কিছু শোনা, কিছু কল্পনা ... ...
ভারতবর্ষের দারিদ্রসীমার নিচে থাকা সেই বিপুল সংখ্যক জনতা যদি আদিম হুঙ্কারে গর্জন করে যে - ভাত চাই ! তবেই লক ডাউন মানব ! না হলে আমরা এমনিও মরি অমনিও মরি, করোনায় আমাদের কি যায় আসে হে? ... ...
লকডাউন উঠে গেলেই কি করোনা ফিনিশ? স্পষ্ট করে প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, না। এই ধুন্ধুমার লকডাউন উঠে গেলে পৃথিবী আদপেই পৃথিবী করোনামুক্ত হবেনা। একবার যখন এসে পড়েছে, ভাইরাসটি আছে এবং থাকবে। নির্মূল হবেনা। সে চেষ্টাও পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো স্বাস্থ্যসংস্থা বা সরকার করছেনা। অতএব, যদি নেহাৎই প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো দ্বীপে গিয়ে একাকী বসবাস না করতে পারেন, আজ হোক বা ছমাস পরে, এর সংস্পর্শে আপনি আসবেনই, যদি না ইতিমধ্যেই এসে গিয়ে থাকেন। তার মধ্যে কোনো টিকা বেরিয়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। (যখন বেরোবে তার পরেও, ফ্লুয়ের মতোই ভাইরাসের নতুন কোনো গোষ্ঠী সম্ভবত উদয় হবে, টিকা যার কোনো প্রতিষেধক নয়।) ফলে ভাইরাস নাকের ডগায় এলে আপনার ভরসা আপনার প্রতিরোধক্ষমতা। কোনো লকডাউন, কোনোভাবেই আপনাকে তার থেকে বাঁচাবেনা। ... ...
কিঞ্চিৎ চিন্তাগ্রস্তই ছিলেন শিবু, ওরফে শিবানন্দ। যামিনী গতপ্রায়, পূর্ব দিগন্ত হইতে চন্দ্রকলাখানি পাড়িয়া, ঝাড়িয়া ঝুড়িয়া নিজের জটায় লাগাইয়া দিলেন। যাক, অদ্যকার মতো কাজ শেষ। এবং সেখানেই প্রকৃত ভাবনার আরম্ভ। সামনে এক্কেবারে আস্ত একটি দিন পড়িয়া আছে, অথচ করিবার কিছু নাই। সে এক কাল ছিল বটে। ছিলিমে সুখটান দিতে দিতে আর আকুল ভক্তগণের প্রার্থনা শুনিতে শুনিতে সময় যে কোথা হইতে মাখনের ন্যায় গলিয়া যাইত। ... ...
অনেক কিছু স্মৃতি উঠে আসছে – ২০০০ সাল অবধি তেমন ভাবে ‘কবিতা’ নিয়ে চর্চা বা ভাবনা হয়ে ওঠে নি। ওই গোঁফ ওঠার বয়সে যা ছড়া/কবিতা লেখে সবাই তেমন কিছু ছাড়া। আর সব প্রচলিত বিখ্যাত কবির কবিতা পড়া – সেই সময় ছিল সমকালীন জয় গোস্বামী টাইপের ইত্যাদি। এমন এক সময়ে পরিচয় হয়ে যায় এক অদ্ভুত ওয়েবসাইটের সাথে – মনে রাখতে হবে তখনো ইন্টারনেট এমন প্রচলিত হয়ে ওঠে নি, ব্রড ব্যান্ড ইত্যাদি তো দূরের কথা – অর্কূট, ফেসবুক, ইউটিউব কিছুই নেই। এমন ভাবে নিরলস কবিতার সাধনা করে যাওয়ার সাইট বিরল। দুই বাংলার অনেক এখনকার চেনা এবং জনপ্রিয় কবি এই সাইটে হাত পাকিয়েছিলেন এখানে। ভাবছি তেমন কারো কারো দের দিয়েই কিছু লেখা যাক টুকটাক। ... ...
আচ্ছা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সভ্যতার এ' রকম বিপর্যয় কি ইতিহাসে আগে হয়েছে? না বলেই মনে হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চোটে জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ঠিক কথা। বুদ্ধদেব বসুর মেমোয়ারে পড়েছি, ট্রাম বাদে কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যেত না তখন, সন্ধে নামলে এক কাঠি ওপরে বিদ্যুৎ অফ– মাঝেমধ্যে জনশূন্য রাসবিহারীর মোড়ে ট্রামের ইতস্তত ধাতব মর্মর, আর পূর্ণিমার চাঁদ গলে গলে ট্রামলাইনে পড়ছে। ... ...
পণ্ডিত রবিশংকর কে, এমন প্রশ্ন যদি তাঁর শতবর্ষে নিক্ষিপ্ত হয়, আমার উত্তর হবে: এক সেতার-বাজিয়ে প্রেমিক পুরুষ৷ নারীবাদীরা হয়তো অভিধার দ্বিতীয় শব্দটিতে কিঞ্চিৎ গোলমাল খুঁজে পাবেন, কিন্তু পৌরুষ ছাড়া রবিশংকরের বাজনাকে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। সেই পৌরুষ, আশ্চর্যজনক ভাবে, উদগ্র ম্যাসকিউলিনতার কোনও ইস্তেহার নয়, বরঞ্চ প্রতি পলে ভারতীয় পৌরুষের ধারণাকে সে ভেঙেছে, গুঁড়ো করেছে, সাজিয়ে নিয়েছে নতুনতর কোনও ক্যালাইডোস্কোপে। ... ...
'মৃত্যু এবং সুযোগ- মানে মৃত্যু এবং জীবন'। "সময়ের স্তব"-এ পড়ছিলাম উরসুলা লে-গ্যিন কে। বলছিলেন তিনি- মৃত্যু এবং সুযোগ কী-ভাবে খেলা করে- মহাশূন্য ও গ্যালাক্সির মধ্যে। মৃত্যুর চেতনার মধ্যে স্পেকট্যাকল কখনও হয়ে ওঠে জীবন হারানোর একটা রিলে রেস। মন্থর সে দৃশ্য-গতি। পৃথিবীর এই কালান্তক সময়ে সমবেত দেখে যাওয়া এই লঙ মার্চের স্পেক্ট্যাকল অতএব আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে থাকল। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার কথা বলছি। দৃশ্যগুলি ভারত দেশের ও বাংলাদেশের। যেখানে সারা রাজপথে, নগরের রাস্তায়, হাইওয়ে জুড়ে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে। খুব দ্রুতই কিছু দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে।মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে ভারতে লকডাউন করা হল। মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকরা যথেষ্ঠ সময়ই পেলেন না, তার আগেই কাজ খোয়ালেন, আস্তানা খোয়ালেন ও পরিবহন হীন দেশে, ভুখা পেটে মাইল, মাইল হাঁটতে বাধ্য হলেন। একই চিত্র বাংলাদেশেও। আগাম সতর্কতা, পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউনে হঠাৎ চালু হয়ে গেল কারখানা।একটা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান লকডাউন-কে কার্ফিউ বলে। এই মারী’র কালে রাস্তায় মরতে থাকা মানুষ-কে ভাত দিলনা- কোটি কোটি টাকার অস্ত্র কিনল। আদ্যোপান্ত মিলিটারি নয়, বলুন বেলাগম জ্ঙ্গী প্যাকেজ।একে টেররিজম বলে। আমরা সাক্ষী থাকছি। মন্থর দিনাবলী, স্লো ক্যামেরা, এপিক্যাল প্লট, দার্শনিকের কথামালা এবং খন্ড স্পেক্টাক্যাল এর । ... ...
আমি মরে গেলে, আপনি মরে গেলে এভাবেই নিঃশব্দে নিঃসঙ্গতম অন্ধকারে হারিয়ে যাব। কিন্তু যদি কোনোক্রমে বেঁচে যাই, মহামারি থেকে শিক্ষা নেব তো? ভেবে দেখা যাক। ... ...
অথচ, প্রশ্ন ছিল অনেক। প্রশ্নগুলো যেভাবে এবং যতোখানি জোরের সাথে উঠে আসার কথা ছিল, সবই পটকার আওয়াজে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। যেমন, দেশে প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ পাওয়ার পরেও সরকার হাত গুটিয়ে বসেছিলেন কেন? যেমন, প্রথমদিকের সব আক্রান্তই বিলেতফেরত জেনেও, আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? যেমন, খবর পাওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক উড়ান থেকে যাঁরা নামলেন, তাঁদের নজরে রাখা এবং পরীক্ষার বন্দোবস্ত হল না কেন? যেমন, সারা বিশ্ব যখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত, তখনও স্বাস্থ্যদপ্তর কোন আক্কেলে জানালেন, যে, করোনা কোনো এমার্জেন্সি পরিস্থিতি নয়? কিন্তু, সেসব এখন অতীত। যা ঘটে গিয়েছে, সে নিয়ে দোষারোপ করে গায়ের ঝাল মেটানো যেতে পারে - পরিস্থিতির মোকাবিলায় এগোনো যাবেনা তেমন। অতএব, মোমবাতি জ্বালানোর যুক্তি ছিল কি ছিল না, অত্যুৎসাহীর দল পটকা ফাটিয়ে বিপর্যয়ের মুখে অশ্লীল আমোদ প্রকাশ করেছে কি করেনি - এসব প্রশ্ন ছেড়ে আসল প্রশ্নগুলোর কথা বলা যাক। ... ...
জাপানী কথাকার হারুকি মুরাকামি বর্তমান বিশ্বের বিশিষ্ট ও জনপ্রিয়তম ঔপন্যাসিকদের অন্যতম। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে হিয়ার দ্য উইন্ড সিং, পিনবল ১৯৭৩, আ ওয়াইল্ড শিপ চেজ, হার্ড বয়েলড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড, নরওয়েজিয়ান উড, ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স, সীমান্তের দক্ষিণে সূর্যের পশ্চিমে, দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিকল, স্পুটনিক স্যুইটহার্ট, কাফকা অন দ্য শোর, আফটার ডার্ক ইত্যাদি। এছাড়া হাতি গায়েব, আফটার দ্য কোয়েক, ব্লাইন্ড উইলো স্লিপিং উওমেন, নারী বিবর্জিত পুরুষেরা ইত্যাদি নামের বেশ কিছু জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থও তিনি লিখেছেন। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ এপার বাংলা ওপার বাংলা মিশিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনসংস্থা থেকে মুরাকামির বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মুরাকামির ওপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। তাঁকে নিয়ে দুই বাংলাতেই চর্চা ক্রমবর্ধমান। ... ...
আগে মানে এই সত্তর আশির দশকে এরকম বেশ কিছু জ্যেঠু বা পিসীদের আমরা অনেকেই চিনতাম। এঁদের কেউ বলত ছিটেল, কেউ বলত বাতিকগ্রস্ত, কেউ কেউ বিরক্ত হত, বেশিরভাগই এঁদের নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে কোথাও একটা প্রশ্রয়ও ছিল সমাজে এঁদের প্রতি। এঁরা এঁদের বিশ্বাসমত সকলের যাতে ভাল হয় সেরকম চেষ্টা করতেন, ব্যক্তিগত অধিকার অনধিকারের তোয়াক্কা খুব একটা করতেন না। সেটা যে সবসময় ভাল হত তাও না, তবু এঁদের আন্তরিকতায় খাদ ছিল না। আরোপিত স্বাতন্ত্র্যে ঘরবন্দী থাকার সময় এঁদের কথা হঠাৎই বড্ড মনে পড়ছে। ... ...
"....মাথায় এক ছটাক ঘিলু থাকলেই এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর নামে কী ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় নজরদারি নেমে আসতে পারে। সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে থাকা প্রত্যেক ভারতবাসীর তথ্য নিয়ে আধার যোগ করে ন্যাশনাল সোশ্যাল রেজিস্ট্রি বানানোর কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে; যা ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় নজরদারির প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। এই অ্যাপ থেকে সংগৃহীত তথ্য ন্যাশনাল সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরিতে ব্যবহৃত হবে না তো?...." ... ...
অথচ দরজাটা খোলাই ছিল। ছাদ আশ্রয়, দেওয়াল সুরক্ষা দিলে দরজা দিয়েছে গোপনীয়তা। আর সেই সূচনা থেকেই জানালার সাথে মিথ্ হয়ে গেছে অজস্র অলিখিত ও কিছু লিখিত পঙতিমালা। বলা হয় এক ছাদের নীচে বসবাস করলে নাকি সম্পর্ক দানা বাঁধে। সেই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সাথে মানবিক বিক্রিয়ায় কিছু মুহুর্ত তৈরী হয়। তেমনি কিছু মুহুর্ত কবিতার আকারে – যেখানে কাঠের সিঁড়ির সাথে নুপূরধ্বনি অজান্তেই মিশে গেছে ... ...
বালাসাহেব মারা যাবার বছরখানেক পরে বোম্বে এসেছি। সন্ধ্যের ঝোঁকে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; আলো ফেটে রঙ নাবছে, রঙ থেকে ঝিনচ্যাক রঙ। ... ...
১৯৪৪ এর জুলাই মাসে গান্ধি জিন্নার সঙ্গে আলোচনায় বসবার প্রস্তাব দেন। আলোচনার ভিত্তি হবে রাজাগোপালাচারি-সূত্র ... ...
আচ্ছা, এই হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেওয়াতে ক'টা কথা মনে হল। মোদীজির সবই মাস্টারস্ট্রোক, তাই তেনার অসীম ক্ষেমতায় মেরা দিমাগ কি বাত্তি জ্বল হি গ্যয়া। ... ...
আগামীকাল থেকে সমস্ত গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকারের দায় আরও বেশি। এবং সেই দায় সরকার কোন ভাবেই এড়াতে পারে না। যদিও উভয় সঙ্কট পরিস্থিতি তবুও বিকল্প কোন পন্থা খুঁজে বের করা উচিত ছিল। যারা ক্রয়াদেশ বাতিল করেনি তারা তাদের পণ্য তৈরি চাইতেই পারে। সেক্ষেত্রে কারখানা খোলা রাখতে হবে। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন ভাবেই কারখানা চালু রাখার সুযোগ নাই। কিন্তু সরকার কাল থেকে কারখানা চালু করে দিচ্ছে এবং বিজিএমইএ কারখানা খুলে দিতে সম্মত হয়েছে। এতে যে এক দেশে দুই নীতি চালু হল তা কি কেউ খেয়াল করে দেখেছে? শ্রমিকদের জীবনের মূল্য নাই? সবাই নিরাপদ থাকার জন্য, নিরাপদ রাখার জন্য ঘরে বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু শ্রমিক নামক এই প্রাণীদের আজকে ঠেলে দিলাম আমরা জীবনের ঝুঁকি নিতে! বলা হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে কারখানা চালু রাখবে! কীভাবে সম্ভব এই জিনিস? যারা বলছে তারা কোনদিন একটা তৈরি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখেছে? কীভাবে কাজ করে আর কীভাবে খাওয়া দাওয়া করে? তারা কোনদিন শ্রমিকরা কে কীভাবে থাকে তা জানে বা জানার চেষ্টা করেছে কোনদিন? সম্ভবত না। যার কারনেই এমন জিনিস কল্পনা করে বলতেছে যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে কারখানা চালু করতে। স্বাভাবিক সময়েই আমাদের শ্রমিকরা কত ভাল থাকে তা আমরা জানি, এই দুঃসময়ে তারা খুব ভাল আর নিরাপদে থাকবে তেমন আশা করি কোন যুক্তিতে? ... ...
এই ব্লগটি ডিলিট করা হয়েছে ... ...