এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • মোদীর ভাষণ -- এক ঝলকে

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ০৮ আগস্ট ২০১৯ | ১০০০ বার পঠিত
  • বুকের ভিতর ধাঁইধপাধপ, আসছে আবার আটটা
    আবার ব্যাটা ভাষণ দেবে, মারবে আবার গাঁট্টা।

    সকাল থেকেই জল্পনার শেষ নেই। গতবার ভাষণে নিয়েছিলেন নোট, এবার কী নেবেন? কেউ বলছিলেন, গোট, অর্থাৎ কিনা পাঁঠার মাংস। নোটের বদলে এবার বাজারের সব আমিষ বাতিল করে দেওয়া হবে, বাঙালি বুড়ো আঙুল চুষে মরবে। কেউ বলছেন, গতবার ক্যাশ টাকা নিয়েছিল, এবার কি তাহলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হাত দেবে? কেউ ফ্রিজে পাঁঠার মাংস জমিয়ে রাখার নিদান দিচ্ছেন, কেউ আরও সাবধানী। এবার কোথায় লাইন দিতে হবে, জানা নেই, তাই ত্রিপল, টর্চ, মশারি সবই জোগাড় করে সুটকেসে পুরে রাখতে বলছেন। কেউ বলছেন, আসাম আর থেকে এবার এক ধাক্কায় সব 'বাংলাদেশী'কে ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই বাজারে খবর পাওয়া গেল, এলাহাবাদের কোনো এক সাধু বলেছেন, টিভিতে মোদী-অর্ণব গোস্বামী -সুধীর চৌধুরি, এ এক অশুভ যোগ, রাত আটটায় ত্র্যহস্পর্শ তৈরি হতে চলেছে, কাটানোর জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞ দরকার। বদ্রীনাথের গুহা থেকে আরেক সাধু বলেছেন, যজ্ঞ কোনো লাভ নেই, টিভির নাম এমনিই শনি (sony), ফলে টিভি বর্জন না করে শনির প্রকোপ আটকানোর কোনো উপায় নেই। 

    এসবই অবশ্য ভিত্তিহীন গুজব, কারণ কার্যক্ষেত্রে  দেখা গেল এত হট্টগোলের কিছু ছিলনা। প্রধানমন্ত্রী ৩৭০ আর কাশ্মীর ছাড়া আর বিশেষ কিছু বললেন না। এবং সবই নির্দোষ সত্য কথা। তাতে অবশ্য রোমাঞ্চ কিছু কম পড়ল তা নয়। মোদীর ৫০ মিনিটের ভাষণ থেকে যা বোঝা গেল, ৩৭০ ধারায় এতদিন আমাদের ভাই বোন বাচ্চা-কাচ্চার খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছিল। এমনকি এতে কার লাভ জিজ্ঞাসা করলে কেউ কিছুই বলতেই পারতনা। বলবে কীকরে? দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, পরিবারতন্ত্র আর বিচ্ছিন্নতাবাদ ছাড়া এই ধারা তো আর কিছুই দেয়নি। এই ধারা দিয়ে একটাই কাজ হয়েছে। পাকিস্তান ৩৭০ কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের সর্বনাশ করে দিয়েছে। ভারতের সংবিধানের ধারা, কিভাবে পাকিস্তানের অস্ত্র হয়ে গেল সেটা অবশ্য উনি ব্যাখ্যা করেননি। তাতে কোনো দোষ নেই, মিথ্যাচারণও নেই, কারণ, প্রধানমন্ত্রী, টিভি চ্যানেল, আইটি সেল, কেউই কেন ৩৭০, তার কী ইতিহাস-ভূগোল, সেসব খবর রাখে বলে মনে হয়না। '৩৭০ কেন হয়েছিল?' শুনলে আমাদের টিভির বিখ্যাত সঞ্চালকরা হাঁ করে মাথা চুলকে তারপর তারস্বরে পাকিস্তান-পাকিস্তান বলে চেঁচাতে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। 

    ৩৭০ এ আর কী কী ক্ষতি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তারও তালিকা দিলেন। কত যে ক্ষতি, না শুনলে বোঝা যেতনা। মূল ক্ষতি এই, যে, সংসদে খুব কষ্ট করে ঘাম-টাম ঝরিয়ে সাংসদরা আইন-টাইন বানান। এত চিন্তাভাবনার ফসল, এত শ্রমের কোনো মূল্য, ভাবা যায়না, জম্মু কাশ্মীরে নেই। ওখানে সেসব আইন প্রযোজ্য হয়না। ভারতবর্ষের নানা অঞ্চলে, নানা জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সব আইন যে সমভাবে প্রযোজ্য হয়না, সে কথা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী জানেন বলে মনে হয়না। নাগাল্যান্ড থেকে আসাম, এমনকি গুজরাত-মহারাষ্ট্রের জন্যও নানা বিশেষ ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সেসব উল্লেখ না করায় দোষ দেওয়া ঠিক না। কারণ অজ্ঞানতা মানুষকে নিষ্পাপ করে। ফুলের মতো শিশুসুলভ নিষ্পাপ উচ্চারণে কোনো পাপ নেই। সেরকম উচ্চারণেই প্রধানমন্ত্রী জানালেন, কাশ্মীরে শিক্ষার অধিকার নেই, মেয়েদের অধিকার নেই, সাফাই কর্মচারীদের অধিকার নেই, দলিতদের জন্য কোনো আইন নেই, সংখ্যালঘু অধিকার নেই, ন্যূনতম মজুরির বালাই নেই, জাতিগত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তিনি এবার সবকিছুর ব্যবস্থা করে তবেই ছাড়বেন। ওখানে সরকারী কর্মচারী আর পুলিশের এবার সমান সুবিধে মিলবে। রোজগারের বন্যা বয়ে যাবে। পাবলিক প্রাইভেট সেক্টররা চুটিয়ে বিনিয়োগ করবে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ যোজনায় শিক্ষায় বিকাশের প্লাবন হয়ে যাবে।

    কিন্তু তা বলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কেন? প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এতদিন ধরে এমনিই রাজ্যপালের শাসন চলছে। সেটা সিধে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গেই সম্পর্কিত। এর ফলে নানা উপকার হচ্ছে। ঝুলে থাকা প্রকল্প কাজে লাগছে। আইআইটি আইআইএম সব হুহু করে এগোচ্ছে। এবার সিধে কেন্দ্র-সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাকিটাও ঝপাঝপ নামিয়ে ফেলবে। পরিবারতন্ত্র, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতির যে জোয়াল মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে ছিল, তা থেকে কাশ্মীরি জনতার এবার চিরমুক্তি। কাশ্মীরি জনতা এই ব্যবস্থা চেয়েছিল কিনা, দুম করে কেন্দ্রীয় সরকার এমন কাটাছেঁড়া করে ফেলতে পারে কিনা, সে নিয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। একটি কথা বলেছেন, যে, এম-এল-এ, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সবই আগের মতই থাকবে। কিছুই বদলাবেনা। তাহলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আর রাজ্য আলাদা কীসে? সব রাজ্যকে ধরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দিলেই তো হয়। প্রধানমন্ত্রী সেই নিয়ে কিছু বলেননি। কে জানে হয়তো পরিকল্পনা তেমনই। তবে এও বলেছেন, যে কাশ্মীরকে (লাদাখকে নয়), আবার তিনি রাজ্য বানিয়েও দিতে পারেন। যেমন ঝপ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে দিতে পারেন, তেমনই। কী ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলেননি, তোমার বাঁচা-মরা আমার হাতে, আমি এমন শক্তিমান। আমার প্রচন্ড অভিমান।

    এসব করে কী কী হবে, সে আর আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। ভূস্বর্গ আবার ভূস্বর্গ হবে। টেকনোলজিতে ফেটে পড়বে। হার্বাল প্রোডাক্টের ব্যবসা হবে ( কে করবে বলেননি, আন্দাজ করে কিছু বলা ঠিক নয়)। এবং সর্বোপরি, কাশ্মীরে আবার শুটিং হবে। হিন্দি, তামিল, তেলুগু তো বটেই, সারা দুনিয়া থেকে লোকে আসবে শুটিং করতে। ভূস্বর্গ জমজমাট হবে। বলিউড-হলিউড হবে। এর চেয়ে বেশি উন্নতির লক্ষণ আর কীইবা হতে পারে ভূভারতে?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ০৮ আগস্ট ২০১৯ | ১০০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • এই যে | 236712.158.2367.80 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৯ ০৫:১২78937
  • আপডেট।
  • | 237812.68.454512.228 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৩৫78938
  • পতঞ্জলি ওখানে কতটা জমি পায় দেখতে হবে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন