পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
#গল্প
#ভয়ের গল্প
#মহুয়া দাশগুপ্ত
শীত পড়লে মনের ভিতর ঘরে কাঠকুটো সাজিয়ে জ্বলে ওঠে গার্হপত্য অগ্নি। আমার সূক্ষ্ম শরীর চাষাভুষোদের মতো উবু হয়ে বসে। দুই হাতে তাপ নিতে নিতে ভাবতে থাকে এতোল বেতোল কথা। দুয়ারে দাঁড়ায় কমলালেবুর কোয়ার রঙের অসুখ। আমি তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে থাকি টানটান হয়ে। এই আগুন গোপনীয়তার শর্তে জ্বলে ওঠে। একলা একলা জারিয়ে নিই উত্তাপ। অসুখের গন্ধ কাটাতে ধূপ জ্বালাই। রোজদিনই প্রায় এমন করছি আজকাল । মালগুড়ি ডেজের সেই মেয়েটার কথা মনে হয়। বাতাসের শরীরে শিরশিরানি লাগে। ঘেঁষে বসি আগুনমুখো হয়ে।
গল্পের নাম আজকাল মনে থাকে না। সব ভুলে গিয়েছি। শুধু কয়েকটা দৃশ্য মনে আছে। শুধু ওই সুরটা কানে বাজে— তা না না না না না না না না!কেরালার একটা গ্রামের ঘরের বৌ একটা মন্ত্র জানতো। গভীর জঙ্গলে কেউ ওই মন্ত্র বললে অন্যজন গাছ হয়ে যেতে পারতো। ফুলে ভরা ঝাঁকড়া মাথাওয়ালা বৃক্ষ !কথাটা ওর এক বান্ধবী জানতে পেরে ওকে জোর করে নিয়ে যায় অরণ্যে। বান্ধবী মন্ত্র শিখে উচ্চারণ করতেই গ্রাম্য বধূ গাছ হতে শুরু করে, শরীর বদলে যায় কাণ্ড , শাখা, পাতা ও ফুলে। পুরোপুরি গাছ হওয়া দেখতে দেখতে ভয়ে হতবাক বান্ধবীর জানাই হয় না , আবার গাছ থেকে মানুষ করার মন্ত্রটা। গাছ হয়ে যাবার পরে মেয়েটি আর জানাবে কী করে?আতঙ্কে সেই বান্ধবী সদ্য গাছ হয়ে যাওয়া মেয়েটির স্বামীকে সব বলে।ওই রূপান্তরিত গাছটিকে বাড়ি এনে বাঁচিয়ে রাখে তার স্বামী। ছেলেটি সাধু সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে জানতে পারে একটা মন্ত্র ওকে অর্ধেক শরীর ফিরিয়ে দেবে। আরেকটি মন্ত্র বলতে হবে ওই অরণ্যে গিয়ে। একইরকম আরেকটি গাছের কাছে দাঁড়িয়ে। প্রথম মন্ত্রে গাছের উপরের দিকটা বদলে যায়। সেই পরিচিত মায়ভরা মুখ, কপালে কুঙ্কুম, দিঘল দুটি সজল চোখ ফিয়ে আসে অনেক নস্টালজিয়া নিয়ে। গলা থেকে কোমর পর্যন্ত যুবতী শরীর আসে মন্ত্রের জোরেই। ছেলেটি পরম যত্নে জামা , ওড়না পরিয়ে দেয় অর্ধশরীরটিকে। আদরে আবেগে আশ্বাসে ভরাট করে মেয়েটির মন। কিন্তু মেয়েটির কোমর থেকে পায়ের পাতা তো কাঠ যেন! কঠিন কাণ্ড! সেইদিকে চেয়ে ছেলেটির বুক শিউরে ওঠে। একটা ভ্যানে করে গাছমানুষটিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একটিই কাজ বাকি। অমন একটা গাছে ঠেস দিয়ে দ্বিতীয় মন্ত্র বলবে। ফিরে পাবে মেয়েটিকে। দুজনের চোখেই গভীর প্রেম, ভয়াল উদ্বেগ। জঙ্গলে এসে ওরা দেখে এক চোরা কাঠুরে একরাতে কেটে নিয়েছে প্রায় সব গাছ। কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না ওই ম্যাজিক গাছ কোনটা । যে গাছটা মেয়েটির কোমর থেকে পায়ের পাতাকে প্রাণবন্ত করবে আবার। ছেলেটি একটা একটা করে গাছের কাছে যায় আর চিৎকার করে কাঁদে। মাথা ঠোকে। মেয়েটি বৃক্ষশরীর নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চায়। শেষে ওই ভ্যানে করে একইভাবে ফিরতে থাকে ওরা।
এই গল্পটায় ভূত নেই । কিন্তু আমি ভয় পাই এই গল্পটাকে। আজ প্রায় ছয়মাস হলো আমি কোমর থেকে পায়ের আঙুলটা নাড়াতে পারছি না। স্বপ্নে আমি রোজ একটা ওষধি বৃক্ষ খুঁজতে বেরোই। আমার আর শীতের আগুন পোহানো হয় না।
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | গ্রাহক | পুনঃপ্রচার |