এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • হস্টেলের মেয়েরা - ৫

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ২৭ জুলাই ২০২২ | ৫৯১ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • কোনো কোনো মানুষ বেঁচে থাকাকালীন মিথ হয়ে যায়। প্রচলিত ঘরানাগুলোর একটু হয়তো বাইরে সে। বা অনেকটাই বাইরে। রঞ্জাবতী তেমনি এক মিথ ছিল। তার মতো  সুন্দরী খুব কম দেখা যায়। আমাদের হস্টেলে সে মাঝেমধ্যে আসতো আর ডিপার্টমেন্টে তাকে রোজ দেখতাম। প্রায় পাঁচ দশ উচ্চতার  সোনার মতো গাত্রবর্ণ তরুণী তখন সে। কমলা রঙের ব্যাগি ট্রাউজারের সঙ্গে হলুদ গেঞ্জি পরা তাকে মানাতো। একটা টপ নট বাঁধতো সে। ঐ সময়ে টপ নট খুব ফ্যাশন হয়েছিল। কাজের সুবিধেও হয়। গরম লাগে কম ঘাড়ে। তবে রঞ্জাবতীকে টপ নটে মানাতো চমৎকার। কারণ তার কাটা কাটা নাক চোখ মুখ। গ্রীক সুন্দরী। চওড়া কপাল। মাঝে মাঝে হরকে ডুরে শাড়িও পরতো কালো টিপ দিয়ে। দীর্ঘ দৃঢ় পদক্ষেপ। যাদবপুরে সুন্দরীর অভাব ছিল না। কিন্ত, শি ওয়াকস ইন বিউটি রঞ্জাকে দেখেই বলা চলত।

    এই সময়ে তপন সিংহের "আদালত ও একটি মেয়ে" নামে ছবিটি রিলিজ করলো। এবং হৈচৈ পড়ে গেল। তখন ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রি হত। যাঁদের মনে আছে, তাঁদের আছে... আমরা হস্টেল থেকে বেশ কয়েকটি মেয়ে একসঙ্গে ফিল্ম দেখতে যেতাম। আর ফিল্ম সোসাইটি তো ছিলই।  "আদালত ও একটি মেয়ে" আমরা দেখতে গেছিলাম বান্টিতে। সবচেয়ে ভালো লেগেছিল পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় মনোজ মিত্রকে। একেবারে একটা ছকের বাইরে রোল। বান্টি সিনেমাহলটা ছিল নাকতলাতে। একেবারেই পশ হল নয়। কিন্ত ছবিটা দেখার  সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হল হল থেকে বাইরে আসার সময়। ধর্ষণ নিয়ে ছবি। অতএব কী দেখাবে কতটা, দেখাবে টাইপ দর্শকের অভাব ছিল না। সিটি মারা দর্শকও ছিল। বেরোবার মুখে প্রচন্ড ভীড়। আমাদের এক সহপাঠিণীকে বিশ্রীভাবে মলেস্ট করে ভীড়ের মধ্যেই।এতটাই খারাপ যে তার দামী তসরের কুর্তাটির পিছনদিক থেকে সম্পূর্ণ কেটে বাদ দিতে হল। মাথার ওপর দিয়ে খোলা সম্ভব ছিল না। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি আর খারাপ দিকগুলি উন্মোচিত হচ্ছে। এরপর আমরা আর বান্টিতে ছবি দেখতে যাইনি। আমাদের ছাত্রজীবনে বাংলায় "আদালত ও একটি মেয়ে" আর হিন্দিতে "ইনসাফ কি তরাজু" খুব সাড়া ফেলেছিল। কিন্ত প্রথম ছবিটাতে একটা বক্তব্য ছিল। দ্বিতীয়টাতে সুড়সুড়ি। তখন রাজ বাব্বর, দীপক পরাশর নতুন অভিনেতা।

    এরপর রঞ্জাবতী ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি পথনাটিকা করে। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন জায়গাতে সেটি অভিনীত হল। বেশ সাহসী পদক্ষেপ ছিল। ও খুব সিরিয়াসলি কনভিন্স করার চেষ্টা করত। সিনিয়র হলেও ওকে কোনোদিন দিদি বলিনি। কেন জানিনা। ওর নাচ খুব ভালো লাগত আমার। মেধাবী নাচ। ফুট ওয়র্ক অসাধারণ। ওর লম্বা পায়ের জন্য আরো ভালো লাগত। তবে ট্র্যাডিশনাল নাচ নয়। ওর  নাচে মেধা ও মনন ছিল। রাজহাঁসের মত লম্বা গ্রীবা। কখনো কখনো দেখতাম সেন্ট্রাল লাইব্রেরির রিডিং রুমে পরীক্ষার আগের সন্ধেতে একটা বই খুলে বসে আছে। মাঝে মাঝে বাইরে তাকাচ্ছে। কেমন একটা নিরাসক্ত, উদাসীন, বিষন্ন দৃষ্টি ছিল ওর।

    ওর সঙ্গেই যে মেয়েটিকে দেখতাম সে হস্টেলে খুবই আসত। সংযুক্তাদি। সংযুক্তা মন্ডল। খুব ভালো রবীন্দ্রনাথের গান করতো। তখন এথনিক সাজের চল সবে উঠেছে। সংযুক্তাদি ঐরকম বড় টিপ, নাকফুল, গলায় কালো সুতো দেওয়া গয়না ইত্যাদি পরে আসতো। আমাদের ডিপার্টমেন্ট বা হস্টেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশ নির্বাচিতই হত। সেখানে মূল জায়গা থাকত রবি ঠাকুরের। এখন সেটা এদিকে একেবারে অন্যরকম হয়ে গেছে। ভালোমন্দ বলব না। তবে চোখে, কানে সয় না। ওখানে কী হয় জানিনা। গল্প করতে করতে ডিপার্টমেন্ট আর হস্টেল মিশে গেল। আমরা তো মিশেই ছিলাম!

    প্রথম এল এইচকে দেখেছিলাম রাত্রিবেলা। তিনতলা বিল্ডিং। সারি সারি জানলা। পাখা ঘুরছে বন বন করে। ভাবলাম ভেতরে না জানি কী রহস্য! কোন বাঘ সিংহীরা থাকে! খুব ভয় ছিল। কিন্ত কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত আড়ষ্টতা কেটে গেল। আমাদের বাড়িঘরদোর হয়ে উঠল হস্টেল। এতগুলো মেয়ের কলকলানি। আর তাদের  ভিজিটর এলে ডেকে দেওয়া, গেটের দেখাশোনা (দারোয়ানজি আলাদা মানুষ ছিলেন), টুকটাক কাজ করে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল সদাহাস্যমুখ কুচকুচে কালো একটি ছেলে। তার নাম মঙ্গল। কী মিষ্টি মুখটি ছিল তার। আমাদের সে দিদি বলতো। আর আমাদের কাছেও সে খুব আদরের ছোট ভাইটি ছিল। পুজোয় তার হাতে কিছু একটা দিতে পারলে ভালো লাগত। কিন্ত সে কখনও কিছু চাইত না। আমরা থাকাকালীন মঙ্গলের বিয়েও হল! একবার ছুটি থেকে ফিরে দেখি তার বউ এসেছে! কিন্ত সে ভারি লজ্জাবতী ছিল। ঘর থেকে বেরোত না ! অনেক বলে টলে আমরা তার মুখ দেখেছিলাম!

    মঙ্গল যেই সকালে বা সন্ধেতে অমুকদিদির ভিজিটাআআর বলে হাঁক দিত, আমরা জানতাম বাবা মা এসেছেন! সবাই বন্ধুদের সঙ্গে বাবা মায়ের আলাপ করিয়ে দিতাম। পেন্নাম করে টরে আমরা গুড গার্ল হয়ে তাঁদের সামনে বসে থাকতাম খানিকক্ষণ!

    আরেকরকম ভিজিটর আসতেন এই রুমে। ঢুকেই বাঁচিয়ে প্রথম ঘরটি সেই। এঁরা হলেন প্রেমিকপ্রবররা। মঙ্গল তাদের ভালোই চিনত।

    সোমাদিদি তোমার ভিজিটাআআআআর মানেই শমু এসেছে। তারা সোফায় পাশাপাশি বসে গুজগুজ করে গল্প করবেন। দু'ঘন্টা, তিন ঘন্টা। মঙ্গল এসে তাড়া দেবে। রুম বন্ধ করবো! দু তিনবার তাড়া দেবার পরে তারা উঠবে। এবার ধরুন সোমা আর শমু ভিজিটর্স রুমে বসে কঠিন প্রেম করছে। এই সময়  স্বাগতার বাবা মা এলেন দেখা করতে। ঐ ঘরেই বসলেন তাঁরা।ঐ একটাই তো ভিজিটর্স  রুম! এইবার কী অবস্থা বলুন তো!কে কী করবে? কী করা যেতে পারে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৭ জুলাই ২০২২ | ৫৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন