এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • শাসকের রক্তচক্ষু ও অদম্য, অবিচল তিস্তা শেতলবাদ

    সোমনাথ গুহ
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১৩৮৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)

  • তিস্তা শেতলবাদ জামিন পেলেন না। ২৬শে জুন তাঁর জুহুর বাড়ি থেকে গুজরাটের জঙ্গি দমন শাখা তিস্তাকে গ্রেপ্তার করে। তারিখটা তাৎপর্য মূলক, ঠিক ঐ দিন ৪৭ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। আসমুদ্রহিমাচল এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল, যাঁদের সর্বাগ্রে ছিল আরএসএস। ইতিহাসের এ এক অদ্ভুত পরিহাস যে ইন্দিরা স্বৈরতন্ত্রকে মোকাবিলা করতে গিয়ে ঐ একই আন্দোলনে আরএসএস রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে এসেছিল। ধীরে ধীরে তাঁরা হিংস্র, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বীজ বপন করেছে যা আজ ডালপালা মেলে আমাদের মুমূর্ষু গণতন্ত্রের সর্ব স্তরে বিস্তৃত। বিচারব্যবস্থাও তাঁদের সর্বগ্রাসী প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। ভূতপূর্ব সাংসদ এহসান জাফরি যাকে গুজরাট দাঙ্গায় নৃশংস ভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তাঁর স্ত্রী জাকিয়া জাফরি শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে গুজরাট দাঙ্গা ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র যাতে রাজ্যের সর্বোচ্চ নেতা এবং পুলিশ প্রশাসন পুরোপুরি ভাবে যুক্ত ছিল। তিস্তা ছিলেন ঐ মামলায় সহ-আবেদনকারী। সুপ্রিম কোর্ট যাঁরা বিচার প্রার্থী তাঁদেরকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য হর্তাকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে আইন অনুযায়ী আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করে। ৩০শে জুলাই তিস্তার জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। আমেদাবাদের আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে কারণ, জামিন দেওয়া হলে মানুষের ধারণা হবে যে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেও আদালতে এতো সহজে ছাড় পাওয়া যায়। তিস্তা হাই কোর্টে যায়, সেখানেও জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

    ৮ই জুন, ২০০৬, জাকিয়া জাফরি অভিযোগ করেন যে গুজরাট দাঙ্গা ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র যাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আরও ৬২ জন যুক্ত ছিলেন। তিনি এঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তাঁর ১১৯ পাতার অভিযোগের সাথে ২০০০ পাতার প্রমাণ সংযুক্ত ছিল। এর মধ্যে ADGP আর বি শ্রীকুমার (যিনিও তিস্তার সাথে গ্রেপ্তার হয়েছেন) এবং অন্যান্য আইপিএস অফিসারদের হলফনামা ছিল, ফোনে কথোপকথনের সিডি ছিল। ২৮ মার্চ, ২০০৮ সুপ্রিম কোর্ট ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’ (SIT) গঠন করেন। তিস্তা সমস্ত গোয়েন্দা দপ্তরের অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিটকে আবেদন করেন। এছাড়া রাজ্যে অবস্থিত সেনাবাহিনী, মানবাধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন, জাস্টিস ভার্মা (সুপ্রিম কোর্টের ভূতপূর্ব প্রধান বিচারক), জেমস লিংডো (প্রধান নির্বাচন কমিশনার), এবং প্রভাবশালী পুলিশ অফিসার কে পি এস গিলের মতামত নেওয়ার জন্য সিটকে অনুরোধ করেছিলেন। সিট কোনও পাত্তা দেয়নি। তিস্তা বারবার অভিযোগ করেন যে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র প্রমাণ করার জন্য সিট যথেষ্ট তাগিদ দেখাচ্ছে না। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! অথচ ২০০৪ সালে আদালত বলছে, আধুনিক যুগের নিরোরা অন্যত্র তাকিয়ে ছিল যখন বেস্ট বেকারিতে নিরীহ নারী ও শিশুরা দগ্ধ হচ্ছিলেন। ২০১২ সালে একটি নিম্ন আদালত বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেয় যখন মোদী সরকারের ভূতপূর্ব মন্ত্রী মায়া কোদনানিকে দণ্ডিত করা হয়। শ্রীকুমার নানাবতি কমিশনের কাছে ‘দাঙ্গা’য় সরকারের মদত সম্পর্কে হলফনামা দিয়েছিলেন। ২০১০ নাগাদ সিট বলে অভিযোগের কিছু সত্যতা থাকলেও সেগুলো শাস্তিযোগ্য নয়। ২৫জুলাই, ২০১১, সুপ্রিম কোর্ট মনোনীত ‘অ্যামিকাস কিউরিয়া’, (নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক) রাজু রামচন্দ্রন তাঁর সাড়াজাগানো রিপোর্টে জানান যে নরেন্দ্র মোদীকে অভিযুক্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আছে। ঐ সময়ে দেশের রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণ স্বীকার করেন যে তিনি গুজরাটের ক্ষেত্রে অসহায় বোধ করেছিলেন। তিনি নিজের চিন্তা গোপন করেননি, পরিষ্কার বলেছিলেন, “আমি মনে করি গুজরাট দাঙ্গায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ষড়যন্ত্র ছিল”। (তিস্তা শেতলবাদের ‘ফুট সোলজার অফ দ্য কন্সটিটিউশন’, পৃ-৩১-৩২) তবুও সিট মোদী এবং অন্যান্যদের সম্পূর্ণ নির্দোষ সাব্যস্ত করে এবং রায় দেয় যে এঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য কোনও প্রমাণ নেই।

    সেপ্টেম্বর ২০১৮য় জাকিয়া জাফরি সিটের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তিস্তা এবং সিজেপির (সিটিজেন্স ফর জাস্টিস এন্ড পিস) সাহায্যে ২৩০০০ পাতার গোয়েন্দা রিপোর্ট, পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং অগ্নি নির্বাপক সংস্থার রেকর্ড তিনি আদালতে জমা দেন। গুজরাটের অত্যন্ত বিদ্বেষমূলক, হিংসাত্মক পরিবেশ যেখানে প্রতিটি পদে পদে তিস্তাদের ভয়ঙ্কর বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, সেখানে এতো বিপুল নথি যোগাড় করার কাজটাই এক কথায় অভূতপূর্ব। তিস্তা তাঁর বইয়ে লিখছেন, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম যে যাঁরা ক্ষমতা ও দায়িত্বে আছেন তাঁদেরকে গণহত্যার জন্য দায়ী করে ফৌজদারি ও প্রশাসনিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন এটা দেখার বিষয় যে যত প্রমাণ দাখিল করা হয়েছে সেটার ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারার মতো দম ভারতের বিচারব্যবস্থার আছে কি না?

    তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন! তিস্তার শরীর বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল। আহমেদাবাদে নারাংপুরা একটা অভিজাত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। সেখানে শেখ নামে এক ভদ্রলোক ও তাঁর পরিবারও থাকেন। তাঁদের দেখে হিন্দুদের প্রত্যহ গাত্রদাহ হয়ঃ কোন সাহসে এঁরা পুরানো শহর ছেড়ে এখানে এসে থাকে। একদিন কিছু মহিলা ধাক্কা মেরে শেখসাবকে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়! বার্তা পরিষ্কার: মুসলিমদের এখানে জায়গা নেই! এরপরের ঘটনা আরও ভয়ঙ্কর। তিস্তা জানতে পারেন সেই বছর নবরাত্রি/গর্বা উৎসবের সময় ঐ খুনি মহিলাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়!

    তিস্তা সাংবাদিকতায় আসেন ১৯৮৩ সালে। পরের বছর ভিওয়ান্দিতে দাঙ্গা হয়। সেই বছর থেকেই বম্বেতে বাল থ্যাকারের নেতৃত্বে হিন্দুত্বের বিষাক্ত অভিযান শুরু। ১৯৯২য়ে ‘বাবর কা আওলাদ’দের মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে বোম্বে কীভাবে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে নিমজ্জিত হল তা তিস্তা একেবারে সামনে থেকে দেখেছেন। তিস্তা লিখছেন যে কোনও দাঙ্গার পরে মূল প্রশ্ন যেটা উঠে আসে সেটা হল, প্রথম পাথরটা কে ছুঁড়েছে? এটা তাঁর কাছে পরিষ্কার ছিল যে মসজিদ ধ্বংসের পরে প্রথম ঝামেলা শুরু হয় যখন আরএসএস-শিব সেনা ধরাভি, পাইধোনিতে উৎসব শুরু করে। বিজেপি গোয়েবলসিয় কায়দায় রটিয়ে দেয় যে হিংস্র বাংলাদেশি মুসলমানরা বাস এবং সরকারি সম্পত্তি আক্রমণ করেছে। একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে যা পুলিশ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। ওয়ারলেসের কথোপকথনে পুলিশের মজ্জাগত সংখ্যালঘু-বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে চলে আসে। ১৯৯৩তে পুরো শহর জুড়ে বিস্ফোরণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে দেয়। মিডিয়ার সাহায্যে বিজেপি একটি মিথ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়ঃ বিস্ফোরণের কারণেই দাঙ্গা হয়েছে, উল্টোটা নয়। ১৯৯১-৯৩ পুরো পর্যায় জুড়ে শিব সেনার মুখপত্র ‘সামনা’ সাঙ্ঘাতিক প্ররোচনামূলক প্রচার করে ব্যাপক উত্তেজনা ও হিংসার সৃষ্টি করে। এই কারণে নাগরিকদের উদ্যোগে একটি আরটিআই করে শিবসেনা প্রধান বাল থ্যাকারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার অনুমতি চাওয়া হয়। আইন-আদালত, পুলিশ-প্রশাসন সব কিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থ্যাকারে ঘোষণা করেন যে, তিনি আদালতের রায়ে পেচ্ছাপ করেন! নির্লজ্জ বিচারব্যবস্থা তবুও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে ভয় পায়, বলে সামনার লেখাগুলি শুধুমাত্র ‘দেশদ্রোহী মুসলিম’দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে তখন কেন্দ্রে এবং মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস সরকার!

    ১৯৯২-৯৩র বোম্বে দাঙ্গা তিস্তাকে সাংবাদিক থেকে অ্যাক্টিভিস্ট বানিয়ে দিল। তিনি ও জাভেদ আনন্দ তাঁদের সুপ্রতিষ্ঠিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে ‘কম্যুনালিজম কমব্যাট’ নামে পত্রিকা শুরু করলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য মানুষের মন থেকে ঘৃণা বিতাড়িত করা ও শান্তি ও আশা জাগান, যাতে করে নতুন করে কোনও দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মহৎ উদ্দেশ্য কিন্তু গুজরাটে তখন থেকেই বিপদের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। কমব্যাট এটার আঁচ পায় এবং ২০০২ এর দাঙ্গার আগেই পত্রিকা ঐ রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর পাঁচটা কভার স্টোরি করে। তিস্তা গুজরাটকে হাতের তালুর মতো চেনার সুবাদে পাঁচ বছর আগে থেকে বিভিন্ন ফোরামে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আমলা অন্যান্য সমাজকর্মীদের কাছে বারবার তাঁর আশঙ্কা প্রকাশ করেন। একটা পরিকল্পনা চলছিলো, একটা চরম মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি যা থেকে তিনি ক্রমশই নিশ্চিত হচ্ছিলেন ভয়ানক কিছু একটা হতে চলেছে। ২০০১ এর সেপ্টেম্বরে বিজেপি পরপর কটা উপনির্বাচনে পরাজিত হল, নরেন্দ্র মোদী রাজ্য রাজনীতিতে পদার্পণ করলেন। ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০২ দলিত মহিলাদের একটি সভায় তিস্তা আবার তাঁর আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন। সতেরো দিন বাদে গোধরায় সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলো, ৫৯ জন দগ্ধ কর সেবকদের মৃতদেহ পাওয়া গেল। পরের দিন থেকে বেলাগাম খুন ধর্ষণের বিভীষিকা সারা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।

    মার্চ মাসের প্রথম দিকে তিস্তা গুজরাট পৌঁছালেন। যা দেখলেন তাতে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন, লিখলেন, “দশ বছর পূর্বে বোম্বে যদি খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে গুজরাট হাজার গুণ বেশি খারাপ”। দাঙ্গা-কবলিত বিভিন্ন জায়গায় যেতে গিয়ে তিনি পাঁচবার আক্রান্ত হলেন। দুটি ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে গাড়ির চালক প্রাণের ভয়ে তাঁকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেলেন। প্রতিদিন রাতে তিস্তা ও তাঁর সাথীরা গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের কাছে ‘নাইটলি এলার্ট’ পাঠানো শুরু করলেন, যেমনঃ
    • মৃত কর সেবকদের পোস্ট মর্টেম খোলা আকাশের নীচে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অশোক ভাট এবং তারপর মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে করা হয়েছে, যা আইন বিরুদ্ধ।
    • মৃতদেহগুলি প্রশাসনের দায়িত্বে না দিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়! তাঁরা গাড়ির মিছিল করে সেগুলি আমেদাবাদে নিয়ে আসে, যা প্রবল প্ররোচনা সৃষ্টি করে।
    • রাষ্ট্র গোধরার পরে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য কিচ্ছু করেনি।
    • মে মাস অবধি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ জারি থাকে। কেপিএস গিল আসার পরে তা নিয়ন্ত্রণ হয়।
    • ‘সন্দেশ’ নামে একটি পত্রিকা এবং সঙ্ঘীদের নানা প্রচার পুস্তিকা ক্রমাগত মিথ্যা ও গুজব প্রচার করে উত্তেজনা বাড়ায় ও জিইয়ে রাখে। আরবি শ্রী কুমার, ও রাহুল শর্মা, ভাবনগরের এসপি বারবার এঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানায়, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়।

    ত্রাণ শিবিরগুলো ঠিক ভাবে চালানোর জন্য সিজেপি গুজরাট হাই কোর্টে প্রথম পিটিশন দাখিল করে। কেন্দ্রীয় সরকার ত্রাণের জন্য ১৬০ কোটি টাকা পাঠায়। রাজ্য সরকার ১৯ কোটি রেখে বাকি টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেয়, বলে রিলিফের জন্য খরচ করার কোনও প্রয়োজন নেই! শরণার্থীরা যাতে জল, দুধ, খাবার ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান এর জন্য বারবার আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। আস্পি চিনয়ের মতো স্বনামধন্য আইনজীবীকে বোম্বে থেকে এসে পাঁচ ঘণ্টা সওয়াল করতে হয় যাতে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো শরণার্থীদের দেওয়া হয়।

    সিজেপির হিসাবে দাঙ্গায় ১৯২৬ জন মারা যান, ২৮৮ জন নিখোঁজ। মোট সম্পত্তি ধ্বংস বা ক্ষতি অন্তত ৩৫০০ কোটি টাকা। রাজ্যের ৪৬৪টি থানার মধ্যে ২৮৪টিতে হিংসা ছড়ায়; ৯৯৩টি গ্রাম এবং ১৫১টি শহর দাঙ্গা-কবলিত হয়, প্রায় ৩০০টি দরগা, মসজিদ ধ্বংস হয়। এই গণহত্যা ১৬৮০০০ মানুষকে স্থানান্তরিত করে। প্রচুর মানুষ রাজ্য ছেড়ে চলে যান, অনেকে নিজের বাড়ি ত্যাগ করে মুসলিম এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেন। এখনো ৮০০০ পরিবার ‘রিলিফ কলোনি’তে বাস করেন, আতঙ্কে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন না। পিউসিএলের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এঁরা অত্যন্ত মর্মান্তিক অবস্থায় দিন গুজরান করছেন। এমনকি বিচারের ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত বৈষম্য করা হয়। গোধরা কাণ্ডে ৮৪ জন মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর জেলে ফেলে রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে আছে এক বালক যে ১০০% অন্ধ। অন্য দিকে দাঙ্গার মূল হোতারা, মন্ত্রী-সান্ত্রীরা তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে এবং পরপর নির্বাচনে জেতার সুবাদে, সর্বসমক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাজ্যের ১৮২টি নির্বাচনী কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৩টিতে আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়, যে কারণে শ্রীকুমার নির্বাচন কমিশনারকে জানায় যে রাজ্যে অবিলম্বে ভোট করার জন্য পরিস্থিতি নেই। নরেন্দ্র মোদী এর জন্য তাঁকে কোনদিনও ক্ষমা করেননি।

    চূড়ান্ত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও তিস্তা ও সিজেপি ক্ষতিগ্রস্তদের বিচার দেওয়ার প্রায় অসম্ভব কাজটি লেগে পড়ে থেকে চালিয়ে যান। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট তাঁরা মোট ৬৮টি মামলা দায়ের করেন। ১৫০ জনকে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত করতে সমর্থ হন, যার মধ্যে ১২৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তিস্তাদের নিরন্তর চেষ্টার কারণে বেস্ট বেকারি মামলা গুজরাট থেকে বম্বেতে স্থানান্তরিত হয়। লাগাতার ব্যর্থতার মধ্যে সেটা ছিল সফলতার একটা রুপোলী রেখা। তিস্তারা আনন্দে মেতে ওঠেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরএসএস দুই গুন্ডা বাইকে করে এসে তিস্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যায়।

    গত কুড়ি বছর ধরে তিস্তা ও তাঁর দলকে চরম একটা সন্ত্রাসের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। তাঁকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে; শারীরিক ভাবে আক্রমণ করার চেষ্টা হয়েছে। নিশ্চিত ভাবে তিনি সাংঘাতিক ট্রোলের সম্মুখীন হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তাঁর পরিবারকে বারবার কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। তাঁর বিবাহিত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে, বেগম বলে তাঁকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি নাকি মিথ্যা হলফনামা পেশ করেছেন, চাপ দিয়ে, হুমকি দিয়ে, ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন নথিতে সই করিয়েছেন। কিন্তু পুরো বইয়ে তিনি কোথাও নিজের সম্পর্কে করুণা উদ্রেক করার চেষ্টা করেননি। হিমালয়সম এই চাপ সহ্য করে তিনি অবিচল ভাবে তাঁর কাজ করে গেছেন। কিছু বরেণ্য নাগরিক এবং অসমসাহসী কিছু ছেলেমেয়ে তাঁর পাশে থেকেছেন। আর কেউ নন! বিরোধী দলগুলির কথা যত কম বলা যায় ততো ভালো। মনে রাখতে হবে টানা দশ বছর ইউপিএ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এই গণহত্যা, এতো বড় একটা অন্যায় সেটার সাথে যাঁরা যুক্ত তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে চূড়ান্ত অনীহা দেখা গেছে। সংসদে কদাচিৎ গুজরাট গণহত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কংগ্রেস তো প্রতিষ্ঠিত এক দাঙ্গাকারীকে নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করেছিল। আর বিজেপি অভিযোগ করছে কংগ্রেসের কাছ থেকে নাকি তিস্তা টাকা খেয়েছেন! হাস্যকর!

    পুলিশ প্রশাসনের মদত ছাড়া কোনও দাঙ্গা হয় না। এই প্রসঙ্গে আইপিএস অফিসার বিভূতি নারায়ণ রাইয়ের বক্তব্য অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। “কোনও দাঙ্গা ২৪ ঘণ্টার বেশি চলতে পারে না, যদি না রাষ্ট্র সেটা চালিয়ে যেতে চায়”, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫য়ে তিনি বলেছিলেন। যদি ১৯৮৪র শিখ দাঙ্গার খুনি, ধর্ষণকারীদের যথাযথ শাস্তি হতো তাহলে বম্বে দাঙ্গা হতো না। যদি বম্বের দাঙ্গাকারীদের শাস্তি হতো, যদি বিচারব্যবস্থা বাল থ্যাকারেকে তাঁর বিষাক্ত মন্তব্যগুলির জন্য অভিযুক্ত করতে পারতো, তাহলে গুজরাট গণহত্যা হতো না। প্রতিটি ক্ষেত্রে দাঙ্গাবাজরা রাষ্ট্রের মদতে বেমালুম ছাড় পেয়ে গেছে। চরম অন্যায় করেও বারবার অব্যাহতি পেয়ে যাওয়ার এই চক্রকে তিস্তারা রোধ করতে চেয়েছিলেন। কিছুটা পেরেছেন, অনেকটাই পারেননি। আদালত যদি সত্যিই দম দেখাতে পারতো তাহলে অনেক কেষ্টবিষ্টুকে হয়তো জেলের ঘানি টানতে হতো। ইতিহাস কিন্তু তাঁর এই অদম্য, অকুতোভয় লড়াইকে কুর্নিশ জানাবে, বাকিরা স্রেফ ফুটনোটে পরিণত হবে।





    বই: Foot Soldier of the Constitution, a Memoir
    লেখক: Teesta Setalvad
    প্রকাশক: Leftword Books
    দাম: ২০৭/- টাকা



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৭ আগস্ট ২০২২ | ১৩৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৭ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩৯510836
  • উফফ ভদ্রমহিলার নাম জাকিয়া জাফরি Zakiya Jafri. 
    ',জাঁকিয়া' নয় চন্দ্রবিন্দু নেই।  এ তো টাইপো নয়, একাধিক চন্দ্রবিন্দু দেওয়া।   
  • Somenath Guha | ০৭ আগস্ট ২০২২ ১৮:১০510845
  • সর্বক্ষেত্রে তো জাকিয়া আছে। কোনো চন্দ্রবিন্দু নেই।
  • | ০৭ আগস্ট ২০২২ ১৮:১৪510846
  • কেউ ঠিক করে দিয়েছে। 
    ধন্যবাদ সম্পাদকমন্ডলী।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:d12c:619c:d419:287a | ০৯ আগস্ট ২০২২ ০৯:৫৭510889
  • ভাল লেখা 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৯ আগস্ট ২০২২ ১৮:৫৭510894
  • তিস্তার এই লড়াইয়ের কথা এতটা জানা ছিলনা। স্বল্প পরিসরে ভালো ভাবে ধরা হয়েছে। লেখাটি দেখাতে পেরেছে যে বর্তমান কালের কোন জমানার রাষ্ট্রশক্তিই তিস্তার লড়াইয়ে সামিল হয়নি, হবেনা। কিন্তু ইতিহাস তাকে কুর্নিশ জানাবে।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন