এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • সুকিয়ানা – ৪থ পর্ব (আমি কেন আই-ফোন কিনলাম)

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ০৮ আগস্ট ২০২০ | ৪৪৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • আমি কেন আই-ফোন কিনলাম? এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা, অমৃতার চাপে পড়ে! নিজে যে ভাবে মোবাইল ব্যবহার করি, তাতে করে যে কোন টাচ স্ক্রীণ যুক্ত ফোন হলেই চলে যাবে। ফোন আসে, ফোন যায় – বড়জোর চার থেকে পাঁচটা অ্যাপ – ব্যাস! ফোনের ব্যাপারে আমি আর ক্রিকেটার আশিস নেহরা সমগোত্রীয়। ফোনের এত বেশী ফাংশানিলিটি কি জন্য দরকার সেটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি নি! তো যাই হোক, প্রশ্ন উঠতে পারে, অমৃতা তাহলে আই-ফোন কিনল কেন? পরিপার্শ্বের চাপে পরে? পিয়ার প্রেসার? স্টেটাস সিম্বল? – হতে পারে এর অনেকগুলোই কিছু কিছু সত্যি। শুধু অমৃতা নয়, একটু ভেবে দেখেছেন কি আই-ফোনে কি ভাবে ‘দ্যা মোবাইল’ হয়ে উঠল বা আজকাল আমজনতা কেন যে দামেই আই-ফোন বেরুচ্ছে সেই দামেই কেনার জন্য অগ্রীম অর্ডার দিচ্ছে বা রাত জেগে লাইন লাগাচ্ছে? তাই আসল প্রশ্ন অমৃতা কেন আই-ফোন কিনল সেটা নয় – প্রশ্ন হল, কিভাবে অসংখ্য অমৃতা-দের মনে হতে শুরু করল যে আই-ফোন-ই সেই মোবাইল যা তাদের চাই?

    গড়পড়তা আই-ফোনকে কি আপনি আর আজকাল লাস্কারী গুডস্ এর আওতায় রাখতে পারবেন? মানে শুধু এক বিশেষ শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারীরাই এটার ব্যবহার করে – এমনটা মনে হয় আর পুরোপুরি সত্যি নয়। আর এইখানেই লন্ডনের মিলিওনেয়ার পাবলিকদের সাথে বা ভ্যান গগ-এর পেন্টিং কেনার সাথে আই-ফোন কেনার পার্থক্য। আই-ফোন কেনা আমজনতাদের মধ্যে একটা দেখানোর ব্যাপার থাকবেই – লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক পাবলিক টেবিলে যখন ফোনটা রাখে, তখন তারা উলটে রাখে যাতে করে আপেল এর লোগোটা দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে আপনি ধারণা করে নিতেই পারেন যে আই-ফোন ব্যবহারী ব্যক্তির কাছে সেটা একটা লাক্সারী গুডস দেখানোর বস্তু, নাকি বাজারের এটাই সবচেয়ে দামি বলে এটা কিনেছি, আর কিছু গল্প নেই – তেমন ধারণার লোক। আই-ফোন লাক্সারী কি হয় না? হয়, যারা আরো বড়লোক, তারা আইফোনে হিরে-জহরত, প্ল্যাটিনাম লাগিয়ে ঘুরছে।

    আজকের আলোচনায় হিরে লাগানো আইফোন ব্যবহারকারী, বা এজেন্ট দিয়ে ভ্যান গগের পেন্টিং কেনা লোক, কেউ জানলই না সেই পেন্টিং কে কিনেছে, ডিসপ্লে তো দূরের কথা – কিনে বাক্স বন্দী করে রাখা পাবলিক বা লন্ডনের সব তেড়েকেটে বড়লোক – এরা সব আলোচনার বাইরে। লাক্সারী লাইফ স্টাইল অন্য ব্যাপার – যারা জানেন না, তাদের শুনিয়ে রাখি, সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ধনী লোকের ঘনত্ব লন্ডনে সবচেয়ে বেশী। আর একটা ব্যাপারে বড়লোক এবং মধ্যবিত্তের মধ্যে বিশেষ কিছু পার্থক্য নেই – সেই যে কে এক বিখ্যাত আঁতেল বলেছিলেন না, “আমরা জীবন কাটাই কিভাবে প্রতিবেশীর ঈর্ষা উৎপাদন করব এই ভেবে এবং সেই মত কাজকর্ম করে” – এটা বেশীর ভাগ জনতার ক্ষেত্রেই সত্যি! অনেকদিন আগে কয়েকটা ডকুমেন্টারী দেখেছিলাম লন্ডনের কিছু জনার যাদের প্রধান কাজই হচ্ছে কোটিপতি লোকজনকে ‘এক্সক্লুসিভ’ (তাই দামী) জিনিসপত্র সরাবরাহ করা। সে ওয়াইনের বোতল বা ব্যাঙের ডিম থেকে ক্যাভিয়ের – যা কিছু হতে পারে। এই ব্যবসার মূলমন্ত্র হচ্ছে অন্য কারো কাছে সেই জিনিস থাকবে না, বা খুব কম লোক অ্যাফর্ড করতে পারবে তেমন জিনিস। সেই মার্কেটের বা তেমন বিলাস বহুল জিনিস পত্র নিয়ে পরে কোন একদিন এক পর্ব হবে।

    এতো কিছু জেনেও তাহলে আমি আই-ফোন কেন কিনলাম? সত্যিই কি শুধুই অমৃতার চাপে পড়ে? নাকি তার বাইরেও কিছু আছে? এই সব নিয়ে গভীরে ঢোকার আগে একটা গল্প শুনে নেওয়া যাক - কালো মুক্ত-র (ব্ল্যাক পার্ল) গল্প।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার ঠিক আগে ইতালির হীরে ব্যবসায়ী জেমস আসায়েল ইউরোপ থেকে পালিয়ে কিউবা গিয়ে জাঁকিয়ে বসেলেন নতুন এক ব্যবসা ফেঁদে। আমেরিকান সেনার যুদ্ধের সময় ওয়টারপ্রুফ ঘড়ির দরকার হয়ে পড়েছিল, আর ইউরোপের লোক হবার জন্য জেমসের ছিল কানেকশন সুইজারল্যান্ডের সাথে। কিন্তু ভালো দিনও শেষ হয় এক সময় – যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ওয়াটারপ্রুফ ঘড়ির বাজার গেল মিইয়ে – জেমসের কাছে রয়ে গেল হাজার হাজার না বিক্রী হওয়া সুইস ঘড়ি। এমন নয় যে তেমন ঘড়ি কেবল আমেরিকানদেরই দরকার ছিল, জাপানীদের কাছেও চাহিদা ছিল ভালো – কিন্তু প্রবলেম হল জাপানীদের কাছে টাকা পয়সা তেমন ছিল না। কিন্তু বিনিময় করার জন্য ছিল জাপানীদের কাছে হাজার হাজার মুক্ত। এই ভাবে জেমস এবং তাঁর ছেলে জমে থাকা ঘড়ি মুক্তার বিনিময়ে কিনে হয়ে উঠলেন সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নামকরা মুক্তো ব্যবসায়ী। জেমসের ছেলে সালভাদর তো আবার ‘মুক্তো সম্রাট’ বলে পরিচিত হয়ে গেলেন।

    ১৯৭৩ সাল নাগাদ একবার দক্ষিণ ফ্রান্সের কাছে সমুদ্রে নিজের ইয়াট-এ করে ছুটি কাটাতে গিয়ে সালভাদর এর সাথে আলাপ হয়ে গেল বরুইলে নামের এক স্টাইলিশ ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ীর সাথে। মুক্ত প্রসঙ্গে উঠতে বরুইলে জানালেন তিনি এক অদ্ভূত জিনিসে সন্ধান পেয়েছেন – এমনিতে তিনি এক তাহিতি কন্যার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি ওদিকে ঘোরার সময় লক্ষ্য করেছেন যে দক্ষিন প্রশান্ত মহাসগারে তাহিতির কাছেকাছি ওদিকেটা একধরণের কালো-মুখো ঝিনুকে ভর্তি – আর সেই সেই ঝিনুক থেকে নাকি বেরিয়ে আসে এক বিষ্ময়কর বস্তু ‘কালো মুক্তো’.

    মনে রাখতে হবে তখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে তাহিতির কালো মুক্তোর কোন বাজার বা চাহিদা কিছুই ছিল না। এমনিতেই ফ্রেঞ্চরা বেশ চার্মিং টাইপের হয়, তাই বরুইলে এটা ওটা বলে পটিয়ে ফেললেন সালভাদরকে একসাথে কালো মুক্তোর ব্যবসায় যাবার জন্য। ঠিক হল তাঁরা দুজনে মিলে মুক্তো চাষ করবেন তাহিতির কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের আশেপাশে – আর সেই কালো মুক্তো বিক্রী করবেন সারা বিশ্ব। কিন্তু প্রথম দিকে সেই ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ল – সালভাদর একটাও কালো মুক্তো বিক্রী করতে পারলেন না ইউরোপ বা আমেরিকাতে। তো এই অবস্থায় সাধারণ ব্যবসায়ী কি করে? আরো অন্য ব্যবসা থাকলে তাতে নজর দাও কালো মুক্তোর বাজার ছেড়ে – বা দাম কমিয়ে অন্য কাউকে লটে বিক্রী করে দাও। বা দুটো সাদা মুক্তোর সাথে একটা কমদামে কালো মুক্তো এমন কোন একটা স্কীম চালু করতে পারতেন।

    কিন্তু সালভাদর ঝানু ব্যবসায়ী – অপেক্ষা করা শুরু করলেন। প্রথম দিকে মুক্তো গুলির কোয়ালিটি তেমন একটা ভালো ছিল না। প্রায় এক বছর অপেক্ষা করার পর সালভাদর হাতে পেলেন ভালো কোয়ালিটির মুক্ত। সেই ভালো কোয়ালিটির মুক্ত নিয়ে তিনি এলেন এবার নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত রত্ন ব্যবসায়ী এবং বন্ধু হ্যারী উইনস্টোন এর কাছে। উইনস্টোন রাজী হয়ে গেলেন তাঁর রাস্তার ধারে দোকানের কাঁচের শোকেসে কালো মুক্তো প্রদর্শন করতে – পাশে দাগিয়ে দিলেন চরম এক দামের ট্যাগ। আর ওদিকে সালভাদর শুরু করলেন বিশাল বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেন – যত সব ফ্যাশন ম্যাগাজিনে। বাকি সব মূল্যবান হীরে, চুনি, পান্নার মধ্যে জ্বলজ্বল করা কালো মুক্তো! এর ফলে কি হল? কিছু আগেও যে কালো মুক্তো গুলো ঝিনুকের পেটে থেকে কোন সূদূর সাগরের খাটানো চটের বস্তা বা দড়িতে ঝুলছিল – তারা আজ নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে ধনী মহিলাদের গলায় নেকলেস বা হাতের আঙটি বা ব্রেসলেট হয়ে ঝুলতে শুরু করল। সালভাদর এই ভাবে প্রায় মূল্যহীন এক জিনিসকে চরম মহার্ঘ্য করে তুললেন!

    তো কেমন ভাবে এটা সম্ভব করলেন সালভাদর? কিভাবে তিনি ফ্যাশন জগতের সব মাথা এবং ধনী ব্যক্তিদের বিশ্বাস করাতে শুরু করলেন তাহিতি কালো মুক্তোর মহার্ঘ্যতার ব্যাপার? সে এক জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার – আপনি যদি আরো জানতে ইচ্ছুক হন, তাহলে অনুরোধ করব ড্যান আরিইলি-র “প্রেডিক্টেবলি ইর‍্যাশ্যানাল” বইটা পড়ে নেবার জন্য। বিশ্বাস করি সময় নষ্ট মনে হবে না – এতো সুন্দর ভাবে বইটি লেখা যে আমার মত অর্থনীতি থেকে শত হস্ত দূরে থাকা পাবলিকও পড়ে আনন্দ পেয়েছে।

    আসলে সালভাদর এই কালো মুক্তোর দাম ম্যানুপুলেট করেছিলেন – হয়ত মানুষের সাইকোলজি এত বেশী না বুঝেই কেবলমাত্র ব্যবসায়ী বুদ্ধির দ্বারা। কিন্তু পরে অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন সালভাদর এর মত এমন উদাহরণ বিরল নয় – এখানে যেটা মূলত এক্সপ্লয়েট করা হয় তা হল ‘অ্যাঙ্কর প্রাইস’। আর একটু তলিয়ে দেখলে গেলে যদি কোন নতুন জিনিস বাজারে দেখি, তাহলে আমরা কিভাবে তার দাম ঠিক করি? কিসের সাথে তুলনা করে তার দামের গ্রহণ যোগ্যতা বিচার করি? আমরা যে দামটাই প্রথম দেখি সেটাই কি আমাদের কাছে ‘অ্যাঙ্কর’ হয়ে যায়? এবং তার পর থেকে সে জাতীয় বাকি সব কিছুর তুলনা কি আমরা সেই প্রথম দেখা দামটি দিয়েই বিচার করি? গবেষকরা অনেক পরীক্ষা করে ক্রমশঃ এটা প্রমাণ করেছেন যে সেই প্রথম দেখা বা প্রথম অনুভবের যে ‘প্রাইস’ বা দাম, তাই আমাদের কাছে আমাদের অজান্তেই ‘অ্যাঙ্কর প্রাইস’ হয়ে ওঠে। এবং শুনলে হয়ত অবাক হবেন যে এই যে ‘অ্যাঙ্কর প্রাইস’ তার প্রভাব কিন্তু অনেক দিন এমনকি অনেক বছর পর্যন্ত থেকে যায় আমাদের মধ্যে। সালভাদর তাঁর কালো মুক্তোর দাম অ্যাঙ্কর করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন বাকি সব মূল্যবান হীরে জহরতের সাথে – আর সেই থেকে সেই দামটাই রয়ে গেছে কালো মুক্তোর। নতুন কোন জিনিস যখন একটা বিশেষ দামে কিনি আমরা, সেই থেকে সেই দাম টাই থেকে যায় আমাদের মনে রেফারেন্স হিসাবে আর আমরা অজান্তেই সেই দামের সাথে অ্যাঙ্কর হয়ে পড়ি।

    আই-ফোনের ব্যাপারটাও অনেকটা তাই – প্রথম সেই বাজার ছাড়া দাম দিয়ে আমরা যেই একবার কিনে ফেলেছি আই-ফোন, তার পর থেকে সেই দামটাই আমাদের কাছে অ্যাঙ্কর হয়ে গেছে। আর সেই কারণে আমরা আই-ফোন ১২ বেরুলে তার তুলনা করব আইফোন ১১ এর সাথে – কারণ সেটাই আমাদের অ্যাঙ্কর। আমরা স্যামসুং এর সাথে তুলনা করি না। কিন্তু এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি কারণে এই অ্যাঙ্কর প্রাইস কে গ্রহণ করি? অনেকেই হয়ত জানেন এই মার্কেট সাইকোলজিটা, কিন্তু তবুও কেন আমরা ফাঁদে পা দিই?

    এই যে ‘অ্যাঙ্কর প্রাইস’ এর সাথে জুড়ে থাকে আর একটা ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার – সেটা হল ‘আর্বিটারি কোহরেন্স’। মানে ব্যাপার হল, নতুন জিনিসের আমাদের সামনে উপস্থাপন করা দামটা হয় ‘আর্বিটারি’, কারণ তার কোন পূর্বতন রেফারেন্স পয়েন্ট নেই, যেমন সালভাদরের কালো মুক্ত। কিন্তু একবার যখন আমাদের মনে সেই দামটা গেঁথে যায়, তা যতই আর্বিটারি হোক না কেন – সেটাই প্রভাব ফেলতে শুরু করে ভবিষ্যতে আমরা কত খরচ করতে রাজী হব তেমন বস্তুর জন্য।

    আর্বিটারি কোহরেন্স জিনিসটার সূত্রপাত ইনফ্যাক্ট আর্বিটারি-ই হতে পারে। ধরুণ যদি আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করি আপনার আধার কার্ডের শেষ দুই নম্বর – ধরা যাক আপনি বললেন ৫৪, এবার আমি বললাম এই দামে কি আপনি এক পিস অসময়ের ছোট হিমসাগর আম কিনতে রাজী হবেন? আপনাদের কি মনে হয়, আধার কার্ডের শেষ দুই নম্বর (এ ক্ষেত্রে ৫৪) এর সাথে আপনি ছোট হিমসাগর আমটা কিনতে রাজী হবেন কিনা তার কোন সম্পর্ক আছে? অর্থাৎ ওই আর্বিটারি ৫৪ নম্বরের সাথে কি আপনার আম কেনার সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক আছে? কি মনে হচ্ছে, প্রশ্নটাই ফালতু? এমন সম্পর্ক আবার থাকে নাকি!! তাই যদি আপনার মনে হয়, তাহলে আপনি এম আই টি-তে এক গবেষণামূলক পরীক্ষার কথা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন – সেখানে দেখা গেছে যে যার স্যোশাল সিকিউরিটি শেষ দুটি নম্বর উঁচুর দিকে, সে বেশী দাম দিতে রাজী হচ্ছে। অর্থাৎ একই জিনিস যার শেষ দুই নাম্বার ৮২ সে বেশী দাম দিয়ে কিনতে চাইছে, যার নাম্বার ২৪ তার থেকে! আর এটা শুধু একটা পরীক্ষা নয় – অনেক গুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এমন আর্বিটারি কোহোরেন্স সম্ভব এবং বাস্তব।

    তাহলে উপরের পরীক্ষায় ‘অ্যাঙ্কর’ কোথা থেকে আসছে? সেটাও স্পষ্ট হয়েছে যখন এম আই টির ছাত্রদের একাধিক জিনিস বিডিং করার অপশন দেওয়া হয়েছে। মানে ধরুণ বলা হয়েছে তুমি ওই অসময়ের হিমসাগর আম বা একটা শসা, দুটোর উপরেই বিড করতে পারবে – কত দিতে রাজী হবে? এখানে দেখা গেছে যে যার ৮২ আধার কার্ডের শেষ দুটো নাম্বার সে কিন্তু এখানেও ২৪ নাম্বারের থেকে বেশী দামেই বিড করেছে। কিন্তু ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হচ্ছে এরা উভয়েই বেশী দামে বিড করেছে হিমসাগর আমটাকে, শসার থেকে। অর্থাৎ একবার যখন আর্বিটারি ভাবে একজন কত দেবে আমের দামের জন্য ঠিক করে ফেলেছে, সেটাই হয়ে গেছে তার অ্যাঙ্কর – পরের শসার দামটা সে আমের দামকে অ্যাঙ্কর করেই হেঁকেছে।

    এখানে একটা ব্যাপার বুঝে নেওয়ার আছে, আমাদের চারিদিকে দামের উল্লেখের ছাড়াছড়ি – তা সে মোবাইলের দামই হোক, বা টি ভি বা ফ্রীজ, বা গাড়ি। এই সব জিনিসেরই কিন্তু এম আর পি আছে, প্রাইস ট্যাগ আছে। আই-ফোনের প্রাইস ট্যাগটা কিন্তু ‘অ্যাঙ্কর’ নয় যতক্ষণ না আপনি সেই আই-ফোনটা কিনছেন বা কেনার জন্য সিরিয়াসলি ভাবছেন। একবার সেই দাম অ্যাকসেপ্ট করে আপনি কিনে ফেলেছেন কি, তার পর থেকে আপনার কাছে অজান্তেই সেটা হয়ে উঠবে আপনার ‘অ্যাঙ্কর’ – আপনার মনে হবে, না কোন রিলেশন নেই – কিন্তু তলিয়ে দেখলে বুঝতে পারবেন আপনার সাব-কনসাস মনে একটা তুলনা আপনি করেই যাচ্ছেন এই প্রথম দেওয়া দামের সাথে। আর একটা খুব সাধারন উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝানো যাক – কেউ ধরুণ ভারত থেকে গিয়ে আমেরিকায় সেটেল হল, স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের থেকে সে বেশী মাইনে পাচ্ছে আমেরিকায় – কিন্তু বাজারে গিয়ে বহুদিন পর্যন্ত সমস্ত জিনিসের দাম ডলার থেকে টাকায় কনভার্ট করেই তবে কিনবে। বেহালার বাজার থেকে কেনা ১৫টাকা কিলো আলু তার মনের মধ্যে অ্যাঙ্কর হয়ে থাকবে বহু বহু দিন। একই ভাবে দেশের মধ্যেই দেখবেন কেউ কলকাতা থেকে বোম্বে ট্রান্সফার হয়ে গেলে সে কলকাতার দামের সাথেই তুলনা করে জিনিস খুঁজবে (যদিও তার মাইনে বেড়েছে)। কলকাতায় ২০ হাজার দিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকত, সেই ঘর ভাড়া বোম্বেতে খুঁজতে খুঁজতে লাইফ হয়রান করে ফেলবে!

    আপনি ভাবছেন চট করে পালটানো যায় এই অ্যাঙ্কর? যায় হয়ত – কিন্তু তা অনেক সময় সাপেক্ষ। আপনি যতটা ভাবছেন, তার থেকেও ব্যাপারটা জটিল। আমাদের প্রথম সিদ্ধান্তের ছাপ মনে মধ্যে থেকে যায় বহুদিন – আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে থাকে আপনার অবচেতনে। আর এটা কোন দার্শনিক বক্তব্য নয়, পরীক্ষার প্রমাণিত সত্য।

    প্রথম সিদ্ধান্ত যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে তা কি ভাবে আমাদের পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী অভ্যাসে পরিণত হয়। এর উদাহরণও আপনাদের সবার জানা, বা নিজের অনুভব করা। ধরুণ আপনি খাবার জন্য রেষ্টুরান্ট খুঁজছেন বেড়াতে গিয়ে – সারি সারি রেষ্টুরান্ট। কিন্তু একটার সামনে দেখলেন চার-পাঁচ জন অপেক্ষা করছে – আপনার মাথায় খেলে গেল যে এত জন যখন অপেক্ষা করছে তখন এটা নিশ্চয়ই ভালো হবে! আপনি দাঁড়িয়ে পড়লেন লাইনে – এরপর আপনাকে দেখে আরো একজন দাঁড়িয়ে গেল। এখানে হচ্ছে যে আপনি কোন জিনিস ভালো বা খারাপ তা বিচার করছেন অন্যের ব্যবহার দেখে। কিন্তু কি হয় যদি আপনি নিজে সেই লাইনের প্রথম ব্যক্তি হন? আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে কে সাহায্য করছে? অনেক সময় এই ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে আপনি আসলে লাইন দিয়েছেন (বা লাইন দেন নি) নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার পিছনে।

    আসলে এই “প্রেডিক্টেবলি ইর‍্যাশ্যানাল” বইটায় দেওয়া উদাহরণ গুলো এতই কাছের যে সেটাই ব্যবহার করা যাক এক্ষেত্রে। মনে করে দেখতে পারেন আপনি প্রথম কিভাবে স্টারবাক্স-এর কফিতে আসক্ত হলেন? আগে আপনি খদ্দের ছিলেন রাস্তার কোণের ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর। সেদিন প্রচন্ড কফি তেষ্টা পেয়ে গেছে, ডানকিনস্‌ ডোনাট যাবার পথেই রয়েছে স্টারবাক্স । প্রথম দিন হয়ত কেবল কৌতূহল বশতঃ আপনি ঢুকে একটা ছোট্ট কফির অর্ডার করে দিলেন – জানেন না কেমন খেতে হবে, দামও বেশ বেশী ডানকিনস্‌ এর থেকে। কিন্তু খেয়ে বেশ আপনার ভালো লাগলো – বললেন, দাম একটু বেশী ঠিক আছে – তাবলে খেতে খারাপ নয়! পরের সপ্তাহে আবার আপনি কফি খেতে যাচ্ছেন ডানকিনস্‌ ডোনাট- সামনেই পড়ল স্টারবাক্স। এবার জটিল প্রশ্ন – আপনি কি আবার ঢুকবেন সেখানে খেতে? এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কিন্তু সুদূর প্রসারী হতে যাচ্ছে আপনার অজান্তেই!

    আপনি যদি বিশাল হিসেবী হন বা লজিক্যাল হন, তাহলে দ্বিতীয় দিন স্টারবাক্সে ঢোকার আগে আপনি তুলনা করবেন তার কফির সাথে ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর কফির। স্বাদ কেমন, দাম কেমন এবং আপনাকে রোদের যে আরো কিছু দূর হাঁটতে হবে ডানকিনস্‌ ডোনাট- যেতে সব মিলিয়ে হিসাব করবেন। স্রেফ এক কাপ কফি খাবার জন্য এত বিশ্লেষণ সবাই করতে পারবে না – তো আপনি কি করবেন? আপনি নিজেকে প্রবোধ দেবেন, “আগের দিন এখানে এসেছিলাম, কফি তো ভালোই ছিল – সুতরাং সেই দিন স্টারবাক্সে ঢোকার সিদ্ধান্ত আমার ঠিক নেওয়া হয়েছিল”। তো আপনি আবার ঢুকলেন এবং এক কাপ কফি কিনলেন স্টারবাক্স থেকে। টের পেলেন কি আদপে কি হল? এখানে আপনি স্টারবাক্সের সামনের লাইনে দ্বিতীয় ব্যাক্তি হলেন – আর লাইনের প্রথম ব্যক্তিটিও কিন্তু আপনি! এবার এটা চলতেই থাকবে – পরের দিন আবার আপনার দু-দিনের ভালো কফির কথা মনে পরবে – আবার ঢুকবেন, এই ভাবে লাইনের তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে উঠবেন। এই করতে করতে স্টারবাক্স-এর কফি কেনা হয়ে উঠবে আপনার অভ্যাস।

    তাহলে এবার কি আপনি ভাবছেন না যে, ভাই সবই তো বুঝলুম – কিন্তু কিভাবে স্টারবাক্স আমার অ্যাঙ্কর হয়ে উঠল ডানকিনস্‌ ডোনাট-কে সরিয়ে? এটা কি শুধুই আমার সিদ্ধান্ত? স্টারবাক্স কি নিজে কোন এফর্ট দেয় নি মানুষের অ্যাঙ্কর পাল্টাতে? অবশ্যই দিয়েছে – সেটা আরো ইন্টারেষ্টিং। আর সেখানেই আরো বেশী মিল স্টারবাক্সের ডানকিনস্‌ ডোনাট-কে হারানোর গল্পের সাথে আই-ফোনের নোকিয়াকে হারানোর গল্প। স্টারবাক্স হয়ে গেছে কফি সেবনের নতুন অ্যাঙ্কর যেভাবে আই-ফোন হয়েছে মোবাইলের। আপনি প্রথম দিন স্টারবাক্সে ঢুকেই দেখেছিলেন সেখানকার কফির দাম আপনার চেনা কফির দোকান ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর থেকে বেশ অনেকটাই বেশী। আর আপনার অ্যাঙ্কর প্রাইস ছিল ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর কফির দাম। তাহলে?

    হাওয়ার্ড সুলজ্‌ যখন স্টারবাক্সের কফি ব্যবসার জন্ম দেন তখন তিনি কিন্তু সেই মুক্তো ব্যবসায়ী সালভাদর-এর মতন নিজের উপস্থিত বুদ্ধি এবং ইনটিউশন কাজে লাগিয়েছিলেন। সেই সব অর্থনীতির কচকচির মধ্যে না ঢুকেও, তিনি প্রথম থেকেই সচেতন ভাবে চেষ্টা করছিলেন স্টারবাক্স-কে অন্য কফির দোকানের থেকে আলাদা করতে। আজকার দিনে আমরা যাকে ‘ইন্ডিভিজুয়্যাল আইডেনটিটি’ বলি সেই জিনিস আর কি! কিন্তু সে পার্থক্য তো শুধু দাম বেশী করে দিলেই হবে না – তিনি বুঝেছিলেন কফির দোকানের ‘অ্যাম্বিয়েন্স’ আর আপনার ‘এক্সপিরিয়েন্স’ এর গুরুত্ব। প্রথম থেকেই হাওয়ার্ড চেষ্টা করেছিলেন স্টারবাক্সের সাথে একটা কন্টিনেন্টাল কফির দোকানের অনুভব জুড়ে দিতে। কফি বীনসের কোয়ালিটির উপরে গুরুত্ব দিয়েছিলেন – প্রথম থেকেই স্টারবাক্সে যে কফি বীনস ব্যবহার করা হত তা ছিলে ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর ব্যবহৃত কফি বীনসের থেকে অনেক ভালো। পরের দিকে স্টারবাক্সের জন্য স্পেশাল রোষ্টেড বিনস্‌ এবং নিজেদের সাপ্লাই চেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আগের পর্বে আমার ফ্ল্যাটের উপর তলায় যে অ্যান্ড্রু-র কথা লিখেছিলাম, সে ছিল এই স্টারবাক্সের কফি বীনসের ইউরোপীয়ান সাপ্লাই চেনের বড়কর্তা।

    স্টারবাক্সে ঢুকলেই যে একটা সুগন্ধ পাওয়া যায়, সেটা আর কিছুর নয়, রোষ্টেড কফি বীনসের – সেটাও সচতুর ভাবে প্ল্যান করলেন হাওয়ার্ড। বিক্রী কাউন্টারের এবং ক্যাশ যেখানে নেওয়া হচ্ছে সেখানে সামনের কাঁচের শোকেসে সাজিয়ে রাখলেন লোভনীয় সব স্ন্যাকস্‌, কেক, – নানা ধরণের ক্রোসো, বিসকোটি, বা কাষ্টার্ড পেষ্ট্রী ইত্যাদি। এমনকি কফি কাপের সাইজেরও দিলেন অন্য নাম – প্রচলিত স্মল, মিডিয়াম, লার্জ থেকে সরে গিয়ে দিলেন আকর্ষনীয় সব নাম – শর্ট, টল, গ্রান্ডে, ভেন্টি – পহির নামের সাথেও দিলেন টুইষ্ট – বিক্রী করতে শুরু করলেন ক্যাফে আমেরিকানো, ক্যাফে মিষ্টো, ফ্রাপ্পুচিনো ইত্যাদি। অর্থাৎ মোদ্দা কথায় বলতে গেলে স্টারবাক্স প্রথম থেকেই নিজেদের পক্ষে যা করা সম্ভব তার সবটাই প্রাণপণে করতে শুরু করেছিল যাতে স্টারবাক্সের কফি পান করা আমাদের কাছে এক ‘অন্য’ অভিজ্ঞতা হয়! আর সেই অভিজ্ঞতা এতই অন্য যে আমরা আমাদের পূর্বতন অ্যাঙ্কর ডানকিনস্‌ ডোনাট-এর কফির সাথে আর স্টারবাক্সের তুলনা করব না। বরং তার বদলে স্টারবাক্স নিজেই আমাদের কাছে নতুন এক অ্যাঙ্কর হিসাবে আবির্ভূত হবে। এই স্ট্র্যাটিজিই স্টারবাক্স-এর সাফল্যের অন্যতম কারণ।

    স্টারবাক্সের মতন ঠিক একই ভাবে নতুন অ্যাঙ্কর হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আপনারা নিজেরাই এবার তখনকার সময়ে আমাদের মোবাইল ফোনের অ্যাঙ্কর নোকিয়ার সাথে তুলনা করে নিন আই-ফোনের! মিল পাচ্ছেন না? আই-ফোন এর প্রধান লক্ষ্য ছিল একদম নতুন ‘অভিজ্ঞতা’-র সৃষ্টি করা আপনার ব্রেনে! আর অ্যাপেল এটা শুরু করেছিল মোবাইলের নামকরণের মধ্যে দিয়েই – নামের মধ্যে ‘আই’ জুড়ে! মনে হয় ছোট্ট ব্যাপার – কিন্তু মার্কেটিং মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে যুগান্তকারী ব্যাপার। আই-ফোন কিভাবে মোবাইল মার্কেটে বিপ্লব এনেছিল তা নিয়ে অনেক লেখা পত্র আছে, উৎসাহী ব্যক্তিরা নেটে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন এমন অনেক লেখা। প্রথম বাজার যখন আই-ফোন এল, সেই প্রথম মানুষ দেখল তিনটি আলাদা ইলেকট্রনিক গ্যাজেটকে কিভাবে এক পকরে ফেলা যায় – একটা সম্পুর্ণ ধরণের মোবাইল ফোন, টাচ্‌ কনট্রোল ওয়াইড-স্ক্রীণ আর সম্পূর্ণ নতুন ধরণের ইন্টারনেট সংযোগকারী ব্যবস্থা! এই সব মিলিয়ে আই-ফোন সেই সময়ের বাজারে প্রচলিত যে কোন মোবাইল ফোনের থেকে অন্তত পাঁচ বছর এগিয়ে ছিল সময়ের দিক থেকে! ফলতঃ বলাই বাহুল্য আপনি আই-ফোন কিনতে গিয়ে আর ‘অ্যাঙ্কর’ খোঁজ করেন নি!

    আমরা এখানে যে আলোচনা করেছি তার বেশীর ভাগটাই ক্রেতার পছন্দের উপর ভিত্তি করে। প্রশ্ন হল, ক্রেতা কি সব সময় জানে সে ঠিক কি পছন্দ করে বা ঠিক কি চায়? বাজারী চলিত অর্থনীতি অনুযায়ী কোন এক জিনিসের দাম ঠিক হয় সাপ্লাই-ডিম্যান্ড এর সাম্যের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কোন এক নির্দিষ্ট দামে কত উৎপাদন হচ্ছে (সাপ্লাই) জিনিসটা এবং সেই দাম দিয়ে কেনার ক্ষমতা কয়জনার আছে (ডিম্যান্ড)। এই দুই শক্তির যেখানে মেলবন্ধন ঘটে, তা থেকেই তৈরী হয় বাজারী দাম (মার্কেট প্রাইস)। খুবই মনোগ্রাহী ধারণা – কিন্তু এটা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবার জন্য ধরে নিতে হয় যে এই শক্তি দুটি নিজেরা স্বাধীন এবং একসাথে মিলে বাজারের দাম ঠি করে।
    চলিত অর্থনীতিতে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে ক্রেতা কতটাকা দিয়ে কিনতে চায় সেটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বাজারী দাম নির্ধারণ করতে। কিন্তু আমরা যে উদাহরণগুলো এখানে আলোচনা করলাম সেখানে খুব সহজেই দেখানো যায় যে ক্রেতা কতটাকা ব্যায় করতে চায় সেটা খুব সহজেই ম্যানুপুলেট করা যায় – যেমনটা করেছে স্টারবাক্স, আই-ফোন এবং আরো অজস্র কোম্পানী। এই সব উদাহরণে এটা আরো প্রমাণ হয় যে ক্রেতা বেশীর ভাগ সময়েই তাদের নিজেদের কি পছন্দ সেটা জানে না! এবং সেই ‘পছন্দের’ জন্য কত খরচ করে সে রাজী সেই বিষয়েও সম্যক ধারণা নেই! উপরের উদাহরণ আরো প্রমাণ করে মার্কেট প্রাইস নির্ধারণ কারী সাপ্লাই এবং ডিম্যান্ড আদৌ নিজেরা স্বাধীন প্যারামিটার নয়! প্রকৃত পক্ষে এরা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল – একটা দ্রব্যের গায়ে উল্লিখিত দাম, প্রোমোশন প্রাইস, কিছু কিনলে কিছু ফ্রী – এগুলো সবই আসলে সাপ্লাই সাইডের গল্প। ক্রেতা কত দিয়ে কিনতে চায় তার উপর নির্ভর করে মার্কেট দাম ঠিক না হয়ে পাশা উলটে গেছে – হচ্ছে কি মার্কেট প্রাইস প্রভাবিত করছে ক্রেতাকে সে কত দিয়ে কিনবে!

    পরিশেষে যেটা বলার, নিজেদের অজান্তেই আমাদের নেওয়া বেশীর ভাগ সিদ্ধান্তের পিছনে এই ভাবে কাজ করে যায় এই ‘অ্যাঙ্করিং’ ব্যাপারটা। অ্যাঙ্করিং জিনিসটা যদি একটু সরল ভাবে দেখেন তো এর অনেকটা জুড়ে আছে আমাদের অবচেতনে করা জিনিসের মধ্যে আপেক্ষিক তুলনা। আর ভাবছেন অ্যাঙ্করিং শুধু কাজ করে স্টারবাক্সে কফি কেনা বা আই-ফোন কেনার উপর? মোটেও তা নয় – এর প্রভাব অনেক সুদূর প্রসারী। আপনি ছেলেকে কোন স্কুলে পাঠাবেন, কোথায় ছুটি কাটাতে যাবেন, কি সিনেমা দেখবেন বা গান শুনবেন, কার সাথে প্রেম এবং কাকে বিয়ে করবেন – জীবনের ছোট থেকে বড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পিছনে কলকাঠি নাড়ে আমাদের এই অ্যাঙ্করিং এর অভ্যেসটা।

    তাহলে আমরা দেখলাম যে এই অ্যাঙ্করিং এর অভ্যেসটা কিভাবে এক আমাদের প্রথম আর্বিটারি পছন্দের বা সিদ্ধান্তের উপর বা এমনকি র‍্যান্ডাম কোহরেন্স এর উপরও নির্ভর করে। আরো তলিয়ে দেখতে গেলে ব্যাপারটা ভীতপ্রদ – প্রথম সিদ্ধান্ত বা প্রথম পছন্দের প্রভাব এতো সুদূর প্রসারী হতে পারে তা আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইব না। বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার – কারণ বিশ্বাস না করলেও আপনার অজান্তেও আপনি নিজের নেওয়া প্রথম সিদ্ধান্ত বা পছন্দের উপর অনেকটা নির্ভর করে আছেন। তার থেকে বরং মেনে নি যে এটা বাস্তব এবং তাই প্রথম সিদ্ধান্ত নেবার আগে খুব মন দিয়ে ভাবুন। স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন – আই-ফোন বা স্টারবাক্সে কফি কেনার আগে ভাবুন –

    -নিজের অভ্যাসকে প্রশ্ন করুন। কিভাবে শুরু করলেন সেই অভ্যাস?
    -জিজ্ঞেস করুন নিজেকে যে এই বস্তু কিনে বা খেয়ে কতটা আনন্দ আপনি পেলেন? যতটা ভেবেছিলেন ততটা কি?
    -ভাবুন যে আই-ফোন খাতে বেশী টাকা ব্যয় না করে, সেই টাকা আমি কি অন্যভাবে খরচ করতে পারতাম যাতে আরো বেশী আনন্দ পেতে পারতাম হয়ত!

    মোদ্দা কথায় নিজের অভ্যাসকে প্রশ্ন করতে শিখুন – তা না করে একবার আই-ফোন এর চক্করে চলে এলে তার থেকে মুক্তির আর উপায় নেই!

    Reference: Dan Ariely, “Predictably Irrational: The hidden forces that shape our decisions”, Harper, New York 2009.  
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৮ আগস্ট ২০২০ | ৪৪৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 174.102.66.127 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১০:১৪96040
  • খুব ভালো হচ্ছে সিরিজটা  

  • | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১১:২১96045
  • আমি তো আইফোং কিনি নি কিনবোও না। অজ্জিত আইফোং থেকে শাওমিতে স্যুইচ করে গেছে।
    আমাদের কী হপে সুকি?

    অন আ সিরিয়াস নোট। লেখাটা ভাল। বেশ ভাল।
  • dc | 103.195.203.130 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১১:২৪96047
  • ভারি ভালো লেখা। আইফোনের অ্যাংকর প্রাইসিং নিয়ে কেস স্টাডি তো হয়েইছে। তাছাড়া আইফোন রিলিজ করার আগে বেশ কিছুদিন ধরে এক্সাইটমেন্ট বিল্ড আপ করা হয়েছিলো, গাদাগুচ্ছের আর্টিকেল বেরিয়েছিল আপেল এবার আইফোন বানাবে কিনা, বানালে তাতে কেমন ফিচার থাকবে, সেসব নিয়ে। এক বছর বা তারও বেশী সময় ধরে এই মার্কেটিং ক্যাম্পেন চালানো হয়েছিল। সেই সময়ে আপেলের পপুলার প্রোডাক্ট ছিলো আইপড প্লেয়ার, তার সাথে তুলনা করা হয়েছিল। আইফোনের ডিজাইনিং, প্রাইসিং, মার্কেটিং, সবই খুব ভালো ভাবে করা হয়েছিল।
  • dc | 103.195.203.130 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১১:২৭96048
  • এই যে, সেই লেজেন্ডারি লঞ্চ ঃ-)

  • dc | 103.195.203.130 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১১:২৭96049
  • এই যে, সেই লেজেন্ডারি লঞ্চ ঃ-)

  • dc | 103.195.203.130 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১১:৪১96050
  • মনে পড়লো, সেই সময়ে, ২০০৮ বা ৯ সালে, নোকিয়ার একটা ফোন কিনেছিলাম, এক্সপ্রেসমিউজিক। সেটার টাচ স্ক্রিন ছিলো ক্যাপাসিটিভ, মানে নোখ দিয়ে বা কোন একটা হার্ড ওকাস্টিক দিয়ে স্ক্র্যাচ করতে হতো। আর তারপর একদিন এক বন্ধুর কাছে দেখলাম আইফোন, তার মাখনের মতো স্ক্রোলিং। ব্যাপক ইমপ্রেসড হয়েছিলাম ঃ-)
  • / | 2405:201:c802:ff9d:d02e:5984:a371:8cd2 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৩:২৭96053
  • আইফোন একটি হাইপ আর আইফোনের ব্যবহারকারী আর ভক্তদের মধ্যে কোন তফাৎ নেই - একই অন্ধভক্তি ছাড়া।
  • রৌহিন | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৩:৩৬96054
  • ভারতে আমাদের একটা সুবিধে ছিল আগে যে আমরা পিছিয়ে থাকতাম। আইফোন লঞ্চ করার বেশ কিছু বছর পির অবধিও সেই মিথ আমাদের কাঁপিয়ে দেয় নি - ২০১০/১১ নাগাদ প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনেই আমরা মধ্যবিত্ত / নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজ যথেষ্ট উত্তেজিত ছিলাম। 

    পরবর্তীতে আমি আই ফোন ব্যবহার করেছি বছর দেড়েক - কিন্তু আমার পোষায় নি। আবার অ্যান্ড্রয়েডে ফিরে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছি। এখনো আমি যে কোনদিন আইফোন এর ওপরে অ্যানড্রয়েডই প্রেফার করব, এমন কি দাম একটু বেশী পড়লেও 

  • dc | 103.195.203.130 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৫:২৫96058
  • আমার মনে হয় আপেল আর অ্যানড্রয়েড, দুটো ইকোসিস্টেমেরই কিছু ভালো আর কিছু মন্দ আছে। তবে আজকাল আমি অ্যানড্রয়েড ছেড়ে কিছুটা আপেল এর দিকে ঝুঁকে পড়েছি দুটো কারনে।

    একটা কারন হলো, আজকাল স্টক অ্যানড্রয়েড ফোন পাওয়া বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশীর ভাগ ম্যানুফ্যাকচারার নিজেদের স্কিন চাপিয়ে দেয়, আর সেগুলো ব্লোটওঅ্যারে ভর্তি থাকে। তবে এটা মাইনর কারন।

    আসল কারন হলো, অ্যানড্রয়েড ভার্সন মোটে দুটো কি তিনটে আপগ্রেড সাপোর্ট করে, তার বেশী করেনা। কিন্তু আপেল আইওএস অনেকগুলো ভার্সন আপগ্রেড সাপোর্ট করে। এখন যেমন, আইওএস ১৩ সেই পুরনো আইফোন 6s এও সাপোর্ট করছে। আমি এখন গুগলের পিক্সেল ২ এক্সেল ব্যবহার করি, এটায় স্টক অ্যানড্রয়েড আছে। কিন্তু এবছর অ্যানড্রয়েড ১১ বেরোবে, সেটাই এটার লাস্ট সাপোর্টেড ভার্সান। পরের বছর যদি ফোন কিনি তো আপেল ১১ বা ১২ কিনবো, পিক্সেল আর না।
  • সুকি | 49.207.203.64 | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৭:৪৬96062
  • hu, দমু-দি, dc, রৌহিন - সকলে ধন্যবাদ

    দমু-দি, আই-ফোন এখনো কেনো নি যখন, ভালোই করেছো, আর মনে হয় না কেনার দরকার আছে।

    dc, ঠিকই অনেক স্টাডি আছে আই-ফোন মার্কেটিং নিয়ে - আর সেই জন্যই ওটা নিয়ে আর আলাদা করে বিশেষ কিছু লিখি নি। জাষ্ট উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম কি ভাবে ব্যকগ্রাউন্ডে কাজ করে কোম্পানী গুলো নতুন অ্যঙ্করিং পয়েন্ট তৈরী করার জন্য। 

  • :|: | 174.255.128.186 | ০৯ আগস্ট ২০২০ ০৪:৫৮96073
  • মুক্তো/মুক্তা = পার্ল
    মুক্ত = ফ্রী
    (যদ্দুর জানি)
    সিরিজটা ভালো
  • পাঠক | 213.165.184.92 | ০৯ আগস্ট ২০২০ ০৫:১০96075
  • ভাল লেখা। সুকির সোজাসুজি বক্তব্য রাখার স্টাইলটা খুব আকর্ষণীয়।

  • dc | 103.195.203.211 | ০৯ আগস্ট ২০২০ ০৮:৪৩96083
  • আরেকটা ভারি ইন্টারেস্টিং অ্যাংকর প্রাইসিং এর উদাহরন টেসলার সাইবারট্রাক ($40k থেকে শুরু)। গতকাল নীচের ভিডিওটা দেখছিলাম। জে লেনো জিগ্যেস করলেন, "কিন্তু বুলেটপ্রুফ কেনো?" এলন মাস্কের উত্তরঃ "because its badass and supercool"। দুর্দান্ত মার্কেটিং।

  • dc | 103.195.203.211 | ০৯ আগস্ট ২০২০ ০৮:৫৪96084
  • আর সাইবারট্রাকের ডিজাইন ফিলোজফির একটা সম্ভাব্য উত্তরঃ মার্কেট ডিজরাপশান।

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ আগস্ট ২০২০ ০৮:১৪96594
  • পণ্যের দাম নিয়ে ডিসকভারিতে "মাইন্ড গেম" পর্বে এরকমই কিছু হুজুগের ব্যাপারে তুলে ধরা হয়েছিল।

    প্রকৃত চাহিদার তুলনায় অনেক সময়ই ফেক-ডিমান্ড পণ্যের দাম বাড়ায়।  এর একটি কারণ হতে পারে, যন্ত্র জীবনে মানুষ খুব ভাবতে চায় না, অনুসরণ করতে চায়, কারণ এটাই সহজ, শর্টকাট পদ্ধতি। 

    আবার বাজার অর্থনীতির যুগে "ভাল জিনিস বেশী দাম, খারাপ জিনিস কম দাম" এই সহজ সমীকরণও অবচেতনে কাজ করতে পারে। 

    আই ফোন ও কালো মুক্তার মনোজাগতিক ফন্দি-ফিকির বিশ্লেষণ মোক্ষম  হয়েছে।  ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় ধন্যবাদ                      

  • বিপ্লব রহমান | ২৪ আগস্ট ২০২০ ০৮:১৪96595
  • পণ্যের দাম নিয়ে ডিসকভারিতে "মাইন্ড গেম" পর্বে এরকমই কিছু হুজুগের ব্যাপারে তুলে ধরা হয়েছিল।

    প্রকৃত চাহিদার তুলনায় অনেক সময়ই ফেক-ডিমান্ড পণ্যের দাম বাড়ায়।  এর একটি কারণ হতে পারে, যন্ত্র জীবনে মানুষ খুব ভাবতে চায় না, অনুসরণ করতে চায়, কারণ এটাই সহজ, শর্টকাট পদ্ধতি। 

    আবার বাজার অর্থনীতির যুগে "ভাল জিনিস বেশী দাম, খারাপ জিনিস কম দাম" এই সহজ সমীকরণও অবচেতনে কাজ করতে পারে। 

    আই ফোন ও কালো মুক্তার মনোজাগতিক ফন্দি-ফিকির বিশ্লেষণ মোক্ষম  হয়েছে।  ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় ধন্যবাদ                      

  • dc | 103.195.203.41 | ২৪ আগস্ট ২০২০ ০৮:২২96597
  • আরে এই টইটার কথাই ভাবছিলাম ঃ-) দুয়েকদিন আগেই অ্যানাউন্স হয়েছে যে পিক্সেল ২ এক্সেল এর লাস্ট আপডেট হবে অ্যানড্রয়েড ১১ ভার্শন। তারপর আর আপডেট হবে না। আমি এই ফোনটা ব্যবহার করি, তার মানে পরের বছর আর আপডেট পাবো না। কাজেই পরের বছর আপেল কিনবো ঠিক করে ফেলেছি।
  • Amit | 121.200.237.26 | ২৪ আগস্ট ২০২০ ১০:০০96604
  • সুকির এই লেখাটা মিস করে গেছি . একটু আপত্তি যেটা হলো কালো মুক্তো বা পিঙ্ক ডায়মন্ড - এসব ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এর প্রাইসিং এর সাথে টেকনোলজি গ্যাজেট এর প্রাইসিং তুলনা টা একটু চাপের. ফ্যাশন বা গয়না, এসব অ্যাবস্ট্রাক্ট জিনিস্ পত্তর, নট সামথিং এসেন্টিয়াল ফর ডে টু ডে লাইফ. সোনার বা রুপোর তাও একটা ইন্টারন্যাশনাল প্রাইসিং মেকানিসম আছে, ডলার এর সাথে ওঠানামা আছে, কিন্তু হিরে, পান্না , মুক্তোর প্রাইসিং মেকানিসম চিরকাল ই ভেগ, তাই ফ্যাশন মার্কেটিং এসবে একটা মেজর রোল প্লে করে. এড করে করে ডিমান্ড বাড়াতে না পারলে বাজারে দাম কমে যাবে.

    কিন্তু ইফোন বা আপেল র যেকোনো প্রোডাক্ট কে মার্কেট এ সিমিলার টেক গ্যাজেটস এর সাথে রেগুলার কম্পিট করতে হচ্ছে, গুগল বা মাইক্রোসফট বা আগের নোকিয়া , কেওই ছোট কোম্পানি নয়, এমন নয় যে এরা রিসৌর্সর অভাবে ভালো প্রোডাক্ট বানাতে পারছেনা. টেক মার্কেট এ শুধু লুকস বা ভক্তি টাই একমাত্তর ক্রিটেরিয়া নয়. প্রোডাক্ট সাপোর্ট, ডিজিটাল সেফটি , ইউসার ফ্রেন্ডলিনেস, ইন্টিগ্রেশন, সিস্টেম আপগ্রেড ফীচারস সব কিছুই একসাথে ম্যাটার করে. বাকি কম্পেটিটর রা যদি এসব ফ্রন্ট এ বেটার প্রোডাক্ট আনতে পারতো মার্কেট এ , তাহলে আপেল শুধু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বা লুকস দিয়ে এভাবে হাই-এন্ড হ্যান্ডসেট মার্কেট কব্জা করে রাখতে পারতোনা, আর আমার নিজের অভিজ্ঞতা নেটব্যাংকিং এসব করার জন্যে আপেলের সেফটি ফীচারস অনেক বেশি রেলিয়াবল.

    আমি নিজে এন্ড্রোইড থেকে আপেল এ মুভ করে গেছি চার বছর আগে. আগের 5-6 বছরে চারটে এন্ড্রোয়েড হ্যান্ডসেট বদলাতে হয়েছে, হয় জাস্ট ক্র্যাশ করে খারাপ হয়ে গেছে, নয় সিস্টেম বেদম স্লো হয়ে গেছে খুব তাড়াতাড়ি, প্রতিবার চেঞ্জ করার পরে ডাটা ট্রান্সফার এ প্রব্লেম হয়েছে. সেখানে আপেল এর এক হ্যান্ডসেট পাঁচ বছর ধরে চলছে বলতে নেই এখনো অবধি ওসব কোনো প্রব্লেম হয়নি.
  • Amit | 121.200.237.26 | ২৪ আগস্ট ২০২০ ১০:০২96605
  • লাস্ট লাইনে চার বছর হবে. :) :)
  • সুকি | 165.225.106.135 | ২৪ আগস্ট ২০২০ ১০:২০96608
  • এই লেখায় একটা সাফাই দিই, কারণ আমার লিখে বোঝাতে পারি নি কিনা জানি না, কিন্তু দেখছি অনেকেই আসল ব্যাপারটা মিস করে গেছেন। এটা আপেল ভার্সেস বা অ্যানড্রয়েড এর তুলনা নয় - বা আপেল খারাপ এটাও বলা নয়, আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্কেট কিভাবে প্রভাবিত করা যায় আর তার থেকেও 'অ্যাঙ্কর' প্রাইস সেট করা হয় সেটার আলোচনা করা। আর লাক্সারী গুডসের সাথে যে নিত্যপণ্যের তুলন চলে না সেটা তো উল্লেখ করেছি এই লেখায়। 'অ্যাঙ্কর প্রাইস' কি ভাবে সেটা করা হয় তার উদাহরণ টানতেই স্টারবাকস বা ব্ল্যাক পার্ল এর তুলনা করা - 

  • সে | 2001:1711:fa4c:9b91:7d01:4e17:47d1:b497 | ২৫ আগস্ট ২০২০ ০২:৫৭96624
  • শব্দটা আর্বিট্রারি।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন