এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অলসের শাস্তি

    Lilaboti Lb লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৯ | ১২৮৮ বার পঠিত
  • গত কয়দিন বাড়িতে কোন লোক নেই। সবাই মিলে আত্নীয়ের বিয়েতে গেছে। আমার এ বিষয়ে এলার্জি আছে বিধায় চোখমুখ উল্টে অসুস্থ হ‌ওয়ার অভিনয় করে বেঁচে গেছি। আমাকে রেখেই সবাই চলে গেছে। কাজের মেয়েটা শেষ ভরসা ছিল বাড়ি ফাঁকা দেখে প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়ে আর ফেরেনি। সম্ভবত বিয়ে করে সংসার পেতেছে। কাজের মেয়েকে ফোন দিলাম।বললাম,কোথায় তুমি কখন আসবা?
    সে বলল,আপা আমার খুব পেটে বেদনা,পিঠ ফেটে‌ যায়,ঘাড়ে ব্যাথা,বাতের ব্যাথা, হাঁটুর গিরায় গিরায়‌ যন্ত্রণা ইত্যাদি ১২ আদার্স সমস্যার বিবরণ দিয়ে বলল,আপনি একটু ম্যানেজ করেন।
    আমি একটা ধমক দিয়ে বলতে গেছি আমি কি ম্যানেজ করব? কোন কাজটা পারি আমি? তার আগেই ফোনের ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে।

    উপায়ান্তর না দেখে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করে কয়েকদিন চলল। এরপর শুক্রবার। রেস্টুরেন্ট বন্ধ। ভাবলাম খিঁচুড়িটাতো বসাতেই পারি! খিচুঁড়ি বসালাম। ঝাল, পিঁয়াজ,তেল,লবন,পানি সব দিয়ে চুলায় বসিয়ে বসে বসে ভাবছি কিছু মিস করলাম কিনা। রান্না শেষ করে খেতে বসার সময় আবিষ্কার করলাম ডাল ছাড়াই খিঁচুড়ি রান্না‌ করেছি। খিঁচুড়ির জন্য ডালটা কত জরুরী সেটা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছি। ক্ষুদার রাজ্যে চাঁদকেই যেখানে ঝলসানো রুটি মনে হয় ডাল ছাড়া খিঁচুড়িও সেখানে অমৃত মনে হবে সেটাই স্বাভাবিক। সুতরাং সেটাই খানিকটা খেয়েদেয়ে ঘুম দিয়েছি।
    আপু ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাল, বাড়িঘরের কি অবস্থা?
    আমি বললাম,ভালো অবস্থা বলেই তো মনে হচ্ছে।
    -ঘর ঝাড়ু দিস?

    মনে পড়ল রান্না খাওয়া ছাড়াও ঘর পরিস্কারের একটা বিষয় থাকে! যেটা ছয়দিন ধরে করা হচ্ছে না। ইদানিং যে ঘরেই যা‌ই বিকট গন্ধ তাহলে এই কারণেই পাই।‌ প্লাস ধূলা ওড়ার কারণে ডাস্ট এলার্জির স্বীকার হয়ে হাচ্চি মারতে মারতে শেষ হয়ে যাই।

    -কিরে? কথা বল!
    আপু‌ ফোনের ওপাশে ভুলেই গিয়েছিলাম।
    বললাম,হু দিতেছি! রাখো!

    আপুকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ‌ঘর ঝাড়‌ দিতে গেলাম। আমাদের পুরানো বাড়ি।ওপরতালায় আমাদের বেডরুমের সংখ্যা ছয়টা,এছাড়াও রান্নাঘর, ডাইনিং তো আছেই। বাথরুম পরিষ্কারের ব্যাপারটা চিন্তাতেও আনছি না। বরং এই আটটা ঘরের ভেতর থেকেও দশ,বিশ,ত্রিশ,চল্লিশ গোনার যে খেলাটা আছে ওটা খেলব। তারপর দুইটা ঘর ঝাড়ু দেব, এভাবে রোজ দুইটা করে ঝাড়ু দেব।

    ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়লাম। আমি যত‌ই ঝাড়ু দিয়ে ময়লাগুলো এক জায়গায় করার চেষ্টা করছি সব ময়লা আবার উড়ে গিয়ে সারাঘর হয়ে যাচ্ছে।‌ এভাবে রবার্ট ব্রুসের মতো পনেরবার চেষ্টা করার পর খেয়াল হলো,ফ্যান চলছে! ততক্ষণে আমি ক্লান্ত হয়ে বিছানায় উল্টে পড়েছি। এরপর ঘর ঝাড়ু দেয়ার ব্যাপারে আর না ভেবে রাতে কি খাবো সেই চিন্তা করাটাই বেটার।

    রাতে খাওয়ার জন্য ফ্রিজে ছোট মাছ খুঁজে পেয়েছি। এখন এই মাছ রান্না কি করে করতে হয় আমি জানি না।‌স্মৃতির ওপর জোর দিলাম। কাজের মেয়ে,ভাবী,আপু কিভাবে রান্না করে মনে করার চেষ্টা করলাম। ঝাল, পিঁয়াজ,তেল,লবন, মাছ (না কেটেই) একসাথে করে চুলায় বসিয়ে দিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি। শেখ তন্ময়ের টাইমলাইনে ঢুকে ছবিগুলো দেখছি আর ''মানুষ কেন এত সুন্দর হয়'' এটা সম্পর্কে গভীর চিন্তাভাবনা করছি। মানুষের সুন্দরের উৎপত্তি কোথায়? বাবা-মায়ের মধ্যে একজন অসুন্দর হলে অনেক সময় সন্তান অসুন্দর হয়। আবার দুইজন অসুন্দর হলেও দাদী-নানী সুন্দর হলে ছেলেমেয়ে দেখতে সুন্দর হয়...

    এসব ভাবতে ভাবতে পোড়া গন্ধ নাকে আসায় মনে পড়ল চুলায় মাছ দেয়া। ছুটে গিয়ে দেখি মাছগুলো আগুনে পুড়ে বিধ্বস্ত একেকটা লাশ হয়ে বিকট দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাতে ভয়ে ঘুম হবে না এমন একটা অবস্থা!

    ''একরাত না খেলে কেউ মরে যায় না'' এই জাতীয় আধ্যাত্মিক চিন্তা ভাবনা করতে করতে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে কিছু মনীষীর জীবনী মনে করলাম। মনকে বোঝালাম অনেক সাধু সন্ন্যাসী আছে বছরের পর বছর না খেয়ে থাকে, পানি খেয়ে থাকে। আমি না হয় একরাত না খেয়ে থাকলাম। মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

    পাশেই বিকট দুর্গন্ধ পেয়ে লাফ দিয়ে উঠেছি। আব্বুর বজ্জাত বিড়ালটা প্রাকৃতিক কর্ম সেরে গেছে আমার বিছানায়।

    দুঃখে চোখের কোনে পানি চলে এলো আমার। অন্যান্য ঘরের বিছানাগুলোর ওপরে তিনপ্রস্থ ধূলা। মনের দুঃখে ড্রয়িংরুমে কার্পেট বিছিয়ে শুয়ে আছি আর কেন আত্নীয়ের বাড়ি গেলাম না তারজন্য নিজেকে খাঁটি বাংলায় গালাগালি দিচ্ছি এমন সময় আপুর ফোন।

    -খেয়েছিস?
    :হু খেয়েছি।
    -আমরা এখানে খুব মজা করছি সবাই মিলে পিকনিক করছি।তোর সব পছন্দের আইটেম ছিল। মিস করলি।

    মনের দুঃখে ফোনের এপাশ থেকে চোখের পানি মুছলাম নিরবে।

    আপু জানাল তারা কাল আসছে।

    বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠল আমার। রান্নাঘরে পোড়া মাছ,ডালবিহিন নষ্ট হয়ে গন্ধ ছড়ানো খিঁচুড়ি, জায়গায় জায়গায় ঝুল,ময়লা ও ধুলার আস্তরণ,কয়েক জায়গায় বিড়ালের ইয়ে... সবমিলিয়ে কাল‌ই সম্ভবত আমার জীবনের শেষ দিন।

    সকালে যে গাড়িতে আপুরা আত্নীয়ের ওখান থেকে বাড়ি ফিরছে,এখানের সেই এক‌ই গাড়িতে উঠে আমিও সেই আত্নীয় বাড়ি র‌ওনা দিয়েছি। এদিকের ঝড় থামলে ফিরে আসব। অন্তত গালাগালি খাওয়ার চেয়ে ততদিন একটু ভালোমন্দ খেয়ে আসি আমিও‌।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মার্চ ২০১৯ | ১২৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নৈঋত | 342323.223.014512.58 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:৫৬49511
  • এইডা ভালাইসে
  • de | 238912.57.451212.84 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৯ ১০:৫৮49510
  • এইলেখাটা আগে দেখিনি তো!ঃ)))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন