এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • মিস্টার চ্যাটার্জির রেজার 

    Nirmalya Nag লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১২ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৮৫৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • সকালবেলার অবশ্যকরণীয় কাজগুলো শেষ করে দ্বিতীয় চায়ের কাপটা নিয়ে মিস্টার চ্যাটার্জি তাঁর নতুন কেনা বড়সড় ব্যাকপ্যাকটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলোয় আর এক বার চোখ বুলিয়ে নিলেন। সব ঠিকঠাকই আছে। নিশ্চিন্ত হয়ে লাল টি-শার্ট, ব্লু জিনস আর আন্ডারওয়্যারগুলো আলমারি থেকে বার করে বিছানার ওপর সাজিয়ে রাখলেন। টয়লেট্রির ছোট বাক্সটা থেকে ইলেকট্রিক রেজারটাও বার করলেন। এবার শেভ করে স্নান সেরে রেজারসহ বাক্সটা ফের ব্যাকপ্যাকে ভরে নিতে হবে। তারপর ব্রেকফাস্ট করে নিলেই তিনি রেডি। কেবল দু-একটা ফোন করতে হবে।

    মিস্টার চ্যাটার্জি ব্রেডের প্যাকেটটা টোস্টারের সামনে রাখলেন। ফ্রিজ থেকে বাটারটা বার করলেন, তিনি স্নান সেরে আসতে আসতে সেটা নরম হয়ে যাবে। দুটো ডিম সেদ্ধ করতে দিলেন গ্যাসটা সিম করে। নুন-গোলমরিচের স্প্রিঙ্কলারও সামনে রাখলেন। খাবার সময়ে টি-ব্যাগ দিয়ে আর এক কাপ সবুজ চা নেবেন। আর হ্যাঁ, বেরোবার আগে গার্বেজ ব্যাগটাও বার করে দিতে হবে। সব রেডি করে রেজারটা নিয়ে বাথরুমের আয়নাটার সামনে গেলেন চ্যাটার্জি সাহেব, সখের ফ্রেঞ্চকাট দাড়িটার গায়ে একবার হাত বুলিয়ে মেসিনটা চালু করতে গেলেন আর তখনই টের পেলেন সমস্যাটা।

    রেজারটা ফাংশন করছে না। কালও তিনি দিব্যি শেভ করেছেন এই রেজার দিয়ে, কোনও প্রবলেম ছিল না। নানা ভাবে চেষ্টা করেও সেটা চালু হল না। তাঁর দাড়ির গ্রোথ খুব ভাল, প্রতিদিন শেভ না করলে ফ্রেঞ্চকাটের সৌন্দর্য থাকে না। তাই শেভ না করে তিনি বেরোন না, বহু বছরের অভ্যাস। ব্লেড-ওয়ালা সেফটি রেজার বাড়িতে নেই, ইলেভেনে পড়ার সময়ে একবার ওই দিয়ে দাড়ি কামাতে গিয়ে বেশ রক্তারক্তি হয়েছিল, সেই থেকে ফোবিয়া। তারপর পাড়ার সেলুনেই কাজ সারতেন। তবে চাকরি পাওয়ার পর থেকে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ইলেকট্রিক রেজার ব্যবহার করছেন।

    কাজের অর্ডারে গোলমাল হলে খুব বিরক্ত হন চ্যাটার্জি সাহেব, আজও হলেন। তিনি কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের ফাইনান্স ডিপার্টমেন্টের মেজ কর্তা। বয়স ৪০-এর কাছাকাছি। সম্প্রতি অফিসে প্রায় সাড়ে-ছ কোটি টাকার হিসেবের গরমিল ধরা পড়েছে, কর্তৃপক্ষ পুলিশে কমপ্লেন করেছে গতকাল। এসব নিয়ে একটু চিন্তিত থাকলেও নিজের কাজে খুব পোক্ত তিনি। পুরনো বাড়িতে একাই থাকেন, বাবা-মা মারা গেছেন। বিয়ে করেননি, একজন গার্লফ্রেণ্ড আছে, মাঝে মাঝে আসে।

    তবে এমনি এমনি তিনি উন্নতি করেননি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেও তিনি পারেন। মিস্টার চ্যাটার্জি ঠিক করে নিলেন একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়ে পাড়ার সেলুন থেকে শেভ করে নেবেন, ছোটবেলায় যেমন করতেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। স্নান-খাওয়া সেরে আলো-পাখা গ্যাস-সিলিন্ডার দরজা-জানলা-তালা ইত্যাদি ঠিক মত বন্ধ আছে কি না দেখে নিয়ে ব্যাকপ্যাক পিঠে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। যথাস্থানে ফোনটা করে নিতে ভোলেননি। মোবাইল, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক - সবই সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।

    বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা সেলুনের পথে হাঁটা লাগালেন চ্যাটার্জি সাহেব। দক্ষিণ কলকাতার পূর্ব অংশে এই রাস্তায় মানুষ, অটো, সাইকেল সবই চলে, এক খানা বাসের রুটও আছে। রাস্তার দুদিকে হরেক দোকান -- মুদিখানা, স্টেশনারি, রেস্টুরেন্ট, জামাকাপড়, মুড়ি-বাদাম, মোবাইল রিচার্জ, এটিএম। ঘড়িটার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলেন মিস্টার চ্যাটার্জি। পল্টুর চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে গিয়ে, মুদীর দোকান দত্ত স্টোর, বন্ধ লন্ড্রি আর তারপর মিষ্টির দোকানটা পেরিয়েই সেলুন।

    পল্টুর দোকানে তখন সপারিষদ চা খাচ্ছিল এলাকার নেতা জিতেন্দর। হঠাৎ তাকে "জিতুদা, কী খবর গো" বলে জড়িয়ে ধরেছে পাগলা স্বপন। গরম চা চলকে জিতেন্দরের পাঞ্জাবিতে পড়েছে। ফলে নেতার এক চামচা স্বপনকে মেরেছে এক ধাক্কা। ধাক্কা খেয়ে স্বপন পড়েছে পথ চলতি অন্য একটা লোকের ঘাড়ে। আর সে ছিটকে গিয়ে পড়ল মিস্টার চ্যাটার্জির গায়ে। চ্যাটার্জি সাহেব বিরক্ত হয়ে লোকটার দিকে তাকালেন। লোকটা তাঁকে "সরি" বলে চায়ের দোকানটার দিকে তাকাল। সেখানে বেশ উত্তেজনা। লোকটাকে পিছনে ফেলে মিস্টার চ্যাটার্জি দ্রুত এগিয়ে সেলুনে ঢুকলেন।

    যে লোকটার সাথে তাঁর কলিশন হল তার ঘাড়ে চোট লেগেছে। লোকটা এ পাড়ার কেউ নয়, ভিড় থেকে সরে এসে দাঁড়িয়ে ঘাড়ে হাত বোলালো, তারপর ধীর গতিতে চলা শুরু করল। তীক্ষ্ণ চোখে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে চলেছে। মনে হয় কিছুই যেন তার চোখ এড়াচ্ছে না। ডানদিকে দত্ত স্টোরের কর্মচারি নারায়ণ আটা মাপছে, তার ডান হাতের বুড়ো আঙুলের পাশে আর একটা আঙুল আছে। বাঁদিকে রাস্তা দিয়ে যে অটোরিকশাটা বেরিয়ে গেল তার পিছনে লেখা - "দেখবি আর জলবি, লুচীর মত ফুলবি"।

    লোকটার খুব সাধারণ চেহারা, এতই সাধারণ যে কেউ মনেই রাখবে না। গায়ের রঙ চাপা, গোঁফ নেই, দাড়ি বোধ হয় দিন দুই কামানো হয়নি, বয়স ৩০-৩২ হবে। ফ্যাকাশে রঙের শার্ট -- সাদা না অতি হালকা নীল বোঝে কার সাধ্য, জিনসের ট্রাউজারটাও ফেডেড। মিষ্টির দোকানে সাঁটা গোটা দুই ফুড ডেলিভারি অ্যাপের স্টিকার চোখে পড়ল লোকটার। সেলুনের ভিতরে আলগোছে একটা দৃষ্টি দিয়ে এগিয়ে গেল সে, আর তার পরেই দাঁড়িয়ে গেল ফুটপাথের অমলতাস গাছটার নিচে। কিছু একটা খটকা লেগেছে লোকটার।

    পকেট থেকে মোবাইল বার করল সে। পাশওয়ার্ড দিয়ে একটা ফোল্ডার খুলে বার করল একটা ছবি। আরও কিছু ছবি আর ডকুমেন্ট রাখা আছে সেই ফোল্ডারে। ছবিটা ভালো করে দেখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফিরে এল সেলুনের দিকে। এবার একটু মনোযোগ দিয়ে দেখল ভেতরটা। যদিও হাঁটা বন্ধ করেনি, গতি কমিয়েছে কেবল। সেলুন বাঁ দিকে রেখে কয়েক পা এগিয়ে বন্ধ লন্ড্রিটার সামনে দাঁড়াল। মুখে এক চিলতে হাসি। উল্টো দিকে ঘুরে ফোনে একটু কথা বলল। তারপর ফোন পকেটে পুরে, গালের দাড়িতে এক বার হাত বুলিয়ে, এগিয়ে এসে ঢুকে পড়ল সেলুনে।

    বলরাম যাদবের সেলুন। আদতে বিহারি বলরামদা এখন পুরো বাঙালি হয়ে গেছে। সেলুনটা আগে অন্যরকম ছিল, এখন এসি বসেছে, লেগেছে কাঁচের দরজা, উজ্বল আলো, বাইরে থেকেই ভিতরটা স্পষ্ট দেখা যায়। একজন বসে আছে চেয়ার দুটোর একটায়, তার শ্যাম্পু করা ভিজে চুল ড্রায়ার দিয়ে শোকাচ্ছে বলরামদা। পাশের চেয়ারটার ওপর মিস্টার চ্যাটার্জির ব্যাকপ্যাকটা রাখা। ব্যাকপ্যাকের মালিক বেঞ্চে বসে আছেন অসহিষ্ণু ভাবে। তাঁর ঠিক পাশে বসে বাংলা খবরের কাগজটা তুলে নিল ফ্যাকাসে জামা, পড়তে শুরু করল প্রথম পাতা। চ্যাটার্জি সাহেব তাকে দেখলেন - এই লোকটার সাথেই ধাক্কা লাগল না তখন?

    হাতঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আর কত দেরি আছে জানতে চাইলেন চ্যাটার্জি সাহেব। বলরামদা বলল এই তো হয়ে এল। বলরামদার গলায় বিরক্তি, বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করছে লোকটা। কর্মচারীটাও আজ আসেনি। চুল ডাই করতে সময় লাগে, অবশ্য প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সদ্য বারগ্যান্ডি রং করা লোকটার চুল ড্রায়ারের হাওয়ায় উড়ছে। চ্যাটার্জি সাহেব দরজার দিকে তাকালেন, ফের চোখ গেল ফ্যাকাসে জামার দিকে। তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে, লোকটার এখানে আসাটা তাঁর নরম্যাল লাগছে না। অবশ্য হতেই পারে যে লোকটা চুলদাড়ি কাটতেই এসেছে।

    কয়েকটা মিনিট কাটল, মিস্টার চ্যাটার্জি উঠে দাঁড়ালেন। ফ্যাকাসে জামা আড়চোখে লক্ষ্য করছে -- সাহেবের ডান হাতের আঙুলে তিনটে পাথর বসানো সোনার আংটি - একটা মুক্তো, একটা মনে হয় ক্যাটস-আই, আর একটা বোধ হয় পান্না। সে হাতটা জিনসের ডান পকেটে ঢুকল আর বার করে আনল একটা সাধারণ আর পুরনো ফোন। ফোন দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল ফ্যাকাসে জামার। এস-এম-এস খুলে দেখছেন মিস্টার চ্যাটার্জি -- টুং শব্দ করে একটা মেসেজ ঢুকলো। সাহেবের নয়, ফ্যাকাসে জামার ফোনে। হোয়াটস্যাপ মেসেজ পড়ে মুখে প্রায় অদৃশ্য একটা হাসি ফুটল তার, উত্তরে একটা বুড়ো আঙুল পাঠিয়ে দিল সে। ওদিকে চ্যাটার্জি সাহেবরও মনে হচ্ছে লোকটা তাঁকে দেখছে। অস্বস্তির বদলে এবার টেনশন আরম্ভ হল তাঁর। অফিস কি তাঁকেই সন্দেহ করছে? এ লোকটা কি পুলিশ? নাহ, এখানে না এলেই ভাল হত। আর কি সেলুন ছিল না? তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে।

    ফোন বেজে উঠল তাঁর। “কত দূর... প্রায় রেডি… না না… আচ্ছা… বাই।” ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন তিনি, মনে জোর এনে লোকটার দিকে দেখলেন না, বলরামদার দিকে তাকালেন। সে ততক্ষণে লোকটার চুল শোকানো শেষ করেছে। চুল আঁচড়ে দিয়ে একটা ছোট আয়না নিয়ে ধরেছে খদ্দেরের মাথার পিছনে। লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করায় বলরামদা খুলে নিল তার আলখাল্লা। উঠে দাঁড়ালো বারগ্যান্ডি চুল, মিস্টার চ্যাটার্জি পারলে সেই মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে চেয়ারে চলে যান আর কি। বলরামদার সঙ্গে এবার লোকটাও বিরক্ত হয়ে তাকাল। ব্যাকপকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে একটা দু হাজার টাকার নোট এগিয়ে দিল লোকটা। এর পরের কথাবার্তা এই রকম:

    বলরামদাঃ তিনশো খুচরো দিন না।

    বারগ্যান্ডিঃ নেই।

    বলরামদাঃ এত খুচরো দেওয়া যায়?

    বারগ্যান্ডিঃ থাকলে দিতাম।

    মিস্টার চ্যাটার্জিঃ এক্সকিউজ মি। আমার একটু তাড়া আছে।

    বলরামদাঃ দিন দেখি ভাঙাতে পারি কি না।

    বলরামদা ইসারায় মিস্টার চ্যাটার্জিকে চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলে। লোকটার হাত থেকে নোটটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফ্যাকাসে জামা ঘড়ি দেখে নেয়, একবার বাইরে তাকিয়ে ফের কাগজ ধরে চোখের সামনে। চ্যাটার্জি সাহেবও ঘড়ি দেখেন, দেখে নেন বাইরেটাও, তারপর চেয়ারে এসে বসেন। ডাই করা লোকটা পকেট থেকে একটা কায়দাওয়ালা চিরুনি বার করে আঁচড়ানো চুল ফের আঁচড়াতে থাকে। মিস্টার চ্যাটার্জি আয়না দিয়ে দেখতে পেলেন ফ্যাকাসে জামা মোবাইলে কিছু লিখছে। হঠাৎ মুখ তুলল লোকটা, তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলেন চ্যাটার্জি সাহেব। বলরামদা আসছে না কেন এখনও? বারগ্যান্ডির বোধ হয় চুল আঁচড়ানোটা পছন্দ হচ্ছে না কিছুতেই। বারবার ঠিক করছে। মিস্টার চ্যাটার্জির মনে হচ্ছে ফ্যাকাসে জামা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে। টেনশন কাটাতে ফোন করলেন তিনি… ধুত্তোর, কানেকশন হচ্ছে না। দ্বিতীয় বারের চেষ্টাতেও হল না।… লোকটা মনে হচ্ছে এখনও তাঁকেই লক্ষ্য করে যাচ্ছে। বলরামদা ফিরে এল, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন চ্যাটার্জি সাহেব। চুল আঁচড়ানো থামিয়ে হাত বাড়ালো বারগ্যান্ডি, বলরামদা টাকা ফেরত দিতে যাবে, হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে গেল। বিরক্ত বলরামদার গলা পাওয়া গেল, "আজকাল মাঝে মাঝেই এমন হচ্ছে। দাঁড়ান, এখনই এসে যাবে। এই নিন আপনার টাকা।" লোকটা টাকা ফেরত নিয়েছে, অপেক্ষা করছে আলো আসার, চুলের পরিচর্যা শেষ করবে। কিন্তু চ্যাটার্জি সাহেব আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। ফোনে রিডায়াল করলেন, সেই একই অবস্থা। কাঁচের দরজা দিয়ে বাইরের আলো ভেতরে এসে ফ্যাকাসে জামার গায়ে পড়েছে, আয়নার ভেতর দিয়ে মনে হচ্ছে লোকটা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে।… এনাফ, পাশের চেয়ার থেকে ব্যাকপ্যাকটা তুলে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন চ্যাটার্জি সাহেব, পিছনে বলরামদার "কী হল, এখুনি এসে যাবে তো"-কে পাত্তা না দিয়ে।

    বাইরে আলোর মধ্যে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মিস্টার চ্যাটার্জি। এক পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন সেলুনের ভেতরটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল, মানে কারেন্ট এসে গেল। তাই বলে আর ভেতরে ঢুকবেন না তিনি। ফ্যাকাসে জামা এখনও ওখানে। নাহ, লোকটা তো বেরোল না… বোধ হয় সত্যিই দাড়ি কামাতে এসেছে। তিনি ফালতু টেনশন করলেন। যাকগে, বরং আর একবার ফোন করে দেখা যাক।

    তিনি রিডায়াল করতে যাবেন, বারগ্যান্ডি চুল বেরিয়ে এল। সিগারেট ধরালো একটা। জ্বলন্ত দেশলাই কাঠিটা হাত ঝাঁকিয়ে নেভালো সে, কাঠিটা ফেলে, দেশলাই বাক্সটা পকেটে রেখে আরাম করে একবার ধোঁয়া ছাড়ল। চ্যাটার্জি সাহেব দেখতে পেলেন ফ্যাকাসে জামা এসে দাঁড়াল দরজার কাছে, তবে বাইরে এল না। টেনশন ফিরে এল তাঁর, কী দেখছে লোকটা?

    এরপর যা হল তা কেবল সিনেমার পর্দাতেই এত দিন দেখেছেন মিস্টার চ্যাটার্জি। মাটি ফুঁড়ে যেন উঠে এল গাট্টাগোট্টা দুটো লোক। ডাই করা লোকটার কাঁধে হাত রাখল একজন, বলল “আরে মধু যে। কদ্দিন বাদে দেখা। চ একটু চা-ফা খাওয়া যাক।”

    মধুর ঠোঁট থেকে সিগারেটটা পড়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে লোকটাকে আচমকা ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করল সে। পারলো না, আরও দু জন লোক কাছেই ছিল, একজন মধুকে ল্যাং মারল, সে উলটে পড়ে যেতেই চার জন মিলে তাকে ধরে পিছমোড়া করে হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দিল। তারপর কোমরে দড়ি পরিয়ে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল পাশের গলির দিকে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশের গাড়ি। মধুকে তাতে তুলে বেরিয়ে গেল গাড়িটা। আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। পরের দিনের কাগজে এদের কেউ কেউ পড়বে শিলিগুড়ির ব্যাংক ডাকাতির পাণ্ডা মধু সামন্ত গ্রেফতার হয়েছে কলকাতা থেকে।

    পুরো ব্যাপারটা ঘটতে মিনিট পাঁচেকের বেশি লাগেনি। আর চোখের সামনে এই নাটক দেখে এত অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন চ্যাটার্জি সাহেব যে খেয়ালই করেননি কখন ফ্যাকাসে জামা দাড়ি না কেটেই বেরিয়ে গেছে সেলুন থেকে এবং মিশে গেছে ভিড়ের মধ্যে। তিনি আরও খেয়াল করেননি যে এর মধ্যে তাঁর ফোন বেজে বেজে থেমে গেছে। দ্বিতীয়বার বাজা শুরু হতে ফোনটা ধরলেন তিনি। “হ্যালো… শুনতে পাইনি… এমন একটা কান্ড হয়ে গেল… না না বাইরে… শেভ করিনি… পরে বলছি, তুমি কোথায়… হ্যাঁ আমি ওয়েট করছি।”

    এতক্ষণে চারদিকে দেখার অবকাশ পেলেন মিস্টার চ্যাটার্জি। সর্বত্রই জটলা, এই নিয়েই বোধ হয় আলোচনা হচ্ছে। পল্টুর চায়ের দোকানে ভিড়, তবে জিতেন্দর নেই সেখানে। সেলুনটার দিকে তাকালেন তিনি। ফ্যাকাসে জামাকে দরজার পিছনে আর দেখা যাচ্ছে না, দাড়ি কাটছে হয়তো - এটা ভাবতেই আর একটা কাজের কথা মাথায় এল তাঁর। সেটা করার জন্য ফের সেলুনে ঢুকতে হবে। কিন্তু এখানে আর না, অন্য কোথাও।

    একটা হলুদ ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল ফুটপাথ ঘেঁষে। তার পিছনের সিটে বসে আছেন টপ আর ট্রাউজার্স পরিহিতা এক মহিলা, চোখে রোদ চশমা। পিঠ থেকে ব্যাকপ্যাকটা হাতে নিয়ে তাঁর পাশে গিয়ে বসলেন চ্যাটার্জি সাহেব, দরজা বন্ধ করলেন। ড্রাইভারকে মহিলা বললেন, “চলুন।” গাড়ি চলতে শুরু করলে সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “শেভ করলে না?”

    মিস্টার চ্যাটার্জিঃ না, একটা সাসপিসাস লোক ছিল সেলুনে।... (ফিসফিস করে) আমি পুরো দাড়ি উড়িয়ে দেব।

    মহিলাঃ কেন?

    মিস্টার চ্যাটার্জিঃ পুলিশ একটা গুন্ডাকে সেলুনের সামনে থেকে অ্যারেস্ট করল। আমার চোখের সামনে। গুন্ডাটা ওই সেলুনেই ছিল, চুল ডাই করল। আগে খেয়াল হয়নি আমার ফ্রেঞ্চকাট সবার চেনা।… সামনে একটা সেলুনে ট্যাক্সি দাঁড় করাতে হবে।

    মহিলাঃ হাওড়া স্টেশনেও সেলুন আছে।

    মিস্টার চ্যাটার্জিঃ না, স্টেশনে সিসিটিভি আছে। তার আগেই ওড়াতে হবে।

    মহিলাঃ ওকে ওকে…

    চ্যটার্জি সাহেবের কবজিতে চাপ দিয়ে মহিলা চোখের ইসারায় চ্যাটার্জি সাহেবের দৃষ্টি ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে আকর্ষণ করেন। তিনি চুপ করে যান। এখন বুঝতে পারছেন ফ্যাকাসে জামা আসলে পুলিশের ইনফর্মার, তবে সে এসেছিল ওনার জন্য নয়, চুল ডাই করা লোকটার জন্য। আর চর তো ক্রিমিনাল ওয়ার্ল্ডের লোকই হয়। এক অর্থে মধু, ফ্যাকাসে জামা আর তিনি মাসতুতো ভাই। নিজের মনেই এক চিলতে হাসি হেসে ট্যাক্সির সিটে গা এলিয়ে দিলেন মিস্টার চ্যাটার্জি।

    অফিসের খোয়া যাওয়া সাড়ে ছ কোটির সিংহভাগের মালিকই এখন তিনি। এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন অফিসে যে প্রাথমিকভাবে অন্য একজনকে দোষী মনে হবে। সেটা যে সত্যি নয় সেটা বুঝে ফেলতে একটু সময় লাগবে পুলিশের। ততদিনে সুরাটে পৌঁছে যাবেন তিনি। সেখানে সব ব্যাবস্থা করে রাখা হয়েছে। যদিও সেখানে সরাসরি যাবেন না, ঘুরপথ ধরবেন। গতকাল রাতে এয়ারপোর্টের দিকে একটা খালে নিজের স্মার্টফোনটা বিসর্জন দিয়েছেন। এই সাধারণ ফোনটা ওনার মায়ের ছিল, নম্বরটাও মায়ের নামে। এই নম্বর অফিসের কারও জানা নেই। তাঁর বান্ধবীও একা, তার কথাও অফিসের কেউ জানে না। দাড়ি কামানো ছাড়া আর একটা কাজই বাকি রইল। ইলেকট্রিক রেজারটাকেও কোথাও ফেলে দেওয়া। এটার জন্যই এত কাণ্ড।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১২ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৮৫৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত | 151.197.224.113 | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৫১502034
  • বটে। 
    চলবে।  
     
  • কৌশিক ঘোষ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৫৬502045
  • যে কলমে ভেজা জুতো আর ভেনিসের বর্ণনা বেরিয়েছে, সেই একই কলম থেকে থ্রিলার ধাঁচের লেখা ? ভার্সেটাইল। 
    ব‍্যাঙ্ক ডাকাতির পান্ডা ধরা পড়ার পর থেকে গল্পটা যেন একটু বেশি তাড়াতাড়ি পরিণতিতে পৌঁছলো। আর একটু বড়ো হলে, একটু ধীরগতিতে চললে আরো ভালো হতো। মোটামুটি ধরুন যদী হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরে সব জানা যেতো গার্লফ্রেন্ড আর চ‍্যাটার্জির কথোপকথন থেকে, আরো জমতো। আরো খানিক টেনশন।
    ভেজাজুতোভেনিস অন‍্য জিনিস ছিলো, ওয়ান অভ্ এ কাইন্ড। তবে এ লেখায় টেনশন বিল্ডআপ, চ‍্যাটার্জির, পাঠকেরও, বেশ উপভোগ‍্য।
    আরেকটা জিনিসও দ্দারুণ। অজস্র খুঁটিনাটির বর্ণনা, যেমনটা পশ্চিমী লেখকদের লেখায় থাকে। দ্দারুণ, দ্দারুণ।
  • সম্বিৎ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:২০502046
  • গুড হয়েছে। ইলেক্ট্রিক শেভারের কেসটা ভাল করে বুঝতে পারলাম না।
  • dc | 122.174.157.189 | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:১৭502049
  • ভালো লাগলো। 
     
    ইলেকট্রিক শেভার বোধায় ম্যাকগাফিন, বা এমনি একটা প্রপ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে যেটা দিয়ে গল্প শুরু হয়েছে। 
  • | ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫৫502087
  • বাহ বাহ বাহ। আরেকটু টেনশান বিল্ড হলে ভাল হত মনে হয়। 
  • জয় | 82.1.126.236 | ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫১502099
  • নির্মাল্য নাগ মশাই কথা দিয়ে অসাধারণ নিখুঁত ছবি আঁকতে পারেন। 
  • Nirmalya Nag | ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:৪৮502111
  • @মতামত - ধন্যবাদ 
     
    @কৌশিক ঘোষ - থাংকু থাংকু। এট্টু স্বাদ বদলের চেষ্টা আর কল্লাম আর কি। আপনার আইডিয়া মাথায় রইল।
     
    @ সম্বিৎ - ধন্যবাদ। ইলেকট্রিক শেভারের বেগড়বাঁই করা নিয়েই তো যত ঝামেলার শুরু। 
     
    @dc - ধন্যবাদ। 
     
     
  • Nirmalya Nag | ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:১৯502112
  • @দ - আরও টেনশন? ওরে বাবা। 
     
    @ জয় - ধন্যবাদ। 
  • kk | 68.184.245.97 | ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:০৭502119
  • ভালো লাগলো গল্পটা। আমি একটু নিটপিকিং করবো। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি কি 'শেভ' করে? 'ট্রিম' করেনা? 'শেভ' করা মানে তো পুরো কামিয়ে ফেলা, নয়?
  • aranya | 2601:84:4600:5410:15fa:d7f:31be:2a0a | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:০৬502125
  • উপভোগ্য লেখা 
  • Nirmalya Nag | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:০৫502126
  • @kk - একদম ঠিক বলেছেন। ওটা ট্রিম হওয়াই উচিত ছিল। অনেক ধন্যবাদ। 
     
    @aranya - ধন্যবাদ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন