এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  বাকিসব  মোচ্ছব

  • বৌঠানের ছাদ 

    ইন্দ্রাণী লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২১৯৫ বার পঠিত
  • দিব্যি রোদ ছিল এতক্ষণ। নরম তরম মাঘমাসের রোদ কাঁধ থেকে ফুটপাথে পিছলে যাচ্ছিল-আমার চাদরের মত;  সেফটিপিন আটকে বাড়ির থেকে বেরোলাম -মেট্রোর ভীড়ে খুলে পড়ে গেছে কখন যেন; আসলে, তাড়াহুড়োয় বড় সেফটিপিনটা খুঁজে পাই নি । সকালে রেডি হচ্ছি- মা কথা বলে চলছিল,ননস্টপ। বলছিল, অন্য একটা চাদর নিতে - শাল টাল। বলছিল, 'বড় বড় লোক আসবে। একটু ভালো জামা কাপড় তো পরলে পারিস, সেই এক ভুষো ভুষো শালওয়ার কামিজ , রোঁয়া ওঠা চাদর, সোয়েটার। কালও তো ওটাই পরে বেরোলি -আবার সিনেমায় গিয়েছিলি, তাই না? '

    এই আধা অন্ধকার ঘরে শুয়ে শুয়ে কীভাবে এত কিছু দেখতে পায় -কে জানে!

    -'বড় বড় লোক এলেই বা আমার কী? তারা যেন আমাকে দেখতে আসছে! সীতাপিসি, মাকে সকালের ওষুধটা দিয়ে দিলাম- দুপুর আর বিকেলেরটা দিও মনে করে। জলের ঢাকার ওপর রেখে যাচ্ছি, বুঝলে। আমি ন’টার মধ্যেই ফিরব। বিছানার চাদর আর বালিশের ঢাকাদুটো একটু বদলে দিও না গো, পিসি।'

    এদিকে মা বকবক করেই যাচ্ছিল; দু’ তিনবার কাশল- বেশ জোরে। সীতাপিসি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মা'র ঘরে গেল। মেঝেয় ওয়াকার ঘষটে চলার আওয়াজ - বাথরুম টাথরুম যাবে এবারে। টিফিনবক্সে রুটি আর বাঁধাকপির তরকারি ভরে আমিও বেরিয়ে পড়লাম। অটো নিয়ে কালিঘাটে এসে মেট্রো- তারপর গিরিশ পার্কে নেমে জোড়াসাঁকোর দিকে হাঁটছি। বাঁদিকে একটু ত্যারচা হয়ে  টিংকু। মেট্রোর ভীড়ে দেখতে পাই নি। স্টেশন থেকে বেরোতেই সঙ্গ নিয়েছে। তারপর অবশ্য চিৎপুর রোডে আচমকা মেঘ করে এল আর টিংকুকেও খুঁজে পেলাম না;  ফিরে আসবে একটু পরেই - রোদ উঠলে।

    পাঁচ বছর বয়সে টিংকুকে প্রথম খেয়াল করি বড়জেঠুর ঘরে। লোডশেডিং ছিল। জেম্মা লন্ঠন রেখে গিয়েছে; জেঠু  বলল, 'হরিণ দেখবি?'  তারপর,  বুড়ো আঙুল তক্তপোষের অনুভূমিক রেখে তার ডগায় তর্জনী ছোঁয়ালো, মধ্যমা ঠেকালো বুড়ো আঙুলের কড়ায় যেখানে  ঊনিশ গুণি। আমাকে বলল-'তুইও কর্'। লন্ঠনের হলদে আলোয়, দেয়াল ক্যালেন্ডারের ঠিক নিচে বড় হরিণ আর ছোটো হরিণ। বড়জেঠু ছায়ার উৎপত্তি, আলোর অবস্থান এই সব  বোঝাচ্ছিল। আমার তখন ছোটো হরিণের থেকে চোখ সরছে না – একটুখানি মাথা, সরু গলা - বড্ড রোগা, ভাত খায় না মোটে-ঠিক আমার মত। ' এই, বন্ধু হবি আমার? '  

    নাম দিলাম-টিংকু। আমি রিংকু, ও টিংকু।  তারপর বড় হ'লাম- স্কুল, কলেজ-  টিংকুর কথা মনেই ছিল না। কতবছর পরে,  বাবার কাজ সেরে পুকুরে যাচ্ছি একা-কী সব ভাসিয়ে টাসিয়ে দিতে হয়-দেখি পায়ের কাছে  ছোটো বেঁটে একটু তালপাকানো টিংকু- ' তুই এত মোটা হলি কবে? আর চলে যাস না।থাক্ আমার সঙ্গে।' টিংকুকে সঙ্গে নিয়ে বড় রাস্তা পেরিয়ে পুকুরে গেলাম- রাস্তায় পিক, থুতু, রাক্ষুসে লরি - সাবধানে হাঁটলাম সারাপথ -টিংকুর গায়ে যেন না লাগে।

    টিংকুকে নিয়ে ওভাবেই হাঁটি। আলগোছে, ছোঁয়া টোঁয়া বাঁচিয়ে। আজও তাই। তারপর, মেঘ করল - একা একাই ঠাকুরবাড়ির গেটে এলাম। সেই কবে এসেছিলাম, স্কুলে পড়তে - বাবা ছিল। সামনেটা এখন বদলে গেছে - কত সব নতুন দোকান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। বাঁ দিকে খুঁটি পোঁতা, তাতে রঙীন কাপড় প্যাঁচানো, প্যান্ডেল,  ফ্লেক্স ঝুলছে-লিটল ম্যাগাজিনের ছোটো ছোটো স্টল। লম্বা টেবিল। ওদিকে একটা স্টেজ। লোপাদি আর তনয়দা এখানেই দাঁড়াতে বলেছে। কলেজ স্ট্রীট থেকে বই নিয়ে আসবে -ওদের স্টল আছে এখানে। আমাকে টুকটাক কাজ করে দিতে হবে আজ -স্টলে বসা, বিক্রিবাটা সামলানো এই সব আর কি। একটা ছোটো কম্পানিতে কাজ করতাম, সামান্য চাকরি। আর গানের টুইশানি। গতমাসে চাকরি গেল - মালিকানার হাতবদল হয়েছে না কি যেন। বাবার পেনশনের টাকা আর কতটুকু! মা র ওষুধ আর ডাক্তারেই চলে যায়। এই তো, সামনের সপ্তাহেই হাজার দশেক টাকা লাগবে মা'র  টেস্টের জন্য- কীভাবে জোগাড় করব এখনও জানি না।

    লোপাদি, তনয়দারা পাড়াতেই থাকে। লোপাদি পরশুই বলল- 'দু চারটে দিন আমাদের একটু হেল্প করে দিবি? ' টাকার কথা সরাসরি বলতে লজ্জা পাচ্ছিল ; আমিও। তনয়দা পাশ থেকে বলল, ' বিনে পয়সায় খাটাবো না রে, প্রমিস। '  সে তো জানি। কিন্তু ছোটোখাটো কাজের জন্য আর কটা টাকা পাবো? সামনের সপ্তাহের মধ্যেই হাজার দশেক টাকা জোগাড় করতে হবে-যে করে হোক। এই কাজটা মিটে গেলে, লোপাদির থেকেই ধার চাইবো না হয়। কিম্বা বড়পিসি। এখনও বেঁচে। দেয় যদি কিছু। টাকার চিন্তায় যখন পাগল পাগল লাগে, তখন মনে হয়, আমি বোধ হয় কাকীদিদা হয়ে যাচ্ছি। কাকীদিদা আমার মায়ের কাকীমা - প্রথমদিকে সত্যি টাকার দরকার ছিল, পরের দিকে ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত, মা কে তারা দিব্যি যত্নেই রেখেছে - তখনও দুপুরবেলায় বেরিয়ে পড়ত কাকীদিদা - বাসে চেপে, রিক্সায় এর বাড়ি তার বাড়ি- 'দিবি রে পঞ্চাশটা টাকা? খুব দরকার। সামনের মাসেই দিয়ে দেব'। অদ্ভূতভাবে মারা গিয়েছিল। কাকীদিদার ছোটো বাড়ি - একতলাই ছিল, বহুবছর পরে ছাদে একখানা ঘর তুলেছিল। বড়মেয়ের বিয়ে হচ্ছিল সেই ছাদে ; কে যেন বলেছিল, মেয়ের বিয়ে দেখতে নেই না কি -কাকীদিদা  তাই ছাদের লাগোয়া ঘরেই বসে ছিল , ছাদের দিকে দুটো জানলায় পর্দা টানা। ওদিকে বিয়ের আসরে মালাবদল, শুভদৃষ্টির সময় ছবি তুলছে সবাই; হঠাৎই কাকীদিদার এক বোনপো 'একি একি মেজমাসি জানলায় উঠে কী করছ' বলে চেঁচিয়ে উঠতে কাকীদিদা জানলার রড ছেড়ে  ঘরের মেঝেয় ধড়াম করে পড়ল। দু দিন হাসপাতালে । তারপর শ্মশানযাত্রার আগে মা কে নিয়ে গিয়েছি ওখানে-ফুল টুল নিয়ে; ধূপ জ্বলছিল-সাদাচাদরের তলায় নারীলক্ষণগুলি ঢাকা-আশ্চর্যজনকভাবে ক্লাইভ ওয়েনের মত লাগছিল কাকীদিদাকে –‘ দ্য ইন্টারন্যাশনালে’র ক্লাইভ ওয়েন যেন। আগে কোনদিন এরকম মনে হয় নি। হয়ত আমার চোখের দোষ, অথবা বিশ্বায়নের কুফল আমাকে কব্জা করে ফেলেছিল -তনয়দা যেমন বলে টলে। তবে সত্যি, আজকাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজই মনে হয়, আমিও কাকীদিদা হয়ে যাচ্ছি -চৌকো চোয়াল , কপাল চওড়া হচ্ছে দিনদিন, আর চোখের মধ্যে কেমন খিদে খিদে ভাব।

    এদিকে প্রায় একটা বাজতে চলল - দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই । বেশিরভাগ টেবিল এখনও খালি। লাউডস্পীকারে গান হচ্ছে। গানের না কি ট্রাফিকের আওয়াজে মোবাইল বাজছে বুঝি নি। ঊরুতে ঝোলা ব্যাগ ঠেকে যেতে  থিরথিরানি টের পেলাম-মোবাইল বের করে দেখি, লোপাদি চারবার ফোন করেছিল।

    -'ও লোপাদি, সরি গো, ভেরি সরি। শুনতে পাই নি। গান হচ্ছে এখানে'

    -' তুই কি পৌঁছে গেছিস?'

    -'বারোটাতেই এসে গেছি'

    -'শোন না, তুই একটু খেয়ে টেয়ে নে। খাবার এনেছিস? আমাদের দেরি হবে রে। বিকেল হয়েই যাবে। প্রেসে আটকে গেছি।'

    -লোপাদি, আমায় কিন্তু ন'টার মধ্যে ফিরতে হবে। সীতাপিসি চলে যাবে তো তারপর।'

    -'আরে না না অতক্ষণ আটকাবই না। তুই খেয়ে নে। একটু ঘুরে টুরে বেড়া। ঠাকুরবাড়ির ভেতরটা দেখে নে না পারলে। গিয়েছিস আগে?'

    ভিতরে ঢুকতে টিকিট কাটতে হয়। আমার ব্যাগে এখন  সে' টাকাই নেই। দল বেঁধে লোক ঢুকছে দেখলাম - চটি, জুতো খুলে বাইরে রাখছে। বাঁদিকে দেবেন্দ্রনাথ, ডানদিকে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং লোকজনের ওপর খেয়াল রাখছেন। সামনে অনেক ফুল টুল।  আমি ঘাসে বসে রুটি বাঁধাকপির তরকারি খেয়ে আকাশ দেখছিলাম। ক'দিন আগে মাঘোৎসব গেছে- জোড়াসাঁকোর ছাদের  ওপর আধখোলা সামিয়ানা উত্তুরে হাওয়ায় তোলপাড় হচ্ছিল। এই ছাদেই কি নতুন বৌঠানের বাগান ছিল? কে জানে? ওসব ভেবে কী  বা হবে !  আমার  ন'টার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে,  আগামী সপ্তাহের মধ্যে দশ হাজার টাকা চাই ।  তবু, ছাদের দিকেই চোখ যাচ্ছিল।  আকাশে এখন সামান্য রোদ, মেঘও। ঢাউস সামিয়ানায় ক্রমাগত হাওয়ার ঢেউ খেলছে আর ছেঁড়া তেরপলের টুকরোটা  কখনও বিশাল এক ঘুড়ি কখনও নৌকার পাল হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কেমন একটা হচ্ছিল ভেতরে-সমুদ্রে অনেকক্ষণ স্নান টান করে হোটেলে ফিরেই একটু শুয়ে নিলে যেমন হয়- পিঠের তলায় টানটান বিছানা  ঢেউএর মত হয়ে যায়, পায়ের তলায় অদৃশ্য  বালি সরে সরে যেতে থাকে-চোখ বুজে থাকলে ঘরটাই সমুদ্র হয়ে যায় - অনেকটা  সেইরকম। মনে হচ্ছিল, যেন আমি দোলনায় বসে,  এবারে মাটিতে পা ঠুকে সামনের দিকে লম্বা করে বাড়িয়ে দিলেই  হাওয়ার ঢেউ আমাকে তুলে নিয়ে যাবে ঐ উঁচুতে-সটান ছাদে। টিংকু আমার পায়ের পাশে শুয়েছিল। চিন্তাভাবনার তো ছায়া হয় না। টিংকুকে তাই  খুব সরু , রোগা, গুটলি পাকানো মত লাগছিল।  হঠাৎ ইচ্ছে হ'ল, রোগাভোগা টিংকুটাকে দোলনায় তুলে দিই। তারপর অই উঁচুতে বৌঠানের ছাদে পৌঁছে যাক টিংকু। সে তো আর কাকীদিদার বেখাপ্পা ছাদ নয়,  বৌঠানের ছাদে রজনীগন্ধার বাগান থাকবে শিওর , শীতলপাটি তাকিয়া খাবার টাবার শরবৎ, আর থাকবে  সুদর্শন যুবকের দল -লম্বা, কোঁকড়ানো চুল, জুলফি- তারা বেহালা বাজাবে,  অথবা পিয়ানো; গান গাইবে। কেউ আবীরের মত , কেউ পরমব্রত, অথবা অনির্বাণ। কাল শাজাহান রিজেন্সি দেখেছি-এই নিয়ে দুবার ।  মা কী করে টের পেয়ে গেল কে জানে?

    টিংকুকে বৌঠানের ছাদে পৌঁছতে গেলে, আলোটা কোন দিক দিয়ে আসতে হবে? মাটি ফুঁড়ে? নিজে নিজেই হাসতে লাগলাম।

     

    --'রিংকু না? কী করছিস এখানে?'

    চমকে দেখি বুড়োদা দাঁড়িয়ে হাসছে। প্রথমে ছ্যাঁৎ করে উঠল  সেই জায়গাটা যেখানে হাত দিয়েছিল বুড়োদা আমাদের পুরোনো বাড়ির সিঁড়ির ঘরে। চুমু খেয়েছিল। পরের সেকন্ডেই ভাবলাম-দূর সে সব বহুদিনের কথা -

    আমিও হাসলাম, গলা খাঁকরে বললাম-'এই তো একটু কাজে। ভালো আছ?'

    -'এখানে কিসের কাজ তোর? গান আছে লিটল ম্যাগের ওখানে?'

    মাথা নাড়লাম-হ্যাঁ না দুইই বোঝালো সম্ভবতঃ

    -'কী ভালো গাইতি তুই। আমার নয়ন ভুলানো এলে গেয়েছিলি পুজোয়, মনে আছে?'

    -' সে সব কতদিনের কথা, বুড়োদা'

    -'মনে পড়ে আর কি- কেমন করে গাইতি অইটুকু ঐ মেঘাবরণ; কানে লেগে আছে এখনও। জানিস?  তোর গান ক'টায় রে?  শুনব'

    - 'সে তো হয়ে গেছে কখন'

    - ' কই শুনলাম না তো-সকাল থেকেই তো স্টলে ছিলাম। ও আচ্ছা, একবার একটু বেরিয়েছিলাম। তখনই গেয়েছিস তাহলে। আমারই মন্দ কপাল। তো? এখন কী করছিস মাঠে বসে?'

    আঃ বুড়োদা, সব সময় কৈফিয়ৎ দিতে হবে নাকি?

    জোর করে হাসি টেনে বললাম, 'এক বন্ধু আসবে। তাই অপেক্ষা করছি-'

    -' বন্ধুনী না বন্ধু, অ্যাঁ?  কী রে ? ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?'

    ঊরুর ওপর আবার থিরথিরানি-' অ্যাই রিংকু, আজ তুই  বরং বাড়ি চলে যা । প্রেসে আরো ঘন্টা দুই থাকতে হবে, তারপর আর জোড়াসাঁকোয় যাওয়ার মানেই হয় না। কাল সকালে এক্কেবারে তোকে  নিয়েই আসব। হ্যাঁ রে লোকজন কেমন হচ্ছে দেখলি? প্রথম দিনটা একদম বেকার গেল - ধুস্‌। '

    -'রিংকু চা খেয়েছিস? চল্,  চা খাই। তোর বন্ধু আসবে না-তাই বলল তো’? শোনা যাচ্ছিল পাশ থেকে।'

    চা খাওয়ালো বুড়োদা। কেক।

    -' অনেকক্ষণ খাস নি, না রে? শোন্ না, কলেজ স্ট্রীট যাবো একটু ;  আবার প্রেসে যেতে হবে। তুইও চল। ফেরার পথে শিয়ালদা থেকে সাউথ লাইনের ট্রেনে উঠে যাস। স্টেশন থেকে অটো নিয়ে নিবি। '

    টিংকুর দিকে তাকালাম। সেও যেন বলল-চল।

    আসলে যাই না তো কোথাও।

     

    কলেজস্ট্রীটে ঘন্টাখানেক ঘুরে তারপর প্রেসে বসে আছি। অনেক কথা বলছিল বুড়োদা।  নিজের কথা, চাকরির গল্প, ওদের এই নতুন ম্যাগাজিন, লেখালেখির কথা।  মা'র খোঁজখবর নিল।  আমার ক্লান্ত লাগছিল খুব। বললাম-'বুড়োদা , তোমার কি আরো দেরি হবে?  আমি এবারে যাই, বুঝলে?'

    -'যাবি? দেরি হয়ে যাচ্ছে তোর? আচ্ছা । শোন্, এই  টাকাটা রাখ। শাড়ি তো হবে না , সাজগোজের কিছু কিনিস-কত কী পাওয়া যায় আজকাল।  একটু ভালো জামাকাপড় পর, লিপস্টিক ঠিক মাখ। এভাবে থাকিস না'-

    -'না না বুড়োদা, ও তুমি রেখে দাও'

    -আরে আমারও তো দিতে ইচ্ছে হয়, জন্মদিনে, পুজোয় কতদিন কিছু দিই নি তোকে। আর শোন্, আসিস্ আমাদের বাড়িতে। তোর সিভি আনিস। বুঝলি? কী করতে পারি দেখব। শনিবার করে আসিস। তোর বৌদি পুজো দিতে যায়। অনেকটা সময় কথা বলা যাবে'।

    টাকাটা বুড়োদার মুখে ছুঁড়ে দিয়ে চলে এলাম।

    কলেজস্ত্রীট থেকে শিয়ালদা যেন গনগনে আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটলাম। কান মাথা ঝাঁঝা করছিল।  চোখ দিয়ে জল পড়ছিল অঝোরে- আগুনের শলা কানের এপার থেকে ওপারে পোঁছে যাচ্ছিল- এ'সবের তো ছায়াটায়া হয় না- আমার পায়ের কাছে এখন চার চারটে মোটা বেঁটে আহ্লাদী টিংকু। রাস্তার বাতি জ্বলে গিয়েছে।

    ট্রেনটা গ্যালপিং ছিল-খেয়াল করি নি। নামলাম সোনারপুরে। উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে থিকথিক করছে লোক-আপ ট্রেনের গন্ডগোল- অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে ঘন ঘন -ঘন্টাখানেক পরে অবস্থা স্বাভাবিক হ'তে পারে বলছিল। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে জল খেলাম - কী করব? কী করব আমি এখন?  বেরিয়ে বাস ধরব? কোন বাস যায়?  জিগ্যেস করব কাউকে?  বাসে খুব ভীড় হবে তো -উঠতে পারব? এখনই তো প্রায় আটটা। শীতের রাতেও বিনবিন করে ঘাম হচ্ছে। চাদর খুলে কোমরে প্যাঁচালাম। মোবাইল বের করে সীতাপিসিকে বললাম-'আটকে গেছি। চলে যেও না।' সীতাপিসি গজগজ করল, কেটে দিল ফোন।

    নিজের ওপর রাগ হচ্ছিল। ঘেন্না।  কেন গেলাম বুড়োদার সঙ্গে ? জল খেলাম আবার, তারপর একটা বেঞ্চে ঠেসে ঠুসে বসে রইলাম ট্রেনের অপেক্ষায়-পায়ের কাছে টিংকু- পুরোনো ডুমের হলদে আলোয় ম্যাটম্যাট করছে।

    আধঘন্টা নাকি এক ঘন্টা বসে ছিলাম- খেয়াল নেই-হয়ত ঘুমিয়েও পড়েছিলাম, কে জানে! গান ভেসে এল হঠাৎ- সেই সঙ্গে জ্যোৎস্না। মুখ তুলে দেখি, প্ল্যাটফর্মের একপাশে বেশ অন্ধকার - লোকজন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে  - কালো কালো মাথা, ছোটো বড় অবয়ব- রেলে কাটা  পড়া লাশ দেখবার ভীড়ের মত অনেকটা;  অথচ গান আসছিল সেখান থেকেই -এক প্যার কা নগমা হ্যায় ।  গলাটা চেনা লাগল - যেন অনেক আগে শুনেছি কোথাও, কানেক্ট করতে পারছি না।  ঠেলে ঠুলে সামনে গিয়ে দেখি, মানুষের বেড়ায় ঘেরা এক বৃত্ত- তারই  কেন্দ্রে উস্কোখুস্কো চুল, মলিন  শাড়ি - গান গাইছে, পায়ের কাছে  তানপুরার তম্বুরার মত ছায়া। পয়সা দিচ্ছে লোকজন। মোবাইলে ছবি তুলছে। মুখ দেখার চেষ্টা করছিলাম- ঠাহর করতে পারছিলাম না ; খানিকটা কাকীদিদার মত লাগছিল আদল। সুরসমেত কথা ভেসে ভেসে আসছিল - এক প্যার কা নগমা হ্যায় -  জিন্দগী আর কুছ ভি নহি তেরি মেরি কহানি হ্যায়- অন্ধকার অনেক পাতলা লাগছিল,  ঘোলাটে আলোয়  কেমন আবছা হয়ে যাচ্ছিল ভীড়ের আকার ও পরিধি ; তারপর আচমকা  প্ল্যাটফর্মের শেড আর মানুষের মাথার মাঝখানের ফাঁকটুকু দিয়ে সাঁৎ করে চাঁদ ঢুকলো স্টেশনে, আর  যেন পায়ের তলা থেকে জ্যোৎস্না  উঠে এলো সটান- বিশাল  এক চাদর পাতল প্ল্যাটফর্ম জুড়ে। সিনেমার পর্দার মত। সেই পর্দায় সোনারপুর স্টেশন বালুচর হয়ে গেল প্রথমে - জ্যোৎস্নায় জ্যোৎস্নায়  পুরো সাদা- ঢেউ ভেঙে ভেঙে আছড়ে পড়ছে-ভীড় টীড় মুছে সাফ-  তারপর একটা ছাদ যেন- থই থই চাঁদের আলো, কিছু কাশ ফুটে ছিল,  রজনীগন্ধার ঝাড়  লকলক করছিল হাওয়ায় ।  সে’ছাদ, ছাদের পাঁচিল টাঁচিল স্বচ্ছ কাচ - প্রিজম  নাকি অজস্র আয়না। এক আয়নায় আকাশ, অন্য আয়নায় সমুদ্র আর বালি আর তিন নম্বর আয়নায় বৌঠানকে দেখলাম স্পষ্ট - একবার খোঁপা আবার খোঁপা ভেঙে এলোচুল, ঢাকাই শাড়ি, গাঢ় রংএর শাল ; পরক্ষণেই, যেন সিনেমার ওয়াইড অ্যাঙ্গল শট -  আকাশে বৌঠান বাতাসে বৌঠান সাগরে বৌঠান বালিতে বৌঠান- তাকে ঘিরে বেহালা বাজায়  আবীর, পরমব্রত পিয়ানো বাজিয়ে  গায় - হৃদয়ে ছিলে জেগে ; প্যার কি নগমার সঙ্গে তখন তার  আশ্চর্য ফিউশন হতে থাকে। হাওয়ায় ওলোট পালোট খেতে খেতে বৌঠানের ছাদ  পেল্লায় এক গালচে হয়ে যায় এবার- আমার দিকে স্ট্রেইট উড়ে আসতে থাকে- যেন তুলে নিয়ে যাবে।

    না না না - আমাকে যে বাড়ি ফিরতেই হবে, সীতাপিসি ফিরে যাবে ন’টায়; ক'টা? ক'টা বাজে এখন?  অবশ হয়ে আসে পা,  থিরথির করছে ঊরু-মোবাইল বাজছে তো বাজছেই-সীতাপিসি ফোন করছে বারবার-ফোন তোল রিংকু, ফোন তোল-না না না- এক প্যার কা নগমা হ্যায় -হৃদয়ে ছিলে জেগে, দেখি আজ শরত মেঘে- কুছ খো কর পানা হ্যায় কুছ পা কর খোনা হ্যায়- কী যে গান গাহিতে চাই, বাণী মোর খুঁজে না পাই - এ'সপ্তাহে দশহাজার টাকা  চাই আমার- তারপর একটা পার্মানেন্ট চাকরি- আজ এক্ষুণি বাড়ি ফিরতেই হবে  - দো পল জীবন সে এক উমর চুরানি হ্যায়...ডাউন ট্রেন আসে যায় ঝমাঝম ঝমাঝম ঝমাঝম - অন্য কোথাও -অন্য কোথাও- অন্য কোথাও- সে যে ঐ ক্ষণিকধারায় উড়ে যায় বায়ুবেগে- রেললাইনে জ্যোৎস্নার ফালি চকচক  ক'রে, চকচক  ক'রে, চকচক  ক'রে - ও মা, মা গো-কোথায় যাব আমি?

    জ্যোৎস্না ওকে ঘিরে ধরেছিল।  খাবিখাওয়া মাছের মত ছটফট করছিল রিংকু; বেরোনোর চেষ্টা করছিল প্রাণপণ - দুহাত দিয়ে ছেঁড়ার চেষ্টা করছিল চাঁদের জাল অথচ আঙুলের ফাঁক দিয়ে পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছিল সূক্ষ্ম সব  রূপোলী সুতো এবং জটিল নকশা।  টিংকু প্রথমটায়  গুটিশুটি বসে ছিল এককোণে,  কিন্তু প্যার কা নগমা রিংকুকে আপাদমস্তক কব্জা করে ফেলছে দেখে টিংকু ওকে আড়াল করে দাঁড়াল,  তারপর রুটি দিয়ে বাঁধাকপি গেলার মত  খাবলা খাবলা জ্যোৎস্না ঠুসতে লাগল নিজের মুখে। এঁকেবেঁকে পালাতে চাইছিল বাকি আলোটুকু - টিংকু এবার সটান কামড় দিল চাঁদে - টপটপ্ ক'রে ঝরে পড়ল রস- রেললাইন আর প্ল্যাটফর্মে। খানিকটা চাঁদ পিছলে গিয়েছিল- টিংকু তাকে টেনে আনল।  চাঁদের আঠায় জড়িয়ে যাচ্ছিল ওর চোয়াল, জিভ -জ্যোৎস্না তার সুযোগ নিচ্ছিল। ফলে, কখনো চাঁদ জিতে যাচ্ছিল, কখনও টিংকু। টানাটানির এই  লম্বা খেল খতম হ'ল শেষমেষ - পড়ে রইল কিছু হাড়গোড় আর  মাত্র এক ছটাক  প্রাগৈতিহাসিক জ্যোৎস্না।  গোটা চাঁদ গিলে ফেলেও টিংকু থামছিল না;  ওর শরীর বাড়ছিল- প্রথমে ছোটো বেঞ্চ, চায়ের স্টল, আলোর ডুম ,  একসময় প্ল্যাটফর্ম ঢেকে নিল-তারপর গোটা আকাশ।চাঁদের আলো পুরোপুরি নিভে বৃষ্টি নামল। জোরে। খুব জোরে।    


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • বাকিসব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২১৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 236712.158.676712.160 (*) | ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০১80143
  • উহ!
  • Titir | 237812.69.01900.27 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৪80145
  • শুরু করার সময় মনেহয় বেশ বুঝতে পারছি লেখাটা। তারপর আলোআঁধারিতে তালগোল পাকিয়ে যায়। কিছুটা বুঝি আবার কিছুটা বুঝিনা। কিন্তু পড়ে যাই শেষপর্য্ন্ত্য। মনে হতে থাকে পড়তে হবে আবার পড়তে হবে।
  • | 237812.68.674512.145 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৪৭80146
  • আচ্ছা এরকম একটা গল্প আগে পড়েছিলাম? বাঘ না হরিন ছিল?
  • একক | 236712.158.565612.163 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৫৯80147
  • দারুন জমাট বুনন।

    শুধু ঐ " প্রাগৈতিহাসিক" শব্দ টা খচ করে কানে লাগলো। ছোটাইদির এর হাত তো খুবি পরিনত, তাই অতিরিক্ত একটা নোট ও বেশি বাজলে, আশাভঙ্গ হয় ।
  • শিবাংশু | 236712.158.786712.163 (*) | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:৪৮80144
  • '....তারপর আচমকা প্ল্যাটফর্মের শেড আর মানুষের মাথার মাঝখানের ফাঁকটুকু দিয়ে সাঁৎ করে চাঁদ ঢুকলো স্টেশনে, আর যেন পায়ের তলা থেকে জ্যোৎস্না উঠে এলো সটান- বিশাল এক চাদর পাতল প্ল্যাটফর্ম জুড়ে। সিনেমার পর্দার মত। সেই পর্দায় সোনারপুর স্টেশন বালুচর হয়ে গেল প্রথমে - জ্যোৎস্নায় জ্যোৎস্নায় পুরো সাদা- ঢেউ ভেঙে ভেঙে আছড়ে পড়ছে-ভীড় টীড় মুছে সাফ- তারপর একটা ছাদ যেন- থই থই চাঁদের আলো, কিছু কাশ ফুটে ছিল, রজনীগন্ধার ঝাড় লকলক করছিল হাওয়ায় । সে’ছাদ, ছাদের পাঁচিল টাঁচিল স্বচ্ছ কাচ - প্রিজম নাকি অজস্র আয়না। এক আয়নায় আকাশ, অন্য আয়নায় সমুদ্র আর বালি আর তিন নম্বর আয়নায় বৌঠানকে দেখলাম স্পষ্ট - একবার খোঁপা আবার খোঁপা ভেঙে এলোচুল, ঢাকাই শাড়ি, গাঢ় রংএর শাল ; পরক্ষণেই, যেন সিনেমার ওয়াইড অ্যাঙ্গল শট - আকাশে বৌঠান বাতাসে বৌঠান সাগরে বৌঠান বালিতে বৌঠান- তাকে ঘিরে বেহালা বাজায় আবীর, পরমব্রত পিয়ানো বাজিয়ে গায় - হৃদয়ে ছিলে জেগে ; প্যার কি নগমার সঙ্গে তখন তার আশ্চর্য ফিউশন হতে থাকে। হাওয়ায় ওলোট পালোট খেতে খেতে বৌঠানের ছাদ পেল্লায় এক গালচে হয়ে যায় এবার- আমার দিকে স্ট্রেইট উড়ে আসতে থাকে- যেন তুলে নিয়ে যাবে।'

    এই নির্মাণটি পড়ার পর আরেকটি পূর্বজ চালচিত্র না ভাবতেই চলে এলো মনে।

    "...মনে পড়ে কবে এক রাত্রির স্বপ্নের ভিতরে
    শুনেছি একটি কুষ্ঠকলঙ্কিত নারী
    কেমন আশ্চর্য গান গায়;
    বোবা কালা পাগল মিনসে এক অপরূপ বেহালা বাজায়;
    গানের ঝংকারে যেন সে এক একান্ত শ্যাম দেবদারুগাছে
    রাত্রির বর্ণের মতো কালো কালো শিকারী বেড়াল
    প্রেম নিবেদন করে আলোর রঙের মতো অগণন পাখিদের কাছে;"

    এই লেখাটি অবশ্য রিংকুর গল্প হয়েই উঠে এসেছে। ইন্দ্রাণীর গল্পে এবার টিংকু রয়ে গেলো পিছনে। ব্যতিক্রমী,

    সাধুবাদ, যথারীতি...
  • i | 236712.158.9005612.75 (*) | ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০৯80148
  • নেটে বিচরণের সময় সুযোগ সেভাবে পাচ্ছি না/ পাবো না কিছুদিন। আপাতত যাঁরা পড়লেন ও জানালেন সবাইকে ধন‍্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পরে কোনদিন বিশদে কাটাছেঁড়া করব।
  • de | 162.158.158.8 | ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:৩৭45387
  • শেষের দিকটা যেন ঘোরের মধ্যে পড়লাম - কি বলি, এ লেখার পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো কলম আমার নাই -
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন