আমাদের অল্পবয়সে, আমরা প্রথম 'জীবনমুখী গান' শুনেছিলাম। ওই গানগুলি যদি 'জীবনমুখী' হয় তবে এই পোস্টটি ইভল-মুখী।
১৯৭৪ সালে একজন পারফর্মেন্স আর্টিস্ট হিসেবে মারিনা আব্রামোভিচ এই এক্সপেরিমেন্ট-টি করেছিলেন। কী পারফর্মেন্স? নিজেকে 'বস্তু'-ভাবে উপস্থাপিত করা। উনি টেবিলের উপর ৭২ টি জিনিশ ছড়িয়ে রেখেছিলেন এবং ছয় ঘণ্টা একটা ঘরের মধ্যে জড়বস্তুর মতো স্থির দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে চেয়েছিলেন, যে বা যারা এই প্রদর্শনী দেখতে এসেছে তারা ঠিক কীভাবে টেবিলে রাখা জিনিশগুলি তার উপর ব্যবহার করে।
ঠিক এই শব্দগুলি সম্বলিত একটি নোটিশ বোর্ড নিয়ে আব্রামোভিচ ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়েছিলেন:
"টেবিলে ৭২ টি অবজেক্ট রয়েছে, এগুলি যে ভাবে ইচ্ছে আমার উপর ব্যবহার করা যেতে পারে।"
পারফর্মেন্স:
আমি একটা বস্তু (Object)। আমাকে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করা যাবে এবং এর সব দায়ভার আমার।
সময়কাল: ৬ ঘণ্টা (রাত ৮-টা থেকে ২-টো)
পরের ছয় ঘণ্টার মধ্যে যা যা ঘটেছিল খুব কম করে বলতে গেলেও বলতে হয় ভয়াবহ, বীভৎস।
প্রথম যখন শুরু হয়েছিল, তখন স্রেফ সামান্য তামাশার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কেউ মারিনা-কে হাল্কা ঠেলে ঘুরিয়ে দিয়েছে। কেউ-বা হাত ধরে সামান্য টেনেছে। আর হ্যাঁ, কেউ কেউ তাকে কিছুটা অন্তরঙ্গভাবে স্পর্শ করেছে।
কিন্তু তৃতীয় ঘন্টায়, তার সমস্ত কাপড় রেজার ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছিল। চতুর্থ ঘণ্টায় ঐ একই ব্লেড তার মসৃণ ত্বক চিরতে শুরু করে। শুরু হয় যৌন নির্যাতন। তিনি এই পারফর্মেন্সটার প্রতি এতটাই দায়বদ্ধ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন যে, তিনি ঠিকই করে নিয়েছিলেন ধর্ষণ বা হত্যার চেষ্টা হলেও, প্রতিরোধ করবেন না।
শেষ দু'ঘণ্টার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল। আব্রামোভিচ, পরে বলেছিলেন, “I felt raped, they cut off the clothes, they stuck me with thorns of rose in the stomach, aimed the gun to my head, another came apart.”
ছয় ঘণ্টা শেষ হলে, আব্রামোভিচ যখন দর্শক বা জনতার মধ্যে হাঁটতে শুরু করলেন, কেউ আর তার মুখের দিকে তাকাচ্ছিল না। যারা তাকে এতক্ষণ ধরে কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, আব্রামোভিচ লক্ষ্য করলেন যে তারা যেন সবাই তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। এতক্ষণ যা যা হয়েছে, ওই ঘরের ভিতর যারা তাকে নির্যাতন ক'রে প্রভূত মজা পেয়েছে, সেই তারাই যেন মুহূর্তে সব ভুলে গেছে (বা ভুলে যেতে চাইছে)।
যদি না-ও চাই, আব্রামোভিচের এই পারফর্মেন্স, মানুষের মনুষ্যত্ব সম্পর্কে একটি ভয়ানক সত্য উদঘাটন করে। এই এক্সপেরিমেন্ট দেখায়, যে যখন শাস্তির ভয় অনুপস্থিত থাকে, অনুকূল পরিস্থিতিতে একজন মানুষ কত সহজে আরেকজনকে আঘাত করতে পারে।এই এক্সপেরিমেন্ট দেখায়, যে উপযুক্ত পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি পেলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘সাধারণ’ মানুষ প্রকৃতই হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণ: মব লিঞ্চিং বা ভার্চুয়াল মব লিঞ্চিং।
তো এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে যে মানুষের অন্তর্নিহিত প্রকৃতিটি, প্রকৃতই জন্তুর। মানুষের যে অন্যায় আচরণ করে না, তা মূলত দুটি কারণে
১। সামাজিক নিন্দা বা লোকলজ্জার ভয়
২। আইনি শাস্তির ভয়
যখন এই দুই ধরণের ভয় অনুপস্থিত থাকে, সামাজিকভাবে সৎ মানুষটিই সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজটি করে ফেলতে পারে।