এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বকবকস (বইদিবস)

    Falguni Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১২৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আজ শেক্সপিয়ার সহ আরো অন্যান্য বিখ্যাত লেখকদের জন্ম নাহয় মৃত্যুদিবস। ক্লাসিক উপন্যাস 'লা মানচার দন কিহোতে'র স্রষ্টা লেখক মিগেল দে সারভেন্তেসের মৃত্যু দিবসকে স্মরণীয় রাখার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সূচনা হয় বইদিবসের। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বইপড়া, বইছাপানো, কপিরাইট সংরক্ষণ -- এইসব ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে পালিত হয় বইদিবস।  

    এখন দিবসের উপলক্ষ্য যদি যাপনের উৎসব হয় তাহলে বই তো ঈশ্বরের আরেক রূপ। মানুষের মন ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যে ভরে ওঠে অথবা ঈশ্বর হাত বাড়িয়ে মানুষের অবচেতন - চেতনার সঙ্গম ঘটান, যাই হোক না কেন, বই একটি দুর্লভ এবং দুর্মূল্য আগ্রহ, কৌতূহল, উদ্দামতা, নীরবতা এবং সর্বপোরি নিজের সঙ্গে নিজের একাত্মতা।  এই যে এক আত্মা হওয়া এর ভিত্তিটি আজকের দিনে কেমন যেন নড়বড়ে হয়ে আসছে। শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত থাকার দৌলতে দেখি- বুঝি প্রায় প্রতিনিয়ত যে, আজকাল বাচ্চাদের চোখে সেই অবুঝ, অনবুঝ স্বপ্নের চাষবাস নেই!  কেন নেই!  তারা সবই ভিসুয়ালাইজ করে নিয়েছি। নন্টে ফন্টে, হাঁদা -ভোঁদা, ছোটা ভীম,  মিকি মাউস, টম-জেরি, আলাদিন সবই তারা দেখে নিয়েছে।  ফলত কল্পনার খাতা এদের হাতে শূন্য!  

    এসব দেখতে দেখতে একছুটে  রাশিয়া থেকে টুকি দেওয়া দুই ইয়ারের দোস্তির আজব বদমাশি বুদ্ধি আমার মাথায় কিলবিলিয়ে ওঠে।  শুধু কি হাঁদা ভোঁদা নন্টে ফন্টেই নাকি! এক পৃথিবী চষে বেড়ালে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায়, দেশে বিদেশে এইরকম দুষ্টু মিঠে জুটি যে কত তার ইয়ত্তা নেই।  আবার দাঁত ফোকলা ঠানদি, ঠাকুরমা আর দাদামশায়েরা তাঁদের থলে থেকে কতই না রূপকথার গল্প বিনিয়ে বিনিয়ে বুনতেন আমাদের মনে,  সে রূপকথা দেশ কাল ছাপিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ঘুরে জাপান, রাশিয়া হয়ে চীনদেশে এসে জিরিয়ে নিত।  আহা চীনদেশের গল্প বইয়ে কী সুন্দর পালকের মত নরম শিরশিরে রূপসীর আনাগোনা।  কেউ বা লোভী।  তার যে কী শাস্তি! কেউ বা খুব পরিশ্রমী, ভালো মানুষ -- তার জন্যই তো ফিনিক্স পাখির ডানা থেকে রঙিন পালক ঝরে পড়ে। ওদিকে আলোর ফুলকি,  সেরা সন্দেশ-- এসব তখন দীক্ষামন্ত্রের মত নিত্য জপ করে চলা। 

    এক গ্রামীণ লাইব্রেরিই ছিল এসবে সম্বল। আর বাবার এনে দেওয়া রঙ বেরঙের বইয়ে ভর করে, সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল প্রায় সে ছোট বয়সেই চষে ফেলেছিলাম স্বপ্নে। কিন্তু চিরকাল তো স্বপ্ন জড়িয়ে দিন কাটে না!  ধীরে ধীরে বাস্তবের কঠোরতা ঠোক্কর দিতে থাকলেও বইকেই জড়িয়ে ধরেছি। বুঝেছি এই যে কত না সূক্ষাতিসুক্ষ আবেগ আমাদের নিত্য বাঁচায় এবং মারেও। কখনও যদি হেসে সুখ, কখনও প্রাণভরে কাঁদার জন্য প্রাণ আকুলিবিকুলি করে ওঠে। আর ভালোবাসা ঈশ্বরের আরেক ছদ্মরূপ। -- এইসব সবকিছুই বইয়ের আশ্রয়ে কোল পায়। 

    আমাদের বাল্য, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্যের সমস্ত রঙ, রস, স্বাদ, বিস্বাদে আমরা বইকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারি। কেননা বই একমাত্র বই-ই পারে আমার, আমাদের প্রত্যেকের মনের কথা টেনে পৃথিবীর মাটিতে ভূমিষ্ঠ করাতে। বই যেমন স্বপ্নের জগতে ঠেলে দিতে পারে তেমনই বাস্তবের ধূ ধূ রুক্ষ মুরুভূমির মধ্যে একটুকরো স্বপ্নের মেঘ দমকা হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে আসতে পারে। যাতে মানুষেরা মরে যেতেও যেতেও খুব জোরে একবার শ্বাস নিয়ে বলে উঠতে পারে-- মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে.... 

    ক্লাসরূমে ছেলেপিলের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া বোধ করি, দেখি এরা কথা বলে খুব, কিন্তু এদের ভাষার বড়ই অভাব। এদেরকে কেউ বলে নি, নিজেই নিজের সঙ্গে একাত্মা হয়ে দ্যাখো

    এরা শুধু সিলেবাস মুখস্থ করে! আর গ্রাম্য এক দিদিমণি সেই ইঁদুর দৌড়ের দৈনন্দিন বাস্তবতায় মাঝে মধ্যেই ছেলেপিলের আঙিনায় লাইব্রেরি,  বই আর রূপকথার স্বপ্নের মেঘ বুনতে থাকেন। আজকের দিনে এটুকুই আমার অর্ঘ্য। যে বইয়ের কাছে বড় ওঠার চিরঋণ, সেই বইয়ের জন্য এটুকুই হয়ত করতে পারি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Soumyadip Maschatak | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪১531223
  • অসাধারণ। বড় গভীরসঞ্চারী, দ্যোতনাময় এই ব‌ইযাপনের রূপরেখা। সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন