ওনাকে ভারতের Commercial Art এর জনক বলে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। মানুষটি ছিলেন স্বদেশীয়ানার "ফ্লেভারে" ভরপুর। Lipton Co. র কাজ হাতে নিয়েছিলেন এই শর্তে -- " আমি কিন্তু স্বদেশী চা বাগানের মালিকের বিজ্ঞাপনও বানাবো সাহেব ! ইচ্ছে হয় আমায় রাখো, নয়ত চল্লুম। " দেশের মানুষের জন্য বিজ্ঞাপন করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। ... ...
শেষ বিকেলের আলোয় ডলি রাখাইনের ফর্সা কচিপানা মুখে লালচে আভা। কণ্ঠস্বর বাস্পরূদ্ধ, যেন অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে থাকে, আচ্ছা, বিপ্লব দা, আপনার তো ঢাকায় অনেক টাকার চাকরি! এ রকম একটা বাড়ি সস্তায় কিনতে পারেন? মানবিক লোকজন এসবের দখল নিলে রাখাইন মালিকটি দেশান্তরে গিয়েও অন্তত নিশ্চিন্ত যে, যাক, পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির নিশানাটুকু তো টিকে থাকবে, সেটুকু তো আর একেবারে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না! … ... ...
সময়টা ১৯৪০ সালের আশেপাশে – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখন জাপানের অবস্থা ভালো নয়, নানা দিকে পিছু হটছে জাপানী ইম্পিরিয়াল বাহিনী। সাধারণ লোকেরাও বুঝতে পারছে যে এই যুদ্ধে জাপানের পরাজয় প্রায় আসন্ন। কিন্তু তখনও সম্রাট এবং তার বাহিনী শেষ কামড় দিতে লড়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন সৈন্য নিয়োগ হচ্ছে – প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যুবক সম্প্রাদয় নিযুক্ত হচ্ছে যুদ্ধে যাবার জন্য। পরিবার জানাচ্ছে সেই সব তরতাজা যুবকদের বিদায় – মুখে বলছে সবাই, কারো বাবা-মা, কারো প্রিয়তমা, কারো ভাই, কারো স্ত্রী – “শপথ করো আবার দেখা হবে” – কিন্তু প্রায় সকলেরই চোখের কোণের জল টের পাচ্ছে যে এই শপথ রক্ষার প্রায় কোন উপায়ই নেই! সেদিনের দেখাই শেষ দেখা! ঠিক এমন ভাবেই বিদায় জানাচ্ছিলেন মাসাকি তাকাওকা তাঁর ছাত্রদের। মাসুকি তখন ইহিমে পার্বত্য এলাকার এক ছোট্ট গ্রামের কৃষি বিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছিল এক বিরাট চেরী গাছ। মাসাকি জানতেন আসল সত্যি – কিন্তু তবুও প্রত্যেক ছাত্রের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করছিলেন যে আবার দেখা হবে স্কুল প্রাঙ্গণে ফুল ফুটে ভরে ওঠা চেরী গাছের তলায়। যুদ্ধের পর যেন তারা সবাই আবার স্কুল প্রাঙ্গণের চেরী গাছের তলায় ফিরে আসে। ... ...
সলিল চৌধুরীর গানের যন্ত্রানুষঙ্গের বিবর্তন ... ...
বিউলির ডালভাদ্রের যে এমন নাভিশ্বাসের গরম আছে ইন্দুবালা আগে কখনও জানতেন না। কিম্বা ঠাহর করতে পারেননি তেমন। বিয়ের পর ছেনু মিত্তির লেনে এসে বুঝতে পেরেছিলেন শহুরে দমবন্ধ করা পরিবেশ কাকে বলে। গায়ে গায়ে ঠেকানো বাড়ি। চৌকো খোলা ছাদ। বাড়ির ভেতর থেকে একটুস খানি আকাশ। করপোরেশান কলের ছিরছিরে জল। শ্যাওলা ওঠা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল। বড় সোঁদা সোঁদা গন্ধ। আশে পাশে কোন নদী নেই। পুকুর নেই। তার বদলে বাড়ির সামনে আছে মুখ হাঁ করা বড় বড় নালা। তার দুর্গন্ধ। হুল ফোটানো মশা। গা ঘিনঘিনে মাছি। আর সন্ধ্যে হলেই টিমটিমে ... ...
১৯২৩ সালে বোম্বে ফিরে গিয়ে মেয়েটি, একটা প্রাইভেট ডেন্টাল ক্লিনিক খুলে ফেলল। কোলবাদেবীর আবদুল রহমান স্ট্রিটে। অবশ্যই দাদার আর্থিক সাহায্যে। স্বপ্ন, পর্দার আড়ালে থাকা মুসলিম মেয়েদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বেশ বড় ক্লিনিক, তিনটে ডেন্টাল চেয়ার ওলা। চেম্বারের নিজস্ব কর্মীও ছিল। বোধহয় ইনিই এশিয়ার প্রথম মহিলা প্র্যাকটিসিং ডেন্টিস্ট। আর সেই সঙ্গে ধোবি তালাও এর মিউনিসিপ্যাল ক্লিনিকে স্কুলের মেয়েদের দাঁতের চিকিৎসাও চলল স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে। ... ...
জানলার কাছে বসন্তের নরম রোদে সার দিয়ে সাজানো আছে কাঁচের বড় বড় বয়াম। মুখ গুলো ঢাকা আছে পরিষ্কার সাদা কাপড়ের ফেট্টিতে। বয়াম গুলোকে বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না তার মধ্যে কি রসদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু যারা এই বাড়িতে রোজ ভাত খেতে আসে তারা ঠিক জানে। ভাতের পাতে লেবু, নু্ন, লঙ্কা দেওয়ার পাশাপাশি উড়ে বামুন ধনঞ্জয় একটু করে শালপাতায় ছুঁয়ে দিয়ে যায় বয়ামের সেই লুকোনো সম্পদ। কামরাঙা, কতবেল, জলপাই কিম্বা কোনদিন পাকা তেঁতুলের আচার। নতুন কাস্টমাররা অবাক হয়ে যায়। আর পুরোনো লোকেরা ভাবে আজ ... ...
আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের দর্শক। নানা কারণে আমাদের সেই শক্তি এখন বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাহিরেও আমাদের সমর্থকরা এখন সবচেয়ে অশিক্ষিত খারাপ সমর্থক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের খেলোয়াড়দেরও ছাড় দেই না। ট্রল করতে করতে, মজা নিতে নিতে ক্রিকেটাররা যে মানুষ তা ভুলে যাই। ক্রিকেটারদের তো আছেই তাদের পরিবারকেও ছাড় দেই না। আমরা আশা করি আমরা যা ইচ্ছা বলব করব তারা খুব পেশাদার ভঙ্গিতে সব মেনে নিয়ে খেলে যাবে। না, আমরা এখন ওই পর্যায়ে যেতে পারি নাই। আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাস খুব বেশিদিনের না। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের আগের প্রজন্মই তো এদেরকে শিখিয়েছে? ... ...
মনুষ্যচরিত্র ... ...
একজন মানুষ বাংলার দুর্ভিক্ষে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন, যাঁর বিচলিত হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। কিম্বা এভাবেও বলা যেতে পারে, বিচলিত না হয়েও তিনি দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। ইনি স্টেটসম্যান পত্রিকার তৎকালীন মুখ্য সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স। আপাদমস্তক রক্ষণশীল ইংরেজ এই মানুষটি ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আদৌ সহানুভূতিশীল ছিলেন না। গান্ধীর তিন সপ্তাহব্যাপী অনশনকে তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন; বলেছিলেন-প্রচারের আলোয় আসার উদ্দেশ্যে একজন রাজনীতিবিদের হীন প্রয়াস।এহেন স্ট ... ...
বাংলায় লেখা রান্নার বই ও তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থান নিয়ে দু'চার কথা বলার চেষ্টা। ... ...
(সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে।) ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল ... ...
মহাকালের এই সাময়িক বিচ্যুতির সুযোগে লিপযিগ গ্যালাক্সির ষষ্ঠ গ্রহের এক বনে একটা হাওয়া পাক দিয়ে উঠল। ঝোড়ো নয়, হালকা হাওয়া। এই হাওয়া কিন্তু গল্পের শুরু নয়, শেষও নয়। কিন্তু একে একরকমের শুরু বলাই যেতে পারে। হাওয়া পাক দিল ঘন বনের পাশ দিয়ে, উপলখণ্ডের উপর দিয়ে, খেত খামার ছাড়িয়ে – এক ছোট্ট বাড়ির উঠোনে। এই পরিবারের জীবনে এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন বোধহয় আর কখনো আসেনি... ... ...
রবি ঠাকুরের গান বাণীপ্রধান - এরকম একটা ধারণা চালু আছে। কিন্তু গানের প্রাণ হলো সুর। রবিগানেরও। তাঁর অলৌকিক বাকবিভূতি বাণীকে সুরের দোসর করেছে। এই লেখায় কিছু রবীন্দ্রসংগীত - যা ভারতীয় রাগসঙ্গীত আশ্রিত- আর লিখিয়ের ব্যক্তিগত সংলাপ। ... ...
এই তো বাংলার Socialism। এই Socialism – এর জন্ম কার্ল মার্ক্সের পুঁথিতে নয়। এই Socialism এর জন্ম ভারতের শিক্ষাদীক্ষা ও অনুভূতি হইতে। যে গণ-আন্দোলনের সূচনা বিবেকানন্দের উক্তির মধ্যে পাই তাহা আরো পরিস্ফূট হইয়াছে , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাণী ও সাধনার মধ্যে। দেশবন্ধু বলিয়াছেনঃ মনে করিয়ো না শুধু তোমার মধ্যে ও আমার মধ্যে নারায়ণের বিরাজ। সে অহঙ্কার একেবারে ছাড়িয়া দাও। যাহারা দেশের সারবস্তু , যাহারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া মাটি কর্ষণ করিয়া আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করে – যাহারা ঘোর দারিদ্র্যের মধ্যেও মরিতে মরিতে দেশের সভ্যতা ও সাধনাকে সজাগ রাখিয়াছে, যাহারা সর্বপ্রকার সেবায় নিরত থাকিয়া আজিও দেশের ধর্মকে অটুট ও অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছে- যাহারা আজিও , শুদ্ধ চিত্তে সরল প্রাণে, মর্মে মর্মে দেশের মন্দিরে মন্দিরে পূজা দেয়, মসজিদে মসজিদে প্রার্থনা করে- যাহারা জাতির জাতিত্বকে জ্ঞান কি অজ্ঞানে সাগ্নিকের অগ্নির মতো জ্বালাইয়া, জাগাইয়া রাখিয়াছে- যাহারা বাস্তবিকই এদেশের একাধারে রক্তমাংস ও প্রাণ- ‘উঠ, জাগ জাগ’- তাঁহাদেরই মধ্যে ‘নর-নারায়ণ’ জাগ্রত হউক। ... ...