এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শংকর গুহ নিয়োগীঃ আমার স্মৃতিতেশংকর গুহ নিয়োগীঃ আমার স্মৃতিতে

    Punyabrata Goon লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৯ মার্চ ২০১৪ | ১৩২৬ বার পঠিত
  • {কিছুটা মজা করে, কিছুটা অভিমানে বলতাম—আমি নিয়োগীর ‘বি’-টীমের লোক। ‘এ’-টীমে ছিলেন বিনায়কদা (সেন), আশীষদা (কুমার কুন্ডু)। শৈবালদা (জানা), চঞ্চলাদি (সমাজদার) আর আমি হাসপাতাল সামলাতাম। ওঁরা করতেন সংগঠনের কাজ—বিনায়কদা পূর্ণত, আশীষদা অংশত। ১৯৮৬-র ডিসেম্বরে আমি শহীদ হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পারিবারিক দায়িত্ব সামলাতে আশীষদা বিদায় নিলেন, কয়েক মাস পর চঞ্চলাদি। ১৯৮৭-এর শেষদিকে দল্লী-রাজহরা ছাড়লেন বিনায়কদা-ইলিনাদি। হাসপাতালে ডাক্তার বলতে রইলাম আমি আর শৈবালদা। ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার সঙ্গে যুক্ত বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা দু’জন ছাড়া অনুপ সিংহ। অনুপ ’৮৭-তে মুক্তি মোর্চায় যোগ দেয় সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য।
    লোক কম, তাই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য-আন্দোলনের কাজ ছাড়াও সংগঠনের কাজে সময় দেওয়া দরকার হয়ে পড়ল। ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল কমরেড নিয়োগীর সঙ্গে।
    ১৯৯১-এ নিয়োগী শহীদ হওয়ার পর ’৯২-এর কলকাতা বই মেলায় বার হয় অনুষ্টুপের সংকলন ‘সংঘর্ষ ও নির্মাণ’। সে বই-এ আমি স্মৃতিচারণ করিনি, তাতে ছিল আমার লেখা বিভিন্ন আন্দোলনের কাহিনী, নিয়োগীর বেশ কটা লেখার অনুবাদ। প্রথম স্মৃতিচারণ ১৯৯৩-এর কলকাতা বই মেলায় প্রকাশিত ‘অভিমুখঃ শংকর গুহনিয়োগী স্মরণ সংখ্যা’-এ। সে সংখ্যার অন্যতম সম্পাদক ছিলেন কবি সমীর রায়।
    সেই স্মৃতিচারণকেই একটু ঘষামাজা করে তুলে দিচ্ছি গুরুচন্ডালীর পাঠক-পাঠিকাদের জন্য।}

    ২৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ তিন শ্রমিক-সাথীর সঙ্গে মিলে দুর্গের মর্গ-ঘরের টেবিল থেকে নামিয়েছি তাঁর রক্তে ভেজা মরদেহ। মৃত্যুর পর তখন প্রায় নয় ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে, অথচ তখনও তাঁর পিঠের গুলির ক্ষত থেকে ঝরে পড়ছে তাজা লাল রক্ত। আমার নেতা, আমার সহযোদ্ধা, আমার শিক্ষক শংকর গুহনিয়োগী শহীদ হলেন। বীর কমরেডের মরদেহ আমরা ঢেকে দিলাম ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার লাল-সবুজ পতাকা দিয়ে।

    এই লেখাটা সমীরদা লিখতে বলেছিলেন ’৯১-এর অক্টোবর। তার পরের তিন-চার মাস কোনও লেখা লিখিনি এমনটা নয়, লিখেছি ভিলাই আন্দোলনের রিপোর্ট, স্বাস্থ্য আন্দোলনের কথা। কিন্তু বার বার নিয়োগী সম্পর্কে লিখতে গিয়েও লিখতে পারিনি, অসংখ্য স্মৃতি...কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব!

    শংকর গুহনিয়োগী সম্বন্ধে, ছত্তিশগড় আন্দোলন সম্বন্ধে প্রথম জানি ১৯৭৯-এ, তখন আমি মেডিকাল কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। যতদূর মনে পড়ে ‘কার্টেন’ নামের এক পত্রিকায় পড়েছিলাম সেসব কথা। ’৮২-তে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় এক সিনিয়র দাদা শুনিয়েছিলেন ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ-এর সাফাই আন্দোলন, শহীদ ডিস্পেন্সারী, শহীদ হাসপাতাল তৈরীর স্বপ্ন...। তিনি ডা পবিত্র গুহ, ১৯৮১ থেকে কয়েক মাস তিনি কাজ করেছিলেন সি এম এস এস-এর সঙ্গে। ( নিয়োগী শহীদ হওয়ার পর ১৯৯২-এ তিনি চাকরী ছেড়ে আবার ফিরে যান শহীদ হাসপাতালে। ১৯৯৪ অবধি সে হাসপাতালে ছিলেন। এখনও তিনি দল্লী-রাজহরায় থাকেন।) সেই গল্প শোনার পর থেকেই দল্লী-রাজহরা আমার স্বপ্নের দেশ, আমার স্বপ্ন সি এম এস এস-এর সঙ্গে কাজ করা।

    স্বপ্নের দেশের রূপকারের সঙ্গে প্রথম দেখা ’৮৫-র জুলাই-এর প্রথম সপ্তাহে। ভোপালের গ্যাসপীড়িতরা ইউনিয়ন কার্বাইড প্রাঙ্গণে এক গণ-হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ৩রা জুন । আর কলকাতা ও বম্বে থেকে আসা জুনিয়ার ডাক্তারদের সহায়তায় শুরু হয় জন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ, সেখানে গ্যাসপীড়িতদের বিষ-গ্যাসের প্রতিষেধক সোডিয়াম থায়োসালফেট ইঞ্জেকশন লাগানো হত এবং তাঁদের উপসর্গে উন্নতি নথিবদ্ধ করা হত। থায়োসালফেটে গ্যাস-পীড়িতদের উপসর্গে উন্নতি মানে বিষ-গ্যাসে সায়ানাইডের উপস্থিতি, তাতে ইউনিয়ন কার্বাইডের অপরাধের দায় বাড়ে। তাই ২৪শে জুন রাতে রাষ্ট্রের সন্ত্রাস নেমে আসে, গ্রেপ্তার হন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও সংগঠকরা। বন্ধ কেন্দ্র চালু করতে কলকাতা থেকে জুনিয়ার বন্ধু ডা জ্যোতির্ময় সমাজদারের সঙ্গে গেছিলাম আমি। সেদিন জান্মিনে ছাড়া পাবেন বন্দীরা—এক টিলার ওপর ভোপাল জেলের পেছনে সূর্য অস্ত যাচ্ছে—আধময়লা পাজামা-পাঞ্জাবী পরিহিত এক দীর্ঘদেহী পুরুষের স্লোগানে স্লোগান তুলছিল সমবেত জনতা—‘জেলকা তালা টুটেগা, হামারা সাথী ছুটেগা’—ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার নেতা শংকর গুহনিয়োগী। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হল, জানালাম তাঁর আন্দোলনে আমার কাজ করার স্বপ্নের কথা। হিন্দীর টান-মেশানো বাংলায় বললেন—‘রাজনাদগাঁও-এ আরেকটা হাসপাতাল খোলার কথা ভাবছি, চলে আসুন...।‘

    রাজহরা গেলাম ’৮৬-র অক্টোবরে, আন্দোলনের চাক্ষুষ পরিচয় পেতে। আন্দোলনে ব্যস্ত নিয়োগীর সঙ্গে কথা বলার সময় পেয়েছিলাম আধ-ঘন্টাটাক। ইউনিয়ন দপ্তরে বসে শুনিয়েছিলেন সে সব স্বপ্নের কথা, যা বাস্তব হয়ে চলেছে ছত্তিশগড়ের বুকে। ইউনিয়ন অফিস থেকে বেরোতে বেরোতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি—দল্লী-রাজহরাই হবে আমার ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র।

    ’৮৬-র ডিসেম্বরে কলকাতা ছেড়ে এলাম। কলেজে পরিবর্তনকামী ছাত্র-রাজনীতি করতাম, স্বপ্ন দেখতাম শ্রমিক-কৃষকের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার, কিন্তু সমাজ-পরিবর্তনের রাজনীতি সম্পর্কে তাত্ত্বিক পড়াশুনা ছিল প্রায় শূন্য। ছত্তিশগড়ে এসে প্রথম-প্রথম হীনমন্যতায় ভুগতাম। সদা-ব্যস্ত নিয়োগীর সঙ্গে যখন দেখা হত, তাঁকে দেখতাম, তাঁর কথাগুলো শুনতাম, বোঝার চেষ্টা করতাম।

    ’৮৭-র ১লা বা ২রা জানুয়ারী হবে, দল্লী মাইন্সের শ্রমিকরা হরতালে ছিলেন। সে সুযোগে ভিলাই স্টীল প্ল্যান্ট ম্যানেজমেন্ট মেশিনীকরণ না করার চুক্তিভঙ্গ করে ডাম্পার চালানোর চেষ্টা করে। ডাম্পার আটকাতে গিয়ে সি আই এস এফ-এর লাঠিচার্জে আহত হন ২১ জন শ্রমিক বা শ্রমিক নেতা—কারুর মাথা ফেটেছে, কারুর হাত ভেঙ্গেছে। তাঁদের শহীদ হাসপাতালে আনা হল, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাঁরা, বেদনানাশক ইঞ্জেকশনে সেরকম ফল হচ্ছে না। খবর পেয়ে ঘর থেকে ছুটে এসেছেন নিয়োগী, রাগে দাঁতে দাঁত চাপা। সহানুভূতির হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আহতদের শরীরে, আশ্চর্য হয়ে দেখলাম—বেদনানাশক ইঞ্জেকশনে যে কাজ হয়নি, তা হল নিয়োগীর স্পর্শে—আহতরা যেন তাঁদের ব্যথা ভুলে শান্ত হয়ে গেলেন। তারপর দ্রুত পদক্ষেপে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে নিজে জীপ ছোটালেন খনির দিকে। পরে শুনেছিলাম নিয়োগী রাগে সি আই এস এফ-এর কমান্ডান্টের কলার চেপে ধরেন, জওয়ানরা গুলি চালানোর জন্য বন্দুক উঁচিয়ে ধরে, মাঝখানে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার এসে না পড়লে হয়ত নিয়োগীর ওপর গুলি চলে যেত। সেদিন বুঝেছিলাম সহযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ, তাঁর অসম সাহসিকতা ও শ্রেণীঘৃণা। আর দেখেছিলাম একজন সত্যিকারের নেতাকে মানুষ কত ভালবাসে।

    যখন ছত্তিশগড়ে এলাম হিন্দী প্রায় জানতামই না, বাঙ্গালী পেলে বাংলায় কথা বলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম। নিয়োগীজীর সঙ্গে বাংলায় কথা বলে সুবিধা হতো না, উনি হিন্দীতে কথা চালিয়ে যেতেন, বলতেন ভুল হিন্দীতেই কথা বলতে। কেমন করে নিজে হিন্দী শিখলেন সে কথা শুনিয়েছিলেন—আত্মগোপন করে থাকার সময় প্রায় দশটা বছর সচেতনভাবে কোনও বাংলা বা ইংরেজী শব্দ উচ্চারণ করেননি। আমাকে বলেছিলেন—‘হিন্দীতে ভাবনা-চিন্তা করুন, হিন্দীতে স্বপ্ন দেখুন, দেখুন হিন্দী আপনার আয়ত্তে এসে যাবে।’ হিন্দীতে স্বপ্ন দেখাটা হয়ে ওঠেনি, তবে ওঁর পরামর্শ অনুসরণ করে অবশ্যই ফল পেয়েছিলাম—হিন্দীতে বলা, হিন্দীতে লেখা, ছত্তিশগড় ছাড়ার প্রায় উনিশ বছর পরও হিন্দীতে কথা বলায় আমি ইংরেজীতে কথা বলার চেয়ে বেশী স্বচ্ছন্দ।

    কলেজ-জীবনে আমার বেড়ে ওঠা যে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনে তাঁর নেতৃত্বে ছিলেন মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদীরা। তাঁদের সঙ্গে মাঝেমাঝেই নিয়োগীকে মেলাতে পারতাম না, সন্দেহ হতো লোকটা সংশোধনবাদী নয়তো! ’৮৭-র মে মাসে নিয়োগী পড়ে গিয়ে পা ভাঙ্গেন—ফ্রাকচার নেক ফিমার—অপারেশন হয়েছিল ৩রা জুন। ৩রা জুন দল্লী-রাজহরার শহীদ দিবস—১৯৭৭-এর এ দিনটায় নিয়োগী পুলিশের কবল থেকে মুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হন এক মহিলা-শ্রমিক, এক বালক সহ মোট এগারো জন শ্রমজীবী মানুষ। এই একবারই কেবল তিনি ৩রা জুন দল্লী-রাজহরায় ছিলেন না। অপারেশনের পর সেরে উঠতে বেশ কিছুদিন শহীদ হাসপাতালে ভর্তি রইলেন তিনি। নিয়োগীর পা-ভাঙ্গা আমার কাছে যেন বর হয়ে এল। আস্তে আস্তে অন্তরঙ্গতা বাড়তে লাগল এই সময় থেকে।
    তারপর বারবার নানা প্রশ্ন নিয়ে গেছি, ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করেছি, তর্ক-বিতর্ক করেছি, ঝগড়াও করেছি কখনও সখনও। ভোর হোক বা গভীর রাত—কখনও তাঁকে রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক আলোচনায় ক্লান্ত হতে দেখিনি। আলোচনা বা তর্ক-বিতর্ক করার সময় কখনও তাঁর বুঝতে দিতেন না যে, আমি তাঁর চেয়ে আঠেরো বছরের ছোট, তত্ত্বজ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আমার খুবই কম। রাজনৈতিক আলোচনায় কেবল যুক্তির স্থান ছিল, বিন্দুমাত্র অহমিকার স্থান থাকত না। ( ছত্তিশগড় থেকে ফিরে আমি নব্বই দশকের গোড়ায় বাংলা আন্দোলিত করা এক শ্রমিক-সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হই, স্বাস্থ্য-কর্মসূচীর দায়িত্ব নিয়ে। তখন সে আন্দোলনের উপদেষ্টা নামকরা ক’জন মধ্যবিত্ত শ্রমিক-নেতার কাছাকাছি আসতে হয়েছিল। দেখতাম কমরেড নিয়োগীর সঙ্গে তাঁদের আকাশ-পাতাল তফাৎ।)

    পাঁচটা বছর নিয়োগীকে দেখেছি। দেখেছি একজন মানুষ কিভাবে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদকে প্রয়োগ করে চলেছেন জীবনে, কাজ-কর্মে, প্রতিটি আন্দোলনে। আমার আগে দেখা মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদীদের মতো তাঁকে কথায় কথায় উদ্ধৃতি আওড়াতে শুনিনি কখনও। মার্ক্সবাদ তাঁর কাছে কোনও গোঁড়ামি ছিল না, ছিল বিজ্ঞানের সূত্র।

    ছত্তিশগড়ে এসেছিলাম পেশা হিসেবে ডাক্তারী করার পাশাপাশি রাজনীতি করব বলে। রাজনীতি করা বলতে বুঝতাম মিটিং-মিছিল, কিছু একশনে অংশ নেওয়া। ১৯৮৮-তে একবার এক মারামারির ঘটনায় আমি ও অনুপ সিংহ নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে যাই। খবর পাওয়া মাত্র নিয়োগীজী ছুটে এসে আমাদের সরিয়ে দেন, নিজে ঘটনাটা সামলান। ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম—কেবল ডাক্তারী করার জন্য ছত্তিশগড়ে এসেছি নাকি! আমাদের মাথা ঠান্ডা হলে নিয়োগী আমাদের নিয়ে বসলেন, সরল অথচ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন সমাজ-পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবীদের ঐতিহাসিক দায়িত্বের কথা—‘আপনারা হিরো নন, আসল বীর তো সংগ্রামে জনগণ...আপনাদের কাজ শিক্ষকের...পড়াশুনা করেছেন, যে বিজ্ঞানে আপনি পারদর্শী সে বিজ্ঞানের কথা, সমাজবিজ্ঞানের কথা শ্রমিক-কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আপনাদের কর্তব্য...।’ সেদিনের পর থেকে এ ধরনের ভুল না করার চেষ্টা করেছি, নিয়োগী যে দায়িত্বের কথা বলেছিলেন আজও সে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে চলেছি।

    কিছু সহকর্মীর সমালোচনায় নিয়োগীকে ক্ষমাহীন মনে হতো, তাদের সামান্যমাত্র ভুলত্রুটি তাঁর চোখ এড়াত না। দেখতাম নিয়োগীজী আমার ছোট একটা ভুল হলে তীব্র সমালোচনা করেন, অথচ আরেক বুদ্ধিজীবী একই ধরনের বড় ভুল করলেও তিনি কিছুই বলেন না। ক্ষোভ আমছিল, ভাবতাম নিয়োগীজী পক্ষপাতিত্ব করছেন। একদিন এনিয়ে প্রশ্ন করলাম। তিনি জবাব দিলেন—‘যাকে আমি ভবিষ্যতের কমিউনিস্ট পার্টিতে আমার সহযোদ্ধা ভাবি, তার ভুলভ্রান্তির তীব্র সমালোচনা করে তাকে শোধরানো আমার দায়িত্ব...। যে যুক্তফ্রন্টে আমার সহযোদ্ধা তার প্রতি আমার ব্যবহার অবশ্যই অন্যরকম হবে...।’ সেদিন থেকে তাঁর প্রত্যেকটা সমালোচনা আমার কাছে কাম্য হয়ে উঠেছিল।

    সহকর্মীদের ছোটখাট কষ্ট-অসুবিধা তাঁর চোখ এড়াত না। একটা ঘটনা বলি—আমি যখন শহীদ হাসপাতালে যোগ দিই তখন দল্লী-রাজহরা ও রাজনাদগাঁও-এ লম্বা হরতাল চলছে, ফলে ডাক্তারদের মাসিক ভাতা অনিয়মিত। একবার বাড়ী যাব, কাছে আসা-যাওয়ার ট্রেনভাড়া ছাড়া আর কিছু নেই। সংকোচে কাউকে বলিনি আমার প্রয়োজনের কথা। বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছি, রাস্তায় এক মোটরসাইকেল সারানোর দোকানে নিয়োগী বসেছিলেন, ডাকলেন আমাকে। বসিয়ে আড্ডা মারতে লাগলেন, বাসের সময় হয়ে আসছে, আমি অধৈর্য হয়ে উঠছি। এমন সময় এক সাথী দু’হাজার টাকা নিয়োগীকে এনে দিলেন, তিনি তুলে দিলেন আমার হাতে। আমি বাড়ী যাব অন্য কারুর কাছে জানতে পেরে তিনি এক জায়গা থেকে ধার করে এনেছিলেন টাকাটা।

    ১৯৯১-এর জানুয়ারী মাসে আমি আর নিয়োগী কলকাতা যাব—২৫শে জানুয়ারী কৃষ্ণনগরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী কর্মচারী সমিতির কনভেনশন, ২৬শে স্টুডেন্টস’ হলে মতপ্রকাশ পত্রিকা ও নাগরিক মঞ্চ আয়োজিত সেমিনার। বোম্বে একটাই মাত্র রিজার্ভেশন পাওয়া গেছিল। নিয়োগী জবরদস্তি আমাকে শোয়ালেন তাঁর বার্থে তাঁর পাশে।

    নিয়োগীজীকে বারবার বলেছি—‘আপনার ভাবনাচিন্তাগুলো লিখুন’। উনি কমই সময় পেতেন লেখালিখি করার। বেশ কয়েকবার বলেছেন উনি—‘ডাক্তারসাব, আপনার সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়, লিখতে থাকুন’। কিছু কিছু লিখেছি, ততটা গুরুত্ব দিইনি কথাটাকে, জানতাম না এত তাড়াতাড়ি উনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন।

    কর্মীদের বিকাশের প্রতি অসম্ভব যত্নশীল ছিলেন। যে কেউ সৃজনশীল কোনও পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর কাছে গেলে অপরিসীম সাহায্য পেত। নিজে স্বপ্ন দেখতেন, অন্যদের স্বপ্ন দেখতে শেখাতেন, কেউ স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে চাইলে খুশী হতেন।

    নিয়োগীজীর অনুপ্রেরণায় অনেকটা আন্দোলনেরই প্রয়োজনে আমি লিখতে শিখলাম, কিছুটা ছবি তুলতে, কিছুটা ছবি আঁকতে শিখলাম। ভিলাই আন্দোলনের শুরু থেকে সে আন্দোলনের খবর ছত্তিশগড়ের বাইরে পৌঁছাতে শুরু করলাম ‘Update from Chhattisgarh’। গড়ে তুললাম ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার প্রকাশন বিভাগ—‘লোক সাহিত্য পরিষদ’। শহীদ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য-শিক্ষার উদ্দেশ্যে দু’মাস ছাড়া বেরোতে লাগল ‘লোক স্বাস্থ্য শিক্ষামালা’-র পুস্তিকা। নিয়োগী পারতপক্ষে নাক গলাতেন না, অথচ প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রকাশনার প্রচার-প্রসারে সাহায্য পেতাম সাবলীলভাবে।

    বেড়াতে আমি খুব একটা ভালবাসি না। কিন্তু নিয়োগীজীর সঙ্গে বেরোনোর সুযোগ আমি হারাতে চাইতাম না, কেন না সেটা হত এক প্রাণবন্ত ক্লাস। ’৯১-এর ৮ই সেপ্টেম্বর, ভিলাই থেকে নিয়োগীর ফোন এল ইউনিয়ন দপ্তরে—‘ডা গুণকো ভেজো, মেরে সাথ দিল্লী জানা হায়’। সারা রাস্তা নানা পরিকল্পনা করতে করতে গেছি আমরা—নিয়োগী, জনক (জনকলাল ঠাকুর—ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার সভাপতি, ডোন্ডী-লোহারার ভূতপূর্ব বিধায়ক) ও আমি। Update from Chhattisgarh’-এর কোয়ালিটি ভাল করতে হবে, ছত্তিশগড়ী ভাষা-প্রসারের জন্য ‘লোকসাহিত্য পরিষদ’-এর ‘ছত্তিশগড়ী ভাষা প্রসার সমিতি’ গড়তে হবে, শ্রমিক-কবি ফাগুরাম যাদবের ক্যাসেট বানাতে হবে, আন্দোলনে বিজয়ের পর ভিলাইয়ে হাসপাতাল তৈরী হবে...। ট্রেনে চা খেলাম এমন এক মাটির খুরিতে যার মুখটা ছোটো, চা চলকায় না। নিয়োগীজী একটা খুরি নিয়ে নিতে বললেন, ছত্তিশগড়ের কুমোরদের দিয়ে বানাতে হবে...।

    ১৩ই সেপ্টেম্বর জনক অন্য সাথীদের নিয়ে ফিরে এল, নিয়োগীজী আমাকে একদিন রেখে দিলেন, পরিচয় করালেন আন্দোলনের সমর্থক অনেক সাথীর সঙ্গে। পরে মনে হতো, যেন তিনি নিজের কাজগুলো আমাদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছিলেন। দিল্লী যাওয়ার আগে এক মিনি ক্যাসেটে নিয়োগী রেকর্ড করে গিয়েছিলেন নিজের মনের ভাবনা—তিনি জানতেন তাঁর হত্যার চক্রান্ত চলছে। সংগঠনের তিন বুদ্ধিজীবী ও ছয় শ্রমিক নেতাকে নিয়ে এক কেন্দ্রীয় নির্ণায়ক সমিতি গঠনের পরামর্শ ছিল তাঁর...। ক্যাসেটটা প্রথম শুনি ৫ই অক্টোবর। আশ্চর্য লাগছিল—নিজের আদর্শের প্রতি কতটা নিষ্ঠা থাকলে একজন মানুষ আসন্ন মৃত্যুর সামনে এত নির্বিকার থাকতে পারেন!

    জীবিত নিয়োগীর সঙ্গে শেষ দেখা ২৪শে সেপ্টেম্বর। মঙ্গলবার, তাই হাসপাতালে ছুটি, সারাসকাল অফিসে কাটিয়ে অপরাহ্নে কোয়ার্টারে এসেছি রাতের রান্না সেরে রাখব বলে। আনসার (রাজনাদগাঁও-এর সংগঠক) এসে খবর দিল—‘ডাক্তারসাব, নিয়োগীজী বুলা রহে হ্যাঁয়’। হাতের কাজে বাধা পড়ায় একটু বিরক্ত হয়ে অফিসে গেলাম। নিয়োগীজী ভিলাই যাবেন (এটাই ছিল তাঁর শেষবারের মত দল্লী-রাজহরা থেকে ভিলাই যাওয়া), তাঁকে কয়েকটা ফাইল তৈরী করে দিতে হল—টেলিফোন নাম্বারের, দিল্লীতে ধর্নার, ভিলাই আন্দোলনের ছবির, বনখেড়ী কান্ডের...। তারপর নিয়োগী বলতে থাকলেন দিল্লী থেকে ফেরার পথে বনখেড়ী যাওয়ার কথা, ভোপালে মুখ্যমন্ত্রী পাটওয়া ও শ্রমমন্ত্রী লীলারাম ভোজওয়ানীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার...। পরিবেশ নিয়ে তাঁর লেখা বই করা হবে, তার প্রচ্ছদ কেমন চান—বিস্তারে বললেন (না, তেমনটা করতে পারিনি)। Update-এর কোয়ালিটি ভাল করতে হবে, ইলেক্ট্রনিক টাইপরাইটার আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন। সন্ধ্যার রাউন্ডের সময় হয়ে যাচ্ছিল, উঠতে চাইছি, নিয়োগীজী বলছেন—‘আপসে আউর কুছ বাত করনী হ্যাঁয়’। এমন সময় এক ঠিকাদারের ম্যানেজার এল কিছু সমস্যা নিয়ে। আমার দেরী হচ্ছে, এবার উঠবই, নিয়োগী বললেন—‘যাতে ওয়ক্ত হাসপাতালমেঁ আপসে মিলকর যাউঙ্গা’। যে কোন কারণেই হোক সেদিন নিয়োগী আসতে পারেন নি, সেদিন নয়, আর কোনও দিনই নয়।

    মৃত নিয়োগীর সঙ্গে ছিলাম ২৮শে সেপ্টেম্বর থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর। দেশী পিস্তলের বুলেটের ছ’টা ছররা পিঠ ফুঁড়ে হৃৎপিন্ডকে ফুটো করে দিয়েছে, অথচ মুখে কোনও যন্ত্রণার ছাপ নেই, স্বপ্নদ্রষ্টা আমার নেতা যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোনও স্বপ্ন দেখছেন, মুখে হালকা একটা হাসি! যেন ‘নিয়োগীজী’ বলে ডাকলেই চোখ খুলে বলবেন ‘কেয়া খবর ডাক্তারসাব’!

    নিয়োগী-হত্যার ৫ মাস বাদে এ লেখা লিখেছিলাম। তখন কম লোকই মনে করত নিয়োগী নেই। দল্লী-রাজহরায় আমাদের মনে হতো তিনি যেন ভিলাইয়ে আছেন, ভিলাই-এর সাথীদের মনে হতো নিয়োগী যেন রাজহরায়! আমাদের অস্তিত্বতে এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পরও একজন মানুষ কিভাবে তাঁর চিন্তাধারায়, কাজ-কর্মে বেঁচে থাকেন—দেখিয়েছিলেন কমরেড শংকর গুহনিয়োগী।

    কমরেড নিয়োগী শহীদের জীবন কামনা করেছেন বারবার। ১৯৭৭-এ যে এগারো জন তাঁকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে জীবন দেন, রাজনাদগাঁও-এ শ্রেণীসংগ্রামে শহীদ চার শ্রমিকসাথী—এঁদের আত্মদান নিয়োগী সবসময় মনে রাখতেন। নিয়োগীর মৃত্যুতে আমি দুঃখ পাইনি, কেন না যে জীবন যে মৃত্যু তিনি চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন—শ্রেণীসংগ্রামে শহীদ হয়েছেন। ( অভিমুখে মূল লেখাটার নাম ছিল—নিয়োগীর মৃত্যুতে আমি দুঃখ পাইনি)।

    আমরা নিয়োগীর যে সাথীরা রয়ে গেছিলাম, আমরা ও ছত্তিশগড়ের লাখো মেহনতী মানুষের দায়িত্ব ছিল তাঁর চিন্তাধারাকে ছড়িয়ে দেওয়ার, ‘নয়া ছত্তিশগড়’ গড়ার লড়াইকে তীব্রতর করার। সে কাজ আমরা কতটা করতে পেরেছি তা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। যাঁরা তাঁর চিন্তাভাবনাকে কোনও না কোনও ভাবে কাজে লাগিয়ে চলেছে, তাঁদের মধ্যেই বেঁচে আছেন কমরেড শংকর গুহনিয়োগী।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৯ মার্চ ২০১৪ | ১৩২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tapas bhattacharyya | 210.6.151.227 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৭:১৯73657
  • er onek-tai maajhe maajhe Dr Gun-er kaachh theke shunechhi. Tokhon aami praay niyomito Chengail-e Swasthya-kormee-der training dite jetam. Guha-Niyogi somporke sottyi bolte gele aamar nijer-o onek reservation chhilo. Taake Revisionist bhaabtam...eta pore bujhechhi ekpeshe chintar fol aar aasepaaser communist/marxist neta-der effect.
    Punya/ Saibal/ Ashis/ Chanchala era bhaagyaban....daaktari-r saathe saathe raajneeti korechhe....shikhechhe.... Amar swopno odhora-i theke galo...
    Ebar deshe fire giye nijeke kaaje laganor chesta korbo....Maanusher jotota upokaare laaga jay.....
  • aranya | 78.38.243.218 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪৪73658
  • মানুষের মত মানুষ সব - শংকর গুহনিয়োগী, তার সাথীরা, পুণ্যব্রত গুণ - শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে
  • h | 24.99.191.127 (*) | ১০ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৭73659
  • খুব ভালো লাগলো।
  • π | 24.96.47.74 (*) | ১০ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৬73660
  • খুব ভালো লাগলো, পুণ্যদা। শংকর গুহ নিয়োগীর কাজকর্ম, সেই নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে আরো লিখুন।
  • ranjan roy | 24.99.212.29 (*) | ১০ মার্চ ২০১৪ ০৪:৪৩73661
  • বহুদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম-- কবে পুণ্যব্রত এই লেখাটা লিখবেন!
  • Punyabrata Goon | 151.0.8.140 (*) | ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪73662
  • পরের কিস্তি লিখছি কমরেড নিয়োগীর জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে--মানুষের মতো মানুষ।
  • Punyabrata Goon | 151.0.8.140 (*) | ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৩73663
  • পরের কিস্তি লিখছি কমরেড নিয়োগীর জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে--মানুষের মতো মানুষ।
  • Aniruddha Kar | 122.79.36.139 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৮:৪৯73664
  • Sankar Guha Niyogir sambandhe anek janar utsaha chilo ebang Sanghrsa O Nirman boita kine porlam ebang mohit hoye gelam anek deri hoye geche ei jante kintu ekjan prakito Marxbadi Leninbadi hisabe onar tulana hayna aar Punya amar mato daktarder kache garbo amra parini ba chestao korini aar o sei asambhabke sambhab koreche prakito guru khuje paoyay
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন