এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  স্বাস্থ্য  বুলবুলভাজা

  • স্বাস্থ্যবিমা: দুই বিড়ালের যুদ্ধ

    বরুণ কাঞ্জিলাল
    আলোচনা | স্বাস্থ্য | ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ২১৭১ বার পঠিত
  • কোভিড অতিমারীজনিত সংকটের বছরটি অতিক্রমণের মুখে। নতুন ক্যালেন্ডার শোভা পাবে, সর্বত্র। আসন্ন বছরটিতে দেশ তথা দুনিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল কিছু পরিবর্তন হবে, তেমন আশা করা যাচ্ছে না। এই অতিমারী ফাঁপা স্বাস্থ্যব্যবস্থার অন্দর দেখিয়ে দিয়েছে। অতিমারী ছাড়া অন্যান্য অসুস্থতার চিকিৎসাতেও নাজেহাল হয়েছেন মানুষ। এ সময়ে সকলের জন্য বিমা এক লোভনীয় হাতছানি বটে! সকলের জন্য বিমা প্রকল্প যত সহজ, সকলের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বন্দোবস্ত করা তার চেয়ে কত কঠিন?

    ভোটের বাজার এখন সরগরম, এর মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই বিড়ালের লড়াই – আয়ুষ্মান (কেন্দ্রের) বনাম স্বাস্থ্যসাথী (রাজ্যের) প্রকল্প। এই দুটি হল স্বাস্থ্যবিমার প্রকল্প, যার সমস্ত খরচের দায় যথাক্রমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। বিবাদের বিষয়টি চিরকালীন: তুই বিড়াল না মুই বিড়াল? অর্থাৎ, স্বাস্থ্যবিমা হিসাবে কোনটি বেশি ভাল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এই লেখাটির উদ্দেশ্য নয়। বরং, বলাই ভাল, দুটোর মধ্যের মূলগত তফাৎ বিশেষ কিছু নেই। যা তফাৎ, তা ওই বিড়ালের গায়ের রংয়ে। অর্থাৎ, রাজনীতিতে। লড়াইয়ের বাইরে এসে আমরা বরং দেখি এই ধরণের স্বাস্থ্যবিমা আমাদের মত দেশে কতখানি উপযোগী।

    স্বাস্থ্যবিমা ব্যাপারটি ঠিক কী এটা কমবেশি অনেকেই আমরা জানি। সোজা কথায়, যে কোনও বিমা প্রকল্পেরই কাজ হল ভবিষ্যতের কোনও সম্ভাব্য ঘটনার ফলে যদি কোন ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতি হয় তা থেকে তাকে রক্ষা করা। স্বাস্থ্যবিমাও তেমনই সুরক্ষা দেয় ভবিষ্যতের জন্য, অর্থাৎ ভবিষ্যতে যদি কখনও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মোটা বিল মেটাতে হয় তাহলে আমার হয়ে বিমা কোম্পানিই সেই বিল মেটাবে এবং আমি এক সম্ভাব্য ব্যক্তিগত আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে যাব। এর জন্য আমাকে এখন কিছু খসাতে হবে, অর্থাৎ আমার এই ঝুঁকির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বিমা কোম্পানিকে ‘প্রিমিয়াম’ দিতে হবে। সাধারণত, আমার যত বেশি স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত ঝুঁকি থাকবে আমাকে তত বেশি প্রিমিয়াম দিতে হবে।

    আয়ুষ্মান বা স্বাস্থ্যসাথী ঠিক এই কাজটাই করে, অর্থাৎ আমাদের ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তবে, সাধারণ বিমা প্রকল্পের (যেমন, মেডিক্লেম) সঙ্গে এদের তফাৎ হচ্ছে এখানে আমার হয়ে সরকার বিমা কোম্পানিকে প্রিমিয়ামটা দিয়ে দেয় আর এই প্রিমিয়ামের সঙ্গে ঝুঁকির কোন আপাতসম্পর্ক থাকেনা। হাসপাতালে ভর্তি হলে যা খরচ হবে বিমা কোম্পানি বা সরকার নিয়োজিত কোন সংস্থা নিজেই তা মিটিয়ে দেবে।
    কতটা প্রয়োজন এই সুরক্ষার? এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তিগত খরচ নিয়ে আজ আমরা সকলেই নাজেহাল, বিশেষত যখন চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সাম্প্রতিক একটি NSSO রিপোর্ট থেকে জানতে পারছি প্রতিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য ভারতবাসীকে গড়ে প্রায় ২০,০০০ টাকা নিজের পকেট থেকে খরচা করতে হয় (Key Indicators of Social Consumption in India: Health, NSS 75th Round Report, 2019)। এটা হল সরকারি ও বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালের সম্মিলিত হিসাব। যদি শুধু বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ভরতির হিসাব ধরি, তাহলে এই খরচটা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২,০০০ টাকা (এবং সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রায় ৪৫০০ টাকা)।

    বলা বাহুল্য, বেশির ভাগ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যের জন্য এই পরিমাণ খরচ একটা বিশাল বোঝা। ভাল ব্যাপার এই যে এক বছরের মধ্যে হাসপাতালে সাধারণত খুব অল্প শতাংশ মানুষ ভর্তি হন (৪-৫%)। অর্থাৎ, ওই বিশাল বোঝা বইতে হয় ওই অল্পসংখ্যক মানুষকেই। অন্যদিকে, খারাপ খবর হল আপনি, আমি, বা যে কেউই এই ৪-৫ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারি। অর্থাৎ, আমরা কেউই এই নাগপাশের আওতার বাইরে নই।

    নাগপাশ কেন বলছি? যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন, বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে, তাঁরাই হাড়ে হাড়ে টের পান এ নাগপাশ। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে এর ফলে প্রতি বছর অনেক পরিবার দারিদ্ররেখার উপর থেকে নিচে পিছলে পড়ছে শুধুমাত্র সেই পরিবারের কোনও সদস্যের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালের বিল মেটাতে এইসব পরিবারের মানুষকে কিভাবে সর্বস্বান্ত হতে হয় তার মর্মান্তিক নিদর্শন তো প্রায়ই সংবাদপত্র বা অন্য মাধ্যমে দেখতে পাই। সরকারি হাসপাতালেও এই দারিদ্রফাঁদের হাত থেকে মুক্তি নেই। ডাক্তার বা বেডের জন্য সরাসরি পয়সা না-দিতে হলেও ওষুধ, টেস্ট, আর হাসপাতালের মধ্যে নানা দালাল-দেবতাদের দক্ষিণা দিতে মানুষের পকেট শূন্য হয়ে যায়। একটা রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই অপ্রত্যাশিত আর্থিক বিপর্যয় একটা স্বচ্ছল পরিবারকে দারিদ্র্যের অন্ধকূপে ঠেলে দিতে পারে, বিশেষ করে যদি এই রোগ খুবই ব্যয়সাপেক্ষ হয় (যেমন, সার্জারি বা আই সি ইউ-র পরিষেবা)।

    এটা নিয়ে কোন প্রশ্নই থাকতে পারেনা যে এই আর্থিক সর্বনাশের হাত থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যে কোন রাষ্ট্রেরই প্রাথমিক কর্তব্য। সেদিক দিয়ে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান’ আর এ রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’কে এই কর্তব্য পালনের পথে একটা পদক্ষেপ হিসাবে দেখা যেতে পারে। সাধারণ মানুষ যদি একটা কার্ড দেখিয়ে বিনাপয়সায় হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পায় সেটা তো সামাজিক কল্যাণের পক্ষে ভালই। বস্তুত, আমি বা আমার প্রিয়জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে যে টাকার জন্য উন্মত্তের মতো ছোটাছুটি করতে হবেনা - এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়াটাই তো বিরাট প্রাপ্তি। যে ঝাঁ-চকচকে বেসরকারি হাসপাতালের ত্রিসীমানায় গেলে গরীব মানুষ ভিরমি খায় সে হাসপাতালে এখন কার্ড দেখিয়ে দিব্যি চিকিৎসা করে বেরিয়ে আসছে – এই দৃশ্য তো আকাঙ্ক্ষিত। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

    সমস্যাটা এই প্রকল্পগুলির উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। সমস্যা মূলত দুদিকে – একটা পদ্ধতিগত এবং আর একটা নীতিগত। পদ্ধতিগত দিকে এই ধরণের প্রকল্প প্রচুর প্রশ্ন নিয়ে আসে, বিশেষত যদি প্রকল্পের পিছনে একধরনের ভোটের রাজনীতি কাজ করে। যে প্রশ্নটা সবচেয়ে প্রকট তা এর অর্থসংস্থানের (financing) সঙ্গে জড়িত। এই প্রশ্নটা অনেকেই তুলেছেন – বিশেষত স্বাস্থ্যসাথীর ক্ষেত্রে যেখানে রাজ্যের প্রতিটি পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। প্রশ্নটা এই যে এই প্রকল্পের দায় মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সম্পদের প্রয়োজন তা আসবে কোথা থেকে?

    ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। NSSO-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি ১০০০ জন পিছু বছরে ৪২টা হাসপাতালে ভর্তির ‘কেস’ হয় (অর্থাৎ ৪.২%)। রাজ্যের জনসংখ্যা ১০ কোটি ধরলে এই ভর্তির সংখ্যা তাহলে দাঁড়ায় ৪২ লক্ষ। এর মধ্যে হাসপাতালের প্রসূতি ভর্তির সংখ্যা ধরা নেই। আবার প্রতি ১০০টি ভর্তি কেসের মধ্যে ৬৯ শতাংশ যায় সরকারি হাসপাতালে এবং বাকি ৩১ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে। এখন, একই রিপোর্ট অনুযায়ী, রোগী বা তাঁর পরিবার প্রতিবার ভর্তি এবং চিকিৎসার জন্য গড়ে (সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে) প্রায় ১৭ হাজার টাকা নিজেদের পকেট থেকে খরচ করেছেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এক বছরে ওই ৪.২% মানুষ নিজেদের ট্যাঁক থেকে প্রায় ৭১৪০ কোটি টাকা (৪২ লক্ষ × ১৭ হাজার টাকা) খরচ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করার জন্য। যদি স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা রাজ্যের সব মানুষ পান তাহলে এই টাকাটা (অর্থাৎ ৭১৪০ কোটি টাকা) আমাদের পকেটের বদলে সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্যের স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ (প্রায় ১১০০০ কোটি টাকা) ৬০ শতাংশেরও বেশি বাড়াতে হবে।

    বাস্তবে এই টাকার পরিমাণ কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। এটা ঠিক যে সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটির চেয়ে কম হবে যেহেতু কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা - যাঁরা ইতিমধ্যেই কোন সরকারি বিমা বা বিশেষ স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে আছেন – তাঁরা বাদ যাবেন। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যয় অনেক বেশি অনুপাতে বেড়ে যাবার কারণ বেসরকারি হাসপাতালে এখন অনেক বেশি মানুষ যাবেন। যেহেতু এরাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা করাতে গেলে মাথাপিছু বার্ষিক খরচ অনেক বেশি (প্রায় ৫০০০০ টাকা, NSSO রিপোর্ট অনুযায়ী), মোট খরচের পরিমাণ আমাদের হিসাবের অনেক উপরে থাকবে। এ ছাড়াও, প্রসূতিদের জন্য হাসপাতাল খরচ যোগ করুন। সব মিলিয়ে এ বাবদে সরকারের বার্ষিক দায় যোগ করলে মোট স্বাস্থ্য বাজেট দ্বিগুণ বা তার বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কোথা থেকে আসবে এই টাকা?

    এখানে একটা অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠবেই। বিমা খাতে সরকারের যা বাড়তি খরচ হবে তা কি সরকার স্বাস্থ্য বিভাগেরই অন্য খাতে বরাদ্দ কম করে পুষিয়ে নেবেন যাতে মোট স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে? তেমনটা হলে চিন্তার বিষয়, কেননা হাসপাতালের বিল মেটাতে গিয়ে সরকারকে যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বা জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোন বরাদ্দে হাত দিতে হয় তার ফল হবে মারাত্মক।

    এবার আসি বৃহত্তর এবং নীতিগত প্রশ্নগুলিতে। প্রথম বিষয় হল, ক্রমশ এই ধারণা মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে স্বাস্থ্যবিমাতেই আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান, আমাদের মোক্ষলাভ। এই ধারণা তৈরি করার পিছনে নানা রকম রাজনৈতিক হিসাব আছে। কোটি কোটি মানুষকে বিমাচ্ছা দন দেওয়ার ঘোষণা এবং তা প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের (পড়ুন ‘ভোটারের’) বাহবা পাওয়াটা তুলনামূলক ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রকৃত উন্নতি ঘটানোর চেয়ে সহজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিমা কখনই স্বাস্থ্য পরিষেবার বিকল্প নয়। বস্তুত, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই দেখা যাচ্ছে যে স্বাস্থ্য পরিষেবা যোগান দেওয়ার কাঠামো যেখানে দুর্বল এবং ছন্নছাড়া সেখানে চোখকান বুজে বিমার রথ চালু করলে বিপর্যয় আসার সম্ভাবনাই বেশি। হাসপাতালে গিয়ে যদি দেখেন বেড নেই বা চিকিৎসার মান খারাপ তাহলে শত কার্ড পকেটে থাকলেও কোন লাভ নেই। এক কথায়, বিমার উপর দায় চাপিয়ে রাষ্ট্র কখনই স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারেনা।

    একই সঙ্গে এটা মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্য বাজারের সওদাগররা – অর্থাৎ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল - এই সার্বজনীন বিমা ব্যবস্থার পুরো ফয়দা তোলার জন্য নানারকম রাস্তা নিতে পারে যার সবগুলিই খুব স্বচ্ছ বা সৎ নয়। বস্তুত এরকম ব্যবস্থায় চিকিৎসার ব্যয় আরও দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কারণ হাসপাতাল বা রোগী কারোরই খরচ কমানোর কোন উৎসাহ থাকে না। উভয়েই জানে সরকার টাকা দিচ্ছে; সেক্ষেত্রে একটি অসাধু হাসপাতাল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকিৎসা দেখিয়ে বিল ফাঁপিয়ে তুলতে পারে রোগীর অজান্তেই বা রোগীর প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। এই দুর্নীতির রাস্তা বন্ধ করা খুবই কঠিন, বিশেষত যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির অস্তিত্ব খুব দৃশ্যমান নয়। সেরকম হলে কেউ বলতেই পারেন স্বাস্থ্যবিমার নামে সরকার শুধু সওদাগরদের কোঁচড়ই ভর্তি করছে! অর্থাৎ, বাজারী স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই শুধু পুষ্ট করছে।

    এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে সরকারি ‘রেট’ কম হওয়ার জন্য বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিমা প্রকল্পে যোগ দেওয়ার অনীহা। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে ভাল মানের বেসরকারি হাসপাতাল প্রায় নেই বললেই চলে। এই দুটি বিষয় মিলিয়ে ফল যা দাঁড়াবে তা হল বিমাপ্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার মত লোকের অভাব। ঠিক এইটাই ঘটেছে আয়ুষ্মান প্রকল্পের ক্ষেত্রে – যার বার্ষিক ব্যয় পরপর দুই বছর (২০১৯-২০ আর ২০২০-২১) একই রয়ে গেছে বেশির ভাগ মানুষই এই প্রকল্পের সুবিধা নেননি বলে।

    সরকারি বিমার কি কোন বিকল্প নেই? অবশ্যই আছে এবং ইতিমধ্যেই অনেকে এই বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা তুলছেন, বিশেষত এই করোনা-সংকটের পরে। তা হল – স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ আরও অনেক বেশি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই অতিরিক্ত সম্পদকে রাষ্ট্র-পরিচালিত জনস্বাস্থ্য উদ্যোগের দিকে নিয়ে যাওয়া। যে অর্থ দিয়ে সরকার গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে সকলের হাসপাতালের বিল মেটাবেন তার একটা অংশ দিয়ে বরং সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও শক্ত ও সুসংহত করা হোক না। করোনা সংকটের একটা বড় শিক্ষা হল যে, বিমার সুরক্ষা দিয়ে মানুষকে ঝাঁ চকচকে হাসপাতালের অত্যাধুনিক চিকিৎসা নিতে পাঠিয়ে তার স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত করা যাবেনা। তার জন্য যা দরকার তা হল প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামোকে জোরদার ভিতের উপর দাঁড় করানো, যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হবে রোগ প্রতিরোধ এবং সকলের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার। এটা একান্ত ভাবে সরকারেরই কর্তব্য। দুই বিড়ালের লড়াই দেখতে দেখতে আমরা এই সোজাসাপটা কথাটা ভুলতে বসেছি।



    লেখক স্বাস্থ্য-অর্থনীতির শিক্ষক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ২১৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ar | 96.230.106.154 | ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:২১101393
  • এই তথ্যগুলো থাকলে ভালো হত।

    Ayushman project: The program is a centrally sponsored and is jointly funded by both the federal government and the states.
    The program is a poverty alleviation programme as its users are people with low income in India.
    The Indian government first announced the Ayushman Bharat Yogana as a universal health care plan in February 2018 in the 2018 Union budget of India.

    Swasthya Sathi” was announced in Cabinet No – 2625 dated 17th February, 2016, and Finance Department notification no – 1104-F (P) dated 25th February, 2016.
    The entire premium is borne by the State Government and no contribution from the beneficiary.
     

  • প্রশান্তি মুখোপাধ্যায় | 2409:4061:41a:b4a::268f:50ac | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৭:৩৫101428
  • এই নিবন্ধটি আমার জন্য সময়োপযোগী যা আমাকে সমৃদ্ধ করল। হৃদয় মেরামতের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমার heart কতটা HURT হতে পারে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন