস্তু!
    --‘ই-ই-ই-ইপ্সিতাদি...! তুমি!’
    ইপ্সিতাদির ব্রিটনি স্পিয়ার্স সংস্করণ তার সামনে এসে মখমলের মত পা দুটো মেলে বসল—‘হ্যাঁ রে! কেমন আছিস?’
    বিশু তখন রীতিমত ঘামছে। কোনমতে বলল—‘এ সিটা একটু বাড়িয়ে দেবে প্লিজ?’
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • ব্লগ | ২০ নভেম্বর ২০১৩ | ২৪৭৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    গরল - Sayantani Putatunda
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.80.49 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:৫২45699
  • গপ্পোটা ভালই এগোচ্ছিল, কিন্তু কেমন ঘেঁটে গেল।
  • 4z | 152.176.84.188 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৩১45700
  • গ্লাসে সন্দেহ্জনক তরলটা কি টাকিলা? (ডিঃ মঃ)
  • siki | 132.177.183.109 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৩৭45702
  • মাঝে যেন নবগ্রাম দেখলাম মনে হল?
  • Sayantani Putatunda | 213.171.246.237 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৩৭45701
  • বন্ধু, সবে তো শুরু! আমারই ভুল। আমি ক্রমশ শব্দটা লিখতে ভুলে গেছি!
  • mallika sen. | 127.203.179.3 (*) | ২১ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:৪৪45704
  • valo laglo
  • ঐশিক | 213.199.84.130 (*) | ২১ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৩৯45703
  • বেশ ভালো লাগছে
  • JAW | 124.198.41.165 (*) | ২৩ নভেম্বর ২০১৩ ১১:০৭45705
  • নাহ, এনার হবে সন্দেহ নাই, শুরুতেই এমনি, এক ধাক্কায় পড়ে ফেললাম।
  • arindam | 111.58.82.63 (*) | ২৪ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৫১45707
  • এগিয়ে চলুক ,,,, জব্বর লেখা !
  • Biplob Rahman | 212.164.212.20 (*) | ২৪ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৫৬45706
  • বাক্যের প্যানটুকু ছাড়া লেখাটি বেশ সরস। পরের কিস্তিগুলোও মন দিয়ে পড়ছি। দৌড়াক...
  • debu | 180.213.132.253 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:১০45708
  • ভালো লিখ্ছো ।। তুমি কি দিল্লি র ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন