এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • এই স্বপ্ন, এই গন্তব্য!

    শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য
    ইস্পেশাল | উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৪৬৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • অতি প্রত্যূষে আমরা যাত্রা শুরু করিলাম, যখন এ দিংমণ্ডল দিবসের প্রথম সূর্যালোক দ্বারা প্রক্ষিপ্ত স্বর্ণাভ জলরঙে আবৃত হয় নাই। একটি ঘন কুয়াশার কৃষ্ণ আচ্ছাদন যখনও অর্ধ কম্পমান এ চরাচরে, সেই মুহূর্তটিই আমাদিগের যাত্রা আরম্ভের মাহেন্দ্রক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হইয়াছিল। গাঁও-এর অপরাপর যাহারা প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ, সকলেই এই মত জ্ঞাপন করিলেন যে অতি প্রত্যুষই শুভক্ষণ, যেখানে সময় পুণ্যাহর পলাশ। অনভিজ্ঞতায় দর্পী, তথাপি প্রস্তুত। এই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে উদ্‌যাপনীয় করিবার উদ্দেশ্যহেতু যেহেতু গীত রচনা বাঞ্ছনীয়, তথাপি এ স্থলে সংগীত দক্ষতার অভাবহেতু ভাবগম্ভীর ভাষ্য নির্মাণ আবশ্যিক হইয়া পড়িল।

    আমরা পাঁচজন, যাহাদের ভিতর আমি গাঁওবুড়া হইবার হেতু সর্বাপেক্ষা উত্তম অশ্বটি মিলিয়াছে। আমার পার্শ্বে চলিতেছে চানুয়া, অষ্টমবর্ষীয় বালক। দীর্ঘ পথশ্রমে সে অনভ্যস্ত বলিয়া আমার অশ্বের প্রায় সমগুণাবলির একটি অশ্ব দেওয়া হইয়াছে তাকে। আর চলিতেছে ধাতুরি—যাহার বয়ঃক্রম অনধিক তিন কুড়ি হইবেই, কুঞ্চিত লোল গণ্ডদেশ এবং দূরবর্তী বস্তু নিরীক্ষণকালে চক্ষুর উপর হস্ততালুকে পত্রাকারে মেলিয়া ধরা হইতে যাহা স্পষ্ট হইয়া উঠে। ধাতুরির অশ্বটি বেগবান, প্রৌঢ়তার আঁচড় পড়িয়াছে কুঞ্চিত চক্ষুর কোণায়। সর্বশেষে চলিয়াছে সারদাপ্রসাদ ও বুধনি। উহারা তরুণ, তদুপরি উহাদের অন্তস্থলে যে প্রণয়ের অন্তঃশীলা বহমান, তাহার যথাযথ পরিস্ফুটন হয়তোবা যাত্রাকালেই অবলোকন করিব। উহাদের দেহলতা সবুজ, উচ্ছ্বল। বুধনির চিক্কণ শ্যামল কাণ্ড বেষ্টন করিয়া যে হরিদ্রাভ শাড়িখানি উঠিয়াছে, ক্বচিৎ মলয় ঝাপটে তাহার ছোবল ধাতুরির সমক্ষে অক্ষয় পরিক্রমণ, যাহা সশরীরে আবির্ভূত। উহাদের অশ্বেরা তুলনায় বৃদ্ধ, তথাপি ভারাক্রান্ত অভিজ্ঞতার হস্তাক্ষর সুপ্রযুক্ত পক্ব মাংসপেশির ধীর ও সুঠাম ছন্দে, শান্ত গম্ভীর হ্রেষার কম্পনে। আমাদের প্রত্যেকের স্কন্ধের লাঠির অগ্রে বন্ধনীকৃত ঝুলির ভিতর খাদ্যাদি--মৎস্য অন্ন ও মিষ্টদ্রব্য। আমাদের মস্তকে পাগড়ি, যাহার উপর জলপাত্র, এমত কৌশলে উপবিষ্ট যাহাতে অমসৃণ অথবা অবতরণের পথেও উপচাইয়া পড়ে না। সম্মুখে দীর্ঘ পথশ্রম হেতুই এপ্রকার প্রস্তুতির সহিত আমরা যাত্রা শুরু করিয়াছিলাম। ইহাই গাঁওয়ের রীতি।

    বালক চানুয়া তাহার স্বভাবজাত ভীরুতা তথা যাত্রাপথের অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষণে ক্ষণে ক্রন্দনের সূত্রপাত করিতেছিল, আর আমি, গাঁওবুড়া, তাহার স্কন্ধে সান্ত্বনার হস্তস্থাপনপূর্বক পরিতোষসূচক বাক্য কহিতেছিলাম।

    “ডর লাগিছু গ! ইত্তে পথ! ই পথ মো কভু একলা পাড়ি দিইনি গ!”

    “ডর লাগিবার কী আছে বাপো? তুমার বাপ মা-ও কাল কি পরশুই আসিছে বট্যে। অনেকটুক পথ, তাই মো তুমাক লই বাইরলাম আগ থিকাই, নইলি পঁহুছিতি পঁহুছিতি হাঁফ গিলা যাইবেক।”

    “আর মোর কোলের বহিনটা? উ ত একলা থাকিবেক নাই!'

    “নাদান চেংড়া!” স্নেহের হাস্য দ্বারা চানুয়ার মস্তক বিধৌত করিতে চাহিলাম, “উয়াক কি একলা রেইখ্যে আসা যায়? উ ত আসবেক বট্যে। মোরা সকলে নাই পাড়ি দিব।”

    “নাই কিত্তে দূর?”

    “ইগম সেহেদ। উ যে সামনে ডুংরি দেখিছ, উ যে পাহাড়, ওইরম তিনখান ডুংরি আছেন। তিন পাহাড় পেরায়ে নাই। ইত্তে ভোর ভোর বাইরেছি, কেন যে পথ ভাঙিবার পিছে গোটা দিন যাইবেক।”

    শার্দুলবিক্রীড়িত ছন্দে দিবা অগ্রসর হইল, রাত্রভাগের অবসান সূচনা করিল নবীন তপন। উন্মুক্ত ভূমির অন্তে গাঢ় অরণ্যানি টিয়াপক্ষীর বর্ণ ধারণ করিতেছে। কঠিন মৃত্তিকা হইতে শিশিরকণা উবিয়া যাইতেছে, এ নভোমণ্ডলে অবসিত কুয়াশার তমিস্র জলবাষ্প আবির্ভূত করিয়াছে এক অপার শীতল। এ হিমবৎ প্রসন্নতা যেমন অনিবার শান্তি, চরাচর ব্যাপী নির্জনতার অবশেষ দাবি করিবার কিছুমাত্র রহিল না। সুদূরের নীচু পাহাড়, তাহার পাদদেশের ছায়াচ্ছন্ন অরণ্য, আমাদের পথিপার্শ্বে ঘনসন্নিবদ্ধ বংশারণ্য ও পিপুল বৃক্ষ হইতে হেঁটমুণ্ড ঊর্ধ্বপদ বাদুড় ঝুলিতেছে। আমরা দেখিলাম, একটি প্রকাণ্ড অজগর সর্পের করোটি নিতান্ত অনাদরে এলাইয়া আছে মহুয়া কাণ্ডের গাত্রে। ইহা অবলোকন করিয়া চানুয়ার ত্রাসসঞ্চার হইল, অস্ফুট কাতরোক্তি করিয়া চক্ষুর উপর হস্তস্থাপন করিল। ধাতুরি নীরব মানুষ, বয়ঃভার তাহাকে প্রাজ্ঞ ও শান্ত করিয়াছে। পশ্চাতের সারদাপ্রসাদ ও বুধনির ক্ষণে ক্ষণে চটুল হাস্য অথবা মৃদু বিশ্রম্ভালাপে কোনোরূপ চিত্তবিকার, যে এক রসসিক্ত সারিগান অভিনীত হইতেছে, এমৎ সম্ভাবনাতেও তাহার মনোজগতে ব্যত্যয় ঘটে নাই। অথবা বলপূর্বক উপেক্ষার ভান করিতেছিল। তথাপি চানুয়াকে দেখিয়া বৃদ্ধ ধাতুরি বিচলিত হইল। হ্যাট হ্যাট ধ্বনিতে তাহার প্রৌঢ় অশ্বকে তাড়না করিয়া চানুয়ার পার্শ্বে আসিল সে, এবং মৃদু হাস্যের সহিত প্রবোধবাক্য বর্ষিতে লাগিল, '”আরে বুরবক! পথমাঝে অজগর দেখলি পুণ্যি হয়। বাপ দাদারা সি কবে বল্যে গেছে!” সম্মতির আশায় চাহিল আমার দিকে, একটি রহস্যময় ভ্রূ-উত্তোলনবশত উহার মুখমণ্ডলে আমি লুপ্তবাসনার উচ্ছিষ্টমেঘ দেখিয়া শঙ্কিত হইলাম। তথাপি ধাতুরি যাহার পশ্চাতে আশীবিষন্যায় বুধনি একটি অচঞ্চল শিখা, তাহার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করিতেই হইল, “হ্যাঁ তো, পথে হলাহল ঠাওর করা শুভ আর কী।”

    “মোর ডর লাগিছু গ!” চানুয়া চক্ষু উন্মীলন করিল না।

    “কুছু ডর নাই বাপ! মোরা আছিত। কালকিই গাঁও-এর বাকিরা চল্যে আসবেক। উ যে ঠাউর কর, সামাং সেহেদ থিক্যে বোংগা উঠিছেক। বোংগা যখন মাথার উপর উঠবেক, মোরা দুই ডুংরি পেরায়ে যাব। তখন দেখবি, বীরে বীরে রাজগার ফুটছেন, পলাশ ফুটছেন, গোলগোলি ফুলে লাগছেন কঠিন রং। আর উয়ার পর, তিন দাগের পাহাড়। উ পেরালেই, শুধু জল। কালা বণ্ণের জল আর জল। গভীর নাইখাত। উয়ার উপারে সক্কলে খাড়া রইছে মোক পথ চাই। মোরা যাইলেই পরব শুরু হবেক।”

    “পরব কী?”

    “পরব হল, এই ধর আমোদ, নাচ গান। সোহরাইতে ঠাওর করিসনি, কেমন নাচ করে বিটিছেলারা?” ধাতুরির ফ্যাসা কণ্ঠে চঞ্চল জীবের কামজ্বর চিতাধূমচালিত চৈত্রের বিশুদ্ধ পাতার ন্যায় অন্তর্হিত হইবার পূর্বে যেরূপ অবশেষ রাখিয়া যায়, ধাতুরি সেমতো চক্ষু উন্মীলন করিয়া বুধনিকে অবলোকন করিল, সে দংশনে শীতপত্রের বিশুষ্কতা, ফলত নিষ্ফল—“এই, এই যে সারদাপ্রসাদ আর বুধনি, উয়াদের বাপলা হবেক সব্ব অগ্রে। উয়ারা বর বউ হবেক, গাঁও জুড়ে বসবেক ভোজ, উয়ার অন্তে আসবেক বারুনি পরব। কিত্তে মজা! মজাই মজা!” হাহাকার করিয়া বুড়া বাতাস ধাতুরির জিহ্বা চুম্বন করিল।

    মুখব্যাদানরত হাঁকাল করোটি আমাদের যাত্রাপথের দিকে নিষ্পলক স্থির, তাহাকে ছিন্ন বসনের ন্যায় ফেলিয়া অগ্রসর হইলাম। সারদাপ্রসাদ স্বভাবে তরল, তদুপরি বিবাহপ্রস্তাবে তাহার অন্তস্থ উচ্ছ্বাস ফেনিল মহুয়ার ন্যায় উদ্‌গিরণ হইতেছিল। সে গান ধরিল। তাহার ঈষৎ চেরা স্বরের ভাঙা সুর বিজন প্রান্তর মথিত করিয়া তুলিল। অরণ্যানি, প্রাচীন ভূমি, অলীক আকাশ ও হিম প্রতিবেশ নিস্পন্দ শ্রোতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হইলেও, তিন সত্য করিল। এ কীর্তনের ধ্বনিমধ্যে কোনো আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ছিল না, তৎসহ চেরা কণ্ঠে হাপড়াম গীত উচ্চারণের করুণ রেশ পত্রোচ্যুত শিশিরবিন্দুর ন্যায় স্তব্ধতা অনেকানেক কোলাহলকে জলদান করিয়া পুনরায় আত্মসাৎ করিয়াছে। ইহা প্রত্যক্ষ থাকুন যে বুধনির কৃষ্ণ বেত্রের ন্যায় দেহখণ্ডটি তাহার প্রণয়ীর ছবিলা গীতরসে নৃত্যাভিলাষী হইয়া উঠিয়াছিল, বৃদ্ধ অশ্ব যে কম্পনভার প্রত্যাখানবশত ডাকিয়া উঠিল ‘হেঃ!” চানুয়া পূর্বের ভীতি বিস্মৃত হইয়া হাসিয়া উঠিল। শিশুর সে হাস্যে ত্রিসন্ধ্যা এক হইয়া শান্তিলাভ করে, সমগ্র পরিবিশ্ব আবর্তিত হইতে থাকে ভিতর জুড়িয়া একটি নিখিল প্রণামে, তখনও চরাচরে শীতলতা নির্বাপিত হয় নাই, পিপুলবৃক্ষে নিদ্রা ছিল—এবম্প্রকার কলহাস্যে ধু ধু নির্জনতা কাঁপিতেছিল। কেবল বৈকল্য ঘটিল না ধাতুরির। সে চুটাপত্রের চুরোটে অগ্নিসংযোগ করতঃ ধূম উদ্‌গিরণ করিয়া আলস্য জৃম্ভণ ত্যাগ করিল। “গান রোখ বাপ্পো ! ডুংরি আসিছু। এই ক্ষণ হতেই ফুকারে তরং ছাড়লে দম হাঁকলাই ভেগ্যে যাবেক আরও জোর জোরসে।”

    “তুমার জ্বলন ধরিছু, নাই খুড়া?” রঙ্গবশত চক্ষু ঘুরাইয়া সারদাপ্রসাদ কহিল।

    “কই, জ্বলন?” ধাতুরির বিহ্বলতা তাহার কণ্ঠে, তদাপি শীতার্ত কুয়াশার ন্যায় মুখমণ্ডলের স্থবির তাহাকে অচেতন রাখিল, অথবা সারদাপ্রসাদের হাপড়াম গীত, যাহা পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে একটি নিবিড় প্রণতি, একটি বিনিষ্কম্প স্তব্ধতায় জাগরূক করিল ধাতুরির মনোবাসনাকে।

    “বুধনিকে তুমি বিয়া করতেক চাইছিল্যা! ঠিক কী না? চাওনি বল?” বখাটে বালভাষিত এমদ্বচন বুধনির অলজ্জ হাস্যকে একটি প্রকট দিল, অশ্বপৃষ্ঠে তাহার তনুদেহ ভাঙিয়া গলন্ত মোমের ন্যায় কৌতুক উদ্‌গিরণ হেতু স্বভাবময়ী প্রকৃতি তাহার আদিঘর, এরূপ সম্যক হইল। বুধনির এহেন হাস্যে, সারদাপ্রসাদের রূঢ় কৌতুকে ধাতুরির চক্ষু বিষ্ফোটিত হইল, কুঞ্চন আসিল লোল চর্মে, তাহার মৃৎশরীরে শ্বেতপদ্মকুসুমাদপি বাসনা জিহ্বা দ্বারা লেহন করিতেছে। সে অশ্ব থামাইল, অবতরণ করিয়া মস্তক হইতে নামাইয়া রাখিল জলপাত্র। অতঃপর সারদাপ্রসাদের অশ্বের লাগাম হস্তে লইয়া একটি বিষম ক্রোধ লেলিহান অগ্নিশিখায় বীজমন্ত্র ধারণ করিল। “নাম বেহেনচোদ! ইত্তে জাঁকাল সাহস তুর---বুধনি মোর বিটি যেমন, আজ তুর হাড্ডি ভাঙিবার লাগে—”

    সারদাপ্রসাদ কিঞ্চিত ত্রস্ত, এহেন অগ্ন্যুৎপাত সম্যকধাবন সত্ত্বেও বর্বর শোণিত নৃত্য করিয়া উঠিল তাহার শিরা উপশিরায়। বুধনি তাহার হস্ত চাপিয়া শঙ্কাকুটিল স্বরে কহিল, “নিচেক না নাম। বুড়া পাগল, মেইর‍্যে ফেলবেক।” কিন্তু সে শঙ্কায় কৌতুক নিহিত। সারদাপ্রসাদ সে হস্ত অগ্রাহ্য করিল, তাহার দেহ ধারণ করিয়াছে তরুণের প্রতিরোধ। “না-ফল হুমকি না দাও খুড়া। বেশি সাধুবাবার ভড়ং না ধরো। গেল বার পরবের আগের দিন ছুপ্যে ছুপ্যে বুধনির সিনান তুমি দেখনি? ছাতিতে হাত রেখ্যে বলো খুড়া,” এ পর্যায়ে সারদার দেহ কম্পিত হইল, অমোঘ ঋষিবাক্য উচ্চারণে যেমত উদ্‌গীর্ণ হয় পুষ্পরাজি, রোমসকল হরষিত হয়, অন্তরে অনির্বাণ সুপ্তি ভাঙিয়া জাগরূক হয় চেতনা—তথাপি সারদা থামিল না, “মোর আসে না যায় খুড়া। তুমি দেখবেক তুমার পাগলামি। উয়াতে বুধনিরও লাজ নাই। গাঁও পরগনা দুয়ো দুয়ো করবেক তুমাকেই। কিন্তু এখন সাধুবাবা হও কেন? ইত্তে চ্যাং ব্যাঙ বুলি কীসের? মারবেক? গায়ে হাত তোলো, উ হাত গেঁড়ে দিব মাটিত।” লম্ফ দিয়া অশ্বপৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিল। মেদিনী কাঁপিয়া উঠিল কিন্তু সারদার পদভারে নহে, আপন বক্ষ হইতে আদিমতা উজ্জীবিত হস্তখানি উঠাইয়া সমর-আহ্বান ভঙিতে, যে বৃংহণ আপনার ইতিহাসে বারে বারে প্রত্যক্ষ করত রোমাঞ্চে শিহরিত ধরণি। তথাপি আমি উত্তেজিত হইলাম না। সারদা ও ধাতুরির দ্বৈরথ এতই পুরাতন, বুধনি যাহার আদি ও সূত্র, যে সম্ভবতার সমুখে কোনোরূপ অস্পষ্টতাই আবিষ্ট রহিবে না। চানুয়া শিহরিত চক্ষে আমা পানে চাহিল। আমি মৃদু হাস্য করিলাম আবার, “রুখে যাবে। ইয়াকে বলে রঙ্গ। জবর রঙ্গ বাপ্পো!”

    সারদাপ্রসাদ এবং ধাতুরির মল্লযুদ্ধ আকর্ষণীয় আমোদ বটে, এমনকি বুধনিও আরোপিত ত্রাসের অঙ্কনশিল্প তাহার মুখমণ্ডলে পাউডারের ন্যায় প্রসাধিত করিয়া অকারণ পুলকে অশ্বপৃষ্ঠে কম্পিত—যে তাহার পুরুষ, ও যাহার নিকট সে অনাঘ্রাত, এ দ্বৈরথ তাহাকে সজীব পুষ্পের সবুজতা প্রদান করে। তথাপি কাল বহমান, তদুপরি পথশ্রমে আমি শ্রান্ত, তাই কণ্ঠ ছাড়িলাম, “এ ধাতুরি, তুয়ার কি মাথাখান গেছে গিয়া? সারদা নাদান চেংড়া, কী বলতেক কী বলছে, আর তু হাঁকমার করবি? ই হতে কতখান রাস্তা বাকি, ঠাওর নাই তুর?”

    সম্মুখে সারদা একটি ভয়াল ব্যাঘ্র, তথাপি পশ্চাৎ ফিরিয়া ধাতুরির ক্রুদ্ধকণ্ঠে আদিম উৎরোল, “ফয়সালা লাগে! বহুতদিন সয়ে গিয়াছু ই অকমান হে!” বৃদ্ধ হাহাকার আমার কর্ণে শীতার্ত শোন নদীর ন্যায় প্রতিভাত হয়।

    “হবেক। নাই পেরাই আগে। মাঝি-পরগনা সালিশি করবেক। আর সারদা, জবান সামাল দে! বাপ দাদার ইজ্জত যদি না দাও, তুমার কুথু যাওয়া না চলবে আর কী। ইহাত থাকতে হবেক।”

    অরণ্য অধ্যুষিত বিজন প্রান্তরে একেলা রহিবার অর্থ সারদার অবগত। সত্যকারের ত্রাস ফুটিয়া উঠিল তাহার মুখমণ্ডলে। তবুও দুর্মর জিদবশত সে কহিল, “আর বুড়া যে বুধনির সিনান দেখ্যে?” ভাঙিবে, তবু মচকাইবে না, এমত বিকারগ্রস্ততা তাহার স্নায়ুকে পিঙ্গল বর্ণ প্রদান করিয়াছে।

    “তু কি ইহাতই লুট্যে থাকতেক চাস? না আগু করতেক চাস?” কঠিন কণ্ঠে কহিলাম আমি।

    সারদা মস্তক অবনত করিল। ধাতুরি পিছাইয়া আসিল দুই পদ। ইহা যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত। বুধনি কপট হাস্যসহিত বলিল, “আ রে মরদ!”

    আমি রোষকষায়িত নয়নে বুধনির দিকে চাহিতে নিভিয়া গেল সে। দন্তঘর্ষণ করতঃ মৃদস্বরে কহিলাম, “ছিনাল ছুকরি!”

    প্রথম ও দ্বিতীয় পাহাড় নির্বিঘ্নে অতিক্রম করিলাম। তখন দ্বিপ্রহর নিখিল মণ্ডলে একটি হরিৎক্ষেত্রের আখ্যান নির্মাণ আনিল। অরণ্যমধ্যে প্রহরাবৎ দণ্ডায়মান বাদাম, কাপাস কি শিরীষ বৃক্ষরা মস্তকোপরি দিকু-দের শৌখিন ছত্রের ন্যায় আচ্ছাদন রচনা করিয়াছে। নির্জন বনমধ্যে লুক্কায়িত কোনো প্রস্রবণ হইতে অবিশ্রাম জলপতন ঝিরিঝিরি ধ্বনিতে কর্ণপটহ বিদারিত হওনের ইস্তক বিলাপের, যন্ত্রণার, ক্রন্দনের বহু ইতিহাস ঝরিয়া গেল। যে পথে সহস্র বৎসর ধরিয়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা পদসঞ্চালন করিয়াছেন, তাহার স্রোতবিকার তপনালোকে একটি বৃত্ত—এরূপ বোধ যে ইহা যেন আমরাই, যাহাদের কালপ্রতিমা এই ঘন অরণ্যানিতে সহস্র যুগ সন্তরণ করিয়াছে, আমরাই আমাদের মারাংবুরু, এ স্পন্দনশীল সত্য আমাদের চেতনাকে অভিভূত করিল। এমনকি যে ধাতুরি গর্জশীল, যে সারদাপ্রসাদ স্ফুরিত ও যে বুধনি আছাড়িপিছাড়ি, উহারাও স্তব্ধতাকে উপহাস করিল না। নীরবে খাদ্যবস্তু গলাধঃকরণ করিলাম। পথশ্রম ও হিম রৌদ্র চানুয়ার শিশুহৃদয়কে অবসিত করিয়াছে। শূন্য হইয়াছে তাহার জলপাত্রও। সংগ্রহের তৃষ্ণাবারি তাহার দিকে আগাইয়া দিলাম, “নাও। আর বেশিদূর নাই।”

    “নাই পেরাব কী করে?” চানুয়া প্রশ্ন করিল।

    “জানি না। কিস্তি থাকবে মন নেয়। কিস্তি দেখিছ? নাইয়ের ছাতিতে ভেস্যে থাকে। নৌকা। তবে গণ্ডা গণ্ডা তারাদের সময়ের আগে, যে কালে পুরা দুনিয়া জুড়ে আমাদের এক রাজা ছিল, সেই কালে নাকি নাইয়ের ধারে চরে বেড়াতেন সারি সারি বুনা মোষ। বুনা মোষদের দেবতা উয়াদের চৌকি দিতেন নাইঘাটে বস্যে। সেই কালে নাই পেরাতে চাইলে মোষের পিঠৎ বাইতে হত। মোর বাপদাদা ই কাহানি করে গেছে। কিন্তুক ইসবই বুড়া মানুষের খোয়াব, মনে নেয়।”

    “সি দেবতাক কেমন দেখতেক?”

    “শুনছি সাতহাত খাড়া। গভীর কালা উয়ার গায়ের বণ্ণ। মাথায় দুটা শিং আছে। চোখ জ্বলজ্বল করে হড়কা আঁধারে।”

    “সেতা-র মত?”

    অন্তঃস্থলে এক বৃহদাকার কৃষ্ণবর্ণ সারমেয়চিত্র কল্পনা করিয়া এ বিজন অরণ্যে বিভীষিকা সঞ্চার হইল, কেন জানি না। মুখে বলিলাম, “হ্যাঁ, মোক গাঁওতে সেতা-কো কত টহল দেন, আঁধারকালে ডাকু আসলেক হাঁকমার ছাড়েন। চোখ জ্বলে, তাই তো চৌকি দিত্যে পারেন অমন!”

    ক্রমে অপরাহ্ণ ভঙ্গুর হইয়া স্থাবর ও জঙ্গমে ফলসার ন্যায় মেঘবর্ণ ধারণ করিল। আমরা কেহই কোনোরূপ ধ্বনি করি নাই, বাক্যবিনিময়ও না। এক মহৎ ও বিশাল যাত্রাপথ, যাহা আমাদের পূর্বপুরুষ, অতিক্রম করিবার দায় আমাদের স্তব্ধ ও ভারী করিয়াছিল। মস্তকোপরি বিশাল পাহাড়, তাহাদের উপত্যকা ঘেরিয়া প্রস্তরগাত্র লেহন করে হিংস্র শ্বাপদ, কাকচক্ষু কালো হ্রদের জলে বিষধর সর্প নিশ্বাস ফেলে, এরূপ ভূভাগে আমাদের রহস্যময় পরিক্রমণ আবেগ সঞ্চারী, আপনার বদ্ধ গাঁওজীবন ও স্থবির লইয়া যে মহা উল্লাসে ক্রীড়ারত, ফলত অভিভাবনা সঞ্চার অতীব স্বাভাবিক। ধাতুরি চক্ষু ঘুরাইয়া মুখব্যাদান করিতেছে সারদার দিকে, তাহার পূর্বের প্রাজ্ঞভাব নিশ্চিহ্ন, কিন্তু তাহার কণ্ঠেও ধ্বনি নাই। সারদা নিশ্চুপ, বুধনিও ঝিমাইয়া পড়িয়াছে যেন। একটি সংকীর্ণ গিরিপথ বাহিয়া তৃতীয় পাহাড়ে আরোহণের পূর্বে বুধনির অশ্ব ভূপতিত হইল। সম্মুখের পদদ্বয় ভাঙিয়া করুণ নয়নে চাহিল, একটি বিন্দু অশ্রুতে প্রতিবিম্বিত হইল আকাশ ও পৃথ্বী। বুধনি শিহরিয়া অশ্বপার্শ্বে উপবিষ্ট হইবার উপক্রম করিতে আমি তাহার হস্ত ধরিলাম, “পিছু না চাও হে। ইয়ার এটুকখানিই যাত্রা ছিল।”

    “এমন ধারা বিছায়ে থাকবে?” অসহায় অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বুধনি চাহিল, যাহাতে যুক্তি কুসুমাদপি কোমল।

    “হ্যাঁ। এমন ধারাই মরণ হবে। ইয়াদের আর ডাক দিতা নাই।” সারদা আগাইয়া আসিল। বুধনিকে নিজ অশ্বে লইয়া তাহার পার্শ্বে দণ্ডায়মান হইল, যেন বা কিয়ৎ গর্বভরে। ধাতুরির চক্ষে আমি অপস্রিয়মাণ অপরাহ্ণ দেখিলাম, দেখিলাম সন্ধ্যার আগমনী। আমরা আগাইলাম, একেলা শয়নরত অশ্ব ছায়াচ্ছন্ন উপত্যকায় সজল নয়নে তাকাইয়া রহিল আমাদের দিকে। উহাকে প্রহরা দিবে নক্ষত্রখচিত সন্ধ্যালোক, স্থির হ্রদ, খাঁ খাঁ গিরিখাত, আদিম মলয়। বুধনি ফোঁপাইতেছিল, চানুয়াও। সারদা অশ্বপার্শে পদচালনাকালে বুধনির হস্ত ধরিল। সেদিকে চাহিয়া একটি বিলোল শ্বাস ধাতুরির বক্ষ ঠেলিয়া হাপরের ন্যায় ঊর্ধ্বে আরোহণ করিল, যাহার ভিতরে গোধূলির অবসাদ, দূরাগত শঙ্খধ্বনির মায়া ছিল।

    তৃতীয় পাহাড়ের উপর উঠিয়া আমরা নিস্পন্দ হইলাম। সুউচ্চ গৈরিক শিখরের ছায়া নিম্নের চলমান অন্ধকার স্রোতধারার উপর বিস্তৃত হইয়াছে। অবরোহণেই নদী, এলাইয়া আছে পাহাড়ের পাদদেশ বিধৌত করিয়া। সেই আদি-অন্তহীন গভীরতাকে চাক্ষুষ করিয়া আপনার মোহ অহংকার বিগত হয়, এ সৃষ্টির রেখা যেন বা শিশু-আলিঙ্গনের সরলতায়, আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে একটি অবসান প্রতিভাত হইতেছিল। তখন অন্ধকার আকাশের গাত্রে অনেকানেক বাদুড় উড়িল। উহাদের দিকে চাহিয়া ধাতুরি ভাবিল ঈশ্বর, সারদা ভাবিল সময়, বুধনি ভাবিল যৌবন। আমি বলিলাম, “ই স্থান থিক্যা অশ্বগুলি ছেইড়্যে দিতে হবেক। পায়দল যাতি হবেক। ই দস্তুর আছে।”

    নির্জন অশ্বেরা পাহাড়গাত্রে ঘাস খাইতে লাগিল, চন্দ্রালোক তাহাদের বিষণ্ণ শরীর ঘেরিয়া মায়াব্যূহ রচনা করিল, কিন্তু আমরা পশ্চাৎ ফিরিলাম না। সকলে ধীরে ধীরে অবরোহণ করিলাম। চানুয়া আমার স্কন্ধে ছিল, কারণ শ্রান্তিতে তাহার দেহ লুটাইয়া আসিয়াছিল ও চক্ষে নিদ্রা।

    নদীপার্শ্বে চরিতেছে বুনা মহিষের দল। তাহাদের রোমরাজি ইতস্তত মলয়প্রবাহে শিহরিত, বঙ্কিম শৃঙ্গে চন্দ্রপ্রভার স্বাক্ষর। মাথার উপরে বাদুড়গুচ্ছ, আর সম্মুখে ভয়াল অজগরের ন্যায় শরীর বিছাইয়া কালো নদী। একটি সর্পের খোলস নিতান্ত অনাদরে ভূপতিত, কেহ উহাকে কুড়াইয়া লইবে না। আমরা নদীমুখে আসিলাম, ইহা অবধিই যাত্রা ছিল, কারণ আপনার ছায়া নদীচরে বিস্তৃত। আর সেই ক্ষণে, সেই গম্ভীর যাম মথিত হইয়া চর বাহিয়া উঠিয়া আসিলেন বুনা মহিষের দেবতা। তাঁহার মুখ অবলোকন করা যায় না অন্ধকারে, কেবল মস্তকোপরি শৃঙ্গদ্বয় উষ্ণীষরূপ প্রতীয়মান। তাঁহার দীর্ঘ দেহ, গভীর কৃষ্ণবর্ণ ও জাজ্বল্যমান নয়নরাজি অবলোকন করিয়া চানুয়া আমার হস্ত চাপিয়া ধরিল। বুধনি যাইল সারদাপ্রসাদের অন্তরালে। শুধু ধাতুরির বৈকল্য হইল না। দেবতা আমাদের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন, পাহাড়ের শিখরে তাঁহার ছায়া পতিত হইল। আমি অগ্রসর হইলাম।

    “গাঁও বড়াধুন। মুলক সোনাহাটু, রাঁচি। মু, গাঁওবুড়া, শুক্রা মুণ্ডা।”

    দেবতা নীরবে আমাদের অবলোকন করিতেছিলেন। সারদাপ্রসাদ অস্বস্তিভরে নিজ গাত্র ঘর্ষণ করিতে লাগিল। তাহার স্কন্ধ খামচাইয়া আছে বুধনি, ভীত মার্জারীর ন্যায় যাহার নয়নে জিরেন রসের হিম আসিল।

    “একখানি পুরা দিন লাগছে আসতেক। ই ছোঁড়া চানুয়া, এলাই পড়ছেক বটে। উয়ার বাপ মা আসবেক কাল কি পরশু। আর সক্কলে আসবেক। গোটা গাঁও। আর দেরি নাই। মড়ক ছড়িয়ে পড়ছেক আর কী। সেহেদ সেহেদ মড়ক, গাঁও কে গাঁও উজাড় হইছু। মোদের যাত্রার পটখানি এতক্ষণে আঁকা হইছু মোদের কুঁড়েঘরগুলার দিবারগুলায়।” কিঞ্চিত বিহ্বলভাব আমার কণ্ঠকে অপ্রস্তুত করিয়া তুলিল, অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত অশ্রু, সমাধিসম্ভাবনায় যাহার অস্তিত্ব, জন্ম যাহার শূন্যতায়—তথাপি আপনাকে বলপূর্বক সংযত করিলাম, বিমূঢ় চেতনাকে কৃতসংকল্প করিবার নিমিত্তমাত্রই ইহা, অন্য কিছু নহে—“এই কালে মোরা নাই পেরাব। উ পারে খাড়াই আছে সক্কলে।”

    দেবতা পিছু ফিরিলেন। এই ক্ষণে, সূচিভেদ্য অন্ধকার শলাকার ন্যায় ফুঁড়িয়া আমরা দেখিতে পাইলাম, নদীর অপর ধারে সমবেত হইয়াছেন নক্ষত্রনিচয়। আমার পিতৃদেব বুধন মুণ্ডা, তস্য পিতা অর্জুন মুণ্ডা, তস্য মাতা কুন্তা মুণ্ডা, তস্য তস্য… এ কালবিশ্বের আদি হইতে সূচনা ইস্তক আমাদের যত যত পূর্বপুরুষ এ যাত্রাপথ অতিক্রম করিয়া নদীর অপর পারে গিয়াছেন, সেই অর্বুদ নির্বুদ পরিমাণ প্রাণসকল সমবেত হইয়াছেন আমাদের অভ্যর্থনাহেতু। নিশ্চুপে সহস্র প্রেতদেহ প্রতীক্ষমাণ। যাহা মৃত্যু, আর মৃত্যু-পরবর্তী যাহা অপরপ্রান্তের জীবন, এই দুইয়ের মধ্যবর্তী পরিসরের পথটুকু অতিক্রম করিয়া আসিলাম আমরা যে ছায়াশরীরেরা, তাহাদের উদ্‌যাপন হইবে। আমরা সেস্থানে যাইবার পর প্রতীক্ষা করিব চানুয়ার পিতা মাতা, তাহার ক্রোড়ের ভগিনীটির। অপেক্ষা রহিবে বুধনির ভ্রাতা ও ভগিনীদের। ধাতুরির পুত্রকন্যার। এইস্থানে সাক্ষাৎ হইবে সবার। মড়ক কাহাকেও নিস্তার দেয় না।

    বুধনি নদীর অপর পারে তাকাইয়া অস্ফুটে রোদন করিয়া উঠিল, “কাকা গ!”

    দেবতার নিঃশব্দ হস্তসঞ্চালনে আগাইয়া আসিল পাঁচটি মহিষ। করুণ শিশির তাহাদের অঙ্গে চন্দনের ন্যায় সপ্রভা লেপন করিয়াছে। নদীর জলকে অকস্মাৎ ভ্রম হইল যেন বা সুড়ঙ্গপথ। বাদুড়ের দল এখন চক্রাকারে আবর্তন করিতেছে মস্তকের ঠিক ঊর্ধ্বেই। এ হিমাভ অবকাশে কোথাও টুপটুপে শান্তির একটি কণাও ছলকিয়া উঠিল না।


    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক

    পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ৩৪৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তন্বী হালদার | 2409:4060:187:855a:56e1:e242:1523:85cd | ০১ নভেম্বর ২০২০ ১৯:২০99528
  • শাক্যজিৎ এর লেখা আমার সবসময় ভারো লাগে। এ গল্পটা আদিম দ্যোতোনার সঙ্গে সহজ সত্যকে তুলে ধরেছেন যেন লেখক

  • কুশান | 45.249.81.185 | ০২ নভেম্বর ২০২০ ০২:৫৬99545
  • দুটো পরস্পরধর্মী ভাষা, অর্থাৎ, একটি সাধু ও অন্যটি লোকভাষা। এই মিশেল হিসাবে লেখাটা নতুন।


    আমার ধারণায়, লেখাটা আরও খুলত, যদি গাঁওবুড়োর মুখে উত্তম পুরুষের ভাষ্য না দেখানো হতো। অর্থাৎ, লেখক ন্যারেট করছেন, গাঁওবুড়ো আরেকটা চরিত্র। 

  • শুভ্র | 103.60.219.94 | ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০০:০০99577
  • শাক্যজিতের এমন লেখনী নতুন,সমসাময়িকতাকে ধরার যে অনবদ্য কৌশল ওর রপ্ত তাতে নতুন মাত্রা দেবে সন্দেহ নেই।  

  • অমর মিত্র | 45.250.245.89 | ০৫ নভেম্বর ২০২০ ১৩:১৫99660
  • অসাধারণ লিখেছেন। অপূর্ব গদ্যভাষা। পড়ে আবিষ্ট হলাম।  এই গল্প বহুদিন মনে থাকবে।   

  • অনিল ঘোষ | 2409:4061:495:3438::2488:b1 | ০৬ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩৮99694
  •  শাক্যজিৎ-এর গল্প খুব বেশি পড়িনি, এই গল্পটা পড়তে পড়তে গদ্যভাষার মায়া জাদু আবিষ্ট করে রাখল অনেকক্ষণ। একটা ভিন্ন জগতে যেন সফর করে এলাম।  খুব ভালো লাগল

  • i | 220.245.64.27 | ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০২:৫৭99740
  • আজকের অতিমারী, মৃত্যু র ক্যানভাসে কমলকুমারের গদ্যভাষার সার্থক প্রয়োগ । বিভূতিভূষণও সম্ভবত- মোহনপুরা ফরেস্ট, গনু মাহাতো, টাড়বাঁরো উঁকি দিয়ে যায়-

    অন্যরকম উদ্যোগ। খুব অন্যরকম।

    ভালো লেগেছে তো বটেই।

  • অমিতাভ রায় | 42.111.11.156 | ০৮ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৩৪99767
  • অন্য শৈলীতে সুন্দর সৃজন। পাউডার শব্দটি ছন্দ পতন ঘটিয়ে দিয়েছে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন