এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • মাওবাদী হিংসা এবং সরকার পরিকল্পিত সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কিছু বিবৃতি

    খবরোলা লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ০৫ নভেম্বর ২০০৯ | ৭৬০ বার পঠিত
  • সম্প্রতি ভারত সরকার ভারতেরই অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘটছে UAPA র মত কালা কানুনের প্রয়োগ। আঘাত হানছেন মাওবাদীরাও। মরছেন মানুষ। প্রতিবাদ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাধারণ মানুষ,অ্যাক্টিভিস্টরা। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ভূমিপুত্রেরাও। এবারের খবর্নয়ে রইলো কিছু ঝলক।

    আদিবাসী গণসংগঠন

    ১) "Campaign for Survival and Dignity (CSD)" বা "জীবন ও মর্যাদার প্রচারমঞ্চ' ভারতের ১০টি প্রদেশে, জঙ্গলের অধিকার নিয়ে লড়ছেন যেসব বিভিন্ন আদিবাসী, উপজাতি ও অর®ণ্যের ভূমিপুত্র ভুক্ত গোষ্ঠী, তাদেরকে একত্রিত করে তৈরি একটি গণসংগঠন। দেশের উপজাতি অঞ্চলে ও জঙ্গল এলাকাতে রাষ্ট্রকর্তৃক যে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে স্পষ্ট বক্তব্য রাখলেন এনারা। এনাদের মূল বক্তব্য, মাওবাদী দমনের আড়ালে, এই অমানবিক সরকারী আক্রমণ আসলে আদিবাসীদের ওপর আক্রমণ। এর মুখ্য উদ্দেশ্য প্রতিবাদী কন্ঠগুলোকে অবরোধ করা, এবং এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ কুক্ষিগত করা। সরকারী বয়ান অনুযায়ী এই অভিযানের ফলে যেসব জায়গায় অরাজকতা ও রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি রয়েছে, তা দূর হবে এবং রাষ্ট্র এবার তার কাজ করতে পারবে। আদিবাসী, উপজাতিরা কিন্তু বলছেন,এই প্রচার সর্বৈব মিথ্যে। আসলে এই সব জায়গায় রাষ্ট্র একটু বেশি মাত্রায়ই উপস্থিত, আর তাই বেআইনী ভাবে ৩ লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করে দিতে পারে বনদপ্তর, তাই আদিবাসীদের "জল জঙ্গল ও জমি' র সাংবিধানিক অধিকার সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়, তাই প্রতি দিনই আরো বেশি করে মানুষ পুলিশের হাতে মার খায়, খুন হয় বা জেলে যায়। এই যদি রাষ্ট্রের অনুপস্থিতির নমুনা হয়, তাহলে তার উপস্থিতির সম্ভাবনা তো রীতিমতন আতঙ্কজনক। সেই উপস্থিতির প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রের উচ্ছেদ,সামরিক শাসনের কায়েমীকরণ।

    ওনাদের এই লড়াই কিন্তু আদৌ উন্নয়নের বিরোধে না,স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে এই বিবৃতিতে। মানুষের এই লড়াই গণতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষা করতে। আদিবাসী সুরক্ষার জন্য যা যা আইন আছে এবং সম্প্রতি বিভিন্ন গণআন্দোলনের ফলে যেসব নতুন আইন এসেছে, তাতে জীবন, জীবিকা, জমি ও জঙ্গলের অধিকারের লড়াই ও তার ফলে মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আরো মজবুত হওয়ার কথা। কিন্তু এই আইনগুলো মান্য হয় তাদের অবাধ লঙ্ঘনের মাধ্যমে। মনে রাখা দরকার প্রকৃত উন্নয়ন সবার সম্পদ ও উৎপাদনের অধিকারকে আর দৃঢ় করে। সামরিক বাহিনী নিয়ে গায়ের জোরে উন্নয়নের দাবী শুধু অবাস্তবই না,হাস্যকর।

    সরকার যদি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত হবে , তো, সবচেয়ে আগে মাইনিং গুন্ডা, জঙ্গলের গুন্ডা, ও সালওয়া জুডুমের মত উগ্র টহলদারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাহিনী পাঠানো উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দমন করা দূরস্থান,পুলিশই এদের মদতদার। নিরাপত্তার এই যে ধারণা রাষ্ট্র প্রচার করছে তার সাথে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কিভাবে বড় ব্যবসায়ীরা চুরি, প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করতে পারে তাই নিশ্চিত করার জন্য এই অভিযান। তাই, বিশাল মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে মাইনিং, পরিকাঠামো, রিয়াল এস্টেট, জমি দখল - এসবকেই মানুষের প্রয়োজনে উন্নয়ন বলে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশাল পরিমানে আন্তর্জাতিক ও সরকারী অর্থ চালান করা হচ্ছে তথাকথিত বন-পরিকল্পনার পেছনে, যার জন্য স্থানচ্যুত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। ইউপিএ আজ শশব্যস্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরে, যার ফলে খনি ও জমি বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রশস্ততর হচ্ছে শোষণের পথ। কিন্তু এই জঙ্গল, জমি, জল, খনিজ কোথায়? এগুলো সবই জঙ্গল ও আদিবাসী অঞ্চলে, যেখানে মানুষ সংগঠিত হয়েছে কখনো সিপিআই(মাওবাদী) দের তলায়, কখনো কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, কখনো স্বত:স্ফূর্ত স্থানীয় আন্দোলনে কখনো বা যে কোনো উপায়ে লড়াই করে নিজের বাড়ি, জীবন, সম্পদ বাঁচাতে।

    "মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান' আসলে এই সবরকম প্রতিরোধকেই দমন এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার, নৃশংসতা ও অবিচারকে আড়াল করার মুখোশ মাত্র, স্পষ্টভাবেই জানিয়েছে এই গণসংগঠন। একটি খুব বেসিক প্রশ্ন তুলেছেন এনারা, সামরিক বাহিনী কিভাবে বুঝবে কে মাওবাদী আর কে নয়?

    এই অভিযানের ফলে, দীর্ঘ, রক্তাক্ত ও নৃশংস গেরিলা যুদ্ধের বলি হবেন হাজার হাজার মানুষ। ঠিক যে ফলাফল দেখা গেছে ভারতের ইতিহাসে প্রতিটি "নিরাপত্তা রক্ষার অভিযান'-এ, কাশ্মীর থেকে নাগাল্যান্ড অবধি। কাজেই প্রশ্ন ওঠে, কেন? এবং এখনই কেন? এই নিরাপত্তা কাদের জন্য? কাদের হয়ে? যদি না আসল উদ্দেশ্য "মাওবাদী নিধন' না হয়ে,আসলে এইসব এলাকায় লাখ লাখ সেনা, অস্ত্র ও যন্ত্র মোতায়েন হয়।

    তাই এনাদের মতে, এই উদ্দেশ্যের নাগরিক সমাজে "মাওবাদী সমর্থক' দের অনুপ্রবেশ ইত্যাদি গুজবের উন্মত্ত প্রচার। সরকারের দীর্ঘ ইতিহাস আছে যে কোনো ধরণের প্রতিরোধকে মাওবাদী বা নকশাল তকমা লাগানোর। এদের মতে, মাওবাদীদের রাজনীতি, তাদের অবস্থান য®থেষ্টই প্রকাশিত। যা গোপন, তা হল এদের ব্যক্তিপরিচয়, ও সামরিক কায়দা। এবং ওনারা যাঁরা এইসব এলাকায় কাজ করেন তাঁরা মাওবাদীদের "চোরা অনুপ্রবেশ' নামক ভূতকে ভয় পাননা। মাওবাদীদের অবস্থান ও এনাদের অবস্থান যে আলাদা তা পরিষ্কার হওয়া উচিৎ। তাই এনাদের মতে মাওবাদী নাম নিয়ে এই ভীতি প্রদর্শন আসলে সমস্ত প্রতিরোধ ও গণতান্ত্রিক প্রতিবাদকে দমন করার জন্য।

    এনারা বক্তব্য শেষ করছেন এই মর্মে যে, ভারতের শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী, দলিত এবং অন্যান্য নিপীড়িত বর্গের কাছে শান্তি ও সুবিচার পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হল মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন। যার জন্য চাই গণতান্ত্রিক জায়গা, যা একটি অঞ্চলকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে কখনই সম্ভব না। জঙ্গল অঞ্চলে শান্তির খুব প্রয়োজন এই মুহুর্তে, যা শুধুমাত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সৎ ও গণতান্ত্রিক আলোচনার দ্বারাই সম্ভব। এবং এটি সম্ভব করতে হলে, প্রথমেই তাঁরা দাবী করছেন এই অভিযান প্রত্যাহার। সরকার যদি বলতে চায় যে সে সত্যিই মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার দায় নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, তাহলে তার কার্যপদ্ধতি যেন আইন, বিচার ও গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই হয়।

    সূত্র : http://sanhati.com/articles/1828/

    ২) ভারত সরকারের সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে চেয়ে সংহতি একটি প্রতিবাদ-পত্র ভারতের গণ-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের সাথে আলোচনাক্রমে রচনা করে ও স্বাক্ষরকারী সকলের কাছে প্রচার করে। এই পত্রটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। এই প্রতিবাদে গলা মিলিয়েছেন জাতীয় স্তরে অরুন্ধতী রায়, সন্দীপ পাণ্ডে, অমিত ভাদুড়ি, আনন্দ পট্টবর্ধন, সুমন্ত ব্যানার্জি, মহাশ্বেতা দেবী ও সুমিত সরকারের মত বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছাড়াও আরো শ'খানেক মানুষ। আন্তর্জাতিক স্তরে সমর্থন জানিয়েছেন নোম চমস্কি, ডেভিড হার্ভে, হাওয়ার্ড জিন, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, জন বেলামি ফস্টার, মাইকেল লেবোউইৎস, মীরা নায়ার ও আরো বহু বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ ও গণ-আন্দোলনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিত্ব। এই প্রতিবাদ পত্রের মাধ্যমে এনারা জানাচ্ছেন ভারতের আদিবাসী অধ্যুষিত এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলিতে ভারত সরকারের এই সামরিক অভিযান ঘোষণার ফলে তাঁরা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন। যে উদ্বেগ অনেকাংশেই আদিবাদী জনসংগঠন CSD র বক্তব্যের প্রতিফলিত, দেশের দরিদ্রতম অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক মানুষের বাস্তু, জীবন ও জীবিকা হারাবার উদ্বেগ, নির্বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবার উদ্বেগ। এখনই পুলিশ, আধাসামরিক, এবং সরকারী মদতে তৈরি যেসব অসামরিক সশস্ত্র বিদ্রোহ-বিরোধ বাহিনীর অত্যাচার চলছে এই অঞ্চলে, তাতে তৈরি হয়েছে এক গৃহযুদ্ধকালীন অবস্থা। ছত্তিসগড় ও পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছেন শতাধিক মানুষ, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েকহাজার। সরকার প্রস্তাবিত এই নতুন অভিযানে এই মানুষগুলোর লাঞ্ছনা, দারিদ্র্য, অসহায়তা যে শুধু আরো বাড়বে তাইই না, এই অবস্থা ছড়িয়ে যাবে দেশের অন্যান্য অলেও, আশংকা স্বাক্ষরকারীদের।

    তাঁরা মনে করছেন নব্বইএর দশকের গোড়া থেকে ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা যে নয়া-উদারনীতি গ্রহণকারী শাসন পরিকল্পনা নেয় তার জন্য একদিকে বেড়েছে আদিবাসীদের মধ্যে অভাবনীয় দারিদ্র্যের যন্ত্রণা আর অন্যদিকে বেড়েছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। প্রাকৃতিক সম্পদে ও সামাজিক সম্পত্তির উপর আদিবাসীদের যেটুকু এক্তিয়ার ছিল তাও আক্রান্ত হয়েছে ক্রমান্বয়ে,কখনো খনি, শিল্প বা তথ্য-প্রযুক্তি পার্ক স্থাপনের মতো "উন্নয়নমূলক' কাজের কারণে, কখনো বা বিশেষ আর্থিক অঞ্চল বা এস-ই-জেড বানাবার প্রয়োজনে। লক্ষ্যণীয়, সরকার দেশের যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা খনিজ, বনজ, জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। ঠিক এই অঞ্চলগুলোর ওপরেই বহুজাতিক কর্পোরেশনসমূহের বহুদিনের নজর। শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করতে গিয়ে এই সমস্ত এলাকার অধিবাসীরা যে মরণপণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তাতে কিছুটা হলেও সরকারী মদতপুষ্ট কর্পোরেশনগুলি পিছু হটেছে। তাই স্বাক্ষরকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই বর্তমান যুদ্ধঘোষণা আদতে অনেকাংশেই এই বহুজাতিক সংস্থাগুলির অবাধ লুন্ঠনের পথ প্রশস্ত করার প্রকরণ মাত্র।

    পত্রটিতে উল্লেখ করা হচ্ছে যে, একদিকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বিভেদ, অন্যদিকে গরীব ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায়সঙ্গত অহিংস প্রতিবাদের প্রতি চরম উদাসীনতা বা তার রাষ্টীয় দমনের কারণে আজ এই রাজনৈতিক হিংসা, ক্ষোভ ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার সমাধানের মোকাবিলা না করে ভারতের রাষ্ট্রশক্তি এর সামরিক সমাধানে ব্যস্ত। "গরীবি হঠাও' এর বদলে "গরীব হঠাও' হয়ে উঠেছে তার কাজের মূলমন্ত্র। এই আক্রমণ ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিতে চরম আঘাত হানতে চলেছে। এই সামরিক অভিযানের সাময়িক সাফল্যের নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, সাধারণ মানুষের উপর তার অভিঘাত খুবই বিপর্যয়কারী হবে, নি:সন্দেহে। পৃথিবীর বিভিন্ন বিদ্রোহ-আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু তাই বলে।

    প্রতিবাদ পত্রটি এনারা শেষ করেছেন ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে যে, সরকার যেন অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহার ও এই জাতীয় সামরিক অভিযান - যার ফলে গৃহযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে দেশের সবচেয়ে গরীব মানুষগুলির দুর্দশা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে তথা বহুজাতিক কর্তৃক প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুন্ঠনের পথ প্রশস্ত করবে - এই পরিকল্পনা বাতিল করে।

    সূত্র : http://sanhati.com/excerpted/1824/

    ফিলিপিনসের আদিবাসী গণসংগঠন

    ৩) ফিলিপিনসের কর্ডিলেরা পিপলস অ্যালায়েন্স, ওখানকার আদিবাসী মানুষদেরকে নিয়ে একটি তৃণমূল সংগঠন। তাঁরা জানালেন, একইরকম অবস্থার সম্মুখীন প্রতিনিয়ত তাঁরাও হচ্ছেন। এক্ষেত্রে দায়ী হল ফিলিপিনসের সামরিক বাহিনী। তাদের অত্যাচারে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশী অ্যাক্টিভিস্ট, মানবাধিকার কর্মী ও আদিবাসী ভূমিপুত্র প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতের আদিবাসীবহুল এলাকায় চলা রাষ্টীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এঁরা মানবাধিকার কর্মী ও আদিবাসী গণসংগঠনের বক্তব্যের সঙ্গে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেছেন।

    সূত্র : http://sanhati.com/articles/1842/

    সিটিজেন'স ইনিশিয়েটিভ ফর পিস

    ৪) গত ২০-শে অক্টোবর দিল্লীতে সিটিজেন'স ইনিশিয়েটিভ ফর পিস-এর জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, এতে অংশগ্রহণ করেন জাস্টিস পি সাওয়ান্ত, সন্দীপ পান্ডে, অধ্যাপক হরগোপাল প্রমুখ মানবাধিকার কর্মী ও সমাজসেবী। পাশাপাশি ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বিভিন্ন সাধারণ মানুষ বক্তব্য রাখেন, যাঁরা মাওবাদী দমনের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সরাসরি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কনভেনশন-এর মাধ্যমে সরকার ও মাওবাদীদের কাছে আশু রূপায়ণের জন্য ৬-টি দাবী রাখা হয়: ১) প্রথমে সরকারকে মাওবাদী ও অন্যান্য নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় রাষ্ট্রীয় দমন চালানোর থেকে নিবৃত্ত হতে হবে। ২) সিপিআই (মাওয়িস্ট) এবং অন্যান্য নকশাল দলগুলিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আঘাত হানা বন্ধ করে যুদ্ধবিরতির পরিস্থিতিতে পৌঁছতে হবে। ৩) সাধারণ মানুষের ওপর কোনও ধরণের আক্রমণ চলবে না এবং দুপক্ষকেই তাদের জীবনের দায়িত্ব নিতে হবে। ৪) সরকার ও মাওয়িস্টদের মধ্যে নি:শর্ত আলোচনা শুরু করতে হবে। ৫) হিংসা-উপদ্রুত এলাকায় সিভিল রাইটস অরগানাইজেশন ও মিডিয়াকে বিনা বাধায় ঢুকতে দিতে হবে। ৬) সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা এবনং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এবং এর জন্যে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

    সূত্র : http://indianvanguard.wordpress.com/2009/10/25/stop-offensive-hold-unconditional-dialogue-call-from-national-convention-of-citizens-initiative-for-peace/

    পি ইউ সি এল, জন হস্তক্ষেপ, পি ইউ ডি আর ইত্যাদি

    ৫) এর চারদিন বাদেই নতুন দিল্লিতে আরো একটা মিটিং ডাকা হয় , বিভিন্ন ব্যক্তি (সুরেন্দ্র মোহন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচার, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রণধীর সিংহ, অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল আর এইচ তাহিলিয়ানি, অরুন্ধতী রায়, প্রশান্ত ভূষণ, গৌতম নওলাখা, জি এন সাইবাবা প্রমুখ) ও সংগঠন (পি ইউ সি এল, জন হস্তক্ষেপ, পি ইউ ডি আর প্রভৃতি) এর পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য, ছিলেন সি পি আই এর এ বি বর্ধন ও। উদ্দেশ্য, মাওবাদী ও নক্সালপন্থীদের বিরুদ্ধে সেনা ও বিমান বাহিনীর ব্যবহারের বিরোধিতা করে জনমত তৈরী। বলা হয় যে, যদিও সরকার মুখে বলছে তারা এই পরিপ্রেক্ষিতে সেনা নামানোর বিরোধী, কিন্তু আসলে ৬৫০০০ এরও বেশী "স্পেশ্যাল ফোর্স' কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেনার তত্ত্বাবধানেই। এর সাথে আছে "রাষ্ট্রীয় রাইফেল' ও আইটিবিপি। হেলিকপ্টার আর বায়ুসেনাকে তৈরী করা হচ্ছে আঘাত হানার জন্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চিদাম্বরম যে "ক্যাপচার, হোল্ড, ডেভেলপ' নীতি নিয়েছেন মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির জন্য, তা আমেরিকার আফগান নীতির মতই, যেখানে "উন্নয়ন' আসে সবার শেষে। এর আড়ালে মানুষকে তার জীবন-জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর সাথে আছে কালা আইনের প্রয়োগ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নকল এনকাউন্টার এবং হত্যা। প্রধানমন্ত্রী সংসদে ১৮/০৬/২০০৯ এর বক্তৃতায় বলেছেন যে "দেশের খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলে বাম উগ্রপন্থার বিকাশের ফলে দেশে লগ্নীর পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে', অর্থাৎ এই "বাম উগ্রপন্থা'-ই হোলো উন্নয়ন, তথা দেশের খনিজ সম্পদ বড়ো পুঁজিপতি বা বহুজাতিকদের হাতে তুলে দেওয়ার পথে মূল বাধা। ঐ অঞ্চলে যে মানুষেরা থাকেন, তাঁদের এই উন্নয়নের ফলে উৎখাত করে জীবিকাচ্যুত করা হবে, চরম দুর্দশা আর ক্ষুধার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হবে। দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই সেনা ও বিমানবাহিনীর ব্যবহারের এই ঘটনা ন্যক্কারজনক। দেশকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত থাকার কথা যে সেনাবাহিনীর, তাদের কখনোই দেশবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানো উচিৎ না। সরকার সেনাবাহিনীকে দিয়ে যে ভূমিকা পালন করাতে চায়, দেশের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় মানুষেরা তার বিরোধী।

    সূত্র : http://radicalnotes.com/journal/2009/10/25/no-to-armed-forces-against-naxalites/

    পি ইউ ডি আর : মাওবাদী কার্যকলাপ প্রসঙ্গে

    6) Peoples Union for Democratic Rights, Delhi (PUDR) এর পক্ষ থেকে নিন্দা করা হল মাওবাদীদের কাজকর্মের ও। খুব জোরের সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন যে দারোগা (ইন্সপেক্টর) ফ্রান্সিস ইন্দুয়ারকে নির্দয় ভাবে হত্যা করাটা প্রশ্নাতীত ভাবে একটি ঘৃণ্য কাজ। তাঁরা বলেন,যেকোনো যুদ্ধকলীন হত্যাই অপরাধ, দুপক্ষেরই উচিত বন্দীকে অক্ষত রাখা, কিন্তু দু:খের বিষয়,একদিকে সরকার,অন্যদিকে মাওবাদীরা হত্যালীলার পুনরাবৃত্তি করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেই স্বীকার করেছেন যে মাওবাদীদের সমর্থক হলেন সমাজের দরিদ্রতম মানুষেরা,তখন তো তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম পদক্ষেপ গ্রহণের আগে ভারত সরকরের একবার ভেবে দেখা উচিত। তাই দুপক্ষের প্রতি এঁদের আবেদন,অবিলম্বে যুদ্ধের অবসান এবং প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার। এরপরেও যদি এরা যুদ্ধকে অব্যাহত রাখতে চায় তবে যেন Geneva Convention J Protocol III মেনেই যুদ্ধ করে। PUDR অসন্তোষ প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকাতেও। তাদের মতে সংবাদ মাধ্যম অনেক সময়েই এই সমস্ত বিষয়ের বিপক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির প্রেরিত প্রেস স্টেটমেন্টকে প্রকাশিত হতে দেয়না, অথচ পরে এদেরকেই ধিক্কার জানায় এই বলে যে অসরকারি দল গুলির নারকীয় হত্যার বিরুদ্ধে এরা সরব নয়। তাই সংবাদ মাধ্যমের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে মিথ্যা রটনার যন্ত্র না হয়ে উঠতে, কোনো পক্ষের অপরাধকেই যেন গোপন না করতে।

    সূত্র : http://sanhati.com/news/1826/

    বিনায়ক সেন

    ৭) মাওয়িস্টদের হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রশ্নে কি মানবাধিকার কর্মীরা নীরব, বিনায়ক সেনের কাছে এই প্রশ্ন রেখেছিলেন CNN-IBNLIVE -এর রূপশ্রী নন্দা। উত্তরে বিনায়ক সেন খুব স্পষ্টভাবে জানালেন যে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে তাঁরা সব ধরনেরই হিংসার নিরসন চান, কারণ কোনও সমস্যার সমাধানেই হিংসা সঠিক পথ হতে পারেনা। সেই কারণেই ফ্রান্সিস ইন্দুয়ারের হত্যাকাণ্ডের পর সমস্ত ফোরামে তাঁরা নিন্দা করেছেন। কিন্তু উল্টোদিকে, বিনায়ক সেন ততোধিক স্পষ্টভাবে এও মনে করিয়ে দিতে চান,রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও কিন্তু সমানে চলছে। তাঁরা মাওয়িস্টদের হিংসাকে বৈধতা দিচ্ছেন না কিন্তু সেটাকেও আসলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপট থেকে দেখার চেষ্টা করছেন। মাওয়িস্টদের হয়ে সহিংস কাজগুলি আদতে কিছু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের বাঁচার চেষ্টা, যে মানুষগুলিকে জোর করে সরিয়ে রাখা হচ্ছে তাঁদের বাঁচার অবলম্বন বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে। বিনায়ক সেন বললেন যে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অবধি বলছেন যে দরিদ্র ও নিপীড়িত জনগণের সমর্থন পাচ্ছে মাওয়িস্টরা, আর ঐ মানুষগুলো স্রেফ নিজেদের বাঁচার তাগিদেই তাদের সমর্থন করেন। এই আসল সমস্যাটাকে নিরসন করতে হবে। হিংসা কেবলমাত্র এর একটা বহি:প্রকাশ। কিন্তু আবারও, তাঁর মতে সমস্ত ধরনের হিংসাকে বন্ধ করার মধ্যে দিয়েই কোনও শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠ সমাধানে পৌঁছনো সম্ভব, তাই তিনি সমাজের সবধরণের সবধরনের মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন মাওয়িস্ট ও সরকার এই দুপক্ষের হিংসার বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে।

    সূত্র : http://ibnlive.in.com/news/state-maoist-violence-must-end-binayak-sen/102977-3.html

    আরও কিছু বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবীর বিবৃতি

    ৮) ভারতের বিভিন্ন রাজ্য জুড়ে সিপিআই (মাওয়িস্ট) যে সশস্ত্র রাজনীতি চালাচ্ছে তা মাও জে দং-এর মতবাদের প্রকৃত অনুসরণ নয় এবং এই হিংসার রাজনীতির ফলশ্রুতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থ। এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানালেন ইরফান হাবিব, অমিয় কুমার বাগচী,প্রভাত পটনায়ক, উৎসা পটনায়েক, তিস্তা শেতলাবাদ প্রমুখ ৪০ জন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবী। মাওয়িস্টদের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার দাবী তুলেছেন তাঁরা। মাওবাদী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ২৭-শে অক্টোবর তাঁরা দিল্লীতে মিলিত হন। এর পাশাপাশি তাঁরা শাসকশ্রেণী ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে মাওয়িস্ট দমনের নামে সাধারণ মানুষের উপর নেমে আসা অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মতে রাজনৈতিকভাবে মাওবাদীদের মোকাবিলা করবার জন্যে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। যে নিওলিবারেল অর্থনীতির মাধ্যমে আদিবাসীদের শোষণ ও বঞ্চনা বেড়ে চলেছে তা প্রত্যাহার করে রাজ্য সরকারগুলের মাধ্যমে সেখানকার প্রকৃত উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। সালবা-জুদুম বা মাওবাদী দমনের নামে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার বা হত্যা করা থেকে রাষ্ট্রকে বিরত হতে হবে বরং প্রকৃত অর্থে যারা মাওবাদের নামে হিংসা ছড়াচ্ছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং যে সব মাওবাদী হিংসার পথ ছেড়ে দিতে আগ্রহী, তাঁদের সঙ্গে সরকারকে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে হবে।

    সূত্র :

    পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা

    ৯) পশ্চিমবঙ্গেও মাওবাদীদের হিংসাত্মক কাজকর্মের নিন্দা করেছেন শঙ্খ ঘোষ,প্রতুল মুখোপাধ্যায়,নবারুণ ভট্টাচার্য্য,মহাশ্বেতা দেবী, বিভাস চক্রবর্তী, জয় গোস্বামী, শাঁওলী মিত্র, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, নব দত্ত, জয়া মিত্র, পুণ্যব্রত গুণ সহ প্রায় ৫০ জন বুদ্ধিজীবী। বলেছেন, বিরোধী মতবাদ পোষণকারীদের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালালে সেটা পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের এতদিনকার এরাজ্যে চালিয়ে আসা গণতন্ত্র বিরোধী কাজকর্মের মতন ই হয়ে দাঁড়ায়, এবং এইধরণের কাজকর্ম ভবিষ্যতে সিপিএম ও সরকারের আরো পার্টি ও প্রশাসনিক সন্ত্রাসকে বৈধতা দেবে। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর অনীক পত্রিকার সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী কর্তৃক প্রকাশিত এই বিবৃতিতে "জাতীয়তাবাদী' কেন্দ্রীয় সরকার ও নিজেদের "কম্যুনিস্ট' দাবী করা রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী জনজাতির উপর সন্ত্রাস চালানোরও তীব্র নিন্দা করা হয়।

    সূত্র : http://sanhati.com/front-page/1083/#51

    প্রসঙ্গ লালগড় : যাদবপুর ছাত্র সংগঠন

    ছত্রধরবাবুকে জেরা করে পুলিশ নাকি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুড়িজন ছাত্র-ছাত্রীর নাম জেনেছে, জানতে পেরেছে দুজন অধ্যাপকের নামও, যাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে ছত্রধরবাবু এবং/অর্থাৎ মাওবাদীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন, এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাদের বক্তব্য যে এই "অপরাধী'দের প্রত্যেকের ওপর নজর রাখছে পুলিশ, প্রয়োজন হলে এদের জেরা ইত্যাদি করা হবে। এই প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সংগঠন "ডি এস এফ' সরাসরিই লালগড় আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য হল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ লালগড়ের আন্দোলনের রূপে ফেটে পড়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও মানুষগুলো পেটভরে খেতে পায় না দুবেলা, স্কুল নেই, চিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই-- মানুষের বাঁচার যে ন্যূনতম উপকরণগুলো, সেগুলো পায় না ওখানকার মানুষ। প্রতিষ্ঠিত ভোটবাজ দলগুলোর ভোটের আগে দেখা পাওয়া যায় প্রতিশ্রুতির মালা গলায়--আর বাকি সময়টায় দেখা পাওয়া যায় অত্যাচারী পুলিশ বাহিনীর। জল-জঙ্গল-জমির ওপর মানুষের অধিকারের প্রশ্নটাই তাই সেখানে আক্রান্ত। শালবনীর ঘটনার পর পুলিশি অত্যাচার এই স্তূপাকার বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মাত্র। আর দীর্ঘদিনের অত্যাচার আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে আজ মানুষ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে -- তখন কেন্দ্র-রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে যৌথ বাহিনী। বেয়নেট-লাঠি-গুলির এই অভিযানের পক্ষে রায় দিয়েছে সিপিএম, রায় দিয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি। এপ্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে তারা। লালগড়ে যৌথবাহিনীর অভিযানের এই গোটা পর্বে লালগড় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ ছ'মাসেরও বেশী সময় ধরে, কারণ পুলিশ স্কুলগুলোতে ক্যাম্প করে আছে। ফলে স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা বন্ধ এলাকার বহু ছাত্র-ছাত্রীর। স্কুল খোলার দাবী নিয়ে এসে একদিন পুলিশের লাঠিপেটাও খেয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। "আইনের শাসন বজায় রাখার' অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলাকে ধিক্কার জানিয়েছে তারা।

    তারা মনে করছে যেভাবে লালগড়ে যৌথবাহিনী পাঠিয়ে দমন করা হচ্ছে মানুষের লড়াইকে-- তেমনই গোটা সমাজ জুড়ে মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠকে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে ভয় দেখিয়ে আর মাওবাদী তকমা লাগিয়ে। তারা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে লালগড় আন্দোলন নিয়ে মতপ্রকাশ করতে পারাটা একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাদের মতে মতপ্রকাশের অধিকার যেমন মাওবাদীদের আছে, তেমনি তৃণমূলের কিম্বা অন্যান্যদের আছে, ঠিক ততটাই আছে সিপিএমেরও। এর প্রত্যেকটাই খর্ব করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা। তারা এর পাশাপাশি এও জানিয়েছে লালগড় আন্দোলনকে সমর্থন করা মানে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সমস্ত কার্যক্রমকে সমর্থন করা নয়।

    এই সূত্রেই ডিএসএফের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে--
    "লালগড় আন্দোলনের দাবীগুলো মেনে নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
    UAPA সহ অন্যান্য কালা কানুন প্রত্যাহার করতে হবে।
    গণাঅন্দোলনের কর্মী ছত্রধর মাহতোর অবিলম্বে মুক্তি চাই।
    গোটা সমাজ জুড়ে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার চেষ্টা বন্ধ হোক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিবৃতি প্রত্যাহার করুক প্রশাসন।'

    প্রসঙ্গ লালগড় : র‌্যাডিকাল সোসালিস্ট

    ওদিকে ছত্রধর মাহাতো গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে র‌্যাডিকাল সোসালিস্টরা জানালেন যে, কোনো রকম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া পুলিশ-সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির নেতার গ্রেপ্তার শুধুমাত্র নিন্দনীয়ই নয়, একটি আদ্যন্ত বেআইনি কাজও বটে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগহীন ভাবে সংবাদ মাধ্যমের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিলেন। গত জুন মাসের ১৩ তারিখের আগে অবধি সরকার এবং জনগণের কমিটির মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা চলেছে। তাই এঁদের মতে ছত্রধরের বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগই পুলিশের নিজস্ব ছকে তৈরি। ছত্রধরের ১ কোটি টাকার জীবনবিমা রয়েছে বলে একদিকে তাঁর চরিত্রের উপর কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে লালগড়ের জনগণের আন্দোলন মাওবাদী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত বলে প্রচার করে এই আন্দোলনের সমর্থকদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু এই অভিযোগের কোনোটাই আদালতে দাঁড় করানো যায়নি। ছত্রধর মাহাতোকে আদালতে হাজির করার আগে সরকারি পক্ষের এইভাবে জনগণ ও আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা একটি গুরুতর অপরাধ ছাড়া আর কিছুই না। ৩ রা অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব জনিয়েছেন লালগড়ের অন্দোলনকে সমর্থন জানানো আইনত নিষিদ্ধ। গণ-সমর্থনকে রোখার জন্য এটা একটা হাতিয়ার। রাডিক্যাল সোসালিস্টদের বক্তব্য, সরকার এক খেলা খেলে চলেছিলো। প্রতিদিন এক এক জনের নাম এসে পৌঁছিয়েছে সংবাদ মাধ্যমের কাছে। কোনো দিন হয়েতো কোনো লেখিকার নাম, আবার পরদিন হয়েতো কোনো মানবাধিকার-কর্মীর নাম। উদ্দেশ্য একটাই, এদের সবাইকে ভয় পাইয়ে দেওয়া। তাই রাডিক্যাল সোসালিস্টদের দাবি অবিলম্বে পুলিশ-সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগের প্রত্যাহার এবং এই ঘটনায় বন্দীদের সবার মুক্তি। মানবাধিকারবাদী যাঁরা পুলিশ এবং সরকারের দ্বারা অভিযুক্ত হয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি এরা সহমর্মী হয়ে সম্পূর্ণ ঘটনার নিন্দা করেন।

    সূত্র : http://sanhati.com/front-page/1083/#53

    ৫ই নভেম্বর, ২০০৯

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ০৫ নভেম্বর ২০০৯ | ৭৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন