এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • “আপনাকে বলছি স্যার” – ফিরে দেখা

    Salil Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৬ | ২২২৫ বার পঠিত
  • “আপনাকে বলছি স্যার” – ফিরে দেখা
    হালিসহর সভা

    সেই সভায় আলোচনার বিবরণ। প্রায় সম্পাদনা না করে। এটা প্রথম অংশ। আরো আসবে।

    আমরা অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এই নিয়ে। “আপনাকে বলছি স্যার” বইটা তো বহুকাল আগেই বেরিয়েছে, অনেক মানুষ পড়েওছেন বইটা, কিন্তু বইটা সম্পর্কে কতগুলো ভুল ধারনাও তৈরি হয়ে আছে, আর কতগুলো জিনিস পরিস্কার করারও দরকার আছে বলে আমার মনে হয়েছে বারবার। সেই আলোচনাটা কলকাতায় করার কথা ভাবা হয়েছিল, তার আগেই এখানে হল। আমার আশা, এই আলোচনাটা হয়ত কলকাতাতে আমরা আরেকবার করব। সেখানে অন্য আরেকদল মানুষ আসবেন। যাদের সঙ্গে এই নিয়ে কথাবার্তা হবে। কলকাতার অনেকেই আজকে আসতে চেয়েও আসতে পারেননি দূরত্বের জন্য। সেটা হয়ত আগামি দিনে কলকাতায় আমরা কোনোভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করব।
    এখানে একটা ভালো জিনিস সেটা হচ্ছে যে সবাই এক উচ্চতায় বসে কথা বলছে, আমাকে একটু উঁচুতে বসতে হয়েছে। সেটা সুবিধার জন্য। আমার মনে হয় এই যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বা বসে একজন বলেন আর অন্যরা নীচে বসে শোনেন, এটা একটা পাওয়ার স্ট্রাকচার তৈরি করে। ক্ষমতার বিভিন্নতা তৈরি করে। সেইটা বোধহয় আমাদের এবার পালটানো দরকার। এটাতে সত্যি কথা বলতে কি, আমি শিক্ষকতা জীবনের কথা ধরেই বলছি, ওই যে আমরা ডেইস-এর উপর দাঁড়িয়ে বলতাম আর ছাত্ররা নীচে বসে শুনত তাতে একটা অবাঞ্ছিত কাঠামো তৈরি হয়ে যেত। তফাৎ একটা এসে যাবেই। এটা হবেই। শিক্ষকের ক্ষমতা আর ছাত্রদের ক্ষমতার যে তফাত সেটা জ্ঞানার্জনের সমস্ত স্তরকেই ব্যাহত করে। আমাদের সবারই এই অভিজ্ঞতা আছে, নতুন করে বলবার কিছু নেই। তো সেইটা ভাঙতে গেলে সভা সমিতির যে কাঠামোটা সেটাও বোধহয় ভাঙ্গা দরকার, এবং এটা অন্য কেউ তো ভাঙবেন না, এটা আমাদেরই ভাঙতে হবে নানাভাবে চেষ্টা করে। সেইটা এখানে খানিকটা হলেও হচ্ছে,ভালো কথা।
    আরেকটা কথা হচ্ছে যে আমি আজকে কিন্তু এখানে টানা বলে যাবো আপনারা শুনে যাবেন এটা হবে না। আপনাদেরও কিছু বলতে হবে। আমি খানিকটা বলে চুপ করে যাব, তারপর আপনারা বলবেন, তারপরে আবার আমি বলব, তারপরে আবার আপনারা বলবেন, এইভাবে না হলে কিন্তু এখানে কোনো সত্যিকারের বিনিময় ঘটবে না। এটা আমি বারে বারেই বিভিন্ন জায়গায় বলি যে বিনিময় যদি করতে হয় তাহলে আমাদের ডায়ালগে যেতে হবে, কথোপকথনে যেতে হবে। আর কথোপকথন কিন্তু একদিক থেকে হয়না। আর একজন ওপরে বসে আছেন একজন নীচে, এখানেও কিন্তু কথোপকথন হয়না। কথোপকথনটা সমানে সমানে। একটা তলে দাঁড়িয়ে হলেই ভালো হয়। সবচেয়ে মজা হচ্ছে আমি সব জায়গায় এই কথাটা বলি যে কথোপকথন চাই। কিন্তু সেটা আমি বক্তৃতা দিয়ে বলি। এবং সেই বক্তৃতাটা দেওয়াটা আমাদের মধ্যে গেঁড়ে বসে আছে। সেইখান থেকে আমরা কিছুতেই বেরোতে পারিনা। স্কুল গুলোতেও তাই। কলেজগুলোতে তো বটেই। এবং আমাদের এইসব ছোটোখাটো সভাতেও বটে। আজকে সভাটা অবশ্য খুদ্র খুব একটা নয়, আমরা যে সব সভা করি এর অর্ধেক লোকও সেখানে থাকে না। সেটাও এখানের একটা বড় ভালো লাগা।
    আমি আলোচনাটা শুরু হবার আগে আমার সঙ্গে যারা এসেছেন আজকে তাঁদের কথা একটু বলে নিই। আমার সঙ্গে শুধু যারা এসছেন তাদের কথা। এখানে অনেকেই আছেন নানান রকম গুনীজন, আমি অনেককেই এখানে দেখতে পাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এইটা একটু আগে বলে নিই, তীর্থ, এবং শুভঙ্কর এরা দুজনেই দু’ভাই মিলে একটা বই অনুবাদ করেছে, ‘নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান’ ‘পেডাগজি অফ দ্য অপ্রেসড’। এই বইটা অনুবাদ যখন শুরু হয় তখন থেকে এই বইটার সঙ্গে থাকার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। এটা একটা অত্যন্ত জরুরি বই। ইংরেজী বইটা খুব কঠিন। সেইটার একটা কাজ চালানোর মত অনুবাদ করাও খুব কঠিন। সেখানে শুভঙ্কর এবং তীর্থঙ্কর দুজনে মিলে অনুবাদটা করেছে। সে বইটা, খুব সুখের কথা, ভালো বিক্রী হচ্ছে। আনন্দের কথা, এবং আমার এক পুরনো মাস্টারমশাই অধ্যাপক গৌরীপ্রসাদ ঘোষ, গৌরিদা বলেছিলেন অন্য একটা বই প্রসঙ্গে, যে বাঙালি পাঠক এইসব বই কিনছে এটা দেখে বাংলা ভাষা এবং বাংলার মানুষের ভবিষ্যত সম্পর্কে আমার আশা জাগছে। এটা ঘটনা, এই যে মানুষ নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান বইটা কিনছে এবং পড়ছে, এটাও আমার আরেকবার করে ভবিষ্যত সম্পর্কে আশা বাড়িয়েছে। এবং এই বইটা বেরোবার পরে এই বইটা পড়বার পরে কিছু মানুষের উদ্যোগে বিষয়টা নিয়েও অনেক আলোচনা বেড়ে গেছে। অনেক জায়গায় আলোচনা হচ্ছে গত তিন চার মাসের মধ্যে আমি সৌভাগ্যক্রমে প্রায় পাঁচটা সভাতে এই নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছি। শুধু এই বইটা নয়, শিক্ষা বিজ্ঞান নিয়ে। নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান এই বিষয়টা নিয়ে। এই যে একটা নতুন করে ভাবনা আসছে এটা একটা খুব সুখের কথা।
    সেদিন একটি ছেলে আমার কাছে এসেছিল। আমায় জিগ্যেস করল, আপনি সলিলদা একটা কথা বলুন যে, (ও বলেছিল, “স্যার, একটা কথা বলুন”, এই স্যারটা কিছুতেই যাচ্ছে না। যাই হোক, ঠিক আছে, থাক।) আমাদের এখানকার তথাকথিত বামপন্থী দলগুলি বা বামপন্থার বামপন্থা যাদের মধ্যে আছে তারা এই বিষয়টা নিয়ে আগ্রহী নন কেন? তো এটা একটা খুব জটিল প্রশ্ন, কেন আগ্রহী নয়? আগ্রহী না হওয়ার একটা কারণ আমার মনে হয় খারাপ করে বললে ওই আবার ক্ষমতার স্ট্রাকচার। তো এই শিক্ষা যে কথাগুলো বলছে সেই কথাগুলো বললে, আমরা যদি সেই কথাগুলোকে সত্যিই সত্যি বলে মানি তাহলে না, মানুষের হাতে ক্ষমতাটা দিয়ে দিতে হয়। মানুষের হাতে ক্ষমতা দিতে কেউ চাননা। হয়ত কোথাও কোথাও আমাদেরও মনের ভেতরে ওই জিনিসটা কাজ করে। যার জন্য এই যে মাটিতে নেমে এসে পড়াশুনা শেখাব (বা পড়াশুনা শেখাবো না, কারণ আমরা অনেকে মনে করি, আমিতো মনে করিই যে কোনকিছুই শেখানো যায়না। সবকিছুই নিজেকে শিখতে হয়। কেননা আমি মনে করি শিক্ষকের উচিত নিজেকে শিক্ষক না বলে ‘জ্ঞানার্জন করছে যে তার সহায়ক’ বলা উচিত। এই কথাটা আমি বিভিন্ন জায়গায় বলি, এখন অনেকেই এই কথাটা মানবেন না, শেখানো যায় না একথাটা তাঁরা মানেন না।) সেখানেও কিন্তু এই বামপন্থী আমরা যারা মানসিকভাবে বা কাজে কর্মে, বা তথাকথিত কাজে-কর্মে বামপন্থী, আমরা সবাই কিন্তু এটা ভাবি যে ক্ষমতাটা দিয়ে দেওয়া যাবে না। এই প্রসঙ্গে আরেকটা ছোট্ট কথা আমার মনে পড়ে গেল। অমিত ভাদুড়ীর নাম শুনেছেন আপনারা। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। অমিতবাবু একদিন একটা সভায় বললেন যে যখন উনি প্রথম একটা বই লেখেন এই ‘একশ দিনের কাজ’ ব্যাপারটাকে নিয়ে (সে নিয়ে অনেক বিরোধ আছে, দ্বিমত আছে, অনেককিছু আছে) এটা যখন উনি লেখেন, একটা কমিটি তৈরি হয় এইটা এই বিষয়টা চালু করার কাজের জন্য। তো সেই কমিটিটা একটা পার্লামেন্টারি কমিটি। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে তাঁরা অমিতবাবুকে ডাকেন। তো অমিতবাবু গিয়ে দেখেন ওর প্রপোজালগুলো প্রায় কেউ পড়েনি। তো তখন ওই একজন এম পি, সম্ভবত ওই যাকে বলে গোবলয় এলাকা সেখানকার একজন এম পি ওকে বলেন যে আপনি এখানে কী বলতে চান, এই কাজটা করে কী লাভ হবে? তখন অমিতবাবু খুব আমতা আমতা করে বলেন যে, না মানে সাধারণ মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যাবে খানিকটা। তো তাকে সেই এম পি মহাশয় বলেন যে আপনাকে দেখে তো “পড়েলিখে” লোক বলে মনে হচ্ছে আপনি বেশ পড়াশুনা করেছেন, বইটই পড়েন মনে হচ্ছে। তো অমিতদা বললেন হ্যাঁ, সামান্য কিছু। তাহলে আপনি এরকম মুর্খের মত কথা বলছেন কেন? অমিতদা খুব ঘাবড়ে গেছেন, ‘মুর্খের মত’ মানে? আরে আমরা এত কষ্ট করে ক্ষমতা পেয়েছি, ক্ষমতা আমরা মানুষের হাতে দিয়ে দেব? চালাকি? বাজে কথা বলবেন না। আপনার অন্য কী মতলব আছে সেটা বলুন।
    তো সেইটা, এই বিশ্বাসটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর তো আছেই, আমাদেরও অনেকের আছে বলেই আমরা শিক্ষা-সংক্রান্ত এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে চাইনা। যেটা আমি ছেলেটি কে বললাম। তার খুব পছন্দ হল কথাটা। আমরা হাসাহাসি করলাম সেই কথাটা নিয়ে।
    আমাদের বিষয়ে ফিরে আসি। আমি একটু আলাপ করিয়ে দিই। এখানে আছেন রনজিত সরখেল, রনজিতের পরিচয় হচ্ছে জীবিকার জন্য ব্যাঙ্ক এ চাকরি করতেন, কিন্তু ভারতীয় দর্শন নিয়ে ওর অনেক গবেষণা আছে। বই আছে। নানানরকম কাজ করেন। তপতী দি, তপতী ঘোষ। উনি শিক্ষকতা করেছেন সারাজীবন, তারপরে এখন আমরা শ্রমজীবি বিদ্যালয়ে পড়াই একসঙ্গে। আর তপতী দির আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, ভূ-পর্যটক কথাটা প্রকৃত অর্থে তপতীদির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তারপরে সুমিতা, সুমিতা সরকার। সুমিতাও একটা স্কুলে পড়ায়। এবং শ্রমজীবি স্কুলে পড়াতে যায়। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা করে। প্রবীর মুখোপাধ্যায়, প্রবীর সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। তারপরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সঙ্গে সেই সময় থেকে যুক্ত থেকেছেন, প্রস্তুতিপর্ব, অণ্বেষা, বর্তমানে আমাদের একটা ছোট্ট জায়গা আছে বই-চিত্র, সেখানে ওর বিরাট ভূমিকা। বুদ্ধদা, বুদ্ধদাও নাটকের লোক, গানের লোক, বুদ্ধদাও জীবিকার তাগিদে নানানরকম কাজ করেছেন, ব্যাঙ্কিং করেছেন, এখন এইসব থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন সাংস্কৃতিক কাজে। পুলক চন্দ। বললে ও রেগে যাবে কিন্তু ঘটনা হচ্ছে পুলক একজন পশ্চিমবঙ্গ বিখ্যাত তো বটেই, ভারত বিখ্যাত, আরও কিছু বেশি হয়ত, সম্পাদক। এটা হাসির কথা নয়, খুব সিরিয়াসলি বলছি, সম্পাদক হিসেবে পুলকের সমান পশ্চিমবঙ্গে আমি আর কাউকে দেখিনা। এটা ঘটনা। অনেকগুলো বই আছে, সেগুলো এখন আর বলছি না। ও এমনিতেই খুব হাসছে বসে। সেসব পরবর্তীকালে বলা যাবে। এখানে আসার জন্য আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ করে অভিজিত। অভিজিত এবং সুনন্দা। তো আমি... ও তারকের কথাটা মিস হয়ে গেছে। তারক গাঙ্গুলী, তারকের পরিচয় সমাজকর্মী, নাটকের অভিনেতা, আমাদের সিরিয়াল গুলোতেও উনি প্রায়ই অভিনয় করেন। এবং বই-চিত্রের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত, এমনকি এটা বললে হয়ত অত্যুক্তি হবে না, যে আমাদের বই-চিত্রের অনেক কাজ তারক না থাকলে হবেই না। তারক এখানে বসে আছে। তো এই হল আমাদের কথা।
    এইবারে আমি বলি, ফিরে দেখা। ‘আপনাকে বলছি স্যার’-ফিরে দেখা’, কেন বলছি? গত দীর্ঘ ছিয়াশি সালের পরে এতদিন সময় কেটেছে, আমার নামটা এই বইটার নামের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে গেছে। এবং অনেকে মনে করেন বইটা আমিই লিখেছি। বইটা কিন্তু আমি লিখিনি, বইটা আমি অনুবাদ করেছি। এর মধ্যে একটা বড় তফাত আছে। একটু আগেই বাড়িতে বসে আলোচনা করছিলাম, প্রথম সংস্করণ যখন বেরোয়, আমি একটা জিনিস বাদ দিয়েছিলাম বইটার মধ্যে। সেইটা হচ্ছে, বইটাতে গান্ধীবাদ সম্পর্কে কিছু কথা ছিল। গান্ধী সম্পর্কে কিছু কথা ছিল। এই কথাগুলো আমি তখন বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম, বিভিন্ন বিতর্কের কথা ভেবে। সেই সময় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে গান্ধী সম্পর্কে, এখনো আছে, তখনো বেশি রকম মতের অসুবিধে ছিল। আমরা খানিকটা একপেশেও ছিলাম। আমার সঙ্গে মেলে না? দে, বাদ দিয়ে দে। পরের সংস্করণে সেটা আমি শুধরে নিই। কেননা আমার মনে হয়েছিল, পরে মনে হয়েছিল যে একটা বই অনুবাদ করছি, তার থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়ার অধিকার আমার নেই। আমি বড়জোর একটা টিকা লিখে দিতে পারি যে, যে এইটে, এই কারণে, আমার মতের অমিল আছে। পরবর্তীকালে যতবার বইটা নতুন সংস্করণ হয়েছে ততবারই বইটাতে কিছু কিছু এদিক ওদিক করা হয়েছে। (মূল লেখাতে ন্য।) বাড়ানো হয়েছে। কিছু মন্তব্য বাড়ানো হয়েছে। ভূমিকাটা বাড়ানো হয়েছে। এই মুহুর্তে ওই বইটার ভূমিকাগুলো জড়ো করলে বোধহয় একটা ছোটো বই হয়ে যায়। প্যামপ্লেট তো হয়ই। আমার শেষ যে ভূমিকাটা সেখানে আমি লিখেছি, যে ওই ছিয়াশি সালে যখন ওই বইটা বেরিয়েছিল এবং আজকে এত বছর পরে, বইটাতে যে কথাগুলো ছিল, বইটার সঙ্গে যে পরিস্থিতিগুলো জড়িয়েছিল সেগুলো কিন্তু আজও একই আছে। একটুও পাল্টায়নি। এই যে একটুও পাল্টায়নি, তাহলে এতগুলো মানুষ আমরা এই বইটা পড়লাম, বইটা পড়ে আমরা এতরকম কথা বললাম, আমাদের এত ভালো লাগলো, তাতে আমরা করলাম টা কি? আমরা যখন প্রথম এই বইটা পড়ি, তখন ফ্রেইরির পেডাগোজি অফ দ্য অপ্রেসড বইটা পড়ি, তখন আমাদের যে ভাবনাগুলো মনে হয়েছিল, তার একটা হচ্ছে, যে আমরা যে কাজগুলো এখন করছি, সেই কাজগুলো বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। তার আগে আমরা অনেক লেখা-টেখার সঙ্গে মিশে ছিলাম, পুলক-টুলক, প্রবীর, আমরা সবাই ছিলাম, তখন আমরা স্কুল কলেজ শিক্ষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল কলেজ শিক্ষকদের দিয়ে বিপ্লব হবে। হা হা হা। তো সেই ধারণাটা যে সর্বৈব ভুল, তা অল্পদিনের মধ্যেই আমরা বুঝে যাই। আমি তো বুঝেই যাই। আর আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে আরো ভালো করে বুঝে যাই। যে ওসবে কোন লাভ নেই। এবারে কী করব, এটা নিয়ে যখন ভাবনা চিন্তা হচ্ছে, তখন এই বইগুলো পড়ি এবং তখন আমরা, স্কুলগুলো শুরু করি।
    আমার যতদূর মনে পড়ে, সন-বছর খুব একটা মনে থাকে না আমার, সম্ভবত ১৯৮৩ সালে, আমরা প্রথম একটা স্কুল বানাই। প্রথম স্কুলটা হয় ঝালদার মাঠ বলে একটা জায়গায়। তারপরে আরও বিভিন্ন জায়গায় হয়, একসময় বেলেঘাটাতে আমাদের একটা এরকম কেন্দ্র চলেছিল, খুব ভালো চলেছিল বললে হয়ত বেশি বলা হবে। তখন একজন বইটা পড়ে আমাকে একটা চিঠি লেখেন, যে আপনাদের সঙ্গে আমি যুক্ত হতে চাই। তিনি এখন এখানেই আছেন। আমাদের বন্ধু লিলি, তখন ওকে ঋতি বলে জানতাম, সেই চিঠি লিখে লিলি আসে, এবং তারপর থেকে ও আমাদের সঙ্গে স্কুলে যেতে শুরু করে। দীর্ঘদিন স্কুলে গেছে।
    যে স্কুলটা সবগুলোর মধ্যে বেশি করেছে, সেটা হচ্ছে কসবাতে, সুইনহো লেন বলে একটা জায়গায়, একটা ক্লাবঘরে। সেটা সবথেকে বেশি বছর চলেছে, প্রায় চৌদ্দ বছর কেন্দ্রটা চলেছে। শেষের দিকে এমন একটা অবস্থা হল, যে আমাদের সঙ্গে শিক্ষক ছিলেন না কেউ। এবং যে ওটা প্রধানত সংগঠিত করত, আমাদের বন্ধু দেবাশিস সরকার, ও কলকাতাতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। চলে যাবার ফলে ঐখানে গিয়ে এটা সংগঠিত করার মত লোক ছিল না, এবং একটা সময় আসে যখন আমি একা পড়াতে যেতাম। তো যেকোন কাজই একা করতে গেলে ভীষণ ডিপ্রেশন হয়। আমারও হয়েছিল। এবং কিছু সময়ের পর একটা সময় এলো যখন আমি আর যেতে পারলাম না। তারপরেও কিছুদিন দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী ওই স্কুলটা চালিয়েছিল। কিন্তু খুব ঢিমে-তেতালায় চলেছিল। তারপর একসময় ওটা বন্ধ হয়ে যায়। দীপাঞ্জনের মতে স্কুলটা ওখানে তার প্র্য়োজনীয়তা হারায়।
    তারপরে বেশ অনেকটা সময় আমরা কিছুই করছিলামনা, মানে এই বিষয়টা নিয়ে কিঞ্চিৎ লেখাপড়া ছাড়া কিছু করছিলাম না। তখন শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব আসে, যে আমরা একটা এরকম স্কুল করতে চাই, আপনারা যদি এসে স্কুলটাকে তৈরি করেন। তখন আমি আর দীপাঞ্জন স্কুলটাতে যাই। এবং প্রথমে আমি গিয়েছিলাম ঠিক তিনমাস থাকব বলে, তিনমাসের মাথায় আমি চলে আসব, আমি অতদূর যেতে পারব না। কিন্তু সেটা আজকে চার বছর হয়ে গেছে, এখনও আমি যাচ্ছি, এবং আগামি বহু বছর যাবো, এটা আমি আশা করি। এবং এই স্কুলটাতে এসে আমরা ওখানকার যারা সংগঠনের ওপরের স্তরের লোকজন বা আরও অন্য লোকজন তাদের বলি, যে স্কুলটা যদি ফ্রেইরির শিক্ষাদর্শ অনুযায়ী, তার চেয়ে আরো ভালো বলা যে নিপীড়িতের মতাদর্শ অনুযায়ী স্কুলটা চলে, সেইভাবে স্কুলটা আমাদের চালাতে দেন, তাহলেই আমরা যাবো। সেটা না হলে আমরা যাবো না। এবং এই এই পদ্ধতিতে পড়াতে হবে। কী পদ্ধতিতে? পদ্ধতিগুলো নিয়ে এখানে বলাটা অনেক বিস্তারিত হবে বলে আমি বলছিনা। আজকের বিষয়টাও সেটা নয়। ওইগুলো যদি আমাদের করতে দেন, ওরা বলেন যে, আপনাদের আমরা একদম খোলা হাত, আপনারা যা চান করুন। সেটা আমরা করতে শুরু করি। করতে শুরু করে আরও অনেকরকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, সেই সমস্যাগুলোও একটা আলাদা আলোচনা, সেটার মধ্যে আমরা যাচ্ছি না। ওখানকার মানুষের মানে ওই সংগঠনের মানুষের সদিচ্ছা এবং তাদের ব্যাপারটা ভালো লাগা এটার তো কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু এই স্কুলে পড়াবার পিছনে, স্কুলে পড়াবার ধরণের পেছনে, যে মতাদর্শটা কাজ করে, সেই মতাদর্শটা ওখানে যারা যারা পড়াতে আসেন তাঁদের সবার মধ্যে নেই। সেটা স্বভাবতই থাকবে না, কেননা যিনি সারাজীবন আমাদের এই স্কুল ব্যবস্থায় পড়িয়ে এসেছেন তার পক্ষে ওই পদ্ধতিকে ছেড়ে দিয়ে নতুন এই পদ্ধতিতে আসতে পারাটা বেশ কঠিন কাজ। খুবই কঠিন কাজ। ফলে অনেকরকম সমস্যা এসেছে। ওই যে বললাম, সেটা আরো বিস্তারিত অনেক কথার বিষয়।
    এবং এই চার বছর কাজ করতে করতে আমার কতগুলো বদ্ধমূল ধারণা পালটে গেছে, আবার কতগুলো ধারণা নতুন এসেছে। দুটোই আমি বলব, পরবর্তী পর্যায়ে।
    যেদিন থেকে বইটা বেরিয়েছে তখন যখনই আমার কাছে কেউ এসে বলতেন যে অপূর্ব বই, দারুণ বই, তখনই আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম, যে বইটা পড়ে আপনার কী মনে হল, কিছু করা উচিত? হ্যাঁ, অবশ্যই করা উচিত, এই ব্যবস্থাকে পালটানো উচিত। তো এই ব্যবস্থাকে পাল্টানোর জন্য আপনি কী করবেন? ‘বলুন কী করব?’ আপনি সপ্তাহে তিনটে দিন সময় দিতে পারবেন? সন্ধ্যেবেলা একঘন্টা করে? “তি-ন-দি-ন?” আমি বলি, আচ্ছা ‘দুইদিন’? দু’দিনও মানে খুব – । “একদিন?” “হ্যাঁ, একটা দিন চেষ্টা করতে পারি।“ এবং এই একটা দিন চেষ্টা করতে যারা আসতেন, তারা ওই একদিনই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আসতেন। আবার কাউকে কাউকে, আমার না কিছু ছবি আঁকার দরকার, আমাদের হয়ত একটা কিছু তৈরি করা দরকার, একজন ছবি আঁকে তানিয়া, তাকে আমি বললাম, যে আমাকে একটু ছবিটা এঁকে দেবেন? তারপরদিন থেকেই প্রায় তাকে আর আমি দেখতে পেতাম না। আর গান গাওয়া, একটা জরুরী জিনিস। আপনারা কি একটু গান শেখাবেন? তো, কী গান শেখাবো? যা খুশি। রবীন্দ্রসঙ্গীত? হ্যাঁ! আপনি হিন্দি গান শেখান না, সে আমার কোনো অসুবিধা নেই। তাদের একজনের কথা বলছি, তারই প্রতিফলন সবার মধ্যে থাকবে। তিনি বললেন যে এটা করবার আগে না আমাদের একটু বসে নিতে হবে। আমি বলি বসে নিতে হবে মানে? না মানে একটু মতাদর্শ আলোচনা করে নিতে হবে। তো এই মতাদর্শ জিনিসটা খুব প্রবলেমের। আমি বললাম, যে সব মতাদর্শের আলোচনা হবে, আগে আপনি গানটা শেখান, স্কুলে একদিন করে আসুন, তারপরে আমরা মতাদর্শ নিয়ে আলোচনা করব। আমার মনে আছে খুব নামকরা নেতা আমাদের বামপন্থী নেতা, উনি আমাদের বললেন, যে আমাদের লোকেরা, আপনার ওখানে গিয়ে কাজ করবে। বেশ ভালো কথা। কিন্তু তার আগে একটু বসে নিতে হবে। তা আমি বললাম যে আমি তার সঙ্গেই বসব, যে কাজটা করবে, আর যে কাজটা করবে না, তার সঙ্গে আমার বসার কোনো আগ্রহ নেই। ‘বসা’! খুব মুশকিলের জিনিস।
    তো এরকম চলতে থাকত, চলতেই থাকতো। এবং এটা মানে বইটা পড়ে না সবাই এটা কে একটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজ ভেবেছে। ভেবেছে যে এই ভাবনাগুলো নিয়ে বেশ সুন্দর চিন্তা-ভাবনা করলাম, ভালো লাগল, হ্যাঁ! এটা এখানেই শেষ! কিন্তু যারা বইটা পড়েছেন ‘আপনাকে বলছি স্যার’ তারা জানবেন, যে দ্যাট ইস এ কল ফর অল টু অ্যাকশান। কিছু করুন। বারবিয়ানার ছেলেরা বলছে আমরা অপেক্ষা করে আছি কোনো শিক্ষক আমাদের কাছে চিঠি লিখে বলবেন যে তোমরা যা যা বলছ, সেগুলো শিক্ষকরা আমরা করি বটে, কিন্তু সব শিক্ষক এরকম নন। আমরা তোমাদের সঙ্গে এসে মাটিতে বসে কাজ করব এটা কোনও শিক্ষক আমাদের বলবেন না। এটা আমরা আশা করি। কিন্তু কোনও শিক্ষক আজ অবধি আমাদের এ কথা বলেননি। তো এই, “কোনো” শিক্ষককে যদি ছাত্রদের এই কথা লিখতে হয়, সেটা তো ঘরে বসে হবে না। আগে তো এই ছাত্রদের কাছে যেতে হবে। গিয়ে তো তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
    এবং আমি আপনাদের বলছি, মনে প্রাণে বলছি, যে এই কাজ করাটা ছাত্রদের নিয়ে বসাটা, পড়ানোটা, এটা যে কতখানি আনন্দদায়ক, ‘আনন্দ’ কথাটা আমি রবীন্দ্রনাথের অর্থে বলছি ‘আনন্দময় মূরতি তুমি’, সেই আনন্দ পাওয়া যায়। একটা ফুলফিলমেন্টের ধারণা আসে, এই বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে। আমি সবশুদ্ধ সাইত্রিশ আটত্রিশ বছর শিক্ষকতা করেছি , এই স্কুলে গিয়ে ক্লাশ সেভেন, এইট, নাইনের ছেলেমেয়েদের নিয়ে টেন-এর ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি যতটা পড়াচ্ছি, পড়াবার আনন্দটা পেয়েছি, আমি আর কোথাও পাইনি। কোনদিন পাইনি। তার মানে এই নয়, যে আমি যাদের পড়িয়েছি, তাদের আমার ভাল লাগেনি, ভালবাসিনি তাদের। ভালবেসেছি। এবং আমি যখন কলেজে পড়াতাম তখনও এই জিনিসগুলো এখানে দেবার চেষ্টা করতাম। এবং অনেকেই শুনলে অবাক হবেন, অনেকের ক্ষেত্রে আমি সফলও হতাম। আমার কলেজে আমার ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে যে ব্যবস্থা আমাদের চালু হয়েছিল সেটা হচ্ছে যে যতজন ছাত্র আছে, ছাত্র বা ছাত্রী আছে তাদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র। একটা প্রশ্নপত্র দিয়ে বললাম, কুড়িজন পরীক্ষা দাও এটা হবে না, প্রত্যেকের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র। হায়ার সেকেন্ডারিতে একটা ইংরেজি প্রবন্ধ পড়ানো হত যে সেখানে লেখব বলছেন, ছাত্র চাইছে শিক্ষককে জানাতে সে কী কী জানে। আর শিক্ষক চাইছেন ছাত্র কী জানেনা, সেটা বুঝে নিতে। তা আমরা ভাবলাম যে দেখি না, ছাত্ররা কী জানে। এটা খুব পরিশ্রমের ব্যাপার। মানে পঁচিশটা ছেলেমেয়ের জন্য পঁচিশটা কোয়েশ্চেন পেপার, সেই ছাত্র অনুযায়ী। এটা তো যেখানে দুশো ছাত্র, সেখানে এটা করাই যাবে না। অল্প হলে করা যায়। কিন্তু এটা করা যায়, যায় না তা নয়। এবং ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে পুরোপুরি সহযোগিতা পাওয়া যায়। মানে আমার প্রথম বছরের আমার অনার্সের ছাত্রদের সঙ্গে আমার এখনো যোগাযোগ আছে। এখনো তারা আমাকে মাঝে মধ্যে ডেকে ভালো-মন্দ খাওয়ায়। তো এই যে ব্যাপারটা এটা সর্বস্তরেই করা যায়।
    সেইজন্যে আপনাদের আমি “আপনাকে বলছি স্যার”-এর কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বলব যেগুলো প্রায় অনেকেই বোধহয় ভালো করে জানেন না বা দেখতে পারেননি, সেগুলো বলব, কিন্তু তার আগে আমি একটু আপনাদের বলতে বলি। যে বইটা আপনাদের মধ্যে যারা পড়েছেন, তাদের ভাবনাটা কী? তারা কী ভেবেছেন বইটা সম্পর্কে। একটু বলুন। একটু না বললে এই আলোচনা অর্থহীন থেকে যাবে।

    প্রশ্নঃ সুমিতা সরকার। কী কিভাবে পড়ানো যাবে বলে যেটা, মানে, দাবি করা হচ্ছে, শুধু দাবি করা হচ্ছে না, কিছু কিছু বেশ ভালো জিনিসই আছে, যেটা পড়ানো যায় মানে, যেটা আমি শ্রমজীবীতে শিখেছি সেভাবেই পড়ানো যায়, কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে যে বিশাল সিলেবাস সময় অল্প, মেয়েদের সঙ্গে যখন আমি যে পদ্ধতিতে শ্রমজীবীতে শিখেছি সে পদ্ধতিতে পড়াতে যাই তখন দেখি যে, যতটা পড়াতে হবে এবং যে সময়ে পড়াতে হবে, এই দুটোর মধ্যে একটা বিশাল কন্ট্রাডিকশান। এই সমস্যা নিয়ে আমরা কী করতে পারি এই বিষয়ে। আমি একজন রেগুলার স্কুল টিচার হিসাবে জিজ্ঞেস করছি।
    /সলিলঃ আমি বলব? একটুখানি বলব আমি, বেশি কিছু বলব না এটা নিয়ে। আপনারা আলোচনা করবেন। সেটা হচ্ছে যে আমার এই চার বছরে স্কুল থেকে ধারণা হয়েছে, আমাদের যে সিলেবাস বস্তুটি আছে, ওইটা না ফেলে দিলে কোনো পড়াশুনা হবে না। মানে ওই সিলেবাসটাকে পালটে নেব, আরও ভালো করব, এসব গল্প কথা, ওটা হবে না। অন্তত আমি ইংরেজী পড়াতে গিয়ে দেখছি, কোন ইংরেজী বই, যা কিছু এসেছে এই পাঠক্রম থেকে তার কোনোটাই পড়ানো যাবে না। একদম যাবে না। যদি পড়াতে হয় আমাকে ছাত্রদের মত করে, পাঠ্যপুস্তক তৈরি করে নিতে হবে। সম্ভব হলে ছাত্রদের দিয়ে করিয়ে নিতে হবে। এবং এটাও একটা ইউটোপিয়ান ধারণা মনে হতে পারে। কিন্তু এটা ইউটোপিয়ান ধারণা নয়। আমি বর্তমানে এরকম পাঠ্যপুস্তকের খানিকটা তৈরি করেছি। যেটা ওখানে আমরা, আপনারা বললে বিশ্বাস করবেন না, বলা ভালো বিশ্বাস করবেন না নয়, আপনারা ভাবতে অসুবিধা হবে, যে আমার ছাত্ররা কয়েকজন আমাকে কিন্তু ইংরেজীতে ছড়া লিখে দিচ্ছে। তারা কিন্তু ইংরেজী ভালো জানে না। তাকে যদি আপনারা এখন একটা ইংরেজী বাক্য লিখতে দেন সে লিখতে পারবে না। কিন্তু সে ছড়াটা লিখে দিচ্ছে। ইনভ্যালিড, ডাল ওয়ার্ডে, কিন্তু লিখছে। এটা ঘটনা। মুখে তো বলছেই। সে আরও অনেক গল্প।
    তীর্থঙ্করঃ ফরম্যাল স্কুলে?
    সলিলঃ ‘না, আমাদের স্কুলে’।
    তীর্থদাঃ ওনার বক্তব্য ছিল, ফরম্যাল স্কুলে আমরা কী করে অ্যাকোমোডেট করব।
    সলিলদাঃ ফরম্যাল স্কুলে যদি সে অর্থে বলেন, ফরম্যাল স্কুলে অ্যাকোমোডেট করা যাবে না। ফরম্যাল স্কুলে ওই যা আমরা পড়ে এসেছি চিরদিন, সেইটা করলে মাধ্যমিকে ভালো করবে, সেটা না করলে মাধ্যমিকে ভালো করবে না। পাশ করে যাবে। আমাদের শ্রমজীবীর সব ছেলেমেয়ে প্রায় পাশ করে গেছে। কিন্তু জ্ঞানার্জনটা হবে না। ইংরেজী কেউ শেখে না।
    সুমিতাঃ না, তাহলে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে আমাদের আমার তো বিবেকের দংশন হয়, যে আমি শ্রমজীবীতে একধরনের পড়ালে সেখানে বাচ্চারা এত আনন্দ করে শেখে, অথচ আমার যে ফরম্যাল স্কুল, সেই মেয়েগুলোকেও আমি সেইরকমই ভালবাসি কিন্তু তাদের আমি সেই আনন্দটা দিতে পারিনা। তাদের আমাকে নম্বর পাওয়া শেখাতে হয়। আসলে তাদের সেইরকমই কষ্ট হয় পড়াশুনাটা করতে। এর মধ্যে কি কোনো সেতু করা যায়না?
    সলিলঃ আমার মনে হয় করা যায়না। এটা খুব দুঃখজনক কথা। এটা তোমার মনযন্ত্রণা লাঘব করতে হলে তোমার শ্রমজীবীতেই (বা সেই রকম অন্য কোথাও) যেতে হবে। এবং, ব্যাপারটা তো, স্ট্রাকচারটা তো তৈরি করা আছে, যাতে জ্ঞানার্জন না হয়। অনেকে বলেন, ‘আপনাকে বলছি স্যার’-এ একজায়গায় বলা আছে, যে আপনি যদি বলেন যে এটা একটা ষড়যন্ত্র, তাহলে তো এটা একটা রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের গল্প হয়ে গেল। কোন একটা ঘরে বসে কয়েকজন প্ল্যান করছে যে আমরা কাউকে শিখতে দেবনা। এরকম কী? না, হুবহু এরকম নয়। একটা জায়গায় সমস্ত পৃথিবীর লোকজন এসে একদিন জড়ো হল। ঠিক করা হল আর কাউকে শেখাতে দেব না কিছু। কিন্তু ম্নে রাখতে হবে যেটাকে দার্শনিকরা বলেছেন ‘নন কোয়ার্সিভ স্ট্রাকচার অফ পাওয়ার’ সেটাই তো শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থা তো মানুষকে ভুল জিনিস শেখাবার জন্য। ভুল জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য। এর থেকে বেরোবার কোন রাস্তা নেই, যদি না আপনি এটাকে ভেঙ্গে নতুন কিছু করেন। মুখে বলা সহজ, করা সহজ নয়। কিন্তু ততক্ষন পর্যন্ত সত্যি কিছু করার নেই, আপনি যদি ওদের কথা মতো কাজটা করেন তাহলে ভালো, মঙ্গল। না করলে তো আপনার চাকরি যাবে।
    তীর্থঙ্করঃ আরেকজন প্রশ্ন করবেন, আগে একটু বলি, আমার শুধু শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, যে শিক্ষা সম্পর্কে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ নিজের অভিজ্ঞতার কথাই লিখেছেন, কিন্তু একটা জায়গায় তিনি একটা কোটেশান দিয়েছিলেন, সেখানে একটা মারাত্মক কথা আছে, যে রাষ্ট্রের ক্ষমতা নির্ভর করে জনসাধারণের অজ্ঞতার উপর। এবং রাষ্ট্র চায় এই অজ্ঞানতাটা চিরদিন থাকুক। ওই কোটেশানটা রবীন্দ্রনাথ খুব ইচ্ছে করেই ব্যবহার করেছেন। এর ফলে আমরা অসহায় হয়ে যাই। তবে সলিলদা, আমরা একটা বই পড়েছিলাম, ‘ টিচিং অ্যাজ আ সাবভার্সিভ আক্টিভিটি’। ওইটি নিয়ে যদি একটু বলেন আপনি।
    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৬ | ২২২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sswarnendu | 125.187.60.72 (*) | ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৮:১৯58287
  • অসাধারণ...
    আমার নিজের একটা প্রশ্নও ছিল এই নিয়ে... সেইটার উত্তরও পেয়ে গেলাম...

    " পাশ করে যাবে। আমাদের শ্রমজীবীর সব ছেলেমেয়ে প্রায় পাশ করে গেছে। "

    "ফরম্যাল স্কুলে অ্যাকোমোডেট করা যাবে না।" টা তো বটেই... কিন্তু আমার কিছু বন্ধুর সাথে একটা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় আমরা এই মতে পৌঁছেছিলাম যে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এইরকম কিছুকে চালিয়ে নিয়ে যেতে গেলে ওইটুকু 'ঠেকনো' টা, যদিও সত্যিই শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে একেবারেই বাহুল্য ও অপ্রয়োজনীয়, কিন্তু তবু ওইটুকুটা নিশ্চিত করাটার দরকার পড়বে...

    অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য ...
    আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছে রইল... আর না, 'বসে নেওয়ার' জন্য নয়... কাজ করার আগ্রহ আমার আছে... কিন্তু তাতেও 'বসে নেওয়া' বাহুল্য... কারণ এই কাজের কোন একটাই রকম ব্লু-প্রিন্ট হয় বলে মনে করি না, আমার ধারণা আপনিও সহমত... মতাদর্শের প্রশ্ন এইটুকুতেই তামাম শুধ।
  • আকাকে | 178.26.197.46 (*) | ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৩58291
  • না, ওইরকম পাওয়ার স্ট্রাকচার একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। ইন ফ্যাক্ট, ক্ষতিকর।

    মনে রাখা দরকার যখন আমরা বাবা মা হিসেবে কিম্বা শিক্ষক হিসেবে বাচ্চাদের কিছু শেখাই, তখন আমরা একটা পুরো ভ্যালুসিস্টেম তাদেরকে শেখাই।

    বাবা মা হিসেবে কিম্বা শিক্ষক হিসেবে, যেটা করা দরকার সেটা হল এই মেসেজটা দেওয়া "Learning is a lifelong quest. I want to participate in this journey with you. I want to guide you with my experience. But I do not necessarily know better than you. If you have a doubt about my knowledge, it is MY responsibility to validate my own knowledge before I respond to you."

    আমার দশ বছরের পড়ানো এবং পেরেন্টিং এর অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে এটা মোটেও ঠিক নয় যে আমি যাদের শেখাচ্ছি তাদের থেকে সব সময়ে বেশি জানি। অনেক সময়েই আমার বাচ্চার এবং আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি।

    আমি চাই যে আমার বাচ্চা এবং স্টুডেন্টরা এটা জানুক যে আমি সব কিছু জানি না, কিন্তু আমি জানতে ইচ্ছুক। কোথাও যদি আমার জ্ঞানের ঘাটতি থাকে, তাহলে আমি অনেস্টলি সেই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করব। দশ বছরের অভিজ্ঞতা যে ছাত্র কিম্বা বাচ্চারা এতে অনেক বেশি মোটিভেটেড হয়।
  • aka | 34.96.82.109 (*) | ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৬58288
  • কিন্তু পাওয়ার স্ট্রাকচার তো ভীষণ দরকার ছোট ছোটো ছেলেমেয়েদের শেখানোর জন্য। বাবা-মা হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে আমি বা আপনি তো তাদের শেখাচ্ছি, সেখানে আন্ডারলাইঙ্গ অ্যাজাম্পশান হল বস আই নো বেটার দ্যান ইউ। সেই স্ট্রাকচারটা ইমপ্লিমেন্ট করা খুব জরুরী।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৬:৫৮58292
  • নিজেদের( ব্যক্তির না, যারা এই আন্দোলন চালাতে চাইছেন তাঁদের আর্থসামাজিক লেভেলের ) ছেলেপুলে নাতিপুতিদের যতদিন না ঐ শ্রমজীবী মেথডের স্কুলে পড়ানো হবে, ততদিন এটা মনে হয় জাস্ট ইন্টেলেক্চুয়াল এক্সারসাইজ। কিছু গিনিপিগ নিয়ে নতুন ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষা।
  • Salil Biswas | 37.63.148.36 (*) | ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৯:৪১58289
  • মনে হলো একদম সামনে বসে শুনছি। মুগ্ধ হলাম আর শ্রমজীবী স্কুলে পড়াবার ইচ্ছেটা আবার চাগাড় দিলো ।

    প্রতিভা সরকার।
  • ranjan roy | 192.69.124.80 (*) | ২৯ জুলাই ২০১৬ ১২:৪১58290
  • এই পাওয়ার স্ট্রাকচার ব্যাপারটা কেমন আমাদের রক্তে শিরায় শিরায়!
    আমি এই লেখাটা পড়ে ভাবছি, মানে স্মৃতিগুলোকে রি-ওয়াইন্ড করে সিনেমা দেখছি, -- আমার মেয়েদের লগারিদম কেন শেখাতে পারি নি। যখনই চেষ্টা করেছি ওরা পালিয়ে গিয়েছে বা বইটা লুকিয়ে রেখে অম্লান বদনে মিথ্যে কথা বলেছে।
    আসলে আমি ওদের দেখাচ্ছিলাম যে লগারিদম যেন একটা ম্যাজিক পোশন, খেলেই কেউ পাওয়ারফুল হয়ে যাবে। হ্যাঁ, আমিও একই কারণে পাওয়ারফুল!
    মেয়েরা সেটা নিতে পারেনি। যে বাবা অন্য সময় বন্ধু সে হটাৎ কেন ক্ষমতা দেখাচ্ছে!
    এখন দেখছি যখন যাকে পড়িয়েছি, টিউটোরিয়ালে, ওয়ার্ক্শপে, সর্বত্র ওই implied power এর ভাষায় কথা বলেছি। কারণ আমার এর কোন বিকল্প জানা ছিল না।ঃ(((
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৭:২৯58294
  • ব্যক্তিগত না একেবারেই, আমি আর্থসামাজিল লেভেলের ছেলেমেয়েদের কথা বলছিলাম। একজন দু'জনে তো নতুন ট্রেন্ড গড়ে উঠতে পারে না, হাজারে হাজারে লোকের ছেলেমেয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকলে তবেই ট্রেন্ড তৈরীর সম্ভাবনা দেখা দেয়।
    কিন্তু এই আন্দোলন যারা করতে চাইছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন করুন তো, ক'জন নিজের ছেলেমেয়েদের বা নাতি নাতনিদের এই শ্রমজীবী মেথডের স্কুলে পড়াবেন? উত্তর যদি "না" হয়, তাহলে কেন ? কেন প্রচলিত সিস্টেমের অসংখ্য দোষত্রুটি সত্ত্বেও তাঁরা সেখানেই ছেলেমেয়েদের পড়াবেন? সাধ্যাতীত খরচ করে কেন বিভিন্ন এন্ট্রান্স পরীক্ষার কোচিং সেন্টারে পাঠাবেন? অকারণে তো নয়! সেসব কারণগুলো হাইলাইট করা তো দরকার!
    একটা নতুন সিস্টেম রোবাস্ট করে তুলতে গেলে মনে হয় এইসব প্রশ্নের জবাব দরকার আগে। নইলে সবটাই জাস্ট এক্সপেরিমেন্ট মাত্র।
  • Salil Biswas | 126.203.156.15 (*) | ৩০ জুলাই ২০১৬ ১২:৩১58293
  • আপনি Atoz ঠিক বলছেন। নিজের ডিফেন্সে এইটুকু বলি, যে এই স্কুল তৈরি হল যতদিনে ততদিনে আমার পুত্র-কন্যা অনেক বড় হয়ে হাতের বাইরে। নাতি-নাত্নিও নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, সামর্থ থাকলেও, ছেলে-মেয়ে-র তথাকথিত যোগ্যতা থাকলেও তাদের ইংরেজি মিডিয়ামে আমি পড়াইনি। বড়লোকি স্কুলেও না।
  • cm | 127.247.98.218 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৩58295
  • পড়ানো জিনিসটা ঠিক কি তা নিয়ে যদি বলেন। আমার এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই এবং সেকথা ছাত্রদের সামনে অকপটেই স্বীকার করি। যার যা শেখার নিজে নিজেই শেখে। আমি তাই ক্লাসে গল্প করি। আমি যখন ঐ বিষয় পড়েছিলম, কোন কোন বই থেকে কি পড়েছি সে সব। প্রত্যেক বছরেই ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে জানতে চাই তারা কেন পড়তে এসেছে, তবে এর উত্তর কেউই দেয়না। লেখাপড়া করে গাড়িঘোড়া চড়ার মত সরলমতি উত্তরও কেউ দিতে চায়না।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৯58296
  • কেন কেউ পড়াশোনা করে, কেন কেউ আইআইটি কোচিং এ যায়, কেন সপরিবারে শহরে অস্থায়ী ভাড়া নিয়ে থেকে ছেলেপুলেকে স্পেশাল কোচিং এ পাঠায়---এইসব প্রশ্নের উত্তর কি আর কেউ দেয়?
    ঃ-)
  • Ekak | 53.224.129.60 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:১৯58297
  • গুরুতে আসলে প্রাথমিক ইস্কুলের শিক্ষক সপা নেই বললেই চলে । তাই এই নিম্ন বুনিয়াদি স্তরের শিক্ষা নিয়ে পেডাগজিকাল আলোচনা গুলো খেয়ালি পোলাও হয়ে যায় শেষবধি ।

    এখন সবাই প্রফেসর মানুষ । প্রফেসর কে নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষার প্রতিদিনের সমস্যা -চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে বলা তাঁর পক্ষেও এক বিড়ম্বনা । তিনি তখন নিজের মেজাজে গেয়ে শোনাচ্ছেন অমুক রাগিণীতে কোমল নিষাদ ঠিক কিভাবে লাগবে ,আর দীক্ষিত শিষ্য তা তুলে নিচ্ছে ।

    আর উল্টোদিকে , আরেকদলের ছাত্র তানপুরা দেখলেই কান চুলকায় ,পিঠের মশা মারে :)) দুটো এক মাইন্ডসেট নয় ।

    পাই কি একটু স্বভাবসিদ্ধ বুনোমোষচারণ করতে পারে , ফেবু থেকে কয়েকজন ইস্কুল শিক্ষক -শিক্ষিকা কে এখানে তুলে এনে ? :) রুরাল ও আরবান সব মিলিয়ে । তাহলে বেশ একটা ফ্রুটফুল আলোচনা হয় । আহা-বাহা আর ভাল্লাগেনা বাপু ।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:২৬58298
  • শিবরঞ্জনী। ঃ-)
  • pi | 233.231.46.78 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৬58299
  • সে পারি। কিন্তু সলিল বিশ্বাসের এই সব লেখা খেয়ালি পোলাও বলতে ঘোরতর আপত্তি আছে। উনি তো বহুকাল ধরেই এই নিয়ে কাজ করছেন, প্রফেসর মানুষ হয়েও। অনেক স্কুলে পড়িয়েছেন, স্কুল গড়েছেন।
    শ্রমজীবীর স্কুল থেকে, অন্যভাবে পড়াশুনো করে ছেলেপুলে তো এবার মাধ্যমিকও দিয়ে দিল। ড্রপ আউট দের নিয়ে তিন চার বছরে তৈরি করে মূলধারায় আনা ( মূলধারাতেই কেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে, শ্রমজীবীর প্রথমদিকের মিটিং এ উঠেওছিল, কিন্তু সব কিছুতে তো আর একসাথে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, আর মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশের প্রয়োজনীয়তাকে এখন স্বীকার করেই এগোতে হবে), এগুলো তো বাস্তবেই হয়েছে। এই ছেলেপুলেদের অনেকেই বা অন্যরাও ডাক্তারদের সহায়ক ও হবেন। সেই জন্য অন্তরকম ভাবে ব্রিজ কোর্স চলছে। তো, এগুলো তো কোনোটাই জাস্ট খেয়ালি পোলাও নয়। মানে এক্সপেরিমেন্টের কথা যদি এঁরা বলেন, তো তার হাতে কলমে প্রয়োগও করছেন। আর সেসব তাঁরা নানা সভায় নানা শিক্ষকদেরও বলে থাকেন।
    এখানকার মতই অনেক বিদ্রূপ, তির্যক মন্তব্য এর তোয়াক্কা না করেই এসব করছেন বলেই জানি ঃ)
  • Ekak | 53.224.129.60 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৫58300
  • আরে ভাই , সলিলবাবুকে খেয়ালি পোলাও বলিনি । উনি একটা মডেল কিছুদূর অবধি এপ্লাই করে না দেখলে আর বই লিখলেন কীসের ভিত্তিতে । কিন্তু যাঁরা এখানে এটাকে ভালো বা মন্দ বলছেন কেও কী রেগুলার ইস্কুলে বাচ্চাহদের সঙ্গে ঝামেলা পোয়ান ? কাজেই আলোচনা থেকে কিছু পাচ্ছিনা যে !! একটা থিওরি বা মডেল এবং তাকে ঘিরে ভুক্তভোগী দের আলোচনা এই নিয়েই তো পুরো ব্যাপারটা দাঁড়াবে , তাই না ? যাঁরা ফিল্ডে রোজ ঝামেলা পেয়েছেন তাঁরা কিছু চ্যালেঞ্জ রাখুন , সমস্যার কথা বলুন । এইটুকুই বক্তব্য । আমার আপত্তি ওই পুরোটাই বাইরে থেকে হ্যা হ্যা কী ভালো বা না এসব ভুলভাল আউটরাইট বলে দেওয়াতে । সেইটা খেয়ালি পোলাও । খাদ্য হোক বা অখাদ্য আদতে তো খেয়ালি ।
  • pi | 233.231.46.78 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৮58301
  • আরে তোকে বলিনি, আমিও তাদেরই বললাম ঃ)

    তবে হ্যাঁ, ওনাদেরও এই নিয়ে পড়তে , লিখতে বলব।
  • cm | 127.247.98.218 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৫58302
  • cm | 127.247.98.218 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৮58303
  • বাচ্চাদের ব্যাপারটা রিলেটিভাইজ করা হল।
  • Ekak | 53.224.129.60 (*) | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:০১58304
  • এটা দুর্দান্ত :))) শেয়ার করছি ।
  • Salil Biswas | 126.202.210.71 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৬ ০২:৪৮58305
  • আমার একটা ইচ্ছে আছে ... কলকাতায় একটা সারা দিন, দরকার হলে আরো বেশি সময় নিয়ে একটা আলোচনা করার। সবাই আসুন। কথা হোক। যাকে বলে নো হোল্ডস বার্ড কথা। জায়গা আমি দেবো। সংগঠিত করুক না গুরু। চলুন লড়ে যাই।
  • π | ২২ মে ২০২১ ১২:১৭106275
  • তুললাম।


    কত কিছু করার ছিল। কিছুই হল না। সবাই চলে যাচ্ছেন।

  • π | ২২ মে ২০২১ ১২:১৭106276
  • তুললাম।


    কত কিছু করার ছিল। কিছুই হল না। সবাই চলে যাচ্ছেন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন