ভোট পর্যালোচনা- ২০১৯, পশ্চিমবঙ্গ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ মে ২০১৯ | ১৬৮৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৬২
বিশ্বায়নের আগে আমরা মণিমেলা দেখেছি, বিজ্ঞান জাঠা দেখেছি, এমন কী পাড়ার ক্লাবগুলোর সক্রিয়তা দেখেছি। এখন সেই জায়গায় পোটেনশিয়াল অর্গানাইজাররা অর্কুট-ফেসবুক-টিন্ডার-হোয়াটস অ্যাপ করেন। ফলে সামাজিক পরিসরে সংগঠন ডুবে গেছে, সংঘের আলো উজ্জ্বল হয়েছে। হালে সরস্বতী বিদ্যামন্দির লোকের চোখে টোখে পড়ছে, কিন্তু সক্রিয়তা এক মাত্রায় বহুবছর ধরে থেকেছে। এই দিয়ে ভোটে জেতার সবটা হয়েছে মনে হয় না, কিন্তু কিছুটা হয় নি এমন নিশ্চয়ই নয়। সঙ্ঘারামে নিশ্চিতভাবে সংগঠনের ভিতপুজো হয়েছে। তাহলে বাকি থাকে সংগঠন। একটি সংগঠন ভালো চললে তার ভোট বাড়ে। বিশেষতঃ নতুন খেলতে নামা দল জেতে আর পুরোনো দল হারে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরওয়ার্ডের অর্গানাইজেশনের তারতম্য ঘটিয়েই।
বাংলায় কি সতীদাহের প্রচলন ছিল? : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৯ | ৫৩৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল সতী রেগুলেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক। উক্ত আইন বলে কোম্পানির আওতায় থাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত অঞ্চলে সতীদাহ নিষিদ্ধ এবং সতীদাহে সাহায্য করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই সময় এই প্রেসিডেন্সির আওতায় মূলতঃ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল ছিল। উক্ত অঞ্চলগুলিতে বিগত কয়েক বছরে সালপ্রতি প্রায় ৬০০ সতীদাহ হয়েছিল। বেন্টিঙ্ক ১৮২৯-এর এক রিপোর্টে লিখছেন সে বছর নথিভুক্ত ৪৬৩ জন সতীর মধ্যে ৪২০ জন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এবং তার মধ্যে ২৫০ জনের বেশি কলকাতা-বিভাগের। লক্ষ্যণীয়, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহের সংখ্যা এর থেকে অনেক কম ছিল। এবং এই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা-বিভাগে সতীদাহের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা বা বেনারসের থেকে দশগুণের বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ উইলিয়াম কেরির রিপোর্ট, যেখানে তিনি বলছেন ১৮১৫ থেকে ১৮১৮-র মধ্যে এই এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল। এবং সাধারণ ধারণার উল্টোদিকে দেখা যায় সতীদের মধ্যে অধিকাংশ মোটেই ব্রাহ্মণ নয় বরং ১৮২৩ সালের রিপোর্টে ৫১% জাতিতে শূদ্র।
ঘরবাড়ি ভালা না আমার : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৫ এপ্রিল ২০১৬ | ১৩০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
– ‘জিগেশ করছিলে না? কী করে বাঁচিয়ে রাখি? বড় মায়া দিয়ে বাবু। মায়া না থাকলি এ দুর্যোগে কিছুই রাখা যায় না। ঐ কচিগুলো, এত নেওটা আমার, এত মায়া যে ছাড়ি যেতি দিলাম না। এই মাঠও তাই। তোমাদের ফেলাট বানানোর গর্ত রোজ এসে গিলে ফেলতি চায় এই জমি। খুরপি নিয়ে লড়াই করি বাবু, মায়া দিয়ে আটকে রাখি যেটুকু জমিজমা পারি। আবার হেরে যাই যখন সব গর্তে ঢুকি যায়। রাবিশের নিচে ঢেকে যেতি থাকে বীজতলা, চার, ফসল সব। আবার খুরপি দিয়ে খুঁচোই। ফিরিয়ে আনি কিছু। লড়াই চলে গো বাবু। আমার ছেলেগুলো কই গেল দেখি! ’
‘ভাষাই পরম আলো’- শ্রী কলিম খান (১৯৫০-২০১৮) : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১২ জুন ২০১৮ | ৩১৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কলিম খান যে কাহিনি আমাদের সামনে ন্যারেট করলেন, তা পাঠককে আবিষ্ট করে রাখল ঘটনাজালে। এখানে আরও একটা সূত্র এসে যায়, কলিম খান মার্ক্সিস্ট। বলতে গেলে ধ্রুপদী মার্ক্সিস্ট, যিনি ভারত-ইতিহাস লিখতে গেলেও সামন্ততন্ত্র শব্দটা লিখে ফেলেন। ফলে তিনি দেখালেন ইতিহাস আসলে অর্থনীতিও। আর, মহাভারত-রামায়ণ-পুরাণ ধরে তাঁর নির্মিত ইতিহাসব্যাখ্যা দেখাতে থাকল পুঁজি আর শ্রমসম্পর্কের বিবর্তনের একটি সম্ভাব্য ধারা। যা সচরাচর আমাদের পাঠে আসে না।
যিনি কলিম খান পাঠ করেছেন, তিনি ‘সচরাচর’ শব্দটি লেখার পর ভাবতে বসবেন আসলে তিনি কী লিখেছেন। শব্দের স্মৃতিতে যে ইতিহাস, তা ব্যবহারিক অর্থেই বক্তাকে সেই ইতিহাসের অংশ করে দেয়। যেমন ধরুন যে মানুষটা বলেন যে তিনি চাষবাস করে খান, তিনি আসলে এও বলে ফেলেন যে তিনি খাওয়ার জন্যে শুধু চাষ করেন না, বাসও করেন। কৃষি না করলে বনচারী যাযাবর উপজাতির লোক গৃহস্থ হত না। তার গৃহে স্থিত হওয়ার দরকারই ছিল না। শব্দের আলো এইভাবে লোকসমাজের স্মৃতির মধ্যে জ্বলে, সূর্যের মতই অজান্তেই আলো দিয়ে যায়।
জিনে ডাকাতি : ক্লদ আলভারেস, অনুবাদকঃ সীতাংশু চক্রবর্তী ও সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২৪৯০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
ভারতেও অবস্থাটা ছিল একই রকমের ভয়ঙ্কর। ডঃ রিচারিয়ার প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেল। বিশিষ্ট ধান উৎপাদনকারীদের একটি টাস্ক ফোর্স লক্ষ্য করেন যে “উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রচলন গাল মিজ, বাদামি শোষক পোকা, পাতা মারা পোকা, হোর ম্যাগট প্রভৃতি ক্ষতিকর পোকার চরিত্রে পরিবর্তন আনে। বেশিরভাগ বাজারে আসা উচ্চ ফলনশীল জাতের মেজর পেস্ট দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে যাতে করে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ অবধি ফসলের ক্ষতি হতে পারে।” বেশিরভাগ উচ্চ ফলনশীল জাত তৈরী হয়েছে টি এন ১ ও আইআর ৮ থেকে এবং সেজন্যই বেঁটে করার জিন ডিজিওগেন বহন করে। এই ক্ষুদ্র জিন ভাণ্ডার বিপজ্জনক রকমের সমরূপতা সৃষ্টি করে পেস্ট ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছিল। বাজারে আসা বেশিরভাগ জাতই উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো জমি, যেগুলি একত্রে দেশের মোট ধান জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ, সেই ধরনের জমির পক্ষে উপযুক্ত নয়।
সিঁড়িতে : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ১০৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
শিল্পী ছিল সুজয়ের বোন। সুজয় তখন যুবা করত। যুব কংগ্রেস। পাড়ার বিরাট মস্তান আর শিল্পীর পিছনে পরে গ্যালো আমাদের রমেন। রমেনরা তখন সর্দারপাড়ার দিকে বস্তিতে থাকে। উদ্বাস্তু বাড়ির দুর্দশা যেরকম হয়– বাবা মারা গ্যাছেন, ভাইগুলো ইস্কুলেও বোধহয় যায় না, তিনটে বোন আর রমেন নাকি প্রেমে পড়ে গেল! সুজয়ের বাবা রমেনদের বস্তিতে এসে চোটপাট করে গেলেন। সেই বস্তি আবার তখন কমিউনিস্ট পার্টির বেস, উলটে সব রুখে দাঁড়াল। এরপর সুজয় কেসটা হাতে নেয়।
সেদিন আমরা ফিরছিলাম ময়দানে খেলা দেখে। লিগ ম্যাচ, ফোকটে টিকিট জোগাড় করে দিয়েছিল কেউ। মেন লাইনের ট্রেনে বেলঘড়িয়া নেমে হেঁটে ফিরতাম আমরা। দু তিনদিন আগে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। বড় রাস্তায় বোধ হয় জল জমে থাকত, তাই নিমতা বাজারের থেকে ভেতরের পথ দিয়ে ফিরছিলাম। ব্যাপারটা যে পার্টির ঝামেলায় চলে গ্যাছে সেই ধারণাটাই ছিল না আমার।
ভারতের খোঁজে : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৫ | ২৭৩৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৫
ভারতকে খুঁজে পাই ছ'বছরের কিছু বেশি আগে, যখন সদ্য অ্যামেরিকা এসেছি। অক্সিজেনের ঘাটতি না হলে সেটা যে ছিল টের পাওয়া যায় না, আমার ভারতে পাওয়াও কিছুটা ওরকম। ভৌগোলিক ভারতবর্ষে থাকতে মনেপ্রাণে উপলিব্ধি করতাম, কলকাতাটাই আমার দেশ। বাকি এলাকাগুলো পাসপোর্ট-ভিসাহীন বিদেশ, আসলে দেশ আর ঘরের পার্থক্য বুঝিনি। যাই হোক, সেই পার্থক্য নিরূপণের জন্য এ লেখা নয়, তবে দেশ মানে কেবল ঘুম থেকে দাঁত মাজতে মাজতে পাড়া ঘোরার আরামটুকুই নয়, সেটাই হয়তো বাকি লেখায় বোঝার চেষ্টা করবো। অ্যামেরিকায় এসে যেটা খেয়াল করতে শুরু করি, যে, এদেশের বৈভব ও বিস্তারে আমার কোনও অধিকার নেই। অধিকার নেই আমার কলেজ যাওয়ার রাস্তার গা ছমছমে অঞ্চলটায় কেন পুলিশ থাকেনা জিজ্ঞেস করার কিম্বা সিম্পলি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ম্যাগাজিন হক করার। ভারতে এসব বললেও হাইলি কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পাত্তা দেবেনা, কিন্তু বলবার/করবার অধিকারটুকু আছে- এই অধিকার থাকা আর না থাকার বোধ একটাভাবে নিজের জীবনচর্যাটায় পার্থক্য এনে দিচ্ছিল- দেখছিলাম, সত্যিই বিদেশে আছি। কিন্তু এ গল্প দেশ ও বিদেশের, মহাভারতের নয়; তবে হয়তো এইখান থেকেই শুরু। কোনওভাবেই মানিয়ে নিতে পারিনি অ্যামেরিকান সমাজে। মানিয়ে না নিতে পারা অবশ্যই অক্ষমতা, আর, আর-পাঁচজন দেশির মতন আমিও অ্যাপার্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও দেশি পার্টিতে বন্দি হয়ে বছর কাটাতে লাগলাম। আর, এই জীবনটা খুব পীড়া দিচ্ছিল। ক্রমশঃ কোর্সওয়ার্ক ক্লাসরুম থেকে দূরে সরে এলাম যখন এদেশি বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও কমলো, ফলে বিচ্ছিন্নতা বাড়লো- পুরো সমাজটার মধ্যে একদম বাইরের একজন অবজ়ার্ভার হয়ে থাকলাম। এবং এই পীড়াদায়ক বিচ্ছিন্নতা যেহেতু সবচেয়ে বাজে রাখে নিজেকে বারবার একটা খোঁজার জায়গা এলো, কোথায় আটকাচ্ছে বোঝার জায়গা এলো।
রবীন্দ্রনাথ দিচ্ছে ডাক- নরেন্দ্র মোদী নিপাত যাক : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ মে ২০১৪ | ৬১৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২৫
কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ তো অহিংস, তিনি হঠাৎ কেন এরকম ভাবে মোদিকে আক্রমণ করবেন। এর দায় লেখকের। ডাক পাঠকের মত সেও শুনেছে। শুধোলে ঠাট্টা করে বলে, ওনার দেড়শর ওপর বয়স, এখন কি আর মুখের ভাষা ঠিক থাকে। কিন্তু সে বস্তুত বিশ্বাস করে, এ না বলে গুরুদেবের উপায় ছিল না। তিনি হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, চলমান বিশ্বযুদ্ধ দেখতে দেখতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন। মুসোলিনির রাজসিক মায়াকে ঔদার্য ভেবে পরে মাথার চুল ছিঁড়েছেন। হিংসা বড় পীড়া দ্যায় তাকে। তবু সেসবই শেষ কথা নয়। দাদু উত্তরাধুনিক, সোভিয়েত পতনের পরে ক্রিশ্চান আলোকপ্রাপ্তি ছেড়ে উত্তর উপনিবেশবাদের মধ্যে ইতিহাসের আশ্রয় দেখতে পাচ্ছেন। বিশ্বনাগরিক বলে আরাফত, শ্যাভেজ, জাপাতিস্তাদেরও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর থেকে শিল্পবিপ্লবের আগ্রাসী রূপটা ক্রমশঃ প্রতীত হচ্ছে তাঁর মানসে। অরণ্য, কৃষি ধ্বংস করে পরিকল্পনাহীন ভাবে বেড়ে চলেছে কিছু উঁচু মানুষের দাবি। দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে, এত দরিদ্র হচ্ছে যে দারিদ্রের সংজ্ঞা পালটে দিতে হচ্ছে। পৃথিবী উষ্ণতর হচ্ছে। মানুষকে বের করে আনা হচ্ছে জল-মাটি-অরণ্য-পাখি-র সংশ্লেষ থেকে। আরও একলা হচ্ছে, এলিয়েনেটেড হচ্ছে সে। আর রবীন্দ্রনাথ দেখছেন, আমাদের ঐতিহ্যে, সংস্কারে, উৎসবে মিশে আছে এর বিরোধিতার বীজ। জাপাতাদের সংগঠক জেনারেল মার্কোস বলছেন, একমাত্র ট্রাইবাল কমিউইনিটি স্ট্রাকচারেই তিনি দেখছেন আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার শক্তি। রবীন্দ্রনাথও দেখছেন, এই হিন্দুত্বকে যা সবাইকে অমৃতের পুত্র বলে সম্বোধন করে। যা কুল-মান-এর তোয়াক্কা না করে মনের মানুষের সন্ধানে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। যে হিন্দুত্ব দেখায়, ছোট ছোট মানুষের কাজ, তাদের অ্যাবস্ট্রাক্ট লেবার-এর সম্মেলন শতশত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ-এর পরেও থেকে যায়। দুহাজার বছরের ইতিহাস পুনর্পাঠের সূত্র দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ইতিহাস, সমস্ত যুগে সমস্ত দেশে এক হবে এই কুসংস্কার ত্যাগ না করলেই নয়। তিনি জানেন রাজার রাজা হয়ে মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য এই পঠনের দরকার কতটা। বিতর্কের গভীরে ঢুকে খুঁজে আনতে হবে সত্য কী, ঝড়ে বাইরের নিয়ম নড়ে যাওয়ার পর ভবিষ্যতের জন্য অটুট হয়ে কোনটা পরে থাকে।
জনাব কবীর সুমন কে খোলা চিঠি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ নভেম্বর ২০১৪ | ১১৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, শতাব্দী ধরে উন্নয়নের উল্টোপিঠে দুর্ভিক্ষ অশিক্ষা আর অস্থিরতায় ফেলে রাখা 'কোনো এক গাঁয়ের বধূর' নাতনিরাই যে রাজিয়া আমিনা হয়ে বন্দুক তুলে দাঁড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়,সন্ত্রাসবাদ যে আর্থসামাজিক বৈষম্যেরই ফল সেইটা বলার লোক দেখলাম কমে আসছে। দশবছর আগেও অনেকে এগুলো বলতেন। এখন পৃথিবী ক্রমেই একমেরুর দিকে এগিয়ে চলেছে, হয় তুমি আমাদের নাহলে শত্রুপক্ষ- মাদ্রাসা কী ও কেন সেই প্রশ্নে না গিয়েই চলল মাদ্রাসাবিরোধী প্রচার। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকেন্দ্র না বানাতে পারলে কোয়াকদের তুলে দেওয়া যায় না। গ্রামে স্কুল না বসিয়ে মাদ্রাসা তোলা যায় না। বসিয়েও যায় কিনা প্রশ্ন। কিন্তু যে রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করতে পারেনা, সে কী করে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তোলার কথা বলে সেই প্রশ্ন করার লোকও কমে যাচ্ছে দেখলাম। 'স্লোগান পালটে হয়ে যায় ফিসফাস'।
ভারত ক্রমশঃ তার ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রটা মেলে ধরছে। অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক আচারগুলোতেও সংখ্যালঘু-দলিতদের সরিয়ে দেওয়ার পর্যায়টা চলছে। বছরখানেক আগে,হায়দারাবাদ গেছিলাম। জামা মসজিদ ঘোরার সময়ে আমি ও আমার বন্ধু একটি করে ফেজ টুপি কিনে মাথায় পরি। তারপর এদিক ওদিক ঘুরে হুসেন সাগরে নৌকোয় উঠলাম, যাওয়ার সময়ে টুপিটা খোলা ছিল, পাশে কিছু সহযাত্রী বসেছিলেন, আইটিতে চাকরি করেন বা ওরকম। নৌকোয় ফেরার সময়ে টুপিটা মাথায় দিতে দেখি পাশে আর কেউ এসে বসছেন না। পরিতাপের বিষয়,আমাদের দেশে এটাই রিয়েলিটি- মার্জিনের ওপারে এক বিশেষ পরিচিতির বাইরের লোককে ঠেলে দেওয়া।
সীমান্ত থেকে : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৫৯৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
আমরা অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফাঁকে ফাঁকে সাস্টেনেবিলিটি শব্দটা গুঁজে দিয়ে ফান্ডিং চাইছি আজকাল। সাস্টেনিবিলিটির আরেক নমুনা দেখলাম সাইজুদ্দিন ঢালির ক্ষেতে এসে। অসাধারণ চাষের বাহার। এক জায়গায় বেগুন হয়েছে তো পাশে কুমড়ো, কিছুটা সর্ষের ক্ষেত। একটা ধানের বীজতলা। আর টাটাদের পাঁচিলের গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে রজনীগন্ধার গাছগুলি। জিগেশ করলাম ‘চাষে এখন খরচা কেমন? জল পান কোথা থেকে?’ সাইজুদ্দিন বললেন ‘শ্যালো আছে আমার, জল তুলে নিই’ওয়াটার রিসোর্সের ক্লাস করা আমি এবার আঁতকে উঠি- ‘জলসেচ ছিল না এখানে?’ – ‘ছিল তো। বাগজোলা থেকে জল আসত। তো ২০০০ সাল নাগাদ সে সব পুরো রাজারহাটে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই নোটিশ বেরোনোর কিছু আগে। যাদের পাম্প কেনার পয়সা নেই, তারা এমনিই চাষ ছেড়ে দ্যায়।’ কী ভয়ংকর! মাটির তলা থেকে জল তুলে চাষ করা কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে এখানে আলাদা করে লিখছিনা। কিন্তু সত্যিই শিউরে উঠি আমি, কয়েক বছর আগে সেচ বন্ধ করে তারপর জমি দখল করে বাড়ি তোলার ধান্দা যাদের, তারা তো আক্ষরিক অর্থে নিজের মাকে বিক্রি করে দিতে পারে! জমিতে চাষ করছিলেন যে চাচা, তিনি বললেন- ‘আমি তো চাষ ছাড়া আর কিছুই জানিনা। জমি চলে গেলে এই বয়সে খাবটা কী?’ এ প্রশ্ন অনেকবার আলোচনা-টোনায় শুনেছি। কিন্তু এখন যিনি খাবটা কী বললেন, ওই বীজতলার ধান ছড়িয়ে বড় করে আমার অন্ন তিনিই হয়তো সংগ্রহ করেন। সাইজুদ্দিননে জিগেশ করলাম, ওই যে বড় বাড়িগুলো, একসময়ে আপনার, আপনার ভাই বন্ধুদের মাঠ ছিল। এখন পিচ-কংক্রিট। কেমন লাগে? উত্তর দিলেন- ‘কী বলব দাদা, ওখানে এখন তো আমাকে ঢুকতেও দ্যায়না, দেখতেও দ্যায়না ভেতরে কী আছে। কিন্তু একটা হাসপাতাল যদি হত। দরকারে অদরকারে আমিও যেতে পারতাম।’
বংপুজোর সালতামামি : ঋতেন মিত্র ও সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৯ মে ২০১০ | ১২৬২ বার পঠিত
এখন আমরা জানি, শুধু রাজনীতি দর্শন নয়, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বায়োলজিতেও দাদুর পরোক্ষ অবদান প্রচুর। ঘ্যাম নেবার জন্য অনেকেই রবীন্দ্রনাথ আর আইনস্টাইনের ছবি দেয়ালে, অর্কূট অ্যালবামে টাঙ্গিয়ে রাখে, কিন্তু জিগেস করে দেখ কী কথা হয়েছিল দুজনের বলতে পারবে না। কেউ জানে কি কী কথা হয়েছিল?? না "পদার্থবিদ্যার বিশ্ববীক্ষা ও ঊপনিষদ দর্শন এর মিলন ক্ষেত্র' টাইপ ভেগ-ভাগ উত্তর শোনার সময় নেই। এখন আমরা সকলেই জানি দাদু "আলোর ঢেউএ উঠল নেচে মল্লিকা মালতী ' গেয়ে ওয়েভ থিওরির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।
কলিংগনগর ২০১০ - চতুর্থ কিস্তি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | খবর : টাটকা খবর | ১৫ মে ২০১০ | ৭৭৫ বার পঠিত
চান্ডিয়াতে পুলিশের গুলি চালনায় একজন নিহত হলেন একজন, অন্তত:পক্ষে দুজন গুরুতর আহত। নিহতের নাম লক্ষ্মণ জামুদ, বয়স আনুমানিক ৫০-৫৫; আহতদের মধ্যে দুজন মহিলা- জেমার (বয়স ৩২) শরীরে ৬টি বুলেট লেগেছে এবং বাসন্তী বংকিরির (বয়স ৩০, ৪ সন্তানের জননী) পায়ের আঘাত গুরুতর। পুলিশ এবং মিডিয়া ঘটনাটিকে আড়াল করতে চাইছে, স্থানীয় সূত্রের খবর এলাকার মিডিয়াকর্মীদের পুরী নিয়ে গিয়ে টাটা কোম্পানী তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে যে পুলিশি বর্বরতার খবর প্রকাশ করা হবেনা।
এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৮ মে ২০১০ | ৮৩৬ বার পঠিত
আর, এইখানেই সমস্যাটা, উল্টোদিকের পক্ষটা বেছে নিতে গেলেও দেখছি সেই কোল্যাটারাল ড্যামেজ, ভিন্ন রাজনৈতিক মত প্রকাশে মৃত্যু, পুলিশের চর সন্দেহে হত্যা, পুলিশের সঙ্গে এক বাসে যাতায়াতেও; আর, পুলিশের উর্দিপড়া যে মানুষগুলোকে যুদ্ধের নামে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যুও কি খুব কম পীড়াদায়ক? খুব কম পীড়াদায়ক কি সংগ্রামের নামে গ্রামের পর গ্রাম ধরে আবালবৃদ্ধবণিতার মিলিটারাইজ?এশন, ইস্কুলের পথ ভুলিয়ে শিশুর হাতে ইন্স্যাস তুলে দেওয়া, বিনষ্ট শৈশব, সদাসন্ত্রস্ত গ্রামজীবন, সন্দেহের চোখে নিজের প্রতিবেশীকে দেখা, পাশের বাড়ির পাশের পাড়ার লোককে খুন করে মৃতদেহ স্ৎকারহীন অবস্থায় দিনের পর দিন ফেলে রাখা, রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর নামে যুদ্ধটা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া? আর, এগুলোর বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন তাঁদেরও কি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা অপর পক্ষের লোক বলে? সশস্ত্র লড়াইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, শ্রেণীশত্রু (পুলিশ/ অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মী, একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্যে পুলিশের খাতায় নাম লেখানো আদিবাসী যুবক) হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সামান্যতম দ্বিধার অর্থ গ্রীণহান্টের বিরুদ্ধে ভয়েস অফ ডিসেন্ট না জানানোর সমতুল্যই কারণ যেকোনও একটা পক্ষ বেছে নিলেই যুদ্ধটাকে বৈধতা দেওয়া হয়ে যায়, মেনে নিতে হয় অপরপক্ষের যুদ্ধে সামিল হওয়ার স্বাভাবিকতাকেও।
অনুগল্প : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৭ নভেম্বর ২০১০ | ৯২২ বার পঠিত
আমি গল্প লিখতে পারিনা, সবার সব কিছু অ্যাটেম্পট নেওয়াও উচিৎ না; ফলে এরপর অনেক প্রাইভেট টিউশন, ইউথ ফর ইকুয়ালিটি, রিসেশন, অনসাইট পেরিয়েও তিতিরকে খেলতে দিচ্ছি সুবাইয়ের সাথে। সুবাইয়ের বাবা শুকদেব আমার বাড়ির নীচের গ্যারাজে থাকতো একসময়, এখন প্লাম্ববিং-এর কাজ খুব ভালই করছে, ইন্দিরা যোজনায় বেশ সুন্দর একটা থাকার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে, বিশ্বকর্মাপুজোর দিন ওদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে। তাই, তিতির সুবাইয়ের সঙ্গে বর-বউ খেলছিলো দেখে ওদের কাউকে কিচ্ছু বলিনি।
অবতার ঃ একটি ব্যক্তিগত নোট : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ মার্চ ২০১০ | ৭৩০ বার পঠিত
এইখানেই অবাক হয়ে গেলাম,
avatar
দেখে, যেখানে সমস্ত গ্রহটার সঙ্গে মানুষগুলো একাত্ম বোধ করছে,আর তাদের সামগ্রিক জীবনচর্যাটাই সেই একাত্মবোধের ওপর ভিত্তি করে, গাছের শিকড়ের সঙ্গে ডেটা ট্রান্সফারের মেকানিজম খুঁজছেন বিজ্ঞানী, কিন্তু সভ্যতা গড়ে তোলার প্রসেস-এ তারা জেনেছে যে ঐ গাছ, ঐ পাখি, ঐ ঘোড়া, ঐ উড়ন্ত পাহাড়, সব কিছুই তাদের বেঁচে থাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
শয়তানের ওকালতি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ২৪ মার্চ ২০১০ | ৮৬৭ বার পঠিত
মুসলমানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে নামাজ পড়াতে মিমিক করবার মজা পাওয়া যায়না, হোমোসেক্সুয়াল দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলে গে-কে ভেঙানো যায়না - ঠিক যেমন আমাদের অজস্র প্রাচীন বাংলা জোকস-এর ভেতর (বি:দ্র: গোপাল ভাঁড়) চণ্ডাল, ডোম প্রভৃতিদের নিয়ে একটিও গল্পকথা খুঁজে পাবেন না, সব হাস্যরসের চরিত্র-ই ইনক্লুডেড যাঁরা, তারা-ই। আর যখন-ই এক্সক্লুশন - এড়িয়ে চলা, ঘেন্না, বিরক্তি এগুলো প্রবলতর হয়ে পড়ে, তখন ঐ হাস্যরস নির্মাণের জায়গাটা চলে যায়।
কলেজবেলা, দোলের দিন : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ২১৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
এর পরের অংশগুলো স্মৃতিকোষ থেকে মুছে গ্যাছে। এদিকে সম্পাদিকা বললেন দোলের কবিতা দিতে, হাতে সময় পনেরো মিনিট। আর সেই কলেজবেলার সারল্য নিজের মনে গুনগুন করা ভালো, ইন্টারনেটে ছেপে ফেললে খোরাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং দশ বছর ধরে বহন করে যাওয়া শব্দ, কবিতা কবিতা চাপগুলো আর টুকরো টুকরো মনে পড়া ছবি দিয়ে পড়তে ভালো লাগে এমন একটা টেক্সট নামিয়ে ফেলা। যা হলো, তা প্রকৃতপ্রস্তাবে পাপবিদ্ধ-ই
অরণ্যের অধিকার, এবার পেরু : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ জুন ২০০৯ | ৯১৫ বার পঠিত
৫ ই জুন,২০০৯। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হল পৃথিবী জুড়ে আর ঐ দিনই আমাজন অরণ্য সাক্ষী হলো এক নারকীয় ঘটনার। পেরুতে বিক্ষোভরত পরিবেশপুত্র আদিবাসীদের তীর-ধনুকের সঙ্গে পুলিশের তুমুল লড়াই হল, এবং দুদিক মিলিয়ে সরকারী হিসেবে মৃত্যু হল ৩২ জনের (১)। অবশ্য সরকারী হিসেবের বাইরে আন্দোলনকারীরা বলছেন তাঁদের হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই বেশি এবং তাঁদের পক্ষের মোট ৬১ জন নিখোঁজ (২)। আদিবাসী ও পুলিশের লড়াই-এর খবরের সঙ্গে আমরা মোটামুটি ভাবে পরিচিত, তবে সেটা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে, এবং লক্ষ্যণীয়, গোলকের অন্যার্ধেও ঘটনার কার্যকারণ বিশ্লেষণ প্রায় এক-ই রকম[;] লড়াই অরণ্যের অধিকার নিয়ে।
সমুদ্র ও পাঁচজন আমি : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১২ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ১২১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
রাতের ঝাউয়ের বন ঘেঁষে বালিয়াড়ির পাদদেশে ধিকধিক বনফায়ার, ওদের পাঁচটা মুখে আগুনের লাল লেগেছিলো- এখন আর পাঁচটা মুখ নেই, বিয়ারের তোবড়ানো ক্যান হাতে গোড়ালি ভেজানো ঢেউয়ে আমি-এ সমুদ্র এমত বেহায়া- তেমনই ওরাও পাঁচজন বন্ফায়ারের হা-হা:-- পাঁচ কেন, ওরা চার, দুজোড়া কপোত-কপোতিনী, আমি তো ব্রাত্য ঐ দলে, অথচও লোক চাই, দর্শক; নিজেদের প্রেমগুলো নিয়ে দর্শক না দেখলে ফ্যান্টাসি মেটেনা ওদের। ওরাও সমুদ্রের মত ঐ সমুদ্র, চাঁদের রিফ্লেকশন জলে ফসফস বলে ভুল হতে থাকে, হাওয়ায় পেট ফাঁপে ছেঁড়া ক্যারিব্যাগ যেন জেলিফিশ এই সমুদ্র, চাঁদের আলোর পথ করে দেয় মানুষের কাছে, আমার কাছেও লুনাটিক স্পৃহা সব সেই পথ ধরে হেঁটে গিয়ে অতলে তলিয়ে মরে যায়, মরে, তবু বেঁচে ওঠে তবু এই সমুদ্রের ধারে কাঠের আগুন থেকে হাওয়া বেয়ে ছিটকিয়ে যায় জ্বলন্ত জৈবযৌগ, ব্রেনের পাকগৃহ ঘিরে জৈব রিঅ্যাকশন হয়ে চলে, এসে পড়ে অসহ্য অতীত। এমনই সমুদ্র তার গাঢ় সব দুপুরের বেলাভূমি, স্নানের গোপন আর সেই সব কথা যেগুলো উহ্য রেখে সরে গিয়েছিলো আমার এইখান থেকে, আর কিছু ভাবিনা, আর কোনও স্বপ্ন দেখিনা, আর কোনও কান্না রাখিনি আগুনে
করোনা- রোগের উপসর্গ মাত্র : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২০ | ৮৫৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬৬
একথা নিশ্চিত যে, দ্রুতগামী যান, যেমন রেল, প্লেনই মারীর মহামারী বা অতিমারী হয়ে ওঠার মূল বাহন। আমরা যদি প্রাক ব্রিটিশ যুগের আর্থ-সামাজিক মডেল দেখি, এই সংগঠিত যান-চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার বদলে দেশের শাসকদের লক্ষ্য থাকত সড়কপথ নিরাপদ রাখা, কিছু নির্ধারিত বাণিজ্য জলপথে চালানো। সমসত পণ্যের স্থানান্তরণ নয়। বাণিজ্যের সংগঠন উত্তর-ব্রিটিশ ধনতান্ত্রিক যুগের লক্ষণ এবং এই সংগঠনের পিছনে জনগণের শ্রমের মূল ভাগ নিয়োজিত হয়। প্রাক ব্রিটিশ বাংলা যখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশে বস্ত্র সরবরাহ করত, সে বিকেন্দ্রিভূত, অসংগঠিত উৎপাদন এবং বাণিজ্যের এক মডেল চালাত। যার ফল হিসেবে দেখা যায়, সেইসময়ে বাংলায় মানুষ মোটের উপর স্বচ্ছল। আর, এই বাজারটা যুখন উত্তর-পলাশী যুগে ইংল্যান্ডে গেল, সেখানে স্থানীয় লোক বড় সংগঠিত উদ্যোগকেন্দের কাজ করতে শুরু করল, তাদের জীবনধারণ আগের থেকেও খারাপ হয়ে পড়ল (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা, এংগেলস, ১৮৪৫)। হয়ত কিছুটা একই ভাবে সংগঠিত ধনতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র শহরগুলি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষের ভালো থাকার মূল অক্ষগুলি অবহেলিত হল, কারণ এই শহরের বিকাশ হল কেবলমাত্র ঐ কেন্দ্রিভূত উদ্যোগ ও বাণিজ্যকে পুষ্ট করার স্বার্থে। তাই কি আমরা দেখতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা হয়ে ওঠে এশিয়াটিক কলেরার বিশ্ব-আঁতুরঘর?
চরমপন্থী রবীন্দ্রনাথ- স্বদেশী সমাজ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ মে ২০২০ | ৫১৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
আমরা আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস, ইউরোপের কলোনি ও যুদ্ধ-বাণিজ্য বিস্তারের ইতিহাস, সমস্ত কিছুতেই এই রাষ্ট্রধারণার প্রাবল্য দেখি। এমন কী ধর্মকেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হয়। কিন্তু, ভারতীয় দেশগুলিতে যেহেতু এই রাষ্ট্রচেতনা গণমানসে খুবই ক্ষীণ, তাই রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিসমূহ নিয়ে আলোচনা-আন্দোলনে জনতার উৎসাহও কম। সম্ভবতঃ, আজকের ভারতেও আমরা দেখতে পাই, এই চেহারাটা। রাজনৈতিক দলগুলির ভাগাভাগি, একই এজেন্ডা নিয়ে একাধিক নামে দল তৈরি হওয়া, ব্যক্তিগত প্রভাবের প্রাচুর্য সবই পলিটিকালাইজেশোনের অভাবকে একভাবে সূচিত করে। এমন কী, রাজনৈতিক দলগুলিও সেখানেই সফল যেখানে তারা রাষ্ট্রনীতির পরিসর, পার্লামেন্টারি ডিবেটের বাইরে সামাজিক সংযোগ করেছে। যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ এইদেশে পলিটিক্স-এর অচলতার কারণ বুঝেছিলেন, এই প্রবন্ধগুলিতে বেশ বিশদে তা আলোচনা করেছে।
জল,জল : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২১ এপ্রিল ২০০৭ | ১০১৬ বার পঠিত
এ দেশের মায়ের নাম নদী, বাপের নাম গদি। যুগে যুগে চারণ কবি গান গেয়েছেন - "রাম তেরি গঙ্গা ময়লী হো গয়ি-ই-ই-ই-"" আর তাতে রামের বয়ে গেছে। তিনি কি আর গঙ্গার জলে কুলকুচি করতে যাবেন? "বাঙালী লেখক" সন্দীপন লিখেছিলেন দেশের সত্তর ভাগ লোক যে জল পান করে তাতে ওদের অন্তত: একবার ছোঁচাতে রাজি হওয়া উচিত - বা, এই রকম কিছু। ""বা-লে""র কথায় কান দিতে হলে অবশ্য মাথার দুদিকে দুটো কান থাকা আশু প্রয়োজন, আর কে না জানে গদিতে বসার প্রাথমিক শর্ত ও-দুটোকে প্রবেশদ্বারের বাইরে রেখে আসা? কিন্তু মাইরি, বেঁচে থাকা ক্যান্টার করে দিল গ্লোবালাইজেশন আর তার মাসতুতো ভাই প্রাইভেটাইজেশন।
বর্ণাশ্রম : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০৫২ বার পঠিত
"আমরা সমাজটাকে চারটে ভাগে ভাগ করেছি।'' মার্ক্স এঙ্গেলস কি অপর গোলার্ধ কাঁপানো কোনো দেড়েল অর্থনীতিবিদ বা সমাজতাত্বিক নয়, এ ঘোষণা একটি প্রাইভেট সংস্থার প্যানেল রিসার্চ ফিল্ড সার্ভেয়ারের। ভারতবর্ষের জনসংখ্যার, একশ কোটি জনসংখ্যার, চারটি "SEC" অর্থাৎ "Social Economical Class"A, B, C, এবং D । অমর্ত্য সেন বিগলিত হবেন, মনমোহন সিং উৎফুল্ল ও আবুল কালাম মশাই আত্মহারা হয়ে পড়তে পারেন এমন সহজ সাধারণ আর্থসামাজিক পরিকাঠামো বিভাজনে এবং আমাদের দাবি ব্যপারটাকে অবিলম্বে পাঠক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হোক।
দুই বিন্দু জল : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৮৬ বার পঠিত
আলপটকা বৃষ্টি হয়ে স্টার থিয়েটারে, অধুনা সিনেমা, দুফোঁটা জল ঢুকেছে বলে কত কথা! নাকি, সেখানে তখন মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন। হাতিবাগানে তো আর প্রখর বর্ষাকালেও জল জমে না! গোমুখ্যু ইঞ্জিনিয়ার আর আকাট রাজমিস্ত্রির হাতে পড়েই নেথাৎ, আহা, অমন ঐতিহ্যঘৃতগন্ধী বিল্ডিংটা মবলগ চুলকে গেল গা! সাংস্কৃতিক শীর্ষনেতৃত্বের জমানায় তাই প্রকৃত কালপ্রিট ঢুঁড়ে, দামড়ে সিধে করার প্রেসকপি নোটিস গেছে বলে শোনা যায়। এসব শাক সরিয়ে শহর কলকাতার জলনিকাশী ব্যবস্থার কানকো উল্টে যাঁরা লাল না কালচে বিচারের বেহায়া আঁতলামো মারাচ্ছেন, তাদের জন্যে চালুনি ছাড়া অন্য কোনো নাম বরাদ্দ নেই।
থ্যাঙ্কিউ স্যার : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৯৭৯ বার পঠিত
দ্যাখেন তো ওই বিষন্ন গ্লিসারিন জবজবে টিভি সিরিয়াল আর স্টেনগানের প্রদর্শণী কিছু ধ্বজামার্কা সিনেমা। কেন, কার্গিল ধামাকায় মিডিয়া যখন ধূপধুনো জ্বেলে "ওং মিলিটারায় নমস্তুতে" জপছিল তখন তো মশাই আপনি করজোড়ে নতজানু, পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে আরতি করতেও বাকি রাখেননি। স্কুলের কচিমাত্রেই তখন অনিবার্য স্লোগান : ভারতীয় সেনা, দেশপ্রেম আর বন্দেমাতরম। এই ক'বছরেই সব ভুলে সাফ! ক'টা পুলিশ ঠেঙিয়েছে বলে ছি ছি করছেন? আরে ছো:। পুলিশ কি একটা মানুষ হল? সহবতের একটা ক্র্যাশ কোর্স কলকাতা পুলিশে জন্যে যে অবিলম্বে দরকার সে কথা ভেবেছেন? বর্ষবরণের রাত।
বিজ্ঞানস্ট্যাম্প : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০১৭ বার পঠিত
রিচার্ড লেয়ার্ড "হ্যাপিনেস" নামের একটা চোদ্দ অধ্যায়ের বই লিখে পেঙ্গুইন থেকে ছাপিয়েছেন বলে নয়, অনির্বাণ চাটুজ্জে সে বইয়ের রিভিউ লিখে এ সংখ্যার গায়েগতরে দেশ-টার দাম তিরিশ টাকা করার পথে সাহায্য করেছেন বলেও নয়, লেখাটায় উন্নয়ন আর জি.ডি.পি.র সঙ্গে সুখে থাকার গুরুচণ্ডা৯য় অসমীকরণের রাজনৈতিক ফোড়ন রিক্যাপিচুলেটেড বলেও নয়, "ব্রেন ফিজিওলজী", "ইলেকট্রোএনসেফ্যালোগ্রাম" আর "ব্রেন স্ক্যান" বিজ্ঞানস্ট্যাম্পগুলো মাঠে নেমেই কী-বোর্ড চুলকে দিল। অর্থনৈতিক গবেষণার প্যারামিটার নেওয়া হচ্ছে মানুষের ভালো থাকার বোধটিকে, এবং তা স্রেফ ডিক্লারেশন নির্ভর নয় আর, হাই ফাই যন্ত্রপাতি প্রমাণিত। অর্থাৎ প্রশ্নাতীত একটি থিওরাইজেশনের পথ তৈরি হচ্ছে।
গতি ও জাড্যধর্ম : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০২৮ বার পঠিত
বাসে উঠলেও শোনা যাবে "পিছন দিকে এগিয়ে যান'। ফ্লুরোসেন্ট হাইলাইট : "এগিয়ে'। সমকালে যে শব্দটিতে, অনিচ্ছাতেও, "অগ্রগতি' আর "উন্নয়ন'-এর দিকে অবধার্য আঁকশিটান। আমরা কিন্তু আরো স্পেসিফিকালি, ফোকাস করব অন্য একটি রিলেটেড অংশশব্দ : "গতি' তে। যে গতি, পথ ফুরোবার পরেও জেগে থাকে, অনবধান অভ্যাসে। নিউটন "জাড্য' নাম দেন।
আমাকে চমকাও : সোমনাথ দাশগুপ্ত
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ১০১৫ বার পঠিত
এ এক্কেবারে নতুন জিনিস হয়তো নয়, একটু তবু নতুনই বটে। অন্তত: আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এরকমটা কেউ ভাবেনি। বা হয়তো ভেবেছে, জানতে পারেনি কেউ, ফলে বাজারে বিক্রি হয়নি, ইয়েস, যেটা নিয়ে আজ কথা বলতে চলেছি - মশা মারার র্যাকেট। দেখেছেন নিশ্চয়ই। আলবাৎ দেখেছেন। ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের মতন দেখতে, শুধু একটা নাইলন স্ট্রিং লেয়ারের বদলে তিনটে মেটাল তারের লেয়ার থাকে। চার্জ দিয়ে রাখতে হয়। তারপর প্লাগ থেকে খুলে সুইচ অন করে, মশাকে ফেদার কর্ক ভেবে লাগাও ব্যাকহ্যাণ্ড ফোরহ্যাণ্ড স্ট্রোক। মশার বডি, মেটাল তার স্পর্শ করলেই স্পার্ক। প্রথমে পিট্পিট্ করে, তারপর তারে আটকে যাওয়া মশাটার থেকে - একটু কাছ থেকে দেখলে ভালো বোঝা যায় - খানিক ধোঁয়া বেরোয়। তারপর ফট্ করে জোরে আওয়াজ হয়, আলোসহ। এই সময় পোড়া গন্ধটা পাওয়া যায় মশাটার থেকে। সারা ঘরে গন্ধ হয়ে যায়। আড়াই হাজার ভোল্ট কারেন্ট মশাটার গায়ে ঢুকে গেছে, তাই, মশাটা মারা যায়। অবভিয়াসলি, এবং সন্দেহাতিত ভাবে।
নতুন "কিং কং" : সোমনাথ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৪ ডিসেম্বর ২০০৫ | ৫২৬ বার পঠিত
দেখে এলাম কিংকং, সাড়ে ছটা থেকে সাড়ে ন'টা। এমন নয় যে আমি জানিনা গল্পোটা, কিন্তু টাইমস অফ ইণ্ডিয়া দেখি সাড়ে চার খানা স্টার মেরেছে রেটিং এ, তাইলে তো দেখতেই হয়। তা দেখলাম বটে একখান সিনিমা, ২৫ ফুট গেরিলা, সাথে বিকুষ্টি কালো আদিবাসী সম্প্রদায় আর ডাইনোসর ফ্রী।
ফসিল্স ---- বাংলা রকগান : ইশান, সোমনাথ ও রজত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : গান | ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ | ১৪৬২ বার পঠিত
উনিশশো নব্বইয়ের গোড়ায় সুমন চট্টোপাধ্যায় যখন তাঁর ব্যারিটোন কন্ঠস্বর সমেত একা একটি আস্ত মঞ্চ জুড়ে আছেন, বোঝা ক্রমশ: কঠিন হয়ে যাচ্ছে, স্টেজে কলকাতার সফলতম একক অভিনয় হচ্ছে, না শুধু একখানি গান, ফসিল্স তখন কোথায়? গলা নয়, সুমনের গোটা শরীর দিয়ে যখন চুঁইয়ে পড়ছে ভদ্রলোক মধ্যবিত্তের জীবন কাহানিয়া, জীবন ও যৌবন, যৌনতা ও ফ্রাস্টেশন, যখন উচ্চারিত হচ্ছে "ভিডিয়ো ক্যাসেটে আর নিল সোফাসেটে বসে মিঠে খুনসুটি' ফসিল্স তখন হরিদাসের ডানার সুপ্তিতে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চুলোয় যাক এই ভদ্রজনোচিত রবীন্দ্রগান, এই বাস্তবধর্মী সুচারু অভিনয়শিল্প, এই সোচ্চার স্লোগান তখনও আস্তিনের আড়ালে। "এসব কি গান না জগঝম্প?' এই অভিযোগে এর পর একদিন কলামন্দিরের স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে হরিদাসের ডানাকে, এবং আলোকিত মঞ্চে আসবেন অঞ্জন দত্ত -- সেসব তখনও ফিউচার টেন্স।
চিংগারি এবং মিঠুন : সোমনাথ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ মার্চ ২০০৭ | ৬৬১ বার পঠিত
বলার বেশি কিসু নাই। কল্পনা লাজমী একটি নাটক বানায়েছেন - স্টেজ ভাড়া করা আর মহড়া প্রদর্শণী ইত্যাকার স্বল্পস্থায়ী নশ্বর ঝামেলায় না গিয়ে ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন - লে:, নাচ। চিত্রনাট্য লিখিয়ে ভদ্রলোক নেহাৎ কবি, অন্তত তাঁর মনে এই বুজকুড়ি অবিরাম উদ্বেল - আমি কবি যত বেশ্যার আর পিওনের আর পুরোহিত গোদা-লেঠেলের। ক্বচিৎ আগেও সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন, নাটক বা কবিতা ছাড়া, জানতে পারলে মাক্কালীর কিরা ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক লেগে যাবে। সিকি ল-অ-অ-অ-অ-ম্বা ডায়লগ রে কাকু! বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে, রেগে যাচ্ছে, কেঁদে যাচ্ছে, ফুলে-ঝুলে-তুলতুলে তবু দাঁড়ি নাই, সব আছে, শুধু থামা নাই - নদী আপনবেগে পাগলপারা। আর গাঁত? পাগোল !!
হারবার্ট : ইশান, অক্ষ, সোমনাথ ও ইন্দ্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ১০৩০ বার পঠিত
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের U/A সার্টিফিকেটের পরেই স্ক্রিন জুড়ে দেখা যায় বোর্ডে বাঁধা সারিসারি বেলুন। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ এবং অরেঞ্জ। সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ। হরাইজেন্টাল সুতো দিয়ে নয়, আসলে তাদের বেঁধে রাখা হয়েছে যুক্তি ও ব্যাকরণের অর্ডারে। অচিরেই ফট করে একটি আওয়াজ হবে, এবং ব্রেনে শব্দটি রেজিস্টার হবার আগেই প্রথম সারির ষষ্ঠ বেলুনটি দুমফটাস। আরও এক সেকেন্ড অপেক্ষার পরেই ফেটে যাবে ঠিক তার নিচের সবুজ বেলুনটি। ক্যামেরা প্যান করবে, বেলুনের বোর্ডকে ফোকাসে রেখে ব্যাকগ্রাউন্ডে পর্দার বাঁদিকে দেখা যাবে আউট অফ ফোকাস, ঝাপসা অস্পষ্ট শহর কলকাতা। একটি হলুদ ট্যাক্সি। একটি সাদা অ্যাম্বাসাডার।
মহামারি, ফ্যাসিবাদ ও ভয় : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১২ মে ২০২১ | ২৫৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি।
উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে শ্মশানের স্তব্ধতা : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৩ জুন ২০২১ | ২৩৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা।
ইভান দেনিসোভিচের ষাট বছর : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২৫ জুলাই ২০২১ | ২২৯৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
সুকোভ কোনও সময় টুপি পরে খাবার খায় না। সেটা খুলে সে হাঁটুর ওপর রাখে। তার দিয়ে তৈরি করা একটি চামচ যেটা সেই ১৯৪৩ সাল থেকে তার সঙ্গী সেটা সে তার পায়ের ছেঁড়া ন্যাকড়াগুলোর মধ্যে থেকে বার করে। চামচ দিয়ে দুটো বাটির তরল নাড়িয়ে দেখে। গরম, ধোঁয়া উঠছে। এক চামচ সে মুখে দেয়, আরও এক চামচ। উষ্ণতা তার শরীরের জমে থাকা হিম ভেদ করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। আঃ স্বর্গীয়! তার মুখ উদ্ভাসিত, কোনও কষ্টই তার কাছে আর কষ্ট নয়। লপসিটা সে নাড়ায়, চলে যাবে, মাছের একটা সেদ্ধ ক্ষীণ কাঁটাও আছে যেটার সঙ্গে ফুলকো পাখনার টুকরাটাকরা লেপটে আছে। প্রতিটি কাঁটা সে শুষে নিঃশেষিত করে ফেলে, ছিবড়ে করে টেবিল ভরিয়ে দেয়। ৎসজারের বাটিতে আবার একটা বরফঘেয়ো আলু! কোনও তাড়াহুড়ো নেই তার, ধীরে সুস্থে খায়। আলুটা মিষ্টি, কিন্তু শক্ত। সুকোভ একটা বাটির তরল শেষ করে অবশিষ্টটা কাচিয়ে দ্বিতীয় বাটিতে ঢেলে দেয়। সেটাও চেটেপুটে চকচকে করে দিয়ে তবে তার শান্তি।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আত্মচরিত – একটি জাতীয়তাবাদী পাঠ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০২ আগস্ট ২০২১ | ৩২৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান।
আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ।
একটি পূর্ব-নির্ধারিত মৃত্যুর নির্ঘন্ট : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ১৭ আগস্ট ২০২১ | ২১১৭ বার পঠিত
গ্রেপ্তারের সময় ফাদার স্ট্যানের বয়স ছিল ৮৪। তিনি পার্কিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন এবং প্রায় শ্রবণশক্তিহীন ছিলেন। এছাড়াও তাঁর বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা ছিল। তাঁকে যখন তালোজা জেলে নিয়ে আসা হয়, তখন বরেণ্য কবি ভারভারা রাও প্রবল অসুস্থ, যমে মানুষে টানাটানি চলছে। জেল তখন উপচে পড়ছে; ২১২৪ জন কয়েদি যেখানে থাকার কথা – সেখানে বন্দির সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়ে গেছে। করোনার কারণে জেল খালি করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, সেখানে তখনও আরও অভিযুক্তদের ঠুসে দেওয়া হচ্ছে। এই ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে ফাদারকে ঠেলে দেওয়া হল..
মার্কিনি ঠিকাদারি ও তালিবানি তান্ডব : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ আগস্ট ২০২১ | ২২৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আফগানরা স্বাধীনচেতা জাতি। ব্রিটিশরাও তাঁদের পুরোপুরি পদানত করতে পারেনি। তারা ব্রিটিশদের রক্ষাধীন ছিল, প্রটেক্টোরেট। গত চার দশকে মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই তাঁদের কব্জা করতে পারেনি। দেশটা জ্ঞাতি ও উপজাতি রেষারেষি ও দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ। দেশের বিভিন্ন পকেটে, দুর্গম অঞ্চলে যুদ্ধবাজ সামন্তসর্দারদের সার্বিক আধিপত্য, যেখানে ধর্মের চেয়েও নিজের ক্ল্যান বা উপজাতির প্রতি আনুগত্যই ছিল প্রধান। আশির দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ানকে আটকানোর জন্য উগ্র ধর্মান্ধ সৌদি জঙ্গিদের মাধ্যমে আমেরিকানরা প্রথম এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ রফতানি করে। আজকের তালিবানি উত্থান সেই নীতিরই বিষফল। এটা নিশ্চিত যে তালিবানিরা পালটাবে না। প্রতিদিন মধ্যযুগীয় বর্বরতার নতুন সব নমুনা প্রকাশ্যে আসছে। কিছু অসমসাহসী মহিলা এবং সামান্য কিছু জায়গায় সর্দারদের মিলিশিয়া প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। এটা চলবে, কারণ আফগানিস্তান এমন একটা দেশ যেখানে যুদ্ধ চিরন্তন। একটাই রাস্তা, আফগানদের তাঁদের নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া হোক। হয়তো তাতে আফগানিস্তান আগামী দিনে সৌদি আরবের মতো একটা ‘সভ্য’, ‘আধুনিক’ (যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার জন্য কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করতে হয়) মৌলবাদী দেশ হয়ে উঠতে পারবে। ইতিহাস বারবার শিক্ষা দিচ্ছে যে বহিরাগত শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে শুধুমাত্র হিতে বিপরীতই হবে।
বর্ডার, কাঁটাতার, খণ্ডিত দেশ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কাঁটাতার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় ....
সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ...
ভুয়ো অভিযোগের বিভীষিকায় সন্ত্রস্ত আদিবাসী জীবন : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০১ অক্টোবর ২০২১ | ১২৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
গ্রামের নাম এদেসমেত্তা, জেলা বিজাপুর, ছত্তিসগড়। জেলাশহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ১৭-১৮ মে, ২০১৩র রাতে গ্রামের ৩০-৪০ জন মানুষ বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য মিলিত হয়েছে। বীজ পান্ডুম হচ্ছে ফসলের বীজের মাধ্যমে নতুন জীবনের আগমনকে উদযাপিত করা। প্রায় হাজার জনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে, নির্বিচারে গুলি চালায়; ৮ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন নাবালক। মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোবরা ইউনিট উল্লসিত, তাঁরা উগ্রপন্থীদের একটি দলকে নিকেশ করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ মানতে নারাজ, তাঁরা বলেন যে এঁরা সবাই ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, কেউ মাওবাদী নন। তুমুল হৈচৈ হয়। তখন রাজ্যে রমন সিংয়ের বিজেপি সরকার যাদের প্রবল দমন-পীড়নে আদিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এতো সাড়া পড়ে যায় যে সেই সরকারও বাধ্য হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে।
আবদুলরাজাক গুর্নাহর সাহিত্যঃ প্রস্থান, পরিব্রাজন,পরবাস : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : কৃতী-স্বীকৃতি | ৩১ অক্টোবর ২০২১ | ১৮০১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
জাঞ্জিবার এমন একটা জায়গা যেখানে যারা দাস ছিল তারা নিজেরাই দাসব্যবস্থাকে সমর্থন করত, ‘প্যারাডাইস’ উপন্যাসের এক চরিত্র এরকমটাই বলছে। এই দ্বীপপুঞ্জে ভারত মহাসাগরের নীল নোনা জল খেলা করে যার মধ্যে অবস্থিত প্রাচীন, ভগ্নপ্রায় বহু বন্দর যেখানকার নোঙর করা ভাসমান যানগুলি থেকে এখনো শোনা যায় শৃঙ্খলিত দাসদের মর্মান্তিক আর্তনাদ, হাহাকার। এটি তানজানিয়ার অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যা ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্ত আব্দুলরাজাক গুর্নাহর কল্পনার আঁতুড়ঘর।
সমাজতন্ত্রের নতুন দিশার সন্ধানে কোবাড গান্ধী : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বলবই | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ২২৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, কোনও আন্দোলন অহিংস না সহিংস হবে – এই প্রশ্ন অবান্তর। হিংসা তো সর্বত্র, সর্বব্যাপী; রাষ্ট্র তো সামান্য অজুহাতে নিরীহ, অসহায় নাগরিকদের দমন-পীড়ন করে, গুলি চালায়, হত্যা করে। আসল ব্যাপারটা হল, ‘কীভাবে’ জিততে হবে। তিনি কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ উত্থাপন করেন, কীভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রকে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম্যুনিস্টরা কোনদিনও এসব নিয়ে ভাবেনি। তারা ভীষণ গোঁড়া, সংকীর্ণমনা, উদ্ভাবনী চিন্তাকে আমল দেয় না; বাস্তবে কোনও নতুন চিন্তাকে নেতৃত্ব বিপজ্জনক মনে করে এবং সেই ব্যক্তিকে দলে টার্গেট করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র কথা ধরা যাক। তত্ত্বগতভাবে এর থেকে বেশি গণতান্ত্রিক কিছু হয় না, কিন্তু বাস্তবে নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের খুশি মত যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
চিলি: গণতন্ত্র ও বামপন্থার সন্ধান চলছে : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৬৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
আমরা জানি ৫৫% ভোট পেয়ে গ্যাব্রিয়েল বোরিক, ছাত্র আন্দোলনের বহু ব্যারিকেড পেরিয়ে, পুলিশি দমনপীড়নের মোকাবিলা করে, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৪৬ লক্ষ ভোট পেয়েছেন যা তাঁর যে কোনও পূর্বসুরিদের চেয়ে বেশি। বোরিক দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নিও লিব্যারাল অর্থনীতির প্রবল বিরোধী। “চিলি নিও লিব্যারিলজমের জন্মভূমি ছিল, এখানেই সেটার কবর খোঁড়া হবে,” তিনি ডাক দিয়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পেনশন এবং কর সংস্কার করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তিনি সামাজিক ন্যায়ের আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর সরকারে মহিলা, মূলবাসী এবং এলজিবিটিকিউদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাঁর দল বামপন্থী; তিনি মার্কসবাদী কিনা, তার কোনও ইঙ্গিত এখন অবধি পাওয়া যায়নি। তিনি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করার পক্ষপাতী।
দিল্লি ‘দাঙ্গা’ ২.০ ও বুলডোজার গণতন্ত্র : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৭ এপ্রিল ২০২২ | ১৫৮৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
জাহাঙ্গিরপুরী সি-ব্লক যেখানে মূলত ঝামেলা হয়েছে সেখানে প্রধানত বাঙালি মুসলিমদের বাস। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই চার দশক আগে রুটিরুজির টানে বাংলা ছেড়ে এখানে এসে বসবাস করছেন। এঁরা মূলত ছাঁট এবং অন্যান্য ছোট ব্যবসায় যুক্ত। যেমন আনোয়ার যাঁকে প্রধান অভিযুক্ত বলা হচ্ছে, তাঁর আদিবাড়ি হলদিয়ায়। আরেক অভিযুক্ত শেখ সোহরাবের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার সাগর অঞ্চলে। দুটি জায়গায় দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের লোক এসে ঘুরে গেছেন। এঁদের সবার বৈধ ডকুমেন্ট আছে। সোহরাব দিল্লি পুরসভার কর্মী, তাঁর বাবাও দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদে কাজ করেছেন। তবুও তাঁদের ভারতীয়ত্ব সন্দেহের মুখে; তাঁরা নাকি বাংলাদেশি; তাঁদের নথিপত্র সবই নাকি জাল, ভোটে ফায়দা নেওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের তৈরি করে দেওয়া। আজকের ভারতে মুসলিমরা নিত্য নতুন সংকটে জর্জরিত হচ্ছেন; আর যে মুসলিমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছেন তাঁদের সংকট তো আরও গভীর, তাঁদের তৎক্ষণাৎ বহিরাগত, বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে যাঁরা এই দেশে বাস করছেন তাঁদেরও বিদেশী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে! শুধু দিল্লি নয়, সারা ভারতে আজকে এটাই ট্রেন্ড! এক ধর্মগুরু তো নিদান দিয়েই দিয়েছেন যে, বাঙালি হলেই সন্দেহের!
হিন্দুত্ববাদীদের দাপটে এখন কেউ আর নিরাপদ নয় : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৫ মে ২০২২ | ১৫৮৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কাহিনীর সারাংশ হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্প যত এগোচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ততো বিঘ্নিত হচ্ছে। মুসলিমরা সব সময়ই টপ টার্গেট, নানা ফন্দি করে তাঁদের টাইট দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত। বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে কে কত এই সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করতে পারে। কেউ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিচ্ছে, কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বা মসজিদের মাইক লাগানো নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, কেউ কসাইখানা বন্ধ করে গোশালা খুলছে...
“আমার পথকে এত ভয় কেন তোমার?” : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই পছন্দসই | ১৯ জুন ২০২২ | ১৬২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
গোকারাকন্ডা নাগা সাইবাবা, একজন শিক্ষক, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, দলিত ও আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনে যুক্ত একজন সমাজকর্মী। জীবনসঙ্গিনী বসন্ত কুমারির জন্মদিনে একটি চিঠিতে তিনি তাঁর বিস্ময় ব্যক্ত করেন। বলেন, আমরা তো সামান্য কর্মী, সামান্য উপায়ে সামান্য মানুষদের জন্য কাজ করি! তাহলে এই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র কেন আমাদের আশা, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের স্বপ্নকে ভয় পায়? আমরা কি কাউকে কোনও ভাবে কষ্ট দিয়েছি? কারো ক্ষতি করেছি? কেন আমাদের জীবনের ওপর এই আক্রমণ? কেন আমাদের স্বপ্নগুলোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়? কেন আমাদের আশা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়?
প্রদীপ চৌধুরী - সৃষ্টির 'কালো গর্তে' নিক্ষিপ্ত এক কবির কথা : সোমনাথ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৯ আগস্ট ২০২২ | ১২৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কলেজজীবনের সময় থেকেই প্রদীপ হাংরি জেনারেশন সাহিত্য আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রদীপকে হাংরি আন্দোলনের সাথে পরিচয় করান। প্রতিষ্ঠানবিরোধী এই সাহিত্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬১ সালে পাটনা থেকে প্রথম ম্যানিফেস্টো প্রকাশের মাধ্যমে। আন্দোলনের মূল স্রষ্টা ছিলেন কবি-সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরী। কবিতা সম্পর্কে হাংরিদের বক্তব্য ছিল, “…it is a holocaust, a violent and somnambulistic jazzling of the hymning five, a sowing of the tempestual hunger.”। হাংরিরা মনে করতেন পঞ্চাশের দশক অবধি বাংলা কবিতায় যে স্থিতাবস্থা চলে আসছে, কবিতার ভাষাকে সেই স্থিতাবস্থার শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। একইসাথে স্বাধীনতা পরবর্তী উত্তর ঔপনিবেশিক ভারতে এবং বিশেষ করে দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা ও কায়েমি স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষের যে স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছে হাংরিদের আন্দোলন সেসবের প্রতিই এক কাউন্টার ডিসকোর্স।
শাসকের রক্তচক্ষু ও অদম্য, অবিচল তিস্তা শেতলবাদ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১৪০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন!
এক পুলিশ অফিসারের চোখে গুজরাট ‘দাঙ্গা’ : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : বই কথা কও | ২১ আগস্ট ২০২২ | ২৪৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
‘হোয়াই গুজরাট’? তিস্তা শেতলবাদ তাঁর বই ‘ফুট সোলজার অফ কন্সটিটিউশন’ এ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কেন গুজরাটকেই সংঘ পরিবার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ল্যাবরেটরি হিসাবে বেছে নিয়েছিল? তিস্তা উত্তরে বলছেন গুজরাট হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর রাজ্য, অহিংসা, শান্তির পীঠস্থান। তাঁর এই মতাদর্শকে নিশ্চিহ্ন করার এটাই তো আদর্শ জায়গা! আরবি শ্রীকুমার, গুজরাটের ভূতপূর্ব ডিজি, যিনি সুপ্রিম কোর্টের নজিরবিহীন রায়ের কারণে জাকিয়া জাফরি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন, তিনি তাঁর বই ‘গুজরাতঃ বিহাইন্ড দ্য কার্টেন্স’ এ লিখছেন এগারশো শতাব্দীতে সোমনাথ মন্দিরে গজনির সুলতান মাহমুদের আক্রমণের স্মৃতি সচেতন ভাবে হিন্দু মানসিকতায় জিইয়ে রাখা হয়েছে। এর ফলে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে রাজ্যে বারবার সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখা গেছে। ১৭১৪ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর মাত্র সাত বছর বাদে সেখানে বড় দাঙ্গা হয়। ১৯৬৯, ১৯৮৫, ১৯৯২, প্রায় প্রতি দশকেই গুজরাটে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখা গেছে। ১৯৬৯ সালে তো ৬০০ জনের মৃত্যু হয়।
পঞ্চায়েত ভোট কি কোনদিনই শান্তিপূর্ণ হবে না? : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | ভোটবাক্স : পঞ্চায়েত নির্বাচন-২০২৩ | ১৭ জুলাই ২০২৩ | ৪৯১ বার পঠিত
উপরোক্ত কথাগুলো বলা এই কারণে যে যতটা সম্ভব সুষ্ঠু ভাবে ভোট করা যায় যদি একজন শক্ত, বজ্রকঠিন ব্যক্তি, যিনি নিয়ম জানেন, সংবিধান জানেন, তিনি যদি পুরো প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন। সরকার, তা সে যত শক্তিশালিই হোক, তাদের খেয়াল খুশি মতো সেই ব্যক্তিকে পরিচালিত করতে পারে না। আমাদের রাজ্যে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়িয়ে গেছে যে নির্বাচন, বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেই খুনোখুনি হবে, বহু লোক মারা যাবে। এটা যেন ভবিতব্য, এর অন্যথা যেন হতে পারে না!
যাদবপুরে র্যাগিং – ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অন্বেষণ : সোমনাথ রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২০ আগস্ট ২০২৩ | ৫১১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ঐতিহ্যের মধ্যে র্যাগিং-এর ঘটনাগুলিকে (একটি বীভৎস মৃত্যুর ঘটনার পাশাপাশি যখন বহু বছর ধরে হয়ে আসা অত্যাচারের বিভিন্ন বয়ান উঠে আসছে) কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, এইটা আমাদের ভাববার বিষয়। ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিং একটি অতিসংক্রামিত সামাজিক ব্যাধি। বিভিন্ন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০০০ সাল থেকে ভারতের বিচারব্যবস্থা এবং শিক্ষানিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি র্যাগিং প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থার নিদান দেয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই ব্যবস্থাগুলির প্রায় কোনওটিই লাগু হয়নি। এবং ছাত্রদের মধ্যেও র্যাগিং বিরোধী কোনও সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। বরং, এই কথা শোনা গেছে, ২০০৭ সালে নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিরা র্যাগিংকারীদের শাস্তির বিরোধিতা না করায় বাকি ছাত্রদের একটি অতিসরব দলের চাপে তাদের পদত্যাগ করতে হয়। আমরা জানি, র্যাগিং পরম্পরামেনে চলে। জুনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা পরের বছরের জুনিয়র ব্যাচকে র্যাগ করে। এক প্রতিষ্ঠানের র্যাগিং-এর গল্প শুনে আরেক প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা র্যাগিং-এ উদ্বুদ্ধ হয়। সম্ভবতঃ সেই ধারা ধরেই কলোনিপ্রভুদের বহু বদঅভ্যেসের মতন এই প্রথাও এদেশের শিক্ষিত সমাজে ঢুকেছিল। আর, পরম্পরা হিসেবে একটি অপরাধকে বহুজনের মধ্যে মান্যতা দিয়ে দিলে, তথাকথিত বিবেকবান ব্যক্তিও অনেকক্ষেত্রে তাতে লিপ্ত হতে সংকোচ বোধ করেন না। কিন্তু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবে এ পরম্পরার বাহক, তা তো ঠিক এর বিপরীতমুখী।
পুস্তক সমালোচনা : সাদা পর্দার আলো (শুভদীপ ঘোষ) : সোমনাথ ঘোষ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০১ এপ্রিল ২০২৪ | ৬৯৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শুভদীপের প্রবন্ধগুলি কিন্তু সেইসব চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে যাদের কাজ শৈল্পিক ভাবে নিপুণ। শুভদীপের প্রবন্ধে যেমন আছেন গোদার, বার্গম্যান, আন্তনিওনি, হিচকক, চ্যাপলিন তেমনই আছেন কিয়ারোস্তামি, ওজু, আমাদের সত্যজিৎ, মৃণাল এবং বর্তমান সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার নুরি বিলজ সিলান।
যে কোন সফল প্রাবন্ধিকের লেখনীর একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে। শুভদীপের লেখনীর দুটি বৈশিষ্ট্য আছে। দ্বিতীয়টির কথায় আমরা একটু পরে আসছি। শুভদীপ কোন প্রবন্ধের শুরুতেই সাধারণত মূল বিষয়ে সরাসরি প্রবেশ করেন না। এখানে মূল বিষয় বলতে বলা হয়েছে চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রকার সম্পর্কিত আলোচনা। লেখকের একাধিক প্রবন্ধই শুরু হয় কোন উদাহরণ/ উপমা বা কোন সংজ্ঞার ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ দিয়ে। যেহেতু প্রবন্ধগুলি সময়কাল অনুযায়ী সাজানো (বইয়ের সর্বপ্রথম প্রবন্ধ তার সাম্প্রতিকতম লেখা), তাই বোঝা যায় সময়ের সাথে লেখক এই স্টাইলটি রপ্ত করেছেন।
বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে…….. : সোমনাথ গুহ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ২৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব।