এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২২

  • বৃংহণ

    মৃণাল শতপথী
    ইস্পেশাল | উৎসব | ২৪ অক্টোবর ২০২২ | ১০৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অ-মৃত | হায়দারি মঞ্জিল থেকে | দুটি কবিতা | ক্যুও ভ্যাদিস | কি করবেন মাস্টারমশাই | ২০২২ এ পুজো বিষয়ক কয়েকটি লেখা | ক্ষত | এক গুচ্ছ কবিতা | অরন্ধন | শমীবৃক্ষের বুকের আগুন | তিনটি কবিতা | ধুলামুঠি | অনিমা দাশগুপ্তকে মনে পড়ে? | যে রূপ আশ্বিনের | এক্সাম পেপার | কুহক | প্রজাপতি প্রিমিয়াম | চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা | ভাস্কর্য | তিনটি কবিতা | স্বর্ণলতা | পাখি | অথ অহল্যা - গৌতম কথা | দুগ্গি এলো | আহ্লাদের কলিকাল | রুদালি টু ডট ও | অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো | প্রত্নতত্ত্বে তৃতীয় স্বর : প্রাচীন টেপ হাসানলু'র সমাধিগুলি | করমুক্ত | শারদ গুরুচণ্ডা৯ ২০২২ | একে একে নিভে গেছে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমার আলো | মিষ্টিমহলের বদলটদল | নিজের শরীর নিজের অধিকার – পোশাক ও মেয়েদের আজকের দুই লড়াই | উমেশ, ইউসুফ এবং প্রাইম টাইম | কবিতাগুচ্ছ | উৎসব মনের | তিনটি অণুগল্প | বর্ডার পেরোলেই কলকাতা | রূপালি চাঁদ, সুমিতা সান্যাল আর চুণীলালের বৃত্তান্ত | দেবীপক্ষ ও অন্যান্য | দুটি সনেট | নদীর মানুষ | বৃংহণ | শ্যামাসংগীতের সাতকাহন | নবনীতার কয়েকদিন | ভিআইপির প্রতিমাদর্শন এবং.. | বেইজ্জত | পায়েসের বাটি | শারদ সম্মান | দুটি কবিতা | মালেক আব্দুর রহমান


    একটু আগে একটা শেয়াল পেরিয়েছে রাস্তা। বনের এপাশ থেকে ওপাশে গেছে। এখন নির্জন বনপথ। ফুল পিকাপে গাড়ি নেয় ড্রাইভার। গাড়িতে চলছে উদ্দাম গান। কম বেশি মাতাল হয়েছে সবাই। বোতল ঘুরছে হাতে হাতে। কেউ মুখে আঙুল ভরে তীক্ষ্ম শিস দেয়। শিসটা দীর্ঘ প্রাচীন শাল অরণ্যের সঙ্গে দ্রুত পেছনে হারায়। গতির উল্লাস। শালঝাঁটির ছোট বোঝা মাথায় রাস্তা পার হতে যায় বছর ছয়েকের মেয়ে, সঙ্গে ভাই। ড্রাইভার জোরে হর্ন দেয়, থতমত সে ছুটতে যায়, ব্রেকে পা চাপতে দেরি, মেয়েটাকে পিষে প্রায় পঞ্চাশ মিটার ঘষটে রাস্তার ধারে গিয়ে কাত হয় বোলেরো। গান থামে। নিঃশব্দে কটা মুখ গাড়ির কাচ গলে বাইরে উঁকি দেয়, মুখগুলি দ্রুত অদৃশ্য হয়, গাড়িটি নিমেষে রাস্তার বাঁকে হারিয়ে যায়।
    রক্তমাখা মাংসপিন্ডের কাছে উবু হয়ে বসে ছেলেটা। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার গাড়িটার চলে যাওয়ার রাস্তাটা দেখে। কাঠের বোঝা ছিটকে ছেতরে আছে। ডাকে, মোই, মোই, আই মোই, বেলা হিজুমে! দিদি ওঠে না। চিল চিৎকারে বনের ভেতর দিয়ে সে ছুটে যায়।
    বেলা ১১.২০
    শুদ্ধ ঘুমোচ্ছেন। গাড়ির সিটে এলিয়ে শরীর, মুখ সামান্য ফাঁক, মৃদু শ্বাসের শব্দ। গাড়ি টানা চলছে, জার্নির ধকলে কাহিল। ট্রিপটায় আপত্তি ছিল অসীমের। দুই বন্ধুর বয়স হয়েছে, ধকল নিতে পারবেন কীনা। শুদ্ধ শোনেননি। সুছন্দা চলে যাবার পর ভেতর থেকে ভঙ্গুর হয়ে গেছেন মানুষটা। ফরেস্ট বাংলোতে কটা দিন ভালো ছিলেন। নব উদ্যমে ঘুরে বেড়িয়েছেন জঙ্গল, নদী, ঝোরা। পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে কবিতা আউড়েছেন।
    ‘প্রেসারের বড়িটা নিবি?’
    ‘না।’
    ‘ঝিমিয়ে আছিস কেন?’
    ‘বেশ কাটলো বল, প্রকৃতির হাওয়া বাতাস আলো, আবার গিয়ে খোঁয়াড়ে ঢুকতে হবে।’
    ‘বাড়ি ফিরছিস তো!’
    ‘সেখানে কে আমার অপেক্ষায় বসে আছে?’
    অসীম দেখেন শুদ্ধর মুখের একপাশে গাছপালা দিয়ে আসা আলোছায়া সরে যায়। লতানে পাকা চুলের পাক কপালে ওঠানামা করে। সৌম্যদর্শন তিনি। আধো তন্দ্রার ভেতর শুদ্ধ বিড়বিড় করেন- একটুখানি সেতার, একটুখানি সরোদ, পাহাড়চুড়োয় রঙমেলানো অসম্ভবের রোদ, আমায় শোনাও, বোধহয় আমার অসুখ সেরে যাবে...
    বাইরে তাকান। মাইলের পর মাইল শাল জঙ্গল সরে যায়, হঠাৎ শেষ হয় বন, উঁচুনিচু প্রান্তর, কাঁটাগাছ। টাঁড় বলে এখানকার মানুষ, ছোটনাগপুর মালভূমি। এই জঙ্গলটা খুব পুরনো লাগে না। গাছে, পাতায় সজীব ভাব, অপূর্ব দাঁড়িয়ে থাকা এদের। শুদ্ধ ফিসফিস করেন, কেমন আছো বন?বন জবাব দেয় না, কেবল বৃক্ষ পেরনো বাতাসের গভীর সনসন। আদিবাসী গ্রাম। চিলতে জমিতে ধানের ফলন, কাটার উপযুক্ত।
    ‘অনুপ?’
    ‘স্যার?’
    ‘এদিকে বাঘ দেখা যায়?’
    ‘না স্যার, বাইরে থেকে একটা বাঘ চলে এসেছিল ক-বছর আগে, লালগড় সাইডটায়, এখানে নেই। ভালুক আছে কিছু, আর হাতি। আগে বচ্ছরকে আসতো, এখন ফিরে যায় কম, এখানেই ঘাঁটি গেড়ে থাকে। গ্রামে ঢুকে যায়, ফসল খায় কম নষ্ট করে বেশি।
    জঙ্গল কমছে। কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। খাবার নেই। বন্যেরা লোকালয়ে ঢুকছে, মানুষ মারছে। শুদ্ধর ঘুম আসে আবার। মসৃণ চলে গাড়ি। হঠাৎ গতি কমিয়ে আনে অনুপ। রাস্তাটা ঢালু হয়ে উঠবার মুখে পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে। একটা মিনি ট্রাকের পেছনে এনে গাড়ি থামায় সে। সরু রাস্তা, দুপাশে বড় বড় গাছ, পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নেই। দূরে ছোট একটা ব্রিজ, তলা দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। অসীম জিজ্ঞেস করেন কী ব্যাপার।
    ‘বুজছি না স্যার, কোনো গাড়ি খারাপ হয়ে মিডিলে দাঁড়িয়ে গেল কী, দেখছি।’
    অনুপ দরজা খুলে বেরিয়ে বেশ কয়েকটা গাড়ি পেরিয়ে দেখতে পায় দুটো গাছের গুঁড়ি আড়াআড়ি রাস্তায় ফেলে তার ওপর বসে আছে জনা কয়েক সাঁওতাল। রাস্তা বনধ। শুদ্ধ চোখ খুলেছেন।
    ‘কী হয়েছে অসীম, হাতি?’
    বেলা ৪.২৫
    স্মৃতিকণাদের গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেছে। সে উঁকি মেরে দেখে সামনে আরও অনেক গাড়ি। কিছু একটা প্রবলেম হবে, বাবলুদা দেখতে গেছে। জন ডেনভারের গান বাজছিল, লাভ ইজ হোয়াই আই কেম হিয়ার ইন দ্য ফার্স্ট প্লেস, লাভ ইজ নাও দ্য রিজন দ্যাট আই মাস্ট গো...টানা গাড়ি চললে ঘুম ভাব আসে। সবুজ বন সরে যায়, ঘোরে অর্ধবৃত্তাকারে। দৃশ্য ছিঁড়ে যায়। বুকে চাপা কষ্ট, কী ফেলে সে চলে যাচ্ছে এখান থেকে। ঐশী ঘুমোচ্ছে কাত হয়ে, তার কাঁধে মাথা রেখে দিশানী, তার মুখ হাঁ করা, বাকিরা ঝিমোয়। গাড়ির ভেতর মৃদু শ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছু নেই। হল্লাচিল্লা, গান, হাহা হিহি সব নিশ্চুপ। শান্ত জঙ্গলে তাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দূরে জল বয়ে যাওয়ার কুলকুল ধ্বনি। সারি গাছের মাথায়, পাতায় শেষ বিকেলের রোদ পড়ে আছে। এরই মধ্যে বনের ভেতর আঁধার নামে। দিশানী চোখ খুলেছে।
    ‘আ গয়ে ক্যায়া, কণা?’
    ‘বাইরে তাকা।’
    ‘হুয়া ক্যায়া, গাড়ি রুক কিঁউ গয়ি?’
    আদতে বাঙালি দিশানীর মুখের ভাষা শুনে বোঝার উপায় নেই। আদ্যন্ত ইংলিশ মিডিয়াম, সঙ্গে হিন্দি এবং বাড়িতেও কেউ বাংলা বলে না। স্মৃতিকণা রাগে, কথা শোনায় কখনও।
    ‘বাঙলা লিখতে পড়তে পারিস না, তুই বাঙালি!’
    ‘কোশিস তো করি!’
    ‘ছাই করিস!’
    একটুও না রেগে স্মৃতিকণার চশমাটা হাতে নিয়ে বলেছে,
    ‘এ কণা, গুসসা মত হোনা, আর কখুনো হিন্দি বলবো না!’
    অ্যানথ্রপলজির চলন্তিকা ম্যাডামের গাড়িটা এসে পৌঁছয়। মেয়েরা আড়ালে ডাকে চালুন্তিকা! মেয়েদের নিয়ে ফিল্ড এক্সকারশনে এসেছিলেন, ফেরার পথে এ কী বিপত্তি! সামনে যাকে পান জিজ্ঞেস করেন,
    ‘হোয়াটস দ্য ম্যাটার?’
    ‘সাঁওতালরা রোড ব্লক করে দিয়েছে, আজ আর ছাড়ান নেই, বসে থাকুন হোলনাইট জঙ্গলে!’
    চলন্তিকার স্বামী তথাগত ড্রাইভারের সিটে। বিরক্ত মুখে বলেন যে তিনি পইপই করে বারণ করেছিলেন এসব মাওয়িস্ট বেল্টে এতগুলো মেয়েকে না আনতে।
    ‘সব খোঁজ নিয়েই তো আসা হলো। এখন আর সে-সব প্রবলেম কোথায়?’
    মাথা নাড়েন তথাগত।
    ‘এভরিহয়্যার ইজ আ ডার্টি পলিটিকস, দেশটা ভোগে গেল এই করে!’
    বাবলু এসে জানায় একটি বাচ্চা মেয়েকে গাড়ি মেরে বেরিয়ে যায় কখন, সাঁওতালরা রাস্তা আটকে বসেছে। তীর ধনুক টাঙ্গি নিয়ে বসেছে একদল। কারও কথা শুনছে না। পুলিশ না আসা পর্যন্ত আটকে থাকতে হবে। কুড়ি কিলোমিটার দূরে একটা চৌকি আছে, খবর যদি কেউ দেয়। এখানে নেটওয়ার্কও নেই। আগে জায়গায় জায়াগায় সিআরপি ক্যাম্প ছিল, সেগুলোও প্রায় উঠে গেছে। তাদের গাড়ি নিয়মিত পেট্রোলিঙে থাকতো। গাড়ির ভেতরে আলোটা জ্বালিয়ে দেয় বাবলু। অন্ধকার নেমে গেছে, তার চোখে উদ্বেগ। মেয়েরা ফ্যাকাসে হয়ে বসে। একমাত্র দিশানীর উল্লাস,
    ‘ওয়াও, হোয়াট অ্যান অ্যাডভেঞ্চারাস নাইট ইট উড বি!’
    ‘অ্যাডভেঞ্চার বেরিয়ে যাবে দিদি, একপাল হাতি যদি বেরিয়ে আসে একটা গাড়িও আস্ত রাখবে না!’
    দিশানী কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিসফিস করে আবার বলে,
    ‘ওয়াও!’
    কাচের গায়ে কপাল ঠেকিয়ে স্মৃতিকণা অন্ধকার জঙ্গলটা দেখে। আদিম, অপার রহস্যের মতোই। একটা গান আসছে তার, গুনগুন করে। দিশানী শুনতে পেয়ে চেপে ধরে, উওয়ালি গানা! মেয়েরা চেপে ধরে,
    ‘গা স্মৃতি, গানটা গা।’
    ‘এটা হেব্বি জমাস তুই!’
    লাজুক হাসে সে। বাঁশির মতো গলায়, মেয়েরা তালি দিয়ে দিয়ে তাল দেয়।
    ‘ছৗটকারে কাদাম দারে
    দনাতে পিয়ো আলম রাগা
    ইঞ মাচে পিয়ো সাসাং ছৗডউই
    ইঞাঃ মনে পিয়ো হালে টালে!’
    গানটা মুখস্থ সবার। একসাথে আবার ধরে। শেষ লাইন গেয়ে সব হেসে ওঠে হাততালি দিয়ে।
    ‘বিয়ের গান?’
    ‘লগ্নভ্রষ্টা মেয়ে একা বসে গায়। উঠোনে কদম গাছ, মেয়েটি বলছে, চঞ্চল পিয়ো পাখি কেঁদো না, আমি লগ্নভ্রষ্টা, পিয়ো, তাই আমার মন যে বড় উদাস, ইঞাঃ মনে পিয়ো হালে টালে!’
    সবাই খিলখিল করে। ছোটবেলায় শেখা গান। মায়ের কাছে কি?গানের রেশ কাটতে আবার সবাই থম মেরে যায়। অজানা আশঙ্কা উঁকি দেয়। ড্রাইভার বাবলু হঠাৎ বলে ওঠে,
    ‘বাচ্চা মেয়েটার লাশটা ওরা জ্বালায়নি...’

    সন্ধে ৬.২৫
    জঙ্গল বলে হালকা শীতভাব। অনিকেত মিনি ট্রাকের গায়ে একটা পা পেছন করে ঠেসিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের আলো জঙ্গলের ঘন পাতা, ডালের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আসছে ক্রমে। বিরল অভিজ্ঞতা। ড্রাইভারকে দেখা যাচ্ছে না, খৈনি খুঁজতে গেছে কারো কাছে। গাড়িতে অনির্বাণ, সৈকত, তারা একটু ঘাবড়ে আছে। ঠিক ভয় নয়, বিরক্ত লাগে অনিকেতের। ক্লান্ত সে। সন্ধের আগে বাসায় ঢুকে যেতো, স্নান সেরে এক কাপ চা খেয়ে ঘুমতো ঘন্টাখানেক। ভেতরের গ্রামগুলোয় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প চলছে। উদয়াস্ত পরিশ্রম। নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছুই ঠিকমতো হয় না এ সময়।
    কিছু দূরে দুটো মশাল জ্বলছে। হাতি তাড়াতে যে ধরনের মশাল ব্যবহার করে এদিকের লোক। রাস্তায় আড়াআড়ি ফেলা দুটো গাছের গুঁড়ি। ওপাশে আরও কিছু গাড়ির লাইন। রাস্তাটা গাড়িওয়ালারা হাইওয়ের শর্টকাট হিসেবে ব্যবহার করে। সরু রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর উপায় থাকে না। জনাকয়েক সাঁওতাল যুবক গুঁড়ি দুটোর ওপর বসে আছে। একজন প্রৌঢ় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে রাস্তার ওপরেই। নেশা হয়েছে তার। মেয়েটির মা বিকেলের দিকে বডির কাছে বসে অদ্ভুত সুরেলা কান্নায় বুক চাপড়েছে। দেহটিকে পরে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। অনিকেত জানে, মানুষগুলির গোটা যাপনেই তাল আর সুর। আনন্দ, উদযাপন, শোক সবেতেই। কজন ট্রাক ড্রাইভার কথা চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো সাড়াশব্দ নেই। বৃক্ষের মতো অনড়, বাকরহিত। একজন কেউ এপাশ থেকে গলা চড়িয়েছে, তির-ধনুক হাতে যুবক সোজা তাক করতেই হুড়মুড় করে সব ঢুকে যায় গাড়ির ভেতর। কিছু গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখে।
    কেউ মোবাইলে ধরার চেষ্টা করে বারবার। হেঁচকি তোলার মতো চ্যাঁচায়, পুলিশ কই, পুলিশ?অস্থির পায়চারি করতে করতে প্রলাপ বকেন একজন,
    ‘হত অন্য দেশ, রাস্তায় গাড়ি আটকানো বেরিয়ে যেতো। এ হল ছোটলোকদের তোয়াজ করার দেশ। কোটায়-ফোটায় চান্স পেয়ে দিব্যি তো ডাক্তার প্রফেসর হচ্ছিস বাবা, তবু জঙ্গল ছাড়বি না, সাপ ইঁদুর মেরে খাবি, কোন গাড়ি মেরে গেছে শালারা সব গাড়িকেই সেটা ভাবছে! হড়, হড় আর বলে কাকে!’
    সিগারেটে টান দিয়ে রিমলেস চোখে একজন অনিকেতকে বলেন,
    ‘ডেভলপমেন্ট তো হচ্ছে এদিকে। নতুন রিসর্ট, বাংলোর প্রোজেক্ট আসছে। মাওইস্টরা সাফ। কিন্তু এসব চলতে থাকলে কেউ ইনভেস্টে রাজি হবে, বলুন?’
    অনিকেতের মনে হয় একবার বলে, হ্যাঁ, নতুন হোটেল-রিসর্ট, খানাপিনা,ফুর্তি, জঙ্গলবিহার আর আদিবাসী যুবতী সাপ্লাই! কিছু গাড়ি অসহিষ্ণু হয়ে বারংবার হর্ন দিতে থাকায় চিন্তাটা ছিঁড়ে যায়। শব্দে কান পাতা দায়। নিঃসাড় জঙ্গল বুঝি ধড়মড় করে জেগে ওঠে। রাস্তার ওপর শুয়ে থাকা প্রৌঢ় উঠে বসে। তার মুখের ওপর হেডলাইটের আলো। সারা মুখে কাঁচাপাকা খোঁচা দাড়ি। ময়লা খাটো ধুতির ওপর ছেঁড়া হাফশার্ট। উস্কোখুস্কো চুল, ঘোলাটে লাল চোখ। হঠাৎ সে মুখে হাত মেরে মেরে আবা আবা আবা আবা ধ্বনি বের করে। তীক্ষ্ম, তীব্র কুলকুলি অরণ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছড়িয়ে যায়। আদিম ডাক। অনিকেতের গা ছমছম করে ওঠে। মুহূর্তে থেমে যায় সমস্ত হর্ন। নিশ্চুপ। টলমল হাঁটুতে প্রৌঢ় গাছের একটা গুঁড়ির উপর উঠে দাঁড়ায়। ডান হাত তুলে তিরের ফলার মতো তর্জনী ওঠায়, চিৎকার করে, আলে নাওআরেনা বিচৌর লে কানা! বাকিরা সমর্থনে হো হো করে একসঙ্গে হাতের লাঠি সশব্দে ঠোকে মাটিতে। বিচার চাই! মূর্তিমান দম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা সর্পিল গাড়ির লাইন, একটা অজগর বুঝি, গিলে খেতে আসে প্রতিবার। তাদের বিরুদ্ধে দামামার মতো হুঙ্কার বেজে ওঠে!
    সন্ধে ৭.৩১
    জঙ্গল সুন্দরী হয়ে উঠেছে। ঘাড় উঁচিয়ে ঘুমের বড়ির মতো গোল সাদা চাঁদটাকে দেখেন, গাছেদের মাথা ছাড়িয়ে উদার আকাশ। বড় বড় শালপাতায় পিছলে যাচ্ছে আলো। এই প্রকৃতিকে দেখে বোঝেন কতো ফাঁকি থেকে যায় কষ্টকল্পনায়। দূরে কাঁসর সঙ্গতে মাদলের শব্দ। কাছেই আদিবাসী গ্রাম। অসীম বলেন,
    ‘গাড়ির ভেতরে চল, অনেক্ষণ বাইরে আছিস, শিশির পড়ছে।’
    ‘কী চাইছে ওরা?’
    ‘বিচার চাইছে, সেটা কী বোঝা যাচ্ছে না। ক্ষতিপূরণের দাবি করবে হয়তো।’
    ‘ঘাবড়ে গেছিস?’
    ‘লুটপাট শুরু করলে?’
    শুদ্ধ মনে মনে হাসেন। জীবন সম্পর্কে কেমন অবোধ আমরা, ভীতু, সর্বদা একটা ইনসিকিওরিটিতে আচ্ছন্ন ক্লাস! দূরে মশালের আলো। সভ্যতা চিরকাল হেয় করে এসেছে এদের, তাচ্ছিল্য। উন্নয়নের নামে জঙ্গল সাফ হচ্ছে, কাটছে পাহাড়, শুষে নিচ্ছে নদী। তাড়া খেয়ে পালাতে পালাতে কখনো রুখে দাঁড়াবার ইচ্ছে হয়েছে, কেন যাবো! এই জলজঙ্গলপাহাড়ের অধিকার তো আমার। এই মাটিতে জন্মেছি,বাতাসে শ্বাস নিয়েছি, এর ফলমূলশেকড়বাকড়ে জীবন ধারণ করেছি, কারো বাড়া ভাতে ছাই দিতে তো যাইনি! তবে কেন তোমরা এমন অসহ্য করে তুলছো জীবন আমাদের?
    ‘কী ভাবছিস?’
    ‘খাবার দাবার আছে কিছু?’
    ‘আছে। আচ্ছা এই আদিবাসীরা তো শুনি শান্তশিষ্ট। আপরাইজিং কিছু হয়েছে একসময়, তবু সাধারণভাবে কারো সাতেপাঁচে না থাকা লোক।’
    ‘অভিশাপ।’
    অসীম জিজ্ঞাসু মুখ তোলেন। শুদ্ধ বলেন,
    ‘সভ্যতার গোপন অভিশাপ।’
    রাত ১১.৩৬
    বাবলু স্টিয়ারিঙে মাথা রেখে ঝিমোয়। মেয়েরা জেগে। শতরূপা গাড়ির কাচে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। চলন্তিকা মেয়েদের গোল করে দাঁড় করিয়ে ছোট মতো ক্লাস নিয়েছেন। সাহস দিয়েছেন, আই নো অল অফ ইউ আর মাই ব্রেভ গার্লস!’ তিনি গাড়িতে ফিরে যাবার পর সবাই হামলে পড়েছে ফোনে। নেট নেই, টাওয়ার নেই, কিচ্ছু নেই। বাড়িতে একটা খবর কেউ দিতে পারছে না। দিশানী একবার বাইরে থেকে ঘুরে এসেছে। ব্রিজের তলায় জল বয়ে যায়। সে নেমে হালকা হয়ে হাতমুখ ধুয়ে এসেছে। বাকিদের বলেছে যেতে, কেউ সাহস পাচ্ছে না। বাবলু গার্ড করে সঙ্গে যেতে একেকজন ঝোপের আড়ালে ভয়ে ভয়ে পেচ্ছাপটা করে আসতে পেরেছে এই যা। শালিনী ফোন খুটখুট করতে করতে বলে,
    ‘ট্রিপটাই ইউজলেস, নমো নমো করে কটা সাইট ভিজিট, নাম কা বাস্তে নোট নেওয়া, হয়ে গেল আদিবাসী কালচার সন্ধান! ভোগান্তি না করিয়ে চালুন্তিকা কি প্র্যাক্টিকালে নম্বরটা দিয়ে দিতে পারতো না?’
    শালিনী চোখ বুজেই বলে, থেকে যা, টোটাল রিসার্চ করেই ফিরিস না হয়!
    ‘ও থাকবে, তবেই হয়েছে, ঘুমনোর সময় কোলবালিশ নেই বলে যা সিন করলো!’
    ‘থাকবি নাকি শালি, মকর পরবে খুঁজে পাবো তোকে, ব্লাউজ ছাড়া কাপড় পরে সাঁওতাল বরের সঙ্গে ঘুরছিস মেলায়!’
    ‘লাঞ্চে পিঁপড়ের ডিমের টক চেটেপুটে খাচ্ছিস!’
    তাদের থামাতে শালিনী চেঁচিয়ে ওঠে, উফফ শালা টাওয়ারও নেই!
    ‘কেন রে, শুভদীপ ফোনে না পেয়ে কি আইসিইউতে চলে গেছে!’
    একত্র হিহি হাসিতে স্টিয়ারিং থেকে মুখ তোলে বাবলু।
    ‘দিদিরা চুপ থাকো। ড্রাইভারদের সঙ্গে খুব গোলমাল হচ্ছে। সাঁওতালরা খেপে গেলে সমস্যায় পড়বে।’
    দিশানী হাত চেপে ধরে স্মৃতিকণার।
    ‘কণা, চল না আমরা কজন যাই ওদের কাছে, তুই বাতচিত করবি।’
    ‘আমি!’
    ‘আমরা তো ট্রাইবাল ল্যাঙ জানি না।’
    ‘ওরা বাঙলা বোঝে তো।’
    ‘নেহি, ওদের ল্যাঙে বললে খুশি হবে!’
    শালিনী ফোন থেকে মুখ না তুলে বলে, কেন স্মৃতি, সাঁওতালিতে বলতে তোর কীসে আটকায়?আফটার অল তুই তো ওই কম্যুনিটির! শতরূপা চোখ না খুলেই বলে, মেয়েরা,আমরা তবে কী শিখলাম? এতগুলো মেয়েকে গোটা রাত জঙ্গলে আটকে রাখাই আদিবাসী কালচার এটা খাতায় লিখতে হবে!
    স্মৃতিকণা হতভম্ব। সে দরজা খুলে বাইরে আসে। দমবন্ধ লাগছে গাড়ির ভেতরটা।
    ‘কোথায় যাবি?’
    ‘দেখি কথা বলে।’
    ‘আরে জোকিং ইয়ার, আ যা অন্দর!’
    স্মৃতিকণা দাঁড়ায় না। চাঁদের আলো নিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে ব্রিজের তলা দিয়ে। দুপাশে ঘন হিম জঙ্গল। এক দুটো গাড়ির হেডলাইট জ্বলছে এখনও। এখানে দাঁড়িয়ে তার কান্না পায়। কীসের কান্না সে চেপে রেখেছে বুকে এতদিন।
    ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল অনিকেত।
    ‘বাইরে আসবেন, সঙ্গে আনবেন তো কাউকে। কাজ হয়ে গেলে গাড়িতে ফিরে যান।’
    স্মৃতিকণা নিরুত্তর।
    ‘কী হলো?’
    ‘আমি দাঁড়িয়ে থাকলে আপনার কীসের অসুবিধে?’
    ‘কিন্তু দাঁড়িয়েই বা থাকবেন কেন?’
    ‘আমার বনের মাথায় চাঁদ দেখতে ভালো লাগছে, হয়েছে!’
    ‘ও আচ্ছা!’
    ‘আমি একবার যেতে চাই, ওই,ওদের কাছে।’
    ‘সেকি, কেন!’
    ‘কথা বলবো, যাবেন আমার সঙ্গে, আমি সাঁওতালি জানি, আমার নাম স্মৃতিকণা হেমব্রম।’
    কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে প্রায়শই পদবি এড়িয়ে গেছে এতকাল, অথবা অস্ফুটে, দ্বিধা নিয়ে বলেছে। দেখেছে পদবি বলার পর অন্যের মুখের ভাব বদলে যায়। তার পরিবার, শিক্ষা, সবই বাঙালি সমাজের রীতি মেনে। বাড়িতেও বাঙলা বলতে বলতে বড় হয়েছে। বড় বয়স পর্যন্ত সে তার পারিবারিক ইতিহাস জানতো না, তাকে তেমন করে জানানো হয়নি। খাদ্য দপ্তরের বড় অফিসার বাবা তার শিকড় মনে রাখতে চায়নি। স্মৃতিকণাও। নিজের নাম নিয়ে, মাতৃভাষা নিয়ে তার হীনমন্যতা। তবে এখন সে স্পষ্ট করে নাম বলে, লজ্জা নেই, গ্লানি ছাড়া। কাউকে পরোয়া না করেই এখন সে এই চন্দ্রালোকের আলোছায়ায় দাঁড়িয়ে কবিতা বলে,
    ‘কুচিত কুলহি, আখড়া সাঙ্গে, কুড়ি জিরা ডৗর
    আড়ি রুসি্‌ক, এনেচ সেরেঞ, অৗড়িগের মাচান
    দুঃকিঞি উয়হার, জিরা ডৗর, মেঃৎদা গেঃ জ্বর
    সুকি উয়হার, জিরা ডৗর, মেঃৎদা গেঃ জ্বর’
    সিগারেট ফেলে অনিকেত বলে, কিছু শব্দের মানে জানি, কিন্তু পুরোটা পারবো না।
    ‘সরু সরু রাস্তার মোড়ে মেয়েদের জমায়েত, ঝাঁকড়া জিরে গাছের মতো। যে নাচ জানে তার মনে আনন্দ ধরে না, সে খুশি ছড়িয়ে পড়ে। দুঃখে যেমন চোখের জল গড়িয়ে নামে, সুখের কথাতেও সে জল গড়ায়।’
    ‘বাহ!’
    ‘বারাহিতে ছান্দাকাতে সিমকো দোহাও তাকান কারা হিরে...কী চমৎকার ছন্দে মিল পাবেন এইটায়, যারা আমার সাঁঝসকালে প্রাণের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো!’
    ‘রবীন্দ্রনাথ, অদ্ভুত তো!’
    ‘কী জানেন, অবস্থাটা আমার ঘরকা না ঘাটকা। ভদ্রলোকের সমাজে গিয়ে বনের আদিবাসীদের কাছে ব্রাত্য আবার সেই ভদ্রলোকেরা একদিন আমার শিকড় চিনিয়ে দিয়ে বলে এটা তুই, এটাই আসলে তুই!’
    ভোর ৫.৪৪
    শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল অনিকেত। গোলমালের শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দ্রুত নেমে আসে। বাকি দুজনও উঠে বসেছে। জংলা পোশাক ফোর্স এলাকা ঘিরে নিয়েছে। লম্বা ফাইবার স্টিক হাতে তাড়া করছে সাঁওতালদের। বেপরোয়া লাঠি চলছে। ভোররাতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্স সঙ্গে নিয়ে পুলিশ অপারেশনে নেমেছে। জঙ্গলের ভেতর ছুটিয়ে ছুটিয়ে মারছে। কুয়াশা নামছে। তার ভেতর দিয়ে একজন ছুটে বেরিয়ে আসে। মাথা ফেটে সারা মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার। সিআরপির একটা দল গ্রামের দিকে চলে যায়। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা হয়, কেউ বাইরে থাকবেন না, সবাই যে যার গাড়িতে উঠুন, আধঘন্টার মধ্যে আমরা রাস্তা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। রাস্তায় পড়ে থাকা একজনের দুই পা ধরে ছেঁচড়ে গাড়িতে তুলছে সিআরপি। অনির্বাণ বলে ওঠে,
    ‘গ্রামের দিকে ফোর্স গেল যে রে!’
    ‘আমাদের গ্রামে ব্যাক করতে হবে, বহু ইনজিওরড!’
    গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল স্মৃতিকণা। অনিকেত হাত দেখায়।
    ‘চললেন?’
    ‘হ্যাঁ, আপনারা?’
    ‘গ্রামে ফিরছি আবার। ইয়ে, বলছি আপনার কনট্যাক্ট নম্বরটা দেবেন?’
    ‘কেন?’
    ‘এমনি, সাঁওতালি কবিতা শুনতে ইচ্ছে হলে!’
    কপট গাম্ভীর্য আনতে গিয়েও অমলিন হেসে ফেলে স্মৃতিকণা। রাইফেল কাঁধে জংলা পোশাক ছুটে যায়, হ্যান্ড মাইকে পুলিশের অল ক্লিয়ার, অল ক্লিয়ার! অনিকেত দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে ওঠে।
    সকাল ৬.১১
    সামনের মিনিট্রাক ধীরে এগোয়। পেছনে বিশ্রি হর্ন দিয়ে যাচ্ছে কটা গাড়ি। শালাদের এখন তাড়া লেগেছে, বিরক্ত মুখে লুকিং গ্লাস দেখে অনুপ। শুদ্ধ বেশ কাহিল। প্রেসারের বড়িটা দেওয়া হয়েছে। অসীমের চিন্তা এবার ভালোয় ভালোয় বাড়ি পৌঁছলে হয়। বাকি জন্মে আর আউটিঙ নয়।
    ‘একলব্যের গল্পটা জানিস, অসীম?’
    ‘মহাভারত?’
    ‘প্রবল সভ্যতা মাথা তুলতে দেয় না অন্ত্যজদের। দক্ষিণার নামে ঠিক সেই আঙুলটাই কাটবে, যেটা উঁচিয়ে সে এই সভ্যতাকে প্রশ্ন করে।’
    ‘লাঠিটা না চালালেই পারতো।’
    ‘চালাতেই হবে। রাষ্ট্র সর্বশক্তিমান, এরা কারা, গুটিকয় জংলী মানুষ, টিপে মেরে দেবে!’
    গাড়ি কিছুটা এগোতেই শুদ্ধ রাস্তার ওপর জমাট কালো রক্ত দেখতে পান। গতকালের অ্যাকসিডেন্ট। সমস্ত গাড়ি চলে যাবার পর নিঃসীম শূন্যতায় পড়ে থাকবে এই রক্ত। রোদে পুড়ে, রাতের হিমে ভিজে, বর্ষায় ধুয়ে যাবে একদিন। তবু দাগ থেকে যাবে, থেকে যায়। মহারণ্য তাকে বুকে ধরে রাখে চিরকাল। সিটে শরীর এলিয়ে চোখ বোজেন শুদ্ধ। বিড়বিড় করেন, লুঠতরাজ আর খুনখারাবি আগুন হা হা রব, আমার বুকের পাঁজর ভাঙা চরম অগৌরব, যখন আমি মড়ার মতো প্রায়, আমার দিন শুকিয়ে যায়, আর রাত্রি নিরুদ্দেশ, আমায় শোনাও, বোধহয় আমার অসুখ সেরে যাবে।

    …………………………………
    বাংলা কবিতাংশ-ব্রতী মুখোপাধ্যায়


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    অ-মৃত | হায়দারি মঞ্জিল থেকে | দুটি কবিতা | ক্যুও ভ্যাদিস | কি করবেন মাস্টারমশাই | ২০২২ এ পুজো বিষয়ক কয়েকটি লেখা | ক্ষত | এক গুচ্ছ কবিতা | অরন্ধন | শমীবৃক্ষের বুকের আগুন | তিনটি কবিতা | ধুলামুঠি | অনিমা দাশগুপ্তকে মনে পড়ে? | যে রূপ আশ্বিনের | এক্সাম পেপার | কুহক | প্রজাপতি প্রিমিয়াম | চিকিৎসা, সমাজ, দাসব্যবসা, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – টুকরো চিত্রে কলকাতা ও বাংলা | ভাস্কর্য | তিনটি কবিতা | স্বর্ণলতা | পাখি | অথ অহল্যা - গৌতম কথা | দুগ্গি এলো | আহ্লাদের কলিকাল | রুদালি টু ডট ও | অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো | প্রত্নতত্ত্বে তৃতীয় স্বর : প্রাচীন টেপ হাসানলু'র সমাধিগুলি | করমুক্ত | শারদ গুরুচণ্ডা৯ ২০২২ | একে একে নিভে গেছে সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমার আলো | মিষ্টিমহলের বদলটদল | নিজের শরীর নিজের অধিকার – পোশাক ও মেয়েদের আজকের দুই লড়াই | উমেশ, ইউসুফ এবং প্রাইম টাইম | কবিতাগুচ্ছ | উৎসব মনের | তিনটি অণুগল্প | বর্ডার পেরোলেই কলকাতা | রূপালি চাঁদ, সুমিতা সান্যাল আর চুণীলালের বৃত্তান্ত | দেবীপক্ষ ও অন্যান্য | দুটি সনেট | নদীর মানুষ | বৃংহণ | শ্যামাসংগীতের সাতকাহন | নবনীতার কয়েকদিন | ভিআইপির প্রতিমাদর্শন এবং.. | বেইজ্জত | পায়েসের বাটি | শারদ সম্মান | দুটি কবিতা | মালেক আব্দুর রহমান
  • ইস্পেশাল | ২৪ অক্টোবর ২০২২ | ১০৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:c5fc:c6a2:ec3b:166c | ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৩:০২513164
  • ভালো লাগলো। ভারী এবং ধারালো লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন