এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • যৎকিঞ্চিত ...(২৭ তম পর্ব)

    Rana Alam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৩ আগস্ট ২০১৪ | ১১৪৫ বার পঠিত
  • রোববার সকাল।খুসি’র সকাল।খাসি’র সকাল।তাই কালামের কাছ থেকে কেজি খানেক খাসি’র মাংস কিনে এনেছিলাম।যদিও ডাক্তার রা আমায় রেড মিট খেতে বারণ করেছে।কিন্তু ডাক্তার রা যতই চক্রান্ত করুক,খাসির প্রতি আমার ভালোবাসা কমাতে পারবেনা। দুনিয়ার খাসীদের প্রতি এ আমার তীব্র অঙ্গীকার।যাই হোক,খাসির মাংস আনার পর থেকেই মনটা হেব্বি খুশ ছিল।আচমকা শুনতে পেলুম,আমার ভাগ্নে দুপুরে খেতে আসছে। খুব রাগ হল।হতভাগা জানিয়ে আসতে পারেনা।এক কেজি খাসির মাংসে চারজনের খাওয়া হয়?? যদিও আমি অ্যাখন বড্ড কম খাই।বছর তিনেক আগেও ভাতের সাথে কেজি খানেক মাংস খাওয়াটা কোনো ব্যাপার ছিল না।।ইদানীং একদমই খাই না।ওই সাত আট পিস হলেই চলে যায়। সেক্ষেত্রে তিনজন না হয় কষ্টে সৃষ্টে হয়ে যাবে? তাই বলে চারজন??? খাসিটা নিজেই জানতে পারলে মরমে মরে আত্মহত্যা করতো তা শিওর। বার দুয়েক মিন মিন করে বললামও সে কথাটা।মা পাত্তা দিলেন না।শেষে থাকতে না পেরে মা’কে বললুম,
    ‘ ইয়ে,এইটুকু মাংস তে কি চারজনের হবে? আর খানিকটা নিয়ে আসি বরং’।
    মা কড়া চোখে তাকালেন,
    ‘গোটা খাসি কিনে আনলেও তোমার জন্য বরাদ্দ সেই দুপিস। তার থেকে বেশী দিতে ডাক্তারের মানা আছে’।
    দু পিস খাসি’র মাংস ???? এরপরেও কি মানুষ মাওবাদী হবেনা। বন্দুক হাতে জঙ্গলে যাওয়া উচিত ছিল,তার বদলে রেগেমেগে চলে গেলুম গোবিন্দ’র নানপুরি’র দোকানে।খান বারো নানপুরি খেয়ে মনটা ঠান্ডা হল।হ্যাঁ,এতক্ষণে বেঁচে থাকার কারণ টা পাওয়া গেলো।বেঁচে থাক গোবিন্দ আর ওর নানপুরি’র দোকান।
    অর্ককে নিয়ে আর পারা যাচ্ছেনা। রোজ সকালে তানপুরা বাগিয়ে ক্লাসিকাল গায়( এটা ওর ব্যক্তিগত ধারণা,আমার মতে ও গাজায় লড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে),সেটা অব্দি সহ্য করে নিচ্ছিলাম।ইদানীং দেখছি ওর মধ্যে একটা প্রেম চাই প্রেম চাই গোছের মানসিকতা উঁকি দিচ্ছে।গতমাসে ওর জন্মদিনে আমার কাছ থেকে নিল নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি’র লেখা ‘মহাভারতের অষ্টাদশী’ বইটি।বই এর নাম শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিল।ব্যাটা গালিব হওয়ার চেষ্টা করছে নাকি।আমি বললুম।
    ‘ওরে হতভাগা।মহাভারতের অষ্টাদশীদের খবর জেনে তোর কি হবে? এখন কার অষ্টাদশীদের খবর জানলেই তো হত’।
    অর্ক মাথা চুলকে বলল,
    ‘ইয়ে,অ্যাদ্দিন তো জানার সময় পাইনি।আর জানলে আমার আবার গোড়া থেকেই জানতে হয়’।
    হাতের কাছে ছুঁড়ে মারার মত কিছু একটা খুঁজছিলাম।তার আগেই ব্যাটা পালালো।
    তারপর দেখলুম অর্কের দাঁতের ব্যথা বেড়েছে।ঘনঘন ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে।খোঁজ নিয়ে দেখলুম পাড়ার মোড়ে এক সুন্দরী ডেন্টিস্ট সম্প্রতি চেম্বার খুলেছেন।তার জন্যই অর্কের এত দাঁতে ব্যথা হচ্ছে। আমার এমনিতে ডেন্টিস্টদের পছন্দ হয় না।কারণ তারা মৌখিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন। অর্ককে বললুম,
    ‘হ্যাঁরে, সত্যি করে বল ঐ সুন্দরী ডেন্টিস্ট-এর কাছে ক্যানো যাচ্ছিস?’
    ‘অর্ক দাঁত বের করে বলল,
    ‘দাদা,সুন্দরী ডেন্টিস্ট দের কাছে যাওয়ার দুটো সুবিধে আছে।প্রথম শব্দ দূষণ হয় না।দ্বিতীয়ত দাঁত তোলার সময় অ্যানাসথেসিয়া লাগেনা’।
    আমি বললাম,
    ‘অর্ক,যতকিঞ্চিত একটা নির্বোধ পাঁঠা লেখে বটে কিন্তু যারা পড়েন তারা কেউ পাঁঠা নন।সুতরাং ব্যখ্যা দে’
    অর্ক বলল,
    ‘ ডেন্টিস্ট যদি সুন্দরী হয়,তাহলে তাকে দেখলে এমনিতেই মুখ হাঁ হয়ে যায়,ডাক্তার কে আলাদা করে মুখ হাঁ করার কথা বলতে হয় না।তাতে শব্দ দূষণ হয় না।
    আর খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এমনিতেই ঘোর লেগে যায়।কখন যে দাঁতটা তোলা হয় তা টেরই পাই না’।
    বোঝো...

    নাম নিয়ে আমার মাথায় (!!!) নানারকম চিন্তা আসে।কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন তো অনেক শোনা যায়।কিন্তু তার বাইরেও কিছু অদ্ভুত নাম দেখা বা শোনা যায়।আমার বাবা’র এক বন্ধু’র নাম বিডিও।তাকে আমি ছোটোবেলা থেকেই বিডিও কাকা বলে ডেকে আসছি। আমার এক স্কুলের সিনিয়রের নাম হিটলার রহমান।আপাদমস্তক নিরীহ সেই ছেলেটিকে হিটলার বলে ভাবতে যথেষ্ট কল্পনা শক্তির দরকার হয়ে পড়বে। আমার মায়ের স্কুলের এক ছাত্রীর নাম ছিল রোজগোলাপ খাতুন। মুর্শিদাবাদেই আমি সিপিএম মন্ডল নামও শুনেছি। তবে লেটেস্ট বোধহয় কংগ্রেস সরকার নামটা।এটাও মুর্শিদাবাদে পাওয়া নাম। আমার ভাই অর্ক জিয়াগঞ্জে রাণি ধন্যাকুমারী কলেজে পড়তো,সেখানে ওর ক্লাসেই পড়তো নোকিয়া খাতুন আর ভোডাফোন দাস।
    আমার অন্ধু অদিতি লাহিড়ী চাকদা’র একটা স্কুলে পড়ায়।ওর এক স্টুডেন্টের নাম অতিসুন্দর মাল।বোঝো।
    এই লেখার সময়ই অর্ক জানালো যে ওরা একবার চুঁয়াপুরের দিকে একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিল সেখানে একটা টিমের নাম ছিল ‘প্রেমে ব্যর্থ সমীর’ আর আরেকটা টিমের নাম ছিল ‘পারলে ঠেকাও’। তবে সেরা নামটা ছিল ‘হারলে তোর বাপের কি?’ পারলে ঠেকাও কে ঠেকানো গিয়েছিল কিনা জানিনা।তবে প্রেমে ব্যর্থ সমীর অর্কদের সামনেও ব্যর্থ হয়েছিল।আর হারলে তোর বাপের কি নামটা কিন্তু খুব ফিলোজফিক্যাল। জিতলেই বা কি,হারলেই বা কি। আম্পায়ারেরই বা কি? যারা জিতলো তাদেরই বা কি? সবই তো নিমিত্ত মাত্র।
    শুনে মনে পড়লো বহরমপুরেই কেএন কলেজের পিছনে কোনো একটা মেসের নাম দেখেছিলাম ‘দেবদাস মেস’। আরও দুটো নাম বলি, অদিতি’র কাছ থেকেই শোনা।একটি মেয়ের বাবা’র নাম দুখাই আর তার নিজের নাম অভাগিনী। ইতি,চায়না,আন্নাকালী এই নামগুলো আদতে মহিলা সন্তান দের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষা বোঝায়।তাতে আরেকটা নাম যোগ হল-অভাগিনী।
    সব হাসির পিছনে খানিক যন্ত্রনা লুকিয়ে থাকে।এটার পিছনেও থাকলো।
    নাম নিয়ে প্রচুর বিপত্তিও হয়। আমারই ভালো নাম মেহফুজ আলম।এটি সঠিক উচ্চারণ খুব কম লোকেই করে। আমার স্কুলে পড়ে জিত ভুঁইমালী। খুব দস্যি আর পাকা।সম্প্রতি ফাইভ থেকে এইট অব্দি যারা খুব পিছিয়ে আছে তাদের নিয়ে আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা হয়েছে।চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে কাজ চালানোর মত ইংরেজি,অংক ইত্যাদি শেখানো যায়। তা সেখানে একদিন খান দশেক সহজ ইংরেজি শব্দের মানে মুখস্থ করতে দেওয়া ছিল।
    টিফিনের পর ক্লাস।টিফিন টাইমে আমার অফিসে দেখি গুটি গুটি পায়ে জিত ঢুকলো।আমার কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।বলল,
    ‘সার,পড়া ধোরবেন?’
    আমি বললাম,’হ্যাঁ।ধরবো তো’।
    ‘অত পড়া ধরার কি আছে? না ধরলে কি হয়?’,জিতের জিজ্ঞাসা।
    আমি ঢোঁক গিললাম।না পড়া ধরলে কি হয় এ জিজ্ঞাসা আমার মনেও ইস্কুল জীবনে বহুবার এসেছে।স্যারেদের জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি বেতের ভয়ে। তাও চোখ পাকিয়ে বললাম,
    ‘আমি হেড মাস্টার যে।পড়া না ধরলে হয়?’
    জিত মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দিল,
    ‘আপনাকে এমনিই তো হেডমাস্টার বুলি।পড়া ধোরবেন না,তাহলে আরও হেডমাস্টার বুলে ডাকবো’।
    আমাকে গলানো যাচ্ছেনা দেখে জিত খুব কাতর মিনতি করলো,
    ‘যদি ধরেন,তাহলে আমাকে পরথম তিনটা ধরবেন’।
    ‘দিয়েছি দশটা।আর ধরবো তিনটে?আচ্ছা,যদি চারটে ধরি তাহলে?’,আমার কূট জিজ্ঞাসা।
    জিত তখন আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
    ‘তাইলে,আমাকে বুল্যা দেন যে কুনডা ধোরবেন।আমি মুখস্ত করে লিইগা’।

    এই জিতেরই আরেকটা ঘটনা আছে। ওদের ইংরেজিতে পুরো নাম লেখা শেখানো হচ্ছে।ওর খাতায় ইংরেজিতে ওর পুরো নাম লিখে দিয়েছি ।খানিক পরে অফিসে আমার কাছে এসে হাজির।আমার দিকে খাতাটা বাড়িয়ে দিল,
    ‘সার,এডা পালটে দেন’।
    তাকিয়ে দেখি, জিত ভুঁইমালী নামের ‘ভুঁইমালী’ অংশটা বদলে দিতে বলছে।বললাম,
    ‘বদলে কি করে দেবো?’
    জিত বলল,
    ‘ক্যানে,দাস করে দেন’। (উল্লেখ্য জিতের পিসতুতো দিদি সাথি দাস আমার স্কুলেই পড়ে)
    বোঝো কান্ড।যেহেতু ইংরেজিতে ভুঁইমালী লেখাটা বেশ কষ্টসাধ্য।সেহেতু জিত নিজের পদবী পালটে দাস করে নিতে চাইছে যা লেখা বেশ সহজ।ডি এ এস-দাস লিখলেই হয়। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম।
    ‘হ্যাঁরে,তাই বলে নিজের বাপ-ঠাকুর্দা’র পদবী পালটে ফেলবি? ওরা কষ্ট পাবেন না?’
    জিত সটান উত্তর দিলো,
    ‘অরা তো টিপছাপ দ্যায় সার।আমাকে যে নামটা লিখতে হছে’।
    অকাট্য যুক্তি।বাপ ঠাকুর্দা টিপসই দিয়ে পার পেয়ে গেলো।এদিকে বেচারা জিত লেখাপড়া শিখে কি অ্যামন অন্যায় করলো যে তাকে ইংরেজিতে ভুঁইমালী বানান লিখতে হবে?
    এ লেখা লেখার সময় জানালার বাইরে খানিক মেঘ ঘনিয়েছে।পাশের বহুতলটি আমার আকাশ দেখার অধিকার অনেকটা কেড়ে নিয়েছে।আকাশ দেখতে গেলে ছাদে উঠতে হয়।ছাদে উঠলে আমার উঠোনের কথা মনে পড়ে।আমাদের পুরোনো বাড়িতে একটা চওড়া উঠোন ছিল।সেখানে দুটো পেঁপে গাছ,একটা ক্যাকটাস আর কটা বুনো ফুলের গাছ ছিল।দোতলার সিঁড়ির কাছটায় একটা কুমড়ো গাছের লতা পাক খেয়ে উঠেছিল।দুপুর বেলায় সেখানে একটা কাঠবেড়ালি’র নিত্য আনাগোনা ছিল। আর ছিল কটা চড়ুই। আমার কৈশোর কেটেছে তাদের সাথে।
    মার্বেল দিয়ে মোড়া আমার এখনকার বাড়িতে উঠোন নেই।ডাইনিং আর লিভিং রুম আছে।যান্ত্রিক আয়াসের হাজার বন্দোবস্ত আছে।জলের জন্য কল টিপতে হয় না।শীততাপ যন্ত্রের সৌজন্যে গরম লাগেনা।লোডশেডিং টের পাইনা।
    তবুও চোখে হারানো উঠোন টা ভাসে।নতুন বাড়ির মেঝেতে পা দিয়ে খুঁজি এখানেই কি সেই পেঁপে গাছ টা ছিল? সেই বারান্দা দিয়েই সেই কাঠবেড়ালিটা আসতো না? আর চড়াইগুলো যাদের কিচির মিচির আমার নিত্যসঙ্গী ছিল...

    আজ কেউ নেই।সব্বাইকে বাস্তুহারা করেছি আমরা।বুকের উঠোনটাও ক্যামন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৩ আগস্ট ২০১৪ | ১১৪৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.86.134 (*) | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ০৩:১১73600
  • :-)
    :-(
  • আলী হুব্বা | 212.78.239.111 (*) | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ০৬:৩৪73601
  • দারুন লেখা
  • Abhijit Das | 158.177.1.213 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৪ ০৭:১৯73606
  • ১২ টা নান্পুরি ????
  • kaushik | 127.211.91.74 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৪ ০৭:৫২73602
  • রানা, আরো দুটো নাম স্টকে রাখুন তা হলে।

    অনাথ দত্ত - আমার বাবার বন্ধু।

    বিধায়ক চক্রবর্তি - আমার বন্ধু।
  • বুড়া | 113.18.171.92 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৪ ১২:০২73603
  • Proper names are connotative or non-connotative পড়াতে গিয়ে বৃদ্ধ অধ্যাপক দুটি নামের উদাহরণ দিয়েছিলেন, এখনো স্মরণে আছে। প্রথমটি ছাত্র, বৈষ্ণববাড়ির ছেলে, নাম গোপীজনবল্লভদেহপদরেণু দাস, দ্বিতীয়জন ছাত্রী, যমুনাপুলিনেকাঁদেরাধাবিনোদিনী দে।
  • de | 190.149.51.69 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৪ ১২:১৬73604
  • ঃ))))
    খুব ভালো!
  • সুমন | 144.197.40.83 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৪ ১১:১৫73607
  • রানাদা,

    এবারের লেখাটা বেশ হয়েছে। নাম নিয়ে নিয়ে অসুবিধার একটা ঘটনা আমি শুনলাম আমার এক বন্ধুর কাছে। বন্ধুটি মালদ্বীপের। ওর এক স্কুলের বন্ধুর নাম ওসামা বিন লাদেন। ছেলেটি অ্যামেরিকাতে এসেছে PhD করতে। প্রতিবার এ দেশে ঢোকার সময় তার আর তার সঙ্গীর জন্য সাত আট ঘণ্টার ইন্টার্ভিউ মাস্ট।

    আপনার মাংসপ্রীতি দেখে নিজেকে কিছুটা justify করতে পারি। আমার advisor (যিনি নিজেও বাঙ্গালী) কিছুদিন আগে আমাদের নিয়ে ডিনার বাফেতে নিয়েগিয়েছিলেন। আমিতো যথারীতি চিংড়ি দিয়ে শুরু করে স্যামন, তেলাপিয়া, ক্যালামারি, স্ক্যালোপ (নিজের গ্রামে এ বস্তুটিকে সুঁতি বলে, খাওয়ার কথাও মনে আসতোনা), মুরগি, টার্কি, পর্ক, বিফের একের পর এক প্লেট নিয়ে আসছি, বাকিরা একটু মাংস আর ঘাস (স্যালাড দিয়ে পেট ভরানোর পাশ্চাত্য কায়দা আমার নামনপসন্দ) নিয়েই সন্তুষ্ট। খাওয়ার শেষে, আইসক্রিম খেতে খেতে উনি ওনার PhD সময়কার আরেক খাদ্যরসিকের কথা শোনালেন। সে কিনা প্রতিবার ইউনিভার্সিটি বাফেতে যাওয়ার আগে ভাবতো যে কম খাবে, তারপর শুরু করতো, একটা আস্ত রোস্টেড চিকেন দিয়ে। তারপর আরেকটা, আবার একটা। এইকরে চারখানা চিকেন শেষ করার পর খাওয়া শেষ হত। সমস্যা হল এরপর বাকিরা ঘর ফিরতে চাইলেও তার জন্য বসতে হত খুব কম করে আরও এক ঘণ্টা। যতক্ষণ না এই খাদ্যরসিক চেয়ার ছাড়ে পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি পায়। ওনারা চারজন থাকতেন একসঙ্গে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ছয় পাউন্ড করে খাসী রান্না করতেন। তারপর সবাই মিলে হামলে পড়ে সেটা শেষ করতেন। খেতে না পারলেও খেতে হবে। কারণ, খাসীর মাংস খুবই দুষ্প্রাপ্য, যদি কেউ পরের দিনের জন্য রেখে দেয়, সেটা ওই খাদ্যরসিকের কল্যাণে রাতের মধ্যেই শেষ।

    আশা করি আপনি খুব শিগগির সুস্থ হয়ে উঠে আবার আগের মত খাওয়া দাওয়া শুরু করবেন। ভালো থাকবেন। পরের কিস্তির অপেখ্যায় রইলাম।
  • Ranjan Roy | 132.176.221.56 (*) | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০১:৫০73608
  • রানা আলম,
    'অত্যন্ত দুঃখিত; আমি আপনাকে কক্ষণো আমার বাড়িতে ডাকার ধৃষ্টতা কর্বো না।ঃ))
    একডজন নানপুরি আর এককিলো খাসির মাংস? আমার পেনসন হাপিস হয়ে যাবে।
    প্লাস আমার মনোকষ্ট! আপনি সাঁটাবেন আর আমি টেরিয়ে টেরিয়ে দেখব? দীর্ঘশ্বাস ফেলব , যেমন বিগতযৌবনের কথা ভেবে ফেলি!
  • Ishani | 24.99.106.199 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৪ ১০:৪৩73609
  • রাণাটা এক্কেরে জল্লাদ টাইপ হয়েছে ! ওকে বারবার ধমকে , কাকুতিমিনতি করে ...যেভাবেই বলি ...কানে নেয় না ! এইসব খাবারের গল্প ফাঁদবে আর আমাকে গলায় আড়াই প্যাঁচ দেবে ! খাসি মুরগি হাঁস ....আমি ....
    আবার ছানাবড়া , পায়েস , রসগোল্লা .... সে সবও বাদ দেয় না !
    এরপর আবার লেখার নাম রেখেছে ..." যতকিঞ্চিত " !
  • Amit | 190.148.69.210 (*) | ১১ আগস্ট ২০১৪ ০৬:১৬73610
  • আপনার লেখা যেন ঝরনা র মত হালকা সুরে তিরতির করে বয়ে যায়, কোথাও আটকে থাকে না। হালকা সুরে আপনি যে প্রানের chord গুলো ছুয়ে যান, সে গুলো ভোরবেলার শিশির এর মত চোখের কোনে জলে ভরে যায়। গলা ভারী হয়ে আসে। না বলে পারছিনা, গুরুচন্ডালি র এক গাদা আজেবাজে লেখার মাঝে আপনার লেখা পরে সত্তি মন ভরে যায়।আরো লিখুন।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১১ আগস্ট ২০১৪ ০৬:৩৫73611
  • ওহ্‌, দারুণ লাগল।
    ডেন্টিস্টের গপ্পে মনে পড়ল, মনমোহন জোক্‌স -- মনমোহন সিং একবার এক বন্ধু ডেন্টিস্টের কাছে গেছেন এবং চুপ করে বসে আছেন। বন্ধু বলেই ফেললেন, আব তো মুখ খোল ইয়ার, ইয়ে তেরা পার্লামেন্ট নেহি হ্যায়।
  • ছেনাল ঘোষ | 125.241.97.60 (*) | ২৪ আগস্ট ২০১৪ ০২:০৯73612
  • রাণা'র বাড়ীর কাছেই নাকি তিনভাই আছে শাহরুখ-আমীর-সলমন।বলাই বাহুল্য তাদের পদবী'ও

    'খান'।

    মুর্শিদাবাদ জেলাতে হিটলার নাম বেশ কমন।লেনিন,লেলিন,স্ট্যালিন এই নামগুলো'ও আমি শুনেছি।সবচেয়ে ভাল লেগেছি ডবলু নামটা।
  • বাঁশিওয়ালা | 170.62.7.250 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৪ ০১:২০73613
  • রানাদা, ২৮তম পর্ব কবে আসবে? মুখিয়ে আছি যে! জলদি লিখুন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন