এই বছরের ২৮ ও ২৯শে আগস্ট মুসলিমদের, বিশেষ করে শিয়া মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় পবিত্র দিবস আশুরা উদযাপিত হচ্ছে। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুসার বিজয়ের স্মরণে আশুরার সাওম বা রোজা পালন করত। তবে শিয়া মত আশুরার পূর্ব ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে। এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ তদবীর পালন করে থাকে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইনের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত। ... ...
বেশী দিন যৌবন ধরে রাখার মধ্যে খারাপ কিছু নেই – ওই যাকে আমরা ‘হেলথি লাইফস্টাইল’ বলি তা মূলে তো ভালো ভাবে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকাটাই আছে। সেক্ষেত্রে আমরা যেটা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি তা হল আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন এবং আমাদের খাওয়া দাওয়া। এ পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু এর বাইরে যে জিনিসগুলো আরোপিত হয়েছে আমাদের বার্ধক্য রোধ করার জন্য সেগুলোর রাজনীতি এবং অর্থনীতি খুব জটিল। বিজ্ঞানের চোখে এবং প্রমাণাদির উপর ভিত্তি করে আমরা ঠিক এই মুহুর্তে কোথায় দাঁড়িয়ে? পুষ্টিকর খাবার এবং সাধারণ স্বাস্থ্য ছাড়া এমন কি কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে আমরা কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছি যাতে করে বার্ধক্য আটাকানো যায়? সঠিক উত্তর হল – না। কোন ম্যাজিক বার্ধক্য বিরোধী বুলেট আবিষ্কার হয় নি, না হয়েছে কোন বার্ধক্য বিরোধী খাবার বড়ি, না কোন ইঞ্জেকশন, না কোন ম্যাজিক ক্রীম বা স্প্রে – তা এ সব বিশাল দামী বা সস্তা যাই হোক না কেন! কিন্তু তার মানে কি এই বিষয়ে কোন গবেষণা চলছে না? চলছে বৈকী! বিশাল সব গবেষণা চলছে, এমনকি বিগত দুই দশকে এই নিয়ে নাড়াঘাঁটা আরো বেড়েছে! বার্ধক্য বিরোধী রিসার্চ খুব বেড়েছে বায়োলজিক্যাল গবেষণায় - যে সব জিনিসগুলো সাহায্য নেওয়া হচ্ছে তার রেঞ্জ বিশাল – ন্যানো-মেডিসিন, টিস্যু-ইঞ্জিনিয়ারিং, স্টেম-সেল রিসার্চ চলছে জোর কদমে, যারা নাকি শুধু বার্ধক্য ঠেকাবে না, আমাদের বয়স কমিয়েও দিতে পারবে ভবিষ্যতে! এগুলোর বেশীর একটু দূরে এখন, কিন্তু বুড়ো হওয়া ঠেকাতে আমরা বেশ কিছু জিনিস সহজে হাতের কাছে পেয়ে খুব ব্যবহার করি। এই সহজে লভ্য দুই ধরণের জিনিস হচ্ছে – নানা ধরণের খাবার/সাপ্লিমেন্ট/মেডিসিন আর কসমেটিক্স (মুখে/গায়ে মাখার ক্রিম ইত্যাদি)। ... ...
প্রায়ই শহর থেকে বাসে করে স্কুলে আসার সময় শুনি গতরাতে ওমুক গঞ্জ কি তমুক ছড়ার স্কুলে আগুন লেগেছে। বেশিরভাগ টিনের চাল আর বাঁশ বা কাঠের ওপর প্লাস্টার করা স্কুল বাড়ি। দৃষ্টিশোভণ কিন্তু সহজ দাহ্য। একদিন দেখি বাসে একজন বয়স্ক মাষ্টারমশাই নীরবে চোখের জল ফেলছেন, স্কুল পুড়ে গেছে, পুড়ে গেছে তাঁর সার্ভিসবুক। সামনে রিটায়ারমেন্ট। একরকম একদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসে উঠে একটা জানালার ধারে সীট পেয়ে গুছিয়ে বসেছি তখনই শুনলাম আগের রাতে আমাদের স্কুলে আগুন লেগে অফিস ব্লকসহ অনেকখানি পুড়ে গেছে। ... ...
প্রাজ্ঞজন উপদেশ দিয়েছিলেন মুখোশপরা মানুষের থেকে দূরে থাকতে| এমনই কপাল, কোভিড-কালে সব্বার মুখে এঁটে বসেছে মুখোশ| আক্ষরিক অর্থেই মানুষ চেনা দায়| তাই মাস্ক নিয়ে একটু মস্করা আজ| ... ...
একই সাথে গবেষণা এবং স্মৃতিকথার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বারোটি পরিচ্ছদের কাহিনী-মালা। প্রতিটি পরিচ্ছদ-ই এক বা একাধিক কাহিনী। টানটান লেখার বাঁধুনিতে ছোট ছোট স্কেচ। প্রতিটি পরিচ্ছদের শেষে উল্লেখ করেছেন সেই বই বা তথ্যের যা তাঁকে ঐ পরিচ্ছদটি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। ফলে সমগ্র সৃষ্টিটি হয়েছে চুম্বকে এক বিশ্বাসঘাতক সময়ের বেদনা আর তার থেকে উত্তরণের এক মনোগ্রাহী দলিল। এ এক আশ্চর্য সমন্বয়। ... ...
এই যে ব্যক্তিমানুষটির যাপন বা আদর্শকে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর লার্জার-দ্যান-লাইফ ইমেজটির অনুষঙ্গ ব্যবহার করে কিঞ্চিৎ গৌরব অর্জন, ব্যাপারটা শুধু নির্দোষ ব্যক্তিগত সংগ্রহের আত্মপ্রসাদ লাভে সীমাবদ্ধ থাকলে অতোখানি সমস্যা হত না। কিন্তু, ইদানীং ইমেজের সদব্যবহার বা অপব্যবহার করে নিজেদের অ্যাজেন্ডা গুছিয়ে নেওয়ার ধারাটি পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে - আর পুরো পরিস্থিতির পাঠটাই খুব সহজেই কেমন গুলিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। যেমন দেখুন... একদিকে গান্ধীজির হত্যাকারীর নামে মন্দির তৈরী হচ্ছে এবং আরেকদিকে গান্ধীহত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে গৌরবান্বিত প্রধানমন্ত্রী গান্ধীজির স্মৃতিসৌধে মালা দিয়ে থাকেন। গান্ধীজির প্রতিস্পর্ধী হিসেবে সর্দার প্যাটেলকে খাড়া করে ফুটেজ খাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং মোদি-শাহ জুটিকে প্রায় বল্লভভাই প্যাটেলের উত্তরসূরী হিসেবে প্রোজেক্ট করা হয়, যদিও প্যাটেল স্বয়ং আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং সাভারকারকে জেলে ঢোকানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন, যা থেকে তাঁকে নিরস্ত করতে বিস্তর চিঠিচাপাটি লেখেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ... ...
স্রোতস্বিনী নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। সে চেয়েছিল তার ম্যাজিকটা সারাজীবন তারই থাক। তার জন্য চেষ্টার কসুর সে করেনি কখনও। রোজ বিকেলে সে ঘন্টাখানেকের জন্য ম্যাজিকটাকে একা ছেড়ে দিত শুরুতে। যাতে ম্যাজিকটা নিজের মতো ঘুরেফিরে একটু শ্বাস নিয়ে আসতে পারে। তার বিশ্বাস ছিল তার ম্যাজিক যখন তার কাছেই ফিরে আসবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ম্যাজিকটা একদিন ফিরলো না। বাধ্য হয়ে স্রোতস্বিনী তখন তাকে খুঁজতে বেরোলো। পাক্কা দেড়দিন পর দেখা গেলো সেখান থেকে তিনটে পাড়া পেরিয়ে একটা হলুদ বাড়ির দোতলায় একজন বয়স্ক মহিলার কোলে শুয়ে ম্যাজিকটা তখন চাঁদের বুড়ির গল্প শুনছে ... ...
শেষ বিকেলের রোদে আমরা পৌঁছাই রূপকারী গ্রামে। সেখানে রূপালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের এক কোনে মঞ্চ নির্মাণ করে পিসিপি শোকসভার আয়োজন করেছে। মঞ্চের পেছনে সদ্য নির্মিত চারটি কালো রঙের স্মৃতিস্তম্ভ মনে করিয়ে দেয় কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে চারজন তরুনের জীবনদানের কথা। শোকসভাকে ঘিরে কয়েকটি গ্রামের আদিবাসী নারী-পুরুষ-শিশু ভীড় জমান। পুরো স্কুল মাঠ যখন কানায় কানায় পূর্ণ, তখন মঞ্চে উঠে কল্পনা চাকমাকে নিয়ে লেখা গান ধরেন স্কুল শিক্ষক ব্রহ্মকুমার (লালফা) চাকমা। এবার সমবেশে ওঠে শব্দহীন কান্নার রোল। মঞ্চে পিসিপির ছেলেমেয়েরা বক্তৃতা দিতে গিয়ে বার বার খেই হারিয়ে ফেলেন, কান্নায় তাদের গলা বুজে আসতে চায়।... ... ...
মানুষের ভীতি এবং যৌন উত্তেজনার মধ্যে কোন সম্পর্ক আদৌ আছে কিনা ডোনাল্ড ডাটন এবং আর্থার আরন নামে দুই গবেষক তা তলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন! তাঁরা অনুমান খাড়া করেছিলেন এই মর্ম যে ভীতি বা উদ্বেগ জনিত অবস্থা যৌন উত্তেজনা বাড়াবে কারণ সেই অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্ক ভুলভাবে সনাক্ত করবে যৌন উত্তেজনা জাগরণের মূল কারণ (“মিস-অ্যাট্রিবিউশন অফ আর্যাউজাল”)। এই থিওরী অনুযায়ী, যদি আমরা এমন কোন অবস্থার মধ্যে থাকি যা আমাদের মধ্যে খুব বেশী আবেগ জাগিয়ে তোলে, তাহলে আমরা বেশীর ভাগ সময় ভুল ভাবে আবেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করি আমাদের সাথে থাকা মানুষটার সাথে – আসলে যেখানে আমাদের চালিত করছে সেই মুহুর্তে কোন পরিস্থিতিতে আছি মূলত সেটাই। এ তো গেল হাইপোথিসিস – কিন্তু এটা প্রমাণ করা যাবে কিভাবে? ভ্যাঙ্কুভার শহরের কাছে মানুষ পারাপারের ক্যাপিলানো ঝুলন্ত ব্রীজ। যাঁরা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দিকে গেছেন তাঁরা জানেন যে ওখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর। আর এই ব্রীজটা ঠিক বাণিজ্যিক ব্রীজ নয় বরং খুব সুন্দর প্রাকৃতিক জায়গার মধ্যে বেড়াতে গিয়ে ব্যবহার করার জুলন্ত সেতুর মত – প্রায় ৪৫০ ফুট মত লম্বা – পুরোটাই কাঠ এবং দড়ি দিয়ে তৈরী, এবং খুব সরু। বুঝতেই পারছেন কাঠের পাটাতনের উপর দিয়ে এই ব্রীজ পেরোবার সময় বেশ ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হত – আর পায়ের নীচে দেখা যেত প্রায় ২৫ তলা বাড়ির সমান গভীর পাথুরে খাদ। হাওয়া দিলে বা জোরে চলার চেষ্টা করলে সেই কাঠের সেতু দুলত – এবং কিছু এদিক ওদিক হয়ে গেলে নীচে পাথরের উপর পরে গেলেই ব্যাস গল্প খতম! ১৯৭৪ সালের কোন এক দিন - এক খুব সুন্দরী মহিলা সেই ঝুলন্ত সেতুর উপর যে সমস্ত একাকী যুবক পারাপার করছিল তাদের কাছে (এক সময়ে একজনের কাছে) এগিয়ে, একহাত দিয়ে সেই ঝুলন্ত দুলতে থাকা ব্রীজের ধারের দড়ি ধরে নিজের ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করতে করতে মিষ্টি তাকালো - ... ...
দিনা বরাবরই জে’র খুব প্রিয়। অনেক পরে, একদিন এই দিনা জে’র চোখে চোখ রেখে বলবে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে চায়। দিনাকে জে তাঁর বোনের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন, সে সম্পূর্ণ মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু তার পছন্দের মানুষটি ধর্মে পার্সি, নাম নেভিল ওয়াদিয়া। জে ক্ষুব্ধ হবেন, আর ইতিহাস ঘরের ইজিচেয়ারে বসে দোল খাবে আর মুচকি হাসবে। দিনার মা কে? সেটা কি সত্যিই ভুলে গেলেন নাকি জে? বার্ধক্যের ভ্রম না নিয়তি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা? ... ...
দীপাঞ্জন খয়েরি টাই বেঁধে দিল ঝড়ের বেগে, আর মুখ চালাল আরও স্পিডে। এই রকম বোতামওয়ালা সোয়েটার নাকি বয়স্ক লোকেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে পরে, ইয়ং ছেলেরা ইন্টারভিউ দিতে গেলে পরে না, আর টাই-এর সঙ্গে তো নয়ই, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু করার নেই, মুখের ভেতর থেকে কথা আর বাড়ির ভেতর থেকে সোয়েটার একবার বেরিয়ে গেলে আর পালটানো যায় না। আয়নায় এক ঝলক নিজের “স্মার্ট” চেহারাখানার দিকে তাকালাম, খুব একটা ইম্প্রেসিভ লাগল না। সত্যিই ওই সোয়েটারের সাথে টাইটা ম্যাচ করছে না। মোদ্দা কথা হল, বুঝে গেলাম চাকরি যদি আমার না হয় তা হলে ওই সোয়েটারের জন্যই হবে না। ... ...
সে সময় পুরুলিয়া মানে কিষেণজি। আমাদের যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বাঘমুন্ডির দু'জন স্কুল শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় তখন সারা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। ... ...
কথাটা বলা গেলে তার নিজের সম্বন্ধে নিজের ধারণাগুলো আরেকটু স্পষ্ট করে তুলে ধরা যেত সঙ্ঘমিত্রা-র কাছে। বলা যেত, আমি এই! এর বাইরে আমি অন্য কিছু নই। বাদবাকি যা তুমি বুঝেছো সেসব তোমার ধারণা মাত্র। তার সাথে আমার ভিতরের প্রকৃত আমি-টার কোনও সম্পর্ক নেই। সঙ্ঘমিত্রা-ও কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলো, কথার পৃষ্ঠে কথা যেমন হয়। সেই কথাটা শোনাও প্রয়োজন ছিল। সেই কথাটার প্রেক্ষিতে আরেকটু গুছিয়ে বলে ওঠা যেত তাহলে নিজের কথাগুলো। অথচ, সেরকমটা হলো না। অবশ ভাবটা ক্রমশ ঠোঁট থেকে গালের দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো ... ...
উপন্যাসদুটির কথা মাথায় উঠে এল মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এখানে প্রকাশিত সংকলনের লেখাগুলি পড়ে; লক্ষ্য করে দেখলাম অনুবাদক, শিক্ষক বা কবি হিসেবে মানববাবুর পরিচিতি ঘটালেও, ওনারই যুবা বয়সের লেখা এই দুটি ঊপন্যাস - চন্দ্রাহত ও পুনরুত্থান - সংকলনের লেখাদুটিতে অনুল্লেখিত। অনুমান করি হয়ত এই লেখাদুটি প্রায় অপঠিত বা অল্পপঠিত অথবা মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের যা লেখক পরিচিতি - প্রধানতঃ অনুবাদক হিসেবে হলেও তির্যক ও মিতকায় কবিতাগুলিও আলোচিত হয়েছে কখনও - তার সাথে এই লেখাদুটির হয়ত সখ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ... ...
বাবা-মা চায় না আমি এইসব গল্প শুনি। কিভাবে তারা সব হারিয়ে এখানে এসে আবার গোড়া থেকে জীবন শুরু করেছে, রিফিউজীর জীবন, সেটা মা-বাবা-ঠাকুমা কেউ বেশী বলতে চায় না। কিন্তু বীণা পিসী আমায় চুপি চুপি তার গল্প বলে, আমি চুপি চুপি শুনি। আমি ভেবে পাই না লোকে কেন বর্ডার দেয়। কেন বর্ডার পার হতে হয়। এমন হয় না, পৃথিবীতে কোথাও কোন বর্ডার থাকবে না? ... ...
এক গলা জলে দাঁড়িয়ে দুটি ছেলেমেয়ে দেখছে, এক কোমর জলে দাঁড়ানো স্কুলশিক্ষক জাতীয় পতাকা ওড়াচ্ছেন - আমার কাছে ওই বাচ্চাদুটি আমার দেশ - আর মাথার ওপরে পতপত করা ওই পতাকাটা রাষ্ট্র। মাটির থেকে দূরে, নিজ গর্বে উড্ডীয়মান, নীচের দেশটিই তাকে তুলে ধরেছে কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক বিরহিত। তাকে "ভালবেসে" কিছু করা যায় না কারণ তাকে ভালবাসা যায় না। ... ...
ফাউয়ের দুনিয়া - আমার ছোটবেলার প্রথম স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় দিনটি ছিল ১৫-ই আগস্ট। সকালবেলায় স্কুলে যাওয়া হত। কিন্তু তারপর কোন ক্লাস হত না। ছোট ছোট পতাকা হাতে নিয়ে ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে-মিশে বেড়িয়ে পড়তাম মিছিল করে। প্রভাতফেরী। ... ...
মেয়েদের হেঁসেল ঠ্যালার গল্প কি সারা পৃথিবী জুড়েই এক, এমন কি আজকের দিনেও? পাপুয়া নিউ গিনি-র কাছে একটা দ্বীপ আছে যার নাম ‘ভানাটিনাই’ – তো এই দ্বীপটা অনেক অ্যান্থ্রোপলজিষ্ট-দের আগ্রহের বিষয় হয়েছে ইদানিং কালে কারণ এদের সমাজে মেয়েদের যে সম্মান তা নাকি পৃথিবীতে বিরল – এমনকি চরম আধুনিক পশ্চিমা সমাজেও। এদের সমাজে এমন কোন ধারণার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় নি যেখান থেকে পুরুষেরা মেয়েদের থেকে শ্রেষ্ঠ তার ইঙ্গিত পায়। মেয়ে এবং ছেলেরা সমভাবেই সব কর্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারে – তা সে উৎসবের আয়োজনই হোক, বা নৌকা নিয়ে শিকারে বেরোনোই হোক – বা পশুপালন, চাষআবাদ, যুদ্ধ, জমির উত্তরাধিকার, কোথায় বাড়ি বসতি গড়ে তোলা হবে তার সিদ্ধান্ত, কি বাণিজ্য হবে তা ঠিক করা – সবেতেই। মহিলা এবং পুরুষ যে কেউ নিজেদের দক্ষতায় সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা লাভ করতে পারত। গার্হস্থ্য হিংসা এবং মারপিট প্রায় নেই বললেই চলে – নিজেদের কাজের ব্যালেন্স নিয়েও খুব বোঝাপড়া সেখানকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। কে কেমন ভাবে সময় কাটাবে তা ঠিক করার স্বাধীনতা আছে সবার – মানে যাকে বলে এক স্বর্গরাজ্য লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে। যদি জানতে চাই এবার - আপনার কি মনে হয় সেই ভানাটিনাই সমাজে বাড়ির রান্না কে করত! ... ...
অনিন্দ্য সেন, শিলচরের অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজির মাস্টারমশাই, এখন জেলে বন্দি। তাঁর অপরাধটা, অনেকে হয়তো বলবেন, নিতান্তই নির্বিষ। ৫ অগস্ট, অযোধ্যায় রামমন্দির-স্থাপনার পুণ্যমুহূর্তে, একটি বেচাল টিপ্পনি কেটেছিলেন এই ধৃত অধ্যাপক: 'এত হুলস্থূল কাকে নিয়ে, যিনি তাঁর বউকে ছেড়ে এসছিলেন– লোকলজ্জার ভয়ে?' গুয়াহাটির অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক মাতব্বর পোস্টটির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করে, এবং অনিন্দ্যকে গ্রেফতার করা হয়। হুড়কো দেওয়া হয় তিনটি লাগসই ধারা: ২৯৪ (জনপরিসরে অশ্লীল কাজকারবার), ২৯৫এ (সোজা কথা: ধর্ম নিয়ে ব্লাসফেমি), ৫০১ (অবতারের মানহানি)। আজ হপ্তাদেড় কেটে গেল, অনিন্দ্য সেন জেলবন্দি। ... ...
এই যে দুই দুইটা সম্প্রদায় প্রবল ভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল। একজনের রক্তে আরেকজনের হাত রঞ্জিত হল, এত কিছুর পড়েও তো আমরা একদিন বুঝতে পারলাম আমরা আসলে এক। আমাদের জাতি পরিচয় এক। ৪৭ সনের দুঃখ ভুলতে আমাদের বেশি সময় কিন্তু লাগেনি। সময় আমাদের আবার একটা সুযোগ দিয়েছিল। দুই সম্প্রদায় সমস্ত নীচতা, সমস্ত কালিমা ভুলে গিয়ে ১৯৭১ সালে মিশে গিয়েছিল। গোলাম মুর্শিদ তাঁর হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি বইয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথা। সেবার দুর্গা পূজায় পূজা মণ্ডবে দুর্গা প্রতিমার সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখা হয়েছিল! উনাকে অমিতাভ চৌধুরীর স্ত্রী সুনন্দা চৌধুরী তাঁর একমাত্র ভাইয়ের সাথে একত্রে বসয়ে দিয়েছিলেন ভাই ফোঁটা! ভাই ফোঁটা দিয়ে ভাই হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তাকে। এমন অজস্র উদাহরণ তৈরি হল সে সময়। এর আগের সমস্ত কালিমা নিমিষে দূর হয়ে গেল। হাওয়ায় উড়ে গেল যেন ধর্ম বর্ণ, ঘটি বাঙালি সহ যত বাধা ব্যবধান! ... ...