এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সলোমন উবাচ

    Sayantani Putatunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২২৯১ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • ১.
    --‘ম্যাডাম, এক মহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।’
    ‘লিট্‌ল অ্যাঞ্জেলস’ অনাথ আশ্রমের সর্বময়ী কর্ত্রী নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিওনের দিকে তাকালেন।
    --‘ কি নাম? অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?’
    --‘আজ্ঞে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই’। পিওন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল—‘তবে বললেন, জিকোর ব্যাপারে কিছু বলতে চান। দরকারী কথা...!’
    জিকোর নামটা শুনেই নীলাঞ্জনা নড়েচড়ে বসলেন। জিকো তাঁদের অনাথ আশ্রমেরই ছেলে। বয়স নয়-দশ বছর। অনাথ আশ্রমের আর পাঁচটা ছেলের মতই। ক’দিন আগেও তার আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি তার জীবনে অপ্রত্যাশিত একটা পরিবর্তন ঘটেছে! এইটুকু বয়েসেই সে লাখপতি হয়ে বসে আছে! মেলাতে বেড়াতে গিয়ে মহালক্ষ্মী লটারির একটা টিকিট নেহাতই খেলাচ্ছলে কিনেছিল জিকো। শুধু সে একাই নয়, তার বন্ধুবান্ধবেরাও প্রত্যেকেই টিকিট কেটেছিল। ওদের কাছে এটা নেহাতই একটা মজার ব্যাপার!
    তখন কে জানত যে জিকোর কেনা লটারির টিকিটটাই জ্যাকপট হিট করে বসে থাকবে—যার মূল্য দশ লক্ষ টাকা! খবরটা শোনার পর থেকেই অদ্ভুত আশঙ্কায় কাঠ হয়ে আছেন নীলাঞ্জনা! টাকা শুধু আশাই আনে না—আশঙ্কাও আনে! আর জিকোর মত অনাথ বাচ্চা ছেলের পক্ষে এ ব্যাপারের গুরুত্বও বোঝা সম্ভব নয়! খবরটা তাই চেপে রেখেছিলেন নীলাঞ্জনা! অন্তত চেপে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু টাকার গন্ধ চেপে রাখা যে অসম্ভব তা আজই মর্মে মর্মে বুঝলেন!
    চশমাটা আঁচলে মুছে নিয়ে পিওনের দিকে তাকালেন তিনি—‘পাঠিয়ে দাও’।
    --‘ওকে ম্যাডাম’। পিওন চলে গেল।
    কিছুক্ষণের মধ্যেই এক গোলগাল চেহারার ভদ্রমহিলা এসে হাজির হলেন। কোনরকম ভূমিকা না করেই বললেন—‘আমি জিকোর মামী। আমার স্বামী, মানে জিকোর মামা বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন। আমি নিঃসন্তান, একা। জিকো ছাড়া এ দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই। আমি ওকে নিয়ে যেতে চাই। এখন থেকে ও আমার সঙ্গেই থাকবে’।
    নীলাঞ্জনা কি বলবেন ভেবে পেলেন না। অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন—‘প্রমাণ কি, যে আপনিই জিকোর মামী?’
    ভদ্রমহিলা মুখে কিছু না বলে একটা বার্থসার্টিফিকেট এগিয়ে দিলেন। কোনও সন্দেহই নেই যে এটা জিকোরই বার্থসার্টিফিকেট! যেদিন ছোট্ট জিকোকে অনাথ আশ্রমের উঠোনে পেয়েছিলেন, সেদিন তার সঙ্গে একটা ছোট্ট চিঠি ও বার্থসার্টিফিকেটের একটা জেরক্সও ছিল। চিঠিটা জিকোর হতভাগিনী মা লিখেছিল। জানিয়েছিল যে সে নিরূপায়। জিকোর বাবা সামান্য বাস-ড্রাইভার ছিল। দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এখন এই ছোট্ট প্রাণটাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা বা সঙ্গতি হতভাগিনী মায়ের নেই! তাই সে বাচ্চাটাকে অনাথ আশ্রমে রেখে যাচ্ছে। শিশুটি যে মাতৃ-পিতৃপরিচয়হীন নয় তার প্রমাণস্বরূপ বার্থসার্টিফিকেটটাও রেখে গিয়েছিল।
    নীলাঞ্জনা বার্থসার্টিফিকেটটার সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। হ্যাঁ—জিকোর মায়ের সবকথাই সত্যি। সত্যিই দুর্ভাগা শিশুটি জন্মের আগেই পিতৃহীন। কিন্তু ওর মায়েরও কোনও খোঁজ পাওয়া গেল না! যে বস্তির ঠিকানা বার্থসার্টিফিকেটে ছিল সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন যে, ছ’মাস বাড়িভাড়া না দিতে পারার অপরাধে জিকোর মা কে বাড়িওয়ালা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এখন সে কোথায় আছে, কি করছে—আদৌ বেঁচে আছে কিনা—কেউই তা জানে না!
    নীলাঞ্জনা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। বরং ঈশ্বরের ইচ্ছাকেই নীরবে মেনে নিলেন। জিকো তাঁর অনাথ আশ্রমে আশ্রয় পেল!
    কিন্তু এখন এ আবার কি নতুন উপদ্রব! তিনি জিকোর ফাইল বের করে বার্থসার্টিফিকেটটা মিলিয়ে দেখতে দেখতে বললেন—‘প্রায় দশবছর পরে হঠাৎ ভাগনের কথা মনে পড়ল? এতদিন কি করছিলেন?’
    --‘এতদিন আমরা কেউ ওর খোঁজ পাইনি’। ভদ্রমহিলা আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন—‘জিকোর মামা বাচ্চাটার খোঁজ করতে ত্রুটি রাখেনি। এমনকি বোনের নামে মিসিং কমপ্লেনও লিখিয়েছিল। এই দেখুন তার কপি’। বলতে বলতেই তিনি একটা কাগজ টেবিলের উপরে রাখলেন। নীলাঞ্জনা আড়চোখে দেখলেন নিখোঁজ ব্যক্তির নামের জায়গায় জিকোর মায়ের নামই লেখা আছে বটে!
    --‘কিন্তু পুলিশও ওকে খুঁজে পায়নি...কে জানে, বেঁচে আছে কি না...!’
    বলতে বলতেই জিকোর মামী কেঁদে ফেললেন। নীলাঞ্জনা সহজে ভিজলেন না। কে জানে, অভিনয়ও হতে পারে! দশ লক্ষ টাকার জন্য যে কেউ একগঙ্গা মিথ্যে কথা বলতে পারে, কেঁদে গঙ্গোত্রীও ভাসাতে পারে।
    তিনি চোখ সরু করে তাকান—‘তা এতদিন পরে খোঁজ পেলেন কি করে?’
    জিকোর মামী কপালে হাত ঠেকালেন—‘ঈশ্বরের ইচ্ছা বলতে পারেন। আমি কয়েকদিন আগে এই অনাথ-আশ্রমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি ছেলের দিকে নজর পড়তেই চমকে উঠি! ওকে দেখতে অবিকল আমার নন্দাই—মানে জিকোর বাবার মত! তারপর আপনাদের পিওনের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি যে......!’
    পিওন কোনকাজে এঘরেই আসছিল। শেষকথাটা শুনে সে সুড়ুৎ করে কেটে পড়ল। এরপর যে নীলাঞ্জনা তার মুন্ডু চিবোবেন তাতে আর সন্দেহ নেই!
    --‘এই দেখুন জিকোর বাবার ছবি... ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ’।
    নীলাঞ্জনা এক মুহূর্ত চোখ বুলিয়েই আশ্বস্ত হলেন। যে কেউ এ ছবি দেখেই বুঝতে পারবে যে ইনি জিকোরই বাবা! অবিকল এক মুখ! সেই চওড়া কপাল, জোড়া ভুরুর নীচে ঝকঝকে চোখ! এমনকি থুৎনিতে কাটা দাগটা পর্যন্ত এক। জিকোর বাবার পাশেই এই ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, তার পাশে আরেক ভদ্রলোক। অন্য ভদ্রলোকটির ছবির উপরে হাত রেখে বললেন তিনি—‘ইনি জিকোর মামা’।
    নীলাঞ্জনা কয়েকমুহূর্ত ভাবলেন। প্রমাণ যদিও যথেষ্টই আছে, কিন্তু তবু নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না! তিনি একটু থেমে আস্তে আস্তে বললেন—‘দেখুন, নিয়ে যাবো বললেই তো নিয়ে যাওয়া যায় না। কিছু ফর্ম্যালিটি আছে। থানাকেও ইনফর্ম করতে হবে...’।
    বলতে বলতেই থেমে গেলেন তিনি। বাইরে থেকে একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ তাঁর কানে এসেছে। একটি মেয়েলি গলায় তীব্র প্রতিবাদ শোনা গেল—‘কেন আমায় আটকে রেখেছ! আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি...ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই! একবার আমায় ওর কাছে যেতে দাও...!’
    --‘এক্সকিউজ মি’।
    কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। সেখানে তখন চলছে আরেক খন্ডযুদ্ধ! এক মধ্যবয়স্ক মহিলা অনাথ আশ্রমে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। সিকিউরিটিরা তাঁকে বাধা দিয়েছে। ফলস্বরূপ ছোট খাটো হাতাহাতি চলছে। সিকিউরিটিরাও ছাড়বে না, আর মহিলাও ঢুকবেনই! এই অসম দ্বন্দ্বযুদ্ধের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালেন নীলাঞ্জনা। তাঁকে দেখেই মহিলা লাফ মেরে তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন—‘ম্যাডাম...ম্যাডাম...প্লিজ্‌ আমায় একটিবার জিকোর সঙ্গে দেখা করতে দিন...আমি অনেকদূর থেকে এসেছি,...অনেক আশা নিয়েছি ম্যাডাম...’।
    নীলাঞ্জনা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন—‘আপনি জিকোর সঙ্গে দেখা করতে চান? কি ব্যাপারে?’
    মহিলা হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন—‘আমি ওকে নিয়ে যাবো...আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি...’।
    তিনি বিস্মিত—‘নিয়ে যাবেন! মানে?’
    কান্নাজড়ানো কন্ঠে জবাব এল—‘ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ও আমার একমাত্র ভাগনে! আমি ওর একমাত্র মামী’।
    নীলাঞ্জনা স্তম্ভিত! তাঁর হাতে ধরা চশমাটা মাটিতে আছড়ে পড়ে দু টুকরো হয়ে গেল!

    ২.
    --‘দুজন দাবীদার অলরেডি হাজির হয়ে গেছে রাজা। আরও দু-একজন যদি ঐ একই দাবি নিয়ে হাজির হয়—তবে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না!’
    নীলাঞ্জনার কথা শুনে হেসে ফেলল অধিরাজ। পেশায় আই জি, সি আই ডি। তবে নীলাঞ্জনা তাদের পারিবারিক বন্ধু। দুঁদে সি আই ডি অফিসার ছোটবেলায় তাঁর কোলে পিঠে বিস্তর চড়েছেন। এখন তাকে হাসতে দেখে তাঁর ভুরু কুঁচকে গেল।
    অধিরাজ অতিকষ্টে হাসি সম্বরণ করে। সমস্যাটা মজাদার। অভিনবও বটে! তবে বলাইবাহুল্য যে নীলাঞ্জনার জন্য এটা মোটেই সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। তিনি বিরক্ত গলায় বললেন—‘দুই মূর্তীমতী আমাদের অনাথ আশ্রমে গত দুদিন ধরে জাঁকিয়ে বসে আছে। জিকোকে না নিয়ে কেউ যাবে না! আর আমি এভাবে ভগবানের নামে ছেলেটাকে ছেড়ে দিতে পারি না। আবার আটকেও রাখতে পারি না। ওদের দুজনের কাছে একই প্রমাণ আছে। তাছাড়া যেখানে আত্মীয় এসে ছেলেটাকে নিয়ে যেতে চাইছে সেখানে আমিই বা কি করে বাধা দিই বল্‌’!
    --‘বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না’। অধিরাজ মৃদু হাসল—‘জিকো নিশ্চয়ই ওর কোনও আত্মীয়ের সাথে বাড়ি যাবে। প্রশ্ন হল—কোন্‌ জন? একসাথে দুজন মামী এসে হাজির হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেল! দুজনের কাছেই যখন একই প্রমাণ আছে—তখন ধরে নিতে হবে যে একটা প্রমাণ জাল। সেক্ষেত্রে প্রমাণের মালকিনও জাল! আর এখানে ডি এন এ টেস্টও কিছু প্রমাণ করতে পারবে না’।
    ফরেনসিক এক্সপার্ট ডঃ অসীম চ্যাটার্জী এতক্ষণ চুপচাপ বসে গোটা ঘটনাটা শুনছিলেন। এবার আস্তে আস্তে বললেন—‘ইয়েস, ডি এন এ টেস্ট করার প্রশ্নই ওঠে না। মামীর সাথে ছেলেটার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই! তাই ডি এন এ টেস্টও ফেল পড়ল’।
    নীলাঞ্জনা কাতর দৃষ্টিতে অধিরাজের দিকে তাকান—‘তবে?’
    --‘যেখানে সায়েন্স ফেল মারে, সেখান থেকেই ফিলোজফির শুরু’। অধিরাজ মুচকি মুচকি হাসে—‘তোমার কি মনে হয়? তুমি নিজে একজন মা, কারুর পিসি, কারুর মামী। তোমার ফিলিংস কি বলে? ঐ দুজনের মধ্যে কোন্‌জন জিকোর আসল মামী হতে পারে? রাজা সলোমনের বিচার কি বলছে?’
    --‘বলা মুশকিল রাজা। এরা কেউ মা নয়, মামী’। নীলাঞ্জনা ব্যাজার মুখে বললেন—‘ দুজনেই ছেলেটাকে চকলেট, কেক-পিজা খাওয়ায়। দুজনেই অনাথ আশ্রমের রান্নাঘরে গিয়ে জিকোর জন্য স্পেশ্যাল রান্নার ব্যাপারে রাঁধুনিকে ইন্সট্রাকশন দেয়! ছেলেটার জ্বর হলে একজন ঠাকুরঘরে নির্জলা উপবাস করে পড়ে থাকে, আরেকজন ডাক্তার ডাকার জন্য উতলা হয়! কি করে বুঝি বল্‌ তো!’
    অধিরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তাই তো! মহা সমস্যা! এভাবে কি আসল নকলের প্রভেদ বোঝা যায়?
    --‘একে বলে অর্থমনর্থম! দশ লাখ টাকার লটারিটা না পেলে হয়তো এসব কিছুই হত না। যাই হোক্‌, পুলিশকে ওদের ঠিকুজি কুলুজী খতিয়ে দেখতে বলেছ?’
    --‘হ্যাঁ’। তিনি জানালেন—‘পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে। ওঁরা ওদের নিজেদের যা পরিচয় দিয়েছে, আই মিন সামাজিক পরিচয়—তাতে কোনও গরমিল নেই! কিন্তু তাতেও তো প্রমাণিত হয় না যে ওঁরা জিকোর মামী!’
    --‘তা হয় না’। অধিরাজ কিছুক্ষণ ভাবল—‘জিকোমাস্টার নিজে কি বলছেন?’
    --‘তাকে নিয়ে আরেক সমস্যা’। তিনি চিন্তাগ্রস্ত স্বরে বলেন—‘সে তো যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েই বসে আছে। তার বক্তব্য আরও অদ্ভুত! তার মতে, ওরা কেউ তার মামী নয়। ওরা অ্যাঞ্জেল! আই মিন, পরী! ওরা তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে!’
    ডঃ চ্যাটার্জী আড়চোখে অধিরাজের দিকে তাকালেন। অধিরাজের চোখ কয়েকমুহূর্তের জন্য চকচক করে উঠল! সে উত্তেজিত –‘এই উদ্ভট ধারণা ওর হল কি করে?’
    --‘ভগবান জানেন!’ নীলাঞ্জনা বললেন—‘এমনিতেই ছেলেটা একটু কল্পনাপ্রবণ। বন্ধুদের কাছে গল্প করে, ওর নাকি এক পরী বন্ধু আছে। সে প্রতিরাতেই নাকি আসে...এটসেট্রা এটসেট্রা...!’
    --‘তাই?’ সে সোজা হয়ে বসে—‘তুমি দেখেছ?’
    --‘কি?’
    --‘পরী?’
    --‘ফাজলামি হচ্ছে!’ এবার নীলাঞ্জনা রেগে গেলেন—‘আমি ভেবেছিলাম তুই হেল্প করবি। তা নয়, খালি ফোড়ন কেটে যাচ্ছিস্‌!’
    অধিরাজ হাসল—‘হেল্প তো করব বটেই। তবে আমার মনে হয় না খুব বেশি সময় লাগবে। আমি জাস্ট জিকোর সঙ্গে কয়েকটা কথা বলব। সেটা কি সম্ভব?’
    --‘নিশ্চয়ই!’
    নীলাঞ্জনার গাড়ি করেই অধিরাজ আর ডঃ চ্যাটার্জী লিট্‌ল অ্যাঞ্জেল্‌স্‌ অনাথ আশ্রমে গিয়ে হাজির। অনাথ আশ্রমের বাইরেটা চমৎকার করে সাজিয়েছেন নীলাঞ্জনা! একটা সাজানো গুছোনো সুন্দর বাগান যেন আশ্রমের রূপ আরও খুলে দিয়েছে! বাগানে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে মহানন্দে খেলে বেড়াচ্ছে। মেয়েরা যেন ছোট্ট পরী, আর ছেলেরা শিশু দেবদূত!
    নীলাঞ্জনা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন—‘বাইরে থেকে দেখলে খুব ভালো লাগে। কিন্তু ভেবে দ্যাখ্‌, এরা কতবড় দুর্ভাগা! মাথার উপরে মা-বাবার স্নেহের হাত নেই, নিশ্চিন্ত কোনও জীবন নেই! আপন বলতে কেউ নেই! ভাবলেই বুকের ভিতরটা কেমন হু হু করে!’
    অধিরাজ একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। অন্যমনস্কভাবেই জবাব দিল—‘হুঁ’। সে তখন নানা সম্ভাবনার কথা খতিয়ে দেখছে। সত্যিই কি দুজনের মধ্যে কেউ ঐ ছোট্ট ছেলেটার আত্মীয়? নাকি দশ লক্ষ টাকার লটারিটাই মূল উদ্দেশ্য! বলা যায় না, হয়তো ভুলিয়ে ভালিয়ে লটারির টাকাটা হাত করে ছেলেটাকে শিশু-ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিল! চাইল্ড ট্র্যাফিকিং যে হারে বাড়ছে, আর মনুষ্যত্ব যে হারে কমছে, তাতে কিছুই বলা যায় না! কাউকে বিশ্বাস নেই। একটা শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের উপর! খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে!
    হঠাৎ একটা চেঁচামেচির আওয়াজে চিন্তাসূত্র ভেঙে গেল অধিরাজের। দুজন উন্মত্ত মহিলা উঠোনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পরস্পরকে দোষারোপ করছেন! তাঁদের চিৎকারে কাক চিলও বসতে পারছে না!
    নীলাঞ্জনাকে দেখে দুজনেই উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এলেন। প্রথম ভদ্রমহিলা বেশ পৃথুলা! উত্তেজনায় থুতু ছেটাতে ছেটাতে বললেন—‘এই মহিলা আমায় খুন করতে চায়! আরেকটু হলেই আমায় মেরে ফেলত! এই দেখুন...!’
    ডঃ চ্যাটার্জী চোখ পিটপিট করে বলেন—‘রাজা, একটা মাস্ক নিয়ে এলে হত না? থুতু ছেটানোর চোটে চোখ মুখ যে ভিজে গেল!’
    অধিরাজ মুচকি হেসে তাঁর দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দেয়! তার দৃষ্টি তখন ভদ্রমহিলার কপালের দিকে নিবদ্ধ! তাঁর ডান কপালে মোক্ষম একটা আলু ফলেছে!
    --‘এই মহিলা একটু আগেই একটা উইকেট নিয়ে আমার মাথা ফাটাতে যাচ্ছিলেন! আমি ফাঁকা করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলাম—সেই ফাঁকেই...’ চোখ গোলগোল করে বললেন তিনি—‘ ভাগ্যিস আশেপাশেই লোকজন ছিল! তাই মেরে ফেলতে পারেন নি!’
    আরেক ভদ্রমহিলাই বা চুপ করে থাকবেন কেন! বিশেষ করে চুপ করে থাকা যখন মহিলাদের স্বভাবই নয়! তিনিও রোঁয়া ফুলিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে ওঠেন—‘আমি তোমাকে মেরেছি?’ তাঁর চোখ প্রায় তিন টাকা সাইজের রসোগোল্লার মত হয়ে গেছে—‘আর তুমি যে আরেকটু হলেই আমার গলায় ছুরি বসাচ্ছিলে! কি ভেবেছ? মুখে মুখোশ পরলেই আমি তোমায় চিনতে পারবো না!’ বলতে বলতেই তিনি উপস্থিত ভদ্রমন্ডলীর দিকে ফিরলেন—‘জানেন, যেই না টয়লেট থেকে স্নান করে বেরিয়েছি, অমনি লাফ মেরে ছুরি হাতে আমায় মারতে এসেছিল! এই দেখুন ডানহাতটা কতটা কেটে গেছে! আমি চিৎকার করে উঠতেই পালিয়ে গেল! অসভ্য খুনী কোথাকার!’
    --‘মুখোশ আমি পরেছি!’ প্রথম ভদ্রমহিলা আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন—‘মুখোশ তো তুমি পরেছিলে!’
    অধিরাজ বিড়বিড় করে—‘লেগে গেছে! তুই বিড়াল না, মুই বিড়াল!’
    ডঃ চ্যাটার্জী টেনিস খেলা দেখার মত একবার এই মহিলা, আরেকবার ঐ মহিলার দিকে তাকাচ্ছিলেন। তাঁর মুখে চিন্তিত ভাব!
    নীলাঞ্জনা কোনমতে দুই মহিলাকে শান্ত করেন। শান্ত কি আর সহজে হতে চান তাঁরা! শেষমেষ ‘দেখে নেবো’ গোছের একটা চাউনি ছুঁড়ে দিয়ে দুজনেই গর্‌গর্‌ করতে করতে চলে গেলেন।
    --‘কি বুঝলেন ডক্‌?’ অধিরাজ ডঃ চ্যাটার্জীর দিকে তাকায়।
    --‘মহিলা দুজনেই সত্যি কথা বলছে!’ তিনি বিড়বিড় করেন—‘প্রথম মহিলার ডান কপালে চোট লেগেছে। দ্বিতীয় মহিলার ডান হাতে। আমার ইনট্যুইশন বলছে—এ কোনও লেফ্‌ট হ্যান্ডারের কাজ! অথচ দুই মহিলার মধ্যে কেউই লেফট হ্যান্ডার নন্‌! অর্থাৎ থার্ড পার্টি আছে! তৃতীয় কেউ—যে দুজনকেই আক্রমণ করেছে!’
    --‘থার্ড পার্টি!’ অধিরাজের কপালে ভাঁজ পড়ে—‘তৃতীয় মামীর আবির্ভাব হতে পারে বলছেন!’
    ডঃ চ্যাটার্জী সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলেন—‘অসম্ভব নয়!’
    নীলাঞ্জনা ধরা গলায় বললেন—‘সর্বনাশ!’

    ৩.
    জিকো ভারি মিষ্টি ছেলে। মাথায় কদমছাঁট। কান দুটো খাড়া খাড়া। চোখে সপ্রতিভ দুষ্টুমি ঝকঝক করছে। অধিরাজ চকলেট দিয়ে, আদর করে কয়েকমুহূর্তের মধ্যেই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলল। ফুটবল, ক্রিকেট—নানা প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে আসল প্রসঙ্গে চলে এল সে। আস্তে আস্তে বলল—‘আচ্ছা জিকো, তুমি তোমার কোন্‌ মামীকে বেশি ভালোবাসো? মোটা মামীকে না রোগা মামীকে?’
    জিকো মাথা নাড়ল—‘ওরা তো অ্যাঞ্জেল! আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলেছে’।
    --‘কে বলেছে সোনা?’
    --‘তুমি জানো?’ অধিরাজের কোলে উঠে বসল জিকো—‘একটা পরী রোজ আমার ঘরে আসে। আমার ঘরে ঘুরে বেড়ায়। ঘর গুছিয়ে দেয়! আমার যখন অসুখ করে তখন মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়! সেই পরীটাই বলেছে...’। জিকোর চোখ স্বপ্নালু হয়ে যায়—‘মা তো অনেকদূরে চলে গেছে। দূর থেকে আমায় দেখে, আর কাঁদে! পরী আমায় বলেছে, ও আমায় একদিন এসে নিয়ে যাবে! মায়ের কাছে পৌঁছে দেবে’।
    অধিরাজের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল। সে মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করে—‘তুমি পরীটাকে দেখেছ? কেমন দেখতে?’
    --‘আমি দেখিনি। ও তো রাতে আসে। তখন সব আলো বন্ধ থাকে। অন্ধকারে দেখব কি করে?’
    --‘হুঁ’। অধিরাজ চিন্তিত মুখে বলে—‘তাই তো!’
    সে আর কথা না বাড়িয়ে জিকোর সাথে বেশ কিছুক্ষণ খোশগল্পে মেতে উঠল। তার ড্রয়িংবুকে আবদারমত গরু, ছাগল, মানুষ, ভূত-পেত্নী এঁকে তাকে সন্তুষ্ট করল। তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে অনাথ আশ্রমের কর্মীদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলল। অনাথ আশ্রমের রান্নার মেয়ে শেফালি বলল—‘জিকোর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন? ভারি পাজি ছেলে!’
    অধিরাজ মুচকি হাসে—‘পাজি কোথায়? ভারি মিষ্টি ছেলে। কত গল্প করল!’
    --‘পরীর গল্প শুনিয়েছে?’ শেফালি হাসতে হাসতে বলে—‘আমাদের সবার তো কান ঝালাপালা করে দিল! পরী এই করেছে...পরী সেই করেছে...কত কি!’
    অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার ভার যাঁর উপরে, সেই কল্পনা দিদিমনির বেশ ভারিক্কি চেহারা! মুখটাও ভীষণ রুক্ষ। খরখরে স্বরে উত্তর দিলেন—‘বাচ্চারা অনেকেই এমন ইম্যাজিনারি ফ্রেন্ড বানায়। তা নিয়ে তোমার হাসির কিছু নেই!’
    দাবড়ানি খেয়ে শেফালি মুখ কাঁচুমাচু করে চলে যায়। একটু পরেই উচ্চস্বরে তার চিৎকার শোনা গেল। বাচ্চারা ফুটবল খেলছে। আর সে লাফাতে লাফাতে কমেন্ট্রি দিচ্ছে!
    অধিরাজ হেসে ফেলে—‘ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার!’
    কল্পনা বিরক্তিসূচক মুখ করেন—‘এসব মেয়েদের দিয়ে কাজ হয় না! ভীষণ কেয়ারলেস!’
    ডঃ চ্যাটার্জী ভদ্রমহিলাকে একদৃষ্টে দেখছিলেন। মহিলার মুখের মধ্যে স্নেহের কোমলভাব ছিটেফোঁটাও নেই! কথাবার্তাতেই বোঝা যায় অসম্ভব জাঁদরেল! হঠাৎ করেই তিনি প্রশ্ন করে বসলেন—‘এক্সকিউজ মি, কিছু মনে করবেন না—আপনি কথা বলার সময় বাঁ হাতটাই বেসি নাড়ছেন। বাই এনি চান্স, আপনি কি লেফট্‌ হ্যান্ডার? মানে বাঁ হাতে কাজ করেন?’
    কল্পনা হকচকিয়ে গেলেন—‘অ্যাঁ? হ্যাঁ...মানে...!’
    ভদ্রমহিলার অপ্রস্তুত ভাবকে অধিরাজ সামাল দিয়ে দেয়—‘আপনি তো সবসময়ই বাচ্চাদের উপর নজর রাখেন। জিকোর ঘরে রাত্রে কখনও কাউকে ঢুকতে দেখেছেন?’
    --‘না’। কল্পনার পাথরকঠিন মুখ বেয়ে নিস্পৃহ শব্দ বেরিয়ে এল—‘আপনি জিকোর কথায় কান দেবেন না। ছেলেটা ভীষণ বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে!’
    বাইরে বেরিয়ে এসে ডঃ চ্যাটার্জী হাঁফ ছাড়লেন—‘বাপ্‌রে! কি ভয়ঙ্কর মহিলা! দেখলেই মনে হয় তেড়ে এসে কামড়ে দেবেন!’
    অধিরাজ হাসল—‘বাদুড় বলে ওরে ও ভাই সজারু, আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু...!’
    তিনি ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ করে তাকিয়ে থেকে বললেন—‘আচমকা কবিতা আওড়াচ্ছ কেন? সমস্যার তো কিছুই সমাধান হল না!’
    --‘হবে। আজকে রাতে’। সে হাসছে—‘ দশ লাখ টাকার লোভ কম কথা নয় ডক্‌! আজ রাতেই ছুপা রুস্তম বেরুবেন!’
    --‘এর মধ্যে আবার ছুপা রুস্তম এল কোথা থেকে?’ ডঃ চ্যাটার্জী মহা বিরক্ত—‘তুমি মাঝে মাঝে বড় হেঁয়ালি করো! এত হেঁয়ালি বুঝি না বাপু!’

    ৪.
    --‘আপনাদের একটা কথা বলার আছে...’। গম্ভীর মুখে নীলাঞ্জনা উপস্থিত দুই মহিলার দিকে তাকালেন। দুই মহিলাই বেশ নার্ভাস। বারবার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন।
    নীলাঞ্জনা তাঁদের চোখে চোখ রেখে বললেন—‘ আপনাদের মধ্যে কেউ একজন জিকোকে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ওর পাওয়া লটারির টাকাটা জিকো অনাথ আশ্রমকেই দান করবে। বুঝতেই পারছেন, অনাথ আশ্রমের খরচখরচাও তো কম নয়। তাছাড়া এতদিন ওর সমস্ত দায়িত্ব আশ্রমেরই ছিল। তাই জিকো সমস্ত টাকাটা অনাথ আশ্রমকেই ডোনেট করতে চায়’।
    দুই মহিলা ফের পরস্পরের দিকে তাকালেন। প্রথমজনের চেহারা মেদবহুল হওয়ায় বড় বেশি ঘামেন। রুমালে মুখ মুছে বললেন—‘এটা কি জিকোর সিদ্ধান্ত? ঐটুকু বাচ্চা কি করে বুঝবে টাকার প্রয়োজনীয়তা কি?’
    দ্বিতীয়জন বললেন—‘হ্যাঁ, তাছাড়া ওর পড়াশোনার খরচ আছে। যদি হায়ার স্টাডিজের জন্য দরকার হয়?’
    নীলাঞ্জনা মনে মনে হেসে বলেন—‘সেজন্য তো আপনারা আছেন! জিকো ছাড়া তো আপনাদের আর কেউ নেই! এখন ওকে মানুষ করে তোলার দায়িত্ব আপনাদের। যা খরচ পড়বে তা আপনারা দেবেন। দেবেন না?’
    প্রথম মহিলা ফের রুমালে মুখ মোছেন—‘নিশ্চয়ই...নিশ্চয়ই। তাতে কোনও অসুবিধে নেই। জিকো যেমন চায় তেমনই হবে। আমার কোনও আপত্তি নেই’।
    দ্বিতীয় মহিলাও বললেন—‘অফকোর্স! লটারির টাকাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়! ও আপনারাই রেখে দিন! আমায় শুধু জিকোকে দিয়ে দিন। আমার যতটুকু ক্ষমতা সেটুকু দিয়েই মানুষ করবো ওকে। চাই না টাকা!’
    --‘ঠিক আছে’। নীলাঞ্জনা বললেন—‘তাহলে কালকেই সমস্ত ফর্ম্যালিটি সেরে নেওয়া যাক। আপনারা দুজনে উইটনেস থাকবেন। আমাদের সলিসিটরকে বলে দিয়েছি। কালই আসবেন তিনি...!’
    দুজন মহিলাই সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে চলে গেলেন। নীলাঞ্জনা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এমন মোক্ষম অস্ত্রটাও বিফলে গেল! ভেবেছিলেন, টাকা না পেলে হয়তো নকল মামীটি চম্পট দেবেন। কিন্তু সে সম্ভাবনাও জলে গেল! দুজনই টাকাটা হাতছাড়া করতে রাজি! তাহলে? এখন কি করবেন?
    তিনি ভাবতে ভাবতেই করিডোর ধরে এগোচ্ছিলেন। অনাথ আশ্রমের বাচ্চারা সব শুয়ে পড়েছে। তাদের ঘর অন্ধকার। আটটা বাজতে না বাজতেই তারা রাতের খাবার খেয়ে নেয়। তারপর কল্পনার কড়া নির্দেশ মেনে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। এই নিয়মই চিরদিন চলে আসছে। নীলাঞ্জনা ঘড়ির দিকে তাকালেন। এখন রাত ন’টা। অফিস বন্ধ করার সময়...!
    --‘হ্যান্ডস্‌ আপ্‌!’
    আচমকা ঘাড়ের কাছে শীতল অথচ ধাতব স্পর্শ অনুভব করে চমকে গেলেন তিনি! বিদ্যুৎবেগে পিছনে ফিরলেন! তাঁর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই বন্দুকধারী! বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দেখলেন—তাদের মুখে কালো মুখোশ!
    --‘একদম চালাকি নয়!’ হিসহিসিয়ে বলল একজন। নিষ্ঠুরভাবে কেটে কেটে উচ্চারণ করল শব্দগুলো—‘বেশি মগজ খাটালেই স্রেফ উড়িয়ে দেব!’
    নীলাঞ্জনা কাঁপছিলেন। কোনমতে বললেন—‘ক্ক...কে আপনারা? কি চান?’
    এবার দ্বিতীয়জন মুখ খুলল—‘লটারির টাকাটা কোথায়? কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন? এত সহজে হাতছাড়া হতে দেব? বের করুন!’
    --‘কিন্তু জিকো টাকাটা অনাথ আশ্রমকে ডোনেট করেছে...!’
    --‘যত ফালতু কথা!’ প্রথম দুর্বৃত্ত রিভলবারটা তুলে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করল! কান ফাটানো একটা শব্দ! পরক্ষণেই যেন অনাথ আশ্রমে হৈ চৈ পড়ে গেল! ছুটে এল কর্মীরা! বাচ্চারা ঘুমভাঙা বিস্ময়ে নিজেদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে! ছুটে এসেছেন জিকোর দুই মামীও!
    --‘টাকাটা বের করুন!’ মুখোশধারী ততক্ষণে ভিড়ের মধ্যে জিকোকে দেখতে পেয়েছে। তার দিকে বন্দুক তাক করে বলল—‘নয়তো এর পরের গুলিটা ওর খুলিতে ঢুকবে!’
    কল্পনা নীলাঞ্জনার দিকে তাকালেন—‘টাকাটা দিয়ে দিন ম্যাডাম...নয়তো ওরা জিকোর ক্ষতি করবে...!’
    --‘চোপ!’ দ্বিতীয় বন্দুকধারী কল্পনার দিকে বন্দুক তাক করে—‘একদম চুপ!’
    প্রথম মহিলা চেঁচিয়ে উঠলেন—‘আমি তোমায় স্রেফ টাকাটা চুরি করতে বলেছিলাম শম্ভু! কিন্তু এভাবে বন্দুক দেখিয়ে ডাকাতি...!’
    শম্ভু নীলাঞ্জনার পিওন। একমুহূর্তে সব পরিষ্কার হয়ে গেল তাঁর কাছে! অর্থাৎ এই নকল মামীটিকে শম্ভুই আমদানি করেছে! অফিস থেকে জিকোর ডিটেল্‌স্‌ চুরি করে সমস্ত জাল প্রমাণ সাজিয়েছে সে! দশ লক্ষ টাকার লোভে এখন বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে!
    তিনি মুখ শক্ত করে বললেন—‘না! ও টাকাটা আমি দেবো না!’
    দ্বিতীয় মামী কল্পনাকে বললেন—‘এসব কি হচ্ছে? তুমি তো কথা দিয়েছিলে যে টাকা বেহাত হবে না!’
    --‘চুপ!’ দুষ্কৃতী চেঁচিয়ে উঠল—‘শীগ্‌গিরি টাকাটা বের করুন। নয়তো এ ছেলেটার লাশ ফেলে দেবো...!’
    --‘না’। নীলাঞ্জনা দৃঢ় স্বরে বললেন—‘যা করার করো। যত খুশি ভয় দেখাও। কিন্তু টাকা আমি দেবো না!’
    --‘তবে রে!’
    দুষ্কৃতীর রিভলবার জিকোর দিকে ফণা তুলে আছে! সবাই বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখল ট্রিগারে তার আঙুল চেপে বসেছে। পরক্ষণেই আবার একটা কান ফাটানো শব্দ!
    মুহূর্তের ভগ্নাংশে কি ঘটল ঠিক বোঝা গেল না! এক নারী পাগলের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল জিকোর উপরে। তাকে জড়িয়ে ধরে বুলেটের আঘাত থেকে আড়াল করল ঠিকই...কিন্তু বুলেটটা লাগল তার নিজের বুকে! মেয়েটি প্রচন্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ল মেঝের উপর!
    --‘শম্ভু...!’ প্রথম মামী চেঁচিয়ে উঠলেন—‘এ কি করলে!...অ্যাঁ!...মেরে ফেললে!’
    কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপ! স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে মুখোশধারীর দিকে। কয়েকমুহূর্ত কোনও কথা নেই! সবার নিঃশ্বাস দ্রুত...হৃৎস্পন্দন দ্বিগুণ...! কি হল! চোখের সামনে একটা খুন হয়ে গেল! না এটা দুঃস্বপ্ন!
    পরক্ষণেই একটা জোরদার অট্টহাসি!
    বন্দুকধারী দুষ্কৃতী জোরে হেসে উঠল—‘কেউ মরেনি। আমি শম্ভু নই ঠিকই! তবে খুনের অভিযোগে না হলেও জালিয়াতির অভিযোগে আপনারা দুজনেই হাজতে যাবেন! দুই জোড়া জালিয়াত! আপনি ও শম্ভু! এবং কল্পনাদেবী ও দ্বিতীয় মামী। তাই না?’
    নীলাঞ্জনা হতবাক স্বরে বলেন—‘রাজা, তার মানে দুজনেই জাল!’
    --‘একশো শতাংশ বিশুদ্ধ জালিয়াত!’ মুখোশ খুলতেই অধিরাজের হাসিমুখ বেরিয়ে পড়ল। অন্য দুষ্কৃতীটি ডঃ চ্যাটার্জী। অধিরাজ হাসতে হাসতে বলল—‘যেমন শেফালীদেবী! সলোমনের বিচারে শেষমুহূর্তে প্রমাণ করে দিলেন যে তিনি একশো শতাংশ বিশুদ্ধ জিকোর মা!’
    শেফালী জিকোকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। তার দিকে তাকিয়ে বলল সে—‘ইনিই হচ্ছেন জিকোর পরী—যিনি রাত্রে ওর ঘরে ঢুকে ছেলেকে আদর করেন, ঘর গুছিয়ে দেন। এবং মা ও বটে। ইয়ে...শেফালীদেবী। উঠে পড়ুন। ওটা নেহাতই রাবার বুলেট ছিল!’
    শেফালী আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। অধিরাজ বলে—‘প্রথম থেকেই আমার পরীর ব্যাপারটা মনে স্ট্রাইক করেছিল। এত কিছু থাকতে জিকো পরীবন্ধু পাতাবে কেন? স্পাইডারম্যান কিম্বা সুপারম্যানও ওর ইম্যাজিনারি ফ্রেন্ড হতে পারত। তবে কি সত্যিই রাতের বেলা কোনও মহিলা ওর ঘরে ঢোকেন? কেন? তখনই সন্দেহ হয়েছিল, বাই এনি চান্স—জিকোর মা ও এখানে উপস্থিত নয়তো? ধারণাটা আরও পাকা হল—যখন দুই নকল মামীর উপরে উনি হামলা চালালেন! তখন মনে হল—কেউ একজন চায় না যে এই দুই মহিলার কেউ জিকোকে নিয়ে যাক্‌। আর জিকোর সাথে কথা বলার পর নিঃসন্দেহ হলাম, সেই পরী আর কেউ নয়, জিকোরই মা! নয়তো ছেলের যত্ন নিতে, অসুস্থতার সময়ে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে আর কে—ই বা আসবে?’
    শেফালী তখনও কাঁদছে। নীলাঞ্জনা বললেন—‘তুই কি আগেই বুঝতে পেরেছিলি যে ও—ই জিকোর মা?’
    --‘হ্যাঁ’। অধিরাজ হাসল—‘আজ সকালে যখন এলাম তখন লক্ষ্য করেছিলাম উনি বাচ্চাদের ফুটবল খেলার চমৎকার কমেন্ট্রি দিচ্ছেন! মহিলারা ক্রিকেট তবু বোঝেন। কিন্তু ফুটবল সব মহিলা এত ভালো বোঝেন না! তার থেকেই বুঝেছিলাম উনি ফুটবল খেলার ভক্ত! আর জিকো নামটাও একজন বিখ্যাত ফুটবলারের! মা এমন ফুটবলভক্ত হলে ছেলের নাম যে জিকো হবে তাতে আশ্চর্য কি! তাছাড়া কমেন্ট্রি দেওয়ার সময় উনি মাইক্রোফোন ধরার মত করে বাঁ হাতটা মুখের কাছে ধরেছিলেন। অর্থাৎ উনি বাঁ হাতি! সব মিলিয়ে তাহলে কি দাঁড়াল? উনিই জিকোর পরী, উনিই সেই হামলাকারী, যিনি ছেলের অশুভ আশঙ্কায় জাল মামীদের তাড়াতে চেয়েছিলেন—এবং সবশেষে ছেলের মৃত্যুকে নিজের বুকে নিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে উনিই জিকোর মা!’
    শেফালী চোখ মুছল—‘আপনি এভাবে ধরে ফেলবেন আমি বুঝতে পারিনি। সত্যিই আমিই জিকোর মা! ওকে অনাথ আশ্রমে ফেলে রেখে যেতে আমার মন চায়নি। ওকে ছেড়ে থাকতেও পারিনি। কিন্তু ছেলেকে মানুষ করার ক্ষমতা ছিল না। তাই মাসখানেক পরে এখানেই ছদ্মনামে রাঁধুনীর চাকরি নিয়ে ফিরে এলাম। কিন্তু লজ্জায় কাউকে নিজের পরিচয় দিতে পারিনি। জিকোকে চোখে চোখে রাখতাম! একটু টাকা জমাতে পারলেই বলতাম যে আমি ওর মা...!’
    --‘এখন তো আর কোনও বাধা নেই!’ নীলাঞ্জনা বললেন—‘লটারির টাকায় তুমি ভালোভাবে জিকোকে মানুষ করে তুলতে পারবে’।
    --‘আসলে লটারির টাকাটাই ওর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট’। অধিরাজ বলল—‘লটারিটা না পেলে জালিয়াতিটাও হত না। আর জালিয়াতি না হলে জিকো ওর জীবনের সবচেয়ে বড় লটারির পুরষ্কারটাও পেত না!’
    --‘সবচেয়ে বড় লটারি!’ ডঃ চ্যাটার্জী হাঁ—‘সেটা আবার কখন পেল?’
    --‘এই যে। এই মাত্র!’ অধিরাজ হাসল—‘জিকোর সবচেয়ে বড় পুরষ্কার ওর মা! এর থেকে বড় আর কিছু নেই!’
    শেফালীর চোখে জল। জিকো তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
    দৃশ্যটা দেখে নীলাঞ্জনার চোখও ছলছল করে ওঠে!

    (কিশোর ভারতী বৈশাখী সংখ্যায় প্রকাশিত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ | ২২৯১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    গরল - Sayantani Putatunda
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 132.167.125.133 (*) | ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৩:১৬46493
  • সায়ন্তনী, চমৎকার!
  • সিকি | 132.177.215.64 (*) | ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:১২46494
  • ওরেবাবা। এ তো দম ফেলতে দেয় না! একদিনে অত লেখা পড়া যায় নাকি?
  • Blank | 69.93.245.108 (*) | ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:৪৪46495
  • সুন্দর
  • khilli | 131.241.218.132 (*) | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:০৭46496
  • ভালো লেগেছে
  • Sayantani Putatunda | 132.161.128.184 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:২৯46497
  • দারুণ । এমন লেখা আরো চাই।
  • kumu | 69.178.45.6 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:৪৪46498
  • চমৎকার লাগল।
  • Bhagidaar | 218.107.71.70 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:৪৭46499
  • টাইটেল টা পড়ে সালমান খান এর ব্যাপারে কিছু ভেবে বুকমার্ক করে রেখেছিলাম। পড়ে দেখলাম তা নয়। কিন্তু এটা বেশ ভালো লাগলো।
  • de | 190.149.51.68 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৪৬46500
  • ভালো লাগলো!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন