তিনি বুঝতে পারেন শেষ হাসিটা পর্দা থেকে বেরিয়ে, তাঁর মাথার ওপর দিয়ে গিয়ে ব্যালকনি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সুবিনয়ের মনে হয় শহরের সমস্ত বাড়ির জানলা, ব্যালকনি দিয়ে হাসিরা বেরিয়ে আসছে। শেষ হাসি। ... ...
রাঁধুনি মৃদু হাসলেন। গ্রীষ্মের দুপুরের লু-এর মতন সেই হাসি। ডানহাত দিয়ে বাঁ-হাতের ব্লাউজের হাতা কনুই অবধি তুলে দেখালেন। দেখলাম - ব্লাউজের নিচের হাতের চামড়ার রঙ বাকি দেহের, মুখের রঙের চেয়ে একেবারে আলাদা - ফ্যাটফ্যাটে সাদা। ... ...
মানুষের চোখ যে এত সুন্দর তা এই অতিমারী না হলে হয়তো জানতেই পারতাম না। মহিলা, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ - সবার চোখ দৃশ্যমান। নাকের নিচ থেকে ঢাকা মুখোশে, মাথা আর কপালও অনেকেরই টুপির নিচে চলে গেছে। বাজারে ঢোকার মুখের রাস্তায় পাঁচটা মিনিট দাঁড়িয়ে যান, দেখুন আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের চোখ। কারও চোখ যামিনী রায়ের ক্যানভাসের মত, কারোর আবার রবি ঠাকুরের কালোহরিণ। কারও চোখে সরু কাজলের টান, কারোর চোখের উজ্জ্বলতা আবার চশমার ভিতর দিয়েও স্পষ্ট। কারও চোখ আবার অন্য গল্পও বলে। ... ...
ইতিহাস বলে, অতিমারী মানুষকে বাধ্য করেছে অতীত থেকে নিজেকে ছিন্ন করে নতুনভাবে জগৎকে ভাবতে। এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই প্যান্ডেমিক একটি পোর্টাল, একটি প্রবেশপথ -- এক পৃথিবী ছেড়ে অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার। ... ...
মানুষের বাসনার ইতিহাস বড় বিচিত্রপথে প্রবাহিত। সমাজ ও ধর্ম তার যে অনুমোদিত রূপগুলি গড়ে তোলে তাকে ফাঁকি দিয়েই গড়ে ওঠে তার বিচিত্র প্রকাশ। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকেই তাতে অবদমনের মাত্রা আরো বেড়েছিল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও এই অবদমন যে সামাজিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের অংশ হিসেবে টিঁকে থাকে তা পিতৃতন্ত্রের হাতকেই আরও শক্ত করে। তাই তাকে চিনে নেওয়া আজ জরুরী। ... ...
একদিন গঙ্গার ঘাটে বসে বসে অনেক ভাবলাম, মনে হল, আচ্ছা ছোটবেলা থেকে শেখা মুল্যবোধ আর সংস্কারের বিসর্জনও তো আত্মহত্যারই নামান্তর। তাহলে আর সতীত্বের সংস্কারে নিজেকে বেঁধে, বেঁচে থেকে কি লাভ! তাই একগামিতা-সতীত্ব-সংস্কার বিসর্জন দিয়ে শুরু করলাম সেক্স ওয়ার্ক। ম্যাসাজ পার্লার, টয়লেট, হাইওয়ে যা এতদিন দূরে ছিল সেই সব জায়গায় যাওয়াও শুরু হল আমার। ভাষা ভাষা ধারণা ছিল "বহুজনের সাথে সেক্স করলে এডস হয় আর এডস হলে মানুষ মরে যায়।' আর তাই এই সহজ ও পেইনলেস আত্মহত্যার এই রাস্তাই বেছে নিয়েছিলাম সেদিন।তখনও এত ম্যাসাজপার্লারের ছড়াছড়ি কোলকাতা শহরে হয়নি। দক্ষিণ কোলকাতার সদ্যগজানো সেসব পার্লারে পয়সা ওয়ালা অভিজাত লোকেদের আসর।যদিও আজন্মলালিত সংস্কার বিসর্জন দেব বললেই দেওয়া যায় না। আর তাই একদুদিন যেতে না যেতেই ম্যাসাজ পার্লারের ম্যাসিওর কাম পুরুষ যৌনকর্মী হওয়া মোটেই শান্তি দিচ্ছিল না আমাকে। ... ...
এভাবে বিদেশি শব্দ ধার করায় বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে না উচ্ছন্নে যাচ্ছে সেই বিতর্কে যাবার আগে একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখা যাক এইরকম পরিস্থিতিতে আগের যুগের মানুষেরা কি করত। কিভাবে অভ্যর্থনা জানাত, বিদায় জানাত, কিভাবেই বা অনুতাপ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত? ... ...
আমাদের অনেকের বাড়িতেই টেপ রেকর্ডারে বেজে গেছে হেমন্তের গান, একের পর এক। কখনও ঘোরের মধ্যে শুনেছি, কখনও বহুদিন পর, কখনও কিছুদিনের তফাতে। কিছুটা আলো-আঁধারের গান গেয়েছেন হেমন্ত; কখনই শোকে সম্পূর্ণ নিমজ্জন নেই সেই কণ্ঠে, আবার আনন্দের পাল তরতরিয়ে ছুটেছে, এমনও নয়। একটি একটি করে গান গাইতে গাইতে তিনি এগিয়েছেন, জড়িয়ে গেছে আশেপাশে কত নাম তাঁর সঙ্গে। সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ বললেই এঁদের মানিকজোড় নামটি হেমন্তের; এমনকি মহানায়ক উত্তমকুমার বললেও হেমন্তই মহানায়কের কণ্ঠ। ... ...
লিঙ্গসাম্যযুক্ত এক সমাজের আবাহন যতদিন আমরা না করতে পারছি কিংবা লিভ ইন এর মত অপ্রচলিত সম্পর্কের রাজনীতিটাকে এই বৃহত্তর রাজনীতির জন্য প্রতীক্ষায় থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত করতে পারছি ততদিন এ নিয়ে আমাদের কেচ্ছাচর্চা চলবে, নতুন কোনো অবস্থানের সূচনা হবে না যাতে পিতৃতন্ত্রের শেকলটা একটু ঢিলে হয়। ... ...
এইসময় আমি আস্তে আস্তে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম নাচ কে। দিদি মানে আমার নাচের গুরু শিখিয়েছিলেন পি.সি. সরকারের বলা সাফল্যের তিনটি মন্ত্র প্র্যকটিস, প্র্যাকটিস,আর প্র্যাকটিস। তাই দিদির ক্লাসের আর এক ছাত্র এগিয়ে এল তালিম দিতে। সপ্তাহে আরও একটা দিন করে বাড়ল প্রথাগত অভ্যেস। শুরু হল তার বাড়ীতে আলাদা করে যাওয়া। কোনও একদিন দিদির নাচের অনুষ্ঠানের শেষে বেশ রাত হওয়ায় তার বাড়িতে থেকে গিয়েছিলাম। আর রাতের বেলা আমার শরীরে উঠে এসেছিল সে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম তাকে। হিসহিসিয়ে উঠেছিল, "তোমার রণ তো তোমায় এর আগেই এতদিন ধরে ভোগ করেছে। আর আমার বেলায় এত সতীপনা!" ঘেন্নায় কুঁকড়ে উঠেছিলাম। এখানেই শেষ হয়নি টলিউডি সংলাপ! হিসহিসিয়ে বলে উঠেছিল, "কি মনে করিস আমরা কেউ কিছু বুঝিনা, দিদির ওখানে আমরা সবাই তোকে নিয়ে আলোচনা করি, বেশী নাটক করিস না। এরপর তুই ওখানে কি করে মুখ দেখাস দেখবো।" লজ্জায় কুঁকড়ে গেছিলাম সেরাতে, ভোর হতেই বেড়িয়ে এসেছিলাম। সেদিন কেন জানিনা মনে হয়েছিল "নাচ শেখা" আমার জন্য না। ওদিকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে নিজের কেরিয়ার নিয়ে ভাবাটাই ভাল বলে মেনে নিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকে নিজের নাচ নিয়ে স্বপ্ন আর দেখিনি। আজকাল টিভির চ্যানেলে চানেলে নাচের রিয়েলিটি শো, কত সুন্দর সুন্দর কোরিওগ্রাফি। আমার বাবা মা ভাই সবাই দেখে। শুধু আমিই দেখিনা... ... ...
রণকে ভালবেসে ওর কাছে বারবার দৌড়ে গেলেও ওর বিয়ের পর থেকে পারতপক্ষে শারীরিক সম্পর্কটা আমি এড়িয়ে চলতাম৷ খালি মনে হত আমি রণ-র কেউ না। আমি কি রণ-র রক্ষিতা না ভালবাসা ! রণ বোঝাতে চাইত সমাজ না মানলেও আমিই আসলে রণ-র সব। বিশ্বাস করতে পারতাম না কিছুতেই। বিয়ের আগে কোনও একদিন মজা করে রণ সিঁদুর পড়িয়ে দেখতে চেয়েছিল আমায় কেমন লাগে। এ মজায় সেদিন সাধ দিইনি। ঠাসিয়ে একটা চড় মেরে বলেছিলাম," আমি তো তথাকথিত বৌ হতে পারব না তবে কেন এ প্রহসন ! " অথচ মনে মনে কতবার নিজেকে সিঁদুর পড়ে দেখতে চেয়েছি সে তো কেবল আমিই জানি। আজন্ম লালিত সংস্কারের সিঁদুর আসলে যে মর্যাদার পরিচয় বহন করে সে মর্যাদা পেতে চেয়েছিলাম মনে মনেই... ... ...
পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে বাম রাজনীতির ভবিষৎ। ... ...
দাদু আমাকে বিদ্যাদিগগজ মহাধনুর্ধর করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিজে মুখে মুখে শেখাতে লাগলেনঃ “তিরিশ দিনেতে হয় মাস সেপ্টেম্বর, / সেইরূপ এপ্রিল, জুন আর নভেম্বর। / আটাশ দিনেতে সবে ফেব্রুয়ারি ধরে, / বাড়ে তার একদিন চারিবর্ষ পরে। ... ...
নিজেকে নিয়ে তখন হাজার রকম প্রশ্ন আমার। মনে মনে সেদিনও জানতাম ছেলে হয়েও আর একটা ছেলেকে ভালবাসা অন্যায় নয়।তবুও বুঝতে পারিনা, কি করব। কি করা উচিত? এসব ভাবতে ভাবতে একদিন মনে হল "কাউন্সেল ক্লাব" এ ফোন করলে হয়। এই সংস্হা তখন কোলকাতায় সমকামী মানুষদের নিয়ে কাজ করছে জানতাম । কাউন্সেল ক্লাবের কথা শুনেছিলাম ‘তারাবাংলায়’ রঞ্জনের সমকামিতার ওপর সাক্ষাতকার শুনতে শুনতে। তারও পরে আমার কলেজ যাতায়াতসুত্রে হয়ে ওঠা বিভিন্ন বন্ধু দের সুত্রে তখন হাতে এসেছে " বোম্বে দোস্ত", "নয়া প্রবর্ত্তক" পত্রিকা। সমকামিতা নিয়ে কিছু তথ্য পেলেও আমার প্রশ্নের উত্তর সেখানে মেলেনি। একদিন ফোন করলাম কাউন্সেল ক্লাবের হেল্পলাইনে... ... ...
সিনে নস্টাল ... ...
রণজয়ের বৌদি-ই প্রথম যে আমার আর রণর সম্পর্কটা আন্দাজ করেছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলেনি কোনও দিন। রণর তুতো বোনেরাও রণর সাথে সাথে আমাকে ভাইফোঁটা দিত।সবাই মিলে মাঝে মাঝে কখনওসখনও সকলের আড়ালে আমাকে রণর বৌ বলে মজা করতে ছাড়ত না, যা হয়তো আমাকে মনে মনে অন্যরকম সুখ দিত। মনে মনে আমিও যেহেতু রণর বৌ,তাই সংসারের মঙ্গলের দায় তো আমার ওপরেও কিছুটা বর্তায়।সম্পর্কটা শুধু আমরা দুজনের যাপনেই সীমাবদ্ধ থাকলেও অতগুলো বছর আগে তো ওটাই ছিল আসলে আমার সংসার। তথাকথিত ভাবে নিজেকে মেয়ে না ভাবলেও মনে মনে নিজেকে রণজয়ের বৌ ভাবতে কোথাও কোনো অসুবিধা ছিলোনা আমার। আসলে আজও তো অভিধানে অন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাইনা। ৩৭৭ পরবর্তী সমযে আজও তো সমকামী বিবাহের নেই কোনো আইনি স্বীকৃতি। আর অতগুলো বছর আগে সেসব তো কষ্টকল্পনা। ... ...