এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব ২০১৩

  • রোব্বারের পরদিন

    ইন্দ্রাণী লেখকের গ্রাহক হোন
    ইস্পেশাল | উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১০৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সকালেই বারান্দার গ্রিলে রোদ পড়ে। চৌকো খোপ খোপ, খোপের দুকোণে বাঁকানো লতা। রূপোলী রং। রোদ যত বাড়ে, বাঁকানো লতা, চৌখুপি ঘর তত তেতে ওঠে। হাত ছোঁয়ানো যায় না এক সময়। তারপর রোদ সরে যায়, গ্রিলের তাত কমে যেতে থাকে। গ্রিলের ওপরে নাক নিলে রোদের গন্ধ ওঠে। রুফাস নাক দিয়ে আওয়াজ করে বারান্দার মেঝে শোঁকে, গ্রিল, তারপরে বাতাস। চোখ পিট পিট করে। বাদামী চোখের পাতা, লোম। জিভ বের করে হাঁপায়। তারপর সামনের পা  টান করে, বারান্দার মেঝেতে পেট পেতে শোয়, মুখ নামিয়ে আনে থাবার ওপর। থাবা চাটে। তারপর  চোখ বোজে। ঝিমোতে থাকে। স্বপ্না বারান্দায় এলে  গা ঝাড়া দেয়। স্বপ্নার পায়ে পায়ে ঘোরে। 


    রোদ সহ্য হয় না স্বপ্নার। আবার এই বাড়িটা এমনই হয়েছে যে রোদে রোদে ভরে থাকে। জানলায় কাচ বসানো। সামান্য কিছু আঁকা তাতে-এমনিতে চোখে পড়ে না-সকালের প্রথম রোদটা  সাতটার মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে থাকে আর তখনই বোঝা যায় নকশাটা-তিনটে নকশা সামান্য ব্যাঁকা হয়ে পড়ে মেঝেতে তারপর সোজা হয়ে দেওয়ালে-দশ মিনিট বড়জোর। তারপর মিলিয়ে  যায়। মিলিয়ে যে যায় তা নয়, আসলে তখন ঘরভরা রোদ থই থই করে-হাল্কা রোদের নকশা হারিয়ে যায় রোদে রোদেই। জানলা দিয়ে রোদ ঢুকতেই থাকে -আলোর গতিপথে অজস্র ধুলোর কণা উড়তে দেখা যায় আর ঠিক এই সময় থেকে স্বপ্নার মাথা ধরে। প্রথমে ঘাড় তারপর ব্যথাটা মাথার পেছনে ছড়ায়। ও চুল গুটিয়ে খোঁপা করে নেয়-ব্যথা তখন চুল বেয়ে বেয়ে কপালে নামে।তারপর সারাদিন সঙ্গে থাকে।  ঘন ঘনই মাথা ধরছে ইদানিং।  স্কুলে যাওয়ার সময় রোদ অ্যাভয়েড করে-কালো চশমা ছাতা এই সব। বিকেলে রোদ একদম মরে গেলে স্কুল থেকে বাড়ি। আজ রবিবার, বাড়িতেই ছিল স্বপ্না। ভারি পর্দা টেনে। রোদ কমতে  বারান্দায় এল। চৌখুপি গ্রিলে হাত রাখল। যেন  রোদের তাত মেপে নিচ্ছে।  বারান্দার ওপরে হাল্কা ফাইবারের শেড। সামনেটা ঢেউ খেলানো। সেই ফাঁক দিয়ে পাহাড় দেখল স্বপ্না। ছোটো পাহাড় তৈরি হচ্ছিল প্রথমে, তারপরে বড় পাহাড়। ভেঙে গিয়ে হাতি হচ্ছিল, বুড়ো মানুষ, উট। দশ বছর ধরে এখানকার  আকাশ দেখছে - এই মেঘে বৃষ্টি হয় না। বাগানে জল দেবার পাইপটা তুলে নিল স্বপ্না, প্যাঁচ খুলে সোজা করল। ট্যাপ খুলতেই আলতো ফোয়ারা হয়ে জল গাঁদায় পড়ল, সেখান থেকে লংকা গাছে।  আমচারাকে ভিজিয়ে তুলসী পাতাদের ভেজাচ্ছিল স্বপ্না। তুলসী পাতার ওপর জল পড়লে ভেজামাটির গন্ধর সঙ্গে হালকা তুলসীর গন্ধ মিশে যাচ্ছিল। নাক টানছিল স্বপ্না। এই সময় মেঘের পিছন থেকে সূর্য বেরোলে স্বপ্না জলের ধারা আলোর গতিপথে উঠিয়ে আনে - দেখে নীল, দেখে সবুজ, কমলা। রঙেরা ঈষৎ কাঁপে, মিলেমিশে যেতে থাকে, একসময় রোদ আর জল আলাদা হয়ে যায় ফের। এই পাহাড়তলির ছোটো শহরে বৃষ্টি হয় কেমন খাপছাড়া। হয়ত সন্ধ্যায় একপশলা, রাতে তুমুল, সকালে আবার ঝকঝকে  আকাশ। এমন হল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল আর সকালে স্বপ্না রুফাসকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। বাড়ির সামনে রাস্তা, গর্ত, জমা জল। সূর্য উঠলে রাস্তা থেকে বাষ্প ওঠে  -রুফাসের ল্যাজ খাড়া  হয়ে যায়। পিঠ টান টান। আর তখনই জমা জলে রামধনু দেখতে পায় স্বপ্না। ওর সেই দরজার কথা মনে হয় খুব - একটা পেল্লায় কাঠের দরজা - ঐরকম কাঠ, ঐরকম পালিশ পরে আর দেখে নি স্বপ্না - দরজার ওপরের দিকটায় রামধনু কাচ বসানো - এইরকম একটা দরজা ছোটোবেলায় দেখেছিল ও। রোজই দেখত। সেই দরজার বাড়ি থেকে ছোটোবেলায়  স্বপ্নাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হাতি আসত বিকেলে। হাতির পিঠে হাওদা থাকত, মাহুত। স্বপ্নাদের বাড়ির দরজায় পা মুড়ে বসত হাতি। ঘন্টার শব্দ করত। ঝালর দেওয়া ফ্রক পরে স্বপ্না হাতীর পিঠে বসত। কাজল পরত, টিপ। একটা বড় বাগানে বেড়াতে যেত স্বপ্না, কখনও নদীর ধারে। এই সব  হাতির গল্প, হাওদা, মাহুত আর নদীর গল্প সে নিশ্চিত বলে জানত তার ফুলশয্যা পর্যন্ত। আসলে হাওয়ার রাত ছিল সেদিন। ফুলশয্যার খাটে ঘন নীল মশারি  ফুলে ফুলে উঠছিল। তখন নীলকমলকে হাতির গল্পটা বলেছিল স্বপ্না। নীলকমল হাসিমুখ করে শুনছিল তারপর বলেছিল - ধ্যাত, সরু গলিতে হাতি ঢুকবেই না। হাতি বিষয়ে নীলকমল সবই জানে - এরকমই মনে হয়েছিল তার নতুন বৌয়ের। তখন স্বপ্না অন্য গল্প বলবে ভাবছিল - বিরাট উঠোনে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামত, সেই গল্প। নীলকমল ততক্ষণে সুকুমারের গল্প শুরু করেছিল। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দিয়েই শুরু করেছিল নীলকমল। বলেছিল সুকুমারের আশ্চর্য বাড়ির কথা। বলেছিল, চাঁদ উঠলে সুকুমারের বাড়ির সামনের রাস্তায় আইসক্রীম ট্রাক আসে। লাল নীল আলো জ্বলে, ঘন্টা বাজায়। নীলকমল বলেছিল সুকুমার আইসক্রীম ভালোবাসে। স্বপ্নারও একটা গল্প ছিল আইসক্রীমের। প্রাচীন এক আইসক্রীমের রেসিপির - যা ও এক মেমসাহেবের থেকে পেয়েছিল কুচবিহারে-ওর বাপের বাড়ির পাড়ায়। জীর্ণ এক বাড়িতে থাকত সেই মেম আর তার অন্ধ কুকুর। স্বপ্না অবশ্য সে গল্প বলে নি তখন। সুকুমারের গল্প শুনেছিল চুপ করে। এক বছর শুনেছিল সুকুমারের গল্প। তারপর  বছর ঘুরতেই কুচবিহার গিয়ে রুফাসকে নিয়ে এসেছিল। বলেছিল বাপের বাড়ির কুকুর। বলেছিল ছোটোবেলায় ও ইংরিজি শিখেছিল এক মেমের কাছে। ইংরিজি শিখত আর রান্না। রুফাস আর রান্নার বই এনেছিল কুচবিহার থেকে। বলেছিল মেম দিয়েছে। নীলকমল রান্নার বই উল্টে দেখেছিল। সমস্ত উপকরণ, মাপামাপির হিসেব  অচেনা ঠেকেছিল নীলকমলের। বলেছিল - এসব এদিকের বাজারে পাওয়া যায় না। বলেছিল - সুকুমারকে বলে দেব, দেশে এলে নিয়ে আসবে। স্বপ্না সে বই তুলে রেখেছিল। রুফাস তখন ছোটো। স্বপ্না বলেছিল  মেমের অন্ধ কুকুরের নাতি রুফাস। মেমই নাম রেখেছে।পরে একদিন তুমুল ঝড় জলে শিয়ালদায় স্বপ্নার পিসতুতো দাদার সঙ্গে নীলকমলের দেখা হয়েছিল। দার্জিলিং মেল ধরার কথা দুজনেরই। ট্রেন লেট ছিল সেদিন। অনেকক্ষণ গল্প করেছিল ওরা। মেমের কথা কিছু জানে না স্বপ্নার পিসতুতো দাদা, বরং, সেদিন সে রুপুর কথা বলেছিল আচমকা। বলেছিল, রুপু  স্বপ্নার প্রেমিক ছিল কুচবিহারে। বাড়ি ফিরে  স্বপ্নাকে সে সব কিছু বলে নি নীলকমল। প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে সুকুমারের ট্রেন আটকে পড়েছিল  পাটনায়-সে গল্প বলেছিল। 


    আজ  জানলা দিয়ে মেঘ দেখছিল নীলকমল। মেঘ ভেঙে ভেঙে যথারীতি উট, বুড়ো, পাহাড়। রোদ বেরোতেই জানলা থেকে চোখ সরালো নীলকমল। টিভির রিমোট নিল। তারপর এহাত ওহাত করে রেখে দিল সেন্টার টেবিলে। কাঠের ওপর  রোদ সরে যাচ্ছিল তখন। নীলকমলের হাতের ওপর রোদ পড়ছিল। রোদের হালকা উত্তাপ টের পাচ্ছিল নীলকমল হাতের ওপর। চামড়ার ছোটো ছোটো চৌখুপি ঘর, প্রতি ঘরে রোমকূপ, চার পাঁচটা সবজে শিরা - নখের পাশ দিয়ে চামড়া উঠেছে। কড়ে আঙুলের নখটা সামান্য ভাঙা, ক্ষয়ে যাওয়া। সুকুমার হাত অন্যরকম ছিল। সুকুমারের হাতের কথা নীলকমল জানে। সুকুমারের কড়ে আঙুলের তলায় ছোটো গোল দাগ ছিল-নাইট্রিক পড়েছিল বি এস সির প্র্যাক্টিকালে। সুকুমার সে জায়্গায় তেল মাখত - অলিভ অয়েল, ক্রীম, লোশন। সুকুমার ঐ রকমই - খুঁত সহ্য হয় না। নীলকমলের সঙ্গে কুল কিনত সুকুমার স্কুলের সামনে। হাত বুলোতো কুলে, দাগহীন খুঁতহীন কুল দু আঙুলে তুলে উঁচু করে দেখত।কুল বেছে নিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে আঙুল মুছত সুকুমার। এখন অবশ্য আর কুল কেনে না সুকুমার - চেরি কেনে, স্ট্রবেরি, রকমেলন; টমেটো লাগিয়েছে বাগানের টবে। নিটোল টমেটো হয়। বাগানে কুমড়ো চাইছে  সুকুমার অনেকদিন হ'ল-কুমড়োর বীচি পুঁতেছে বহুবার। চারা বেরোয়, দু একটা পাতা।তারপর শুকিয়ে যায়। নীলকমলকে লিখেছিল সেকথা। লিখেছিল, কুমড়ো হচ্ছে না। মাটি পরীক্ষা করাবে - লিখেছিল। পরীক্ষা হয়ে গেলে, নীলকমলের বাগান থেকে বীচি নিয়ে যাবে সুকুমার। কুমড়োর আর  লংকার। আর কিছু লেখে নি তার পরে বহুদিন। অথচ নীলকমলের সবই জানা ছিল। জানা ছিল, সবুজ রোঁয়া ওলা বৃন্ত বাদামী হলে দুহাতে ফলন তুলে দেখবে সুকুমার। দেখবে সুগোল কমলার ওপর কালচে সবুজ ডোরা সমদূরত্বে আছে কি না। তারপর হাত বুলিয়ে মসৃণতা পরখ করবে। প্রথমে একটা কুমড়ো, তারপর দুটো, তিনটে চারটে, পাঁচটা ছটা। এইরকমই ছেলেমানুষি করবে সুকুমার - নীলকমলের জানা ছিল। নীলকমল সবুজ  শিরায় হাত বোলালো, তারপর আরও একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়েই রইল হাতের ওপর এক ফালি রোদ নিয়ে। হাত সরিয়ে নিলে রোদ হারিয়ে যাবে।


    এই সময় বাগান থেকে ঘরে ঢুকছিল স্বপ্না। রুফাস চার পা ওপরে তুলে শুয়ে পড়ছিল স্বপ্নার সামনে। ল্যাজ নাড়ছিল। যে রোদটুকু ঘরে ঢুকছিল, তাতে অজস্র বাদামী সাদা রোঁয়া ঘরময় দেখা যাচ্ছিল,স্বপ্না পুরোনো  তোয়ালে দিয়ে রুফাসের পা মুছে দিচ্ছিল, বাগানের ঘাস, মাটি ই মূলতঃ। রুফাসের আরাম লাগছিল। আরও আদর চাইছিল রুফাস। রুফাসের গলা, বুক, পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল স্বপ্না। ঘন বাদামী লোমে আঙুল বসে যাচ্ছিল ওর। নখের ডগা আলতো ছোঁয়াচ্ছিল। ওর হাত ঘুরছিল বৃত্তাকারে। রুফাস এপাশ ওপাশ করছিল। ল্যাজ নাড়ছিল। আলতো দাঁত বসাচ্ছিল স্বপ্নার আঙুলে।


    প্রথম প্রথম, স্বপ্না যখন আদর করত রুফাসকে, অস্বস্তি শুরু হত নীলকমলের। অস্বস্তি হত, চোখ সরিয়ে নিত নীলকমল। তারপর শরীর জাগত। স্বপ্না জানত। রুফাসকে বারান্দায় রেখে দরজা বন্ধ করত নিজেই। জ্যোৎস্নার দিনগুলোতে এসব বেশি হত। হয়তো রুফাসকে নিয়ে উঠোনে মোড়া পেতে বসেছে দুজনে, কিম্বা বারান্দায় চেয়ারে। হয়ত পাহাড়তলির আকাশ পরিষ্কার সেদিন-হয়ত সকালে বৃষ্টি হয়েছিল-আকাশ তারাময়-চাঁদ ঘিরে জলীয় বাষ্পের রঙীন বৃত্ত - সাদা মেঘে মেঘে আশ্চর্য একটা পথ তৈরি হচ্ছে চাঁদের দিকে-স্বপ্না লক্ষ্মীপ্যাঁচার গল্প শুরু করলে নীলকমল আইসক্রীম ট্রাকের গল্পটা শুরু করত। রুফাস কান খাড়া করে তাকিয়ে থাকত দূরে-স্বপ্না তখন আদর করত রুফাসকে। তারপর রুফাসকে বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করত দুজনে। অনেক রাতে দরজা খুলে রুফাসকে দেখত নীলকমল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে রুফাস, পিঠ টান টান, কান খাড়া। নীলকমলের মনে হত রুফাসের কোথাও যাওয়ার আছে। কোথাও যেতে চায় রুফাস। স্বপ্নাকে এ কথা বলতে  স্বপ্না বলেছিল - রুফাস কোথাও যাবে না।  কোথাও শব্দের ওপর জোর দিয়েছিল স্বপ্না। আলতো হেসেছিল। তারপর নীলকমলের দিকে তাকিয়েছিল, বলেছিল - গেট বন্ধ রেখো সবসময়। রাস্তায় যা গাড়িঘোড়া। 


    আজ রুফাসকে আদর করতে করতে নীলকমলকে দেখছিল স্বপ্না। তারপর বলেছিল - ওর পিরিয়ড হচ্ছে না। বলেছিল পরদিন ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সকালে ডাক্তারের কাছে ঘুরে স্কুলে যাবে। পাড়ার দোকানে আজকাল প্রেগ্নেন্সি কিট রাখছে - নীলকমল একথা বলায় স্বপ্না খুব অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। বলেছিল - সে বয়স এখনও আছে নাকি। তারপর গলা খাঁকরে বলেছিল, ডাক্তারের কাছেও কিট আছে, আর সেকন্ড ফ্লোরে আল্ট্রাসাউন্ড।


    পরদিন অফিসে যায় নি নীলকমল। দাড়ি কামায় নি, স্নান করে নি। কাগজ কোলে শুয়ে ছিল বাইরের ঘরে। জানলা দিয়ে দুপুর দেখছিল। দুপুর, রোদ, গরম হাওয়া। রাস্তায় পিচ গলছিল বোধ হয়। হাওয়ার জোর বাড়ছিল। শুকনো পাতা উড়ে যাচ্ছিল বাগানে।জানলার কাচে রোদ ঠিকরোচ্ছিল, চোখে লাগছিল নীলকমলের।  


    স্বপ্না সকালেই ডাক্তারের কাছে গেছে। টেস্টগুলো হবে তারপর স্কুলে যাবে।  রিপোর্ট নিয়ে ফিরতে বিকেল। রুফাস বারান্দায় ছিল। থাবার ওপর মাথা দিয়ে শুয়েছিল। হাওয়ার জোর বাড়তে   উঠে বসল। রাস্তার দিকে মুখ করে কান খাড়া করল, পিঠ শক্ত করে বসল কান খাড়া রেখে। এক দৌড়ে বাগানে গেল।  ঘর থেকে বাগানে  তাকাল নীলকমল। বাগানের গেটে  দাঁড়িয়ে  রুফাস। ধনুকের ছিলার মত টানটান। মহরমের সময় তীর ধনুক কিনত নীলমল আর সুকুমার। বাঁশের বাখারিতে রঙীন কাগজ, রুপোলী রাংতার ধনুক। কাক মারত দুজনে। হয়তো নিমগাছের ডালে কাক আর সুকুমার কাকের দিকে ধনুক তুলছে, সুকুমারের চুল সামান্য বড় হয়ে ঘাড় ঢেকেছে, স্যান্ডো গেঞ্জির ওপরে ঘাড় আর পিঠের সন্ধিতে শক্ত গোল হাড় - এই সব মনে পড়ছিল নীলকমলের। বাগানে এসে রুফাসের পাশে দাঁড়াল নীলকমল গেটের কাছে - দেখল বাগান, বাগানের গেট, বড় রাস্তা। দেখল, টান দাঁড়িয়ে রুফাস, কান খাড়া, দেখল রুফাসের ঘন লোম, দেখল ঘাড় পিঠের পেশী, দেখল রুফাসের  পিছনের পায়ে ভর বেশি, সামনের পায়ে কম। গরম হাওয়া বইছিল। পাতা উড়ে যাওয়ার শব্দ, ভারি ট্রাকের আওয়াজ আসছিল। বাগানের গেট খুলে দিল নীলকমল।  


    রুফাস একবার তাকালো নীলকমলের দিকে। তারপর লাফ দিয়ে বেরোলো। নীলকমল দেখছিল  রুফাসের পা মাটিতে পড়ছে না - যেন উড়ে  যাচ্ছে রুফাস। একটা লাল ঘোড়ার কথা মনে হল নীলকমলের। গলি পেরিয়ে বড় রাস্তা। গলির মুখ অবধি দেখতে পাচ্ছিল নীলকমল। রুফাস টগবগিয়ে পেরিয়ে গেল গলি। তারপর বড় রাস্তার সামনে এসে সামনের দুপা দিয়ে মাটি আঁকড়াল, পিছনের পা সামান্য ছেতরে সোজা হল। পিচ গলছিল  রাস্তায়। ধোঁয়া ধোঁয়া লাগছিল। বাগান থেকে এটুকুই স্পষ্ট করে দেখেছিল  নীলকমল। তারপর মনে হল, খুব জোরে ব্রেক কষছে ট্রাক, হই হই করছে মানুষ। এরকমই  তো হওয়ার কথা, ছুটে বেরিয়ে গেল নীলকমল। ঝাঁ ঝাঁ করছিল মাথা, নীলকমল পুড়ে যাচ্ছিল যেন। গলা ফাটিয়ে ডাকল - রুফাস রুফাস। গলির মুখে পৌঁছে দেখল  ট্রাক যাচ্ছে, গাড়ি, ছাতা মাথায় দু একটি মানুষ। আর নীলকমল যেমনটি দেখেছিল বাগান থেকে, ঠিক তেমনই  বসে আছে রুফাস - রাস্তার দিকে মুখ। নীলকমল বলল রুফাস বাড়ি চল। রুফাস নড়ল না। নিচু হয়ে রুফাসের গলায় বেড় দিয়ে নিজের দিকে রুফাসকে টানতে চাইল নীলকমল। রুফাস বেড় কাটিয়ে দৌড়তে লাগল - প্রথমটায় গলির দিকে দৌড়ে এল তারপর আবার বড় রাস্তার দিকে দৌড়োলো। নীলকমল  দৌড়ে বাড়ি ঢুকল, বারান্দায় রুফাসের খাবার থালা বাটি। স্বপ্না নিজের হাতে ধুয়ে মেজে উল্টো করে রেখে গেছে সকালে। নীলকমল থালা বাটি তুলে রাস্তার দিকে দৌড়ল। হাত তুলে বাটি দেখাতে লাগল রুফাসকে - চেঁচিয়ে বলতে লাগল-রুফাস খাবি না? কে খাবে রুফাস? থালা আর বাটি বাজিয়ে শব্দ করতে লাগল নীলকমল-ফ্যাঁসফেসে গলায় অবিশ্রান্ত বলে চলল - কে খাবে? কে খাবে? রুফাস রুফাস কে খাবে? কে খাবে রুফাস? রুপু রুপু খাবি না? পথচলতি রোদে পোড়া মানুষজন অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল - দেখছিল একটা লালচে বাদামী কুকুর চারদিকে দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর একজন পাজামা গেঞ্জি পরা মানুষ  বাটি হাতে চিৎকার করে কিছু বলছে - পাগল অথবা ভিখারি হয়তো। 


    রোদ সামান্য পড়তে বাড়ি এলো স্বপ্না।  বাইরের ঘরে ব্যাগ আর রিপোর্টের খাম রেখে উঠোনে এল শুকনো জামা কাপড় তুলে নিতে। দেখল একটা মোড়া পেতে বসে আছে নীলকমল। পায়ের কাছে রুফাস ঘুমোচ্ছে। রুফাসের দিকে তাকিয়েছিল নীলকমল। স্বপ্নাকে দেখে মুখ তুলল এবারে। না কাটা দাড়িতে হাত বুলিয়ে অদ্ভুত হাসল - কি বলল ডাক্তার? পজিটিভ?


    স্বপ্নাও হাসল। বলল - না,  সিস্ট। একটু বড়। ওষুধ খেতে হবে। আরও কিছু টেস্ট। 


    মাথা নামিয়ে নিল নীলকমল। নিচু হয়ে রুফাসের  গায়ে বিলি কাটতে লাগল। স্বপ্না দেখছিল বিকেলের রোদ পড়েছে নীলকমলের গালে - সাদা দেখাচ্ছে নীলকমলের না কাটা দাড়ি। বুড়ো মানুষ মনে হচ্ছিল নীলকমলকে। অসুস্থ বুড়ো মানুষ শীতকালে যেমন রোদে বসে থাকে  মোড়া পেতে আর রোদ ফুরিয়ে এলে কুঁজো হয়ে ঘরে ঢোকে, চা দিতে বলে। নীলকমলকে তেমন লাগছিল। স্বপ্নার খুব ইচ্ছে হল নীলকমলের কপালে হাত রাখে। স্বপ্নার বাঁ হাত ভাঁজ করা, তাতে শাড়ি শায়া গেঞ্জি, অন্য হাতে কাপড় মেলার ক্লিপ। উঠোনে লম্বা ছায়া পড়েছে নীলকমলের।  হাতের ক্লিপ দড়িতে গুঁজে দিল স্বপ্না। তখনই নীলকমল বলল, সুকুমার শীতে  আসবে। বাগানে মাচা তুলব। বর্ষা আসছে। কুমড়োর বীচি পুঁতবো।


    স্বপ্না শুকনো কাপড় তুলে নিয়ে ঘরে গেল। সঙ্গে  রুফাস। এরপরে ও রুফাসকে খেতে দেবে, বেড়াতে নিয়ে যাবে, আদর করবে।


    নীলকমল বাগানে এল। বাগানের শেষে গেট। গেট পেরোলে গলি, বড়রাস্তা। রাস্তার ওপারটা স্পষ্ট দেখছিল  নীলকমল। দেখছিল রাস্তার ওপারে অন্য একটা বাগান, একটা বাড়ি। বাগানের সামনে অজস্র ফুল-লাল, কমলা হলুদ, বেগুণী, কোণের দিকে লেবু গাছ একটা, আর পেছনের দিকটায় ভেজিটেবল প্যাচ। টমেটো আর শসা চিনতে পারছিল নীলকমল। আর বোধ হয় ডিল, লেটুস, লেমনগ্রাস। তারপরেই কুমড়োর মাচা। সাপের মত ফণা ধরছে কুমড়োর ডগা - মাচায়। মাটিতে। ক্রমে ঢেকে ফেলছে ডিল, লেটুস, লেমনগ্রাস। অজস্র ফুল ধরেছে। হলুদ কুমড়োফুল। কমলা সবুজ ডোরার নিটোল কুমড়ো, সবুজ রোঁয়ায় ভরা বৃন্ত বাদামী হচ্ছে ক্রমশঃ।  


    সামনেই বর্ষা। বীচি পুঁততে হবে। মাচা তুলতে হবে। দু হাতে আগাছা ছিঁড়ছিল নীলকমল। মরা ঘাস উপড়ে ফেলছিল।  শীতে সুকুমার আসবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১০৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | 125.241.76.30 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:১৩77793
  • আহা। এই রকম লিখতে চাই কখনো। একজনের ফেলে দেওয়া সুতো, আর একজন তুলে নেয়, একজনের গল্প সহসা আর একজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, নিঁখুত সোয়েটারের প্যাটার্ন যেন-, নরম উল, উস্কো খুস্কো চুল, পৃথিবীর সবটুকু নরম বুনোটে বুনোটে আলতো করে গাঁথা --
    মতি নন্দী , দিব্যেন্দু পালিত ঘরানার লেখা হাতে আছে তোমার ছোটাইদি, নিজস্ব করে নিয়ে- এই রকম আরো পড়তে চাই, এই রকম পড়তে পাইনে আর-
  • Ishani Roychaudhuri Hazra | 233.239.255.112 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০২:০৬77790
  • ভালো লাগল ।
  • kk | 81.236.62.176 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০২:০৯77794
  • ইন্দ্রাণীদি'র লেখা সত্যি ছবির মত।
  • san | 113.245.12.67 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:১৯77795
  • হ্যাঁ , ছবির পর ছবি ।
  • | 24.97.218.131 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৪:৩৩77791
  • ছবি... ছবি ... ছবি ...... কত কত ছবি। ছবিগুলো হৈ হৈ করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চোখের ওপরে। চোখে ধাঁধাঁ লেগে যাচ্ছে .... ছবির একদম ভেতর থেকে উঠে আসছে জীবন
    আহা জীবন।
  • I | 24.96.49.179 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:০৩77796
  • বাহ!
  • Pubদা | 209.67.138.43 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:২৫77797
  • লেখা পRলাম না স্বপ্ন দেখলাম বুঝলাম না । খুব সুন্দর লাগলো ।
  • nina | 22.149.39.84 (*) | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ১২:৪৪77792
  • রোদের নকশাগুলো স্বপ্ন-লেখাটা মাতিয়ে দিয়েছে----সুন্দর কোলাজ!
  • hu | 188.91.253.11 (*) | ১৬ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৫৪77798
  • বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শময়! অসাধারন!
  • Bhagidaar | 216.208.223.1 (*) | ১৭ অক্টোবর ২০১৩ ১২:৪৩77799
  • মনে হলো অনেক অনেক দিনের পুরনো পূজাবার্ষিকী দেশ একখান নামিয়েছি চিলেকোঠা থেকে, নামিয়ে ধুলো ঝেড়ে একটা ছোটগল্প পড়ছি পুরনো ইঁট বার করা সিড়িতে বসে।
  • ইন্দ্রাণী | 147.157.8.253 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৩ ১০:১৯77800
  • আপনারা ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে এ গপ্পো পড়েছেন, কিছু বললেন-এই জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

    সোসেনকে বলি, মতি নন্দী বা দিব্যেন্দু পালিত নয় বোধ হয়, আমার নিজের ওপর , ফলতঃ আমার টেখা দের ওপর সাঙ্ঘাতিক প্রভাব বিমল করের। এই গপ্পেও সে প্রভাব আছে। হয়তো প্রকট নয়। কিন্তু আছে।

    আরও কিছু বলার ছিল লেখকের তরফে, সে পরে কোনোদিন।
  • I | 24.96.90.44 (*) | ১৮ অক্টোবর ২০১৩ ১১:৪৪77801
  • হ্যাঁ, বিমল কর। exactly।
    লেখাটা অন্য লেভেলে চলে গেছে।
  • | 24.96.187.113 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৫১77802
  • হুঁ বিমল কর। শুধু এটা নয়, আরো দুই একটা লেখায়। কিন্তু সে খুব আবছা অনেক দূরাগত কোন গানের সুরের মত, ইন্দ্রাণীর নিজস্ব লেখাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে নি।
  • sosen | 111.218.8.4 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:৩১77803
  • বিমল কর-ও মনে হয়। জাস্ট লিখিনি।
  • শুদ্ধ | 113.24.87.64 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:১৪77805
  • ভালো লাগলো। শব্দে শব্দে ছবি উঠেছে। ছোটগল্প সুলভ মোহনীয়তা ঘিরে আছে। শুধু মনে হচ্ছিল আরো কয়েকটা স্তবকে ভাঙা গেলে বোধহয় সুবিধে হত!
  • Shibanshu De | 127.197.241.203 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৩ ০৯:০১77804
  • পড়লুম এবং মুগ্ধ হলুম।

    বিমল কর হলেন 'অ-ঘটনা'র কথাকার , 'অঘটন' নয়। মতি নন্দী বা দিব্যেন্দু পালিত তা ন'ন। ঘটে যাওয়া জীবনস্রোতের ধারা অক্ষরে ধরে রাখা কথকের কাজ । ইন্দ্রাণী কিন্তু কথক ন'ন। তিনি আসলে কবি । আমাদের দৃশ্য, শ্রাব্য, স্পর্শের পৃথিবীকে শব্দে ধরে রাখার কৌশল কবি ও কথকের একেবারে পৃথক। বিমল করের গদ্যে ধরাছোঁয়ার বিশ্বে কিছু ঘটেনা। যা কিছু ঘটে, তা অন্তঃসলিল। ইন্দ্রাণী যখন রোদ, ছায়া, তাত আর মেঘের গল্প বলছেন, তখন আমি সেখানে গগন ঠাকুরের ক্যানভাস দেখতে পাচ্ছি । যখন নীলকমল-সুকুমার-রুফাসের কথা হচ্ছে, বিমল করের আলোয়ান আর হেমন্তের ঘোড়ানিম ফুলের আঘ্রাণ শব্দহীন মাদকতায় উড়ে বেড়াচ্ছে ইতিউতি । আবার যখন নীলকমল আর স্বপ্না, একা বা দোকা , আমাদের ছেলেবেলার স্বপ্নের শীর্ষেন্দু উঁকি দিয়ে যাচ্ছেন পর্দা সরিয়ে। কিন্তু ইন্দ্রাণী এঁদের কারো দাস ন'ন, তিনি তাঁদের বন্ধু, শুধু বন্ধু। এখানেই তাঁর সাফল্য ।

    আমার এ পর্যন্ত পড়া ইন্দ্রাণীর শ্রেষ্ঠ লেখা ।
  • শঙ্খ | 169.53.174.143 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:৩০77809
  • এই লেখাটা অনেক ভাবে পড়লাম। সোজাসাপটা স্বপ্না-নীলকমল-রুফাসের গল্প হিসেবে। প্রথমবার। তারপর তাতে মিশতে থাকল রুপুর অবয়ব। সুকুমারের কাউন্টার অবয়ব। ইচ্ছে করেই প্রতিমূর্তি বললাম না।
    তারপর এলো নির্মাণখেলা। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে, কোনটা নির্মম বাস্তব, কোনটা অসহায় এসকেপ।

    পুরোটা জুড়ে ধরে রইলো রোদের আলোতে ভেসে থাকা অজস্র ধুলোর কণা, যা মিশে থাকে সব সময়েই, জলের রঙ ভেঙ্গে যাওয়া স্টেইনড গ্লাস, উপাসনা গৃহের জানালায় যেমন দেখি, নিষ্ফলা বিরক্তিহীন দাম্পত্যের বাগানে সবুজ রোঁয়ায় ভরা বৃন্ত।

    কিছু আবছায়া রইলো, অনেকটাই আড়াল। দৈনন্দিন যেমন হয়।

    জীবন যেরকম।

    ইন্দ্রাণীদির অ্যাজ ইউজুয়াল ট্রিটমেন্ট, অনুভূতি টুকু নিক্তিতে মাপা, অনুসঙ্গে ডিটেল দিয়ে, কারুকাজ দিয়ে পুরো লেখাটা ধরে রাখা। সেই প্রথমবার পড়ার পর এই ডিটেলের কাজ আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।

    আজও পাল্টালো না।
  • kiki | 69.93.198.253 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৪:০০77810
  • দারুন লাগলো।
  • Pragati Chattopadhyay | 122.79.41.82 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:৩৬77806
  • আমার শ্বশুরবাড়ী কালিকটে ঠিক অমনি একটা রোদ্দুরের উঠোনের ধারে বসে এক্ষুনি পড়লুম, এখানে ছোটো ছোটো সাদা ফুলে ভরা একটা কামিনী গাছ আছে যে অনেকটা এই লেখার মতন।
  • ranjan roy | 132.175.160.141 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:০৬77807
  • যেমন ইন্দ্রাণীর লেখা , তেমনি শিবাংশুর টীকা। একেবারে নীলকন্ঠ!
    খালি মনে হয় আমারও তো অমনি অনুভূতি হয়েছিল। কেন শব্দে বাঁধতে পারিনি!
    সব কিছু সবার জন্যে নয়, এটা মেনে নিতেই হবে। সমাজে জাতপাত মানিনে, কিন্তু লেখায় অধিকারী ভেদ ? অবশ্যই!!

    বাংলালাইভের পাতায় লিখেছিলাম-- ইন্দ্রাণীকে হিংসে করি!
    হিংসে কমল না।
  • de | 190.149.51.68 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:৪৭77808
  • আরে! এটা তো দেখিনি আগে ---

    কি সুন্দর ছবি! ছবি থেকে ভাপ উঠছে, গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে!
  • Atoz | 161.141.84.239 (*) | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:২৫77811
  • ছোটাইদি, গতকাল লেখাটা পড়লাম। তারপরে যেন ঢুকে গেলাম একটা নিটোল আকাশি-নীল স্বপ্নের মধ্যে, যে স্বপ্নের আর শেষ নেই, খুলতে থাকা অশেষ নকশিকাঁথার মতন কেবলই নতুন নতুন দৃশ্য দেখিয়ে চলে। স্বপ্না নীলকমল রুফাস এই তিন বিন্দু থেকে যেন অশেষ আঁচলের মতন খুলে যাচ্ছে গল্প, দীর্ঘ গতকালের ভিতর দেখা যাচ্ছে আবছা নরম সুকুমার আর রুপুর মুখ, দেখা যাচ্ছে রোদ বৃষ্টি বৃদ্ধা মেম জ্যোৎস্না হাতী নদী লাল নীল আলো-ওয়ালা আইসক্রিমের গাড়ী, লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামা উঠোন-সব মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে কোনটা আনন্দ আর কোনটা বেদনা, কোনটা পাওয়া আর কোনটা না পাওয়া আর আলাদা করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, নদীর জলে চন্দনসাজ ধুয়ে যাবার মতন সব একাকার যেন।
    কী আর বলবো, এ লেখা মন্ত্রমুগ্ধ করে, এ ছাড়া আর কী ই বা বলবো!
    আরো লেখো, অনেক লেখো।
  • Debashis Payin | 82.163.217.103 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:২৬77812
  • বাহ ! সুন্দর লেখা।
  • Tim | 188.91.253.11 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:১২77813
  • আমি বিমল কর বা দিব্যেন্দু পালিত বেশি পড়িনি, অন্তত খুব কিছু মনে নেই, হয়ত ছোটগল্প কিছু। মতি নন্দী পড়েছি। ইন্দ্রাণীদির লেখার মত নয়।
    এই অনায়াসে, প্রায় কবিতা লেখার তাচ্ছিল্যে ছবির মত গদ্যের বুনোট ভারি ভালো লাগলো।
  • ইন্দ্রাণী | 147.157.8.253 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:৪৭77814
  • শিবাংশুদা,
    'কবি ও কথক' শিরোনামে আপনার কাছ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা আশা করছি।
    না আমি কবি নই তবে সেই অর্থে কথকও নই সেটা ঠিক । চেষ্টা করি লিখতে যে লেখায় পাঠকের স্পেস থাকে, পাঠকের কল্পনার অবকাশ থাকে-কোনোভাবেই যেন লেখক পাঠকের প্রভু হয়ে না ওঠেন। যদিও আজও হয় নি সে গান গাওয়া।

    শঙ্খ,
    নিক্তিতে মাপা সেন্টিমেন্ট বা এই আবছায়া, এই আড়াল এই সত্য মিথ্যের গুলিয়ে যাওয়া নকশা-এ সবই পাঠকের স্পেস। আজকাল এটাই মনে হয় বারেবারে-লেখক কেন সর্বজ্ঞ হবেন? সবটুকু তাকে জানতে হবে কেন? কার মনে কী আছে তিনি জানছেন কি করে? আর যদিও বা জানছেন সেটাই কি ধ্রুবসত্য? আমি দেখছি তিনজনকে কালো চশমা পরা এক নারী, একটি সারমেয়, একজন দাড়ি না কামানো পুরুষ-তাঁদের নিয়ে আমার মত করে আমি লিখছি-তাঁদের চৌকাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে। লেখক সর্বজ্ঞ হলে তিনটি প্রাণী নিয়ে একটিই গল্প হবে- আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আর সর্বজ্ঞ না হলে, একটা গল্প থেকে অজস্র গল্প জন্ম নেবে-লেখক লিখবেন, পাঠক লিখবেন।
    সেটাই তো মজা।

    ঈশানী, দ, নিনাদিদি, সোসেন , ভাগীদার, কেকে, স্যান, বড়াই, হু, টিম, রঞ্জনদা, pubদা, এ টু জেড, দে, শুদ্ধ, দেবাশিস, কিকি, প্রগতি,
    এ লেখা পড়ার জন্য, সময় করে লেখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
    সত্যিই কৃতজ্ঞ রইলাম।
  • শিবাংশু | 127.201.166.228 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৭:৪৭77815
  • ইন্দ্রাণী,

    তোমার কথার মধ্যেই তোমার অবস্থানটুকু স্পষ্ট ।

    গদ্য ও পদ্যের মধ্যে মৌল ফারাক হলো পদ্য পাঠককে দীর্ঘ স্পেস দেয় ( কখনও কখনও অদীক্ষিত পাঠক তো হারিয়ে যায় অতো স্পেস পেয়ে । 'এ জীবন লইয়া কী করিবো' গোছের)। অবশ্য পাঠকের এই সংশয়ের পিছনে অক্ষম কবিদের ভুলভাল প্রয়াসও অনেকটা দায়ী । গদ্যে কিন্তু পাঠকের খেলার স্পেসটা অনেক ছোটো । আখ্যানমূলক গদ্যে লেখক অনেক সময়ই 'চোখে আঙুল দাদা' হয়ে বর্ণনা করে যান । গদ্য ক্রমবিবর্তনের মূল 'আধুনিক' প্রবণতা হলো পাঠককে কথকের মতো গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া নয়, তার ঘুম কেড়ে নেওয়া । এই ধরনটা পদ্যের অনেক কাছাকাছি ।

    যেহেতু গদ্য প্রকরণ হিসেবে আদতে বিদেশ থেকে আমদানি করা শৈলি, তাই উদাহরণটি যদি জয়েস থেকে মার্কেজের বিবর্তনের লক্ষণ থেকে দিই, আশা করি কেউ উন্নাসিকতার অভিযোগ আনবেন না ।

    অতএব তোমার লেখার ধরনটি নিয়ে আমার যে ধারণা সেটি তুমি নিজেই স্বীকার করে নিলে, তাই এ বিষয়ে আমার কিছু বলার থাকলো না । :-)

    রইলো বাকি 'কবি' ও 'কথকে'র গদ্য নিয়ে ভাষ্যটীকা, কালি আর কলম । বিপুল বিষয়, কখনও সময় পেলে, মুড হলে..... :-)
  • Atoz | 161.141.84.239 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:১৭77816
  • আবার ও পড়লাম আজ, নতুন করে আবিষ্ট হলাম। মনে কেমন একটা লোভী আকাংক্ষা হলো আগুন দিয়ে আগুন ধরানোর মতন নতুন একটা গল্পপ্রদীপ জ্বালিয়ে নিই, তারপর তা থেকে শত প্রদীপ। কিন্তু তারপরে বুঝলাম এই স্বপ্নকে ধারণ করে প্রস্ফুটিত করার মতন জোর আমার এই দুর্বল কাঠ-কলমের নেই।
  • Aditi Dasgupta | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৫526187
  • বিষন্ন এক আরামে কোথায় কোথায় ঘুরে এলাম যেন! 
  • ইন্দ্রাণী | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০২:০৯526197
  • থ‍্যাঙ্কু অদিতি। থ‍্যাঙ্কু।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন