কথামুখ
মূল লেখা শুরু করার আগে, এই অকিঞ্চিৎকর লেখাটি সম্পর্কে এক বিশুদ্ধ না-লেখকের পক্ষ থেকে কিছু প্রাথমিক কথা বলে নেওয়া জরুরি। যদিও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই লেখার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত, তবু কোনও ভাবেই লেখাটি বিদ্যাসাগরের ‘জীবনী’ নয়। বস্তুতপক্ষে তাঁকে নিয়ে এত অসংখ্য ছোট-বড় জীবনী রচিত হয়েছে যে, নতুন করে তার পুনরাবৃত্তির কোনও অর্থ আমি অন্তত খুঁজে পাইনি।
একই কারণে এই লেখা কেবল বিদ্যাসাগর-কেন্দ্রিকও নয়। কারণ তাঁর জন্মের বহু পূর্বের ঐতিহাসিক ঘটনাবলির উল্লেখ ও বিশ্লেষণ না করলে, বিদ্যাসাগরের যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। যেমন সম্ভব নয় যে সময়ে তিনি প্রায় নিষ্ক্রিয়, সেই সময়কালীন ইতিহাসে অগণিত বাঁকবদলের অনুল্লেখও। ফলে এই লেখায় ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরে ব্যাপ্ত এক বিশাল ইতিহাস উল্লিখিত হয়েছে। কারণ সেই ইতিহাসের নানাবিধ জটিল বিন্যাস উন্মোচিত না হলে, লেখাটির প্রবলভাবে গতানুগতিক হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা আছে।
বিদ্যাসাগরের প্রয়াণবর্ষে রচিত হয়েছিল শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন-এর বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত। পরবর্তীকালে যে অসংখ্য বিদ্যাসাগর-জীবনী রচিত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল যথাক্রমে — চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বিদ্যাসাগর (জ্যৈষ্ঠ ১৩০২, ১৮৯৫), বিহারীলাল সরকার-এর বিদ্যাসাগর (আশ্বিন ১৩০২, ১৮৯৫), সুবল চন্দ্র মিত্র-র Isvar Chandra Vidyasagar (১৯০২), বিনয় ঘোষ-এর বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ (কার্তিক ১৩৬৪-ভাদ্র ১৩৬৬), ইন্দ্রমিত্র-এর করুণাসাগর বিদ্যাসাগর (১৯৬৯), ব্রায়ান হ্যাচার-এর Vidyasagar: The Life and After-life of an Eminent Indian (২০১৪) এবং ফ্রাঁস ভট্টাচার্য-এর Pandit Iswarchandra Vidyasagar (২০১৯)।
বিদ্যাসাগরের প্রাথমিক চারজন জীবনীকারের মধ্যে, খুবই অকিঞ্চিৎকর তথ্যসূত্র হিসেবে বিহারীলাল সরকার গোটা লেখাতে সাকুল্যে দু-একবার উল্লিখিত হয়েছেন। কয়েকটি ইংরেজি ও বাংলা চিঠি ছাড়া, চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুবল চন্দ্র মিত্র উল্লিখিত হননি। তবে বিদ্যাসাগরের জীবনের নানা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুবাদে এবং তাঁর পরবর্তী তিন গ্রন্থকার মূলত সেই গ্রন্থটিকে আকর গ্রন্থ বিবেচনা করার কারণে, বিদ্যাসাগর-সহোদর শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রণীত গ্রন্থটির বহু তথ্য এই লেখাটিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই লেখায় বিদ্যাসাগরের জীবনের নানা ঘটনার জন্য, আমি প্রধানত দুই পরিশ্রমী বিদ্যাসাগর-গবেষক বিনয় ঘোষ ও ইন্দ্রমিত্র-এর গ্রন্থ দুটির ওপর নির্ভরশীল হয়েছি। বলা বাহুল্য, অনেক ক্ষেত্রেই বিনয় ঘোষের বিশ্লেষণের সঙ্গে সহমত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। ইন্দ্রমিত্র-এর গ্রন্থটিতে কোনও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ না থাকায়, সে প্রসঙ্গটি অবান্তর। নিছক জীবনীগ্রন্থ না হলেও, এই লেখায় গৃহীত হয়েছে অশোক সেন-এর Iswar Chandra Vidyasagar and His Elusive Milestones (১৯৭৭) এবং স্বপন বসু-র সমকালে বিদ্যাসাগর (১৯৯৩) গ্রন্থ দুটির নানা মূল্যবান তথ্য।
বিদ্যাসাগরের যাবতীয় রচনার তথ্যসূত্র হিসেবে বেছে নিয়েছি গোপাল হালদার সম্পাদিত বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহ। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও গ্রন্থটির একই সংস্করণের তিনটি খণ্ড সংগ্রহ না করতে পারার কারণে, গ্রন্থটির প্রথম ও তৃতীয় খণ্ডে বিধৃত বিদ্যাসাগরের যাবতীয় লেখা ১৯৭২ সালের প্রথম সংস্করণ এবং দ্বিতীয় খণ্ডের লেখাগুলিকে ১৯৭৪-এর তৃতীয় সংস্করণ অনুযায়ী লিখতে বাধ্য হয়েছি। এই গ্রন্থটিকে বিদ্যাসাগরের যাবতীয় লেখালেখির প্রামাণ্য রূপ হিসেবে বিবেচনা করার কারণে, তাঁর লিখিত কিছু বানান (কর্ত্তব্য, কর্ম্ম, ভট্টাচার্য্য ইত্যাদি)-এর গোপাল হালদার-কৃত রূপটি (কর্তব্য, কর্ম, ভট্টাচার্য ইত্যাদি) রাখা হয়েছে। রেফ-এর পরে দ্বিত্ববর্জন হেতু সমকালীন অন্যান্য লেখকের ক্ষেত্রেও এই বানানগত সাযুজ্য বজায় রাখা হয়েছে।
সংস্কৃত শ্লোকের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর-ব্যবহৃত বানান অবিকৃত রাখা হয়েছে। মনুসংহিতার বিভিন্ন শ্লোকের জন্য, মেধাতিথি ও কুল্লুকভট্টের ভাষ্য সংবলিত ভরতচন্দ্র শিরোমণির গ্রন্থটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। শ্লোকের বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে, চলিত ভাষা ব্যবহারের কারণে সামান্য স্বাধীনতা নিতে হয়েছে। সংস্কৃত লুপ্ত হ-কে [হ] লেখা হয়েছে। প্রত্যেকটি বাংলা ও ইংরেজি উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে বানান ও যতিচিহ্ন যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রাখার চেষ্টা করেছি।
সমসাময়িক বাংলা সংবাদপত্রের বিভিন্ন লেখা বিনয় ঘোষ সম্পাদিত সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র (প্রথম-তৃতীয় খণ্ড, ২০১৫, চতুর্থ-পঞ্চম খণ্ড, ২০১৬) থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তবে বেঙ্গল স্পেক্টেটর, সম্বাদ ভাস্কর ও সোমপ্রকাশ-এ প্রকাশিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন এই খণ্ডগুলিতে না থাকায়, সেগুলি একই সম্পাদকের সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র ১৮৪০-১৯০৫ (তৃতীয়-চতুর্থ খণ্ড, ১৯৬০) গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।
বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন ইংরেজি প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র প্রধানত অরবিন্দ গুহ সম্পাদিত Unpublished Letters of Vidyasagar থেকে নেওয়া হয়েছে। তাঁর মৌলিক বাংলা রচনাগুলির সঙ্গে ভাষাগত পার্থক্য বোঝানোর জন্য, অনুবাদে চলিত ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। অনুবাদের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব মূলানুগ থাকার চেষ্টা করেছি। মূল ইংরেজি বয়ান লেখার শেষে ‘উল্লেখপঞ্জী’ অংশে দেওয়া হয়েছে। তবে লেখাটিতে অন্য ব্যক্তিদের ইংরেজি লেখাপত্র অনুবাদের ক্ষেত্রে, ভাষার সাবলীলতা বজায় রাখার কারণে কিছুটা স্বাধীনতা নিতে বাধ্য হয়েছি।
লেখাটির শুরু থেকেই প্রচুর টীকা সংযোজিত হয়েছে। যাতে পাঠক বিনা বাধায় মূল লেখাটি পড়তে পারেন, সেই কারণে প্রত্যেকটি অধ্যায়ের একদম শেষে ‘উল্লেখপঞ্জী’ অংশে টীকাগুলি বিশদে বিবৃত হয়েছে। সেখানে প্রতিটি পরোক্ষ তথ্যসূত্রের ক্ষেত্রে, প্রথমে প্রত্যক্ষ সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু ও উৎসাহী পাঠক, ইচ্ছে করলে সেই তথ্যসূত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে পারেন। এই ধারাবাহিক লেখাটির শেষতম কিস্তিতে থাকবে বিস্তারিত গ্রন্থপঞ্জীও।
এই লেখা সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে বহু ব্যক্তি আমাকে অকৃপণভাবে সাহায্য করেছেন। বিশ্বেন্দু নন্দ উদারহস্তে প্রচুর বই ও টুকরো লেখা যুগিয়ে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে গেছেন। অধ্যাপক অর্জুনদেব সেনশর্মা পরাশরের বিধবাবিবাহ সংক্রান্ত শ্লোক তিনটির প্রকৃত শাস্ত্রগত ব্যাখ্যা স্বেচ্ছায় বুঝিয়ে দিয়েছেন ও লেখাটিতে ব্যবহার করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। নন্দিনী ভট্টাচার্য পাণ্ডা গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত (বর্তমানে প্রকাশিত) তাঁর একটি প্রবন্ধ, এই লেখায় ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন সানন্দে। শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া, তুফান নাইয়া ও অনুপ বিশ্বাস একাধিক গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা পাঠিয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই আমার সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এই সুবাদে তাঁদেরকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
এই প্রসঙ্গে দুজনের পৃথক উল্লেখ না করলেই নয়। প্রায় অন্তিম মুহূর্তে কৃশানু নস্কর বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহর দ্বিতীয় খণ্ডটি সম্পূর্ণ স্ক্যান করে না পাঠালে এবং বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত বিনয় ঘোষের পাঁচ খণ্ডে সম্পূর্ণ গ্রন্থটি ডাকযোগে আমার হাতে না তুলে না দিলে, এই লেখাটির পূর্ণাঙ্গ রূপদান অসম্পূর্ণ থেকে যেত। এই দুই উদারহৃদয় মানুষের কাছে চিরঋণী রইলাম।
কোভিডের কারণে লাইব্রেরিতে দু-একটা প্রয়োজনীয় বই দেখা বাকি থেকে গেল। একই কারণে ব্যাহত হল কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই কেনার বিষয়টিও। অদেখা রয়ে গেল লিটল ম্যাগাজিনের কয়েকটি বিদ্যাসাগর সংখ্যা। এই সব অপূর্ণতা নিয়েই শুরু হল আমার অতি তুচ্ছ বিদ্যাসাগর মূল্যায়ন।
************************************************************
ভূমিকা
গোটা উনিশ শতকের এক বিশাল সময় জুড়ে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকা বিদ্যাসাগর এক বর্ণময় চরিত্র। বিশেষত, যাঁর জন্মবৃত্তান্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এই অমোঘ ভবিষ্যৎবাণী,
...রামজয়! তুমি বৃথা কেন ভ্রমণ করিতেছ? স্বদেশে যাও, তোমার বংশে এক সুপুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তিনি তোমার বংশের তিলক হইবেন। তিনি সাক্ষাৎ দয়ার সাগর ও অদ্বিতীয় পণ্ডিত হইয়া, নিরন্তর বিদ্যাদান ও নিরূপায় লোকদিগের ভরণপোষণাদির ব্যয়নির্বাহ দ্বারা তোমার বংশের অনন্তকালস্থায়িনী কীর্তি স্থাপন করিবেন১
যাঁর ‘নাড়িচ্ছেদনের পূর্বে আল্তায় এই ভূমিষ্ঠ বালকের জিহ্বার নীচে কয়েকটী কথা লিখিয়া’ ঘোষিত হবে যে ‘এই বালক ক্ষণজন্মা, অদ্বিতীয় পুরুষ ও পরম দয়ালু হইবে এবং ইহার কীর্তি দিগন্তব্যাপিনী হইবে’২; এমনকি কেবল পিতামহই নন, চিকিৎসক ভবানন্দ শিরোমণি ভট্টাচার্য পর্যন্ত গর্ভবতী ভগবতী দেবীর চিকিৎসার আগে তাঁর কোষ্ঠী গণনা করে নিখুঁত নিশ্চিত হবেন ‘ঈশ্বরানুগৃহীত কোন মহাপুরুষ ইঁহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন’৩; তাঁর মূল্যায়ন যে পরবর্তীকালে ‘দয়ার সাগর’, ‘অদ্বিতীয় পণ্ডিত’, ‘নিরন্তর বিদ্যাদান’, ‘অনন্তকালস্থায়িনী কীর্তি’ ইত্যাদি শব্দবন্ধের মায়াজালে অবিরাম ঘুরপাক খাবে, এ একপ্রকার দৈবনির্ধারিতই বটে!
এই ‘ঈশ্বরানুগৃহীত মহাপুরুষ’-এর কেবল জন্মগ্রহণ নয়, প্রয়াণও যথেষ্ট ঈশ্বরোচিত। তাই মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে বাকশূন্য অচেতন অবস্থাতেও তিনি ‘কি এক মন্ত্রপ্রভাবে’৪ মুহূর্তের মধ্যে ঘুরে গিয়ে পশ্চিমদিকে মাথা নিয়ে গিয়ে মায়ের ছবির মুখোমুখি হতে পারবেন; ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় বসে পরম সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ভাবাবেশে আপন মনে বলে উঠতে পারবেন:
আহা! কি সুন্দর! কি সুন্দর!! কি সুন্দর!!! সোনার রথ, কি শোভা! ধন্য! ধন্য! ধন্য! হলুদ রঙের কত পতাকা উড়ছে! আহা! সমস্ত আকাশ আজ হলুদ রঙের উজ্জ্বল ছটায় একেবারে ঝলমল করছে। চারিদিকে কত সুন্দরী-সুন্দরী দেবকন্যা! দেবকন্যারা চামর নিয়ে বীজন করছেন, অপ্সরা সকল নৃত্য ও গান করছেন! আহা কত আনন্দ! আজ গুণের সাগর বিদ্যাসাগরকে নিয়ে আকাশপথে সকলে আনন্দ করতে-করতে যাচ্ছেন! মহাপুরুষ আজ পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গে চললেন!৫
ফলত বিদ্যাসাগরের সমস্ত কিছুই পূর্বনির্ধারিত।
সংশয়ী যাঁরা, যাঁরা খুঁতখুঁতে – তাঁদের দু-চারজন এসব নিয়ে কিছু বলার আগেই, বিদ্যাসাগরের এই দৈবনির্ধারিত ও পূর্বনির্ধারিত জীবনে, পাকাপোক্ত সিলমোহর লাগিয়ে দেবেন বাঙালির শ্রেষ্ঠতম ‘আইকন’ রবীন্দ্রনাথ। তিনি লিখবেন,
বিদ্যাসাগরের চরিত্রসৃষ্টিও রহস্যাবৃত — কিন্তু ইহা দেখা যায়, সে চরিত্রের ছাঁচ ছিল ভালো। ঈশ্বরচন্দ্রের পূর্বপুরুষের মধ্যে মহত্ত্বের উপকরণ প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত ছিল।৬
লিখবেন –
এই দরিদ্র ব্রাহ্মণ তাঁহার পৌত্রকে আর কোনো সম্পত্তি দান করিতে পারেন নাই, কেবল যে অক্ষয়সম্পদের উত্তরাধিকারবণ্টন একমাত্র ভগবানের হস্তে, সেই চরিত্র-মাহাত্ম্য অখণ্ডভাবে তাঁহার জ্যেষ্ঠপৌত্রের অংশে রাখিয়া গিয়াছিলেন।৭
পূর্বপুরুষের মহত্ত্বের উপকরণ পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হওয়া কিংবা তা কেবল ‘জ্যেষ্ঠপৌত্রের অংশে’ দিয়েও যেন নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না রবীন্দ্রনাথ। তাই একই প্রবন্ধে তিনি উচ্চারণ করবেন:
অভিমন্যু জননী-জঠরে থাকিতে যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়াছিলেন, বিদ্যাসাগরও বিধিলিখিত সেই মহাশাস্ত্র মাতৃগর্ভবাসকালেই অধ্যয়ন করিয়া আসিয়াছিলেন।৮
এভাবেই নানা জনে তাঁর জন্মমুহূর্ত থেকে মৃত্যুমুহূর্ত অবধি, গোটা জীবনটাকেই নানাভাবে নিখুঁত থাকবন্দি করে ফেলার বিষয়টি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন।
হয়তো ‘বিধিলিখিত’ তাঁর জীবন ও কর্মকে সুনির্দিষ্ট থাকবন্দি করে ফেলার বিষয়টিও। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলীতে বিদ্যাসাগরের যাবতীয় লেখাপত্র তিনটি খণ্ডে (১৩৩৪, ১৩৪৫ ও ১৩৪৬) বিন্যস্ত হয়েছিল ‘সাহিত্য-সমাজ-শিক্ষা ও বিবিধ’-র থাকবন্দিতে। যেহেতু এই লেখায় গবেষক গোপাল হালদার-এর বিদ্যাসাগর রচনাসংগ্রহকে প্রামাণ্য বিবেচনা করা হয়েছে, সেহেতু তাঁর থাকবন্দিকে মান্য করে লেখাটির প্রথম পর্বের বিভিন্ন অধ্যায়ে আলোচিত হবে শিক্ষাসংস্কারক বিদ্যাসাগরের কলকাতা সংস্কৃত কলেজের পুনর্গঠন; শিক্ষা বিস্তারের জন্য আদর্শ বিদ্যালয় (মডেল স্কুল), শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নর্মাল স্কুল) ও একাধিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন; বেথুন স্কুলের সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ এবং পরবর্তীকালে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন স্থাপন ও পরিচালনার বিষয়গুলি।
দ্বিতীয় পর্বের বিভিন্ন অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে, সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগর সারা জীবন বিধবাবিবাহ প্রবর্তন এবং বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিবারণের ক্ষেত্রে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তৃতীয় তথা শেষ পর্বের বিভিন্ন অধ্যায়ে সাহিত্যসংস্কারক বিদ্যাসাগরের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষিত হবে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশে তাঁর গুরুদায়িত্ব পালন এবং পাঠ্যপুস্তক রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে তাঁর সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার সুবাদে। তবে শুধু শিক্ষাসংস্কারক, সমাজসংস্কারক ও সাহিত্যসংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন করতে গেলে, তাঁর একটি বিশেষ চারিত্রবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের বিস্মৃত হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। তাই তাঁর নিঃশব্দ নিঃসীম দানের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানবতাবোধের প্রসঙ্গটিও, আমাদের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে।
একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বিদ্যাসাগরের জীবনের পুরো সময়টাই কেটেছে ব্রিটিশ-শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে। তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবনের পুরো সময়টাতেই, ঔপনিবেশিক শক্তি ক্রমশ দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। একজন আদ্যন্ত সমাজসচেতন মানুষ হিসেবে তিনি যেমন পলাশি-পরবর্তী সম্পদ লুণ্ঠনের বিষয়ে সম্যক ওয়াকিবহাল ছিলেন, তেমনই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিণামও তিনি নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর জীবদ্দশায় সিপাহি বিদ্রোহ ছাড়াও সংঘটিত হয়েছে, সাঁওতাল ও নীল বিদ্রোহ-সহ একাধিক ছোট-বড় কৃষক বিদ্রোহ। এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমরা তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব।
বিদ্যাসাগর যেহেতু কোনও স্বয়ম্ভু ঈশ্বর নন, যেহেতু তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি সমাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভূ; তাই তাঁর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সামান্য পিছিয়ে গিয়ে চর্চা শুরু না করলে, তা খণ্ডিত হতে বাধ্য। অর্থাৎ এই যে পট ‘পরিবর্তন’ যার ছোঁয়া লাগছে সমাজের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই, সেই পরিবর্তনটা উপলব্ধি করতে হলে পুরনো পটটা দেখে নেওয়া এবং নতুন পট সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে কতটা কাঙ্ক্ষিত, কতটা মঙ্গলদায়ক হয়েছিল – তা বুঝে নিতেই সামান্য পিছিয়ে গিয়ে শুরু করা। ঠিক একই কারণে বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনের দীর্ঘ অপরাহ্নবেলায় যখন প্রায় নিশ্চুপ, ঠিক সেই সময়েই থেমে না গিয়ে তাঁকে সম্যকভাবে বুঝতে চেয়ে, আরও একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াও ঘটবে।
সবচেয়ে বড় কথা – আলো-আঁধারের দ্বিমাত্রিক বিদ্যাসাগর নন, এই অকিঞ্চিৎকর লেখাটিতে তন্নিষ্ঠ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে তাঁর আলোছায়ায় ঘেরা জীবনের ধূসর জটিল জ্যামিতিক বিন্যাসের বহুমাত্রিক উন্মোচনে।
************************************************************
প্রথম পর্ব
শিক্ষাসংস্কারক বিদ্যাসাগর — নতুন দৃষ্টি, নতুন দ্যোতনা
প্রথম অধ্যায়
ক্লাইভ থেকে হেস্টিংস – এক অনন্ত লুঠের কাহিনি
On 23 June 1757, the middle ages of India ended and her modern age began.
— Jadunath Sarkar, History of Bengal
বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে সহসা পলাশির অবতারণায় অনেক পাঠকের ভ্রু-কুঞ্চন অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবুও ব্রিটিশ শাসনাধীন শিক্ষাব্যবস্থার সম্যক পর্যালোচনার জন্য পলাশির উল্লেখ যথেষ্ট জরুরি। যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা এবং যুদ্ধের ব্যাপকতার বিষয়টিকে বিবেচনা করে, ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় সঙ্গতভাবেই পলাশির যুদ্ধকে ‘ skirmish’৯ বা হাতাহাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এ কথাও সত্যি, পলাশি মানে কোনও ভাবেই নিছক যুদ্ধ নয়; বরং পলাশি ভারতবর্ষের, বিশেষত ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে, এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলবিভাজিকা।
মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজত্বের শেষ দিকে, ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বার্ষিক ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের ‘দস্তক’ বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। একমাত্র কোম্পানির নিজস্ব পণ্যসম্ভারের ক্ষেত্রে এই দস্তক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলেও, কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দস্তকের অপব্যবহার ঘটিয়ে, নবাবের প্রাপ্য রাজস্ব ফাঁকি দিতে শুরু করে। এর প্রতিবাদে ১৭১৩-তে বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ দস্তক প্রথা বাতিল করে, বাংলায় ইংরেজদের বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার নিষিদ্ধ করেন এবং অন্যান্য বিদেশি বণিকদের সঙ্গে সমান হারে শুল্ক প্রদানের নির্দেশ দেন। বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার ফিরে পেতে, কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৭১৫-তে আর্মানি বণিক জন সুরমানকে দূত হিসেবে মুঘল সম্রাট ফারুখশিয়রের কাছে পাঠানো হয়। অবশেষে ১৭১৭ সালে সম্রাট ফারুখশিয়র এক ফরমান জারি করে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে (এর পরে কেবল ‘কোম্পানি’ লেখা হবে) পুনরায় দস্তক ব্যবহারের অনুমতি দেন।
এই ফরমান দেখিয়ে সুবে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অনুমতি ফিরে পাওয়ার ফলে, কোম্পানি বাংলার বাণিজ্যে অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি সুযোগসুবিধা লাভ করে। যদিও রাজস্ব শুল্ক থেকে নবাবের আয় ক্রমশ কমতে থাকায়, এই ফরমান কোম্পানি ও বাংলার নবাবের মধ্যে নিত্য বাদ-বিসংবাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোম্পানির কর্মচারীরা শুধু যে নিজেদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দিত তা-ই নয়, তারা এই দস্তক এশীয় বণিকদের কাছে বিক্রিও করত। ফলে এশীয় বণিকরাও ওই দস্তক দেখিয়ে তাদের বাণিজ্যের জন্য শুল্ক ফাঁকি দিতে শুরু করে। তাতে যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতি হওয়ায়, ধারাবাহিকভাবে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ, নবাব আলিবর্দি খাঁ এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানি কর্মচারীদের এই কাজে বাধা দিয়ে আসছিলেন। অজ্ঞাতনামা ইংরেজ লেখকের পাণ্ডুলিপির ভিত্তিতে ঐতিহাসিক সুশীল চৌধুরী জানিয়েছেন:
সিরাজউদ্দৌল্লা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর কাছে যে সমস্ত রসিদ আছে তা থেকে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইংরেজরা ফারুখশিয়রের ফরমান পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এশীয় ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যকে কোম্পানির দস্তকের মাধ্যমে শুল্ক মুক্ত করে দিয়ে বাংলার নবাবকে তাঁর ন্যায্যপ্রাপ্ত দেড় কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে।১০
এই ঘোষণায়, বলা বাহুল্য, কোম্পানির কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা – সকলেরই আঁতে ঘা লাগছিল ।
ফরাসি ও আর্মানি বণিকদের বাণ্যিজ্যের সঙ্গে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, অষ্টাদশ শতাব্দীর চারের দশকের শেষ দিক থেকে পাঁচের দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত, কোম্পানির বাণিজ্য সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কটাপন্ন বাণিজ্য স্বার্থকে পুনরুদ্ধার করার বিষয়টি, কোম্পানির কাছে অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে। যে কোনও মূল্যে উৎপাদন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত একচেটিয়া বাণিজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতভাবে কুক্ষিগত করার জন্য, কোম্পানি বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে কোনও ক্রমে আলিবর্দির শাসনকাল পর্যন্ত নিজেদের সংযত রাখলেও, সিরাজউদ্দৌল্লা মসনদে বসার পর থেকেই তাদের হীন স্বার্থবুদ্ধি নগ্ন রূপ ধারণ করে । তাঁর সঙ্গে মূলত দস্তকের অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের পারস্পরিক সম্পর্কের যে চূড়ান্ত অবনতি ঘটে, তার চরম পরিণতি ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সংঘটিত পলাশির যুদ্ধ। যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার নবাবকে তাদের অনুগত দাসে পরিণত করে, বাংলার প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে কোম্পানি। ফলে তারা যেমন নির্দ্বিধায় বিনা শুল্কে বাংলায় বাণিজ্য করতে থাকে, তেমনই বাংলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী বিদেশি বণিকদের হটিয়ে দিয়ে, সারা বাংলায় বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য স্থাপন করে।
পলাশি যে কেবল কোম্পানিকে অসীম রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল তা-ই নয়, রাতারাতি তাদের কাছে খুলে গিয়েছিল অবাধ অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের বহুপ্রার্থিত সদর দরোজাটিও। সিরাজউদ্দৌলার পতনের পরে, কোম্পানির কাছে নবাব-তৈরির কারবার এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। পলাশির যুদ্ধ শেষে মীরজাফরকে নবাবের গদিতে বসানোর মূল্যস্বরূপ, কোম্পানির কর্মচারীরা আদায় করে ১২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৭৫ পাউন্ড। এর মধ্যে ক্লাইভ নিজে নেন ৩১,৫০০ পাউন্ড। ১৭৬০ সালে মীরজাফরকে সরিয়ে মীরকাশিমকে নবাবির পদে বসিয়ে, তারা আদায় করে ২ লক্ষ ২৬৯ পাউন্ড। এর মধ্যে ভ্যান্সিটার্ট নেন ৫৮,৩৩৩ পাউন্ড। ১৭৬৩-তে মীরকাশিমের বদলে মীরজাফরকে দ্বিতীয়বার নবাবের মসনদে বসিয়ে, কোম্পানি আদায় করে ৫ লক্ষ ১৬৫ পাউন্ড। তার পরে তাঁর অবৈধ পুত্র নাজিমুদ্দৌল্লাকে নবাবি দিয়ে, কোম্পানির আমদানি হয় আরও ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৫৬ পাউন্ড। এইভাবে শুধু নবাব-সৃষ্টির দালালিস্বরূপ, তারা আট বছরে নজরানা আদায় করে মোট ২১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬৬৫ পাউন্ড। এ ছাড়াও এই সময়কালে ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানি অতিরিক্ত আয় করে ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৮৩৩ পাউন্ড।১১
যদিও কোম্পানি ও তার কর্মচারীদের দস্তক নিয়ে অপব্যবহারের রেশ, পলাশি পরবর্তী বাংলাতে দীর্ঘদিন জারি থাকে। ১৭৬০-এ কোম্পানির সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে মীরজাফরকে হটিয়ে মীরকাশিম বাংলার সিংহাসনে বসলে, শুল্ক সংক্রান্ত কারণে তাঁর সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ বাধে। বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকার করে, মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে নবাবি ‘ফরমান’ এনেছিলেন মীরকাশিম। অথচ আগের মতোই কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য, দস্তকের অপব্যবহার চালিয়ে যেতে থাকে। ক্ষুব্ধ মিরকাশিম দেশি-বিদেশি সমস্ত বণিকের ওপর থেকে বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেন। ফলে ইংরেজদের বাণিজ্যস্বার্থ পুনরায় ব্যাহত হয় এবং তাদের সঙ্গে বক্সারের প্রান্তরে নবাবের প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু হয়।
১৭৬৪ সালের ২২ অক্টোবর ইংরেজবাহিনী বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে। দস্তকের অপব্যবহার নিয়ে পলাশির