দিব্যেন্দু পালিত ভিন্ন ধারার এক ঔপন্যাসিক। বাজার চলতি ফর্মে তিনি কোনদিন হাঁটেন নি। নিভৃতে বসে শিল্পের দায়বদ্ধতা পালন করে গেছেন। ‘ঢেউ’ উপন্যাসের রচনাকাল ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে আগস্ট, গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে। এ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার পান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে। জীবনের বহুকৌনিক বোধে তিনি উপনীত হন। মৃত্যুই যেন মানুষকে এক নতুন বোধের জগতে নিয়ে যায়। চেতনার গভীরে এক ঢেউ নিয়ে আসে, যা মানুষকে নতুন করে পথ চলতে শিক্ষা দেয়। এ উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটেছে সপ্তম পরিচ্ছেদে। মিসেস চৌধুরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মধ্যবিত্ত অপূর্ব ও মালবীর জীবনে এক নতুন চেতনা এসেছে। অপূর্ব চেয়েছিল নতুন করে উপন্যাস লিখবে। শিল্পীর জীবনও যেন এক উপন্যাস। সেই আত্মকেন্দ্রিকতাকেই সে ধরতে চেয়েছিল। লেখক অচেতনে সেই প্লটই যেন দিয়ে গেলেন। অপূর্ব ও মালবীর নতুন বিবাহ, মধ্যবিত্তের সংসার, সেখানে আশা- আকাঙ্ক্ষা আছে। মনোজ হঠাৎ নিয়ে আসে মৃত্যু সংবাদ। শেষ পরিচ্ছেদটি গড়ে উঠেছে মিসেস চৌধুরীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে সবার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। লেখক নিভৃতে থেকে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কয়েকটি মানুষের ( অপূর্ব, মালবী, মনোজ, বিমলকৃষ্ণ ) চেতনায় যে বিবিধ আলোড়ন তা দেখিয়েছেন। স্মৃতির সঙ্গে বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই। সেই বাস্তবকে সামনে রেখেই সবাই গেছে স্মৃতিচারণায়। জীবনের পথে চলতে গেলে সব সত্য প্রকাশ করা যায় না। ... ...
গত জুন মাস থেকে জল-জঙ্গল-জমিন এর পক্ষ থেকে ‘বর্ষামঙ্গল’ কর্মসূচির সূচনা করে। কেষ্টপুর খালের এক অংশ পরিষ্কার করে, তার পাশে গাছ বসানো হয়। এবং আবর্জনার বেশিরভাগটাই প্লাস্টিক। তারপর প্রত্যেক সপ্তাহে আহিড়ীটোলা ঘাট পরিষ্কার করা। রানাঘাটের চূর্ণী নদীর যা বেহাল অবস্থা , তার একটা অংশ সংস্কার করা হয়। উল্টোডাঙ্গার মুরারিপুকুর এর একটা অংশ পরিষ্কার করা হয়। বাঁকুড়াতে এক জমিতে নতুন গাছ বসানো হয়। এবং গ্রামে গ্রামে কর্মশালা করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা, অশোকনগর অঞ্চলে ১২টি স্কুলে একটা অঙ্গীকারপত্র নিয়ে যাওয়া হয় , যার বক্তব্য গুলি হল, সাইকেল চালানোর অভ্যাস বাড়ানো, প্লাস্টিক, থার্মোকল, রাংতা ব্যবহার না করা, পরিবর্তে চটের ব্যাগ ব্যবহার করা, ব্যাগে টিফিন বক্স রাখা, যেকোনো অনুষ্ঠানে গাছের চারা উপহার দেওয়া, এসি ব্যবহার না করার চেষ্টা করা, ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও আবর্জনা না ফেলা, কষ্ট হলেও শৌচালয় ব্যবহার করা। এছাড়াও স্কুলে সেমিনার করা হয়। হুগলির এবং মুর্শিদাবাদের কিছু স্কুলে আগস্টে সেমিনারের ডেট ফিক্স করা হয়েছে। ... ...
১৯৫০ থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত মোট ৪৯ টি প্রেসিডেন্শিয়াল অর্ডার পাস করা হয়েছে। এর সবগুলোতেই রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা করে দুপক্ষের সম্মতিক্রমেই নেওয়া হয়েছে বলে প্রকাশ। এইসব রাজ্য সরকারের ক্ষমতা গত কয়েকদিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরের শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থা দেখলেই অনুমান করা যায়। আর্টিকল 370 লোপ করার আগে থেকেই ওমর আবদুল্লা, ও মেহবুবা মুফতি গৃহবন্দী ছিলেন। সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন সেকথা দেশ বিদেশের সংবাদসংস্থার প্রতিবেদনে ভালোই বোঝা যায়। কোথাও অ্যাম্বুলেন্সে সন্তানের জন্ম দিতে হচ্ছে, কোথাও জানলা দিয়ে কর্তব্যরত সাংবাদিকের কাছে রোগীর অবস্থা জানতে চাইছেন আত্মীয়। বিক্ষোভ চলছে, পাথরের বিনিময়ে পেলেট গান চলছে। ৫০০ বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, অমিত শাহ দাবি করেছেন অবস্থা শান্তিপূর্ণ। পেলেট গানের জখমে কেউ মারা না গেলেও বহু মানুষ অন্ধ হবেন বলে মহারাজ হরি সিং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই ধরণের খবর আমাদের কাছে সকালের দুধ-সিরিয়ালের মত, তাই অত্যাবশ্যক কথা না বাড়িয়ে একসাথে করে রাখা তথ্যসূত্রে রেখে দেওয়া থাক সরকারের শান্তিপূর্ণ অভিযানের খবরাখবর । ... ...
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কেন? প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এতদিন ধরে এমনিই রাজ্যপালের শাসন চলছে। সেটা সিধে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গেই সম্পর্কিত। এর ফলে নানা উপকার হচ্ছে। ঝুলে থাকা প্রকল্প কাজে লাগছে। আইআইটি আইআইএম সব হুহু করে এগোচ্ছে। এবার সিধে কেন্দ্র-সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাকিটাও ঝপাঝপ নামিয়ে ফেলবে। পরিবারতন্ত্র, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতির যে জোয়াল মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে ছিল, তা থেকে কাশ্মীরি জনতার এবার চিরমুক্তি। কাশ্মীরি জনতা এই ব্যবস্থা চেয়েছিল কিনা, দুম করে কেন্দ্রীয় সরকার এমন কাটাছেঁড়া করে ফেলতে পারে কিনা, সে নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। একটি কথা বলেছেন, যে, এম-এল-এ, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সবই আগের মতই থাকবে। কিছুই বদলাবেনা। তাহলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আর রাজ্য আলাদা কীসে? সব রাজ্যকে ধরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দিলেই তো হয়। প্রধানমন্ত্রী সেই নিয়ে কিছু বলেননি। কে জানে হয়তো পরিকল্পনা তেমনই। তবে এও বলেছেন, যে কাশ্মীরকে (লাদাখকে নয়), আবার তিনি রাজ্য বানিয়েও দিতে পারেন। যেমন ঝপ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে দিতে পারেন, তেমনই। কী ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলেননি, তোমার বাঁচা-মরা আমার হাতে, আমি এমন শক্তিমান। আমার প্রচন্ড অভিমান। ... ...
সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেবার পর, যখন দাবী করা হচ্ছে "এক দেশ এক আইন", ঠিক তখনই আসামের এন-আর-সি-তাড়িত মানুষজন দেশের মধ্যে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছেন। সারা দেশের আইন তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বন্যাপীড়িত আসামের বাংলাভাষীদের উপর নিজের নাগরিকত্ব পুনঃপ্রমাণের যে চাপ, তাতে তাঁরা মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছেন, হারিয়ে যাচ্ছেন, আত্মহত্যা করছেন, সরাসরি আহত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। বন্যা হোক, বা ঘরদোর ভেসে যাক, কোনো ছাড় নেই। কারণ, বাকি দেশের আইন তাঁদের উপর প্রযোজ্য নয়। কোনো এক আসাম চুক্তি, সরকারি এবং আইনী সিদ্ধান্তের ফলে তাঁদের নতুন করে প্রমাণ করতে হচ্ছে নিজের নাগরিকত্ব, যা গোটা দেশে কাউকে কখনও করতে হয়নি। ... ...
এক যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ ও স্বাধীন। গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে, কাকে বলে গণতন্ত্র। রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।' গুজরাতি মহামন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, 'কখন পাকিস্তানিরা আসিয়া কী মন্ত্র দেবে ঠিক নাই। তার আগেই পাখিটাকে গণতন্ত্র শিক্ষা দাও'। রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার। ... ...
ইতিমধ্যে আরেকটা কাণ্ড ঘটেছে। মিস্টার ঘটক নামে একজন সাব-ইন্সপেক্টর তোপচাঁচি থানায় পোস্টেড ছিলেন। আদিবাসীরা তাঁকে গুম করে খুন করে লাশ গাপ করে দিয়েছে। আদিবাসীগুলো এম সি সি, নাকি জে এম এম ক্যাডার সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে বিনোদবাবু ওদেরকে শনাক্ত করতে পারেন। 'বিনোদবাবু, সে আবার কে?' 'বিনোদবিহারি মাহাতো। ফরমার কমিউনিস্ট।' 'বেশ। বেশ। বিনোদবাবুকে ডেকে ক্রস-এগজামিন করুন। উনিও যদি মুখ খুলতে না চান, গ্রেপ্তার করে হাজতে পুরুন। তারপর আমি দেখব।' 'স্যার, বিনোদবাবু বর্তমানে জে এম এমের প্রেসিডেন্ট। তাছাড়া নামকরা অ্যাডভোকেট।' 'সো হোয়াট! মেইনটেন্যান্স অফ ইন্টারনাল অ্যাক্ট আছে কী করতে? জাস্ট ডু ইওর ডিউটি।' এমন সময় একজন অফিসার ঢুকে সাক্সেনাকে সেলাম ঠুকে জানাল, 'স্যার,রায়সাহাব অনেক্ষণ থেকে আপনার সাথে দেখা করবেন বলে বাইরে ইন্তেজার করছেন।' 'রায়সাহেব কে?' 'সিঁদরির সিটিং এম এল এ, এ কে রায়।' 'আচ্ছা আচ্ছা, উনি? কমিউনিস্ট ট্রেড ইউনিয়নিস্ট? ডাকুন তাঁকে।' ... ...
রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল সতী রেগুলেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক। উক্ত আইন বলে কোম্পানির আওতায় থাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত অঞ্চলে সতীদাহ নিষিদ্ধ এবং সতীদাহে সাহায্য করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই সময় এই প্রেসিডেন্সির আওতায় মূলতঃ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল ছিল। উক্ত অঞ্চলগুলিতে বিগত কয়েক বছরে সালপ্রতি প্রায় ৬০০ সতীদাহ হয়েছিল। বেন্টিঙ্ক ১৮২৯-এর এক রিপোর্টে লিখছেন সে বছর নথিভুক্ত ৪৬৩ জন সতীর মধ্যে ৪২০ জন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এবং তার মধ্যে ২৫০ জনের বেশি কলকাতা-বিভাগের। লক্ষ্যণীয়, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহের সংখ্যা এর থেকে অনেক কম ছিল। এবং এই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা-বিভাগে সতীদাহের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা বা বেনারসের থেকে দশগুণের বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ উইলিয়াম কেরির রিপোর্ট, যেখানে তিনি বলছেন ১৮১৫ থেকে ১৮১৮-র মধ্যে এই এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল। এবং সাধারণ ধারণার উল্টোদিকে দেখা যায় সতীদের মধ্যে অধিকাংশ মোটেই ব্রাহ্মণ নয় বরং ১৮২৩ সালের রিপোর্টে ৫১% জাতিতে শূদ্র। ... ...
বার্নিয়ের খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, যে সতীদাহের সংখ্যা মুঘল রাজত্বে কমে এলেও, 'রাজা'-শাসিত এলাকাগুলিতে এর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যরকম বেশি (the number of self-immolations is still very considerable, particularly in the territories of the Rajas, where no Mahometan governors are appointed)। বাংলা ছিল মুঘল সুবার অংশ। ফলে বাংলায় যৌক্তিকভাবে সতীদাহের সংখ্যা কম হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য এই কম-বেশির কোনো আঞ্চলিক চরিত্রও থাকতে পারে। এই দুই ইউরোপিয়ানের বর্ণনায় অবশ্য সেরকম কিছু ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও মুঘল-শাসিত এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা কম ছিল কেন, এ বিষয়ে তাঁরা একবাক্যে একটি কারণ লিখেছেন। মুঘল এবং মুসলমান রাজত্বে রাজ্যশাসক (সম্ভবত সুবাদার বা ফৌজদার)এর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো সতীদাহ হতনা। তাঁরা প্রথমে যাচাই করতেন, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় মরতে চায় কিনা। তাকে সুবেদারের কাছে সশরীরে অনুমতি চাইতে আসতে হত। তারপরেও তাকে বিরত করার চেষ্টা হত নানা উপায়ে (বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে)। তারপরও কাজ না হলে তবেই অনুমতির প্রশ্ন। তাতেও, মেয়েটি নিজে নাবালিকা হলে, বা তার নাবালক সন্তান থাকলে অনুমতি দেবার চল ছিলনা। ফলে জোর করে ধরে জ্বালিয়ে দেবার প্রশ্ন মুঘল রাজত্বে একেবারে ছিলনা বললেই চলে। যেটুকু হত, তা অত্যন্ত সুদৃঢ় স্ব-ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব ছিলনা। কয়েকটি ক্ষেত্রে, বার্নিয়েরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, আগুন জ্বলে যাবার পর মনের জোর হারিয়ে বা যন্ত্রণায় কোনো মহিলা চিতা থেকে নেমে পড়তে চেয়েছেন, সেক্ষেত্রে বাঁশে করে তাঁকে চেপে রাখা হয়েছে। অন্য কয়েকটি বর্ণনায় মহিলারা নিজের হাতে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগুন জ্বালাচ্ছেন। যেটাই হোক, সজ্ঞান সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর জ্যান্ত অবস্থায় চিতায় ওঠা মুঘল শাসনে কার্যত অসম্ভব ছিল। ... ...
২০০৫ সালে আরটিআই এক্ট বা তথ্যের অধিকারের আইন এদেশে চালু হয়। তার পর থেকে স্বাধীন এবং গুরুত্বপূর্ণ এই আইনের বলে তথ্যের অধিকারকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর অসাধ্য সাধন করা হয়েছে। যেমন আদর্শ হাউজিং সোসাইটি স্ক্যাম। কারগিল যুদ্ধে স্বামীহারাদের জন্য বানানোর কথা একটি ছ' তলা বাড়ি, সেটাই কী করে হয়ে উঠল একত্রিশ তলা প্রাসাদ যেখানে মন্ত্রীমহোদয়রা এবং আর্মি অফিসাররা বিলাসবহুল জীবন কাটাবেন, সেটা তথ্যের অধিকার না থাকলে কোনদিনই ফাঁস হতো না। ঠিক তেমনই 2G কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়া। টেলিকম মন্ত্রকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জালিয়াতির জাল বিছিয়ে প্রায় ২ মিলিয়ন অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে লুট করা হয়। এই আইন না থাকলে এই কেলেঙ্কারি কখনো দিনের আলো দেখতে পেতো না। অত্যন্ত পরিতাপের কথা যে সাধারণ মানুষের হাত থেকে এই কার্যকরী অস্ত্র কেড়ে নেবার জন্য এবার আটঘাট বেঁধেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এবং তাতে তারা সফল, কারণ এই আইনের সংশোধনী সংখ্যার জোরে সংসদের দুইকক্ষেই পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন দন্ডমুন্ডের কর্তারা। ... ...
বর্তমানে ‘দেশপ্রেম’ নামের আড়লে একযোগে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও মৌলবাদী হিংসাত্মক কার্যকলাপের যে মারাত্মক প্রকোপ তা মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও সাধারণ জনতার একটি বড় অংশের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং হিংসাত্মক কার্যকলাপে উৎসাহ প্রদান সাতচল্লিশের দেশভাগের পটভূমিকায় গণঅসুস্থতা ও বিকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। বিগত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিতকে অধিক ধারণ করে উৎকৃষ্ট শ্রমিক উৎপাদনে এতটাই সচেষ্ট ও সক্রিয় ছিলো যে প্রচলিতকে অতিক্রম করে নতুন কে ধারণ করার কথা তো দূর, নিদেনপক্ষে শোনা বা বোঝার ন্যূনতম প্রয়াসের প্রবণতাটুকুও জনমানসে সঞ্চারিত করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে প্রাথমিক বা উচ্চপ্রাথমিকে ভারতবর্ষকে ‘মাদারল্যান্ড’ বা ‘মাতৃভূমি’ হিসাবে মানচিত্র ও তেরঙা শাড়ি পরিহিতা এক কাল্পনিক মাতৃমূর্তির সাথে জোরপূর্বক জুড়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে দেশ বলতে মানুষ ও জনজীবনের বৈচিত্র বর্জিত আদি মাতৃরূপ (মাদার আর্কিটাইপ) এবং ভূমি, তেরঙা, বর্ডারলাইন ও ভক্তিরস মিশ্রিত হাঁসজারু ন্যায় যে দেবোপম চিত্রকল্প শিশুমন অধিগ্রহণ করে, তা ভারতীয় সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলি শতবার ঝরঝরে মুখস্থ লিখে ফেলা সত্ত্বেও অপসারিত হয়না। ... ...
চিত্র নাম তার। কে বলে চিত্র মেয়েদের মতো সাজে? কেউ কি একবারও ভালো করে দেখেছে ওর দিকে? কেউ কি জানে ঠিকমতো যে মেয়েদের মতো সাজা কাকে বলে? মেয়েদের সাজ বলে কি সত্যিই কিছু আছে? যারা এই ছেলে আর মেয়ের সাজ আলাদা করলো তারা ভেক ধরে নেই? ভেক কি সে একাই ধরে? সেটা কি ভেক আদৌ? প্রতিবার সেই সরোবর বা নদীর ধারে গিয়ে স্বপ্ন দেখে চিত্র। যাবার আগে একটু ভিক্ষে করে পয়সা যোগাড় করে। তারপর ভালো করে সাজে। অন্নের সংস্থান নেই, আর সাজ ! কিন্তু এতো সাজ নয়, এ অভিসারও নয়, এতো একটু নিজেকেই নিজে দেখা, একটু নিজের কাছাকাছি আসা, আত্মাকে উপলব্ধি করা। ঠোঁটে রঙ লাগায়, মাথায় সুগন্ধী তেল। পায়ের নখ থেকে, বাহু, গলা, মাথার চুল পর্যন্ত পরিপাটি করে। এমন পরিপাটি তো পাড়ার বৌরাও দেখে নি। চিত্র অপরিচিত, ভিনদেশী হয়ে যায় পুরোপুরি। তারপর ভিনদেশী সেই যুবক অথবা যুবতী মালিনীর স্থির জলে বসে সেই দেশী পদ্মের বনে রাজকুমারের স্বপ্ন দেখে। ... ...
‘মিয়া’ শব্দের অর্থ হতে পারে, জ্ঞানী, ভদ্রলোক, মহাশয়, এইরকম। কিন্তু মিঞা পয়েট্রি যাঁদের কথা বলে, তাঁদের ‘মিয়া’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। অপাক্তেয় যেন। তাঁদের অস্তিত্বই যেন অবাঞ্ছিত । সেই তাচ্ছিল্যকেই হাতিয়ার করে, তাচ্ছিল্যের অপসংস্কৃতিকে বৌদ্ধিক স্তরে চিহ্নিত করে দেয়ার থেকেই নিজেদের ‘মিয়া’ বলে ঘোষণা করে দেয়ার কবিতাই মিঞা পয়েট্রি। নিজেদের কথাটি সংগবদ্ধ করে মিঞা’র আসল অর্থও জানিয়ে দেয়া। ... ...
এই দেশের মূল অধিবাসী আদিবাসীদের জমি জঙ্গল রক্ষার্থে নানা আইন থাকলেও এদেরকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা খুব সোজা। প্রথমে ল্যান্ড মাফিয়ারা জমির রেকর্ড নিয়ে নানা কারিকুরি করে। হলে ভালো, নয় তো ভয় দেখানো, হাতে অল্প কিছু টাকা গুঁজে দেওয়া, তাতেও কাজ না হলে ভবনদী পার করিয়ে দেওয়া। আর জমি যদি হয় শোণভদ্র এলাকার মতো সোনা উগরানো, মিনেরালসে বোঝাই, তাহলে তো যা খুশি তাইই করবার অধিকার জন্মে যায় উচ্চবংশীয় প্রভুদের। আইনের ফাঁকফোকর এদের ভালোই জানা আছে। সে কারণেই জেলে বিচারাধীন বন্দীদের ৫৩% দলিত আদিবাসী আর মাইনরিটি। অথচ এরা গোটা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩৯%। জনসংখ্যার অনুপাতকে ছাপিয়ে গরীবের এই জেল ভরার রহস্য আরো একবার উন্মোচিত করল শোনভদ্র ম্যাসাকার। ... ...
তনুজ সরকারের কবিতা ... ...
ক্যামেরার সামনে একের পর এর খুন হয়ে চলেছে। খুনীদের চেহারা ক্যামেরায় স্পষ্ট। অথচ তাঁদের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। ক্যামেরা বন্ধ করানোর কোনও চেষ্টা নেই। বরং, বীরত্ব, জিঘাংসা আরও ফুটে বের হচ্ছে। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের মনে কতদূর অবজ্ঞা জন্মালে এটা হতে পারে, সেটা ভেবে দেখুন। ধরুন, আমি গয়নার দোকান থেকে চুরি করছি। ক্যামেরা চলছে জেনেও আমার কোনও হেলদোল নেই। কেন না, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, কোই মাই কা লাল, আমার কিছুটি বাঁকা করতে পারবে না। ... ...
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর বাউন্ডুলে ফ্রান্স গেলেও ঘুরেই বেড়ায়। আমারও তাই দশা। ছুটিছাটা পেলেই প্যারিসের লং ডিসটেন্স বাস ডিপো থেকে কোনো একটা বসে উঠে অজানা জায়গায় যাই। কদিন আরামে নিজের সাথে কাটিয়ে আবার ফিরে আসি। এবারে ভাবলুম, ট্রেন ব্যবহার করি। বাসওয়ালাগুলোও বোধয় এতো দিনে চিনে গেছে আমাকে। তাছাড়া ট্রেনের ভাড়া বাসের থেকে বেশ কম শুনেছি। আমার তখন সম্বল বলতে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া কটা ইউরো আর এক বাংলাদেশী মাইয়ারে বাংলা পড়াইয়া যা কিছু পাই, তাই। তার অর্ধেক তো চলে যায় ওরই বাপের রেস্তোরাঁতে ইলিশ ভাত, মাংস ভাত খেতে। কত আর পাউরুটি চিবোবো। বইটি হস্তগত করে, একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম। দেখি চোখ কোন দিকে যায়, আমিও সেই দিকগামী হবো। তবে দুগ্গার কৃপাকে এইভাবে abuse করলে মাও যে আর বেশিদিন রক্ষে করবেননে সেটা বুঝি। কোথায় যাচ্ছি ঠিক করার একটা দারুণ উপায় মাথায় এলো। ট্রেন স্টেশনে মানচিত্র দেখে যে অজানা নামটা বেশ সুন্দর লাগলো, সেটার একটা টিকেট কেটে উঠে বসলাম। ... ...
জয়া চৌধুরী অনুদিত মেক্সিকোর কবি খাইমে সাবিনেসের কবিতা। ... ...
রসগ্রাহী পাঠকমাত্রেই জানেন, ঐতিহাসিক উপন্যাসকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে গেলে, তথ্যের খুঁটিনাটি ও সত্যতা-সম্পর্কে লেখককে কতখানি নিষ্ঠাবান হতে হয়। আমি আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে যতটুকু বুঝি, রাজর্ষি এই কাজে সম্পূর্ণ সফল। সপ্তদশ শতকের বাংলা, বিশেষ করে, সমতটের বাকলা-বাখরগঞ্জ থেকে, সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রাম হয়ে, আরাকান বা রাখান-দেশ অবধি বিস্তৃত ভূখণ্ডের ভুগোল ও ইতিহাস, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত হয়েছে এই উপন্যাসে। শুধু তা-ই নয়, সামাজিক আচার-ব্যবহার, খাদ্যাভ্যাস, বাচনভঙ্গী, এমনকী নৌবিদ্যার খুঁটিনাটি বর্ণনাতেও, লেখকের মনোযোগ ও যত্নের ছাপ সুস্পষ্ট। অথচ, তথ্যের এমত প্রাচুর্য কখনও বাহুল্য হয়ে ওঠেনি। বরং, পটভূমির বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে, গল্পের চরিত্রগুলিকেও আরো বেশি রক্তমাংসের বলে মনে হয়েছে। ... ...
বাড়ি কোথায়? অচিন্ত্য জল ঢকঢক করে খেয়ে গৌরের দিকে তাকায়। আঁজ্ঞে কাছেই, মাঠেমাঠে হেটি গেলি সাত মাইল, পুরন্দরপুর, থানা মগরাহাট। হেটে আসা হয় ? হ্যহ। বর্ষাকালে একটু অসুবিধে হবে। গৌর মিদ্যের মুখে যেন হাসি ধরে না। ... ...