এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সীমান্ত থেকে

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৫৭৩ বার পঠিত
  • গ্রামের নাম তেঘড়িয়া,পাথরঘাটা। এইসময়-এর প্রতিবেদন থেকে খবর পেয়েছিলাম সেইখানকার জমি অধিগ্রহণ ও তৎসংক্রান্ত অসন্তোষের কথা। ২৭/১২/২০১৩ শনিবার সকালে সেই গ্রামে গেলাম। এর আগের সপ্তাহে এমনি-ই খানিকটা অবকাশ পেয়ে ঘুরছিলাম রাজারহাটের সিটি সেন্টারের পেছন দিকটায়। একটা বড়ো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষে পিচের রাস্তা গ্যাছে, তার পাশে খাল, খালের ওপারে একটা গ্রাম, যেটা আজ অবধি অধিগৃহীত হয় নি। হাঁটাপথটা নো-ম্যানস্ ল্যান্ডের মতন। শহরের উদ্বৃত্ত যেমন সিটি সেন্টারের ফেলে দেওয়া প্যাকেট ইত্যাদি, ম্যাকডির উচ্ছিষ্ট হাড্ডি, সিসিডির কাপ সব জড়ো হয়ে আছে খালের ঐ পাড়টায়। এ-পারে তকতকে আবাসন, কিম্বা একটু এগোলে মাটি গুঁড়ো করে নতুন কন্সট্রাকশন উঠছে, সিমেন্টের ধুলো এসে পড়ছে অন্যপারের গ্রামে। গাজা স্ট্রিপের তুলনা মাথায় এলো, নিজভূমে উদ্বাস্তু কিছু মানুষ আর ঘিনঘিনে আবর্জনার নো-ম্যানস্ ল্যান্ড। একটা পুকুর মতন জায়গায় কিছু লোক কাজ করছে। খাল পেরিয়ে এগিয়ে যেতে এক প্রবীণের সঙ্গে কথা শুরু হল। শুনলাম যেটাকে পুকুর ভেবেছিলাম সেটা এক কালে মাঠ ছিল, শীতের সময় সবজি ইত্যাদি চাষ হত। নিউটাউন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খালের মুখ গুলো বুজে যায়। ‘বুঝলে এখানে আগে এক গোড়ালি জল দাঁড়াত না, এখন বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল’।ওই মাঠে এখন পানিফল চাষ হচ্ছে। ভদ্রলোকের জমি ছিল সিটি সেন্টার থেকে একটু এগোলেই। খুব বেশি না, তবে সম্বৎসরের খোরাকি আসত ওই জমি থেকে। তারপর ‘তোমার মত চেহারার কিছু লোকজন এসে বলল, জমি দিয়ে দিতি হবে। বাড়ির লোককে চাকরি দেবে ওরা।’ বলাবাহুল্য আবাসনে গ্রামের সবার চাকরি হতে পারে না। জমির জন্য ২০০১ সাল নাগাদ কাঠা প্রতি ৬০০০ টাকা হারে পেয়েছেন ওনারা। চাষ না থাকা এবং নোংরা আর নিকাশি বিপর্যয়ে ভদ্রলোক নিশ্চিত এখান থেকে ওনাদেরও কিছুদিনের মধ্যে চলে যেতে হবে। ৬০০০ টাকা স্কোয়ার ফিট অবশ্য এখনো নিউটাউনে জমির দাম ওঠে নি। তবে ওনাদের থাকার জায়গা এ চত্বরে জুটবেনা বলেই মনে হয়। ওনার সমস্ত রাগ সিপিএমের ওপর। তৃণমূল নিয়ে বললেন এরা আর কী করবে, মাজা তো ভাঙা হয়েই গ্যাছে। খটকাটা এখানেই লাগে, ধ্বংসের এমন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের ভ্যানগার্ড হওয়ার তাত্ত্বিক মঞ্চ যে বৃহত্তম বাম দলটি, এনাদের কাছে চিহ্নিত প্রধান শত্রু শেষে তারাই।
     
    মাঠে ১০০ দিনের কাজ চলছে বহুতল প্রকল্পের গা বেয়ে চাষের মাঠ
     
     
    যাই হোক, পাথরঘাটা তেঘড়িয়ার কথায় আসি। গ্রামটা সত্যিই সীমান্তে, এরকম নো-ম্যানস ল্যান্ড গড়ে ওঠে নি বলে সীমান্তটা প্রকট ভাবে চোখে পড়ে। নিউটাউনে টাটা মেডিকেলের পর ডিএলএফ-টু ছাড়িয়ে গোল আইল্যান্ড থেকে ডানদিকে ঘুরে ইডেন কোর্ট নামের বিশাল নির্মীয়মান আবাসনের গায়ে এসে পিচের রাস্তা শেষ হয়ে যায়, গাড়ি আর এগোতে পারে না। বুলডোজার-ক্রেনগুলো পেরোলেই পাঁচিল। পাঁচিলের ওপারে অন্য দেশ, যে দেশে আমরা রাজারহাটে পিকনিক করতে যেতাম। আমবাগান-ছাওয়া মাঠ, টিউবওয়েল, ইঁটের রাস্তার দুপাশ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ক্ষেত, তার মধ্যে সর্ষে তার ফুল নিয়ে প্রকট।  মাঠে লোকজন একশ দিনের কাজে পুকুর কাটছে, কবরস্থান বাঁধাচ্ছে। লোকে অটোর বদলে সাইকেলে যাতায়াত করে। ক্লিশের ব্যবহার এনে বলা যায় ইন্ডিয়া ও ভারতের সীমান্তে ঐ পাঁচিলটি। গ্রামে ইতিউতি খোঁজ নিচ্ছিলাম জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কী চলছে- হাল্কা টাক পড়া এক ভদ্রলোক বললেন, গোটা রাজারহাটেরই তো এই অবস্থা, ওনার চুলের মত এক খাবলা আছে তো এক খাবলা নেই। কখন নোটিশ বেরোচ্ছে কেউ জানে না, হঠাৎ করে শোনা যাচ্ছে জমির দাম আদালতে পড়ে আছে। এখনকার অধিগ্রহণ আন্দোলনে যাঁরা আছেন, এরকম একজনের খোঁজ পেলাম, সাইজুদ্দিন ঢালি। সাইজুদ্দিন ও তাঁর ভাইদের সঙ্গে কথা হল এই নিয়ে। ওনারা কত পুরুষের বাসিন্দা তার ইয়ত্তা পেলাম না। সাইজুদ্দিন আমাকে বাড়ি জমির দলিল দেখালেন, অজস্র পুরুষের উত্তরাধিকারের খতিয়ান সেখানে। এই মুহূর্তে এক্সটেন্ডেড ঢালি পরিবারের প্রায় ২৫০ জন সদস্য। প্রায় সকলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন জমিতে চাষ করেন। এনাদের জমির ২৪০ বিঘে ইতিমধ্যে অধিগৃহীত হয়ে গ্যাছে। সবচেয়ে বেশি অংশ গ্যাছে কলকাতার নবতম আকর্ষণ ইকোপার্কের পেটে। ২০০০-এর শুরুর দিকে, তখন পেয়েছিলেন কাঠাপ্রতি ওই ৬০০০। পরে সেটা বেড়ে ১৩০০০ হলো। এখন ক্ষতিপূরণের দাম অবশ্য তুলনায় ভালো, কাঠা প্রতি ৬০০০০ এর কাছাকাছি। অবশ্য, ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ৬ লাখ টাকা কাঠাপ্রতিতে নাকি খোলা বাজারে জমি বিক্রি হচ্ছে। ‘আচ্ছা, ওরকম দাম পেলে আপনি জমি দেবেন?’প্রশ্ন করলাম।সাইজুদ্দিনের জবাব ‘আর এক ইঞ্চিও দেব না, আগে হলে দিতাম।এখন যা প্রতারণা হয়েছে; আমি কিন্তু গ্রামের ছেলে।’ প্রতারণার ঘটনাগুলো শুনছিলাম- ‘তৃণমূল ভোটে জিতল, দিদি বললেন আর কোনও জমি অধিগ্রহণ হবে না। আমরা সবুজ আবির মেখে ঢোল বাজিয়ে ঘুরলাম। তারপর বছর ঘুরতেই এই জমি নিয়ে টানাটানি। তৃণমূলরা এখন বলে উন্নয়নে বাধা দিও না।’ সাইজুদ্দিনের জমির ওপর টাটাবাবুদের নজর আরও আগের। ‘২০০৮-এ বামফ্রন্টের সময় নোটিশ আসে। আমাদের বেশির ভাগ জমি ততদিনে চলে গ্যাছে। আমরা কোর্টে যাই। তারপর টাটারা আসে, খোলামাঠে বেশ কয়েকবার মিটিং হয়। বলে আমাদের কাজের ব্যাপারটা দেখবে। গ্রামের উন্নয়ন করে দেবে। রাস্তা আলো স্কুল ইত্যাদি। তারপর চুপচাপ। ২০১৩য় আবার আসে জমি নিতে। আমি কোর্টে যাই, এবার স্টে অর্ডার দ্যায় কোর্ট। আমাকে থানা থেকে ডেকে পাঠায়। অফিসার প্রথমেই বলেন আমি বে-আইনি ভাবে জমি আটকে রেখেছি। স্টে অর্ডার দ্যাখাতে চুপ করেন।’ কাগজপত্রগুলো সব দ্যাখাচ্ছিলেন সাইজুদ্দিন, ২০০৮ এর বর্তমানের পেপার কাটিং থেকে শুরু করে ২০১৩-র স্টে অর্ডার। ‘এর মধ্যে টাটারা কমপ্লেন করে ওদের ইঞ্জিনিয়ারকে কিডন্যাপ করেছি আমরা। এখনও বোধ হয় কেস ঝুলিয়ে রেখেছে। এ জমি দেওয়া এখন ইজ্জতের ও প্রশ্ন কিন্তু।’ ... ‘আগের সরকার যা করত সামনা-সামনি করত। পুলিশ পাঠিয়ে জমি ঘিরে নিত। কিন্তু এ করে লুকিয়ে, মাঝরাতে জমিতে গুন্ডা নামায়, ফসল নষ্ট করে, খুঁড়ে দ্যায়।’‘জমি থেকে আপনাদের চলছিল কেমন?’ ‘২৫০ জনের মত লোক, তারপর ভাগচাষীরা সব তো খেয়ে-পরে বাঁচছিল। পড়াশুনোও তো শেখাচ্ছিলাম বাচ্চাগুলোকে। এই চাষের জমি থেকে আমরাও তো কিছু পড়াশুনো করেছি। কোর্ট-কাছারি টুকু করতে পারি। চলে গেলে কী চলে তাও তো দেখছি।’–‘নগরায়ণ হলে তো আরও উন্নয়ন হবে, আপনাদের এখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের হাল কেমন?’ সাইজুদ্দিনের এক ভাই জানালেন- ‘হাইমাদ্রাসা আছে, স্কুল আছে একটু দূরে। তো সেসব তো কিছু করল না। আগে একগ্রাম লোকের সামনে অনেক কথা দিয়েছিল ওরা। জানেন, এখান থেকে কোনও প্রসূতিকে আরজিকরে নিয়ে যেতে চার ঘন্টা লাগে। তো করত রাজারহাটে একটা সরকারি হাসপাতাল। আমরা হেসে হেসে জমি দিতাম।’ জানতে চাই, যাঁদের অলরেডি জমি চলে গ্যাছে, তাঁদের কী হল? ‘বসতবাটিও তো গ্যাছে। রাজারহাটে বেশিরভাগ লোকই জমি দিয়েছে ৬০০০ টাকা করে। তো সে দামে তো সুন্দরবনের বাইরে কোথাও থাকার জায়গাও পাওয়া যাবে না। নয় তো কলকাতার ফুটপাথে আছে।’‘ওদের আর দেখিনি।’ ‘পাশ থেকে মন্তব্য করলেন একজন। সাইজুদ্দিন বিতর্কিত মাঠটাতে নিয়ে চললেন। ওঁদের ছবি তুলতে গেলেন। অল্পবয়স্ক একজন ছবিতে থাকতে চাইলেন না। ‘সরকারি চাকরির চেষ্টা করছি দাদা, কেস-এ আমাকেও ঝুলিয়ে দেবে ওরা।' 
    সাইজুদ্দিন ও তার ভাইয়েরা দলিলপত্র দ্যাখাচ্ছেন দুশ বছরের দালান যিনি এখন চাষ করছেন
     
     
    বেরোনোর মুখে সাইজুদ্দিনরা বললেন ‘এই বাড়িটার ছবি তুলে নিন দাদা। ২০০ বছরের পুরোনো বাড়ি।’ পুরোনো ভারতে একটা সাটেনেবেল সিস্টেম ছিল যেখানে রাজারহাটের একটা গ্রাম মানুষকে অন্ততঃ দুশো বছর একটা জমি-বাড়ির ওপর দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল- শাইনিং ইন্ডিয়ার নিউটাউন দুশো বছরের শহরজীবন পাবে কি? আমরা অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফাঁকে ফাঁকে সাস্টেনেবিলিটি শব্দটা গুঁজে দিয়ে ফান্ডিং চাইছি আজকাল। সাস্টেনিবিলিটির আরেক নমুনা দেখলাম সাইজুদ্দিন ঢালির ক্ষেতে এসে। অসাধারণ চাষের বাহার। এক জায়গায় বেগুন হয়েছে তো পাশে কুমড়ো, কিছুটা সর্ষের ক্ষেত। একটা ধানের বীজতলা। আর টাটাদের পাঁচিলের গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে রজনীগন্ধার গাছগুলি। জিগেশ করলাম ‘চাষে এখন খরচা কেমন? জল পান কোথা থেকে?’ সাইজুদ্দিন বললেন ‘শ্যালো আছে আমার, জল তুলে নিই’ওয়াটার রিসোর্সের ক্লাস করা আমি এবার আঁতকে উঠি- ‘জলসেচ ছিল না এখানে?’ – ‘ছিল তো। বাগজোলা থেকে জল আসত। তো ২০০০ সাল নাগাদ সে সব পুরো রাজারহাটে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই নোটিশ বেরোনোর কিছু আগে। যাদের পাম্প কেনার পয়সা নেই, তারা এমনিই চাষ ছেড়ে দ্যায়।’ কী ভয়ংকর! মাটির তলা থেকে জল তুলে চাষ করা কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে এখানে আলাদা করে লিখছিনা। কিন্তু সত্যিই শিউরে উঠি আমি, কয়েক বছর আগে সেচ বন্ধ করে তারপর জমি দখল করে বাড়ি তোলার ধান্দা যাদের, তারা তো আক্ষরিক অর্থে নিজের মাকে বিক্রি করে দিতে পারে! জমিতে চাষ করছিলেন যে চাচা, তিনি বললেন- ‘আমি তো চাষ ছাড়া আর কিছুই জানিনা। জমি চলে গেলে এই বয়সে খাবটা কী?’ এ প্রশ্ন অনেকবার আলোচনা-টোনায় শুনেছি। কিন্তু এখন যিনি খাবটা কী বললেন, ওই বীজতলার ধান ছড়িয়ে বড় করে আমার অন্ন তিনিই হয়তো সংগ্রহ করেন। সাইজুদ্দিননে জিগেশ করলাম, ওই যে বড় বাড়িগুলো, একসময়ে আপনার, আপনার ভাই বন্ধুদের মাঠ ছিল। এখন পিচ-কংক্রিট। কেমন লাগে? উত্তর দিলেন- ‘কী বলব দাদা, ওখানে এখন তো আমাকে ঢুকতেও দ্যায়না, দেখতেও দ্যায়না ভেতরে কী আছে। কিন্তু একটা হাসপাতাল যদি হত। দরকারে অদরকারে আমিও যেতে পারতাম।’
     
    ওনাদের টাটা করে বেরিয়ে পড়লাম শহরের দিকে, টাটাদের বিশাল ইডেন আবাসন, সেখানে আমাকেও ঢুকতে দেবেনা ভিজিটর্স বুকে সই না করে, পরিচিত নাম না দেখিয়ে। সঙ্গত কারণেই দেবে না। হিডকোর জমি তো আর সাইজুদ্দিনের ক্ষেত বা  ২০০ বছরের বাড়ির চত্বরের মত দখলযোগ্য নয়। ক্রমশঃ এগিয়ে গেলাম শহরের অ্যালিয়েনেশনের দিকে। সেখানে কোনও বহুতল ২০০ বছর টেকানোর ডিজাইনে তৈরি হয় না,  মাটির গভীর থেকে পাম্প দিয়ে জল তোলা হয়, হাঁটা-পথ পেরোনো হয় গাড়িতে-অটোতে পেট্রো-রাজনীতির বৈদেশিক নীতিকে সমীহ করতে করতে। বাড়ির সামনের জমিতে গাছ লাগানোর অধিকার থাকে না বহুতলের বাসিন্দার। শহরের রাস্তায় নো-সাইক্লিং বোর্ড লাগিয়ে রেখে যায় কলকাতা পুলিশ। দেশের ডিপ্লোম্যাট কাজের মাসিকে কম পয়সায় খাটিয়ে কেস খান। যেখানে রাজারহাটের  উদ্বাস্তুরা শহরের ফুটপাথে আশ্রয় ন্যান। আবর্জনা ফেলে আসা হয় সিটি সেন্টার টু এর পাশের গ্রামে।
     
    পাঁচিলের ওপারে পড়ে থাকল ফেলে আসা হাজার বছরের গ্রাম্যতা মাখা সেলফ-সাস্টেইন্ড ‘জড়’-ভারত। আর সীমান্ত রক্ষার শেষ প্রহরীদের কয়েকজন।
     
    টাটার প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভিতর সর্ষে চাষের জমি রজনীগন্ধা ক্ষেতে ঢুকে পড়তে চাইছে আবাসন ইডেন কোর্ট আবাসন- প্রস্তাবিত প্ল্যানে

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | ২৫৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • অমিতাভ | 220.18.60.65 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:২১88799
  • মুশকিল হল, আজকের দুনিয়ায় কৃষি একটা লো লেভেল ইকুইলিব্রিয়াম দিতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। হয় তোমায় গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হবে, যেমন উত্তর কোরিয়া থাকে, আর নয়তো দুনিয়ার ট্রেন্ড ধরতে হবে। যে পৃথিবীতে চিন আছে, সেখানে শিল্পকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা বাস্তববিস্মৃত হওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। দুনিয়ার কৃষিপ্রধান অর্থনীতিগুলো, যেটাকে কায়দা করে গ্লোবাল সাউথ বলতে পারি, এই কথাটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। দেখো, পোস্ট মার্কসিস্ট কিছু আলোচনা শোনার সৌভাগ্য এক সময় হয়েছিল, যেখানে মূল জেহাদ ছিল গ্লোবাল সার্কিট অব ক্যাপিটালিজের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই তর্কও কোনও ভায়াবল অল্টারনেটিভের কথা বলতে পারেনি। আসলে এই সার্কিটের বাইরে কোনও জায়গা নেই। দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু বাস্তব। অস্বীকার করবে কী করে?
    যে সামাজিক যৌথসত্তার কথা বলেছ, সেটাও যাকে বলে আ থিং অব দ্য পাস্ট। যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই, খুবই খুশি হব, কিন্তু আসলে যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী কালচারাল কলোনিতে বাস করছি, সেটা অস্বীকার করার মতো কোনও কারণ এখনও খুঁজে পাইনি। সেই কলোনিতে ইন্ডিভিজুয়ালই একমাত্র। তার কোনও এক্সটেন্ডেড একজিস্ট্যান্স নেই।
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:২৭88800
  • এই কৃষি বনাম শিল্প তর্কটা মনে হয় আরো আগে হওয়া উচিত ছিল - ন্যাশানাল লেভেলে। তার থেকে একটা পলিসি বেরিয়ে এলে ভাল হত। কেন এমন হয় না - সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়ে একটা পলিসি বানাতে পারত। তাহলে অনেক কম ঝামেলা হত - অন্তত এই জমির লড়াইতে লোকের প্রাণ যেত না - বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের তো দিক্লেয়ার্ড রিহাবিলিটেশান পলিশি আছে - তাহলে এই পলিসি বানাতে কি সমস্যা?
  • Ekak | 24.96.125.189 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৫২88801
  • বাজার কে অস্বীকার করে চলা সম্ভব নয় কিন্তু বাজার মানে ক্রনি ক্যাপিটালিস্ম ও নয় :)

    শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন ? এইযে বেলান্দর এর চাষীদের জমি ওয়ান থার্ড দামে নিল ইনফোসিস আর এস এম কৃষ্ণা দালালি করলেন এটা কী বাজারের সুস্থ বিকাশ বলব ? জমির অধিকার কৃষকের । সে বেচবে বাজারদরে । সরকার কোত্থেকে আসে এর মধ্যে ? যেখানেই সরকারের অতিরিক্ত নাক গলানো সেখানেই গোলমাল । শিল্পবিপ্লবের হদ্দমুদ্দ মেনে নিতে রাজি আছি কিন্তু এই সরকার-শিল্পপতি আঁতাত এর নাম শিল্প নয় ।
  • Somnath Roy | 132.252.251.244 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১১:৫৫88802
  • আমার বক্তব্য হচ্ছে, অল্টারনেটিভ একটা আছে। সেটা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত ধারার থেকে পিছিয়ে বলে সেটাকে অগ্রাহ্য করব কিম্বা গ্লোবাল ক্যাপিটাল হেজিমনিকে শেষ কথা বলে দেব সেরকমও কি ঠিক? ভারতের যা সমস্যা, তা কিন্তু প্রায় সব দেশেরই সমস্যা। আমেরিকার মতন এবরিজিনাল পপুলেশনকে মেরে শেষ করে দেওয়া যেখানে হয় নি, সেখানেই বিনা বাধায় এই মডেল জিতে গ্যাছে এরকম না। আর গণতন্ত্রের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাধাটাও বেশি পাচ্ছে।
    ফলে শেষকথা এক্ষুনি বলে দেওয়া যায় মনে হয় না।
    মানুষের অধিকারের পাশাপাশি গাছ-পাখি-পরিবেশের প্রশ্নতেও মার্কিন হেজিমনি আটকে যাচ্ছে। এবং সেখানে যৌথ সত্ত্বার প্রশ্ন আসছে।
  • sosen | 24.139.199.11 (*) | ০৭ জানুয়ারি ২০১৪ ১২:২৬88803
  • ৪৭-৪৮ -এ, অর্থাৎ কৃষ্ণপুর রিফিউজি কলোনির কো অপারেটিভ হিসেবে দমদম পার্ক তৈরী হওয়ার সময় সম্পর্কে সত্যি বিশেষ জানি না। তবে একটা লম্বা সময় ধরে ওখানে থাকা লোকজনের মুখে যতদুর শুনেছি ওখানে হোগলাবন ছিল, বাবা বলেছিলেন বন্যপ্রাণী ছিল। ভেড়িগুলি ছিল বোধহয় সল্টলেকের দিকে। জন অধ্যুষিত ছিল বলে শুনিনি, বা উচ্ছেদের কোনো গল্প শুনিনি বৃদ্ধদের কাছেও। তবে এটা তো শোনা কথাই, ওই অঞ্চলে থাকার সুবাদে। তবুও ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিত এর চেয়ে অন্যরকম ছিল বলে মনে হয়, সালটা খেয়াল করে দেখলে। কোনো ইতিহাস , কোনো লেখা আছে কি, এই মত্স্যজীবী কলোনি উচ্ছেদের? আমি খুবই ইন্টারেস্ট পেলাম। জানা থাকলে একটু দেবেন।

    কৃষি কেন শিল্প হয়ে উঠতে পারে না , বা তাতিন-এর উল্লিখিত এই জায়গাটাতে কৃষি এবং তথাকথিত শিল্পের কমপিটিটিভ সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কোনো স্টাডি করার পর-ই এই আগ্রাসনের পলিসি তৈরী হয়েছে কিনা এই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এর পরেও। শিল্প আর কৃষি কি মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ?

    যদিও তর্ক করার মত আমিও বিশেষ কিছু জানিনা। চোখের সামনে যে একদল চেনা মানুষকে জীবিকা হারাতে দেখলাম, এবং সেই জীবিকার শূন্যস্থান পূর্ণ করতে অন্য কিছু মানুষ ইনভেস্টমেন্ট এর জন্য পাঁচটি করে ফ্ল্যাট কিনে তা হাত বদল করার ব্যবসায় লিপ্ত হয়ে গেল, এটা তো বাস্তব। দুর্ভাগ্যজনক বলে যদি স্বীকার করি তাহলে প্রতিকারের পথও খুঁজতে হবেই।
    ক্ষতি করে ক্ষতিপূরন না করে, ক্ষতি না করার চেষ্টাও তো করা যেতে পারে--
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.20 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:৩৪88805
  • একক-এর সঙ্গে একমত।

    "শিল্পবিপ্লবের হদ্দমুদ্দ মেনে নিতে রাজি আছি কিন্তু এই সরকার-শিল্পপতি আঁতাত এর নাম শিল্প নয় ।"
  • তাপস | 233.29.204.178 (*) | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:০১88806
  • এইটাও তোলা থাক
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন