এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাফিরনামা...(১ম কিস্তি)

    রাণা আলম লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ মে ২০১৭ | ১৫৮৭ বার পঠিত
  • কাফিরনামা... (১ম কিস্তি)

    হপ্তাখানেক আগের কথা। ফেবুতে এক অনুজপ্রতিম আমায় একটি পোস্টে ট্যাগ করেছিলেন।তল্লাস করতে গিয়ে দেখি সেটায় ‘গরুখোর হিন্দু’দের সাথে অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে ‘শূয়োরখোর মুসলমান’ দের আওয়াজ দিতে বলা হয়েছে।সেই সুবাদেই আমায় ট্যাগিত করা হয়েছে আর কি। শুয়োর কিভাবে রান্না করলে কতটা সুস্বাদু হতে পারে তা নিয়ে সেমিনারের আগ্রহী শ্রোতা আমি নিশ্চিত,তবে এই খাদ্যগ্রহণের অভ্যেস আমার সেকুলারত্বের ইঙ্গিতবাহী পাইলট কার হয়ে দাঁড়িয়েছে, এইটে ধারণায় আসেনি।

    তার চেয়েও বড় আগমার্কা ছাপ হল ওই ‘শুয়োরখোর মুসলমান’ বা ‘গরুখোর হিন্দু’। এতকাল যাবত মানুষ বলে চেনাতে চেয়ে যদি নিজেদের এইসব ট্যাগে চিনতে হয় তাহলে বেশ ভজকট লাগে বইকি। তবে আমার স্নেহভাজন অনুজপ্রতিমটি এতকিছু ভেবে নিশ্চয়ই আমায় ট্যাগ করেন নি।তিনি নিতান্তই পপুলার কালচার ফলো করেছিলেন নির্ঘাত।

    অ্যাদ্দূর লেখার পর মনে হল যে তাহলে কি আমি আমার পরিবারসূত্রে পাওয়া ধর্মীয় পরিচয়টা কে কোনোভাবে নেগেটিভ দ্যোতক মনে করছি? আমার কাছে যদি ধর্ম বিষয়টা গুরুত্বহীন হয় তাহলে কে কি ধর্মীয় পরিচয়ে আমাকে চিনতে চাইছে তাতে আমার এত মাথাব্যথা ক্যানো? নাকি দুনিয়াজোড়া মুসলিম পরিচয়ের সাথে যেভাবে সন্ত্রাসবাদী ছাপ্পা জুড়ে যাচ্ছে তাতেই শংকিত হয়ে সেই পরিচয়ের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইছিনা।

    প্রশ্নগুলো গোলমেলে। কিছুদিন আগে ফেবুতে এক পরিচিতা লিখেছিলেন যে যেহেতু ইসলাম ধর্মালম্বীরা দুনিয়াতে টেররিজম চালাচ্ছে সেহেতু ভারতে তাদের মতন মানুষেরা, অর্থাৎ কিছু সংখ্যক হিন্দুরা মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা এবং অবিশ্বাস পোষণ করতে বাধ্য হচ্ছেন।নইলে তো তারা অ্যাদ্দিন মুসলিম বেরাদরদের বুকের ভিতরই বসিয়ে রেখেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

    মনোবিদ মোহিত রণদীপ পদবী না থাকার জন্য যাদবপুরে ঘর পান নি।এই অধমের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটেছে। বার কয়েক পছন্দ হওয়ার পরও শেষমুহুর্তে সংশ্লিষ্ট বাড়িওলারা যখন পিছিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বাধ্য হয়েই ব্রোকারদের জিজ্ঞেস করি যে এরম সিরিয়াল রিজেকশনের কারণ কি। বাকিরা এড়িয়ে গেলেও এক ব্রোকার স্পষ্টতই জানালেন যে আমার আরবি নাম টাই এক্ষেত্রে মূল দায়ী। অর্থাৎ, আমি, মাহফুজ আলম, আমার নামের কারণে বাড়িভাড়া পেতে পারিনা।

    ভেবে দেখলাম যে আমার ইয়ার দোস্ত বেরাদর কেউ নির্ঘাত আইসিসে নাম টাম লিখিয়েছে। কিংবা ওপার বাংলায় যখন হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হয়, তখন আমিও সেখানে হাত লাগিয়েছিলাম নিশ্চিত, নিদেনপক্ষে ভব্যিষতে জঙ্গী হবো এরমটা শ্রীভৃগু কয়েছেন, নইলে আমি ব্রাত্য হচ্ছি ক্যানো।

    এবং সমীকরণ টা সত্যিই বড্ড সোজা। তালিবানরা নাইন-ইলেভেন ঘটালে গোটা দুনিয়ার তাবৎ মুসলমান কে তার দায় নিতে হয়।কিন্তু কাঠের সিন্দুকে গোপন মারণাস্ত্র খোঁজার ছলে কোনো দেশকে শ্মশান করে ফেললেও প্রথম বিশ্বের দেশগুলির আবার পরে একটা ফর্মাল ভুল স্বীকার করলেই সব মিটে যায়।

    অতএব, আমি আমার ধর্মীয় পরিচয়েই দুনিয়াতে ইসলামী জঙ্গীরা যে যেখানে যা কিছু কুকীর্তি করছে তার দায়ভার বহন করতে বাধ্য। ২০০২ সালেই একটি সমৃদ্ধ জেলাশহরে আমার সহ-গবেষক জিয়াউল হককে তার বন্ধুর মেসের বাড়িওলা মুসলিম বলে বের করে দিয়েছিলেন। ১৯৮০ এর শেষদিকে আমার এক পরিচিতা সর্বোচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম হবার দরুণ স্কুলের চাকরিতে যাতে না নেওয়া হয় তার জন্য সেক্রেটারির কাছে দরবার করেছিলেন সেখানকার কিছু সংখ্যাগুরু শিক্ষিকা।সনির্বন্ধ অনুরোধ ছিল যে দেখবেন কোনো মুসলমান যাতে না ঢোকে। ষাটের দশকে বাসে আমার এক চাচাকে সিট থেকে তুলে বলা হয়েছিল পাকিস্তান চলে যেতে।

    একটা সাধারণ সমীকরণ দেওয়া হয় যে দেশভাগের ফলে ওপার থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে অত্যাচারিত হয়ে যেহেতু চলে আসতে হয়েছে সেহেতু এই মুসলিম বিদ্বেষ। সত্যিই কি তাই? সাতপুরুষের ঘটি, জীবনে পদ্মার ধারে যান নি, এমন মানুষজনও তো কম নেই যারা এই ঘৃণা আর বিদ্বেষের উত্তরাধিকার বহন করেন না।

    তাহলে কি এই ঘৃণার সবসময়ই কি সঙ্গত কারণ থাকে? নাকি, শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবেই নিকটতম প্রতিবেশীকে বিন্দুমাত্র না জেনে ঘৃণা করে যাওয়া যায়?

    হয়ত যায়, নয়ত দুই বাংলায় এই ঘৃণাজীবিরা এত মাথা তুলছে কি করে?

    এই বাজারে মুসলমানত্ব নিয়ে লিখলে নব্য ছাগ সন্তানদের ‘সহি মুসলমান’ থিওরি নিয়েও দু-চার কথা বলা দরকার।নইলে পীর সায়েব গোঁসা হবেন।

    প্রিন্স আনোয়ার শা রোডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকেই একটা পোস্টার নজরে এলো। লেখা রয়েছে ভারতের মুসলমানেরা সবরকম অত্যাচার সয়ে যাবে কিন্তু শরিয়তের উপর হাত দিলে সহ্য করবেনা। ইত্যাদি ইত্যাদি।

    শরিয়ত কি সেটা নিয়ে যারা চেল্লান তাদেরও সব্বার ধারণা স্পষ্ট আছে কিনা তা নিয়ে বিস্তর কোশ্চেন আছে। এই নব্য ছাগসন্তানেরা চান যে মেয়েরা বোরখা পরুক,পর্দা করুক, তিন তালাক মেনে নিক, বহু বিবাহ মেনে নিক ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু শরিয়ত মানলে চুরি করলে হাত কাটা উচিত, ব্যাঙ্কে জমানো টাকায় সুদ নেওয়া উচিত না ইত্যাদি নানাবিধ হারাম কাজের হুকুমনামা রয়েছে। সেগুলো মানার ব্যাপারে ব্যগ্রতা দেখা যায় না বিশেষ।

    শরিয়তের যাবতীয় গুরুত্ব ওই মেয়েদের উপর দখলদারি ফলানোর জন্য। এই তিন তালাকের চক্করে অসংখ্য মুসলিম মহিলা ভুগছেন। তা নিয়ে পার্সোনাল ল বোর্ডের মাথা ব্যথা দেখা যায় নি অ্যাদ্দিন। যেমনি অত্যাচারিত মহিলারা কোর্টে গেলেন অম্নি মোল্লাসায়েবদের মনে হল যে হেঁদুদের দেশে আমাগো পাক ধম্মোডা এবারে গেল আর কি।

    অম্নি তারা শরিয়ত কত ভালো তার ব্যখ্যানে নেমে পড়লেন। এই বিবাহ বিচ্ছিন্না অসহায় মুসলিম মহিলাদের জন্য তাদের হৃদয় কতটা কাতর সেটা সেইটে বোঝাবার জন্য মিটিং মিছিল শুরু হয়েছে। তিন তালাকের অপব্যবহারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এও অমৃতভাষণ শোনালেন। কিন্তু আজ অব্দি ঠিক কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন সেইটে জানাতে পারলেন না।

    মোল্লাসায়েবদের কীর্তিনামা এখানেই শেষ নয়। প্যালেস্তাইনে মুসলমানেদের উপর ইজরায়েল অত্যাচার করলে তারা কলকাতায় মিছিল করেন। পাশের দেশ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা অত্যাচারিত হলে দার-উল ড্যাশের অজুহাতে মুখ বন্ধ রাখেন।এমনকি মায়ানমার থেকে তাড়া খাওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানেদের বাংলাদেশ ফের তাড়ালেও তারা কিস্যু দেখতে পান না। ধন্যি দৃষ্টিশক্তি বটে।

    (প্রথম কিস্তি এই অব্দিই)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ মে ২০১৭ | ১৫৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 116.193.192.106 (*) | ১০ মে ২০১৭ ০৪:১৯59825
  • চাবুক পুরো। চলুক চলুক
  • kihobejene | 22.208.161.99 (*) | ১০ মে ২০১৭ ০৭:০৬59826
  • mon ta kharap hoye gelo; rana r lekha maanei ofuranto hashi .... din tai bodle jawa ... e lekha ta pore mon ta sotti kharap hoye gelo ... keno ke jaane? ja likhechen shob to sotti and ebong porichito ghotona
  • sinfaut | 52.106.99.112 (*) | ১১ মে ২০১৭ ০৬:৫৯59828
  • আমিই লিখলাম মনে হলো। মানে কোয়ালিটিতে নয় কনটেন্টে।
  • de | 24.139.119.175 (*) | ১১ মে ২০১৭ ০৯:৩১59829
  • খুবই ভালো লেখা-
    চলুক রাণা - তবে একটু সাবধানে - দিনকাল বড়ই খারাপ -
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১১ মে ২০১৭ ১০:০৯59830
  • আমার ভাই কসবায় বাড়ি কিনতে গেছিলো। আই টি গাই, ফলে টাকা ভালৈ। বাড়ি দেখতে আমিও গেছিলাম। মালিক সেন্ট জেভিয়ার্স এর প্রাক্তন প্রফেসর, দুই ছেলে ইউ এস এ তে চাকরি করে।

    সব কথাবার্তা হয়ে যাবার পরে ফিস ফিস করে বললেন, বুঝলেন, একটা মুসলমান এসেছিলো, এক বারেই পঞ্চাশ লাখ দিতে চেয়েছিলো, আমি দিই নি, আর দেবোও না।
  • pi | 57.29.247.252 (*) | ১১ মে ২০১৭ ১২:২৮59827
  • নাঃ, রাণার এর আগের সব লেখাতেই অফুরান হাসির শেষে এই চাবুকটা ঠিকই এসেছে।
    মন খুলে লেখ রাণা ,পরের কিস্তির অপেক্ষায়।
  • Du | 182.58.108.42 (*) | ১২ মে ২০১৭ ০৪:৫৭59831
  • বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেস করা উচিত । নিশ্চয় কোন আইন আছে আর না থাকলে থাকা উচিত। সবকিছু মনোভাব বদলানোর আশায় থেকে লাভ নেই
  • PP | 86.175.75.119 (*) | ১৩ মে ২০১৭ ০৫:০৮59832
  • অাচ্ছা এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যাপার গুলো কি শুধু মুসলমান দের সাথেই ঘটে? অন্য অহিন্দু দের এরকম অভিযোগ করতে শুনিনি কখন।
  • PP | 86.175.75.119 (*) | ১৩ মে ২০১৭ ০৫:১৯59833
  • টাইপো *কখনও

    @Du আমার বাড়ি আমি কাকে ভাড়া দেব সে তো আমার ব্যাপার আইন কি করবে?
  • Prativa Sarker | 37.5.140.13 (*) | ১৩ মে ২০১৭ ০৬:১৭59834
  • বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারটা সাউথে খুব ঘটে। ওরা খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য কালচারাল রিজনে উত্তর ভারতীয় তো বটেই, পূর্ব ভারতীয়দেরও বাড়ি ভাড়া দিতে চান না। মছলিখোরদের সেখানে গরুখোরদের সঙ্গে একই স্টাটাস।দুটোই খেলে তওবা তওবা।
    তবে সাউথ ইন্ডিয়ানরা পরম্পরাবাদী, রেঁণেসা-ধনী বাঙালি মহোদয়রা বেশির ভাগই তা নয়। তবু বিভিন্ন সময়ে বন্ধুদের হেনস্থা দেখে ভালো লাগেনি। এমনকি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও অন্য আবাসিকদের আপত্তির কথা জানি। কতটা ইনসিকিওরড লাগতে পারে এর ফলে তা বোঝার জন্য কল্পনাকে খুব প্রসারিত করার দরকার হয় না।

    পরের কিস্তির অপেক্ষায় আছি
    এই কলম সব ভণিতাগুলোকে নাঙ্গা করে ছাড়বেই মনে হচ্ছে।
  • E না C | 212.142.80.243 (*) | ১৪ মে ২০১৭ ০৬:১৫59835
  • আমার ছেলে বয়াঙ্গালোরে চাকরি করে (বড় অবাধ্য ছেলে, পড়াশোনা শিকেয় তুলে চাগ্রী করছে)। চাকরি বদলানোর কারনে বাড়ি বদলাতে গিয়ে বিপদে পড়ল। প্রমান দিতে বলল যে সে হিন্দু। এরকম কোন প্রমান পত্র হয় কি না জানি না। নাম আর পদবীর মাঝে বাবার নাম নেই কেন সেটা নিয়েও বিস্তর ঝামেলা। এদিকে ছেলের মাথাতেও 'ট্যাক্ট ইজ ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান ট্রুথ' এখনো সিঁধোয় নি। পরিস্কার বলে বসল সে হিন্দু নয়। বিস্তর ঝামেলা। কিন্তু সেটা অন্য গল্প। এক্ষেত্রে এটুকুই প্রাসঙ্গিক।
  • dc | 132.174.83.100 (*) | ১৪ মে ২০১৭ ০৬:৪৬59836
  • আমার বাড়ি ভাড়ার গল্প বলি। চেন্নাইতে অনেক বছর আগে আমি আর আমার শালাবাবু দুজন মিলে বাড়ি ভাড়া খুঁজছি, একজন এজেন্ট দুয়েকটা বাড়ি দেখিয়েছে। শেষে চেটপেট এরিয়ায় একটা বড়ি দেখে খুব পছন্দ হয়েছে। তিনতলা বাড়ি, তিন আর সাড়ে তিনতলা মিলে এঅকটা ডুপ্লেক্স , ওপরে খোলা বানারান্দা, সামনে বড়ো মাঠ, পারলে আমরা দুজন তখনই বিয়ারের বোতল খুলে বসে পড়ি আর কি।

    বাড়িউলি বয়স্কা, একতলায় থাকেন, আরও কয়েকজন
    ভাড়াটে আছে দুতলায় । তা ঠাকুমার সাথে অথা শুরু হলো, আমি তখনো তামিল প্রায় কিছুই জানিনা, এজেন্টকে ইংরেজিতে বলছি আর উনি তামিলে বলে দিচ্ছেন। এজেন্তকে প্রথমেই বলবালাম বাড়িটা তো আমার খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমি আমার বাবাকে জিগ্যেস না করে কিছু করিনা, কাজেই বাবাকে সব বলে তার পরদিন কনফার্ম করবো। শুনে তো ঠাকুমা টোটাল ইমপ্রেসড। তারপা কাথাঅ হলো আমার স্ত্রী আর মেয়েও চলে আসবে, মানে ফ্যামিলি নিয়ে থাক্বো। তার পর ঠাকুমা জিগ্যেস করেছে, তোমারা ভেজ তো? আমি সটান কনফিডেন্টলি বলে দিয়েছি অবশ্যই আমরা ভেজ, মাছ মাংসের গন্ধেও অস্বস্তি হয়। আমার পাশে শালাবাবু উসখুশ করছে আর আমি ব্যাটাকে পা দিয়ে ঠেলছি। যাই হোক, ঠাকুমা এমন ইমপ্রেস হয়েছিল যে দশ মাসের অ্যাডভান্স না নিয়ে 'মাত্র' ছ মাসের অ্যাডভান্স নিয়ে এগ্রিমেন্ট করে ফেলেছিল।

    তার পর প্রয় পাঁচ বছর সেই বাড়িতে থেকেছি, ঠাকুমা অন্য কেউ ভাড়া নিতে এলে আমাদের দেখিয়ে বলতো, এদের দেখেছো, ইয়ং কাপল অথচ পিওর ভেজ। আর ঠাকুমার ছেলে দুয়েকবার আসতো, তার সাথে মাঝে মাঝে কথা হতো, সে খালি মুচকি মুচকি হাসতো।

    সেই বারান্দায় মাঝে মাঝে বার্বিকিউও করতাম, আর আমরা যেহেতু তিনতলায় থাকতাম আর ঠাকুমা একতলায়, তাই রান্নার গন্ধ কখনো ওনার নাকে যায়নি। অন্য ভাড়াটেরাও জানতো।
  • pi | 174.100.177.10 (*) | ১৭ মে ২০১৭ ১০:১৩59837
  • বাল্টিমোরে ছ'মাস ইরানিয়ান দম্পতির বাড়িতে পিজি ছিলাম। এমনিতে তাঁরা খুবই ভাল ছিলেন, প্রচুর গল্প গুজব করতেন, ইরানী মেসো হেল্থ ইকনমিক্সের লোক ছিলেন, অনেক বই টই লিখতেন, সেই নিয়ে কথা বলতেন, ইরানি মাসিমা স্পেশাল চাইল্ডদের স্কুলে পড়াতেন, তার কত গল্প, দুজনের ছেলেমেয়েদের গল্প, ইরানের গল্প, ইরানের ছবি, আমাকে নিয়ে বাজার করতে যাওয়া, ইন্ডিয়ার গল্প শোনা, এমনকি আমারই গান ইউটিউব থেকে খুঁজে বের করে আমাকে শুনিয়ে অবাক করে দেওয়া, বসে বসে গান শোনা, সব ছিল। খালি যখন আমি রান্না করতাম, আর তেলে পাঁচফোড়ন দিতাম, মেশো একেবারে নাকের জলে চোখের জলে। রাতে রান্না করলেও মুশকিল। চিমনি বেয়ে গন্ধ যেত। তো, বেশিরভাগ সময়েই ওঁরা না থাকলে রান্না করে নিতে হত। এই সমস্যার কথা জানিয়েওছিলেন বলে যথাসম্ভব তাই চেষ্টা করতাম।
    আরো আগে যখন গেছিলাম, আফ্রিকান আমেরিকান মহিলার বাড়িতে পিজি, তখনো তাঁর একই সমস্যা ছিল। রান্না করলে মশলার গন্ধ। আর অন্য ফ্লোরে থাকলে কী হবে, চিমনি বেয়ে সে গন্ধ ঠিক পৌঁছে যেত। তখন ল্যাব থেকে প্রচুর রাত হত ফিরতে, এদিকে ফিরে আর রান্না করার জো নেই !
    তবে এই বলতে মনে পড়ল, ওখানে এই বাড়িওয়ালা ভাড়াটে প্রসঙ্গে উল্টোদিকের বৈষম্য দেখেছিলাম। তখন উডস হোলে ওয়ার্ক্শপে আছি, শেষ হলে হপকিন্সে কাজ। এবার জানি বলতে ইউনি, ল্যাব, প্রফেসর, এসবের কথাই জানি, সেসব নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে আগে। আর খালি জানি জায়গার নাম বাল্টিমোর । ও বাবা, উডস হোলে মেরিন বায়ো ল্যাবে যাকেই বলি এরপর কোথায় যাব, সব দেখি শুনেই বলে বাল্টিমোর ! খুব সাবধান ! তখনো অব্দি এরকম কোন আইডিয়াই ছিল না, যে একেকটা শহরের এরকম বিপজ্জনক বলে এত বদনাম থাকতে পারে। দেশে থাকতে এরকম কখনো কোথাও দেখিনি, আম্রিগার জায়গা জায়গা যে এত কুখ্যাত , সে জানতাম না। পরে তো বাল্টিমোরে গিয়ে দেখি , সে কী কাণ্ড। একেটা রাঅস্তার এদিন দিয়ে হাঁটা চলবে তো ঐ দিক দিয়ে বারণ। হপকিন্সের এপাশের ব্লোক দিয়ে হাঁটা চলবে তো ওপাষের ব্লক দিয়ে মানা। বাড়ির দরজা দিয়ে বেরিয়ী বাঁহাত হাঁটা যাবে তো ডানহাতে না। ইউনির মেইলিং লিস্টে রোজই মেইল, সামনে এই রাস্তায় এই ছিনতাই, এই আটেম্প্ট। একদিন বাড়ির এপাশের রাস্তা দিয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ( এসবের জন্যই সমানে বাসে চড়তে বলত, সে পায়ে হাঁটা দূরত্ব হলেও, বাস এমুলুল সে মুলুক ঘুরে ঘারে অনেক বাদে পৌঁছালে আর তার জন্য সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলে ও মিস হয়ে যাবার রোজের সমস্যা থাকলেও), শুনি তার পিছনের গ্যারাজের কাছেই খুন। সে যা হোক, এমনি জায়গাতেও প্রথম বার গিয়ে রাত একটা দুটোয় একা ফিরেছি। বাস কল করে নেবার ব্যবস্থা করে নিতাম। আমার ওখানকার ল্যাবের লোকজন , প্রফ পরে শুনে হুব্বা হয়ে গেছিলেন, কেউ ওখানে ছটা সাতটার পরে কাজই করতনা। আর দেশে থেকে থেকে আমাদের সারারাত ল্যাবে কাজের অভ্যেস। তো, সে যা বলছিলাম, অত রাতে তখন যে বাড়িতে ফিরতাম , সেই আফ্রিকান আম্রিকান মহিলার বাড়ি নিয়ে। উডস হোলে থাকতে বাল্টিমোরে থাকা কিছু সিনিয়রকে বলে দিয়েছিলাম বাড়ি খুঁজতে। তখন ক্রাইটেরিয়া দুটো ছিল আমার দিক থেকে, উইনির একদম কাছে হতে হবে । আর ভাড়া বেশি না। নইলে ফেলোশিপের টাকা থেকে কুলানো সমস্যা। আর অত আন্দাজও ছিলনা, কেমন কী খরচ হতে পারে। তো সেই সিনিয়র খালি ফোন করে বলে, সুবিধেমত তো মিলছে না। একদিন হঠাৎ মেইল। সব কিছু মিলে গেছে। কিন্তু একটা খুব বড় কিন্তু আছে। লোকেশন আর ভাড়া শুনে আমি তো বুঝছিইনা, কীসের কিন্তু।
    তো, তখন বলে, আমরা গিয়ে তোমার জন্য কথা বলতে গিয়ে দেখি, উনি আফ্রিকান আম্রেইকান। তা, তুমি কি থাকবে ওঁ সাথে ? উনি নিজেই বলেছেন, এজনয় অনেকেই থাকছে না। ভাড়াও সেজনয় কমিয়ে দিয়েছেন। এদিকে উনি কিন্তু হপ্কিন্সেরই এম্প্লয়ী ছিলেন। কোন আডমিনিস্ট্রেশেসন সেকশনে।
    বলা বাহুল্য, থাকব না কেন, আমার দিক থেকে সেটাই বুঝিনি, আর তাতে সিনিয়ররা বাড়ি যোগাড় হতে গেল বলে হাঁপ ছাড়ার থেকেও বেশি বিস্মিত হয়েছিল ! এদের একজন ছিল পঞ্জবি। আর আরেকজন বাঙালি।

    ঃ)

    আমার ঐ বাড়িউলির সাথেও পরে প্রচুর ভাব হয়ে গেছিল, আর ওঁর বন্ধুবান্ধবদেরও। আর উনি আমাকে গল্পো শোনাতেন, এই বাড়ি ভাড়া দিতে বা অন্য নানা কিছুতে কীরকম কী শুনতে হয়েছে ওঁদের।
    অদ্ভুত মুখ করে শুনিয়ে যেতেন।
    বাড়ির সিঁড়ি জুড়ে দেওয়ালে কিছু কিছু ছবি ছিল। রোজা পার্কস থেকে শুরু করে অনেকে। অনেক ঘটনার। ওঁর কাছেই অনেক কিছু শুনি। কয়েক দশক আগে অব্দিও ওঁদের কত কিছুর অধিকার না থাকার গল্প।
    আর এখন , অনেক অধিকার থেকেও, এধরণের গল্প। কালো বাড়িউলির বাড়ির নন-কালো ভাড়াটে না পাবার গল্প তো তাদের মধ্যে একটা মাত্র।
  • de | 24.139.119.172 (*) | ১৭ মে ২০১৭ ১০:৫৭59838
  • আমার জার্মান বাড়িউলি আর তার মেয়ে আবার পুরো উল্টো ছিলো - ভালো রান্না হলেই ওপরে চলে আসতো আর বলতো কি ভালো গন্ধ!! কি রাঁধছো? বলে চেখে টেখে চলে যেতো -
  • Bappaditya | 213.199.154.134 (*) | ২৪ মে ২০১৭ ০৪:২৩59839
  • সুন্দর লেখা । দ্বিতীয় ভাগ থেকে প্রথম ভাগ পড়লাম । একটাই প্রশ্ন - শরীয়ত কিন্তু অনেক মুসলিম পুরোপুরি মেনে চলেন - কিন্তু ২০১৭ সালে এর কি কোনো দরকার আছে? এরথেকে কিন্তু ইউনিফর্ম সিভিল কোড ভালো (ধর্মকে সরিয়ে রেখে করতে হবে)।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২৪ মে ২০১৭ ০৪:৪৭59840
  • চেন্নাই এর বামুনরা পিউর ভেজ, গরু-ছাগলদের মত। তাদের বাড়ি ভাড়া নিতে বেশ ঝামেলা হয়। কিন্তু সৌভাগ্যের কথা হল যে, নন বামুন শিডিউল কাস্ট ওবিসিদের সংখ্যা বেশি, তারা তো আবার ভগবতী পেলেও ছাড়ে না। আমার চেন্নাইয়ের বাড়িভাড়া সমস্যা ওভাবেই মিটে গেছিলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন