এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নারী শক্তি অবহেলার নয়। গল্প নাম্বার ১০২।

    লেখক শংকর হালদার লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০৮ বার পঠিত
  •  গল্প নাম্বার ১০২ 
     
             নারী শক্তি অবহেলার নয়।
                  শ্রেণী :- সামাজিক গল্প।
        লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
     
    ◆ অলোক পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার চেষ্টা করে কিন্তু কয়েক লাখ টাকা ঘুষ না দিলে চাকরি পাওয়া যাবে না। 
     
    ◆ আলোক চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে তার বাবার কাছে বলে :- আমাকে একটি অটো রিক্সা কিনে দাও, চালিয়ে যা আয় রোজগার হবে তাতে আমাদের সংসার চলে যাবে কিন্তু আর কতকাল দিনমজুরি করবে।
     
    ◆ বাবা অচিন্ত্য বলেন :- কিন্তু অটোরিকশা কিনতে হলে কমপক্ষে এক লাখ টাকা দরকার। এই পরিমাণ টাকা আমার কাছে নেই।
     
    ◆ অলক বলে :- তোমাকে টাকা দিতে হবে না কিন্তু তোমার বাড়ির দলিল দিতে হবে। অটো ফাইন্যান্স কোম্পানিতে দলিল জমা দিলে লোনের মাধ্যমে অটোরিকশা পাওয়া যাবে আর প্রতি মাসে কিস্তি দিতে দিতে লোন পরিশোধ হয়ে যাবে। 
     
    ◆ বাবা অচিন্ত্য বলেন :- দেখ ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা।
     
    ◆ কয়েক মাসের মধ্যে অলোক অটো রিক্সা বের করে রাস্তায় চালাতে শুরু করে আর তার অটোরিক্সা এলাকায় দ্বিতীয়, সেই হিসাবে নতুন অটোরিকশায় মানুষ চলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অলোকের প্রতিদিন হাজার থেকে বারোশো টাকা করে আয় হতে থাকে। ১৮ মাসের মধ্যে তার লোন শোধ করে দেয়।
     
    ◆ একদিন সকালে অলোক বাজারের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এলাকার অঞ্চল প্রধান ইব্রাহিম সাহেব তার কাছে এসে বলেন, যাবে নাকি।
     
    ◆ অলোক চালকের আসনে বসে বলে :- উঠে পড়ুন কিন্তু কোথায় যাবেন। বলে অটো চালাতে শুরু করে।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলে :- আমার বাড়ি চেনো।
     
    ◆ অলোক বলে :- শুনেছি ইসলামপুর গ্রামে আপনার বাড়ি কিন্তু কোনদিন আপনার বাড়িতে যাইনি।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলে :- তোমার বাড়ি কোন পাড়ায়।
     
    ◆ অলোক বলে :- মসলন্দপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায়। আর আমার নাম অলোক মন্ডল। আমি আপনার দলের একজন কর্মী ভাবতে পারেন, গত পঞ্চায়েত ভোটে আপনার হয়ে প্রচার করেছিলাম।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলে :- তাহলে তুমি আমাদের দলের লোক। তোমাদের পাড়ার আঞ্চলিক নেতা অভয় কে আমার সাথে দেখা করতে বলো তো।
     
    ◆ অলোক বলে :- ঠিক আছে প্রধান সাহেব; দুপুরে বাড়ি গিয়ে বলে দেব।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলে :- ঐ সামনের বাড়ি গেট দিয়ে ভিতরে উঠানে নিয়ে চলো।
     
    ◆ অলোক অটো দাঁড় করিয়ে জিনিসপত্র নামাতে থাকে, আর সেই মুহূর্তে প্রধানের মেয়ে অটোর কাছে উপস্থিত হয়ে। 
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব পকেট থেকে টাকা বের করে অলোক কে দিয়ে বলে :- আমার মেয়েকে বালিকা বিদ্যালয় নামিয়ে দেবে। শাহনাজ অটো উঠে পর আর ভাড়া আমি দিয়েছি।
     
    ◆ দলের লোক হিসাবে প্রায় ইব্রাহিম সাহেবের এখানে ওখানে যাওয়ার জন্য ডাক পড়ে আবার মাঝে মধ্যে তার মেয়ে শাহনাজ কে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়।
     
    ◆ শাহানাজ একদিন তার বাবাকে বলে :- আমার যখন প্রতিদিনই স্কুলে যেতে হয়, তখন একটা অটো রিজার্ভ করে রাখলেই হয়-তাহলে সময় মত আমাকে ইস্কুলে দিয়ে আসবে আবার নিয়ে আসবে।
     
    ◆ বাবা ইব্রাহিম বলেন :- তাহলে অলোক কে বলে দেয়, ছেলেটা নর্ম ভদ্র আছে। যখন যা বলি তাই ছুটে এসে করতে থাকে কিন্তু টাকা পয়সা কোনদিন চেয়ে নেয় না, যা দেয় তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে চলে যায়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে কল করে আসার জন্য বলে দেয়।
     
    ◆ শাহানাজ বলে :- বাবা; তুমি অঞ্চলের তৃতীয় বারের প্রধান বলে কথা। 
     
    ◆ প্রায় কয়েক মাস ধরে যাতায়াত করার পর একদিন বিকালে বাড়ি ফেরার সময় শাহনাজ বলে :- আপনি যে কয়েকটি অংক আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু সেই সব অংক গুলো পরীক্ষায় এসেছে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আমাকে মিথ্যা কথা বলেছেন। অটোয় চলতে চলতে আপনি যে পড়াশোনার ব্যাপারে আমাকে যেসব সাজেশন গুলো দেন তা অতি মূল্যবান।
     
    ◆ অলোক বলে :- আমি একজন অটোরিকশা চালক এটাই আমার বড় পরিচয়। উচ্চশিক্ষা লাভ করে কোন লাভ হয়নি। লাভের মধ্যে আপনাকে একটু জ্ঞান দেওয়া।
     
    ◆ অটোরিকশা চলছে হঠাৎ শাহানাজ বলে, এই পার্কের সামনে গাড়ি রাখ। তারপর অটো চালকের হাত ধরে টানতে টানতে পার্কের মধ্যে ঢুকে একটি ফাঁকা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমি তোমাকে ভালোবাসি , তুমি আমার ইঙ্গিত গুলো বুঝেও বুঝতে চাও না। 
     
    ◆ অলোক একটু সরে গিয়ে বলে :- না, না, না, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে তা হতে পারে না। 
     
    ◆ অলোকের হাত ধরে শাহনাজ বলে :- কেন হতে পারে না?
     
    অলোক বলে :- ধর্মীয় মতবাদ সমাজের মানুষের কাছে আফিনের মত বিপজ্জনক ধর্মীয় ব্যক্তিগণ । ধর্মীয় মতবাদের কারণে অখন্ড ভারতবর্ষ দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা লাভ হয়। অর্থাৎ দ্বিজাতি বলতে হিন্দু আর মুসলমান।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- তাই বলে হিন্দু ছেলে আর মুসলমান মেয়ের ভালোবাসা হতে পারে না।
     
    ◆ অলোক বলে :- সামাজিক নিয়ম অনুসারে হিন্দু-মুসলিমের মাঝখানে একটি উঁচু দেওয়াল দেওয়া রয়েছে, সেই দেওয়াল ভাঙতে যাওয়া মানে জীবনের চরম ঝুঁকি নেওয়া। আমি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারব না।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমি সেই দেওয়াল ভেঙে দেবো।
     
    ◆ অলোক বলে :- আপনি নিজে বিপদে পড়বেন আর আমাকে বিপদে ফেলবে। আপনি চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। আমার ভালবাসার কথা একদম ভালো লাগে না। 
     
    ◆ শাহনাজ গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে শহরের কলেজে ভর্তি হয় কিন্তু অলোক কে তার সকাল বেলা বাড়ি থেকে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আবার বিকেলে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাড়ি পর্যন্ত যাতায়াত করতে হয়। তার বিনিময়ে প্রতি মাসে প্রধান সাহেব দুই হাজার টাকা করে দেয়। আবার মাঝেমধ্যে কুড়ি কিলোমিটার দূরে কলেজে দিয়ে আসতে হয়।
     
    ◆ শাহনাজের বিএ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অলোক কে আবার তার মনের কথা জানায় কিন্তু অলোক তার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর প্রধান সাহেব কোন কাজে অলোক কে ডাকলেও কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যেতে থাকে, আর শাহানাজের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয়। শাহনাজ ফোন করলে ব্যস্ত দেখিয়ে কেটে দেয়। শাহনাজ তার মায়ের কাছে অলোকের একতরফা ভালোবাসার কথা জানায়। 
     
    ◆ বাবা ইব্রাহিম সাহেব একদিন তার মেয়েকে একান্ত দেখে বলে :- তোমার মার কাছ থেকে তোমার বিষয়ে যা শুনলাম তা মেনে নেওয়া কোন প্রকার সম্ভব না। এখন বুঝতে পারলাম ছেলেটা তোর কারণে আমার ডাকে আর সাড়া দিচ্ছে না। ছেলেটার পিছনে লেগে না থেকে পড়াশোনায় মন দে আর ছেলেটার ভবিষ্যৎ নষ্ট করিস না। 
     
    ভালোবাসার টানে কে শুনে ধর্মের কাহিনী। রক্তের জোরে সব কিছু জয় করতে চাই কিন্তু ভবিষ্যৎ কি হবে সে চিন্তা কখনো আসে না মনে। অতি সুন্দর আগুনের ফুল আমার চাই চাই, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে দগ্ধ হওয়ার ভয় মনে তখন আসে না।
     
     শাহানাজ এক রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা মাঠের জমির আল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অলোকের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে রাত আটটার সময় অলোক বলে ডাকতে থাকে।
     
    ◆ অলোক ঘরের বাইরে এসে চমকিত হয়ে বলে :- এই রাতে তুমি এখানে। 
     
    ◆ অলোকের বাবা মা বাইরে বেরিয়ে যুবতী মেয়ে কে দেখে ভয়ে আতঙ্কে তার ছেলেকে প্রশ্ন করে, এই মেয়ের সাথে সম্পর্ক কি! এত রাতে আমাদের বাড়ি, কেন এসেছে?
     
    ◆ অলোকের মায়ের কাছে গিয়ে শাহনাজ বলে :- আমি; আপনার ছেলেকে ভালবাসি কিন্তু সমাজ ব্যবস্থা তো আমাদের ভালোবাসা কে মেনে নেবে না, তাই স্বামীর কাছে তার বাড়িতে চলে এলাম। 
     
    ◆ অলোকের বাবা অচিন্ত্য বলেন :- তোমার বাবার নাম কি?
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমার বাবার নাম ইব্রাহিম শেখ অঞ্চল প্রধান। আমার নাম শাহনাজ।
     
    ◆ অলোকের বাবা অচিন্ত্য মাথায় হাত দিয়ে বলেন :- সর্বনাশ করেছে, সর্বনাশ করেছে, অঞ্চল প্রধানের মেয়ে। হিন্দু আর মুসলমানের দাঙ্গা বেঁধে যাবে। না না আমি তোমার ভালোবাসা কে মানতে পারলাম না, এখনই তোমার বাবার কাছে আমি নিয়ে যাব।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- বাবার কাছে নিয়ে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে।
     
    ◆ অলোকের মা বলেন :- বাবার প্রতি ও সমাজের প্রতি যখন এতই ভয় তাহলে ভালোবাসা দরকার কি ছিল।
    আমার সরল সোজা ছেলে কে তুই প্রতারণা করে ভালোবাসার নাটক করছিস। এ ধরনের সম্পর্ক কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমাকে বাবার কাছে নিয়ে গেলে সত্যি সত্যি কিন্তু আমি আত্মহত্যা করব।
     
    ◆ অলোকের বাবা অচিন্ত্য উত্তেজিত হয়ে বলেন :- তোমার বাবার কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসি তারপর তুমি আত্মহত্যা করবে, না বেঁচে থাকবে সেটা তোমার ব্যাপার। তোমাদের কারণে দাঙ্গা বেঁধে গেলে কত মানুষের প্রাণ যাবে সেটা একবার ভেবে দেখেছো।
     
    ◆ অলোকের উদ্দেশ্যে করে শাহনাজ বলে :- তোমার উদ্দেশ্যে করে এই বাড়িতে আসা কিন্তু তুমি তো কিছু বলো।
     
    ◆ অলোকের মা বলেন :- তুমি যে কান্ড ঘটিয়েছো, তাতে ওর আর কিছু বলার মুখ নেই। 
     
    ◆ অলোক বলে :- তুমি তোমার বাবার কাছে ফিরে যাও। তারপর সামাজিকভাবে কি করা যায় দেখা যাবে।
     
    ◆ অলোকের মা জোর করে শাহনাজকে অটোরিকশায় উঠায় আর অলোক কে গাড়ি চালাতে বলে।
     
    ◆ অঞ্চল প্রধানের বাড়ি উপস্থিত হয়ে অচিন্ত্য বাবু প্রধান প্রধান বলে ডাকতে থাকে।
     
    ◆ প্রধান ঘরের বাইরে আসতেই অচিন্ত্য মন্ডল বলে :- আপনার মেয়েকে নিয়ে এসেছি কিন্তু একটা মেয়েকে নজরে রাখতে পারেন না। একতরফা ভালোবাসা কখনো হয় না।
     
    ◆ প্রধান সাহেব ও তার স্ত্রী দ্রুত বেগে অটো রিক্সার কাছে আসে, আর তার মেয়েকে বলে :- এই অঘটন ঘটানোর আগে তোর ভাবা উচিত ছিল আমার মান সম্মান একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলি।
     
    ◆ অলোকের বাবা অচিন্ত্য বলেন :- আপনার মেয়েকে রেখে গেলাম আর কোনদিন যেন আমাদের বাড়িতে না আসে। আপনার মেয়ে শান্তিতে আর বাস করতে দেবে না মনে হচ্ছে। 
     
    ◆ শাহনাজের মা তার মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে আর শাহনাজ বলে, অলোক আমার স্বামী আর তাকে বিয়ে করতে চায়। ও আমাকে নিশ্চয়ই ভালবাসে কিন্তু ধর্মীয় মেরু করণের কারণে ও সমাজের চাপে কিছু বলতে পারছে না।
     
    ◆ প্রধান ইব্রাহিম শেখ বলেন :- এ কখনোই সম্ভব নয়।
     
    ◆ শাহনাজের মা বলে :- মুসলিম সমাজে কি ছেলের অভাব পড়েছে? তার জন্য হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করতে হবে। ইসলাম বিরোধী কাজ এইসব ভালোবাসা আমি মানি না।
     
    ◆ পাড়া-প্রতিবেশীরা একে একে জড়ো হয়ে তাদের তামাশা দেখছে আর সমালোচনার ঝড় তুলেছে। একজন বলেই ফেলে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকায় বাস করে হিন্দুদের এত সাহস পায় কি?
     
    ◆ শাহনাজ অটোরিকশা থেকে নেমে অলোকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে :- আমাকে এখানে রেখে গেলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করব।
     
    ◆ একজন বয়স্ক লোক প্রধানের সামনে গিয়ে বলে :- হিন্দু পাড়ার ভোটাভুটিতে কিন্তু আমাদের জিত হয়। আপনার মেয়ে যখন আপনার কাছে থাকতে রাজি নয় তখন ওর ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিন। কলিযুগে এত হয়ে চলেছে, কত হিন্দুর মেয়ে মুসলমানের ঘরে বউ হয়ে 
    রয়েছে।
     
    ◆ প্রধান ইব্রাহিম শেখ বলেন :- চাচা আপনি বয়স্ক লোক হয়ে কে কি বলছেন! যদি গন্ডগোল হয় তাহলে ঠেকাতে পারবেন তো।
     
    ◆ বয়স্ক আব্দুল করিম চাচা বলেন :- সব সময় ধর্মীয় নিরীকরণে চললে রাজনৈতিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। মোল্লা আর ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর কোন সমস্যা নেই। মুর্শিদাবাদ জেলার দুর্বল হিন্দুরা কেউ মারামারি করতে আসবে না। তোমার মেয়ে কিন্তু প্রথম কোন হিন্দুর ঘরে যাচ্ছে না, এর আগেও বহু এরকম এলাকায় ঘটেছে। 
     
    ◆ প্রধান ইব্রাহিম শেখ বলেন :- আপনি যাই বলুন, আমি এদের সম্পর্কে কি মেনে নিতে পারছি না।
     
    ◆ বয়স্ক আব্দুল করিম চাচা বলেন :- গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, তোমার মেয়ে যদি সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করে তাহলে তোমার ক্ষতি হবে কিন্তু দুই ধর্মীয় সমাজের কিছুই হবে না।
     
    ◆ প্রধান ইব্রাহিম শেখ তার মেয়ের হাত ধরে বলেন :- মা; তাহলে আমার কথা শুনবে না।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমি অলোক কে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করে সংসার করতে চাই।
     
    ◆ অচিন্ত্য মন্ডলের দিকে তাকিয়ে প্রধান ইব্রাহিম শেখ বলেন :- তাহলে আমার আর কিছু করার নেই, আমার মেয়েকে আপনারা নিয়ে যান। মেয়ের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আপনাদের কাউকে ছাড়বো না।
     
    ◆ শাহানাজ ঝটপট অটো রিকশায় উঠে বলে :- চলো আমাদের বাড়িতে যায়। শাশুড়ি মা ঝটপট উঠে পড়ুন তো।
     
    ◆ অলোক তার হবু শ্বশুরমশাইয়ের সামনে গিয়ে হাত জোড় করে বলে :- দয়া করে শাহানাজের জন্ম সার্টিফিকেট আর আধার কার্ড আমাকে দেবেন।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, আমি সব কাগজপত্র ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে নিয়েছি।
     
    ◆ অলোক অটোরিকশা নিয়ে সোজা থানায় উপস্থিত হয়, আর তার বাবা বলে কি ব্যাপার থানায় নিয়ে এলি?
     
    ◆ অলোক তার বাবা কে বলে :- বাড়িতে গিয়ে আমার জন্ম সার্টিফিকেট, আধার কার্ড সহ পরিচয় পত্র কার্ড নিয়ে আসো। বিপদ থেকে বাঁচতে হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। বলে এক প্রতিবেশীর যুবকের হাতে অটো রিক্সার চাবি দেয়।
     
     ◆ কিছুক্ষণ থানা চত্বরে দুজনে চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে। অলোকের বাবা ফিরে আসার উভয়ের জন্ম সার্টিফিকেট সহ বিভিন্ন কাগজ নিয়ে অলোক ও শাহানাজ থানার মধ্যে ঢুকে বড়বাবুর দরজায় দাঁড়ায়, তার অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকে তাদের ভালোবাসার বিস্তারিত ঘটনা জানায়।
     
    ◆ থানার বড়বাবু বলেন :- বিষয়টি তো ভীষণ জটিল তারপর আবার অঞ্চল প্রধানের মেয়ে। 
     
    ◆ অলোক বলে :- আমরা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক সেই হিসাবে আইন ও আদালতের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করতে চাই। তাহলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর কেউ কোন চেষ্টা করবে না। 
     
    ◆ দারোগাবাবু বলেন :- আমি অভয় চরন রায়। হিন্দু হয়ে হিন্দুদের নিরাপত্তা তো অবশ্যই দিতে হবে। তুমি আইনের বিষয় নিয়ে কোন চিন্তা করো না। অঞ্চল প্রধান কে ফোন করে ডেকে নিচ্ছি তারপর কি করা যায় দেখছি। তোমরা ততক্ষণ বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব থানায় ঢুকতেই তার মেয়েকে একবার দেখে সোজা বড় বাবুর টেবিলে গিয়ে বসে।
     
    ◆ বড়বাবু অভয়চরণ রায় বলেন :- আপনার মেয়ের বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন?
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলেন :- আমি চাই এলাকায় শান্তি বজায় থাক আর মেয়ে তার স্বামী পছন্দ করে নিয়েছে, আমার আর কিছুই করার বা বলার নেই। ছেলেটা বুদ্ধিমান আছে, আইনের আশ্রয় নেবে তা আমি কিন্তু কখনোই কল্পনা করিনি।
     
    ◆ বড়বাবু অভয়চরণ রায় বলেন :- এলাকায় শান্তি রাখতে চান, তাহলে অনুরোধ করব-আগামীকাল দশটার সময় আদালতে হাজির হয়ে তাদের বিয়ের অনুমতি দেবেন।  
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলেন :- আমি রাজি আছি।
     
    ◆ সাহানাজ ও অলক কে ডেকে বড়বাবু বলেন :- আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামীকাল তোমাদের দুজনকেই আদালতের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হবে। এই রাতে তোমাদের যার যার বাড়িতে চলে যেতে হবে।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- আমি বাবার বাড়ি ফিরে যাব না।
     
    ◆ বড়বাবু বলে :- তাহলে সারারাত থানার প্রাঙ্গণ কাটিয়ে দিতে হবে। কারণ বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু তোমাকে অলোকের বাড়িতে রাখা নিরাপদ হবে না।
     
    ◆ শাহনাজ বলে :- অলোকের সাথে আমি থানার মধ্যেই থাকবো।
     
    ◆ বড়বাবু একজন পুলিশকে বলেন :- এই দুজনকে হাজতখানার এক কামরায় রেখে দাও, সারারাত মশার কামড়ের জ্বালা বুঝুক। 
     
    ◆ শাহনাজ ও অলোক দুজনে পুলিশের পিছনে চলতে থাকে।
     
    ◆ শাহানাজ ও অলোকের বাবার ডেকে বড়বাবু বলেন :- আগামীকাল সকাল দশটার সময় আপনাদের কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হবেন। 
     
    ◆ যথাসময়ে উভয় পক্ষের অভিভাবক গন আদালতে উপস্থিত হয়ে উকিল বাবুর মাধ্যমে শাহানাজ ও অলোকের বিয়ের অনুমতি লিখিতভাবে দেন।
     
    ◆ শাহানাজ এফিডেভিট মাধ্যমে স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে তার নতুন নাম সাবিত্রী মন্ডল রাখা হয়। তারপর ভারতীয় সংবিধান অনুসারে হিন্দু ধর্মের মেরুকরণে তাদের বিবাহ হয়। সাবিত্রী হাতে শাঁখা, পলা, লোহা, সিঁথিতে সিঁদুর আর কপালে সিঁদুরের বড় বিন্দু পড়ে একজন আদর্শ হিন্দু রমণী হয়ে উঠে।
     
    ◆ হিন্দু সমাজ তাকে প্রথমে অবহেলা করলেও কিন্তু তার বুদ্ধির কাছে সবাই হার মানতে বাধ্য হয়। গৃহবধু হিসেবে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে পাড়ার মহিলাদের নিয়ে সংগঠিত করে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে কুটির শিল্প কাজের মাধ্যমে টাকা আয় করে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলে। পঞ্চায়েত অফিস থেকে শুরু করে ভিডিও থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকায় উন্নয়নের চেষ্টা করে। কিন্তু এদের অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে কিছু লোক হিংসা করতে শুরু করে।
     
    ◆ সাবিত্রী ও অলোকের দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে কয়েক মাস কাঁটার পর শশুর ইব্রাহিমের আহবানে ঈদের নেমন্তন্ন রক্ষা করতে স্বামী-স্ত্রী উপস্থিত হয়। শাহনাজের বড়দি ও তার স্বামী মিলিত হয়ে অলোক কে কাফের হিন্দু, ছোটলোক ইত্যাদি বলে বিভিন্নভাবে চরমভাবে দুজনকে অপমান করে কিন্তু কেউ ছাড়ার পাত্র নয় উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক লেগে যায়।
     
    ◆ অলোক উত্তেজিত হয়ে তার বউয়ের হাত ধরে বলে :- এই অপমান হওয়ার থেকে বাড়ি গিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া অনেক ভালো। এই নাকি ‘ইসলাম শান্তি ধর্ম’ ঈদের দিনেও গন্ডগোল মারামারি, না করলেই নয়। অন্যের ধর্মকে যে ভালো যে ভালবাসতে পারে না, সেই ব্যক্তি ধর্ম জ্ঞান কোথায়?
     
    ◆ শশুর ইব্রাহিম শেখ তার জামাই অলোকের পথ অবরোধ করে বলে :- বাবা; না খেয়ে চলে যেও না।
     
    ◆ অলোক বলে :- দেখুন বাবা; আপনি সম্পর্ক রাখতে চাইলে কি হয়! আপনার আত্মীয়-স্বজন তা কখনোই মেনে নেবে না। আমি ও আপনার মেয়ে ইসলাম বিরোধী কাজ করে কাফের উপাধি হয়েছে, আশা করি কাফেরের সাথে সম্পর্ক না রাখা ভালো। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনোই আমাকে ডাকবেন না। আপনার কোন সাহায্যের দরকার হলে বলবেন, আমি দূর থেকে করার চেষ্টা করব।
     
    ◆ এই ভাবে আরো কয়েকমাস অতিবাহিত হয়ে যায়। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার একদিন পর অলোক কে রক্তাক্ত অবস্থায় একজন প্রতিবেশী ভ্যানে করে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। সাবিত্রী তার শ্বশুর শাশুড়ি ছুটে এসে অলোক কে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 
     
    ◆ অলক পাড়ায় এসে তার দুর্ঘটনার কথা প্রতিবেশীদের জানাই আর প্রতিবেশীরা উত্তেজিত হয়ে অঞ্চল প্রধানের বাড়িতে উপস্থিত হয়।
     
    ইব্রাহিম সাহেব বাড়ির বাইরে বেরিয়ে বলে :- এত রাতে আপনারা সবাই কি হয়েছে?
     
    ◆ অচিন্ত্য মন্ডল তার ছেলে দেখিয়ে উত্তেজিত ভাবে বলেন :- আমার ছেলেকে গুন্ডা লাগিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আমাদের আয়- রোজগারের একমাত্র অটোরিকশা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে শান্তি লাভ হয়েছে। 
    আপনার ভাগ্য ভালো, আপনার মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারিনি।
     
    ◆ সাবিত্রী অর্থাৎ শাহনাজ উত্তেজিত হয়ে তার বাবাকে বলে :- বাবা ; তোমার মেয়েকে বিধবা বানাতে আমার স্বামীর উপর আক্রমণ, এরকম কাজ করতে পারলে বাবা। একজন মেয়ের বিয়ে একবারই হয়। তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে বলে, মা; বাবার এ কেমন বিচার।
     
    ◆ শাহনাজের নাম তার জামাইয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলে :- এরকম জঘন্যতম কাজ করতে পারলে তুমি, আমি জানতাম তুমি একজন ধার্মিক স্বচ্ছ রাজনৈতিক নেতা কিন্তু তুমি জামাইকে নিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতেছে। আমার মেয়ে জামাইয়ের কিছু হলে তোমাকে আমি ছাড়বো না।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলে :- এ বিষয়ে আমি তো কিছুই জানিনা আর আমি তো কিছুই করিনি।
     
    ◆ জামাই অলোক বলে :- দুষ্কৃতীরা আপনার নামই করেছে।
     
    ◆ ইব্রাহিম সাহেব বলেন :- আপনারা চিৎকার চেঁচামেচি না করে এখানে শান্তভাবে একটু বসুন , আর বিষয়টা আমাকে একটু ভাবতে দিন। ভোটের সময় হয়তো আমার বিরোধী পক্ষের কেউ সন্ত্রাস চালিয়েছে। তারপর মোবাইল নিয়ে থানায় ঘটনা জানিয়ে বলে, কয়েক জন পুলিশ আমার বাড়িতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি।
     
    ◆ কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশ গাড়ি উপস্থিত হয়ে অলোক কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। 
     
    ◆ অলোক বলে :- সন্ধ্যার পর নিরালা বাজার থেকে দুজন প্যাসেঞ্জার বলে, আমাদেরকে প্রধানের বাড়ি নিয়ে যেতে হবে, বলে গাড়িতে উঠে বসে। ঘোষপুকুর বাগানের কাছে আসতে প্যাসেঞ্জার বলে, বাথরুম করবো গাড়ি দাঁড় করাও। গাড়ি দাঁড়াতে আশপাশ থেকে ঝপাঝপ করে ১০-১২ জন লাঠি নিয়ে ছুটে আসে আর আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারতে শুরু করে। মারতে মারতে বলে হিন্দু হয়ে মুসলিম প্রধানের মেয়ের বিয়ে করার শখ আজ থেকে মিটিয়ে দেবো। তোর মেরে ফেলার জন্য প্রধান আমাদের পাঠিয়েছে। অন্যদিকে অটোরিকশা পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারপর একটা ভ্যানের আওয়াজ পেয়ে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়।
     
    ◆ পুলিশ অফিসার বলে :- আপনি কি কাউকে চিনতে পেরেছেন?
     
    ◆ অলোক বলে :- সবার মুখ বাধা ছিল আমি কাউকে চিনতে পারিনি।
     
    ◆ পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে কয়েকজন পুলিশকে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পোড়া গাড়ি দেখতে পায় আর জনগণ জল ঢেলে আগুন নিভিয়ে দিয়েছে।
     
    ◆ শাহানাজ দ্রুত বেগে দারোগাবাবুর সামনে গিয়ে মোবাইল কল দেখিয়ে বলে :- আমার বড়দি পারভিন ফোন করে কটাক্ষ করে আমাকে বলে, তোর বরের মেরে মেরে হাড়গোড় ভেঙে দিয়েছে। তাহলে আমার মনে হচ্ছে এই সন্ত্রাসের দলে আমার দিদি আর জামাইবাবু আছে। তাদের সাথে আমাদের গত ঈদের দিন এই বাড়িতে ঝামেলা হয়েছিল। আমার স্বামী বাড়িতে আসার আগে সংবাদ জানলো কি করে?
    আমি সেই মুহূর্তে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হচ্ছি আর আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় ভ্যানের উপর শুয়ে দেখতে পায়।
     
    ◆ দারোগাবাবু প্রধানের উদ্দেশ্য করে বলেন :- আপনার বড় জামাই আর মেয়েকে অতিসত্বর আপনার বাড়িতে নিয়ে আসুন।
     
    ◆ শাহনাজ দ্রুত লোকজনের মধ্যে দিয়ে পাগলের ন্যায় দৌড়াতে দৌড়াতে গেটের কাছে এসে এক ব্যক্তির হাত চেপে ধরে দারোগাবাবুর সামনে নিয়ে এসে বলে :- এই ব্যক্তি মোবাইল চেক করুন। জামাইবাবুর কথা যখনই উঠলো সেই মুহূর্তে এই ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে বাইরে চলে আসলে কেন।
     
    ◆ দারোগাবাবু উক্ত ব্যক্তির হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ডায়াল কল দেখে বলে শেষ ৪ অংক হচ্ছে 8562
     
    ◆ শাহনাজ লাফিয়ে উঠে বলে :- এটাই তো বড় জামাইবাবুর নাম্বার, স্যার একে জিজ্ঞাসাবাদ করুন তাহলে সন্ত্রাসী ব্যক্তিরা ধরা পড়ে যাবে।
     
    ◆ সেই মুহূর্তে আবার ফোন বেজে ওঠে আর দারোগাবাবু উক্ত ব্যক্তি হাতে দিয়ে বলে কথা বল।
     অপর প্রান্ত থেকে বলে, কাজটা সাকসেসফুল হয়েছে তো, অলোক বেঁচে আছে না মরে গেছে। দারোগাবাবু ফোনটা নিয়ে কেটে দিয়ে একজন পুলিশকে বলে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান।
     
    ◆ বড়বাবু প্রধানের দিকে তাকিয়ে বলেন :- আমাদের গাড়িতে উঠুন, আপনার জামাই বাড়ি যেতে হবে।
     
    ◆ একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেন :- এবার তো বুঝতে পারছেন আমাদের প্রধান সাহেবের কোন দোষ নেই। বিরোধী দলের লোকজনের সাথে তার বড় জামাই হাত মিলিয়ে ধর্মীয় হিংসায় এই কাজ করেছে। রাত অধিক হয়েছে আপনারা এখন বাড়িতে চলে যান। আশা করি আগামী কালের মধ্যেই দোষীদের পুলিশ গ্রেফতার করবে।
     
    ◆ শাহনাজের মা তার মেয়ের কাছে এসে বলে :- তোর বাবার কোন দোষ নেই, তিনি এমন কাজ করতে পারেন। তুই ধর্ম পরিবর্তন করলেও কিন্তু আমি তো পেটে ধরেছি, সেই জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে বেশি। জামাইকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে সেবা সুস্থতা কর আর কিছু দরকার হলে আমাকে বলিস মা।
     
    ◆ শাহনাজ তার শশুর বাড়ি পাড়ার লোকজনের উদ্দেশ্য করে বলে :- চলুন সবাই বাড়ির দিকে যাওয়া যাক।
     
    ◆ কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ প্রধানের বড় জামাই ও মেয়েকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
    পুলিশের জেলায় তারা স্বীকার করে অলোককে মারার জন্য কন্টাক্ট দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ দ্রুত তাদের দোষীদের নাম ঠিকানা জেনে গ্রেফতার করে।
     
    ◆ কয়েকদিন পর এক বিকালে পাড়ার কিছু বয়স্ক ব্যক্তি, যুবক ছেলেরা ও মহিলা একত্রিত হয়ে অলোকের বাড়িতে উপস্থিত হয়।
     
    ◆ অলোক সবাইকে বসতে দিয়ে বলে :- আমাদের আগমনের কারণ কি বলুন? 
     
    ◆ অখিল নামক এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন :- আমাদের বর্তমান শাসক দলের পক্ষ থেকে সাবিত্রী বৌমাকে এবার পঞ্চায়েত ভোটের মেম্বারে দাঁড় করাবো।
     
    ◆ অচিন্ত্য মন্ডল বলে :- তা কি করে সম্ভব হবে! বৌমা অল্প বয়সে রাজনীতি কি বোঝে?
     
    ◆ মাধব নামে এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন :- এলাকায় হিন্দুদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই। সাবিত্রীকে দাঁড় করালে হিন্দু-মুসলিম দুই দিকের ভোট আমরা পাব।
    আমাদের ৪০০ হিন্দু ভোটের মাধ্যমে মেম্বার হয়। বৌমার মধ্যে যে তাৎক্ষণিক বুদ্ধি আছে, গ্যারান্টি বৌমা পাস করবে। দেখলে তো কিভাবে সন্ত্রাসীদের ধরে ফেলল। আর এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে বৌমার যথেষ্ট সুনাম আছে।
     
    ◆ যুবক ছেলেরা বলে :- আমরা আমাদের প্রার্থী সাবিত্রী মন্ডলের হয়ে প্রচার করব আর টাকা পয়সা যা লাগে গ্রামে থেকে চাঁদা তোলা হবে। মুসলিম এলাকায়ও কথা বলেছি তারাও রাজি আছি।
     
    ◆ মহিলা গন বলেন :- আমাদের প্রার্থী সাবিত্রী মন্ডলের হয়ে আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করবো। মহিলারাও অনেক কিছু করে দেখাতে পারে তা আমরা এবার দেখিয়ে দেবো।
     
    দীনবন্ধু বিশ্বাস বলে :- আমাদের পার্টি ফান্ডে থেকে ভোট প্রচারের কাজে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক দুই জায়গা থেকে প্রচারের কাগজপত্র ব্যানার এগুলো আসবে।
     
    মধুসূদন কর্মকার বলেন :- মেম্বার হলে পাঁচ বছরের জন্য প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা বেতন আছে। প্রধান হতে পারলে আরো বেশি টাকা বেতন পাওয়া যাবে।
     
    ◆ সাবিত্রী বলে :- আমাকে একদিন সময় দিন, পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো।
     
    ◆ পরের দিন সাবিত্রী তার বাবাকে ফোনে জনগণের দাবির কথা জানায়, তার বাবা বলে- ঠিক আছে তুই দাঁড়িয়ে পড়, আমি তো তোর পাশের বুথ থেকে লড়াই করব। আমার সব রকম সহযোগিতা সব সময় পাবে। 
     
    ◆ সাবিত্রী ১৮৭ নাম্বার তার বাবা ১৮৬ নম্বর বুথ থেকে মেম্বারের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়। পাড়ার মহিলারা তাদের প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচার করতে থাকে।
    ভোটের দিন মহিলা বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রাখে।
     
    ◆ ভোট গণনায় সাবিত্রী মন্ডল বিজয়ী হয় তার বাবা ইব্রাহিম শেখ ১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। অঞ্চল গঠনের দিন ২৮ জন মেম্বার এর মধ্যে ১৫ জন মেম্বার মহিলা। অঞ্চল প্রধানের জন্য মৌখিক সমর্থনে সাবিত্রী বিজয়ী হয়ে প্রধানের আসন অলংকিত করে। 
     
    ◆ প্রাক্তন প্রধান ইব্রাহিম শেখ তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে :- আমি মেম্বার পদে হেরে গিয়েও কিন্তু জিতে গিয়েছি কারণ আমার মেয়ে আমার জায়গায় বসেছে।
    তোর মধ্যে এত প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে তা আগে কখনো লক্ষ্য করিনি।
     
    ◆ সাবিত্রী তার বাবাকে বলে :- প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তার শক্তি লুকিয়ে রয়েছে কিন্তু সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে সবকিছু করতে হয় বাবা, আমি তো কোনদিন ভাবিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হব। 
     
    ◆ সাবিত্রী তার দাম্পত্য জীবনে স্বামী ও একটা ছেলে সহ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সুখের সংসারের পাশাপাশি অঞ্চল প্রধান হয়ে জনগণের সেবা করে চলেছে। শিশু সন্তানের দায়িত্ব তার শাশুড়ির উপরে পড়েছে। 
    অলোক কখনো অটো রিকশায় আবার কখনো মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সাবিত্রী কে চড়িয়ে অঞ্চলের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। পাড়ার বৌদিরা আড্ডা করে বলে, বউ পাগলা অলোক।
     
    অলোক তার বৌদিদের আড্ডা করে বলে:-
     
    অনেক সাধনার পরে পেয়েছি বউ
    তাকে ছেড়ে কখনো থাকা যায়।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ◆ রচনাকাল :- ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ।
    ◆ উমরালা মণিকুন্ড আশ্রমে থাকাকালীন সময়ে। উমরালা, কোর্ট বন, কোশি কলা, বৃন্দাবন, মথুরা,
     উত্তর প্রদেশ , ভারত।
     
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন