এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • স্বাধীনতা, রাজনীতি, সং-এর গঠন, পিওর কটন, ইত্যাদি - স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ বিষয়ক কিছু চিন্তা (২)

    Anamitra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ আগস্ট ২০১৮ | ১৮১৩ বার পঠিত
  • স্বাধীনতা, রাজনীতি, সং-এর গঠন, পিওর কটন, ইত্যাদি - স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ বিষয়ক কিছু চিন্তা (২)

    এই লেখার উদ্রেক-এর কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে। উদ্রেকই বলবো, কারণ নিতান্তই উদ্রেক না হলে লিখতাম না। লেখার সময় বিশেষ নেই এই মুহূর্তে হাতে। কিন্তু এই লেখাটা লেখা গত দুদিনে খুবই জরুরী হয়ে উঠেছে। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে এই লেখা একাধারে একজন ব্যক্তিমানুষের এবং অপরদিকে একজন সংগঠকেরও বটে। ফলতঃ কিছু কথা আসবে ব্যক্তিমানুষের তরফে এবং কিছু কথা সংগঠকের দিক থেকে। আশা করি পাঠক এই দু'ধরণের মন্তব্যের কোনটি কার দিক থেকে এলো বুঝে উঠতে সক্ষম হবেন। নাহলে একজনের মন্তব্যের দায় অন্যজনকে নিতে হবে এবং সেক্ষেত্রে গন্ডগোল পেকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। যথেষ্ট গন্ডগোল ইতিমধ্যেই রয়েছে। এর বেশি আর চাইছিনা আপাতত একেকবারেই।

    ঘটনার সূত্রপাত ২৩ তারিখ রাত্রে। ওইদিন IFC একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বিকেলের দিকে। উক্ত অনুষ্ঠানে শ্রী আলোক মাইতি-র (সাধারণ পাঠকের জন্য নোট: "রেইনবো জেলী" খ্যাত) সিনেমাটোগ্রাফি বিষয়ক একটি টক সেশন এবং চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এই চারটি শর্ট ফিল্ম যথাক্রমে বাঁশি (পরি: কৌশিক সেনগুপ্ত), লেট দেয়ার বি লাইট (পরি: সোম চক্রবর্তী), বাস্তুর খোঁজে (পরি: পূর্ণেন্দু দে) এবং সপনো সে ভরে গুল্লক (পরি: পাভেল ঘোষ)। IFC-র তরফে আয়োজনগত কিছু ত্রুটি-র জন্য অনুষ্ঠানের আগের দিন নির্ধারিত সময় পিছিয়ে দিতে হয় আধঘন্টা এবং ২৩ তারিখ কার্যক্রম শুরু হয় সেই পিছিয়ে দেওয়া সময়েরও আধঘন্টা পরে। কেন এরকম হলো সে প্রসঙ্গে পরে আসবো। আগে মূল বিষয়টি আলোচনা করে নেওয়া যাক। উক্ত অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন শ্রী সায়ন্তন দত্ত, 'আফটার আসিফা' ছবিটির পরিচালক। ওইদিন রাত্রে তিনি অনুষ্ঠানটির ভালোমন্দ বিষয়ে কিছু মতামত ব্যক্ত করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরেরটুকু এই মুহূর্তে ইতিহাস; হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু হয়ে গেছে । লেখার পরবর্তী অংশে যাওয়ার আগে সায়ন্তনের মতামতটি তুলে ধরার প্রয়োজন বোধ করছি ---

    " Independent Film Council - স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদকে,

    স্বাধীন শব্দটার একধরণের মাধুর্য্য আছে। মাধুর্য্য না বলে রোম্যান্টিসিজম বলাও ভালো। ফুরফুরে বাতাসের মত স্বাধীনতা, কারও ক্ষতি না করে যা ইচ্ছে করা, বেপরোয়া হওয়ার স্বাধীনতা। মুখের উপর না উচ্চারণ করার স্বাধীনতা, অথবা সকলের সামনে প্রিয়কে কাছে টেনে নেওয়ার স্বাধীনতা। স্বাধীন শব্দটা, চরিত্রগত ভাবেই রোম্যান্টিক নানান ভাবনা উসকে দেয়, যা যাপনের আর পাঁচটা ক্ষেত্রে ভাবতে কেমন একটা লাগে। যে কারণে সেমিনারের বদলে আড্ডা স্বাধীন, যে কারণে ক্লাসরুমের বদলে ক্যান্টিন স্বাধীন, ঠিক সেই কারনেই স্বাধীন শব্দের সাথে জুড়ে থাকা ফুরফুরে বাতাসের মত স্পর্ধা ঠিক করে দেয়, আড্ডাক্ষেত্রে সেমিনারের পলিটিকাল কারেক্টনেস থাকবে না। রাগে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে হলে পেপারের তথ্যে তা বোঝাতে হবে না।

    স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ যখন গড়ে ওঠে, তখন আমাদের মত এই স্বপ্ন দেখা ফিল্মমেকাররা ভরসা পেয়েছিলাম, কোথাও গিয়ে স্বাধীন শব্দটির মান রাখবে সে, ছোট ছবির নির্বাচন থেকে প্রদর্শনে, স্পষ্ট থাকবে স্পর্ধার ইঙ্গিত। প্রায় মাসতিনেক ধরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম কাউন্সিলের নানান ইভেন্টের খোঁজ পাচ্ছিলাম, যাওয়া হয়নি নানান ব্যস্ততার কারণে। আজকে, প্রথম সেই কর্মযজ্ঞে গিয়ে, খানিক হতাশ হলাম, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে বলার দরকার, হতাশা থেকে মানুষ ফেসবুক পোস্ট দেয় না। কথা বলার সময় তখনই আসে যখন আবেগ সামান্য হতাশা, দুঃখ ইত্যাদি ছাড়িয়ে যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, আমার লেখার কারণ একটিই, আবেগ ক্রমশঃ হতাশা থেকে রাগের দিকে এগোনো।

    অভিযোগ মূলত ছবির প্রদর্শনী নিয়ে। এখানে বলে রাখা দরকার, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিকে নির্মাতা এবং দর্শক ঠিক কীভাবে দেখছেন, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি নির্মাণ এবং দর্শনের গুণাগুণ তৈরী হয় অনেকটাই। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি যদি নির্মাণ হয় ইন্ডাস্ট্রির বড় নামেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফিচার তৈরীর পথ তৈরী করার জন্য, তবে শুরুতেই তাকে কোন ছবির গোত্রেই ফেলা উচিত নয়, মনে করি। বিখ্যাত পরিচালকেরা শর্ট ফিল্ম তৈরী করেন হাত পাকানোর জন্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু এর পরেও শর্ট ফিল্মের নিজস্ব একটি এস্থেটিক থাকে, ‘সময়’ নামক চলচ্চিত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টটিকে সার্থক ব্যবহার করার সঙ্গে শর্ট ফিল্মের নন্দন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে, সন্দেহ নেই। একটি ছবির আখ্যান, কিংবা আখ্যানের অভাব ঠিক করে দেয় ছবির গতি, এবং সেই জায়গা থেকেই ছবিটি চলতে শুরু করে একসময় ঠিক থেমে যায়। কিয়ারোস্তামির দেড় মিনিটের শর্ট থেকে লাভ ডায়াজের আট ঘন্টার ছবি – সমস্ত ক্ষেত্রেই ‘সময়’ নামক বস্তুটির ইউনিক ব্যবহারই ঠিক করে দেয় ছবির দৈর্ঘ্য। এই আঙ্গিকে ভাবতে গেলে আমরা বুঝতে পারি, শর্টকে কখনোই ফিচার ফিল্মে প্রবেশের পথ হিসেবে ভাবাটা ঠিক নয়, ভাবলে আখেরে ছবির অত্যন্ত জরুরী অংশ ‘সময়’কেই ছোট করা হয়।

    স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ পথ চলা শুরু করে বিশেষ ভাবে ছোট ছবির পাশে দাঁড়ানোর কথা বলার পর থেকে আমাদের আশা ছিল, দেখানো হবে সেই সেই ছবিই, যা তার মেজাজে ছবির এই নন্দন এবং রাজনীতিতে স্বাধীন শব্দটির মান রাখে। স্বাধীন ছবি, ছোট পুঁজির ছবি, ইন্ডাস্ট্রির সাম্রাজ্যের বিপ্রতীপে দাঁড়ানো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি – তাই চরিত্রগত ভাবেই রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক। এর কোন অন্যথা নেই, হতে পারে না। ছবি করার জন্য নিকনের কুড়ি হাজারটাকার ক্যামেরা হাতে তুলে নেওয়াটাই মিছিলে হাঁটার মত রাজনৈতিক কাজ, আলাদা করে তাকে উচ্চস্বরে ইন্ডাস্ট্রির বিরোধীতা করতে হয় না।

    এবার শর্ট ফিল্ম কী হবে, কী জাতীয় ছবি স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ দেখাবে, বাইরে থেকে আমি বলার কেউই নই, নিঃসন্দেহে। কিন্তু ঐ যে, স্বাধীন নামের ব্যবহার আমাদের সামনে যে প্রত্যাশা তৈরী করে, সেখান থেকেই মনে হয়, ছবি বেছে নেওয়া এবং প্রদর্শনের বিষয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম কাউন্সিলের আরেকটু যত্নবান হওয়া উচিৎ। আজকের ইভেন্টের প্রথম দুটি ছবি, বাঁশি এবং লেট দেয়ার বি লাইট, চরিত্রগত, গুণগত, রাজনীতিগত ভাবে এতটাই আলাদা যে স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ স্বাধীন হয়ে উঠে ঠিক কোন ছবির পাশে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের মত প্রত্যাশীদের কাছে তা বুঝে ওঠা খানিক কঠিন হয়ে যায়।

    কিছু ছবি দেখে মনে হয়, এ ছবি বেকার তৈরী হল কেন। বাঁশি একটা সেই গোত্রের ছবি। কিছু ছবি শুরু হওয়ার দ্বিতীয় শট থেকে মনে হয় এ ছবি বেকার দেখছি কেন! বাঁশি একটা সেই গোত্রের ছবি। ছবিটিতে উচ্চমানের ক্যামেরা এবং পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে। অথচ সেই উচ্চমানের ক্যামেরার কোরিওগ্রাফি, বেসিক শট প্যাটার্ন, কাটিং পয়েন্ট এত দুর্বল, এত দুর্বল, যে ছবি দেখতে দেখতে বিরক্ত লাগে প্রতি কাটেই। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। আদর্শগত ভাবে, একটি ছবিতে যা খুশি তাই হতে পারে। প্রতি সেকেন্ডে দশটা কাটও ছবির পক্ষে প্রয়োজনীয় হলে সেটা জরুরী, আবার এক ঘন্টার স্থির টানাটানা শটও জরুরী। সম্ভবত ঋত্বিক ঘটকই এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, একটা ছবিকে ঠিক করতে হবে সে কোন পথে চলবে। বাঁশি ছবিটার সম্ভবত সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা, সে ঠিক করে উঠতে পারেনা সে কোন পথে চলবে। কখনও এই ডিসটর্টেড ওয়াইড এঙ্গেল শট, কখনও এস্থেটিসাইজ করে তোলা দৃশ্যসুন্দর ফ্রেম। পাশাপাশি এই দুটিও ছবিতে থাকতে পারে, তার জন্য যে মুন্সীয়ানা লাগে, ছবিটির তা নেই, এবং প্রায় প্রতি কাটে সম্পাদনার দুর্বলতা আন্ডারলাইন করতে করতে ছবিটি একসময় শেষ হয়।

    এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। খারাপ শিল্প করার অধিকার সবার আছে। ছবির পরিচালক ছবি শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, মাওবাদী এলাকায় শ্যুট হওয়া এই ছবি আসলে বলতে চায়, রাইফেল বন্দুক দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয় না, ছবির ছোট্ট ছেলেটি যেমন বাঁশি বাজিয়ে শান্তি পেতে চায়, সেটাই সবার হওয়া উচিৎ। বিশ্বাস করুন, ডিরেকটর এই ফুটনোটটি না দিলে আজকে আমার এই দীর্ঘ লেখার কোন অস্তিত্ব থাকত না। আমি জানিনা ছবির পরিচালক মাওবাদী রাজনীতি অথবা জঙ্গলমহলের খোঁজখবর কতখানি রাখেন, কিন্তু চিরজীবন শহরে থেকে শহরে বড় হয়ে শহরে ছবি বানিয়ে এই ধরণের প্রেসক্রিপশন যে রাজনৈতিক ভাবে কতখানি ক্ষতিকারক, সে কথা বলে বোঝাতে হয় না। ছবিটার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা এইখানেই, ছবিটা শহুরে বাবুদের চোখ দিয়ে দেখা গ্রামের মুষ্টিমেয় মানুষের জীবন হয়ে যায়, এবং সেই দেখা ভীষণ অরাজনৈতিক (মতান্তরে প্রতিক্রিয়াশীল ভাবে রাজনৈতিক), ফাঁপা, অপরিণত এবং বিলাসবহুল। ছবিটি কোনদিন দাঙ্গা দেখেনি, দেশভাগ দেখেনি, মন্বন্তর দেখেনি, অথচ তাদেরকেই পুনর্নিমাণ করে ফেলার দুঃসাহস দেখাতে চায়।

    এর পরের ছবি, লেট দেয়ার বি লাইট এর ঠিক উল্টো, পরিচালকের কথায় ইস্যুভিত্তিক ছবি হয়েও শরীরে অত্যন্ত পরীক্ষামূলক এবং রাজনৈতিক। ভাঙ্গা ফ্রেম রেটের ব্যবহার থেকে শুরু করে ব্যপক ভাবে ডিসটর্শনের ব্যবহার পরিচালকের ছবির ভাষা সম্পর্কে আগ্রহকে প্রকাশ করে, যা আজকের ইভেন্টে আমার উপস্থিতিকালীন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এবং দুঃখ এবং হতাশার জায়গাও এখান থেকেই।

    স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ পাশাপাশি এই দুটি ছবি রেখে কী বার্তা দিতে চায়, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। ছবি যদি দেখাতেই হয়, সবার আগে নজর দেওয়ার দরকার ছবির গুণগত মানের উপর। পাশাপাশি এমন বিপরীত মানের দুটো ছবি প্রদর্শন আখেরে দর্শকদের ব্যপক আশাহানি ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট। স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদের প্রতি আশা আছে, আশা আছে ভবিষ্যতের ইভেন্টে ছবি প্রদর্শন থেকে শুরু করে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, কিছুই আজকের মত অপরিণত হবে না। তবে, কোথাও গিয়ে মনে হয়, স্বাধীন নাম ব্যবহার করার স্পর্ধা আরেকটু অর্জন করতে হবে স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদকে। স্বাধীন মানে বাতাসের মত ফুরফুরে সেই স্পর্ধা, যা একই সাথে থাপ্পড় এবং আদর করতে পারে। নামের প্রতি এই সুবিচার না থাকলে, আখেরে দর্শকদের প্রতিই খানিক অবিচার হয়ে যায়। স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদকে ঠিক করতে হবে তাঁরা জাঁ লুক গোদার না স্টিভেন স্পিলবার্গ, কার ভক্ত হতে চান। একই সাথে দুজনের ভক্ত হওয়া যা না, অথবা একই সাথে দুজনের ভক্ত হওয়া কেউ চরম অরাজনৈতিক না হয়ে যান না।

    স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদের অনেকেই আমার ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত। আশা করি সমালোচনাকে কেউ আক্রমণ ভাববেন না।

    আশায় রইলাম।"

    --------------------------------

    সমালোচনা আরও আলোচনার পরিসর তৈরী করে। সমালোচনা সবসময়েই স্বাগত। আর এই স্বাগত জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় সম্ভবত সমালোচনাটিকে আরো মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে সাহায্য করা। কারণ সেখান থেকে আরো মতামত উঠে আসতে পারে, এবং উঠে আসাই কাম্য। বিভিন্ন মানুষের মতামত স্বাধীন চলচ্চিত্র বিষয়ক আলোচনার পরিসরটি আরও বাড়িয়ে তোলে যা কিনা IFC-র অন্যতম উদ্দেশ্য। আমি এবং দেবরাজ সেই জন্যেই লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পুনর্বার শেয়ার করি। শেয়ার করা হয় আমাদের ফেসবুক গ্রূপেও। এই শেয়ার বিষয়ক কিছু অভিযোগ-ও উঠে এসেছে। সে বিষয়ে পরে আসছি। প্রথমে দেখে নিই সায়ন্তনের সমালোচনা ঠিক কোন জায়গায়।

    এই সমালোচনার মধ্যে আসলে দুটি সমালোচনা আছে। প্রথমত, ফিল্ম সমালোচনা; বাঁশি এবং লেট দেয়ার বি লাইট ছবিদুটির, অংশত, এবং পরিচালকের মন্তব্য থেকে জন্ম নেওয়া ধারণার ভিত্তিতে সমালোচনা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের। দ্বিতীয়ত, ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে IFC-র সমালোচনা; কারণ সমালোচকের মতে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি IFC-র একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচিতির নির্মাণের পরিপন্থী বলে ওনার মনে হয়েছে। যে পরিচিতি একদিন তৈরী হয়ে উঠবে বলে উনি প্রত্যাশা রাখেন।

    প্রথমে চলে যাবো ফিল্ম এবং পরিচালকের রাজনৈতিক অবস্থানের সমালোচনার বিষয়টিতে। তার আগে কিছুক্ষন লেখা থেকে বিরত থাকবো কারণ ছবিদুটি আরো একবার দেখে ফেলার প্রয়োজন বোধ করছি। থামলাম।।
    ...........................................................
    দেখে ফিরলাম। ফিরে আসছি লেখায়।

    সায়ন্তন, এবার সরাসরি তোমাকে উদ্দেশ্য করে লিখছি। বাঁশি এবং লেট দেয়ার বি লাইট-এর মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। দুটি ছবিতেই সিনেমাটোগ্রাফি-র দায়িত্বে ছিলেন আলোক মাইতি। দুটি ছবিতেই অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ চরিত্রে একটি করে বাচ্চা ছেলে রয়েছে যে বাঁশি বাজায়। সোম-এর ছবি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। ক্লস্ট্রোফোবিক ফিলিংগ এক্সপ্রেস করতে ও যেভাবে স্ট্যাকাটোমোশন ব্যবহার করেছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এই একই কারণে ধৃতিকেও আমি এই একই এফেক্ট ব্যবহার করতে দেখেছিলাম ২০১০ সালে "I Saw My Father Being Shot" বানানোর সময়। ছবিটা শেষ হয়নি কোনোদিন। সোম -এর ছবিটায় সাউন্ডস্কেপও খুবই ইন্টারেস্টিং। সম্পাদনার ক্ষেত্রেও যেভাবে দুটো আলাদা সময় নেওয়া রেললাইনের দুটো শট মিলে গেলো সেখানে আলাদা করে বলার কিছুই নেই।

    বাঁশি-র কথায় আসি। তোমার 'বাঁশি' ছবিটাকে অপছন্দ হওয়ার কারণ হিসেবে তুমি মূলত তিনটি বিষয়ের কথা লিখেছো। ১) বাহুল্য, ২) দুর্বল সম্পাদনা এবং ৩) পরিচালকের রাজনৈতিক অবস্থান। তিনটে বিষয়ই আমার একে ওপরের সাথে জড়িত বলে মনে হচ্ছে। তাই আলাদা আলাদা করে না লিখে একসাথেই লিখছি। ছবিটার ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যাপার বিশেষভাবে তোমায় মনে করিয়ে দিই। ছবিটিতে প্রত্যেক চরিত্রের অভিনয় ছবিটিকে ক্রমশ নাটকের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায়। চোখ বন্ধ করে ডায়লগ থ্রোয়িং ফলো করলে এমনও মনে হতে পারে যে মফঃস্বলে বসে কোথাও নাটক দেখছি। এমন কিন্তু নয় যে অন্যরকম করা যেত না। পরিচালক না চাইলেই নিশ্চয়ই করা যেত। সম্ভবত পরিচালক চাননি। কেন চাননি? এখানে লক্ষণীয় চরিত্রগুলির নাম। রতন, ফুলমনি, ভুবন মাস্টার, কেষ্টা এবং ম্যাও। কেষ্টা বাঁশি বাজায়। ম্যাও একটা আধপাগল লোক আধাসামরিক ধাঁচের পোশাক পরা যে কিনা বাচ্চারা পিছনে লাগলে একে ৪৭ দিয়ে গুলি দেবে বলে। এগুলো কি যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী নয় পরিচালকের উদ্দেশ্য অনুধাবন করার ক্ষেত্রে? ভেঙে বলছি না। আশা করি বোঝাতে পারছি। আমার প্রশ্নেও ব্যাপারটা এনেছিলাম সেদিন। এবার ভেবে দেখো, বাঁশি যে বাচ্চাটি বাজায় সে হলো ম্যাও-এর বন্ধু। বাবা মরে যাওয়ার পর সেই বাচ্চাটি যখন বাঁশিটা ছুঁড়ে জলে ফেলে দেয় ম্যাও কিন্তু চেয়েছিলো ওকে দিয়ে আবার বাঁশি বাজানো করাতে। রতন মরে গেলো কি একটা ঝুঁকি নিতে গিয়ে। কি ঝুঁকি কেউ জানলো না। ম্যাও-ও মরে গেলো, কে জানে কিভাবে! মরে যাওয়ার আগে কেষ্টাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলো বাঁশিটা। তারপর ওই পাঁচটা জলের ফোঁটা শেষ দৃশ্যে। --- আমার তো মনে হচ্ছে মোড়ে মোড়ে দিকনির্দেশ লিখে রাখা আছে। ফস্কে যাওয়ার কথা তো নয় অন্তত। হ্যাঁ, ভাষাটা আমাদের প্রজন্মের ভাষা নয় অবশ্যই। কিন্তু এই ভাষা আমরা দেখেছি এর আগে। অসুবিধা হওয়ার তো কথা নয়। এটা একটা লিগ্যাসি। আমার পুরনো মনে হতে পারে, কিন্তু অস্বীকার করি কিভাবে? কারুর সাথে কারুর তুলনা করছি না, কিন্তু নতুন বাড়ি খুঁজতে যাওয়ার পথে মামা হঠাৎ বুড়ো হয়ে গেলো কি করে সেটা বুঝতে তো অসুবিধা হয়নি আমাদের কখনও। কিছু ছেলেমেয়ের হতো। ওরা বলতো, শালা বিয়ের রাত্রে বৌ পালাবে, খালি প্রেম আর ক্লাসিকাল প্যানপ্যানানি; ও আবার ছবি নাকি! ওরা খুব সাধারণ ছেলেমেয়ে। ওদের বাড়িতে কেউ কখনো যে ভদ্রলোকের নাম করছি না তাঁর বিজ্ঞাপন করেনি। তবে কি বিজ্ঞাপন মাহাত্মের শিকার হয়ে যায় আমাদের বোধ মাঝে মাঝে?

    কৌশিকদা আর সোম -এর ছবিদুটোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য আমার যেটা মনে হলো সেটা হচ্ছে লেট দেয়ার বি লাইট একটি পরিচালকের ছবি, বাকিরা কেবলমাত্র সঙ্গত করে গেছে। কৌশিকদা-র বাঁশি-তে এই ব্যাপারটা ঘটেনি। সেখানে আলাদা করে আলোক মাইতি, কল্যাণ সেন বরাট-এর উপস্থিতি চোখে পরে যাচ্ছে মাঝেমাঝেই। সম্পাদনা দুর্বল নয়, তবে এই ছবির এপ্রোচ-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরও অনেকটাই মানানসই হতে পারতো। হতে পারে সম্পাদকের কাছে পরিচালকের অভিপ্রায় সেরকম পরিষ্কার ভাবে ধরা দেয়নি। সারি সারি পাঁচিল থাকে জানোই তো, ছবি বানিয়ে উঠতে পারার পথে। আমি এই ছবিটা বানালে কালারেই বানাতাম না। এমনকি ডিজিটাল না বানিয়ে চেষ্টা করতাম অন্তত ১৬ মিমি তে করতে। প্রশ্ন করার জায়গা অবশ্যই রয়েছে অনেক। যেমন ধরো, যে দৃশ্যে কেষ্টাকে স্পষ্টতই কৃষ্ণ হিসেবে প্রজেক্ট করা হচ্ছে; সে বাঁশি বাজাচ্ছে জলের মধ্যে বসে আর চারিপাশ থেকে বন্ধুরা জল ছিটিয়ে দিচ্ছে তার গায়ে --- ঐখানে সম্ভবত একটি পাহাড়ী সুর ব্যবহার করেছেন কল্যানবাবু। কেন? পুরুলিয়ার সাঁওতাল বাঁশি-র সুরের ধরণ তো সম্পূর্ণতই আলাদা। এইরকম বেশ কিছু প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে তুমি যেভাবে ছবিটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছো আমি সেটা একেবারেই পারছি না।

    পরিচালকের রাজনৈতিক অবস্থান বিষয়ক ধারণা তোমার যে মন্তব্যের জন্য তৈরী হলো সেই মন্তব্যটি ছিল আমার একটি প্রশ্নের উত্তরে। যদ্দুর মনে হচ্ছে তোমার স্মৃতি তোমার সাথে বিস্বাসঘাতকতা করছে। কৌশিকদা একেবারেই বলেননি, "মাওবাদী এলাকায় শ্যুট হওয়া এই ছবি আসলে বলতে চায়, রাইফেল বন্দুক দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয় না, ছবির ছোট্ট ছেলেটি যেমন বাঁশি বাজিয়ে শান্তি পেতে চায়, সেটাই সবার হওয়া উচিৎ।" উনি যেটা বলেছিলেন সেটা এরকম যে, রাইফেল বা বন্দুক নয়, প্রত্যেকটা মানুষের ভিতর একটা বাঁশি রয়েছে, আমরা সেই বিষয়টাকে মূল উপজীব্য করতে চেয়েছি। এই কথাটা কিন্তু মেটাফোরিক্যাল। এখানে বাঁশি মানে আবহমান জনজীবনের সুরও হতে পারে, আবার সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাও হতে পারে। "সেটাই সবার হওয়া উচিৎ" --- জাতীয় কোনো কথা উনি একেবারেই বলেননি। তুমি যে দর্শনের কথা বলছো, আমি কৌশিকদাকে যতটুকু চিনি, ওনার দার্শনিক অবস্থান মনে হয় ঠিক তার বিপরীতে। ভদ্রলোক সুবক্তা। একটু অলংকার মিশিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন। কথার এই আলংকারিক দিকটায় সম্ভবত তুমি আটকে পড়েছো। স্টোরিলাইন দেখো, তারপর বক্তব্যগুলো নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখো। মনে হয়, না বোঝার কোনো কারণ নেই। এরকম একটা ছবি কেন কেউ বানালো সেই প্রশ্ন এলে বলতে হয়, না ছবিটা দেশভাগ বা দাঙ্গা দেখেনি, কিন্তু বিস্মৃতিরও স্মৃতি থাকে, ডেটা ডিলিট হওয়ার পর হার্ড ডিস্ক-এ থেকে যাওয়া ফ্র্যাগমেন্টের মতো; পাশ্চাত্যের নামজাদা দার্শনিকরা এবিষয়ে লিখে গেছেন, আমি আর কি বলবো। ছবিটা পুনর্নির্মাণের স্পর্ধা দেখাচ্ছে না একেবারেই, নিতান্তই কোনো একটা নির্দিষ্ট ইতিহাসকে অস্বীকার করতে চাইছে না।

    "শহরে থেকে শহরে বড় হয়ে শহরে ছবি বানিয়ে"... সমালোচনার এই অংশটা নিয়ে আমার একটু ব্যক্তিগত আপত্তি রয়েছে। শ্রী কৌশিক সেনগুপ্তর ব্যক্তিইতিহাস আমার অজানা হলেও উনি ছবিটা বানাতে অন্তত গ্রামে গিয়েছিলেন সেটুকু ছবিতেই দেখা যাচ্ছে। সমালোচকের ব্যক্তিইতিহাসও আমার জানা নেই। তবে উক্তিটি থেকে মনে হচ্ছে তিনি নিজেকে এই বৃত্তের বাইরের মানুষ বলে মনে করছেন। কিন্তু যিনি সমালোচনা গোদারের কথা তুলে আনছেন বা স্পিলবার্গের তিনি কি আসলে একজন বিশ্বনাগরিক নন? নাগরিক চেতনা কি তাঁর মধ্যেও নেই কোথাও? তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? একজন শহুরে বাবুর বানানো ফিল্মকে আরেক শহুরে বাবু আক্রমণ করে বসলেন, আর এই ঘটনার ফলাফল (পরে আসছি) গড়ালো এতদুর অবধি যে তৃতীয় আরেক শহুরে বাবুকে প্রায় গোটা একটা দিন নষ্ট করতে হলো সামলাতে গিয়ে। কি আয়রনি মাইরি!

    এবার আসি IFC-র প্রত্যাশিত চরিত্রের কথায়। এই সংগঠনের কোনো চরিত্র নেই। থাকা সম্ভবও নয়। স্বাধীন বলতে স্বাধীনের কোনো নির্দিষ্ট অর্থকে প্রমোট করা এই সংগঠনের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিনা যেমন কুড়িহাজার টাকার ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি করতে যাওয়ার একটা আলাদা রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে ঠিক সেরকমই শহরের প্রায় সমস্ত চলচ্চিত্রকার যাঁরা নিজেদেরকে স্বাধীন মনে করেন তাঁদের একটি সংগঠনে এক জায়গায় আসারও একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এই চরিত্রের প্রশ্ন যদ্দুর মনে পরে প্রথম তুলেছিল দেবর্ষি বন্দোপাধ্যায় IFC-র প্রথম জেনারেল মিটিং-এ। একেবারেই কি কন্টেন্ট দেখানো হচ্ছে, তার রাজনৈতিক চরিত্র কি, সেটাই ওর মূল বক্তব্য ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বাস্তবিকই সমস্ত স্বাধীন চলচ্চিত্রকারদের এক জায়গায় নিয়ে আসতে গেলে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চরিত্র বজায় রাখা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে কাজটা হবে না। কারণ এই সময় যাঁরা নিজেদের স্বাধীন চলচ্চিত্রকার মনে করেন তাঁদের অধিকাংশের মধ্যেই স্বাধীনতার সেই চেতনা নেই। স্বাধীনতার চেতনার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন পরাধীনতার চেতনা। সেই পরাধীনতার চেতনা কিন্তু "গিল্ড আমায় অমুক জায়গায় শুট করতে দিলো না" জাতীয় অভিযোগ নয় একেবারেই। পরাধীনতার চেতনা মানে প্রাথমিক এবং সার্বিকভাবে একটি রাজনৈতিক চেতনা। একজন মানুষ যে নিজে জানে যে সে পরাধীন একমাত্র সেই-ই তার প্রভুর স্বাধীনতাটা দেখতে পায়। যে প্রথম শর্ট ফিল্ম থেকেই বাংলা ভাষায় হলিউড ছবি বানাচ্ছে তার এই চেতনাটা যে নেই সেটা আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার পরে না। এবং এই অংশটাই বেশি। তারপর রয়েছে যারা "ডাকলেই যাবো, কিন্তু ডাকছে কই" গোষ্ঠী। এরাও সংখ্যায় কম নয়; সুযোগ না পেয়ে যারা বরং স্বাধীন থাকার পথই বেছে নিয়েছে। এরপর একটা অংশ রয়েছে যারা এতটাই কম ভেবেছে বা জেনেছে এইসব নিয়ে যে তাদের কাছে কিছু একটা যে হচ্ছে সেটাই যথেষ্ট, আবার না হলেও বিশেষ কিছু এসে যেত না। এবার এরকম একটা জগতে একটা স্বাধীন চলচ্চিত্র সংসদ তৈরী হলো আর পরদিন থেকে কলকাতায় নিউ ওয়েভ, সিনেমা নোভো, আমেরিকান আন্ডারগ্রাউন্ড, সব কিছু একসাথে হয়ে যাবে এটার আশা করা তো জাস্ট অবাস্তব, তাই না? এই কাজটা খুব ধৈর্য্য ধরে করার বিষয়। আইএফসি তৈরী হওয়ার এক বছরের মধ্যে কোনো জাফর পানাহিকে গড়িয়াহাটে ফুচকা খেতে দেখা যাবে না, কোনো ইয়ালমাজ গুনে মেট্রো করে বাড়ি ফিরবে না। সেরকম সন্দেহ হলে কাছে গিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে ওটা হয় দেবরাজ নাইয়া, নয়তো দিগন্ত দে। রাজনৈতিক চেতনা একদিনে তৈরী হওয়ার নয়। ইন ফ্যাক্ট, একশো বছরেও তৈরী হওয়ার নয় কারো কারো ক্ষেত্রে। কিন্তু কোথায় কখন বিস্ফোরণ ঘটবে কেউই জানিনা আমরা। সবাইকে একসাথে নিয়ে একটা কাজ করা গেলে রাজনৈতিক ব্যাপারটাকে ধীরে ধীরে জারিত করা যাবে নিশ্চয়ই। এক কথায় বললে মাস লাইন। আমি কমিউনিস্ট নই, মানুষ কিনা সে সন্দেহও রয়েছে। জাস্ট সহজে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করলাম শব্দটা।
    এবার রাজনৈতিক জায়গাটাকে সিনেমার মধ্যে ফিরিয়ে আনা এবং সেই বিষয়টার সাথে যাতে আইএফসি-র একটা আদানপ্রদান থাকে সেই জন্যে আমি দেবর্ষি এবং দেবজিৎ বাগচীকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম একসাথে আবারো একটা নো-বাজেট ফিল্মমেকার্স ফোরাম তৈরী করার। দ্বিতীয় আঁতাত নামে। রাজি ছিল ওরা। তারপর আমিই আর সময় করে উঠতে পারিনি। ওদিকে দেবর্ষিও "পাশে আছি" বলে সরে গেছে, দেবজিৎ ও ক্রমশই নিষ্ক্রিয় হয়ে আসছে, আর সায়ন্তন, তুমি তো এলেই না কোনোদিন আইএফসিতে সেভাবে। প্রত্যেকের থাকাটা কিন্তু খুব জরুরী। অনেক বাধা রয়েছে যেগুলো ৫ জনের গায়ের জোরে সরানো না গেলেও ১০০টা হাত এক জায়গায় হলে সরানো যায়। সেইজন্যেই আইএফসি। এবার ভেবে দেখো, একটা দরজা পঞ্চাশ জনের হাতের ধাক্কায় খুলতে পারলে সেখানে বাকিরা কিন্তু ৫ জনকে বাধা দেবে না তাদের কথাগুলো বলতে। একটা আদানপ্রদান তৈরী হবে যেটা খুব দরকার। এই আদানপ্রদান যারা রাজনৈতিক ভাবে ভাবতে জানে এবং যারা জানে না, দুপক্ষেরই চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে আমার মনে হয়। এই পদ্ধতিটা না থাকলে নিজের মনে নিজের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে বসে থাকার পয়েন্টটা কি? বাকিরা যে যা করছে করুক না, শতফুলের বিকাশ তো ঘটবেই, সে তো নাকি কাম্য বলেও শুনেছি। শুধু মাথায় রাখা প্রয়োজন যে কোনোকিছুই আগাছা নয়। আগাছার মধ্যেও অনেকরকম শাক গজায় মাটিতে, তুলে খেতে জানতে হয়।

    আপাতত পরিস্থিতি এরকম যে একজন পৃষ্ঠপোষক যারপরনাই ক্ষুব্ধ তিনি যেরকম নন ঠিক সেরকমই নাকি তাঁকে দেখতে এই অভিযোগে, দুজন পদাধিকারী সদস্যকে অন্তর্ঘাতের সন্দেহ গ্রাস করেছে, একজন পদ থেকে নিষ্কৃতি চাইছেন, এবং সবটাই ঘটেছে একজন সম্ভাব্য সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে যা কিনা আবার চরিত্রগতভাবে রাজনৈতিক। এমনই মহান রাজনৈতিক শহর আমাদের যে এখানে জেলাশহর থেকে আসা ৪০ জন ছাত্র নিজেদের দাবী আদায়ের জন্য ১৭ দিন ধরে পরে থাকলে খাবার নিয়ে যাওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না অথচ ভালো ভালো সব উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যায় নিজেদের "সঠিক" রাজনীতিকে ডিফেন্ড করতে দিয়ে। সত্যিই রাজনীতিই এর কারণ তো? নাকি আমরা আসলে জনবিচ্ছিন্ন কুপমণ্ডুকের দল যে যার নিজের প্রতিকৃতির বিগ্রহ বানিয়ে তার তলায় ধূপ জ্বালাতে ব্যস্ত? কার একটা লেখায় যেন পড়েছিলাম যে বাছুরের শিং, গোপন প্রেম আর ধূপের গন্ধ -- এই তিনটে জিনিস নাকি লুকিয়ে রাখা যায় না। ঠিক বেরিয়ে পড়বেই এক না একদিন! বোধ করি আমাদের সবারই সাবধানে থাকা উচিত।

    অবশেষে একটু কাজের কথায় আসি। আগের দিন অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণ আমার দেরি করে পৌঁছনো। আমার ওপর ওইদিন বেশকিছু গুরুদায়িত্ত্ব ছিল যে দায়িত্বগুলি আইডিয়ালি এমন কারুর উপর থাকা উচিত যাকে রাত্রে বাধ্যতামূলক কাজ করতে হয় না, জীবনে বেশ খানিকটা অতিরিক্ত সময় রয়েছে এবং যার বাড়িতে পেঁয়াজ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে না ভাবলেও চলে। ছোট করে বললে, চলচ্চিত্রোৎসাহী ছাত্রদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন IFC তে। ভাবা হোক, এটা কিভাবে সম্ভব। দ্বিতীয়ত, সায়ন্তনের সমালোচনা থেকে স্পষ্ট যে সংগঠনের সদস্য এবং দর্শক-উৎসাহী-অংশগ্রহণকারী এই দুটি গোষ্ঠীর বিবাওধান ক্রমবর্ধমান। কিভাবে এই বিভাজন মুছে ফেলা যায় সেই ব্যাপারেও কিছু উদ্যোগ অনতিবিলম্বে নেওয়া জরুরি। এই দুটি বিষয় নিয়ে কিছু করা না গেলে শিগগিরই মুখ থুবড়ে পরা আটকানো যাবে না। কোর কমিটি-র একসাথে বসা প্রয়োজন, তার দু-তিনদিনের মাথায় ওয়ার্কিং কমিটিরও বসা প্রয়োজন এবং তার হপ্তাখানেকের মধ্যে জেনারেল মিটিং ডাকা হোক। এই প্রস্তাব রেখে আমি আমার শারদীয় উপন্যাসটি শেষ করছি। ধন্যবাদ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ আগস্ট ২০১৮ | ১৮১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সায়ন্তন দত্ত | 015612.129.011212.204 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৮63812
  • চমৎকার লেখা! তোমার লেখার ফ্যান হয়ে পড়ছি তো!

    আমার মূল বক্তব্য এবং তৎসহ অভিযোগের মূল তীরটা ছিল বাঁশি ছবিটা নিয়ে। ছবিটা আমার কাছে ক্লিক করেনি। একেবারেই করেনি। তুমি যে যে কারণে ছবিটাকে নিয়ে বললে, সেগুলো আমার কাছে এখনও ইনভ্যালিড মনে হচ্ছে। "ছবিটিতে প্রত্যেক চরিত্রের অভিনয় ছবিটিকে ক্রমশ নাটকের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চায়। চোখ বন্ধ করে ডায়লগ থ্রোয়িং ফলো করলে এমনও মনে হতে পারে যে মফঃস্বলে বসে কোথাও নাটক দেখছি।" নাটক নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই, বলা বাহুল্য। কিন্তু প্রতি পদে ছবিটা যে ধরণের আড়ষ্ট, যে ভাবে ছবিটা কোন সঠিক 'কাট পয়েন্ট' খুঁজে পায় না, সেটা আমার কাছে ভীষণ অপরিণত লেগেছে। শুরু থেকেই ছবিটার চলন এরকম দুর্বল, এবং তৎসহ ক্যামেরার কোরিওগ্রাফি (এটা আমি আগেও লিখেছি) খুবই বাজে। একটা ছবিতে আলাদা করে মিউজিক বা সিনেমাটোগ্রাফি বা সংলাপ বা চরিত্রের নাম সঠিক হলেই ছবিটা ছবি হয়ে উঠতে পারে না, এটা বোধহয় নতুন করে বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। আমাদের প্রজন্মের ভাষা নাই হতে পারে, তুমি যেছবিটার রেফারেন্স দিচ্ছ, সেটাও আমাদের প্রজন্মের ভাষা নয়।

    দ্বিতীয়ত রাইফেল বা বন্দুক নয়, প্রত্যেকটা মানুষের ভিতর একটা বাঁশি রয়েছে, এই জায়গাটারও বিরোধীতা করব আমি, রাজনৈতিক ভাবেই। আমি যদি বলি কেন রাইফেল বা বন্দুকের বিপরীতে বাঁশিকে রাখা হচ্ছে? কেন রাইফেল বা বন্দুকের গুণগত এবং রাজনৈতিক মানের বিপ্রতীপে বাঁশিকে রাখা হচ্ছে? এই ডায়ালেকটিকটাই অত্যন্ত শহুরে এবং সেকেলে। উচিৎ অনুচিতের প্রশ্নই নয়, (যদিও উচিৎ উনি না বললেও সেন্সটা বিশেষ বদলে যায় না বলেই মনে হয়)। আমার মনে হয়েছে এই পারস্পরিক দন্দ্বটি ইনভ্যালিড।

    "সমালোচকের ব্যক্তিইতিহাসও আমার জানা নেই। তবে উক্তিটি থেকে মনে হচ্ছে তিনি নিজেকে এই বৃত্তের বাইরের মানুষ বলে মনে করছেন। " একেবারেই না। আমি এটাই বলতে চাইছি কোনটা পারি আর কোনটা পারিনা, এটা অন্তত বোঝা উচিৎ। আমি অত্যন্ত খারাপ ফিল্ম সমালোচক অথবা মেকার হতে পারি, তবে তাই বলে রতন লাইব্রেরী তৈরী দৃশ্যের (মা ছেলেকে খাওয়াচ্ছে) মতন অত্যন্ত বোকাবোকা এবং প্রিটেনশাস অংশ কোনদিন বানাবোও না, ভালোও বলব না। :-)

    এবার শেষ অংশ। কেন আমি এতদিনেও IFC আসতে পারিনি, সেটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার। সমালোচনার সাথে সম্ভবত তার কোন সম্পর্কই নেই, তুমি সেটা জানো। আমি যদি ধরেও নিই যে IFC নিজে থেকে ছবির গুণমান সম্পর্কে বিচার না করে দর্শকের হাতে ছেড়ে দেবে, এবং আমি (একজন বাইরের দর্শক) ছবিটি দেখে কী বলব সেটা তো একান্তই আমার ব্যপার, সেটা নিয়ে এত তোলপাড়ের কী কারণ আছে আমি বুঝতে পারছি না। একজন দর্শক একটি ইভেন্ট এটেন্ড করে তাঁর ভালো না লাগার কথা জানিয়েছে, এখানে অন্তর্ঘাত কিংবা গেল গেল রব কেন উঠছে, সেটাই আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগছে। একজন দর্শকের মনে হওয়া বা সমালোচনা বা প্রত্যাশা থেকে তো সংগঠনের মধ্যে এরকম সর্বনাশ হয়ে গেল মার্কা রব ওঠার কিছু নেই, তাই না? সেটা তো বরং স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিৎ!

    তোমার উপন্যাসের উত্তরে ছোটগল্প নামিয়ে দিয়েছি, দেখা যাক পরবর্তীতে কী আসে!
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৮ ১১:৪৪63813
  • ছবিগুলো ইউটিউবে কেন রাখা হবেনা? অবশ্যই যদিনা পরিচালক বা প্রযোজকদের 'কমার্শিয়াল' রিলিজের পরিকল্পনা থাকে।
    একাধিকজনকে এটা বলে দেখেছি। কেউই রাজি হননি। অথচ ডিসট্রিবিউশনের এটাই সহজতম রাস্তা হতে পারত। কী বস্তু তৈরি হচ্ছে, পাবলিকের সামনে সেটাও দেখা হয়ে যেত। কিন্তু সেটা হচ্চেনা। অর্থনৈতিক কোনো ব্যাপার থাকলে ঠিক আছে, সেটা বুঝি। কিন্তু বেশিরভাগই অর্থনৈতিক কোনো সাফল্যের মুখ দেখছে, বা দেখার জন্য বানানো তো মনে হয়না। তাহলে অন্য কোনো সমস্যা আছে?
  • Anamitra Roy | 561212.187.8945.210 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ০২:০০63814
  • কিছু ছবি আছে তো ইউটিউবে। লেট্ দেয়ার বি লাইট রয়েছে যদ্দুর মনে হচ্ছে। বাঁশি সম্ভবত নেই, এখনও। পরে আসবে কিনা জানি না।
    ইউটিউবে রিলিজ করার ব্যাপারটা পুরোপুরি প্রযোজকের ওপর নির্ভর করে। কিছু চ্যানেল রয়েছে যেগুলো নানান এমসিএন-এর অংশ হিসেবে বা স্বতন্ত্রভাবেই এই ধরণের কন্টেন্ট নিয়ে ব্যবসা করে। তাদের কাছ থেকে কখনও-সখনও সামান্য কিছু টাকাপয়সা পাওয়া যায়। বা টাকা না পাওয়া গেলেও এই চ্যানেলগুলো যেহেতু নিজেদের চ্যানেলের কন্টেন্ট পয়সা দিয়ে প্রমোট করে ইউটিউব এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাই ভিউ বেশি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। প্রায় সমস্ত প্রযোজক এবং নির্দেশকরাই এই ধরণের একটা প্ল্যাটফর্ম খোঁজে ছবিটা রিলিজ করানোর জন্য। এবং স্বাভাবিকভাবেই, এই ধরণের চ্যানেল সব ছবি নিতে চায় না। খানকয়েক ফেস্টিভ্যালে দেশবিদেশে জায়গা পেয়েছে এমনধরণের ছবি-ই এরা নিতে পছন্দ করে। ফলে সাধারণত যে শর্ট ফিল্ম গুলো একটু পয়সা খরচ করে বানানো সেগুলো কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথমে অন্তত ৬ থেকে ৮ মাস ফেস্টিভ্যাল প্রদক্ষিনে বেরোয়। এরপরও সব ছবির ইউটিউবে রিলিজের জন্য ঠিকঠাক প্ল্যাটফর্ম জোটে না। নিজেদের গোছানো চ্যানেল থাকে না অনেক প্রোডাকশনেরই। ফলে চ্যানেলের মতো যে ব্যাপারটা থাকে সেখানে আপলোড করলে আড়াইশো জনও দেখবে কিনা সেই ব্যাপারটা নিয়ে একটা সংশয় থাকে। এবং যদি না দেখে, সেক্ষেত্রে সেটা পরবর্তী কাজগুলোর ক্ষেত্রে একটা নেগেটিভ ফ্যাক্টর হৈয়ে দাঁড়াতে পারে। সেইজন্যেই সম্ভবত সমস্ত ছবি ইউটিউবে পাওয়া যায় না।

    এটা একেবারেই ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ :)
  • Anamitra Roy | 561212.187.8945.210 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৮ ১২:৪৪63815
  • @সায়ন্তন, আর আমার প্রাথমিকভাবে তোমার প্রতিক্রিয়াটির উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল সেখানে IFC -র রাজনীতিগত অবস্থানের বিষয়টি থাকার দরুন। তারপরে লিখতে গিয়ে ফিল্মের রিভিউ নিয়ে যে এতকথা লিখতে হলো তার কারণ মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। ছবিটা যে তোমার কাছে ক্লিক করেনি সেটা আমি ভালোই বুঝেছি। আমার কাছেও যে খুব একটা ক্লিক করেছে এরকমটা নয়। তুমি হয়তো খেয়াল করে থাকবে আমি সেইদিনই প্রশ্নোত্তরের সময় আমার এই ছবির প্রতি বিচ্ছিন্নতা তৈরী হওয়ার বিষয়টা উল্লেখ করেছিলাম। তবে আমার মনে হয় ইটা একটা ব্যক্তিগত জায়গা। সঠিক 'কাট পয়েন্ট' বলে আসলে কিছু হয় না। আমার ভালো লাগতে পারে বা খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু সঠিক না বেঠিক সেটা কিভাবেই বা বলা যাবে? মানে ইটা কোনো নির্দিষ্ট ছবির ক্ষেত্রে নয়, সব ছবির ক্ষেত্রেই বলছি। ক্লাসিক্যাল রিয়ালিজম আর ভেরিত রিয়ালিজম-এর সঠিক তো আলাদা, তাই না? আবার সিনেমা ব্যাপারটা যে অনেকটাই "এটা ঠিক" আর "ওটা ভুল"-এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটাকে অস্বীকার করতে গেলে আমি কি তারপর আর কোনো "সঠিক" কাট পয়েন্ট-এর কথা বলতে পারি? একটা ছবিতে নামজাদা / অভিজ্ঞ এডিটর, সিনেমাটোগ্রাফার, সুরকার ইত্যাদি থাকলেই ছবিটা ভালো ছবি হয়ে উঠবেই বা সবার কাছে ক্লিক করবেই তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আবার আমার কাছে করলো না মানে, রায়গঞ্জে বা কাঁথিতে অন্য কোনো দর্শকের কাছেও যে ক্লিক করবে না তারও কোনো মানে নেই। বাঁশি-র প্রথম দৃশ্যে চাঁদ থেকে ক্যামেরা নামতে নামতে ডিজল্ভ করে প্রবহমান জল পেরিয়ে যে কেষ্টাকে বাঁশি বাজাতে দেখালো সেখানে কারো বুড়ি চাঁদ বেনোজলে ভেসে যাচ্ছে মনে হলেও হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এটা খুবই ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার। নির্দিষ্ট করে কিছু মনে হয় না বলা যায় বলে এখানে। আমরা বড়জোর ভাবতে পারি যে আমি হলে কিভাবে দেখতাম। অর্থাৎ ভিন্নমত পোষণ করতে পারি। কিন্তু অন্য একজন অন্যভাবে দেখালেন বলে সেটাকে ভুল বলে দিতে পারি না বলেই মনে হয়। অন্য কারো কাছে সেটা ক্লিক করলেও করতে পারে।

    উচিৎ বলা বা না বলে একটা পার্থক্য হয় অবশ্যই। "উচিৎ" বলে দেওয়ার মধ্যে একটা ডিক্টেট করে দেওয়ার ব্যাপার থাকে। ওই ঠিক বা ভুল নির্দেশ করে দেওয়ার ব্যাপার থাকে। যেটা "ফোকাস করতে চেয়েছি" বলার মধ্যে থাকে না। রাইফেল বা বন্দুকের বিপরীতে বাঁশি রাখার ব্যাপারে বলি, এই দ্বন্দ্বটি শহুরে এবং সেকেলে কিনা সেটাও কে কিভাবে দেখছে তার ওপরই নির্ভর করে। কেউ এভাবেও দেখতে পারে যে, বন্দুক বা রাইফেল এখানে যুদ্ধের প্রতীক আর বাঁশি সৃজনের। সেক্ষেত্রে এই ছবিটা তার একটা শহুরে এবং সেকেলে ছবির বদলে একটা যুদ্ধবিরোধী ছবিও মনে হতে পারে। জাস্ট মজা করার জন্যই জিজ্ঞেস করছি, রাইফেল আর বন্দুকের বিপরীতে গিটার আর লাভমেকিং রাখলে তোমার কি মনে হতো? টেকনিক্যালি, গিটার আর যৌনতা যা রিপ্রেসেন্ট করে বাঁশিও কিন্তু তাই-ই রিপ্রেজেন্ট করে। হয়তো রিগ্রেসিভ শোনাবে, হয়তো বলা উচিৎ নয়, তবু লোভ সামলাতে পারছি না, এখনও পর্যন্ত কলকাতা-হুগলি-হাওড়ার বাইরে যে বিস্তীর্ণ বঙ্গভূমি সেখানে গিটার এবং যৌনতার থেকে বাঁশি-র সিম্বলিজম অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।

    পারা না পারাতও তো পুনরায় সেই দৃষ্টিভঙ্গীরই ব্যাপার। জানি না তুমি মফঃস্বলের নাটক কতটা দেখেছো, আমি বেশ কিছু দেখেছি পাকাপাকি ভাবে শহরে চলে আসার আগে। সেখানে এরকম "বোকাবোকা এবং প্রিটেনশাস" অনেককিছুই আমি দেখেছি, অনেক দৃশ্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই নাটকগুলো যথেষ্ট সমাদর পেয়েছে মফঃস্বল এবং গ্রামের দর্শকের কাছে। কাজেই আবারও বলি, কে দেখছে তার ওপরই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিষয়টা তার কাছে কিভাবে প্রতিভাত হবে।

    এবার শেষ অংশ, আমি জানি তোমার নিজের ছবির কাজে তুমি ব্যস্ত ছিলে তাই আসতে পারোনি এতদিন। আমি জানি তোমার না আসার সাথে তোমার সমালোচনার কোনো দূরতম যোগাযোগটুকুও নেই। আমি আশা রাখি যে তোমাকে ভবিষ্যতে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখবো IFC -র জন্য। এবার কতগুলো কথা। ওই যে বলছিলাম আগেরদিন, এই সংগঠনের সেভাবে কোনো রাজনৈতিক চরিত্র না থাকলেও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। সেই তাৎপর্যগত কারণেই আমি মনে করি IFC -র টিকে থাকাটা খুব জরুরি। এবার কথা হলো যে, গেলো গেলো রব ওঠার কথা ছিল না, কিন্তু উঠেছে। উঠেছে যখন, আমি তো দায় এড়িয়ে যেতে পারি না। আমাকে দেখতে হবে গেলো গেলো হলেও যেন টোটালি চলে না যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমার সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। এর চেয়ে অনেক কড়া ভাষায় অনেক সমালোচনা আমি নিজের কাজের ক্ষেত্রে পেয়েছি। অনেক নিঃশব্দতাও, যেগুলো আরো বেশি বিরক্তিকর ছিল। সেগুলো সামলে ওঠার পর এখন বলতে পারি কেউ দর্শকাসনে থেকে উঠে এসে আমার মুখে থুতু দিয়ে গেলেও আমি সেটাকে আমার কাজের সাফল্য বলেই জানবো। কিন্তু সবাই এরকমটা হয় না। একজন মানুষ, তাঁর সামাজিক -অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন, যখন একটা ফিল্ম বানান, সেটা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেই বানান। নাই বানাতে পারেন, কেউ চাইলে নিজের গোটা বাড়িতে সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং-এর ব্যবস্থাও করতে পারেন শর্ট ফিল্ম বানানোর পরিবর্তে। কিন্তু বানাচ্ছেন যখন, অন্ততপক্ষে খুব সামান্য হলেও একটু ত্যাগস্বীকার তাঁকে করতে হচ্ছে। স্বাধীন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে সত্যি। ফলতঃ, এই কাজগুলো সাধারণত নির্মাতাদের খুব বুকের কাছের হয়। ফলে সমালোচনা নেওয়ার মানসিকতা থাকলেও, একদম "ওটা কিছুই হয়নি"-টা নেওয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষেই। যদি সম্ভব হতো, তাহলে ওই মূল লেখায় যে ভদ্রলোকের নাম করলাম না, উনি হয়তো আরো কিছুদিন বেশি বাঁচতেন। ভেবে দেখো।
    আমি অতি অবশ্যই চাই যে তুমি আরো অনুষ্ঠানে এসো, আয়োজক হিসেবে না পারলে দর্শক হিসেবেই এসো। এবং এরকম আরো অনেক অনেক লেখা লেখো। এই লেখাগুলোও আমাদের সংগঠনকে সাহায্যই করবে দিকনির্দেশ খুঁজে পেতে। কিন্তু কি জানো তো, ধরা যাক সিনেমা একটা বেলুনের মতো। এবার ধরো তুমি এমন ফুঁ দিলে যে বেলুনটা ফেটেই গেলো, তাতেও সমস্যা নেই কোনো। সমস্যা হচ্ছে তার ফলস্বরূপ যদি সংগঠনের মধ্যে এমন অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় যে ভবিষ্যতের রূপরেখা অস্পষ্ট হয়ে আসে। সে যে কারণেই হোক না কেন, কারণটা বড় কথা নয়, সংগঠনটা টিকিয়ে রাখা দরকার। আমার তোমার লেখা খুবই ভালো লেগেছে, বিশেষত তুমি যে IFC -র রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছো সেই জায়গাটা। তবে বেলুন যদি আবারো ফাটে, আমায় আবারও লিখতে হবে। ওই একই বেলুনে ফুঁ দিয়ে আমি জাহাজ বানিয়ে দেব। সবাই দেখবে একটা জাহাজ জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। আসল বেলুনের আকৃতিটা কিরকম ছিল সেটা কারুর মাথায় থাকবে না আর।
  • বঙ্গসন্তান | 232312.163.0123.104 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৩63816
  • আপনাদের সিনেমা কোথায় দেখানো হয় ?
    কলকাতায় না বাইরে ?
    নিশ্চয়ই কোন প্রবেশমূল্য লাগে না ।
  • Anamitra Roy | 340112.77.893412.35 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ০৫:৩০63819
  • @বঙ্গসন্তান,
    আপনাকে আগের লেখার নিচেই উত্তর দিয়েছিলাম। আমাদের ফেসবুক পেজ রয়েছে, গ্রূপ রয়েছে, সেসব জায়গায় কবে কোথায় কি হচ্ছে তার খবর দেওয়া হয়। ওই থ্রেডে অন্য একটা কমেন্টে লিংকগুলো দেওয়াও ছিল। এখানেও দিয়ে রাখলাম।
    ফেবু পেজ : https://www.facebook.com/independentfilmcouncil/
    ফেবু গ্ৰুপ : https://www.facebook.com/groups/130754224450057/

    চলে আসুন, কবে কোথায় কি দেখানো হচ্ছে খবর পেয়ে যাবেন।
  • Anamitra Roy | 340112.77.893412.35 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১১:৫৩63817
  • @বঙ্গসন্তান, আবার আপনি এখানেও? :D
    স্বাগতম!
  • বঙ্গসন্তান | 232312.163.0123.104 (*) | ২৯ আগস্ট ২০১৮ ১২:৩৫63818
  • আপনি তো কোন উত্তর দিলেন না?
    এ সব ছবি কি কলকাতায় হয় ?
    দেখা যেতে পারে ?
    কলকাতার অনেক জায়গায় ছবি, ছোট ছবি, তথ্যচিত্র দেখানো হয় । বেশির ভাগ বিনামূল্যে ।
    সেদিন কিছু তথ্যচিত্র দেখলাম । পাবলো নেরুদার মৃত্যুরহস্য নিয়ে ।
  • Anamitra Roy | 561212.187.8945.173 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ০১:২৬63821
  • ধন্যবাদ।
    কিছুদিন বাদে aap চলে আসবে। ইন ডেভেলপমেন্ট।
    আপনি [email protected] তে আপনার ইমেল আইডিটা পাঠিয়ে রাখতে পারেন ভবিষ্যৎ উদ্যোগগুলির ডিটেল পাওয়ার জন্য। এখনো অবধি যতগুলো ইভেন্ট হয়েছে সবেতেই প্রবেশ অবাধ ছিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে প্রবেশ মূল্য-র ব্যাপারটা আসতে চলেছে। তবে প্রবেশ অবাধ হলেও একটা অনলাইন বুকিং-এর (বিনামূল্যে অবশ্যই) ব্যাপার রাখা হয়। কারণ স্পেস লিমিটেড হওয়ার ফলে একটা ধারণা আমাদের রাখতে হয় যে কতজন আসতে চলেছে। তাছাড়া যাঁরা আসছেন তাঁদের ডিটেলগুলো আমাদের কাছে থাকলে পরবর্তী যেকোনো উদ্যোগের খবর পৌঁছে দেওয়া সহজ হয়।
    পরবর্তী অনুষ্ঠান খুব সম্ভবত ৮ তারিখ যোধপুর পার্কে। এই শনিবার ঠিক হবে। তারপর ২০ তারিখ গল্ফ গার্ডেন্স-এ।
  • বঙ্গসন্তান | 232312.163.121212.64 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ০৪:১১63820
  • দেখলাম । বেশ ভালো উদ্যোগ । আমি ফেসবুক তেমন ব্যবহার করি না ।
    কোথায় হয় এই শো গুলো? সবাই কি প্রবেশ করতে পারে? মানে আমার সঙ্গে যদি আরো কেউ থাকে ?
    পরবর্তী শো কবে ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন