এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ মে ২০১০ | ৮২২ বার পঠিত
  • [লেখাটি ১৭-এ মে, ২০১০, দান্তেওয়াড়ার চিঙ্গাভরমে মাওবাদীদের দ্বারা এসপিও হত্যার নামে যাত্রীবাস আক্রমণের (http://www.anandabazar.com/archive/1100518/18desh1.htm) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া]

    এই মুহূর্তে এই বাস্তবটা স্বীকারে কষ্ট থাকলেও দ্বিধা থাকার যৌক্তিকতা নেই যে ভারতবর্ষের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল একটি গৃহযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের খবরে দেখা যাচ্ছে গ্রামবাসী, মাওবাদী, পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী মিলিয়ে অসংখ্য মানুষ নিহত, অত্যাচারিত হচ্ছেন। আমরা যারা মানুষের মৃত্যুতে কষ্ট পাচ্ছি, ভেবে দেখি যে আমাদের সক্রিয়/ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা আর ঔদাসিন্যের অবকাশে এই হত্যার পরিবেশ বহুদিন ধরে তৈরী হয়ে উঠেছে। আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পাঁচ দশক ধরে উদাসীন থেকেছেন দেশের এক বৃহ্‌ৎ জনসমষ্টি আদৌ বেঁচে থাকছে কিনা তা নিয়ে এবং প্রয়োজন মতন তাঁদের নিজেদের জীবন জীবিকা থেকে উৎখাত করে জঙ্গলের এই মাথা থেকে ঐ মাথায় ঠেলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা দেখান নি। আর, আমরাও চলচ্চিত্রযাত্রী হয়ে মহুয়া খেয়ে এসেছি জঙ্গলে গিয়ে, আর ঐটুকুই। সরকার বাহাদুরের মতন আমাদের অধিকাংশেরও টনক নড়েছে খেতে না পাওয়া, উৎখাত হতে চলা মানুষগুলোর হাতে বন্দুক দেখবার পর। ফলে, শুধুমাত্র সরকার-প্রশাসনের ওপর অত্যাচারীর তকমা লাগিয়ে নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের এই সার্বিক ব্যর্থতার দায়ভার এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যে সমস্যা আমার তৈরী করা তার সমাধানের ভার কেবলমাত্র চিদাম্বরমজীর ওপর ছেড়ে দিলে তাই দেখে যেতে হবে, আজকে যা দেখছি।

    কিন্তু, গৃহযুদ্ধ হিসেবে পরিস্থিতিটাকে দেখবার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা সমস্যা উদ্ভূত হয়, যুদ্ধ যখন আপনার ঘাড়ের ওপরে, একটা পক্ষ নেওয়ার বাস্তবিকতাকে অস্বীকার করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে আপনি কোন পক্ষ নেবেন! সরকার স্পষ্টত:ই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘ওয়ার অন টেররিজ?’ চালাচ্ছে, সেখানে আপনি তার পক্ষে না থাকলে সরকারের ভাষায় আপনি মাওবাদীদের মদতকারী। কিন্তু, আজকের পরিস্থিতিতে অন্ধ আনুগত্যে সরকারের সবুজ শিকার কে স্বীকার করে নিলে প্রকৃতপক্ষে গত ষাট দশকের বা তারও বেশি সময় ধরে (আর্যাবর্তে আর্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সহস্রাধিক বছর?) চলে আসা বৈষম্য ও বঞ্চনার উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। মেনে নিতে হয় সবুজ বনাঞ্চল থেকে গোন্ডি-মুর্মু-ওঁরাওদের কুলি লাইনে নির্বাসনের ঐতিহ্য, মাইনিং কোম্পানীর হাতে প্রতিদিন প্রতিরাতে লুঠ হয়ে যাওয়া স্বদেশের ভূমিজ সম্পদ, আর, কোল্যাটারাল ড্যামেজ-এর নামে অগণিত মানুষের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ। আর, এইখানেই সমস্যাটা, উল্টোদিকের পক্ষটা বেছে নিতে গেলেও দেখছি সেই কোল্যাটারাল ড্যামেজ, ভিন্ন রাজনৈতিক মত প্রকাশে মৃত্যু, পুলিশের চর সন্দেহে হত্যা, পুলিশের সঙ্গে এক বাসে যাতায়াতেও; আর, পুলিশের উর্দিপড়া যে মানুষগুলোকে যুদ্ধের নামে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যুও কি খুব কম পীড়াদায়ক? খুব কম পীড়াদায়ক কি সংগ্রামের নামে গ্রামের পর গ্রাম ধরে আবালবৃদ্ধবণিতার মিলিটারাইজ?এশন, ইস্কুলের পথ ভুলিয়ে শিশুর হাতে ইন্স্যাস তুলে দেওয়া, বিনষ্ট শৈশব, সদাসন্ত্রস্ত গ্রামজীবন, সন্দেহের চোখে নিজের প্রতিবেশীকে দেখা, পাশের বাড়ির পাশের পাড়ার লোককে খুন করে মৃতদেহ স্‌ৎকারহীন অবস্থায় দিনের পর দিন ফেলে রাখা, রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর নামে যুদ্ধটা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া? আর, এগুলোর বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলছেন তাঁদেরও কি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা অপর পক্ষের লোক বলে? সশস্ত্র লড়াইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, শ্রেণীশত্রু (পুলিশ/ অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মী, একটু ভালোভাবে বাঁচার জন্যে পুলিশের খাতায় নাম লেখানো আদিবাসী যুবক) হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সামান্যতম দ্বিধার অর্থ গ্রীণহান্টের বিরুদ্ধে ভয়েস অফ ডিসেন্ট না জানানোর সমতুল্যই কারণ যেকোনও একটা পক্ষ বেছে নিলেই যুদ্ধটাকে বৈধতা দেওয়া হয়ে যায়, মেনে নিতে হয় অপরপক্ষের যুদ্ধে সামিল হওয়ার স্বাভাবিকতাকেও।

    এইখানে আমরা একটা বড়ো সমস্যার মুখে পড়ছি, সরকার বনাম মাওবাদী, যুযুধান দুটো পক্ষ- একটা দলের প্রতি ন্যূনতম সহমর্মিতা দেখানোর মানে যেরকম দাঁড়াচ্ছে এই যুদ্ধটাকে স্বীকৃতি দেওয়া, তেমনি-ই একটা দলকে সমালোচনা করতে গেলেও অপরপক্ষের তার বিরুদ্ধে করা আক্রমণকে সমর্থন করা হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, এই ছত্তিসগড়ের চিঙ্গাভরমের ১৭-ই মে-র ঘটনাটিকে দেখা যায়, এসপিওরা যাত্রীবাসে করে যাচ্ছিলেন উক্ত এলাকার StandardOperatingProcedures না মেনে, কিন্তু এটা বলতে গেলেই কেমন মনে হয়, সুতরাং ঐ বাসটিকে মাওবাদীরা ওড়াতেই পারে বলে ফেলা হচ্ছে। আবার যখনই বলতে যাবেন যে মাওবাদী হিংসাকে থামানো দরকার, তখন-ই ল অ্যান্ড অর্ডার সামলাতে পুলিশ অভিযান চালাক, ধরপাকড় করুক বলে ফেলা হয়ে যাবে। ফলে এখানে পক্ষ না নেওয়াটা পক্ষ নেওয়ার থেকে অনেক বেশি কঠিন এবং নিজের অজান্তেই নিজে যেটাকে চাইছিনা সেইটাকে সমর্থন করা হয়ে যাচ্ছে। আর, সেইজন্যই দরকার খুব স্পষ্ট উচ্চারণের, এই দুটো পক্ষের বাইরে, যুদ্ধটাকে চলতে দিতে চাওয়ার বাইরে শান্তি আর মানবিকতার পক্ষে একটা সুদৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করবার। এবং, এবং, এবং, ঐ প্রভূত প্রতিপত্তিশালী যুযুধান দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র অবস্থান ঘোষণায় একটি অপক্ক কদলীও গাছ থেকে খসবেনা যতক্ষণ না আমরা সেই অবস্থানের পক্ষে যথাযথ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবো।

    আর এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা আরও একটা বড়ো সমস্যার মুখে পড়ছি, আমাদের ভূমিকা কী সেটা স্থির করতে গিয়ে। নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের কাছে আমাদের দাবি জানাতে পারি, আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কিয়দংশে বাধ্যও করতে পারি আমাদের দাবিগুলি মেনে নিতে, গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি সেই দাবির সপক্ষে। কিন্তু মাওবাদীদের ক্ষেত্রে আমাদের সেই ভূমিকা কী হবে? সেই প্রসঙ্গে ঢোকার আগে, সরকারের কাছে কী কী দাবি রাখা যায় সেগুলোর কয়েকটিকে ছোট্টো করে রিভিউ করে নিই। প্রথমত: মাওবাদী সমস্যা দাঁড়িয়ে রয়েছে জঙ্গলএলাকায় বিশাল সংখ্যক আদিবাসী ও অনাদিবাসী মানুষের দীর্ঘদিন ধরে জমে আসা ক্ষোভের উপর, এবং যথেষ্ট পরিমাণে জনভিত্তি রয়েছে তার। ফলে পাতি ল এন্ড অর্ডার প্রবলেম ধরে ফৌজ পাঠিয়ে সমাধান খুঁজতে গেলে পেটব্যাথায় পেইন কিলার খাওয়ার মতন জটিলতর সমস্যার দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে, উপসর্গের বদলে রোগের উপশম-ই কাম্য, যা আসতে পারে ঐ বিস্তীর্ণ এলাকার উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে এবং অরণ্যবাসী মানুষের অধিকারগুলিকে সম্মান জানিয়েই। নাগরিকের তথ্যের অধিকার মেনে সরকার প্রকাশ করুক বহুনিন্দিত মৌগুলি নিয়ে শ্বেতপত্র, মানুষের জীবন জীবিকা, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এমন সকল বাণিজ্য-প্রসকে বর্জন করা হোক। আর, এর পাশাপাশিই আসুক মাওবাদীদের নিরস্ত্র করার পদক্ষেপগুলি এবং আলোচনার পরিবেশ তৈরীতে, বিক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জনে সরকারি, রাজনৈতিক পদক্ষেপ। আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেই দেখা হোক কোন সোর্স থেকে মাওবাদীরা অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য পাচ্ছেন, বিদেশ থেকে অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধ হোক; কোন ব্যবসায়ীরা মাওবাদীদের তোলা দিতে বাধ্য হচ্ছেন দেখা হোক, কাঠ ও বনজ সম্পদের চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর, বন্ধ করা হোক, মাওবাদ দমনের নামে সাধারণ মানুষের গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা। বন্ধ করা হোক সালোয়া যুদুমের নামে সরকার-স্পন্সর্ড ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা। উপযুক্ত তথ্য ও প্রস্তুতি ছাড়া জওয়ানদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া যেন আর না হয়। সরকারের বৈমাত্রেয় ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে মাওবাদীদের মসিহা হয়ে ওঠার সুযোগ কেন দেওয়া হবে? গণতান্ত্রিকভাবে যে সব মানুষ আদিবাসী উন্নয়নের লড়াইয়ে সামিল তাঁদের উপযুক্ত সম্মান ও সাহায্য দেওয়া হোক, পুলিশি অত্যাচারের বদলে।

    এর পরে আসে মাওবাদীদের কাছে আমাদের বক্তব্য নিয়ে যাওয়ার জায়গা, যা আগে বলা হচ্ছিলো, মাওবাদীরা আমার আপনার ভোটে নির্বাচিত নন, আমার আপনার ট্যাক্সের টাকায় তাঁদের সংসার-সংগঠন চালাতে হয়না, ফলে আমার আপনার কথা শোনার দায়বদ্ধতা তাঁদের নেই। বরং আমাদেরই দায়িত্ব, আমাদের ভয়েস তাঁদের কাছে পৌঁছে দেবার। আর সরকারের কাছে বক্তব্য নিয়ে যাওয়ার তুলনায় সেই কাজ মাত্রাগত ভাবে অনেক বেশি কঠিন। কঠিন কর্তব্যের শুরুতে তাই আরও একবার আসে নিজেদের কাছে নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করবার গুরুদায়িত্ব। আদিবাসী অনুন্নয়নের পরিমন্ডলটি মাওবাদীরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, এই কৃতিত্ব তাঁদের আবশ্যিক ভাবে দিতে হবে, কিন্তু সত্যিই কি আদিবাসী উন্নয়ন-ই তাঁদের আশু লক্ষ্য? আমরা তো দেখছি, মাওবাদীদের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে আর তিন-চার দশকের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেওয়া এবং আদিবাসী আন্দোলনকে চ্যানেলাইজ? করা হচ্ছে সেই উদ্দেশ্যে। ফলে, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার সমস্ত সুযোগ তাঁরা একের পর এক ছেড়ে আসছেন, ৭২ ঘন্টা অস্ত্রসংবরণের উত্তর আসছে ৭২ দিন যুদ্ধবিরতির প্রতিপ্রস্তাব হয়ে, স্বরাষ্ট্র দফতরের ফ্যাক্স নম্বর পাওয়ার পর মাওবাদীদের তরফ থেকে কোনও উত্তর যায় নি। বরং আলোচনার পরিবেশকে নষ্ট করা হয়েছে সরকার-মাওবাদী ইগো লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে গিয়ে। খবর আসছে উন্নয়নের টাকা, একশো দিনের কাজের বরাদ্দ সরকারী অর্থ যাচ্ছে মাওবাদীদের অস্ত্রের রসদ যোগাতে, দেখছি আন্দোলনের নামে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুলবাড়ি, রেললাইন, মোবাইল টাওয়ার এমনকী যাত্রীবাসও। লালগড়ের লড়াই তার অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক চেহারা ছেড়ে রূপ নিচ্ছে সিপিএম কর্মীদের ধারাবাহিক হত্যায়, যার ফলশ্রুতিতে তীব্রতর হচ্ছে পুলিশি নির্যাতন, গ্রেফতার হচ্ছেন লড়াইয়ের মূল সংগঠকরা, শিলদা ক্যাম্পের হত্যাকান্ড ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে লালমোহন টুডুর সাজানো এনকাউন্টারে। এইখানে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিকাশের প্রশ্ন থেকে মাওবাদীদের বিচ্ছিন্নতা খালি চোখেও বুঝে নেওয়ার মতন। যেরকম বুঝে নেওয়ার মতন, আদিবাসী আন্দোলনের যে রূপটি মাওবাদীরা হাজির করছেন তার সমালোচনার দরকারটাও। যে ছেলেটা ইস্কুলে না গিয়ে মাওবাদীক্যাম্পের খবর সংগ্রহের কাজ করছে, যে মহিলারা রাতে মাওবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছেন আর দিনে ঘরবাড়ি ছেড়ে পুলিশের ভয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যে যুবক রাত্রি-জেগে মাথার তলায় রাইফেলকে বালিশ করে রাত কাটাচ্ছেন, মাসের পর মাস তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই প্রকৃতার্থে গৌরবের নয়, দু:খের, দুর্দশার, দুর্ভাগ্যের। এইখানেই বিরোধিতা করা দরকার যুদ্ধটাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলার এই রাজনীতির, মানুষের ভালো থাকতে চাওয়ার লড়াইকে আরও খারাপ আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার। মাওবাদীদের লড়াইকে গৌরবান্বিত করতে গিয়ে এই সমালোচনার জায়গাটা না তুলে ধরাই বিপর্যয়কে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার নামান্তর। আমাদের চারপাশেই তো এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা সহমর্মিতা বা সমর্থনের জায়গা থেকে মাওবাদী আন্দোলনকে পুষ্ট করছেন, এঁদেরই কারুর কাছে তেলেগু দীপক দেখা করতে আসেন, এঁদেরই কেউ মাওবাদীদের হয়ে তথ্য/তঙ্কÄ বিভিন্ন মহলে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে এক মিছিলে পথ হাঁটছি, এক ফোরামে আলোচনা করছি, কোথাও আন্দোলনের এক মঞ্চ শেয়ার করছি। এঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক আমাদের কনসার্ণগুলি। মাওবাদী হঠকারিতাকে জ্বালানী যোগায় এরকম যে কোনও পদক্ষেপ থেকে বিরত করা হোক গণতান্ত্রিক-অধিকার মানব-অধিকার কর্মীদের। মাওবাদীদের প্রতি সহমর্মিতা বা সমর্থন আসলে ফিরতি পথে হিংসার রাজনীতি ও হিংসার প্রশাসনিক রূপকেই ফিরিয়ে আনে। বরং সমর্থন করা হোক সেই রাজনৈতিক অরাজনৈতিক মানুষ বা সংগঠনকে যাঁরা সীমিত উদ্যোগে নিজের মতন করে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, সীমিত সামর্থ্যে আদিবাসী এলাকায় ইস্কুল বানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরী করছেন। রাজনৈতিক দলগুলির ওপরে চাপ দেওয়া হোক অনুন্নত অঞ্চলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করতে, শিল্পস্থাপনের নামে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কার্যকরী অবস্থা নিতে, সংসদের ভিতরে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের প্রশ্ন তুলে ধরতে।

    এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার আপনার দেশ। ইতিহাস সাক্ষী সব মৃত্যুমিছিল-ই একদিন শেষ হয়, শান্তি আসে, কিন্তু সেই শান্তি যেন শ্মশানের শান্তি না হয়।

    ১৮ই মে, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ মে ২০১০ | ৮২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন