এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ফ্রেইরি-চর্চা (২) কনসিয়েনটাইজেশন: বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষ

    Salil Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৮ | ১৫১৯ বার পঠিত
  • ফ্রেইরি-র শিক্ষাচিন্তার মর্মস্থলে আছে কনসিয়েনটাইজেশন-এর তত্ত্ব। তাই এনিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।
    কনসিয়েনটাইজেশন [Critical consciousness, conscientization, বা পর্তুগীজ ভাষায় conscientização (কঁসিচিযাঃসাও) বা বিবেকীকরণ বা বিবেকসংস্থান বা চেতনায়ন বা বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষ ...] নিয়ে আরও বিশদ আলোচনা করা যাক।
    এই জটিল তত্ত্বটিকে আমি আলোচনা করব আমার নিজের অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রে কাজের সময় বিভিন্ন শিক্ষাব্রতীর সঙ্গে আলোচনালব্ধ সূত্রগুলির আলোতে। মতের অমিল হলে আরো আলোচনা করা যেতে পারে। অনেকটাই চলতে পারে এই আলোচনা। অনেক গভীরে গিয়ে দেখা দরকার এই ধারণাটিকে।
    ‘কনসিয়েনটাইজেশন’ শব্দটি মূলত এসেছে ফ্রাঞ্জ ফাঁন বা ফ্যানন উদ্ভাবিত ফরাসী ‘conscienciser’ (কঁসিয়েশিসের) শব্দটি থেকে। “ব্ল্যাক স্কিনস, হোয়াইট মাস্কস” (১৯৫২) বইটিতে ফ্যানন প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
    পৃথিবীকে, পারিপার্শ্বিককে, গভীরতম পর্যায়ে পৌঁছে জানতে বুঝতে সক্ষম হওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা যায় কনসিয়েনটাইজেশন। সামাজিক এবং রাজনৈতিক টানাপড়েনের আর নানা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মর্মবস্তুর ভিতরের রূপকে হৃদয়ঙ্গম করে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় রূপান্তর নিয়ে আসার প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত হওয়াই কনসিয়েনটাইজেশন-এর ফলশ্রুতি। যেহেতু পৃথিবী তথা সমাজকে সার্বিক ভাবে (এবং এক কথায়) নিপীড়ক এবং নিপীড়িত এই দুই ভাগে ভাগ করা চলে, পৃথিবীকে পাল্টানো স্বভাবতই নির্ভর করে নিপীড়নের পরিসমাপ্তির উপরে। যার মধ্যে বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষ (conscientization) ঘটেছে সে এই দিকেই অগ্রসর হবে।
    এই চেতনা অর্থনৈতিক সামাজিক মানবিক (অ)মানবিক সম্পর্কগুলিকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখায় এবং একটা নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়। সেখান থেকেই জন্মলাভ করে মুক্তি-স্পৃহা, নিপীড়নের পরিসমাপ্তি ঘটানোর আকুতি।
    বিশ্লেষণী চেতনা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রথমে দরকার হয় একটি generative theme বা এমন কোনো একটি ‘চিত্র’ অথবা ছবিতে চিত্রিত কোনো বিষয় যার সঙ্গে শিক্ষার্থীর জীবনের বা পারিপার্শ্বিকের বা এমন কিছুর যা তার অব্যবহিত পরিস্থিতির অঙ্গ। শুধু তাই নয়, যা তার প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে বিশেষ ভাবে যুক্ত। সেই ছবিটি থেকেই প্রক্রিয়াটি আরম্ভ হবে। এর জন্য শিক্ষার্থীর জীবনযাপনের দুনিয়া থেকে এই ‘থিম’ বা বিষয়টিকে সংগ্রহ করতে হবে। এই ‘থিম’ যে কোনো কিছুই হতে পারে। সেটা যদি শিক্ষার্থীর জন্মগত আবাস বা কর্মস্থলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সব চাইতে ভালো, নাহলে, তার তাৎক্ষণিক আশপাশ থেকে হলেও চলতে পারে। ‘আইকনিক রিপ্রেসেন্টেশন’টি বা চিত্রিত উপস্থাপনাটি শিক্ষার্থীর মনের উপর বিশেষ করে ক্রিয়াশীল হতে হবে। শিক্ষার্থীদের চিন্তাতেও বিষয়টি প্রতীয়মান হলেও হবে।
    কিছুদিন আগে আমরা শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে (শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল পরিচালিত বিদ্যালয়) শ্রেণীকক্ষে একটি রচনা লেখার মধ্যে বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষ তৈরি হওয়ার প্রাথমিক রূপরেখা দেখতে পেয়েছিলাম। জনা পনেরো ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সের ছাত্রের (লিঙ্গভেদ করা হল না) একটি সমষ্টিকে বলা হয় “তুমি যে ঘরে বসে আছো সেটির বর্ণনা দাও”। প্রথমে ইতস্তত করে সকলেই লিখলো, ঘরে আছে চেয়ার টেবিল বই খাতা চক কলম পেনসিল হাই বেঞ্চ লো বেঞ্চ জানলা দরজা ছাত দেয়াল ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি। এছাড়া কী আছে উত্তরে চার পাঁচ জন লিখলো ‘স্যার’ এবং ছেলে-মেয়েরাও আছে। এটা শুনে বাকিরা একটু লজ্জাই পেলো। আরো কিছু আছে কী, তার উত্তরে দু’জন লিখলো, ঘরের ছাতে বেশ কিছু ‘ঝুল’ আছে। একথায় বাকিরা বলল, এটা কি একটা বলার মত কিছু হল! একটা তর্ক হল, ওই দু’জন ছাড়া বাকিরা বলল, ‘ঝুল’ তো ঘরে নেই, ও তো ছাতে লেগে আছে। শেষ অবধি শিক্ষকের মধ্যস্থতায় ঠিক হল, ‘ঝুল’ ঘরের অংশ ঠিক না হলেও, বাইরে থেকে এলেও, তা ঘরেই আছে। সেতো ‘স্যার’ বা ছেলে-মেয়েরাও বাইরে থেকে এসেছে। হ্যাঁ, কিন্তু এদের তো ঘরে থাকারই কথা, তারা তো ঘরেরই। ‘ঝুল’ তো তা নয়, তা তো বাজে জিনিস, ঘরকে নোংরা করছে।
    এইবার, শিক্ষকের মধ্যস্থতায় সকলে খাতা ছেড়ে ফের দৃষ্টি দিল ঘরের দিকে। ঘরটা তাহলে ‘নোংরা’ হয়ে আছে। কী করণীয়? ঘর পরিষ্কার করতে হবে। কেন করতে হবে? তখন সকলেই মনে করল কয়েকদিন আগে ইংরেজি ক্লাসে আলোচিত অন্য আর একটি শব্দের কথা। শব্দটি “clean”। পরিষ্কার করা। দু’টি ছবি থেকে আলোচনা শুরু হয়েছিল। একটি ছবিতে দেখানো ছিল কয়েকজন ছেলেমেয়ে একটি ঘর পরিষ্কার করছে এবং একটি মেয়ে তাদের পরিচালনা করছে। একজন ছেলে দেরী করে এসেছে এবং কাজে যোগ দেয়নি। তাকে ওই মেয়েটি তিরস্কার করছে। অন্য ছবিটিতে একজন চশমা পরা ভালো পোশাক পরা ছেলে একটা ঝোলাতে রাস্তা থেকে ছেঁড়া ময়লা কাগজ জমা করছে। আলোচনা করার সময় দেখা গিয়েছিল যে ছেলেমেয়েরা শুধু নিজেদের ঘর পরিষ্কার করছিল এবং যে করছিল না তাকে বকাবকিও করা হচ্ছিল তা নয়, একটি ছেলে রাস্তাও সাফ করছিল। কেন করছিল? সাফ করলে দেখতেও ভালো লাগে, তা শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো।
    এই দুটি আলোচনা থেকে যে সিদ্ধান্তে গোটা ক্লাস এসে পৌঁছলো তা হচ্ছে – নানা ভাবে আমাদের ঘরদোর পারিপার্শ্বিক অপরিচ্ছন্ন নোংরা হয়। তা পরিষ্কার করা আর পরিষ্কার রাখা দরকার, ঘর নোংরা হলে আমাদেরই তা সাফ করতে হবে।
    শিক্ষক এখানে একটি প্রশ্ন তুলে দিয়ে চুপ করে যান। প্রশ্নটি ছিল – শুধু ঘরই কি নোংরা হয়? শুধু ঘরেই কি ঝুল জমে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর তখুনি আসেনি, কিন্তু কয়েকদিন পরে অন্তত একটি ছেলে জিজ্ঞাসা করেছিল – হ্যাঁ স্যার, সারা পৃথিবীতেই আবর্জনা জমে। কী করে তা সাফ করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর তাকে বলে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, এই প্রশ্নের উত্তর তাকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে।
    এই প্রক্রিয়াটিতে আমরা অভিজ্ঞতাকে সমস্যায়িত (problem-posing বা problematizing education) করে তুলে শিক্ষাগ্রহণের ভ্রূণাবস্থা দেখতে পেতে পারি। এখান থেকে সমস্যা-সমাধানের প্রক্রিয়া আরম্ভের দিকে শিক্ষার্থীরা এগোতে পারে। ওই ঘরের ঝুল নিয়ে আলোচনার পরে তারা দল বেঁধে পরিষ্কার করার কাজে (আগেও তারা ঘর পরিষ্কার করত) এগোয়। আমার আরও মনে হয়, যে তারা এর পরে হাসপাতালের বর্জ নিয়েও ভাবতে শুরু করে। অবশ্য সেই ভাবনা খুব পরিণতি পেতে পারেনি। কেন, সে অন্য কাহিনী।
    অভিজ্ঞতাকে সমস্যায়িত করে শিক্ষার প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন অনেক শিক্ষাবিজ্ঞানী। একটি আদ্যক্ষরসমস্টি বা আদ্যক্ষরা বা অ্যাক্রোনিম (acronym) “SHOWeD” দিয়ে পর্যায়গুলিকে বর্ণনা করেছেন তাঁরা।
    S = SEE. Students describe what they see; OBSERVATION. পর্যবেক্ষণ। শিক্ষার্থী দেখবে এবং অনুপূঙ্খ বর্ণনা করবে কী দেখল। তার ইন্দ্রিয়গুলি তাকে বাস্তবের বহিঃরঙ্গকে চেনাবে।
    H = HAPPENING. Define the problem. কী ঘটছে? এই পর্যায়ে শিক্ষার্থী সমস্যায়নে পৌঁছবে। সমস্যা কোনটা, কী তার খুঁটিনাটি, এটা সে স্পষ্ট দেখবে এবং সব দিক থেকে দেখে সমস্যাটিকে উপলব্ধি করবে। এবং, কথায়/ভাষায় রূপ দেবে (vocalize)।
    O = OUR LIVES. Share similar experiences. নিজেদের জীবনে ঠিক এই রকম আরো ঘটনা থাকলে (একই পশ্চাদপট থেকে এলে থাকার সম্ভাবনা বেশি) তা পরস্পরের মধ্যে কথোপকথনে (বা, অন্যভাবে) আদানপ্রদান করবে।
    W = WHY? Why is there a problem. কেন? সমস্যাটি কেন তৈরি হয়েছে। এর মূল কোথায়?
    D = DO. What can be done to solve the problem. ক্রিয়া। এইবারে আসবে “প্রয়োগ”-এর প্রশ্ন। কী করে সমস্যাটিকে সমাধান করা যায়, তার খোঁজ এবং বাস্তবে প্রয়োগ।
    এই প্রক্রিয়ার পরিণতি হল বিশ্লেষনী চেতনার উন্মেষ। এই চেতনা থেকেই জন্ম নেবে – বলছেন ফ্রেইরি – বাস্তবে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা যার দ্বারা বাস্তবকে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। যদি মানুষ বুঝতে পারে কোনো একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো একটি শক্তি তাকে বশীভূত করে রেখেছে, তখনই মানুষ সেই বশ্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা শুরু করবে। নাহলে সে বুঝতেই পারবে না যে তার অবস্থা আকস্মিক বা দৈবাৎ উৎপন্ন কিছু নয় এবং সেই পরিস্থিতিতে সে ভবিতব্য মানতে শুরু করবে, নিজের কোনো স্বাধীন সত্ত্বা থাকতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারবে না। শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া দারিদ্র আর অভাবের পরিসরে শোষক সক্ষম হয় ভবিতব্যে বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে তুলতে, যখন ‘আমার কিছু করার নেই’, ‘আমি একা’, ‘আমার কিছুই বলার নেই’ ধরনের ভাবনা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। অশিক্ষিত তুমি, তোমার হয়ে অন্য কেউ বক্তব্য রাখবে – এই কথা বলে বলে মানুষকে চিন্তার দিক থেকে পঙ্গু করে ফেলা হয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ট্রেড ইউনিউয়ন আন্দোলনের বর্তমান চেহারায়। সবই বলে দেন অমুক স্যার বা তমুক দাদা।
    কিন্তু যে ব্যক্তি ভাবনা-চিন্তায় বিশ্লেষণী শক্তি প্রয়োগ করতে শিখেছে, উপলব্ধি করেছে কোনো কিছুই অমোঘ নয়, কোনো কিছুই কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া ঘটে না, সে জগতটাকে দেখে খোলা চোখে, যুক্তি দিয়ে বিচার করে তবেই সে কোনো সিদ্ধান্তে আসে। আধিভৌতিক কোনো কিছুই তার চেতনাকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। তখন সে নিজের ভবিষ্যতকে নিজেই গড়ে নেবার পথে পা বাড়ায়। তখনই সে বোঝে যে তার নিজেকে ব্যক্ত করার অধিকার আছে, সেই বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সে বাস্তবকে পরিবর্তন করতে পারে, বাস্তবে হস্তক্ষেপ করে। সে তখন আর অন্যের কাজের ‘অক্রিয় গ্রহীতা’ (passive sufferer/recipient) হয়ে নীরবতার শিকার হয় না, ‘নৈঃশব্দের সংস্কৃতি’ তাকে আর আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে না। সে নিজের অস্তিত্বের দাবী নিয়ে সরব হয়, এবং, ‘সক্রিয় হয়ে বাস্তবে হস্তক্ষেপ’ ("intervene in reality in order to change it." Freire: Education as the Practice of Freedom) করে। খুব সরলীকৃত ভাবে বলা যায়, ওই যে আমাদের ক্লাসে ছেলেমেয়েরা ছাদে ঝুল জমার কারণ বুঝে তা পরিষ্কার করার কাজে হাত লাগিয়েছিল, তাকেই ‘বাস্তবে হস্তক্ষেপ’ বললে ভুল হবে না। ঘর পরিষ্কার তারা আগেও করত, কিন্তু সে কাজ তারা নিয়মানুবর্তিতা থেকে, ‘আদেশ’ মেনে করত, অথবা, কোনো একজন প্রিয় শিক্ষক বলেছেন এই কাজ করাটা উচিত, তাই করত। কিন্তু ঝুল কেন জমে, কী করে জমে, এসব জেনে পরিষ্কার করার কাজে লাগার মধ্যে একটা সচেতনতা যুক্ত হয়। এই সচেতনতার কিছু চিহ্ন আমরা পরে লক্ষ করেছিলাম।
    একথা বলা হচ্ছে না, যে ওই ছাত্রদের মধ্যে বিশ্লেষণী চেতনার উন্মেষ ঘটে গিয়েছিল – প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল, চলমান এবং দীর্ঘ – শুধু বলা হচ্ছে, সেই চেতনার বীজ অনেকটাই বপন করা সম্ভব হয়েছিল। সেই বীজ পরবর্তীতে ফলপ্রসূ হতে পারেনি নানা কারণে, কিন্তু মনে হয়, এখনও তা নিহিত আছে তাদের সত্ত্বায়।
    ফ্রেইরির মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালের ২ মে। এর ঠিক আগে হার্ভার্ড স্কুল অব এডুকেশন-এ ফ্রেইরি এবং ডোনাল্ডো মেসেডো (Donaldo Macedo) প্রভৃতি শিক্ষাবিদরা ‘মুক্তির জন্য শিক্ষা’ নিয়ে একটি সেমিনার দেবেন কথা ছিল। ফ্রেইরি-র ‘পেডাগজি অব ফ্রিডম’ (Pedagogy of Freedom: Ethics, Democracy, and Civic Courage, 2001) গ্রন্থের প্যাট্রিক ক্লার্ক-কৃত ইংরেজি অনুবাদের মুখবন্ধে মেসেডো জানাচ্ছেন, ফ্রেইরি-র মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যে, কিছু ছেঁদো যুক্তি দেখিয়ে সেমিনারটি বন্ধ করে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কয়েকজন অধ্যাপক বলেই ফেলেন, ফ্রেইরি-র কথায় কেবল আঁতলামো ছাড়া কিছুই নেই, আর এই ধরণের বাক্যবাগীশ জটিলতায় কেউ আগ্রহী নয়, আর এইসব কথার ফুলঝুরি নিছক লোকঠকানো শব্দের খেলা। এই কথাগুলোতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। ফ্রেইরি-র বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষের তত্ত্ব স্বভাবতই চলতি শিক্ষার প্রবক্তাদের ভয় পাইয়ে দেবে। কেননা এঁরা সকলেই মনে করেন, শিক্ষার সঙ্গে মতাদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই, ‘শিক্ষা’ একটি নৈর্ব্যক্তিক বস্তু যা এক নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে ‘মানুষ’ নামক বিমূর্ত অবয়বটিকে ‘শিক্ষিত’ করে তোলে। তার ‘শিক্ষা’ যে তাকে ‘বাজার’ নামক আর একটি তথাকথিত নিরপেক্ষ অবয়বের হাতে ক্রীড়নক বানিয়ে দেয়, এই সত্যটি তাঁরা জানেন না, এবং জানলেও স্বীকার করেন না।
    আর যে একটি সমস্যা ফ্রেইরি-র ভাবনা শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগের সময় দেখা দেয়।
    শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন বর্তমান বিদ্যায়তন ব্যবস্থায় জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। কিন্তু বহু যুগের প্রোথিত ধারণা এবং অভ্যাসের ফলস্বরূপ তাঁরা মনে করেন শিক্ষাদানের এবং শিক্ষাগ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতি বিভিন্ন কারণে শ্লথ ও অকেজো হয়ে পড়েছে, শিক্ষার্থীরা এর কাছ থেকে যা চায় তা পাচ্ছে না, সদিচ্ছা-প্রসূত পরিবর্তন আনতে পারলেও ত্রুটিগুলো কেটে যাবে এবং ‘শিক্ষা’লাভ সম্ভব হবে। যেহেতু তাঁরাও এই ব্যবস্থাতেই লালিত এবং এই ব্যবস্থারই অঙ্গ, তাঁরা মেনে নিতে পারেন না যে এই ব্যবস্থাটাই ভ্রান্ত। সব দিক থেকে। গলদটা আসলে মৌলিক। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন নয়, অজ্ঞানতাকেই কায়েম রাখা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মতাদর্শগত প্রস্তুতির অভাব, এই ব্যবস্থা কার জন্য, কার দ্বারা পরিচালিত, কী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এর দ্বারা সাধিত হয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট ভাবনা/ধারণার অভাব।
    এই জায়গায় দাঁড়িয়ে কোনো কোনো (বলা যেতে পারে অনেক) শিক্ষক – তাঁর যতই সদিচ্ছা থাক না কেন – বিশ্লেষণী চেতনা-উন্মেষের ধারণাকে গ্রহণ করতে পারেন না। এটা যে জ্ঞানার্জনের একটি আবশ্যিক ধাপ এবং হাতিয়ার তা মেনে নিতে পারেন না। তাঁরা মনে করেন, ভাষা শিক্ষা বা সমাজবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষায় এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলেও যেতে পারে, কিন্তু অংক বা পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন বা ইতিহাস বা ভূগোল প্রভৃতি ‘তথ্য’ নির্ভর বিষয় শেখাবার সময় এই পদ্ধতি একেবারেই কাজ করবে না। অথচ, তাঁরা নিজেরা যখন বলেন, ‘যা শিখবে বুঝে শিখবে’, তখন তাঁরাই যে এই চেতনা-উন্মেষের অবিকশিত বা প্রারম্ভিক রূপের কথাই অজান্তে বলেন, একথা তাঁরা বোঝেন না বা মানেন না।
    আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলে। দীপাঞ্জন রায়চৌধুরি শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার ক্লাসে হাতেকলমে দেখিয়েছিলেন ক্লাস এইট মানের ছাত্ররাও কত সহজে সমস্যায়ন (Problem posing / problematization) পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিভিন্ন দুরূহ সূত্র সহজেই আয়ত্ব করতে পারে। একই জিনিস ইতিহাসের ক্লাসে করে দেখিয়েছিলেন রাখী ভট্টাচার্য আর নন্দন বোস, ভূগোলের ক্লাসে দেখিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ সাহা।
    আর একটি প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এই পদ্ধতিতে পড়াশুনা পরীক্ষায় ভালো ফল করায় না। এক দিক থেকে সে কথা ঠিক। মুখস্থবিদ্যাভিত্তিক পড়াশুনার শেষে যে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেখানে মুখস্থ কে কতটা করতে পেরেছে, তার উপর নম্বরের ওঠা-নামা নির্ভর করে। কাজেই, সমস্যায়ন ভিত্তিক জ্ঞানার্জন মুখস্থবিদ্যাকে পরিহার করে, আর মুখস্থ না করলে সেই পরীক্ষায় ভালো ‘ফল’ করা যায় না। কিন্তু তার সঙ্গে এও দেখা গেছে যে সমস্যায়ন পদ্ধতি ছাত্রদের বোধশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করায় স্থানীয় স্কুলের পরীক্ষায় – যেখানে বোধশক্তি প্রদর্শনের সু্যোগ বেশি – তারা অন্যদের চাইতে পরীক্ষা ভালো দেয়। এমন আমরা প্রশ্নাতীত ভাবেই দেখেছি।
    একটি ছেলে, নাম ধরুন গণেশ, হাসতে হাসতে বলেছিল, ‘স্যার, কিছু বুঝতে পারায় আমরা সকলের উপরে, কিন্তু নম্বর পাওয়ায় আমরা পিছিয়েই থাকি।’
    যাঁরা শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছাত্রদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, তাঁরা একমত হবেন। কিন্তু সেই সংখ্যাগরিষ্ঠরা, যাঁরা বলবেন, ‘ফলেন (ফল = নম্বরের সাপ-লুডো) পরিচীয়তে’, তাঁরা বলবেন, ওতে কি আর চিঁড়ে ভিজবে। তাঁদের দোষ নেই, ভিজে চিঁড়েই তো দরকার এখানে, ওই “মাধ্যমিক” “উচ্চমাধ্যমিক” “জয়েন্ট এনট্রানস” আগড়ম-বাগড়ম যেখানে চলে, যেখানে আর যাই হোক, জ্ঞানার্জন বস্তুটির হদিশ পাওয়া যায় না। বস্তুত, তাঁরা (হয়ত আমরাও) অর্জিত অসহায়তার শিকার (Acquired Helplessness), ভাবতেই পারেন না, এবং চান না, এই চক্রব্যুহ থেকে বেরোতে।
    বিশ্লেষণী চেতনার উন্মেষ ঘটতে সাহায্য করবেন যে শিক্ষাব্রতী, তাঁর অবস্থান এক অর্থে দ্বিখণ্ডিত। তিনি একদিকে চিত্র/চিত্রকল্প/পর্যবেক্ষণ/নীরিক্ষণ ইত্যাদি সামনে এনে শিক্ষার্থীর চিন্তনপ্রক্রিয়াকে উস্কে দিয়ে চেতনা-উন্মেষ প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে সরাসরি প্রক্রিয়াতে জড়িত থাকছেন। অন্যদিকে, সচেতনভাবে তিনি প্রক্রিয়াটি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পর্যবেক্ষক হিসাবে প্রক্রিয়াটিকে চলমান রাখছেন। নিরপেক্ষ তিনি অবশ্যই থাকবেন না, কারণ এই চেতনা-উন্মেষ তিনি ঘটাতে চাইছেন একজন সচেতন অন্তর্ঘাতক (Subversive) হিসাবে যিনি বাস্তবে হস্তক্ষেপ করতে শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করতে চাইছেন বাস্তবকে পরিবর্তন করার লক্ষ্যে। এই অর্থেই একজন শিক্ষক যে কাজ করেন, তা সাবভারসিভ – নাশকতামূলক।
    এই নাশকতা যা নাশ করার পথ নির্দেশ করে তা হল প্রান্তিক মানুষের উপরে চাপিয়ে দেওয়া নৈঃশব্দের বোঝা। নিপীড়নের পরিস্থিতিতে প্রান্তিক মানুষ মেনেই নেন যে তাঁরা কথা বলার অধিকারী নন, চুপ করে সব মেনে নেওয়াই তাঁদের ‘ভবিতব্য’। এইখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজেদের কণ্ঠস্বর বন্ধক দেন ক্ষমতাশালীদের বিত্তবানদের হাতে, ক্ষমতাশালীদের মনে করতে থাকেন শ্রেষ্ঠতর, যাদের অনুকরণ করাই শ্রেয়। এখান থেকে জন্ম নেয় বিষম প্রতিযোগিতা যার অবধারিত ফল হিসাবে চলে আসে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর ভ্রাতৃদ্রোহ। তারই অন্যতম বিষময় ফল হিসাবে আসে কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতা আর প্রাদেশিকতা, আর নিজভূমে পরবাসী পড়ি আমরা সবাই। “দরিদ্রের ভগবানে” ডাকতে ডাকতে মৃত্যুবরণে অভ্যস্ত আমরা শিকার হই ‘অধিত অসহায়তার’, ভুলে যাই মানুষ হিসাবে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার অধিকারী আমরাই। সেই সুযোগে ছিদ্রপথ খুঁজে নেয় ফ্যাসিবাদের কাল সাপ, বৃহৎ দেশি পুঁজির অজগর, আর তার ভৃত্যরা।
    ফ্রেইরি ‘কনসিয়েনটাইজেশন’কে বলেছেন, জ্ঞানার্জনের একটি সামাজিক-রাজনৈতিক হাতিয়ার, যা শেষ অবধি প্রান্তিক মানুষকে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা থেকে পারস্পরিক হৃদ্যতা আর যৌথতায় উত্তরিত হওয়ার পথে চলতে শেখায়।
    তার একটা অতি ক্ষুদ্র উদাহরণ তুলে ধরে এই আলোচনা আপাতত থামাব।
    শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে ছেলেরা প্রতি বছরই একটি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। দিলীপ হেমব্রম, চমৎকার খেলোয়ার, ফুটবলে গোলকিপার, সহজ সরল গ্রামের সাঁওতাল ছেলে। যে কোনো কাজে এগিয়ে আসে। হাসিমুখ সর্বদা। হেসেখেলে দৌড়ে প্রথম হয়। সেবারও সকলের আগে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছে যাচ্ছে। পিছন ফিরে দেখে, বন্ধুরা পিছিয়ে আছে। দাঁড়িয়ে গেল দিলীপ। বন্ধুরা এসে গেলে সকলে হাতে হাত ধরে শেষ করল দৌড়। নিশ্চিত প্রথম হওয়া হাসিমুখে ছেড়ে দিল সে।
    এমন দাবী আমি করব না, যে আমাদের চেষ্টায় ছাত্ররা অন্য কোনো জগতের দিকে পা বাড়িয়েছিল, কিন্তু একথা আমি অবশ্যই দাবী করব যে দিলীপরা প্রতিযোগিতামূলক ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা শুরু করেছিল। একা কোনো দৌড়ে জেতার চাইতে সাথীদের নিয়ে একত্রে লক্ষ্যে পৌঁছনো যে অধিকতর কাম্য, এই বোধ জন্মাচ্ছিল তাদের ভিতরে। একথা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ জুলাই ২০১৮ | ১৫১৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    আকুতি - Rashmita Das
    আরও পড়ুন
    রাজপথ - Jhanku Sengupta
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন