এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • চা বাগান: এক অরাজকতার বৃত্তান্ত -- শমীক চক্রবর্তী

    বকলমে লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৬ এপ্রিল ২০২০ | ২৬৫০ বার পঠিত
  • মেলা মানে মানুষের ভিড়। এবারের লকডাউনে সেই ভিড় এড়াতেই চৈত্র বা বৈশাখী মেলাগুলো সব আটকে গেছে। তবে একটা মেলা কিন্তু বসতে শুরু করেছে দিনকয়েক হল।

    চা শ্রমিকরা বাগানে বাগানে সাতসকালে কাজের জন্য যে জড়ো হন, তারও নাম মেলা (বা মেলো)। পাতা তোলার কাজ চলে দুপুরের বিরতি পর্যন্ত, সেই পাতা মাপিয়ে, জমা করে দিয়ে, একসাথে বসে খাওয়া হয় মধ্যাহ্নভোজ— ভোজ মানে ঐ চা গাছগুলোরই আশপাশে বড় গাছের ছায়া বা কোনও ছাউনির শীতলতায় বসে সুখদুঃখের গল্পের সাথে ‘বারা বজীকো খানা’ গলাধঃকরণ -- কুলি লাইনের ঘরে কাকভোরেই রেঁধে পুটলি বেঁধে নিয়ে আসা দুমুঠো ভাত-সবজি, আর প্লাস্টিক বোতলে করে নিয়ে আসা 'ফিকা' বা 'নুন চা'। সে চা জুড়িয়ে গেলে কী হবে, ওতেই এনার্জি পাওয়ার বিশ্বাসে ভর করে খানাপিনা সেরে আবার লেগে পড়তে হবে 'উল্টিবেলা'র, মানে ওবেলার কাজে। ফের চলে যেতে হবে বরাদ্দ স্থান ডেক-এ, পাতা তুলতে। তারপর ডোকো বা ঝোলা বোঝাই করে যেতে হবে তৌলাই-এ, আবার পাতা মাপাতে। সন্ধ্যে নামার আগেই বাড়ি পৌঁছে ঘরকন্না সামলাতে হবে বলে হুড়োহুড়ি লেগে যায় তখন, যেমন তাড়াহুড়ো থাকে ক্ষুধার্ত দুপুরের তৌলাইয়েও।





    জমা করা পাতার হিসাব লিখে রাখবে বইদার। পক্ষকাল (বা কোথাও সপ্তাহ) পেরোলে ঐ হিসেব দেখেই বিলি হবে মজুরির টাকা। ওজনে এক-আধ কেজি কম লিখলেও তাড়াহুড়োয় আর সেটাকে পাত্তা দেয় না অনেকেই। দিনভরের সঙ্গী পাতাগুলো 'ঠিকা' (টার্গেট)-র হিসাবে পাশ কিনা দেখে নিয়ে, হিসেবের অঙ্ক হয়ে চলে যায় মালিকের জিম্মায়। বাণিজ্যের জাদুবলে অকশন সেন্টার হয়ে মালিকের খাতায় সেগুলো ফিরে আসে, কেজিদরে, চকচকে মুদ্রা হয়ে। সরকারের খাতায় লেখা হয় ফরেন কারেন্সি, আর দিন গেলে শ্রমিকের মজুরির ভাঁড়ারে লেখা হয় একশো ছিয়াত্তর টাকা। কাটাকুটির পর হাতে আসে আরও কম। পড়ন্ত বিকেলে মাথার নাম্লো-র সাথে বাঁধা পিঠে বওয়া খালি ডোকো বা ঝোলায় খাবারশূন্য পুটুলি, আর হয়তোবা ছাতাটা ভরে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় মনমায়া কার্কী বা এতোয়ারি ওরাওঁরা।



    করোনার এই পর্বে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বলে যা বলা হচ্ছে, যার মানে আসলে অন্যের সংস্পর্শ বাঁচিয়ে থাকা, যাকে বলা উচিত ছিল ‘শারীরিক দূরত্ব’-- সেটা চা শ্রমিকের জীবনে দিনের এই সময়টায় শুরু হলেও হতে পারতো। কিন্তু তাও কি আর হয়? হয়তো পোষা গরু-শুয়োর-ছাগলের জন্য অল্প ঘাস কাটতে বেরোতেই হয় আবার। কিছুক্ষণের জন্য হলেও। আর তখনই হয়ত দেখা হয়ে যায় পাশের লাইন বা পল্লো গাঁওয়ের বিবেক কিংবা সুষমার সঙ্গে, জনতা কার্ফুর দিন যে কোনরকমে ফিরে এসেছে গ্রামে, করোনার ভয়ে কেরালা বা মুম্বইয়ের কাজটাকে মুলতুবি রেখে দিয়ে। তার সাথেও দুচারটে গল্প তো আছেই। আর এখন তো আরোই জমেছে গল্প। করোনার গল্প। পরদেশে আটকে পড়া গ্রামেরই ‘পলায়ন’ বা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফোনে ভেসে আসা সঙ্কটবৃত্তান্ত।





    এই লকডাউন স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা দেশকে। ২৪ মার্চ মাঝরাতে লকডাউন চালু হলেও আর পাঁচটা আইনকানুন বা সুযোগ-সুবিধার মতই লকডাউনও চা বাগানগুলোয় দেরিতে এসে পৌঁছেছিল। মালিকরা বাগান খোলা রেখেছিল কোথাও কোথাও এমনকি ২৬ তারিখ পর্যন্তও। আতঙ্কিত শ্রমিকরা নানা বাগানে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর বেগতিক দেখে বা সরকারী অর্ডার তামিল করার বাধ্যতায় বন্ধ হয় বাগানগুলো।

    কিন্তু রজনী পোহানোর সাথে সাথেই শুরু হল মালিকদের অন্য আঁক কষা। ফার্স্ট ফ্লাশের চা পাতাগুলো রাত পেরোলে যতটুকু বাড়ে, তার চেয়েও অনেক বেশি হারে বাড়ে লোকসানের গল্প।

    টি বোর্ডের হিসেবে ফিবছর চা শিল্পে সংকটের যে গল্পটা কিছুতেই ঠাহর করা যায় না, যা ধারাবাহিকের এপিসোডের মত ঘুরেফিরে আসে মিনিমাম ওয়েজ-এর দাবির প্রত্যুত্তরে, সেই গল্পটা কি করে যেন সংখ্যার অবয়ব নিয়ে ফেলল, সরকারের কাছে পেশ করা মালিকী দাবির খতিয়ানে।

    বাগিচা শিল্পের মালিকদের পরামর্শদাতা কমিটি ২৮ মার্চের মধ্যেই পেশ করে ফেলল ১৪৫৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের দাবি। কেন্দ্র সরকারের কাছে। বাগান খারাপ হয়ে যাবে বলে মালিকরা আশংকা ব্যক্ত করায় এদিকে রাজ্য সরকার পাঁচ জনের ছোট ছোট দলে ওষুধ স্প্রে করা বা ইরিগেশনের কাজের অনুমতি দিয়েছিল। আশংকা তো আছেই-- শিল্পকে তো বাঁচতে হবে। কিন্তু শ্রমিককেও কি বাঁচাতে হবে না?

    চা শ্রমিকদের মজুরির পাশাপাশি প্রাপ্য সুবিধাগুলো, অর্থাৎ চিকিৎসার বন্দোবস্ত-ঘর মেরামতির টাকা-ছাতা-জুতো-জ্বালানি-তিরপল -- ইত্যাদি ঠিকমত না পাওয়া অধিকাংশ শ্রমিক যাহোক করে জীবন চালান এখানে।

    রেশন ব্যবস্থা যখন ২০১৭ সালে মালিকের হাত থেকে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় হস্তান্তরিত হল, তখন মালিকদের থেকে প্রাপ্য রেশনের ৯ মাসের টাকাও কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেছিল। আজও তার হদিস নেই।

    বাগানের জীবন তাই শুধু মজুরির টাকায় তো চলেই না, মুখ চেয়ে থাকতে হয় ঐ বাইরের রাজ্যে/দেশে কিংবা আশপাশের শহর/বাগানে কাজ করতে যাওয়া পরিবার সদস্যদের রোজগারের দিকে। করোনা সেই সমস্ত আয়ের উপরেও কুঠারাঘাত করেছে।

    শ্রমিক পরিবারগুলোয় তাই হাহাকার শুরু হল—একদিকে, আর কদিন পরে পরিবার কী করে চলবে তার চিন্তা, আর অন্যদিকে এই ভগ্ন স্বাস্থ্য ও বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামো নিয়ে করোনার সাথে লড়াই-ই বা হবে কী করে! প্রশ্নটা গোটা চা-অঞ্চল জুড়েই। তিন শতাধিক ছোটবড় বাগান পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স জুড়ে। আর এগারো লক্ষ বাগান-বাসিন্দা।

    শ্রমিকদের মনে এসব নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও মালিকরা বোধহয় ভাবেন (আর তাই সরকারও) যে এত না-পাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকা চা শ্রমিকরা নিশ্চয়ই অপুষ্টি সত্ত্বেও রোদ-বৃষ্টির মত করোনাকেও সামলে নেবেন।

    তাই, কেন্দ্র সরকার বাগান চালানোর সবুজসংকেত দিয়ে দিলো, ৫০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে। ৩ তারিখের অ্যাডেন্ডাম নোটিশ। তার আগে থেকেই অবশ্য ইঙ্গিত মিলছিল সরকারি সবুজ সংকেতের।

    চা-করদের শক্তি যে বেশ জোরালো তার প্রমাণ পাওয়া যেতে থাকলো যখন লকডাউনের মধ্যেই একে একে আসাম, বিহার, তামিলনাড়ুর নীলগিরি, কেরালায় বাগান চালানোর নির্দেশ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি থেকে জারি হতে থাকল। করোনার এই আতঙ্ক এবং 'স্টে হোম স্টে সেফ'-এর মধ্যেই চা শ্রমিকদের কাজ করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরুও হয়ে গেল।

    আসামের চা শ্রমিকরা তাদের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও নির্ধারিত ১ এপ্রিল থেকে কাজে গেলেন না, প্রথম রাউন্ডের সরকারি ঘোষণা ব্যর্থ হল সেখানে। কিন্তু বাগানে বাগানে সবুজ ফার্স্ট ফ্লাশের সোনালী ইঙ্গিত মালিকদেরকে মরিয়া করে তুলতে থাকলো। ১০ তারিখ থেকে আসামেও কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে।



    এ রাজ্যে ৬ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন যে পরিস্থিতিটা আরেকটু দেখে নিয়ে তবেই চা বাগানের কাজ চালু করা হবে। ৯ তারিখ ফের নবান্ন থেকে ঘোষণা হল, ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে বাগানে স্কিফিং মানে চা গাছের ডগা ছাঁটার কাজ এ রাজ্যেও কাজ চালু হবে। মৌখিক ঘোষণাটা যখন লিখিত নোটিশ হয়ে এলো, দেখা গেল যে পাতা তোলার কাজ সহ সব কাজই জুড়ে গেছে, আর ১৫ শতাংশর ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাথে 'ইতি গজ'-র মত সুরক্ষা আর 'সামাজিক দূরত্ব'-র গালভরা কথা!

    আর সেই নির্দেশ যখন বাগানগুলোতে এসে পৌঁছল, তখন ওই শতাংশের উর্ধ্বসীমাটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াল। একদিকে মালিকদের নির্লজ্জ লোভ আর অন্যদিকে শ্রমিকদের কাছে করোনা আর খিদের তাড়নার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে বলা!

    এই পরিস্থিতিতে কোন ২৫% শ্রমিক কাজ করবেন, কীভাবে করবেন, ২৫% করে দৈনিক রোটেশনে কাজ করানো হবে নাকি অন্যভাবে, শুধু পার্মানেন্টদের কাজে লাগানো হবে নাকি বিঘা (মানে ঠিকা/অস্থায়ী) শ্রমিকদেরও, এসব নিয়ে কোনও আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে কাজ শুরুর বদলে বাগানে বাগানে ম্যানেজমেন্ট বা মালিকরা ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলো ফার্স্ট ক্লাসের সোনালী ফসল তুলতে।

    শ্রমিকদের পেটের খিদে, পরিবার চালানোর টেনশন, প্রথম ২৫ শতাংশে ঢুকতে না পারলে মজুরি/কাজ হারানোর আশংকা-- এসবের কাছে কোথায় লাগে করোনার ভয়! সারাদেশের শ্রমজীবী মানুষেরই করোনা বনাম ক্ষুধার দ্বন্দ্বের ছবিটা প্রায় একই রকম। তবু চা বাগানে কিয়দংশে হলেও উল্লেখ করতে হয় যে অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়... বেড়ে ওঠা চা গাছের দিকে এক বিপন্ন বিস্ময়েও চেয়ে থাকছিলেন চা শ্রমিকরা। নতুন সবুজ পাতা দেখলে পাষাণচাপা বুকের ভেতর থেকেও একটা আলোড়ন ওঠে, হাত নিশপিশ করে। বাপদাদা-মাঠাকুমার হাতে তৈরি চিয়াবারী বা চাহবাগান নিয়ে এই ভালোবাসাটাও অদম্য। একবুক ফসল নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে থাকা দেশজোড়া কিষানকিষাণীর মতন।

    ১৩ এপ্রিল থেকে চা বাগানগুলোতে কাজ শুরু হয়ে গেল বলা যায়। কিছু ব্যতিক্রম আছে। করোনার আতঙ্কজনিত কিছু বিরোধিতাও আছে। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায়ই ২৫% তো কোন ছাড়, অধিকাংশ শ্রমিককে, বা পারলে বাগানে উপস্থিত সমস্ত শ্রমিককেই কাজে লাগানো হচ্ছে।

    খুব কম জায়গায়ই কথামতন রোটেশনে নিযুক্তি হচ্ছে। কোথাও শুধু পার্মানেন্টদের কাজ দেওয়া হয়েছে, কোথাও এবেলা পার্মানেন্ট তো ওবেলা অস্থায়ীদের, কোথাও আবার বিরাট সংখ্যায় অস্থায়ীদের দিয়েই কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও ব্যাপক ওভারটাইম। এটা একেক জায়গায় একেক রকম। কিন্তু একটা ব্যাপারে প্রায় সব বাগান একাকার হয়ে আছে। মালিকরা ফার্স্ট ফ্লাশের এই সিজনে সর্বোচ্চ পাতা তুলিয়েই হিসেব বুঝে নিচ্ছেন। তার জন্য ওভারটাইম, ডাব্লি (বেশি পাতার আলাদা মজুরি), যথেচ্ছ বিঘা (অস্থায়ী) শ্রমিক লাগানো চলছে। 'ঠিকা' অর্থাৎ যতটা পাতা তুলতে হয় তার থেকে অনেক বেশি পাতা তুলছেন বা তুলতে বাধ্য হচ্ছেন সিংহভাগ শ্রমিক। ফার্স্ট ফ্লাশের কাঁচা সোনা জমা হচ্ছে মালিকের ঘরে।

    বলা হয়েছিল যে, সমস্ত রকম সুরক্ষার বন্দোবস্ত থাকতে হবে-- মাস্ক-হ্যান্ডওয়াশ-সাবান-গরমজল-আদাজল -- ঢক্কানিনাদের নানা সংস্করণ। বাস্তবের মাটিতে যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসবের বালাই নেই। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ জায়গায়ই বাগানের মেলাতে, পাতা ওজনের তৌলাইতে, ফ্যাক্টরি প্রসেসিং-এর কাজে ভিড় করে জড়ো হচ্ছেন শ্রমিকরা। সামাজিক উৎপাদনের লভ্যাংশ এভাবেই চলে যাচ্ছে করোনার ভয় থেকে সুরক্ষিত দূরত্বে বসে থাকতে চাওয়া ব্যক্তিমালিকদের হাতে।





    'সামাজিক দূরত্ব' যদি চা বাগানে কোথাও থেকে থাকে, তাহলে সেটা আছে এখানেই। সঙ্কটগ্রস্ত শ্রমিক আর সুরক্ষিত মালিকের দূরত্ব। ক্ষুধার বাধ্যতা আর লাভের বিলাসিতার দূরত্ব। ১৭৬ টাকার খাদ আর অকশনের পাহাড়চূড়ার দূরত্ব। বেহাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা আর মহার্ঘ স্বাস্থ্য পরিষেবার দূরত্ব। করোনার বিপদ নিয়ে অজ্ঞানতা আর সুরক্ষিতভাবে লাভের গুড় খাওয়ার জ্ঞানের দূরত্ব।

    কাজ শুরু হবে বলার সাথে সাথে শ্রমিকদের ভিড় লেগে গেছে কাজে। প্রত্যেকটা দিনই আগামীকালের চিন্তার। মজুরি চাই, না হলে আশু ভবিষ্যত চলবে না। কিন্তু লকডাউন-এর দিনগুলোর হিসেব হবে কি? কী হবে? কেন্দ্র সরকার ঢাক পিটিয়ে লকডাউন এর দিনগুলোর মজুরি না কাটার প্রস্তাব দিয়ে নোটিশ জারি করেছিল। কাজ থেকে বসানো যাবে না অস্থায়ীদের।

    কিন্তু কার্যত কী হয়েছে/হচ্ছে চা বাগানে? লকডাউন-এর দিনগুলোর মজুরি অধিকাংশ জায়গাতেই শ্রমিকরা পাননি। পাবেন বলে তেমন ইঙ্গিতও নেই।

    কিছু জায়গায় লকডাউনের দিনগুলির টাকা কেটে স্টাফ-সাবস্টাফদের বেতন দিতে গেলে তারা প্রত্যাখ্যান করেন। কম টাকা তারা নেবেন না!

    কিছু জায়গায় অ্যাডভান্স দেওয়া হয়েছে, পরে হিসাবকিতাব হলে মজুরির সাথে এডজাস্ট করা হবে বলে।

    কোথাও কোথাও ঐ টাকা দিয়ে দেওয়া হলেও বলা হয়েছে অতিরিক্ত খেটে দিতে হবে শ্রমিকদের। ছুটির দিনগুলোতে। সারাদিন অথবা আধবেলা।

    আর সবচেয়ে বড় কথা হল, এই যে ২৫% বা ৫০% শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে বলে দেওয়া হল সরকারের পক্ষ থেকে, এতে কার্যত অল্প শ্রমিক নিয়ে চা বাগানের পিক সিজনেও কাজ করানোর সিলমোহর পেয়ে গেল মালিকরা। সরকারি ইন্ধনে। এতে কি ভবিষ্যতে বড় সংখ্যায় শ্রমিক ছাঁটাই, বা ব্যাপক অস্থায়ী নিযুক্তির রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে না?

    করোনার এই পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভয়াবহ সঙ্কটটা অস্বস্তিকর রকমের স্পষ্টতা নিয়ে সামনে এসেছে। কৃষকদের ফসল বিক্রি না হওয়ার সমস্যাও উঠে এসেছে। ২০ তারিখ থেকে বিভিন্ন শিল্প চালু করে দেওয়া বা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সামগ্রিক ছবিটা তারপর শ্রমজীবী মানুষের দিক থেকে কতটা ভয়াবহ হবে, তার ইঙ্গিত কিন্তু মিলছে চলতে শুরু করা চা বাগানের ঘটনাক্রম থেকে।

    চা শ্রমিকদের স্বার্থে হোক, বা অন্য সমস্ত শিল্পশ্রমিকদের আসন্ন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়াজ তোলা দরকার--

    ★ শ্রমিকের জীবন মূল্যবান, তা' নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না।

    ★ এই সময়ের বিশেষত্বকে মাথায় রেখে নিযুক্তি ও কাজের ধরন সংক্রান্ত সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া হঠকারীভাবে শ্রমিকদেরকে কাজে লাগানো বন্ধ কর।

    ★ করোনার নিরিখে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষার যথাযথ বন্দোবস্ত করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা কাঠামো করতে হবে।

    ★ লকডাউন পর্বের মজুরি/বেতন কাটা যাবে না।

    ★ 'শারীরিক দূরত্ব' বজায় রাখার জন্য সীমিত সংখ্যায় শ্রমিকদেরকে কাজে লাগালেও বাকিদের এই আপৎকালীন সময়ে মজুরি/বেতন দিতে হবে।

    ★ অস্থায়ী বা স্থায়ী--কোনও শ্রমিকেরই কাজ কাড়া চলবে না, মজুরি কাটা চলবে না।

    (লেখাটি ফেসবুক থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে নেওয়া)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৬ এপ্রিল ২০২০ | ২৬৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 141.101.77.127 | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৯92456
  • কফি খেলেই হয় তো
  • র২হ | 141.101.105.113 | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৫১92468
  • এটী আমি নয় 

  • র২হ | 162.158.159.51 | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২২:৪৬92485
  •  এটা আমি 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন