এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • #পুঁটিকাহিনী ৭ - ছেলেধরা

    San Gita লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ মে ২০১৭ | ১৩২৯ বার পঠিত
  • আজ পুঁটির মস্ত গর্বের দিন। শেষপর্যন্ত সে বড় হল তাহলে। সবার মুখে সব বিষয়ে "এখনও ছোট আছ, আগে বড় হও" শুনে শুনে কান পচে যাবার জোগাড়! আজ পুঁটি দেখিয়ে দেবে সেও পারে, সেও কারো থেকে কম যায় না। হুঁ হুঁ বাওয়া, ক্লাস ফোরে কি আর সে হাওয়া খেয়ে উঠেছে!!

    রোজ মা মামনদিদি সমেত তাদের ইস্কুলে পৌঁছে অফিস যান আর ছুটির সময় মামনদিদির মা এসে তাদের বাড়ি নিয়ে যান, এই বন্দোবস্ত নিজেদের মধ্যে। এই হপ্তায় মায়ের পড়েছে অফিসের ট্রেনিং, মহা মুশকিল! অগত্যা সকালে বাবা নিয়ে আসছেন অসুবিধে করেই, বাবার অফিস একদম অন্যদিকে কিনা!! আজ আবার মামনদিদির ছুটি। ছুটির সময় বাবা-মা কেউই অফিস থেকে বেরতে পারবেন না। তাহলে পুঁটির কি হবে?

    মা মাথা খাটিয়ে উপায় বের করলেন যে দিদার বাড়ি চলে যাবে পুঁটি। দিদাকে বললে দিদা এসে নিয়ে যাবেন ওকে। এবার বেঁকে বসল পুঁটি!! দিদাকে বলার কি দরকার? সে একাই তো যেতে পারে। কতবার তো বড়দের সাথে গেছে স্কুল থেকে। ঠিক স্কুলের বাইরে থেকে এক বাসে দিদার বাড়ি চলে যাওয়া যায়, আর নেমেও অল্প একটু হাঁটা। এ তো পুঁটিদের বাড়ির মত দূর নয়! পুঁটি ঠিক পারবে।

    অনেক ভাবনাচিন্তার পরে মা রাজি হয়ে গেলেন। দিদা বয়স্ক মানুষ, তাকে বলতেও খারাপ লাগে। মামা অফিসে থাকবে, আর মামী ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে নাজেহাল। পুঁটিকে পইপই করে রাস্তায় চলার পাঠ পড়ানো হল। মোড় অবধি হেঁটে যেতে হবে না, ঠিক স্কুলের সামনে দিয়ে একটাই মাত্র রুটের বাস যায়, লাল টুকটুকে, মাঝে মাঝে দোতলা, বাকি সময় একতলা, তাতে চড়ে ঠিকঠাক জায়গায় নামার অপেক্ষা। পুঁটি মায়ের কথা ভাল করে শুনলও না, ধুর!! সে সব জানে!!

    সারাদিনটাই বুকের মধ্যে একটা টানটান উত্তেজনা। উফ! এতদিনে, এতদিনে পাওয়া গেল স্বাধীনতা! জানা উত্তর বলার জন্যেও আজ ক্লাসে হাত তোলেনি পুঁটি! আজ ওসবে তার বিন্দুমাত্র মন নেই। পাশে বসা কোয়েলকেও কিছু ভেঙ্গে বলল না আগেভাগে। কাল এসে গল্প শুনিয়ে তাক লাগিয়ে দেবে বরং।

    ছুটির ঘন্টা বাজতেই হনহন করে হাঁটা দিল গেটের দিকে- আঃ, আজ কারোকে খোঁজা বা কারো জন্য অপেক্ষার কোন ব্যপারই নেই! কী যে আরাম!! গুটিগুটি বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াল আর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। বাস আসতে বেশ খানিকটা দেরি হল, তার মাঝে অবশ্য চারপাশে ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিয়েছে পুঁটি, কোন দুষ্টু লোক বা ছেলেধরা তার আশেপাশে ঘুরছে কিনা বা তার দিকে নজর রেখেছে কিনা, এসবও তো আজ তাকেই ভাবতে হবে! পকেটে আবার কড়কড়ে দু টাকার নোট! কোন ভুল হতে দেওয়া চলবে না।

    বাস আসতে দিব্যি উঠে পড়ল তেমন কোন অসুবিধে ছাড়াই। তারপর টুপ করে সীটে বসেও পড়ল। তারপরেই চোখ পড়ল লোকটার দিকে, কেমন সুন্দর কাত্তিক কাত্তিক চেহারা লোকটার, পুঁটির দিকেই তাকিয়ে আছে হাসিহাসি মুখে। কেন রে বাবা? ছেলেধরা নাকি? বলা যায় না, আজকালকার দুষ্টু লোকেদের হয়ত এরকমই দেখতে হয়। গোয়েন্দাগল্পের বইতে তো লেখাই থাকে চেহারা দেখে লোক চেনা যায় না মোটেই।

    ব্যাগের পকেট থেকে আগেই টাকাটা স্কার্টের পকেটে নিয়ে রেখেছিল, বের করে টিকিট কাটার জন্য এগিয়ে দেয় খানিক পরে। দিদার বাড়ির স্টপেজের নাম বলে কন্ডাক্টর কাকুকে নামিয়ে দিতে বলে। গন্ডগোলটা এতক্ষণে ধরা পড়ে কাকুর হইচইতে- সে উল্টোদিকের বাসে উঠে পড়েছে। এই রে, মা তো পইপই করে বলেছিলেন, অনেকে রাস্তা পার হয়, তাদের সাথে রাস্তা পার হয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াতে। মায়ের কথা ভাল করে না শোনার এই ফল!! উত্তেজনায় মোক্ষম ভুল হয়ে গেছে।

    পরের একটা স্টপে নামিয়ে দিল কাকু, বলল পুলিশ কাকুর সাথে রাস্তা পার হতে। মনেমনে ততক্ষণে একটু ভ্যাবাচ্যাকা পুঁটি! কি কেলো! বাড়িতে এসব একদম বলা যাবে না। ওদিকে যেখানে নামছে, সেটা উল্টোদিক বলে একদম অচেনা পুঁটির।

    ওমা!! সেই কাত্তিক দেখে কিনা তার সাথে নামছে! কী সব্বোনাশ!! ভেবেছিল রাস্তা একাই পার হবে, পুলিশ-টুলিশ লাগবে না, কিন্তু এখন তো আর রিস্ক নেওয়া যায় না। দৌড়ে দৌড়ে পুলিশ কাকুর কাছে চলে যায় পুঁটি। রাস্তা পার করে বাসস্ট্যান্ডে তাকে দাঁড় করিয়ে চলে গেলেন তিনি। কাত্তিকও চুপচাপ হাসিমুখে একটু দূরে এসে দাঁড়ায়। তারপর এগিয়ে কি যেন বলতে আসে পুঁটিকে, না বলে ফিরে যায়- আড়চোখে সব দেখে পুঁটি।

    বাস আসতে পুঁটির পেছুপেছু সেও ওঠে বাসে। এবার আর কোন ভুল করে না পুঁটি। শুধু চিন্তায় পড়ে কাত্তিককেও একই জায়গার টিকিট কাটতে দেখে। তাও আবার পুঁটি কাটার আগে, আগের বাসে শুনে রেখেছে তার মানে, কী সাংঘাতিক ধুরন্ধরের পাল্লায় পড়া গেছে রে বাবা!!

    জায়গামত নামে পুঁটি, আর পেছনপেছন কাত্তিক। কী সাহস!! এগিয়ে আসে এবার "এখানেই বাড়ি তোমার? বাড়ি চিনতে পারবে তো? কোন পাড়া আমায় ......" এই অবধি বলেছে কি বলেনি পুঁটি দেখে কি লোকটার হাতে একটা ভাঁজ করা সাদা রুমাল। মনে মনে "ওরে বাবারে!! গেলাম রে!! ম'লাম রে!!" বলে পুঁটি দিল পাঁইপাঁই দৌড়! পেছনপেছন সেও দৌড়চ্ছে সে তো বোঝাই যাচ্ছে পায়ের আওয়াজে। এদিকটাও বেশ নিরিবিলি। মুখে ক্লোরোফর্ম দেওয়া রুমাল চেপে ধরলেই তো হয়ে গেল!! ভাবতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে পুঁটির। ঐ তো মামাবাড়ির বারান্দা দেখা যাচ্ছে। পা চালায় পুঁটি, দরজা দিয়ে ঢুকি একবার, তারপর তোমায় মজা দেখাচ্ছি বাছাধন! ইকী রে! সাথে সাথে সেও যে ঢুকছে! মামীই প্রথম দেখতে পায় পুঁটিকে। হইহই করে ওঠে।

    কাত্তিক এবার এগিয়ে যায় মামীর দিকে- "নমস্কার! এ কি আপনাদের বাড়ির বাচ্চা? খুব স্মার্ট কিন্তু!! তবে আমাকে বোধহয় ছেলেধরা ভেবেছে।" হাহা করে হেসে ওঠে বদমাইসটা। দিব্যি দেখতে দেখতে ভাব জমিয়ে বসে সবার সাথে। দিদা আবার টায়ের সাথে চা খাওয়ায় তাকে আদর করে। ভুল বাসে ওঠা ইত্যাদি সব সিক্রেট ফাঁস করে দেয় লোকটা। তার বাড়িতে নাকি একদম পুঁটির মত একটি ভাইঝি আছে, তাই কাজকম্মো ফেলে উনি পুঁটির পেছনপেছন এসেছেন বাচ্চাটা ঠিকমত বাড়ি ফিরতে পারে কিনা দেখতে। উঃ! দয়ার সাগর! দিদা, মামী এরা কি যে বিগলিত হল এসব শুনে। বারবার ধন্যবাদ দিল লোকটাকে।

    বেশ একপ্রস্থ বকা খেল পুঁটি ভুলভাল দিকে চলে যাবার জন্য, আর একা একা রাস্তায় বেরনো গেল একদম বন্ধ হয়ে। আরে, সে তো নিজেই আবার ঠিক জায়গাতেও এসে গেছে, না কি? কেউ সেটা বুঝল না, জনে জনে বলতে লাগল "ভাগ্যিস ঐ ভদ্রলোক ছিলেন!!" আশ্চর্য মানুষ সব! কি করে বোঝায় পুঁটি এদের! ঐ রুমালটা তো আর এরা দেখেনি!

    ©sangitaghoshdastidar
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ মে ২০১৭ | ১৩২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 24.139.119.173 (*) | ২৫ মে ২০১৭ ০৯:৫১59651
  • দারুণ!!!

    ক্লাস ফোর অবিশ্যি একটু বেশীই ছোট সেই সময়ের নিরিখে -
  • San Gita | 57.15.6.110 (*) | ২৬ মে ২০১৭ ০৩:৩৩59652
  • থেন্কু দে। পরেরটা দিলাম।
  • Du | 57.184.32.243 (*) | ২৯ মে ২০১৭ ০৫:২১59653
  • পুটি যে হাকিম ম্যাজিস্ট্রেট হবে তখন থেকেই তার লক্ষ্ন সুপ্ত ছিল ঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন