সময়টা ছিল ২০০৩-এর ডিসেম্বর অথবা ২০০৪-এর জানুয়ারি। আমি তখন একুশ এবং কলেজের ফাইনাল ইয়ার। কলেজ থেকে পিকনিকে গেলাম আমরা ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা দল বেঁধে। জায়গাটা ছিল বাটানগর ছাড়িয়ে গংগার ধারে এক মরে যাওয়া টাউনশিপ, যেখানে কোনো এক সময়ে একটা কারখানা ছিল এবং তাকে ঘিরে লোকালয়। এখন শীতকাল, এখানে সন্ধ্যে নেমে যায় সকাল হতে না হতেই, এবং সারা অঞ্চল জুড়ে একটা কালচে কুয়াশার চাদর।সেই মৃত জনপদ আসলে গোটা কারখানা জুড়েই। তার বড় রাস্তার পাশে বন্ধ কোয়ার্টারের সারি, তার ভাংগা দেওয়াল জুড়ে বর্ষার ড্যাম্প, নিঃঝুম পানে ... ...
(সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে।) ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল ... ...
আমি শিক্ষাবিশেষজ্ঞ নই। এবং আমার দৌড় কলকাতা থেকে সিঙ্গুর অবধি। সেটাও নেহাৎই মধ্যবিত্ত বৃত্তে। সেই বৃত্তে আমি কী দেখছি? আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা প্রায় কেউ তাঁদের ছেলেমেয়েদের রাজ্য বোর্ডের ইশকুলে পড়াননা। যাঁরা রাজ্য বোর্ডের শিক্ষক, তাঁরাও না। তার নিশ্চয়ই অনেক কারণ আছে। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, কলকাতা থেকে সিঙ্গুর অবধি, এই যে তিরিশ কিলোমিটার এলাকা, স্যাম্পল সার্ভে না করেই বলতে পারি, যে, রাজ্য বোর্ডের ইশকুল গুলো মধ্যবিত্তের প্রথম পছন্দ তো নয়ই, বরং অগতির-গতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। আমরা যে ইশকুলগুলোয় পড়েছি, যেগুলো নামী ইশকুল বলে জেনেছি, সেগুলো সমেত। দুর্নীতি, ইশকুল-বন্ধ করে দেওয়া, এই ব্যাপারগুলো দিয়ে এই দুচ্ছাইকরণ প্রক্রিয়াটাকে ক্রমশ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। ... ...
ছেলেবেলার কোন ইচ্ছে বড়বেলায় পূর্ণ হলে অনেক সময়েই তার স্বাদ খুব মুখরোচক হয়না। ছেলেবেলা থেকে ক্যাভিয়ারের নাম শুনে বড়বেলায় বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে যখন খেতে পেলাম, তখন মনে হল, "এ বাবা, এই ক্যাভিয়ার!" সবারই বোধহয় এরকম কোন-না-কোন অভিজ্ঞতা আছে। আকাঙ্খা আর পরিপূর্ণতার তফাত যোজনখানেক। এর উল্টো অভিজ্ঞতা বরং কম হয়। মানে যেখানে অভিজ্ঞতা আকাঙ্খাকে শুধু মিটিয়েছে তাইই নয়, তার ওপরে কিছু ফাউও দিয়েছে। এরকম একটা উল্টো অভিজ্ঞতা আমার জিম করবেট পড়া।ছেলেবেলায় বাড়িতে সত্যজিতের বহু-আলোচিত প্রচ্ছদওলা 'কু ... ...
এটা মূলত শাক্যর লেখাটির একটি প্রত্যুত্তর। ওখানে লিখলেও হত, কিন্তু একটা আলাদা লেখা হিসেবেই থাক। লেখাটির শিরোনাম এইভাবে দেওয়া যেত, 'কেন মুসলিম মৌলবাদকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত', কিন্তু সেটা ঠিক পছন্দ হলনা। মুসলিম মৌলবাদকে হঠাৎ আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দিতে যাব কেন? তার যতটুকু পাওনা গুরুত্ব, সেটাই সে পাক। বেশিও না কমও না। তাই শিরোনামটা অন্যরকমই থাক। যদিও, আগেই বলেছি, এটা শাক্যর লেখারই উত্তর। শাক্যর লেখা, বস্তুত এর অনেকদিন আগে ... ...
গতকাল ঢাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে কাটা হয়েছে চাপাতি দিয়ে, কিছু লেখবার ইচ্ছে হোলো, কিন্তু হাজার একটা জট!কি লিখি? কেন লিখি? কিভাবে লিখি? অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। মৃত্যু হয়তো এক চিরন্তন সত্য, কিন্তু সত্যের হাতুড়ি মাথায় পড়লে মাঝে মাঝে বড় লাগে! ভীষণ জোরে।এখন কেলো হোলো, কেন তিনি মারা গেলেন? আমাদের অভিব্যক্তি কি হওয়া উচিৎ? কেন হওয়া উচিৎ? কিভাবে হওয়া উচিৎ।নির্দ্বিধায় বলা যায় তিনি মারা গেছেন ধর্মের কারণে, নিতান্তই ধর্মের কারণে, এমন একটি ধর্ম যে নিজে আভ্যন্তরীন ... ...
যখন কার্গিল যুদ্ধ বাঁধে আমি তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। কিন্তু মাঝেমাঝে এটা ওটার কারনে স্কুলে যাই। সেই সময় যুদ্ধের ফান্ড বিষয়ে স্কুলে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারী স্তর থেকে না হলেও সম্ভবত শিক্ষকেরা নিজেরাই এগিয়ে এসেছিলেন এবং ছাত্রদের কাছে আবেদন করেছিলেন ডোনেট করতে। আমি টাকা দিইনি। না, সেই বয়েসে দেশদ্রোহ যুদ্ধোন্মাদনা এসব ভারী ভারী চিন্তার বশবর্তী হইনি। দিইনি, কারণ বাবা যে কুড়ি বা তিরিশ টাকা দিয়েছিলেন সেটা আমি নিজেই সরিয়ে ফেলেছিলাম বিড়ি-সিগারেট খাব বলে। যে শিক্ষক ইনিশিয়েটিভটা নিয়ে ... ...
প্রতি বছর বিশ্বের কিছু নামী সংস্থা দুনিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশাল রেঙ্কিং তালিকা এনে উপস্থিত করেন। কোন বছরেই কোন তালিকাতেই সেখানে ভারতীয় সংঘরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ২০০-র মধ্যে আসে না। সেই নিয়ে এখানকার কিছু লোক একটু চিন্তা ব্যক্ত করেন। আর কেউ কেউ বলেন ওসব রেঙ্কিং আসলে পশ্চিমা দুনিয়ার চক্রান্ত, যাতে কিনা আমাদেরকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয় (তারা বেমালুম চেপে যান যে শ্রেষ্ঠ ২০০-র তালিকায় একাধিক এশীয় বিশ্ববিদ্যালয় থাকে, থাকে চীনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়)। যেসব পন্ডিত মনে কর ... ...
এই উপন্যাসের শুরু জানতে গেলে সময়ের স্রোতকে বলতে হবে একটু উল্টোবাগে চলো। আইন করে নীল চাষ বন্ধ হয়েছে সদ্য সদ্য। তার কিছু আগের থেকে এ উপন্যাসের কুশীলবদের পথচলা শুরু। সুন্দরবন লাগোয়া ভবানীপুর গ্রামে রামতনু মুখার্জ্জীর পারবারিক প্রথা পুত্রবধূর প্রথম রজঃপাত হবে শ্বশুরের ভিটেতে। কিন্তু রামতনুর পুত্র শেখরের স্ত্রী আন্নার বেলায় এ নিয়ম ব্যর্থ হয়। আন্নার ঠাকুরদা যদুপতি তিতুমীরের সাথে লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিল। রামতনুর পরিবার শেখরকে ... ...
মহাগুণ মডার্ণ নামক হাউসিং সোসাইটির একজন বাসিন্দা আমিও হতে পারতাম। দু হাজার দশ সালের শেষদিকে প্রথম যখন এই হাউসিংটির বিজ্ঞাপন কাগজে বেরোয়, দাম, লোকেশন ইত্যাদি বিবেচনা করে আমরাও এতে ইনভেস্ট করি, এবং একটি সাড়ে চোদ্দশো স্কোয়্যার ফুটের ফ্ল্যাট বুক করি। এবড়োখেবড়ো জমির মধ্যে একেবারে কিছু-নেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলতে আমি দেখেছি। নিয়মিত যেতাম উইকেন্ডে। ধূলো-রাবিশ আর মেশিনপত্তরের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ালো একের পর এক কুড়ি তলা, চব্বিশ তলা টাওয়ার। অসমান জমিতে চকচকে টাইল আনল সমান ভাব। মহাগ ... ...
গৌরচন্দ্রিকাইচ্ছে ছিল এই শীতের ছুটিতে গুজরাট যাওয়ার। আমেদাবাদ-গির-সোমনাথ-দিউ-দ্বারকা-গ্রেটার রন-মোধেরা -পাটন ছুঁয়ে লিটল রনের বুনো গাধা আর ফ্লেমিঙ্গোর ঝাঁক দু’চোখ ভরে দেখে ঘরে ফিরে আসা। কিন্তু বিধি বাম! কন্যা জোর আপত্তি জানাল যে সে কিছুতেই ওই সময়ে বেড়াতে যাবে না — তার নাকি কীসব পরীক্ষাটরীক্ষা আছে, সেসব নিয়ে সে চরম ব্যস্ত থাকবে। চিরকালের অসফল ছাত্র আমি, তাই তার সফলতার চেষ্টার বিরুদ্ধে সেভাবে মুখ ফুটে কিছু আর বলতে পারলাম না। অগত্যা মেয়ের মাকে রাজি করানোর ক্ষেত্রে উঠে পড়ে লাগতেই হল। চলো ক ... ...
আজ দেখলাম মেঘে ঢাকা তারা। এমনিতে ঋত্বিক নিয়ে আমার কোন পুজোর বালাই নেই। তবু দেখতে গিয়ে খুঁতগুলোর থেকে ভালোদিকগুলোই বেশি করে চোখে পড়লো। আমার বেশ বিশ্বাসযোগ্য লাগলো এই বায়োপিক, যদি একে আদৌ বায়োপিক বলা যায়। শাশ্বতর অভিনয় ভালো লাগলো, কমলেশ্বরের পরিচালনা ও চিত্রনাট্য খুবই ভালো লাগলো, সঙ্গীত পরিচালনা (দেবজ্যোতি মিশ্র) খুব ঠিকঠাক। সবথেকে ভালো লাগলো পরিমিতিবোধ। যা পোর্ট্রেয়াল অফ ট্র্যাজেডিতে খুব দরকার।বাবার কাছে শুনেছি, ঋত্বিক ঘটক নানুবাবুর বাজারে বাংলা খেয়ে পড়ে থাকতেন। সম্ভবত মৃত্যুর আগে আগেই কোন এ ... ...
১।সেলিব্রিটি পাবলিকদের মাঝে মাঝে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেবার সময় গুগলি প্রশ্ন দেবার চেষ্টা করে। তেমনি এক অখাদ্য গুগলি টাইপের প্রশ্ন হল, আপনি জীবনে সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট কি পেয়েছেন এবং কার কাছ থেকে। বলাই বাহুল্য আমি বিখ্যাত কেউ নেই, তাই আমাকে এই প্রশ্ন কেউ করে নি। কিন্তু আমি নিজে নিজেকে অনেক করেছি সেই জিজ্ঞাসা।প্রচন্ড ভেবে ভেবে দেখা গেল - লাইফে কমপ্লিমেন্ট পাবার মতন তেমন কিছু তো করি নি! অবশ্য ক্লাস সেভেন থেকে প্রায় টুয়েলভ পর্যন্ত কার্তিক, চঞ্চল সহ অনেক জনতাকে দায়িত্ব নিয়ে ইংরাজ ... ...
কলরব কথা ... ...
প্রথম দলকে আপনি রোজ চোখে দেখেন, মুখ চেনেন, কিন্তু প্রায় কারোরই নাম জানেন না। দ্বিতীয় দলকে আপনি প্রায় কখনোই দেখতে পান না, জীবনে কখনো পাবেনও না – কিন্তু তাদের নাম আমি, আপনি সবাই জানি। কারণ, এই এক শতাংশ দেশবাসীর হাতে আছে দেশের মোট সম্পদের ৭০ শতাংশ। আর তার পরের ধাপের কুড়ি শতাংশ ভাগ্যবানের হাতে আছে প্রায় উনিশ শতাংশ সম্পদ। তাহলে হাতে রইল কি? পেনসিল? না দাদা – এগারো শতাংশ। ভাগীদার কজন? দেশের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ ... ...
কালী : একটি অনার্য অডিসি তব রূপং মহাকালো জগৎসংসারকারকঃ । মহাসংহারসময়ে কালঃ সর্ব্বং গ্রসিষ্যতি ।। ... ...
এই মরশুমের অন্য খেলাটি কৌতুহলোদ্দীপক। আফগানিস্তানের অর্থনীতি চলে আফিম, ফল ও বন্দুকের কুটির শিল্পের উপর। ফল ছাড়া দুটি পণ্যই আন্তর্জাতিক বাজারে বেআইনী। কিন্তু কিন্তু কিন্তু - আজারবাইজানের তেল করাচীর বন্দরে আনতে গেলে আফগানিস্তানের জমিনে কব্জা লাগবে। চীন-পাকিস্তান সেই কারনেই তালিবানের পাশে। করাচী থেকে রাস্তা তৈরীর কাজ বহুকাল ধরে চীন চালাচ্ছে। এই সাফল্য যতটা তালিবানেদের তার চেয়ে বেশী চীনের। ... ...
পঁচিশ লক্ষ বছর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকা, দিনালেদি নদীর উপত্যকামাহর প্রসবকাল আসন্ন, তাই তাকে আর খাদ্যসংগ্রহে যেতে হয়না। গোষ্ঠীবদ্ধ জীব হওয়ার এই একটা বড় সুবিধা, তার ওপর আবার মাহ দলপতির সঙ্গিনী, তাই আগত শিশু এবং শিশুর মায়ের খাদ্যাভাব হয়না। একটা পাথরের ছায়ায় ডিসেম্বরের অসহনীয় গরম থেকে তাই নিজেকে রক্ষা করছিল মাহ। গোষ্ঠীর প্রায় সকলেই খাদ্যসংগ্রহে গেছে, কিছু শিশু আর সদ্যমাতা ছাড়া কেউ নেই আশেপাশে। মাহরা যে রক আউটক্রপটার ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিল, তার ঠিক পেছনে আরেকজন মা তার বাচ্চাদের জন্য শি ... ...