এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • মৃণাল সেন : এক উপেক্ষিত চলচ্চিত্রকার

    এবড়োখেবড়ো লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ৪০৪৮ বার পঠিত
  • [আজ বের্টোল্ট ব্রেশট-এর মৃত্যুদিন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে যিনি সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ব্রেশটিয় আঙ্গিক, সেই মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি সামান্য লেখা।]

    ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কীভাবে যেন পরিচালক ত্রয়ী সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল এক বিন্দুতে এসে মিলিত হন। ১৯৫৫-তে মুক্তি পাচ্ছে ‘পথের পাঁচালী’; একই বছরে মৃণাল করছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’; আর ভারতীয় সিনেমার প্রকৃত পথপ্রদর্শক হিসাবে যাঁর সম্মানিত হওয়ার কথা সেই ঋত্বিকের ১৯৫২ সালে তৈরি ‘নাগরিক’-এ অভিনয় করছেন গীতা সোম যিনি পরের বছরে ঘরনি হবেন মৃণালের।

    উনিশশো তেইশে মৃণাল সেনের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সেখানকার সজল-শ্যামল প্রকৃতিকে চিরবিদায় জানিয়ে ১৯৪০-এ তিনি কলকাতায় আসছেন সায়েন্স নিয়ে পড়তে। কলকাতার বৃহত্তর জগতের সঙ্গে ক্রমশ পরিচিত হচ্ছেন মৃণাল। কলেজে পড়তে পড়তেই সহসা খোঁজ পাচ্ছেন ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি (বর্তমানে ন্যাশনাল লাইব্রেরি)-র। সেখানে সকাল ন’টা থেকে সন্ধে ছ’টা অবধি কোনও বাছবিচার না করে গোগ্রাসে গিলছেন সাহিত্য-দর্শন-রাজনীতি-চলচ্চিত্র-সমাজতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব-নন্দনতত্ত্বর ওপর লেখা যাবতীয় বইপত্তর। আর তার সঙ্গে তাঁর নিজের কথায় সিনেমা দেখছেন ‘চা খাওয়ার মতো করে’। এই সময়েই কালীঘাট দমকলের কাছে হেমবাবুর চায়ের দোকান ‘প্যারাডাইস ক্যাফে’-তে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন ঋত্বিক-তাপস সেন-হৃষিকেশ-সলিল-বংশী চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে। চোখে তখন সিনেমা করার স্বপ্ন ক্রমেই দানা বাঁধছে।

    ততদিনে বামপন্থায় আকৃষ্ট মৃণালকে নাড়িয়ে দিচ্ছে তেভাগা-তেলেঙ্গানা। একটা লজ্‌ঝড়ে ক্যামেরা জোগাড় করে চলে যাচ্ছেন কাকদ্বীপে ছবি করতে — যেখানে চিত্রনাট্য মৃণালের, সংগীত পরিচালনায় সলিল, পরিচালনায় ঋত্বিক আর হৃষিকেশ। কিন্তু সে ছবি শেষ না করতে পারার যন্ত্রণায় চিত্রনাট্য পুড়িয়ে দিচ্ছেন মৃণাল, পরবর্তীকালে যে কাজের জন্য আফশোস করতে দেখব তাঁকে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চাকরির তীব্র মন্দার বাজারে উপার্জনের চেষ্টা তাঁকে কোনও কাজেই থিতু হতে দিচ্ছে না। তাই কখনও প্রুফ রিডার, কখনও ইংরেজির প্রাইভেট টিউটর, কখনও অনুবাদক, কখনও মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ-এর কাজ ছাড়ছেন তিনি। আর সিনেমা করার আগেই ১৯৫৩-য় প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর আজীবন ভালোলাগার মানুষটিকে নিয়ে প্রথম বই ‘চার্লি চ্যাপলিন’।

    আমরা এক নিঃশ্বাসে যতই সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল উচ্চারণ করি না কেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের তিন মহীরূহই কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরানার। খোদ সত্যজিৎ তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে লিখেছেন ‘They started at about the same time as I did, Ritwik and Mrinal’। কিন্তু এ কথাও বলেছেন পাশাপাশি ‘They were making films very different from mine, very different, but very powerful, I think’। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক ধীমান দাশগুপ্ত ‘গণশিল্পী ঋত্বিককুমার ঘটক বনাম ঋত্বিক : নিঃসঙ্গ স্রষ্টা’ প্রবন্ধে চমৎকারভাবে ধরেছেন এই তিন দিকপাল শিল্পীর আন্তঃসম্পর্ককে। তাঁর মতে, “সত্যজিৎ সমন্বিত, সুষম, শীলিত, কমনীয়। ঋত্বিক মন্থর, তীব্র, শিথিল, অনমনীয়। অন্যদিকে মৃণাল দ্রুত, তীক্ষ্ণ, তৎপর ও নমনীয়।” আর মৃণাল নিজে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন — “I am not a Kurosawa, I am not a Satyajit Ray, I am not a Godard, who believe in drawing sketches. I can’t do that. I can’t draw a single line. My films are a kind of thesis।”

    সিনেমা পরিচালনা করতে গিয়ে ধ্রুপদী সাহিত্যকে নিজের ছবির আশ্রয় করতে চাননি তিনি। বরং সাহায্য নিয়েছেন কখনও আশীষ বর্মণ (‘পুনশ্চ’, ‘আকাশকুসুম’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘পদাতিক’); কখনও অমলেন্দু চক্রবর্তী (‘একদিন প্রতিদিন’, ‘আকালের সন্ধানে’); কখনও বা মহাদেবী ভার্মা (‘নীল আকাশের নীচে’), কালিন্দীচরণ পানিগ্রাহী (‘মাটির মনিষ’) কিংবা মুন্সী প্রেমচন্দর (‘মৃগয়া’)। কাহিনি বৈচিত্র্যের মতোই ছবির ভাষার ক্ষেত্রেও একটি বা দু’টি ভাষায় চলচ্চিত্র বানিয়ে তিনি নিজেকে বন্দি করে রাখেননি। তাঁর আটচল্লিশ বছরের (১৯৫৫-২০০২) শিল্পজীবনে যে ২৮টি কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন মৃণাল, সেখানে তিনি বাংলা বাদেও বানিয়েছেন একটি ওড়িয়া, একটি তেলুগু এবং ছ’টি হিন্দি ছবি – যথাক্রমে ‘মাটির মনিষ’, ‘ওকা উরি কথা’, ‘ভুবন সোম’, ‘এক আধুরি কহানি’, ‘মৃগয়া’, ‘খণ্ডহর’, ‘জেনেসিস’ এবং ‘একদিন অচানক’। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে মৃণাল আজীবন বিশ্বাস করেছেন চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট কোনও ভাষা হয় না, চলচ্চিত্র সাহিত্যের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা একটি শিল্পমাধ্যম।

    যদিও আমরা লক্ষ্য করি যে, ‘আকাশকুসুম’ থেকেই বাঁকবদল শুরু হচ্ছে পরিচালক মৃণালের, কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে তাঁকে স্থায়ী আসন এনে দিচ্ছে ১৯৬৯ সালের ছবি ‘ভুবন সোম’। মৃণাল তাঁর ‘চলচ্চিত্র ভূত বর্তমান ভবিষ্যৎ’ গ্রন্থে লিখেছেন, “... বাংলা চলচ্চিত্র সম্পর্কে যে সংকটের কথা বলা হয় অর্থাৎ আর্থিক সংকট অর্থাৎ যে সংকট আসে জনপ্রিয়তার অভাব থেকে – সেই সংকট কাটাতে গেলে প্রথমেই যা করণীয় তা হল — ১) কম পয়সায় ছবি তোলা অর্থাৎ স্টার সিস্টেমকে বর্জন করা এবং অকারণ, অহেতুক, অসংগত জাঁকজমক বর্জন করা; ২) চলচ্চিত্রের বাজারের পরিধি বাড়ানো অর্থাৎ আঞ্চলিক গণ্ডি ডিঙিয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা।” ‘ভুবন সোম’ যেন এই তত্ত্বের সার্থক বাস্তব প্রয়োগ। এই ছবি অনেক দিক দিয়েই নতুন — মৃণাল, উৎপল দত্ত এবং শেখর চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম হিন্দি ছবি; সুহাসিনী মুলের এ ছবিতেই প্রথম অভিনয়; কে কে মহাজনের প্রথম কাহিনিচিত্রে সিনেমাটোগ্রাফি; সংগীতকার বিজয় রাঘব রাও-এর প্রথম সংগীত পরিচালনা এবং অমিতাভ বচ্চনের প্রথম ভয়েস ওভার। মাত্র দেড় লাখ টাকায় বানানো, বনফুলের গল্পটার একটা আট পাতার খসড়াকে চিত্রনাট্য হিসাবে বিবেচনা করে গোটা সিনেমাটায় যে অনবদ্য ভাষ্য বুনে দেন মৃণাল, তা তাঁকে ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমার পথিকৃতের সম্মান এনে দেয় অনায়াসে। দর্শক মুহূর্তের মধ্যে উপলব্ধি করেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভুবন সোম এত সোচ্চার ছিল, সেই দুর্নীতি গোটা ভারতে বজায় থাকবে বহাল তবিয়তেই।

    ‘ভুবন সোম’-এর ঠিক পরের বছর থেকেই সত্তরের উত্তাল কলকাতাকে সেলুলয়েডের ক্যানভাসে বন্দি করতে সত্যজিতের অপু-ত্রয়ী (পথের পাঁচালি-অপরাজিত-অপুর সংসার); ঋত্বিকের উদ্বাস্তু-ত্রয়ী (মেঘে ঢাকা তারা-কোমলগান্ধার-সুবর্ণরেখা)-র পর আমরা পেতে শুরু করি মৃণালের রাজনৈতিক-ত্রয়ী 'ইন্টারভিউ’-‘কলকাতা ৭১’-‘পদাতিক’। মৃণালের নিজের কথায়, “ ... এমনই একটা বিশ্বাস থেকে ’৬০-’৭০ দশকের সন্ধিক্ষণে নকশাল আন্দোলনকে দেখেছি, তা নিয়ে ভেবেছি, জড়িয়ে পড়েছি। এ-দেখার মধ্যে বেহিসেবিপনা ছিল, এ ভাবনার ভিতরে বেপরোয়া ভাবনা ছিল, এভাবে জড়িয়ে পড়ায় অনেকটাই আবেগ যুক্ত ছিল। কিন্তু এসবের মধ্যে আর কোনো হিসেব ছিল না, নির্লিপ্ত শীতল পর্যবেক্ষণ ছিল না, ছক কষার কোনো চেষ্টা ছিল না। নকশাল আন্দোলনকে সামনে রেখে কোনো অঙ্কটঙ্ক কষে ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, কিংবা পদাতিক বানাইনি। ওই অস্থির সময়টার তাপ যখন যেভাবে মনের ওপর ছাপ ফেলেছে, সেভাবেই একের পর এক ছবিগুলো করে গেছি।” বস্তুতপক্ষে নকশালবাড়ির রাজনীতি নিয়ে এমন সংবেদনশীল আখ্যানের চারপাশ সত্যজিৎ সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছেন, ঋত্বিকও যুক্তি-তক্কোতে যেভাবে ধরেছেন তাতে তাত্ত্বিক কচকচানি থাকলেও হৃদস্পন্দন কোথাও যেন অনুপস্থিত থেকেছে। কিন্তু মৃণাল তাঁর সমস্ত আক্রোশ-যন্ত্রণা-সহমর্মিতা-সমবেদনা উজাড় করে দিয়েছেন এই তিনটি ছবিতে।

    এর পরেও যেন তিনি তৃপ্ত হতে পারেননি। তাই বাকি কথাগুলো বলার জন্য বেছে নিয়েছেন ‘কোরাস’-কে, যে ছবিতে সিনেমার ফর্ম নিয়ে অমন তীব্র দুমড়ানো-মোচড়ানো পরিচালকত্রয়ীর মধ্যে একমাত্র মৃণালই করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে ছবির মূল ভাবনাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে :“ ‘কোরাস’ আমাদের ছবিতে শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় একটি ব্যাপক অর্থে — বিশাল মানুষের এক বিশাল ইচ্ছা — বিস্তর মানুষ, অনেক কথা, বহু লড়াই, সব যখন একীভূত হয়ে যায়, একটা সাংগীতিক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ একটা collective আবেগ বা ইচ্ছা — তারই নাম ‘কোরাস’।” এই চারটি ছবিই মৃণালকে নিঃসন্দেহে প্রথম ভারতীয় রাজনৈতিক চলচ্চিত্রকার হিসাবে আমাদের কাছে তুলে ধরে।

    মৃণাল বরাবরই আঙ্গিকসচেতন পরিচালক। ছবির বিষয়বস্তুকে আরও তীক্ষ্ণ, আরও জোরালো করতে গিয়ে বিভিন্ন ছবিতে তিনি আঙ্গিকের যে সচেতন প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তার উল্লেখ যতই করা হোক না কেন তা অসমাপ্ত থাকতে বাধ্য। মৃণাল নিজে জানিয়েছেন, “যেভাবে এতকাল বলা হয়েছে, সেইভাবে যদি না বলে অন্যভাবে বলা যায় তাহলে বলার চেহারাটাও পাল্টে যায়। বলা তো হয়ে গেছে প্রচুর কথা এবং সে কথাগুলোই তো আমরা বারবার বলছি। তাই চলতি লিনিয়ার স্ট্রাকচারের বাইরে যেতেও মন চায় প্রায়ই।” তাই আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি — ‘আকাশকুসুম’-এ ফ্রিজ শটের ব্যবহার; ‘ভুবন সোম’-এ মাস্ক শটের ব্যবহার করে গল্পটা মুহূর্তের জন্য থামিয়ে দিয়ে ভুবন সোমের ভেতরের কথাগুলো বলিয়ে নেওয়া; ‘ভুবন সোম’-এই একজন আমলার বন্দিদশা ও তার চরিত্রটির যান্ত্রিকতা দেখাতে গিয়ে ছবির শুরুতে অ্যানিমেশনের ব্যবহার, ‘মৃগয়া’-তে ডুংরিকে (অভিনয়ে মমতাশঙ্কর) ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটায় কোনও শারীরিক টানাহ্যাঁচড়া না দেখিয়ে স্রেফ তার পালকিতে ওঠা- দরজা বন্ধ হওয়া-এবং সর্দারের (অভিনয়ে অনুপকুমার) কর্কশ কণ্ঠস্বরের সাউন্ড এফেক্টের দুর্দান্ত ব্যবহার; ‘কোরাস’-এ ইমেজের ফাঁকে সাদা স্ক্রিন, ‘কলকাতা ৭১’-এ ট্রলিতে না চাপিয়ে হাতে ধরে ক্যামেরা চালানো; ‘একদিন প্রতিদিন’-এ সাংবাদিকতার ঢঙে ন্যারেশন কিংবা ‘কলকাতা ৭১’-এই ব্রেশটিয় পদ্ধতি অনুসারে আলাদা আলাদা এপিসোডে ন্যারেটিভের অখণ্ড প্যাটার্নকে ভেঙে ফেলা ইত্যাদি।

    এই আঙ্গিকসচেতন মৃণাল তাঁর আঙ্গিকের সম্ভবত সার্থকতম প্রয়োগটি করেন ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে, যেখানে একবারের জন্যও চিরাচরিত ফ্ল্যাশব্যাক পদ্ধতির সাহায্য না নিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় ৪৩-এর মনুষ্যসৃষ্ট আকালকে তিনি মিলিয়ে দেন ১৯৮০-র বর্তমান মন্বন্তরের সঙ্গে। কেবলমাত্র কাহিনির বিনির্মাণের মাধ্যমে তিনি অতীত ও বর্তমান সময়কালের স্থান পরিবর্তন করে দেন এই চলচ্চিত্রে। বুঝিয়ে দেন আসলে ৪৩ আর ৮০-র মধ্যে ফারাক কিছুই নেই। তাই সিনেমার স্মিতা (অভিনয়ে স্মিতা পাতিল) কখন যেন রূপান্তরিত হয়ে যান বাস্তবের দুর্গায় (অভিনয়ে শ্রীলা মজুমদার)। তাঁর কলকাতা-ত্রয়ী যদি হয়ে থাকে নকশালবাড়ির থিসিস, তাহলে অনায়াসে এই ছবিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে মৃণালের আকালের থিসিস হিসাবে।

    আসলে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে মৃণাল কখনও বিশুদ্ধতাবাদীদের মতো আড়ষ্টতায় ভোগেননি। তিনি বিশ্বাস করেছেন যে, একটি সংবাদপত্রের কেবলমাত্র হেডলাইন থেকেও ছবি বানানো যেতে পারে। চলচ্চিত্র যে একটি বিশুদ্ধ মাধ্যম নয়, বরং সেখানে মুনশিয়ানার সঙ্গে অন্য মাধ্যমের নানা জিনিস ব্যবহার করা হলে তা যে সার্থক চলচ্চিত্রও হয়ে উঠতে পারে – সে ব্যাপারে নিঃসন্দিহান ছিলেন তিনি। তাই মৃণালের মতো আর কোনও ভারতীয় পরিচালকের ছবিতে এত বিভিন্ন, বিবিধ ও বিচিত্র বিষয়ের সংঘাত ও সহাবস্থান ঘটেনি। তাঁর সিনেমা তৈরিতে তিনি চলচ্চিত্র ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যম থেকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছেন চিত্রকলা, আলোকচিত্র, বিজ্ঞাপন, ফিল্ম তৈরির ছবি, বেতারানুষ্ঠান, সংবাদপত্রের বিবৃতি ও শিরোনাম, পোস্টার, হোর্ডিং, ডামি, স্ট্যাচু ইত্যাদি নানাবিধ জিনিস। আবার সিনেমারই প্রয়োজনে চলচ্চিত্রের মূল কাহিনিটিকে প্রয়োজন মতো ভেঙেচুরে নিয়ে তাঁর ছবিকে দিয়েছেন এক অব্যর্থ পটভূমি। ‘ভুবন সোম’-এর মূল কাহিনির সাহেবগঞ্জকে তিনি বদলে দেন সৌরাষ্ট্রের মায়াবী জগতে; ‘ওকা উরি কথা’-য় প্রেমচন্দের ‘কাফন’-এর উত্তরপ্রদেশের কঠিন শীতের রূঢ়তাকে তিনি প্রতিস্থাপন করেন দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা দিয়ে; আবার প্রেমেন্দ্র মিত্র-র ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ থেকে যখন ‘খণ্ডহর’ করেন তিনি, তখন সুভাষকে মাছধরা বাঙালি থেকে পাল্টে দেন স্টিল ফটোগ্রাফারে। ছবির শেষ ভাগে তাই দেখি খণ্ডহরের যামিনী সুভাষের কাছে নেহাতই একটা মুহূর্ত মাত্র, একটা ছবি তোলার সাবজেক্ট বিশেষ, যা শেষ হয়ে গেলে যামিনী সম্পর্কে সুভাষের অপরিসীম নির্লিপ্তি চমৎকারভাবে প্রস্ফুটিত হয়।

    কলকাতা ট্রিলজি পর্বে যে রাগী মৃণালকে, যে সোচ্চার মৃণালকে আমরা দেখি; ১৯৮০তে এসে সেই একই মৃণাল রাষ্ট্রের দিকে আর অভিযোগের তর্জনী তোলেন না। বরং তাঁর মধ্যমা-অনামিকা-কনিষ্ঠার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেন নিজের দিকে, মধ্যবিত্ত মৃণালের দিকে। বারবার আমাদের চুল ধরে টেনে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন, নগ্ন করে দেন মধ্যবিত্তের অসহায়তা-দোদুল্যমানতা-স্বার্থপরতা-নির্লজ্জতা-শঠতা-নির্লিপ্ততাকে। এইবার তিনি বানান তাঁর মধ্যবিত্ত ট্রিলজি ‘একদিন প্রতিদিন’-‘চালচিত্র’-‘খারিজ’। এই সব ছবিতে মৃণাল শান্ত, পরিণত, নিরুচ্চার অথচ দর্শকের সঙ্গে সংযোগের কাজটি করে চলেন ঋষিসুলভ নিরাসক্তি নিয়ে। এই ছবিগুলোতে তিনি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গোটা ছবির সংকটটাকে ধরেন; সকাল থেকে সন্ধে, বা সন্ধে থেকে পরদিন সকাল বা এই সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত। আর রেকারেন্ট মোটিফের মতো ফিরে ফিরে আসে একটা পলেস্তারা-খসা, স্যাঁতস্যাঁতে পাকা বাড়ি যা হয়তো ওই বাড়িটির বাসিন্দাদের ভেতরের চেহারাটার রূপক।

    ‘একদিন প্রতিদিন’ ছবিতে চিনুর বাড়িতে এসে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে একটি মেয়ের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর দেয় পুলিশ। মেয়েটির খোঁজে এন আর এস হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে হাজির হন অসংখ্য অভিভাবক — যাঁদের ওইদিনই কারও নাতনি, কারও কন্যা কিংবা কারও বোন রাতে বাড়িতে ফেরেনি। মেয়েটি হাসপাতালে মারা গেলে তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করতে একে একে এগিয়ে যান ওই অভিভাবকরা। মেয়েটি যে তাঁদের পরিচিত নয় তা বুঝতে পেরে স্বস্তির শ্বাস ফেলে হাসপাতাল চত্বর ছাড়তে থাকেন তাঁরা। অবশেষে শেষ ব্যক্তি হিসাবে মেয়েটির দাদা চিনতে পারেন তাঁর বোনের মৃতদেহ। কিন্তু কী আশ্চর্য, সেই নিদারুণ কষ্টের মধ্যে তিনি অনুভব করেন তাঁর আশেপাশে কোনও সমব্যথী নেই - তিনি সম্পূর্ণ একা। আবার ‘খারিজ’ ছবিতে দেখা যায় একটি শিশুকে গৃহকর্মের কাজে লাগানো গৃহস্বামী অঞ্জন (অভিনয়ে অঞ্জন দত্ত) যতই বলুন না কেন ‘ও আমাদের বাড়ির লোকের মতোই ছিল’, দর্শক কিন্তু নিশ্চিতভাবেই বুঝে ফেলেন পালান ছিল নিপাট অবহেলার পাত্র। এতটাই অবহেলা যে, তাঁরা পালানের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ঘুলঘুলিহীন রান্নাঘরটি যেখানে উপযুক্ত অক্সিজেন ঢুকতেই পারে না।

    বরাবর বাঙালির মধ্যবিত্তের অসার স্বপ্নের বা স্বপ্নভঙ্গের কাহিনিকার ছিলেন বলেই বোধ হয় বাঙালি দর্শকের অধিকাংশের কাছে কখনওই খুব ‘কাছের মানুষ’ কিংবা ‘পছন্দের পরিচালক’ হয়ে উঠতে পারেননি মৃণাল সেন। বরং চিরকালই তাঁকে ভাবা হয়েছে সত্যজিৎ-ঋত্বিকের মধ্যবর্তী হাইফেন চিহ্ন হিসাবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক-প্রাবন্ধিক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন :‘দুর্ভাগ্য, নাকি ভাগ্যই বলব, মৃণাল সেনের, তিনি কোনো দিন বাঙালির দেবকুলে স্থান পাননি’। এ মূল্যায়ন বর্ণে বর্ণে সত্যি। অথচ মৃণাল নিজ গুণেই মৃণাল, সত্যজিৎ-ঋত্বিকের তুমুল উপস্থিতি অগ্রাহ্য করেই মৃণাল। তাঁকে যদি চিনতে না পারি আমরা তবে সে দায় আমাদের,আমাদের চলচ্চিত্রবোধের। তাই সত্যজিৎ-ঋত্বিকের সঙ্গে কেবলমাত্র মৃণালের নামোচ্চারণ করলেই আমাদের দায় মেটে না, মৃণাল প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি আলোচনার জন্য দায়বদ্ধ করেন আমাদের।

    এই মরা পৃথিবীতে এখনও মায়াবী আলো ছড়ানোর অপার ক্ষমতাশালী মৃণাল,আপনাকে আনত কুর্নিশ।

    ঋণ :
    ১. প্রলয় শূর (সম্পাদিত), ‘মৃণাল সেন’, বাণীশিল্প, কলকাতা, ১৯৮৭
    ২. ধীমান দাশগুপ্ত, ‘সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল ও অন্যান্য’, এবং মুশায়েরা, কলকাতা, ২০০৭
    ৩. মৃণাল সেন, ‘চলচ্চিত্র ভূত বর্তমান ভবিষ্যৎ’, সপ্তর্ষি, কলকাতা, ২০১৩
    ৪. শিলাদিত্য সেন, ‘মৃণাল সেনের ফিল্মযাত্রা’, প্রতিক্ষণ, কলকাতা, ২০১৫

    (লেখাটি চারু মজুমদার জন্ম-শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত 'নবান্ন', ত্রিংশতি বর্ষ, বর্ষা সংখায় প্রকাশিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ৪০৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • অর্জুন | 236712.158.895612.118 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৪৭49379
  • গীতা সেন তপন সিংহের খুব বড় ফ্যান ছিলেন। স্বামীকে বলেছিলেন 'তোমাদের মধ্যে তপনই একমাত্র পরিচালক যার ছবি আমার ভাল লাগে, বুঝতে পারি।'
  • অর্জুন | 236712.158.895612.118 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৫৮49380
  • যদিও এ লেখায় এটার গুরুত্ব আছে কিনা জানিনা। তা হল মৃণাল সেন ও সত্যজিৎ রায়ের বিরোধ বিষয়ক । দুজনের ঠোকাঠুকি লাগত বেশ। মৃণাল সেন কড়া কথা শোনাতে ছাড়তেন না। সত্যজিৎ- প্রিয় বাঙালী যার জন্যে সবসময়ে মনে করে এসেছে মৃণাল, রায় সাহেবকে হিংসে করে।

    সত্যজিতের মৃত্যুর পরে মৃণাল সেনের আক্ষেপ ছিল 'আর কার সঙ্গে ঝগড়া করব। ঝগড়া করার লোক চলে গেল'।
  • রঞ্জন | 236712.158.895612.202 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৩০49371
  • "মৃণাল চাইতেন তার সিনেমা দেখে দর্শক একটু, সামান্যতম হলেও, একটু ভাবুক। সিনেমার মিডিয়ামকে পিওর আর্ট ফর্মের মধ্যে রেখেও সমাজ ব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, নিউজ মিডিয়া নয়, ডকুমেন্টারিও নয়, সিনেমার ন্যারেটিভ এর মধ্যে দিয়ে সমসাময়িক সমাজ ও সময়ের প্রতিফলন"।
    --- আমার চোখে এটাই মৃণালের সিনেমার ইউ এস পি।
    বেশি ভাল লেগেছে -- ভুবন সোম, আকালের সন্ধানে, একদিন প্রতিদিন এবং খন্ডহর ও এক দিন অচানক।
  • রঞ্জন | 236712.158.895612.202 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৩৫49372
  • " অর্থাৎ কেতাবী অবিচুয়ারি যেখানে শেষ হয়, তার পর থেকে শুরু হোক আপনার পরবর্তী আলোচনা।"
    -- ইয়েস। ঃ))
  • খুকখুক | 237812.69.563412.111 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ১১:৫৮49373
  • এডিটিং নিয়ে একটু বলবেন মানিক-মৃণাল পাশাপাশি তুলনামূলক অল্প করে? বচ্চনবাবু দুজনের সিনেমাতেই শুধু ভয়েস ওভার দিয়েছেন, তিনি মানিকবাবুর এডিটিং নিয়ে উচ্ছ্বসিত সংগত কারণেই - "উস টাইম মে উয়ো ফিল্ম কা চরকা চলতা থা, ক্যায়সে উয়ো আন্দাজ লাগাতে থে কে ইয়েহি পে কাট হোনা চাহিয়ে? ডিজিটাল মে তো ফট সে হো যাতা হ্যায়" ইত্যাদি। তো সেই ফিল্ম কা চরকার যুগে বসে মৃণালের এডিটিং কি সেই মানেরই?
  • খুকখুক | 237812.68.454512.138 (*) | ২০ আগস্ট ২০১৯ ০৭:৩৬49381
  • ধন্যবাদ এবড়োখেবড়ো-দা এডিটিং নিয়ে প্রশ্নটার উত্তর দেয়ার জন্যে। অমিতাভকে আনলাম কারণ উনি যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন - 'ফিল্ম কাটতে থে উসকো জোড়তে থে ফির সে উয়ো চরকা চলতা থা' সেই যুগেই তো মৃণালও ছিলেন, উনি কীভাবে কাজ করতেন সেটা জানার আগ্রহেই প্রশ্নটা, আর আপনি খুবই গুছিয়ে লিখলেন। খেরোখাতা সত্যজিতের এন্ড টু এন্ড প্ল্যানের অঙ্গ হলেও কোন জায়গায় বাড়তি কথা বা এক্সপ্রেশন বাদ দেবেন সেটা সব কি আর খাতায় থাকত? অন স্পটও অনেক কিছুই নির্মমভাবে ছেঁটে দিতেন। যার যেরকম কাজের অ্যাপ্রোচ।
  • এবড়োখেবড়ো | 237812.69.453412.170 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৯ ০১:২২49384
  • সবিনয়ে স্বীকার করি, দেখিনি। নিজস্ব ভালো লাগা, নিজের সিনেমা দেখা আর নিজের পড়া কয়েকটা বই ছাড়া এ লেখায় আর কিছুই দেখা হয়ে ওঠেনি। তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই পত্রিকা সংখ্যা দুটোর নামই শুনিনি।
  • # | 236712.158.676712.124 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৯ ০৩:২২49385
  • সম্পাদকীয়তে আপনাদের উপরোক্ত আলোচনাকে যে স্বল্পবাক স্পষ্টতায় ধরা রয়েছে -

    ১) তিনি গল্প বলার ফর্ম আর ডকুমেন্টরি ফর্ম এই দুয়ের মিলনের চেষ্টা করেছিলেন।
    ২) গল্প বলা ছবিকে ভেঙে চলচ্চিত্রে প্রবন্ধধর্মীতা আনার ব্যপারে তিনি সার্থক, পুরোপুরি সফল না হলেও তিনিই পথিকৃৎ - যে প্রচেষ্টার মূল্য অনাগত কাল দেবে বলে বিশ্বাস, কেননা গল্প বলা নিয়ে অনন্তকাল চলবে না।
    ৩) রাজনৈতিক চলচ্চিত্র - কে প্রথম রচনা করেহেন - তর্কসাপেক্ষ, কিন্তু রাজনৈতিক চলচ্চিত্রে আমাদের শিক্ষিত করেন তিনিই প্রথম।
    ৪) মধ্য শ্রেণির মানুষের দ্বিচারীতাকে তাঁর মত আঘাত এত ঘনঘন কেউ করেননি।
    ৫) ছবিতে চেয়েছিলেন জনমনোরঞ্জন নয় জনমানসে ধাক্কা দেওয়া।

    শিলাদিত্য সেনের চলচ্চিত্রপঞ্জীর সাথে চলচ্চিত্র চর্চার পঞ্জী মিলিয়ে নেওয়া দরকার মনে করি, এইটি লেটেস্ট।

    সাহিত্য বা সিনেমা সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনা, সাহায্য, বই, রেফারেন্স, তথ্য -র জন্য চন্দন গোস্বামীকে ৯৬৭৪৪৫৭০৭৬ এ কল করতে পারেন। খুশিই হবেন।
  • এবড়োখেবড়ো | 236712.158.782323.31 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৪০49382
  • এ হে! এ টই তো মায়ের ভোগে!! একটু খুঁচিয়ে তুলি।

    @খুকখুক মৃণাল সেনের সম্পাদনার বিষয়ে কিছু জানতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে মৃণাল নিজে যা বলেছেন --- “আমি যখন এডিট করতে বসি, তখন টেবিলের ওপর অনেকগুলো শট থাকে। আমি এডিটরকে নিয়ে এখান থেকে ওখান থেকে এটা নিয়ে ওটা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে উদ্ভাবন করি। এটা যেন একটা বাচ্চা ছেলের কিউবস্‌ নিয়ে খেলা করার মতন।”

    এর আগে ভুবন সোমে মাস্ক শটের ব্যবহার নিয়ে বলেছি। তা কেমনভাবে মৃণালের মাথায় আসল, তা জানাতে গিয়ে তিনি বলছেন, “ভুবন সোম করার সময় ভাবিনি যে মাস্ক শট নেব। পরে এডিটিং-এর সময় যখন কিছু স্টিল নিয়ে বসেছি তখন মাথায় এল”। অর্থাৎ সব কিছু পূর্বনির্ধারিত নয় একেবারেই।

    আর একটা উদাহরণ দিই ওই ভুবন সোম নিয়েই। গুজরাটের ভূতবাংলোয় শ্যুটিং হচ্ছে, অভিনয়ে উৎপল আর সুহাসিনী। কথা বলতে সুহাসিনীর হঠাৎ চোখ চলে গেল জানলার বাইরে। সাদা ডানায় ভর করে অসংখ্য পাখি নামছে, আকাশ থেকে সমুদ্রে। সংলাপ ভুলে তিনি চিৎকার উঠলেন, ‘লুক, মৃণালদা লুক’। কাটলেন না মৃণাল, কে কে মহাজন জানলা থেকে সমুদ্রের পাখিদের ওপর ক্যামেরা ঘোরালেন। ছবিতে ওই দৃশ্যটাই রইল। শুধু উৎপল দত্তের সঙ্গে সংলাপ বলার সময় সুহাসিনীর চেঁচানোটা ‘দেখো দেখো’ বলে ডাব করে নিলেন। কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারেনি।
  • # | 236712.158.895612.138 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৯ ১২:০৫49383
  • এ লেখার সময়ে "চলচ্চিত্র চর্চা" (সম্পাদক - বিভাস মুখোপাধ্যায়) প্রকাশিত দুই খণ্ডে - [সংখ্যা - ২২, নভেম্বর ২০১৬] "প্রসঙ্গ মৃণাল" (বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, অন্বেষণ - ৩৪ টি লেখা, ৩৭০ পৃষ্ঠা) ও [সংখ্যা - ২৪, ১৪ মে ২০১৭] প্রসঙ্গ মৃণাল সেন (চলচ্চিত্র সমালোচনা - ৫৯ টি লেখা, ৩৯২ পৃষ্ঠা) পত্রিকা সংখ্যা দুটো দেখেছেন নিশ্চয়।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন