তখন চন্দ্র সূর্য উঠত, দু'শো ছয় সারা কলকাতা ঘুরে করুণাময়ী পৌঁছত। অনেকটা যেন, সারা দিন সারা রাত মিউজিকাল চেয়ার খেলার মতো — কে তোমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারে, কে আবার ফেরাবে বিকেলে, যখন রোদ্দুরের তাত কিছুটা উতপ্ত হয় তোমার কপালে হাত রেখে। যে তোমাকে পেত, সেই বাসটি যেন অকারণে — টার্মিনাসের সামান্য বিশ্রামে রাতের আকাশ ব্ল্যাকবোর্ড মনে করে তারা জুড়ে জুড়ে ছবি টবি হিজিবিজি আঁকত, শব্দ জুড়ত মনে মনে। বাস কন্ডাক্টর এগরোল কিনে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেন সেদিন আর তাসের আড্ডায় না গিয়ে। ড্রাইভারটি নিতেন পাড়ার কুকুরদের জ ... ...
এ বছরের শুরুতে ভাবলাম জার্ণাল লিখে রাখি। কতদিন এ ভাবনা আর লেখা একসঙ্গে থাকবে জানি ন। তবু থাক, যতটুকু রাখা যায়, থাকে…
এ লেখার সবটুকু তারই, যদি সে মনে রাখে।
২ জানুয়ারি ১৯
১
খানিক পুরনো হলে ঘটনার গায়ে মায়ার প্রলেপ লাগে
সামান্য সুগন্ধ — ডালে হিং ফোড়ণের এলে
বাধ্যতামূলক নিরামিষ দিন মনেও থাকে না।
যেন পলি পড়া উর্বর মাঠ এতদিন কর্ষণবিহীন
আচমকা উড়ে আসা বীজ বুকে ফলের বাগান ফলাতে চায়
সামান্য চিঠির বাক্স খুলে প্রজাপতিগুলি উড়ে উড়ে
ভিতর বাগানে ... ...
১
অনেকদিন যোগাযোগ নেই,
ঘুম থেকে উঠে বিপর্যস্ত লাগে,
নতুন জায়গা, খুব শীত সকালের দিকে
বেলা বাড়লেও কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না।
ঠিক যেন পর্দার ঠিক ওইপাশে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।
সকালে উঠেই যেন তাকে আজও মনে পড়ে
আলনায় গেরস্তকথা, চিঠিপত্র গাছে গাছে।
২
তুমি বলেছিলে…..
খুব একটা গভীর কিছুই নয়
দু'চারটে নুড়িপাথর, নেড়িকুকুর শব্দ
তুমি বলেছিলে বলে তার চারপাশে
এতদিন বেড়া দিয়ে, ভিত খুঁড়ে
যতটুকু পারি এবড়োখেবড়ো গাঁথনি বানিয়ে
নিজে দেখে দ ... ...
সকাল থেকে সন্ধে অবধি এক কাজের শহর থেকে ছুটির শহরে যাওয়ার ফাঁকে যা লেখা হ'ল তা এক জায়গায় থাক বরং......
১
কি লাভ বল তো ফুলে চিরকাল জরা আসে
নদীবক্ষে চরার পাঁজরে কাঁচাপাকা ঘাস দোল খায়
নিত্যস্নান হয়ে ওঠে না তার, দরজা জানলা নেই
ফাটা ঠোঁটে বিড়বিড় করে
কবে সেই দেড়কুড়ি বছর আগে বাবুদের কলে
ছানাপোনা জলটুকু চাকরীসূত্রে শহরেই গেছে চলে।
কী লাভ বল তো ব্যবসায়ে, অনাদায়ী অনিচ্ছুক ঋণ
পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়, পোকা ধরে প্রিয় বাদ্যযন্ত্রে
মাঝে মধ্যে অকারণে খুশি হ' ... ...
একটা ধারণা গড়ে ওঠার সময় অনেক বাধা পায়। প্রশ্ন ওঠে। সঙ্গত বা অসঙ্গত প্রশ্ন। ধারণাটি তার মুখোমুখি দাঁড়ায়, কখনও জেতে, কখনও একটু পিছিয়ে যায়, নিজেকে আরও প্রস্তুত করে ফের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। তার এই দমটা থাকলে তবে সে পরবর্তী কালে কখনও একসময়ে মানুষের গ্রহণযোগ্য হয়।
এখন এই গ্রহণযোগ্যতাটি সাময়িক। প্রশ্ন তো সেই কয়েকটা হয়েই থেমে যায় না, নতুন প্রশ্নরা আসে স্বাভাবিকভাবেই, আসে নতুনতর ধারণারাও। এখন সেই গ্রহণযোগ্য আগের ধারণাটি যারা অবলম্বন করে থাকেন, তারা তাকে চরম ধরে নিয়ে যখন নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন ... ...
এ কথা প্রমাণিত ও প্রত্যক্ষ যে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস বলে যা রয়েছে তা চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক। সিলিং খসে পড়ে ছাত্র দের আহত হওয়ার খবরও আছে। আর এই অব্যবস্থা তো আর একদিনে হয় না, হয়ও নি। এর পিছনে ছিল কতৃপক্ষের উদাসীনতা। যা ইচ্ছাকৃত বলে ভাবলে তা খুব একটা ভুল হয় না। কিন্তু কেন?
কেন বারবার যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি মেডিকেলের ওপর কতৃপক্ষ এত উদাসীন? কেন সেখানে বারবার তুঘলকি ফরমান জারী করে ক্ষমতা দেখান হয় বা ন্যায্য দাবি কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়?
খেয়াল করে দেখবেন, পশ্চিমবঙ্গ রা ... ...
নেহাৎই ভাগ্যবান বলে চোখে দেখি আমি, কানে শুনি, ভাষা বুঝি মানুষের। নেহাৎ ভাগ্যের ফেরে বইমেলা যাই, কলকাতা শহর বেড়াতে। গ্রহ তারা অনুকূল বলে হয়ত প্রিয় বন্ধুরা ঘিরে রাখে দেখি পরম আদরে, পাখি ডাকে সকালের দিকে, বাইরে ঠান্ডা হাওয়া গরম চাদরে পোষ মানা বেড়ালের মতো খেলে চোখে মুখে।
আরও বেশি পাই বটে অবরে সবরে আশ্চর্য লেখা কিছু কবিতা বা গদ্যের পোশাকে জলজ্যান্ত হয়ে কিছুক্ষণ দীপাবলী নিয়ে আসে এই ঘরে। কিছু ছায়াছবি রক্ত মাংস হয়ে সাদরে নিয়ে যায় তার অন্দরে। মানুষের কাছাকাছি এতদিন থাকা সত্ত্বেও অনেক নতুন কিছু ... ...
“আরে বরফ পড়ছে তো!”
-”বরফ? সে কী? বৃষ্টি তো!
-”আরে দেখ। সত্যি বরফ, জ্যাকেটে লেগে আছে”
- তাইতো!
আর তাই কিছুক্ষণ পরেই দুই-হাত পেতে ওই চোদ্দজনের নানান বয়সীরা শিশু হয়ে যায় বরফের কুচি হাতে ধরতে। আস্তে আস্তে বাড়ছিল সেই বরফকুচির প্রকোপ।
একটু আগেই ওরা নাথাং উপত্যকায় ঘুরছিল। মাঝখানের অনেকটা সমতল জায়গার প্রায় তিন দিক ঘেরা বরফ ঢাকা পাহাড়ে। একদিকের পাহাড় বরফ কিছুটা কম, তারই দেয়াল ঘেঁসে প্রায় গোটা পঞ্চাশ ঘরের ... ...
১৩
চলো, আখ্যান লিখি, তুমি কিছু বলো-
কিছু আমি বলি - যদি যেতে চাও, চলো...
১
যাই ছুঁয়ে আসি, নদীঘাট, একটি শালতি
পলকা দুলতেছিল, কাঁচা পথে কাদের পালকি
হেঁকে যায়, ঝোপ ঝাড়, পিছুপিছু কত বাচ্চারা
জুটেছিল, দেখ মুখ টিপে ঘোমটা আড়ালে
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমক, ওইখানে তুমিই দাঁড়ালে।
২
তাই হবে, অনেক অনেক দিন আমাদের
কথা নাই, চিঠি ও পত্তর
তোমাকে লেখার খাতা, বারো ভূত দানছত্তর
উড়িয়ে পুড়িয়ে খেয়ে নোনা ইঁট জমিদার বাড়ি
জঙ্গলে দেওয়ালের গলায় বাঁধা আছে অশ্বত্থ ... ...
যেতে পাই না আসতে পাই না
কাঁপন লাগে তাই
চুল্লীর কাছে গত গ্রীষ্মের
গল্প বলতে যাই......
নেহাৎ কিছুই নেই এখন, না তাতে আক্ষেপ করছি না। বরং জানি এই না-থাকাটা অনেক জরুরী। একটা কাদার তাল, একটা সাদা পাতা, বেশ একটা মিনিট চল্লিশের নির্ঝঞ্ঝাট অবকাশের তুলনা কমই আছে। কিছু না থাকলেই সব থাকে, মানে যা খুশি তাই। মানে একটা শব্দ, যাকে কারও পাশে বসাই, যে কোনও চিন্তা ভাবনা ঘটকালি, কাঠপুতুল ঘরজামাই যেই হোক ভালো লাগে। তার আগে অবশ্য জানলা খুলতে হয়, হাওয়া আসতে দিতে হয়, ফুটতে দিতে হয় ভাবনার সম্প ... ...