এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • বাঙালি কবে থেকে 'ব্যবসা বিমুখ' ?

    দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
    ইস্পেশাল | উৎসব | ১৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩৩১৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • বাঙালির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথম যে বিদেশীরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বর্ধিষ্ণু বাংলার বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে গ্রামে ব্যবসা করতে আসে, তারা হল পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা বাংলায় এসেছিল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তারও বছর কুড়ি আগে উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করে এদেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল ভাস্কো-ডা-গামা। যদিও এর অনেককাল আগে থেকেই বাংলার বণিকেরা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে। তা হলে বাঙালির ব্যবসার বিমুখতার কথাটা চালু হলো কবে?

    মোটামুটি ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কথাটার সূত্রপাত অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে। এর প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের কুচক্র। বাঙালি বণিকের জয় গান শোনা গিয়েছিল গুপ্ত যুগেরও আগে, ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকালে, অর্থাৎ ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়ে। সমুদ্রবন্দর তাম্রলিপ্তের রমরমা তারও আগে। কালিদাস, পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য, মনসামঙ্গল, কবিকঙ্কণ, ডাক ও খনার বচনে বাণিজ্যনিপুণ বাঙালির জয় গান শোনা গেছে। সবই তো আর কবির কল্পনা নয়। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, বাঙালি কোনোকালেই ব্যবসাবিমুখ, অলস বা ফাঁকিবাজ ছিলনা। ফা-হিয়েন এর লেখা থেকে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত থেকে ১৪ দিনের পথে সিংহল পৌঁছে যেত বাঙালি বণিকের দল। মুক্ত ব্যবসায়ী বণিকেরা, তেজপাতা পিপুল মসলিনের সওদাগরেরা এই বন্দর থেকেই বিদেশ রওনা হতেন। পান সুপারি ও নারকেলের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তখন থেকেই 'সোনার বাংলা' কথাটা চালু। সোনার বাংলা এমনি এমনি বিনা পরিশ্রমে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে বিদেশীরা বিনা কারণে আসেনি। ‘সোনার বাংলা’র কথা তারা জেনেছিল বাংলার বণিকদের কাছ থেকেই।

    সপ্তদশ শতকের মধ্য কাল থেকে বিদেশি শাসনের কুচক্রে তিল তিল করে সোনার বাংলাকে ছারখার করে শ্মশানে পরিণত করেছে। রপ্তানির মূল দ্রব্যগুলি কে ধীরেধীরে নিঃশেষ ও নষ্ট করে বাঙালিকে ধনে প্রাণে লুট করে নিয়ে গেছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিক থেকে বাংলায় ব্যবসা করতে আসা বিদেশীরা অর্থাৎ পারশি, আরবি, পাঠান, আফগান ও ইউরোপীয় শাসকবৃন্দ বাংলার বহির্বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা থেকে বাঙালিকে মুছে দিতে চক্রান্ত করে। অবশেষে ১৮৫৭ তে পলাশীর পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ সফল হতে পেরেছিল। শুধু বাঙালি নয়, অতীতে ভারতীয়রাই ইতিহাস রচনায় বিশ্বাসী ছিল না। ফলে বিদেশি, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার বিকৃত ইতিহাস পড়েই আমাদের জানতে হয় বাংলা বা ভারতের অতীত ইতিহাস। সঠিক ইতিহাস আমাদের জানা হয়ে ওঠেনা। সংস্কৃত সাহিত্যের বই থেকেই জেনে নিতে হয় বাঙালির গৌরব গাথা। পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামচরিতম্‌' গ্রন্থে সেইসময়ের বাঙালির ব্যবসা বাণিজ্যের গৌরব কথা উল্লেখ আছে। ওই সময় বারেন্দ্র থেকে হিমালয় পেরিয়ে স্থল নেপাল, সিকিম ও চীন দেশের সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। বারেন্দ্র ভূমিতে রামাবতী নামে এক বাণিজ্য-শহরের সপ্রশংস বর্ণনা ছিল। উল্লেখ ছিল বাঙালির সমুদ্র-বাণিজ্যেরও। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বাংলার রেশম চাষের উল্লেখ রয়েছে। কৌটিল্যের মতে বাংলার রেশম চাষ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের পূর্ব থেকেই ছিল। গুপ্ত যুগের দুই পরাক্রান্ত রাজা সমুদ্রগুপ্ত ও কুমার গুপ্তর সময় বাণিজ্যের খ্যাতি চরমে উঠেছিল। তাম্রলিপ্তের খ্যাতি তখন থেকেই। ওই বন্দরে বিদেশী জাহাজের ভিড় লেগেই থাকত। তারা নিয়ে যেত রেশম, মসলিন, তেজপাতা, পিপূল প্রভৃতি দ্রব্য। গুপ্ত যুগেই হিস্পলিস নামে এক গ্রিক নাবিক ‘অনুকূল বাতাসে’ ভেসে উপকূল দিয়ে পশ্চিম ভারতবর্ষের তীরে এসে পৌঁছেছিলেন। এই অনুকূল বাতাসই হল ‘মৌসুমী বায়ু’। এই মৌসুমী বায়ু ভারত সাগরে যেভাবে প্রবাহিত হয়, অন্য কোথাও তেমন ভাবে হয় না। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াত সহায়ক হত এই বায়ুপ্রবাহ। ভারতের বণিকেরা এই বাতাসকে চিনত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। ফলে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভারত থেকে বণিকদের জাহাজগুলি চলে যেত আবার ঠিক নির্দিষ্ট সময়ে বাণিজ্য করে ফিরেও আসত। এর অধিকাংশ জাহাজই ছিল বাঙালি বণিকদের। গুপ্ত যুগে বাঙালির নৌযানগুলিও বিপুল উন্নতি করেছিল। দীর্ঘিকা, লোলা, প্লাবিনী, ধারিণী, বেগিনী, ঊর্ধা, মন্থরা নামের জলযান গুলির নামকরণ করা হয়েছিল দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা অনুযায়ী। পরবর্তী সময়ে দেশের রাজারা ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য হাট ও বাজারেরও উন্নতির দিকে নজর দিয়েছিলেন। সওদাগরদের জন্য যেমন উৎকৃষ্ট চালা নির্মাণ করে দিতেন, তেমনি তৈরি করে দিতেন বড় বড় রাজপথ। প্রাচীন বাংলায় লক্ষণাবতী, পান্ডুয়া, নদীয়া, গৌড় শহরগুলি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য শহর হিসেবে খ্যাত ছিল। চট্টগ্রাম থেকে নদী বেয়ে তারা পৌঁছে যেত গৌড় বা পান্ডুয়ায়। বিদেশীরা ওইসব শহর থেকে কিনে নিয়ে যেত হিমালয়ের ভেড়া ও খচ্চরের চামড়া, মৃগনাভি, কলিঙ্গ-অঙ্গ-আসামের হাতি, তেজস্বী ঘোড়া, সোনা, তামা, লোহা ও অভ্র। গুপ্ত যুগের পরবর্তী সময়ে বাঙালি বহির্বাণিজ্যের পরিবর্তে আগ্রহী হয়ে ওঠে অন্তর্বাণিজ্যে। রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালের পরই দেশজুড়ে অরাজকতা ও দুর্নীতি শুরু হয়। অন্যদিকে বিদেশে ব্যবসা করার পরিবর্তে দেশের মাটির উপর নির্ভরশীলতায় কৃষিজীবী হয়ে উঠতে থাকে। এমনিতেই তুলনায় অন্তর্বাণিজ্যে লাভের অঙ্ক সব সময় কম। তার ওপর ব্যবসা ছেড়ে অনেকেই হয়ে উঠতে থাকে কৃষিজীবী। সেন রাজত্বে রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালির বহির্বিশ্বের ব্যবসা কিছুটা উন্নতি করলেও আগের গৌরব সেভাবে ফেরাতে পারেনি। যদিও ওই সময়ে থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের খ্যাতি বাড়ে। গৌড়ে খিজির খানের আমলে বাংলার তন্তুল, রেশম, কার্পাস শিল্পের উন্নতি হয়েছিল। চট্টগ্রামের পর বন্দর হিসেবে খ্যাতি বাড়ে হুগলির। বঙ্গজননীর নির্মল ধারায় পলিমাটির আশীর্বাদে গঙ্গার নাব্য স্রোতধারায় প্রতিবছরই বাংলাকে দিয়েছে পর্যাপ্ত পানীয়, শস্য, পরিবহনের সুযোগ। সোনার বাংলার ফসল এবং এখানকার কুটির শিল্পের লোভে এই এলাকায় বিদেশী বণিকদের দল বাণিজ্য করতে চলে আসে। হুগলিকে বন্দর শহর হিসেবে গড়ে তোলে পর্তুগীজরা। মোঘলরা হুগলি দখল করে ১৬৩২-এ। বাঙালি বণিকেরা পরিশ্রম কমিয়ে এখান থেকে জিনিস বেচতে শুরু করে। অনেক বণিক আবার দাদনি বণিক হয়ে যান। চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত সুদূর ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়, সিংহল থেকে বণিকের দল সপ্তগ্রাম এ বাণিজ্য করতে এসেছিল। এখান থেকে রপ্তানি হচ্ছে গম, চট, চিনি, মাখন, নানাপ্রকার ছিট কাপড়, ছাতা, চাল, দড়ি, পিপুল, তেল আর মসলিন বস্ত্র। চীন, মালয়েশিয়ান, সুমাত্রা থেকে হুগলিতে হেসে নামছে কর্পূর, মশলা, মরিচ, মুক্ত, সোনা, রুপোর গয়না প্রভৃতি। তবে এর একটা চলে যায় গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে দিল্লি-আগ্রার পথে। ব্যবসার ক্ষতি বৃদ্ধি শুরু এই সময় থেকে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ওলন্দাজদের খুব প্রিয় ছিল মসলিন বস্ত্র। মোঘল রাজ্যের বদান্যতায় তারা শহরের বাণিজ্য কেন্দ্রের বদলে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে দালালদের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে রেশমের সুতো বা বস্ত্র কিনতো। পরে কুঠি গড়ার পর তারা সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে বা না দিয়ে বাংলার নিপুণ কারিগর দের দিয়ে কাঁচামাল থেকে বস্ত্র তৈরি করিয়ে নিত। বাঙালির রেশম ব্যবসার সর্বনাশ শুরু হয় এই ওলন্দাজ বণিকদের হাতেই।


    টেরাকোটা মন্দিরের ভাস্কর্যে বৈচিত্র্যময় নৌকার অলঙ্করণ দেখলে সেকালের সমুদ্রযাত্রার প্রমাণ মেলে।

    ১৫-১৬ শতকের বাংলার ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলোতে প্রবলভাবে সক্রিয় ছিল। এই বাণিজ্য ১৭ শতকে চলে যায় মোঘল সুবেদারদের আওতায়। এই সময় থেকেই মোঘলদের ব্যবসায় আগ্রহ ও বিদেশী, বিশেষ করে ইউরোপীয় বণিকদের ঢালাও সাহায্য বাংলার সমুদ্র বাণিজ্য চলে যায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির হাতে। এই শেষের কারণে শুরু হয় বাঙালি বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের ইতিহাস। অথচ তার আগে পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন জেলা ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। দিনাজপুরে ধান,চাল, সন, চিনি, চামড়া; দার্জিলিঙে কার্পাস, পুতির মালা; জলপাইগুড়িতে তুলো, চামড়া, কাঠ; মালদায় রেশম সুতো, রেশম কীট, আম পাট; পাবনার ঘি, হাঁস-মুরগী, কম্বম, মৃৎপাত্র; হুগলিতে চাল, ডাল, বস্ত্র, কল, কলা, আম, কাঁসা ও পিতলের বাসন, নৌকো; বর্ধমানে বস্ত্র, পিতল, কাঁসার, বাসন, জুতো; মেদিনীপুরে বাসন, তুলো, উল, লবণ; বাঁকুড়ায় সিল্কের কাপড় প্রভৃতি ব্যবসার সুনাম ছিল দীর্ঘদিনের। মুসলমান যুগের প্রায় সূচনা থেকেই বাংলার নিজস্ব রাজ্যশাসন হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত এবং অবাঙালিদের হাতে চলে যায়। বাংলার কল্যাণের প্রতি তারা প্রায় প্রথম থেকেই ছিল উদাসীন। অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলো আঞ্চলিক মুঘল শাসকদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে চালু করে জমিদারি প্রথা। একইসঙ্গে জমির মালিকানা আর প্রচুর অর্থলাভ। জমির চলে যাওয়াতে চাষের অভাবে বাণিজ্যের মূল দ্রব্য কমতে শুরু করে।

    হুগলি বন্দরে ব্যবসা করতে আসে ইউরোপের প্রায় দশটি দেশ। ব্যান্ডেল থেকে রিষড়ার মধ্যে প্রধান কয়েকটি দেশ তাদের কুঠি গড়ে ব্যবসা শুরু করে। ব্যান্ডেলে পর্তুগিজ, চুঁচুড়ায় ওলন্দা্‌জ, চন্দননগরে ফরাসি, ভদ্রেশ্বরে জার্মান, শ্রীরামপুরে ডেনমার্কের ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় একদিকে যেমন ব্যবসা বৃদ্ধি অন্যদিকে বাঙালির ব্যবসার ক্রমাবনতি। যদিও শেষ পর্যন্ত কুচক্রে টিকে গিয়ে ব্রিটিশরা সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করে।

    পলাশীর যুদ্ধের পর এই নবাবের প্রকৃত রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কেড়ে নেয় ব্রিটিশরা। শাসকেরা পরিণত হল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রীড়ানক। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করতে শুরু করল নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী। ইংরেজরাই নির্ধারণ করতে শুরু করল জিনিসের ক্রয় মূল্য এবং বিক্রয় মূল্য। তাঁতিরা বাধ্য হল দাদনের আগাম টাকা নিতে। অলাভজনক দামে কাপড় বিক্রি করতে। পরে এই তাঁতিদেরই বাধ্য করা হলো ব্রিটিশদের বেঁধে দেওয়া মজুরিতে কারখানায় কাজ করতে।

    উনিশ শতকের শেষভাগে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলার বাণিজ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটল। ইংল্যান্ডের প্রস্তুতকারকদের স্বার্থে বলি দেওয়া হল বাংলার প্রস্তুতকারকদের স্বার্থ। তার আগেই ১৭০০ এবং ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুটি আইন পাকা করে ভারত থেকে আমদানি করা সুতি ও রেশমের কাপড় পড়া বা ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলা থেকে কাঁচামাল নিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ডে কাপড় তৈরি করে বাংলাতেই পাঠানো হতে লাগলো। ধ্বংস হয়ে গেল বাংলার নিজস্ব শিল্প। খুব সহজ করে বলতে হয় বাংলার কাঁচামালই গড়ে উঠলো ইংল্যান্ডের শিল্প-বিপ্লব।

    এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কোম্পানি এবং তার কর্মীদের ‘বেনিয়ান’ হয়ে কিছু বাঙালি চেয়ে ছিলেন বাংলায় শিল্প স্থাপন করতে। কিন্তু ব্রিটিশরা তা করতে পছন্দ হয়নি। আশঙ্কা ছিল এতে তাদের নিজস্ব ব্যবসার ক্ষতি হবে।

    সপ্তগ্রামবাসীর শেঠ ও বসাকরা হুগলি নদীর তীরে বেতড়ের অপর পাড়ে এসে জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করে। সেই গোবিন্দপুরেই ইংরেজরা এসে গড়ে তোলে তাদের দূর্গ। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়ী হওয়ার পর আগেই লিখেছি ক্রমশ তারা বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির-শিল্পের সমাধি দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলে। ফসলি চাষের পরিবর্তে ইংরেজদের লোভে নিল ও পাটের চাষ শুরু । এদেশের বাণিজ্যকে একটু একটু করে নিঃশেষ করে বাঙালি ব্যবসায়ীকে খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানিতে পরিণত করে। যে দু একজন ব্যবসায়ী নাম করেছিলেন তাদের প্রায় সবাই চরিত্র হারিয়ে নিজেদের স্বার্থে নিজেদের ব্যবসার সুবিধার কারণে বিদেশী বণিকদের সমর্থন করেছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইংরেজদের সমর্থনে তাদের সঙ্গে যোগ দেন আর এক ধরনের ব্যবসায়ীর দল। বড়লাট কর্নওয়ালিস কে লেখা ১৭৮৮-র একটি গোপন চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে মোহরের ওপর বাট্টা কমানোর জন্য ২৬ জন অর্থ ব্যবসায়ী তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সাউ গোপাল দাস মনোহর দাস সহ সেই ২৬ জনের সবাই অবাঙালি। সেই ধারার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি আজ বাণিজ্যে নিপুণ বাঙালিকে ক্রমশ ব্যবসা বিমুখ বাঙালি তে পরিণত করেছে।




    পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৮ নভেম্বর ২০২০ | ৩৩১৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • manimoy sengupta | ১৯ নভেম্বর ২০২০ ১৫:০৮100484
  • আপনার লেখা পড়ে, এ'বিষয়ে আরো জানবার ইচ্ছে জাগলো। 

  • Anindita Roy Saha | ২৫ নভেম্বর ২০২০ ২২:২৫100655
  • লেখাটি হঠাৎ শেষ হয়ে গেলো। অনেক ঐতিহাসিক তথ্য সম্বলিত লেখা, তবে আরো বিশ্লেষণ আশা করেছিলাম।  যেমন ব্যবসায় বাংলা প্রদেশের সাথে বোম্বে প্রেসিডেন্সির তুলনা, একটি পড়তি অন্যটি উঠতি । কিংবা ম্যানেজিং এজেন্সী হাউস গুলির ভূমিকা । কিংবা বাঙালীর কিছু ব্যবসায়িক প্রয়াসের আলোচনা  ইত্যাদি। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন