এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • ডুয়ার্সের ডায়রি ঃ সপ্তম কিস্তি

    শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ১৮ জানুয়ারি ২০১০ | ৮৭৩ বার পঠিত
  • (এই ডায়রিটা শুরু ১১ই নভেম্বর, ২০০৯ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত "জলপাইগুড়ির টাটা চা বাগান' লেখাটার পর থেকে। গত ৩ রা জানুয়ারি প্রকাশিত হয় ষষ্ঠ কিস্তি ( http://guruchandali.com/?portletId=20&porletPage=1&pid=wpgc:///2010/01/03/1262491620000.html )। আজ সপ্তম কিস্তি।)

    ১২ই জানুয়ারী সকাল ৯টা

    আবার বেশ কিছুদিন বাদে ডুয়ার্সের কথা লিখতে বসলাম। এত ঠান্ডা এখানে যে, হাত পা জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। আঙ্গুল গুলি আর নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। তার মাঝে আমার সংগঠন আমার খাওয়ার টাকা পাঠায়নি। যদিও তোমার যুক্তি ছিল যে, তার ফলে লিখতে সুবিধা হবে কারণ খাওয়ার জন্য সময় নষ্ট হবে না। আমার কাছে মোটেও যুক্তিটা ভাল লাগেনি।

    তার উপর উত্তরবঙ্গ জুড়ে চলছে ভবহ লোডশেডিং। এক পরিচিত ভদ্রলোক এখানকার ইলেক্ট্রিসিটি অফিসে গতকাল ফোন করে এই ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং-এর কারণ জানতে চাওয়ায়, সেখানকার অফিসের লোকেরা তাঁকে জানিয়েছে এটার নাম নাকি উইন্টার মেইনটেন্যান্স। এই শব্দটা শোনার পর আমি তাঁর কাছে স্বভাবতই উৎসাহের সাথে জানতে চাইলাম, এর অর্থ কী? উনি জানালেন এমন একটি বিচিত্র শব্দের অর্থ জানার ইচ্ছা তাঁরও হয়েছিল এবং উনিও জানতে চেয়েছিলেন। আর কতদিন এমন মেইনটেইন্যান্সের ক্যাঁচাল চলবে সেটাও জানতে চেয়েছিলেন উনি। তাতে ঐ অফিসের লোকেরা খুব বিরক্তির সাথে জানিয়েছে এখন আর কি বা হচ্ছে দিনে মাত্র ১০ ঘন্টা, সামার মেইনটেইন্যান্সের সময় ওটা আরও তিনগুণ হবে। গুণের অঙ্কের নিয়মে আমি জানতে চাইলাম তাহলে হিসাবটা নিশ্চই সপ্তাহে করতে হবে, মানে সপ্তাহে আমাদের দুইদিন বিদ্যুত সরবরাহ হয়। এই ফাটাফাটি উন্নয়নের কবলে পড়ে আমার লেখা আর হয়ে উঠছে না।

    কলকাতা শহরের নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষ জনকে ফোন করে জানতে চাইলাম তাদের জন্য কোন উইন্টার মেইনটেন্যান্সের ব্যবস্থা প্রশাসন রেখেছে কিনা। জানলাম তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেই। তারপর মনে হল যে, আমরা যারা গাঁয়ে থাকি তারা তো বাই ডিফল্ট এমন মেইনটেইন্ড উন্নয়নের আওতায় পড়ি। এতে এত বিচলিত হবার কী আর আছে? এখানে যাদের সামনে পরীক্ষা টরিক্ষা আছে, তারা বরং বিদ্যাসাগরের গল্পে অনুপ্রাণিত হোক। আর সেটা না হলে অযথা ঐ সব গল্প তাদের পাঠ্য বইয়ে রাখার মানে কি? সার্থকতাই বা কোথায়। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ের মতই শহরে বিদ্যুতের রোশনাই, গ্রামে চাঁদের আলোর কোমলতা। আর বাকি কাজ সে তো শহুরেরা করবে, গ্রামের লোকের অত ইন্টেলেকচুয়াল কাজে দরকার কী? সকাল থেকে মাঠে ঘাটে কাজ করে যাও, বাড়ি গিয়ে ঘুমাও। তবুও বাই চান্স বিদ্যুৎ এসেছে এখন, আর সেই সুযোগে লিখে লিখে মনের দু:খ ব্যক্ত করছি, গাল পাড়ছি উন্নয়নের নৌটঙ্কির উদ্দেশ্যে।

    গত কয়েকদিন যাবত আবার নেওড়ানদী বাগানে বেশি যেতে হচ্ছে। সেখানে আটজন শ্রমিককে এখনও সাসপেন্ড করে রেখেছে ম্যানেজমেন্ট। তাঁরা অর্ধেক মজুরি পাচ্ছেন। একেই দৈনিক মজুরি মাত্র ৬২.৫০ টাকা। তার অর্ধেক মানে ৩১.২৫টাকা। এই টাকায় সংসার চালানো অসম্ভব যেখানে চিনির দাম ৪২টাকা, সব থেকে কম দামের চাল এখানে ১৮ টাকা। আইইউএফের পক্ষ থেকে তাদের অর্থনৈতিক সমর্থন দেওয়ার জন্যই আমার যাওয়া। আর তার পাশাপাশি ওদের যে সমস্যাগুলির সমাধান হয়নি সেগুলোকে আবার আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেনের মাধ্যমে তুলে ধরার কাজটাও করতে হচ্ছে। বাগান খুলে গেছে অজানা কোনও এক চুক্তির মধ্যে দিয়ে। শ্রমিকরা তার বিন্দুবিসর্গও জানেন না। তাদের জানানোর প্রয়োজনীয়তাই বোধ করেন না তথাকথিত ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা। তারাই তো শ্রমিকদের পিতামাতা। তারা যা করেন তা শ্রমিকদের ভালোর জন্যই। কিন্তু শ্রমিকরা আর সে কথা মানতে পারছেননা। তারা জানতে চান কী আছে ঐ গোপন চুক্তিতে।

    কাল শ্রমিকদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলছিলাম। ওদের তৈরি শ্রমিক অ্যাকশন কমিটি খুবই ত্‌ৎপর এই মুহুর্তে। আমাকে খুব সুন্দর ভাবে তাঁরা বলছিলেন এই আন্দোলনে তাঁরা কী পেয়েছেন, আর কেন এই আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হবে। ম্যানেজমেন্ট সহ পার্টি-সর্বস্ব ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ভূমিকাও খুব সুন্দর ভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন তাঁরা।

    জানতে পারলাম দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শ্রমিকদের ঘরবাড়িগুলির কোন মেরামতির কাজ মালিক পক্ষ করেনি। কিন্তু হঠাত বাগান খোলার কিছু দিনের মধ্যেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে কতৃপক্ষের আদেশ আসে শ্রমিকদের ঘরবাড়িগুলো মেরামত করার, রং করার। সেই সব কাজ চলছে। তবে আমি ভেবেছিলাম শ্রমিকরা হয়ত ভাবছেন কোনও এক অজ্ঞাত কারণ এটা। কথা বলতে বলতে দেখলাম মানুষের যৌথ লড়াই তাঁদের কতটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলে -- তাঁরা খুব ভাল ভাবে বললেন আমাকে কারণটা অজ্ঞাত নয়, এটা খুব পরিষ্কার যে 'আমাদের লড়াই আর তার খবর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ার কারণেই মালিক আজ বাধ্য হচ্ছে কিছু একটু দিয়ে শ্রমিকদের মুখ বন্ধ করতে।' একটা লিফলেট আর কিছু পোস্টার বানাতে হবে এমনটাই দাবি জানালেন তাঁরা গতকাল। আমি এই প্রথমবার দেখলাম শ্রমিকরা জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের জন্য তৈরি লিফলেটে কী কী দাবি রাখতে হবে। আমি যে লিফলেট লিখলাম তা প্রায় একরকম ওঁদেরই বানানো। ওঁরা আমাকে কী লিখতে হবে তার ৯৯ শতাংশ নিজেরাই বলে দিলেন। আমি একটু সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে ফেললাম। এই অভিজ্ঞতাটা সত্যিই এতটাই নতুন, এর চমকটাই আমি এখনও ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছি না।

    ১৪ই জানুয়ারী বিকাল ৩টা

    ওঁদের পরামর্শে তৈরি লিফলেটটা খুব দেখাতে ইচ্ছা করছে সবাইকে। সত্যি এই লিফলেট লেখায় আমার অবদান শুধুমাত্র পরিশ্রম আর অল্প একটু সাজিয়ে গুছিয়ে কথাগুলি বলা ছাড়া আর কিছুই না। সম্পূর্ণ ওঁদের তৈরি লিফলেট। তাঁদের তৈরি যাঁদের কিছুদিন আগে পর্যন্তও একটা চার্জশিট পড়া বা উত্তর দেওয়ার জন্য নির্ভর করতে হত তথাকথিত ট্রেড ইউনিয়নের নেতাদের উপর। আজ তাদের লড়াই তাদের কতটা শিক্ষিত করেছে সেটা খুবই শেয়ার করতে ইচ্ছা হচ্ছে।

    "বন্ধুরা,

    আমরা একথা জানি যে তিন মাস অন্যায় ভাবে বাগান বন্ধ রাখার পর মালিক আমাদের বাগানটি পুনরায় চালু করেছেন। যদিও এই খোলার পিছনের শর্তগুলি আমাদের অজানা। কোনও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বা সরকারি আমলা এই চুক্তি আমাদের কাছে জানাননি, বা জানতে চাননি আমাদের রায়। বন্ধের সময়কার বকেয়া বেতন রেশন আমরা আদৌ পাব কিনা সে বিষয়ে আমার কিছুই জানিনা। সে কথা চুক্তিতে আছে কিনা সে বিষয়েও আমরা অন্ধকারে।

    যে কারণে ছিল আমাদের আন্দোলন, আর যে আন্দোলনের কারণে মালিক বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন, সেই কারণের কোনও সমাধান হয়নি। ৮ মাসের গর্ভবতী আরতি ওঁরাও-কে জোর করে পাতা তোলার কাজ করতে পাঠানো এবং গর্ভকালীন ছুটি না-মঞ্জুর করা এবং তাঁকে সঠিক চিকিৎসা না-দেওয়ার মত ঘৃণ্য কাজ যাঁরা করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের দাবিতে ছিল আমাদের লড়াই। সেই সমস্যার সমধান করার কোন সদিচ্ছা মালিক বা ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের তরফ থেকে দেখা যায়নি। বাগান খোলার এতদিন পরেও।

    তারপরও ন্যায়ের দাবিতে চলা কোন লড়াই ব্যর্থ হয়না। খুবই সামান্য হলেও কিছু আমরা অর্জন করেছি এই লড়াই-এর মধ্যে থেকে। যা আমাদের সামনের লড়াই-এর অনুপ্রেরণা। আমাদের লড়াই আমরা চালিয়ে গেছি এবং আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আই ইউ এফএর সাহায্যে আন্তর্জাতিক স্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি তার সংবাদ। ম্যানেজমেন্টের হিংস্র চেহারাকে বিশ্বের মানুষের সামনে প্রকাশ করতে পেরেছি আমরা। শ্রমিকদের ভবহ অবস্থার কথা মানুষের কাছে জানাতে পেরেছি। আর জানাতে পেরেছি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই-এর কথা। সামান্য কিছু দিয়ে মালিক তাই আমাদের সন্তুষ্ট করতে চাইছেন। বিশ বছর ধরে শ্রমিকদের ঘরগুলিকে মেরামত না-করে ফেলে রেখেছিল মালিক পক্ষ। হঠাত সেগুলি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের বাড়িগুলিতে চুনকামের কাজ শুরু হয়েছে। কেন এই যত্ন, সেকথা আমরা বুঝি। আমাদের লড়াই বাধ্য করেছে মালিককে ছিঁটেফোঁটা হলেও এইটুকু করার জন্য।

    এইটুকু পাওয়ার আড়ালে রয়ে গেছে আরও অনেক না-পাওয়া। তাই আমাদের লড়াই সবে শুরু। আরও অনেকটা পথ বাকি। আমাদের না-পাওয়াগুলির প্রত্যেকটি অর্জন করতে হবে আমাদের। কারণ সেগুলি সবই আমাদের অধিকারের। কোনও অন্যায় আবদার না। আমরা দাবি করছি আমাদের ন্যায্য নৈতিক আইনি অধিকারগুলিকে।

    আমাদের লড়াই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ধাপে ধাপে। ঠিক এই মুহুর্তে যে প্রাথমিক না-পাওয়াগুলি আমরা চিহ্নিত করেছি আর দাবি জানাচ্ছি সেগুলি এখনই আমাদের চাই, সেগুলি হল:

    ১। ৮ জন শ্রমিকের ওপর থেকে কর্মবিরতির আদেশ তুলে নিতে হবে। এই ৮ জন শ্রমিককে বিনাশর্তে কাজে বহাল করতে হবে।

    ২। বাগান খোলার চুক্তিপত্রটিকে শ্রমিকদের সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং শ্রমিকদের মতামত জানতে হবে। শ্রমিকদের থেকে লুকিয়ে রাখা চুক্তির কোন ন্যায্যতা নেই। সেই চুক্তির কোন অর্থ নেই যা শ্রমিকদের মতামতের উপর দাঁড়িয়ে করা হয়না।

    ৩। ম্যানেজমেন্টকে আরতি ওঁরাও-এর কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে তাঁকে গর্ভকালীন ছুটি না-দিয়ে জোর করে কাজে পাঠানোর অপরাধে।

    ৪। ম্যানেজমেন্ট-এর পক্ষ থেকে আরতি ওঁরাও-কে শীঘ্রই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাঁর সাথে তাঁর গর্ভাবস্থায় করা অন্যায় আচরণের জন্য এবং তাঁর যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য।

    ৫। ম্যানেজমেন্টকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তাঁরা দেশের মেটারনিটি বেনিফিট আইন মান্য করবেন। প্রত্যেক সাড়ে ছয় মাসের গর্ভবতী নারী শ্রমিককে হালকা কাজ দেবেন এবং সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী নারী শ্রমিকদের গর্ভকালীন ছুটি দেবেন পূর্ণ মজুরি সহ।

    ৬। বর্তমানে একজন ডাক্তার সপ্তাহে একদিন আসছেন বাগানের হাসপাতালে। আমাদের দাবি, এখনই একজন ডাক্তারকে এখানে সর্বক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হোক। হাসপাতালের সব রকম উন্নতি করতে হবে যাতে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই হাসপাতাল থেকে সব রকমের সুবিধা পেতে পারেন। ওষুধ, পথ্য, নার্স কোনও কিছুর অভাবই আমরা মেনে নেব না।

    ৭। অন্যায়ভাবে বাগান বন্ধ করে রাখা সময়ের সম্পূর্ণ বেতন এবং রেশন সব শ্রমিকদেরকে শীঘ্রই দিতে হবে।

    এই সবগুলি আমাদের ন্যায্য দাবি। এইগুলি আমাদের অধিকার।

    বন্ধুরা, ম্যানেজমেন্ট সবসময় আমাদের শোষণ করে। তারা আমাদের আইনি অধিকার, বকেয়া সব কিছু দিতেই অস্বীকার করে।

    যখন আমরা সংগঠিত হই, আমাদের আইনি ন্যায্য অধিকারগুলি ফিরে পাওয়ার জন্য দাবি করি, বিরুদ্ধতা করি শোষণের, তখন ম্যানেজমেন্ট সব রকমের উপায়ে আমাদের ঐক্য ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে, আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করে, আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে বেছে নিয়ে সাজা দিয়ে আমাদেরকে সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা করে। ভয়ের এবং সন্ত্রাসের আবহাওয়া সৃষ্টির চেষ্টা করে আমাদের মধ্যে।

    কিন্তু বন্ধুরা, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, আমরা লড়তে পারব। আমরা তখন সহজেই বুঝতে পারব মালিকের শোষন করার নীতিগুলি, আমাদের ঐক্য ভেঙে ফেলার কৌশলগুলিকে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, যদি আমরা মালিকের অন্যায্য কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়াজ তুলি, যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে জোরের সাথে দাবি করি আমাদের অধিকারগুলির, আমরা জিতবই। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরাই সেই শক্তি যাঁরা শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

    ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের,

    নেওড়ানদী চা-বাগান মজদুর অ্যাকশন কমিটি।অ।"

    এই কথাগুলি সত্যিই আমার না। এক্কেবারে শ্রমিকদের। এত সুন্দরভাবে ওঁরা কথা বলতে পারেন সেটা বোধহয় ওঁদেরও বিশ্বাস হচ্ছিলনা।

    ১৫ই জানুয়ারী বেলা ১২টা

    গতকাল বসেছিলাম নেওড়ানদী বাগানেরই এক সাসপেন্ডেড শ্রমিকের বাড়িতে। সন্ধ্যার মুখে পৌঁছেছিলাম বাগানে। ঘুটঘুটে অন্ধকার বাগানের শ্রমিক বস্তি। এমনিতে উত্তরবঙ্গের বিদ্যুৎ পর্ষদের উইন্টার মেইনটেইন্যান্সের কথা তো আগেই বলেছি। তাই অন্ধকারে তেমন আর কষ্ট হয় না। তবে আশ্চর্য হলাম সেই বাড়িতে প্রদীপ দেখে। কালীপূজার আগের দিন চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর ফ্যান্টাসি ছিল মনের মধ্যে। শহর লাগোয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালাতেও দেখেছি। তবে ঘরের আলোর জন্য প্রদীপ জ্বালানো তেমন চোখে পড়েনি। একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কেন প্রদীপ, লন্ঠন নয় কেন? শুনে হতবাক হলাম। বাগানের রেশনে শ্রমিক পরিবারে মাসে ৪০০মিলি কেরসিন তেল দেওয়া হয়। ঐ ৪০০মিলি তেলই ওঁদের সম্বল।

    শহরের আমার পরিচিত মানুষেরা যাঁরা থাকেন, তাঁরা এই জীবনযাত্রাকে আদৌ বুঝতে পারেন কিনা কে জানে। আমি বারবার ভাবতে চেষ্টা করি তাঁরা কী ভাবেন এই মানুষগুলি সম্পর্কে, সত্যিই ভাবেন কিনা। জানা হয়ে ওঠেনি তাদের প্রতিক্রিয়া। তবে আমার মনেই হয় চা শহরের মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী হলেও তাঁরা বোধহয় কখনঐ চা শিল্পের সাথে জড়িত এই মানুষগুলির কথা ভাবেননি। জানেন না বললে কেমন যেন মনে হয়, সত্যি করে বোধহয় জানতেই চাননি।

    ১৮ই জানুয়ারি, ২০১০

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১৮ জানুয়ারি ২০১০ | ৮৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন